এলিজা পর্ব ৮+৯
Dayna
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা লা’শ পাওয়া গেছে।
অপূর্ব আহত কন্ঠে বললো,এটা হতে পারে না।নিশ্চয়ই অন্য কারো লাশ হবে।
বলেই চোখ মুখে হাত দেয়। চোখের কর্নারে রক্তে মাখা লাল কর্নিশ দেখা যায়।
একজন কনস্টেবল বললো,,স্যার ডিসি সাহেব আপনাকে যেতে বলেছেন।
অপূর্ব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হয়।
আশেপাশে অনেক মানুষ ভির করেছে।
অপূর্ব লা’শটার কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ায়।
কনস্টেবল বললো,স্যার এটা তো রায়হান স্যারের লাশ।
এটা শুনেই অপূর্ব থমকে যায়। শরীরের সমস্ত শক্তি নিমিষেই নিস্তেজ হয়ে যায়।
তৎক্ষণাৎ অপূর্বর ঘুম ভেঙে যায়। সকাল টা ঠান্ডা হলেও শরীর থেকে পুরোপুরি ঘাম ঝরছে।
অপূর্ব বিড়বিড় করে বললো,তার মানে এটা স্বপ্ন ছিলো। উফ আর একটু হলেই যেন আমার দম আটকে যেতো।
অপূর্ব উঠে হাত মুখ ধুয়ে নিচে নামতেই
ল্যান্থলাইনে ফোনের আওয়াজ বেজে উঠে। ফোনের রিং পাওয়া মাত্রই অপূর্ব আতংকিত হয়ে যায়। রাতের স্বপ্ন টা না জানি সত্যি হয়ে যায়।এসব ভাবতে ভাবতে,অপূর্ব ফোন টা তুলে।
ওপাশ থেকে ডিসি সাহেব বললো, অপূর্ব তাড়াতাড়ি থানায় এসো। গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। বলেই ফোন টা কেঁটে দেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সকালের স্বপ্ন টা আবার সত্যি না হয়ে যায়। মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে।
অপূর্ব তৈরি হয়ে থানার উদ্দেশ্যে বের হয়।
জয়া :খোকা খাবার টা তো খেয়ে যা!
অপূর্ব: না মা জরুরি কাজ আছে।
বলেই দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়।
জয়া : ছেলে টার চিন্তায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।
দরজায় করা নাড়ার আওয়াজ ।
লুৎফা দরজা খুলতেই দেখে।পান্না মাস্টার – তার স্ত্রী- মিনারা বেগম। চাঁদনীর বাবা মা।
সাথে – তাদের ছোট ছেলে আয়ান।
জয়া : ভাবি আপনি — কতদিন পর।সেই কবে আসতে বলছি আর আজ আসার সময় হলো।
বলেই আলিঙ্গন করে জয়ার সাথে।
মিনারা :বাড়ির বাকিরা কোথায়?
জয়া :ওর বাবা বাহিরে গেছেন। অপূর্ব থানাতে।
চাঁদনী ; মা তোমরা না বলেই চলে এলে।
মিনারা:হ্যাঁ- তোর বাবার শরীর টা ভালো নেই তাই ভাবলাম….
মিনারা কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে পারে জয়া।জয়া মৃদু হেসে বললো,জাহাঙ্গীর ফিরলেই আজকেই ওদের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করবো। অপূর্ব তো আজকাল ঘরেই থাকে না। যদি বিয়ের পর রাখা যায় ।
চাঁদনী লজ্জা মুখ নিয়ে উপরে চলে যায়।
জয়া, মিনারা , সবাই আওয়াজ করে করে হেসে উঠে।
অপূর্ব কিছুক্ষণ এর মধ্যে থানাতে উপস্থিত হয়।
অপূর্ব:স্যার কোন খারাপ খবর নেই তো?
ডিসি সাহেব: রায়হান নিখোঁজ সবাই চিন্তিত। পূরো ডিপার্টমেন্ট , লজ্জায় মরে যাচ্ছে। উপর থেকে কড়া হুঁশিয়ারি আসছে-
একজন পুলিশ অফিসার নিখোঁজ।
কি করছো তোমরা একজন অপরাধী কে ধরতে পারছো না।
অপূর্ব:স্যার – এটা নিশ্চয়ই কোন সিরিয়াল কিলার এর কাজ।
ডিসি সাহেব: তুমি কি বলতে চাচ্ছ?রায়হান কে ঐ কি,লার ই কিডন্যা,প করেছে?
অপূর্ব আতংকিত হয়ে বললো,
স্যার এমন টা মুখেও আনবেন না। ওর কিছু হবে না। ও একদম ঠিক আছে। আমরা ওকে খুঁজে বের করবো।
ডিসি সাহেব: যা করার করো,।
অপূর্ব সব পূরানো সিরিলায় কি’লার দের ফাইল নিয়ে একটার পর একটা পরোক্ষ করতে থাকে।
— অপূর্ব একটা একটা ফাইল খুলতেই চোখে পরে —
১৯৮০ সালের এক সি,রিয়াল কি,লার এর ঘটনা।
জানুয়ারী ১৯৮০ সালে, বান্ডি অরল্যান্ডো , যিনি ছিলেন একজন সিরিলাল কি”লার।
তিনি একে একে ৩০ টা খু”ন করে , তাদের খু’ন করে তাদের শরীর থেকে কিডনি- চোখ বের করে নেয়া হতো। এবং মেয়েদের অপহরণ করে ধর্ষণ ও করতো।নিস্ঠুর ভাবে হত্যা করতো সবাইকে। ১৯৯০সালে বান্ডি নিজেই তার অপরাধ শিকার করে।
।বিচারের মুখোমুখি হয়েছিল বান্ডি, যেখানে তাকে কিম্বার্লি লিচকে অপহরণ ও হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, তন্তু এবং লেক সিটি থেকে হোটেলের রসিদ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অনেক মৃত্যুদণ্ডের বন্দীর মতো, টেড বান্ডি তার অনিবার্য মৃত্যুদণ্ডের আগে কয়েক বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন। ফ্লোরিডা রাজ্য কারাগারে নয় বছর পর, ২৪.জানুয়ারী, ১৯৯০-এ, টেড বান্ডির মৃত্যু ঘটে যখন তাকে বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
অপূর্ব ফাইলটা রেখে দেয়।
ভাবতে থাকে,,
বান্ডি নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করে। তারপর তাকে ধরতে পারে। তাও ১০ বছরের ব্যবধানে।
আমরা কি করে, একে ধরবো কি চায় এই খু”নি , যার টার্গেট শুধু ই কি ২৭ বছরের ছেলেরা ।
ভাবতে ভাবতে অপূর্বর মাথা ব্যথা শুরু হয়
চেয়ারে বসে পরে — পকেট থেকে এলিজার নুপুরটি বের করে দেখছে।
অপূর্ব একা একা বিড়বিড় করে বললো,
যখনই তোমার নূপুর টি দেখি। তখনই মনে এক অদ্ভুত শান্তি চলে আসে। হাজারো চিন্তার মাঝে প্রিয় মানুষ টির ভাবনাই পারে সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করে দিতে।
আজকে ই মা বাবাকে গিয়ে এলিজার কথা বলবো।
হয়তো এলিজার জন্য ই কাজে মন বসছে না।
সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ __
সবাই জয়ার ঘরে বসে চা খাচ্ছে আর বিভিন্ন গল্পে মশগুল হয়ে আছে।
লু্ৎফা সবাইকে পিঠা দিচ্ছে। অনেক দিন পরে জয়ার ভাই ভাবি এসেছে তাদের জন্য নানান আয়োজন ।
জয়া জাহাঙ্গীর কে উদ্দেশ্য করে বললো,হ্যা’গো অপূর্ব বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে । এখন তো ওর বিয়ে নিয়ে ভাবা উচিত।
জাহাঙ্গীর চা টা টেবিলের উপর রেখে বললো, আমি আর কি ভাববো। অপূর্ব আর চাঁদনী যখন খুব ছোট তখন থেকেই আমরা ভেবে রেখেছি- চাঁদনী কে আমাদের ঘরের বউ করবো। আমার কোন আপত্তি নেই।
মিনারা বললো, তাহলে তো হলোই। কি বলেন বেয়ান সাহেবা।
জয়া চাঁদনী কে উদ্দেশ্য করে বলে,,তোর কোন আপত্তি নেই তো মা? চাঁদনী না সুচক মাথা নাড়ে।
দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ _
লুৎফা দরজা খুললে দেখে অপূর্ব।
অপূর্ব:বাড়ির সবাই কোথায়?
লুৎফা : সবাই আপনার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে জয়া আফার ঘরে।
অপূর্ব কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললো,
মানে কি বলছেন এসব ? আমাকে কেউ কিছু না জিজ্ঞেস করেই বিয়ের আলাপ আলোচনা।
অপূর্ব জয়ার ঘরে চলে যায় –
অপূর্ব কড়া গলায় বললো,মা বাবা তোমাদের সাথে কথা আছে।
আমার ঘরে এসো। বলেই চলে যায়।
জয়া ও জাহাঙ্গীর বিস্ময়কর হয়ে ওঠে । কি হয়েছে আবার কি বলবে।
অপূর্ব দেয়াল ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
জয়া :কি হয়েছে কি বলবি?
অপূর্ব: মা আমি একজনকে ভালোবাসি, আর আমি ওকেই বিয়ে করবো।
তোমরা আমাকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেললে?
জয়া :কি বলছিস এসব ।তুই যখন ছোট তখন থেকেই ভেবে রেখেছি , চাঁদনী কে তোর বউ করবো।
অপূর্ব :মা আমি কোন কথা শুনতে চাই না আর চাঁদনী আমার বোন । অন্যথায় কিছু না।
জাহাঙ্গীর :সে কোথাকার মেয়ে?
অপূর্ব :তিলকনগর।
তিলকনগর নামটা শুনতেই জাহাঙ্গীর এর চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে যায়। কপাল থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। জাহাঙ্গীর থম মেরে খাটে বসে পড়ে।
জাহাঙ্গীর : কি বলছিস তুই এসব আর কোন জায়গা পেলি না।
অপূর্ব :-ভালোবাসা কোন জায়গা, জাত বে-জাত, ধনী গরীব এসব মানে না।
জয়া: ব্যাপারটা এরকম নয়।
অপূর্ব:তাহলে কি?
জয়া কিছু বলতে গিয়েও থমকে যায়।
অপূর্ব : যদি তোমরা রাজি না থাকো তো বলতে পারো। তাহলে আমি এখান থেকে আজই চলে যাবো।
জয়া :খোকা- তোর মামি কে কি বলবো? তারা তোর আর চাঁদনীর বিয়ের জন্য ই এসেছে।
অপূর্ব শান্ত স্বরে বললো,তা আমি সামলে নেবো।
তিলকনগর———–
–ভোর ঠিক ৬ টা নাগাদ
হঠাৎ করেই নিরার শ্বাশুরির কান্নার আওয়াজের ধ্বনি তে এলিজা সহ সকলের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
রমজান:কি হয়েছে চলো গিয়ে দেখি।এত সকাল সকাল কি হলো।
…………
বুক থাপরে থাপরে কান্না করছে, নিরার শ্বাশুরি আনোয়ারা। নিরা কে কখনো ছেলের বউ মনে করতো না।
নিজের মেয়ের থেকে ও বেশি ভালো বাসতো।
আনোয়ারা:একি হলো – কে আমার নিরার এরকম অবস্থা করলো।, কে ওর জান টা কেড়ে নিলো-। বলেই অঝরে কান্না শুরু করে।
বাড়িতে মোটামুটি অনেক মানুষ জন ভির করেছে।
— উঠানে একটা লাশ – লাশ টা আর কারো নয় নিরার। জয়তুন হতভম্ব হয়ে যায়। এলিজা আনোয়ারার কাছে এগোয়।শান্তনা মূলক কন্ঠে বলল,
এলিজা: চাচী কেঁদো ন।,কি করে হলো, কখন হলো??
কান্না তার থামছেই না।
পাশ থেকে এক লোক বলে উঠলো–
আমি যখন ফজরের নামাজ পড়তে বের হই তখন ছোট রাস্তার পাশে নিরার লাশ পাই….
কিন্তু এর তো কোন শত্রু নেই।নম্র ভদ্র ছিলো। ওর এরকম কে করলো…..কে এই নিষ্ঠুর খু’নি?
রমজান লাশের উপর থেকে চাদরটা সরাতেই নিরার হাতের মুঠোয় বেলিফুল এর একটা মালা পায়।রমজান বেলিফুল টা ধরে দূরে ফেলে দেয় ।
পাখি মালা টা দেখে–ফেলে।
নিরার শ্বাশুরির কান্না থামাতেই পারছে না।–
পাখি মালা টা মাটি থেকে তুলতেই – এলিজা হাত থেকে মালাটা নিয়েই ফেলে দেয়।
এলিজা: মৃত মানুষের কোনকিছু ব্যাবহার করতে নেই।
পাখি এলিজাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
আপু কেউ কি নিরা ভাবিকে মেরে ফেলেছে ?
এলিজা :- জানি না কে তবে উনি ঠিকই ওনার সাজা পাবে।
একজন বয়স্ক লোক- পাশ থেকে বললো,হয়তো কোন দুশ্চরিত্রা লোকের কাজ , ধ’র্ষন করে মেরে ফেলেছে। দেখছো না হাতে একটা বেলিফুল এর মালা।- মনে হয় প্রেম নিবন্ধন করতে আসছিলো। যখন না করে তখন ধর্ষন করে মেরে ফেলে।-
রমজান :যা হবার হইছে ফেরেশতার মত মাইডারে যে মারছে ওর বেশিদিন ভালো কাটবে না।
তোমরা গোসল এর ব্যবস্থা কর। লাশ বেশিক্ষণ না রাখাই ভালো।
জয়তুন এলিজাকে ঘরে নিয়ে যায়। এখানে লোকজন ঘরে চল। এলিজা কান্না করছে। ।পাশ থেকে জয়তুন ভেজা কন্ঠে বললো,,দুজন বন্ধুর মত ছিলিস। সারাদিন কত গল্প গুজব করতিস।
আজ তুইও একা হয়ে গেলি।
এলিজা পর্ব ৬+৭
জয়তুন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
কে মারলো ওরে? কতই না ভালো ছিলো? মারছে হয়তো রাতে। কিন্তু মাঝ রাতে বাহিরে কি করছিলো নিরা.?
হাজার টা প্রশ্নে যেন জয়তুন এর মাথা ধরে যায়।