এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ১০

এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ১০
ইফা আমহৃদ

ঊষা,‌ উদিতা, অগ্নি ও আমি পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। অভ্র স্যার চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছেন।‌ আজকের প্রতিযোগিতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। ঊষা উদিতা বাবাইকে জড়িয়ে ধরল ছুটে গিয়ে। অভ্র স্যার মেয়েদের দেখে অখুশি হলেন না, আবার অসন্তুষ্ট নয়। আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে থেকে বলে, “এখানে অনেক ভিড়, ওদের নিয়ে আসলেন কেন?”
ঊষা বাবার কোলে বসে বলে, “আমাদের ফ্যাশন প্রতিযোগিতা আর আমরা আসব না? কখনো তুমি আমাদের নিয়ে আসো নি বাবাই, তাই এবার কিট্টির আম্মুকে জোর করে আমরা চলে এসেছি।”

অভ্র ঊষার ললাটে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলে, “এটা ঠিক নয় মামুনি। বাবাই কিন্তু খুব রাগ করেছে।”
ঊষাও বাবাইকে চুমু খেল। আমি অগ্নি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম মৃদু। এমন সময়ে ম্যানেজার সাহেব এলেন হাঁপাতে হাঁপাতে। টঠস্ত হয়ে বলেন, “স্যার শুনছেন। আমাদের মডেল টিনা, সে না-কি চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের ডিজাইন শো করবে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“মানে?” অপ্রস্তুত গলায় অভ্র স্যার বলেন। ম্যানেজার স্যার পুনরায় বললেন, “টিনা ম্যামকে শফিক চৌধুরীর কাছে দেখলাম আমি। আমি ম্যামকে মেকআপ রুপে আসতে বলাতে তিনি বলেন, ‘কী মেকআপ, কীসের ম্যাম। আমি আপনাদের মেকআপ রুমে কেন যাবো? আমি যাবো চৌধুরী হাউজের মেকআপ রুমে।’ এবার কী করব?”

হতবাক হলাম তৎক্ষণাৎ। অভ্র স্যার ছুটে গেলেন বাইরে। কক্ষটিকে একটা দেয়াল ঘড়ি লাগানো। সময় আটটা ত্রিশ। ফ্যাশন শো শুরু হতে আর মাত্র ত্রিশ মিনিট। আমিও ছুটলাম অভ্র স্যারের পেছনে পেছনে।
অভ্র স্যারের সাথে টিনার কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অভ্র স্যার বলছেন, “এটা কেমন কথা? আপনি আজ সকালে জানালেন আপনি আমাদের হলে ডিজাইন পেজেন্ট করবেন। এখন এমন করছেন কেন?”
“আমি মি. চৌধুরীকে কথা দিয়েছি তাই। আমি কখনো কথার খেলাপ করি না।”

“তাহলে আপনি আমাকে সকালে এটা বলতে পারতেন? অভ্র ফাঁকা মাঠে পালিয়ে যায় না। আমি আজকে জিততে না পারলেও মডেলের জোগাড় করতাম।” অভ্র স্যার উগ্র গলায় বললেন। প্রত্যুত্তরে মডেল বলে, “আমি আমার অপ/মা/নের ব/দলা নিয়েছি ব্যাস। আর কিছু না। সেদিন আপনার ডিজাইনার আমাকে অপমান করেছিল। আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন, আজও দেখুন। কিন্তু কিছু করতে পারবেন না।”

বলেই শফিক চৌধুরীর সাথে হাত মেলাল টিনা। রাগটা বেড়ে গেল। নিজেকে সংযত করতে ব্যর্থ হলাম। কয়েকপা এগিয়ে দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে চ/ড় বসিয়ে দিলাম। রাগে শরীর কাঁপছে। তাতেও ক্ষান্ত হলাম না। আরও তিনটে চ/ড় দিলাম। স্টার্ফরা আমাকে সরিয়ে নিতে নিতে বলে, “প্লীজ ম্যাম, সিনক্রেট করবেন না। মডেল প্রায় প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি। পোশাক পড়লেই কম্পিলিট। এই অবস্থায় ম্যামের সাজগোজ নষ্ট হলে তিনি আর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না।”

আমি মৃদু হাসলাম। প্রতিযোগিতা শুরু হতে বিশ মিনিট সময় আছে। ছুটে গেলাম ভেতরে। মেকআপ রুম থেকে নারিকেল তেলের বোতল নিয়ে ফিরে এলাম। দাঁত দিয়ে ছিপি টেনে খুলে বোতলের সমস্ত তেল ছুড়ে দিলাম টিনার দিকে। ‘আহ্’ চিৎকার করে চোখ ধরল টিনা। তেলের‌ কারণে বিদ্যুতির শক দিয়ে ফুলিয়ে তোলা চুলগুলো চুপসে গেল। সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেল। টিনা বাজখাঁই গলায় বলে, “হেই স্টু/পিড, কী করলে এটা তুমি?”

“আপনার কু/দসিৎ মুখটা চৌদ্দ প্রলেপ মেকআপের নিচে চাপা পড়ে আছে। মনের সাথে মুখের মিল করাতে, ছোটো প্রচেষ্টা।” অভ্র স্যার হাত টেনে বললেন, “কী করলেন এটা? একজন মডেলের মেকআপ নষ্ট করে দিলেন। এবার কী হবে আপনার ধারণা আছে? আশেপাশে কত পুলিশ আছে। ও মাই গড।”
বজ্রকণ্ঠে বললাম, “একদম কথা বলবেন না। আমি মোম, নিজেকে পু/ড়িয়ে আলো দেয়। অন্ধকার দূর করে দেই। শুধু আপনার জন্য আমি নতজানু হয়ে দুহাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছি। যাতে আপনার দুর্নাম নাহয়। আমার সম্মানে আঘাত লাগলে আমি কাউকে ছাড়ব না।”

“হোয়াট? আপনি নতজানু হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন? কেন?” অভ্র স্যার কড়া গলাতে আমি জবাব দিলাম না। টিনা চ্যাঁচিয়ে বলে, “তোমাকে আমি পুলিশে দিবো।”
উচ্চ স্বরে হেসে উঠলাম আমি। হাসতে হাসতে বললাম, “একবার এক বাড়ি ওয়ালা অভ্র স্যারকে হু/মকি দিতে এসেছিল। কমিশন তার চাকরি নট করে দিতে চেয়েছিল। অভ্র স্যারের ডিজাইনারকে ধরে নিয়ে যাবে, আর সে চুপচাপ দেখবে। আমাকে ধরার আগে আপনাকে ফ্লাট মা/ম/লায় ধরে নিয়ে যাবে।”

“কী প্রমাণ আছে, আমি ফ্লাট করেছি।”
“মামা বাড়িতে নিয়ে আদর করলেই সব বের হয়ে যাবে।” বলেই মেকআপ রুমে এলাম। অভ্র স্যার এলেন পেছনে পেছনে। হাতে পনেরো মিনিট সময় আছে। এর ভেতরে একজন দক্ষ মডেল প্রয়োজন।
গভীর চিন্তায় মগ্ন আমি। অভ্র স্যার এলেন কাছে। আমার হাত ধরলেন। চমকে উঠলাম আমি। আশেপাশে মানুষের উপস্থিতি অনুভব করে হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করলাম। অভ্র স্যার করুণ গলায় বললেন, “আমার জন্য আপনি আরেকবার ঐ অস্বস্তিকর পোশাকটা পড়বেন মোমবাতি? প্লীজ?”

করুণ শোনাল কণ্ঠস্বর। আমি নাকোচ করতে ব্যর্থ। কোমল গলায় বললাম, “আমার আপনার দুই মেয়েকে চাই।”
“ওরা তো এইসবের কিছু বোঝে না। এখনো মডেলদের হাঁটাই দেখেনি। তাহলে?” আমি সৌজন্য হাসলাম। বললাম, “মেয়েরা তার বাবার জন্য সব করতে পারে, আমিও করেছি একসময়। ঊষা উদিতাও পারবে।”
আমি হাত বাড়িয়ে দিতেই উদিতা ও ঊষা একসাথে হাত মিলালো। অতঃপর মেকআপ আর্টিস্ট ঊষা আর উদিতাকে সাজাতে বসালো। প্রথমবার ‘র‍্যাম্প ওয়ার্ক’ করবে বলে উভয়ে অনেক আনন্দিত।

শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। চৌধুরী গ্ৰুপ থেকে টিনা ব্যতিত বাকি মডেল উপস্থিত ছিল। একে একে সবার পারফরম্যান্স শেষ হলো। ‘শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউস’ ঘোষণা করতেই আমাদের টিমের দুইজন মডেল র‍্যাম্পে তাদের মডেলিং দক্ষতা দেখালেন। অতঃপর ঊষা ও উদিতা আমার দেখানো ভঙ্গিমা অনুসরণ করে হাঁটল। অতঃপর আমি উঠলাম। র‍্যাম্পের শেষ পর্যন্ত যেতেই চোখ টিপ দিলেন অভ্র অথবা অগ্নি। আমি হেসে ফেললাম। সেও হাসল। তবে গাল টোল পড়ল না। অগ্নি হাসলে টোল পড়ে।এক মিষ্টি হাওয়া লাগল দেহে। আমি কেঁপে উঠলাম।

চুলগুলো উড়ল এক দমকা হাওয়াতে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করলাম সেই মুহূর্ত। পরিশেষে বাকিটা দক্ষতা দেখালাম। একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে শেষ হলো প্রথম রাউন্ড।
প্রথম দফা শেষ করে দ্বিতীয় দফা শুরু হলো। আগের রাউন্ডের শেষে শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউস ছিল বিধায় এবার প্রথম রাউন্ডে শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউস।

এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ৯

অ্যাঙ্কার আমার দিকে কয়েকটি চিরকুট এগিয়ে দিলেন। একটি তুলে সেই অনুযায়ী বক্তিতা দিতে বললেন। আমি হাত বাড়িয়ে একটি চিরকুট তুললাম। সেখানে লেখা, “ফ্যাশন, স্টাইল ও ডিজাইন।”
একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের কাছে এরচেয়ে সহজ প্রশ্ন আর হয়? আমি বলতে আরম্ভ করলাম,

এ মন মেলুক পাখনা পর্ব ১১