এ হৃদয়ে তুমি এসেছিলে গল্পের লিংক || মোহনা হক

এ হৃদয়ে তুমি এসেছিলে পর্ব ১
মোহনা হক

গতকাল মেহনূরের ভার্সিটির ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর আবরার সাদাফের সঙ্গে তার বাগদান সম্পন্ন হয়। বিষয়টা একদম গোপন রাখতে চেয়েছিল সবাই কিন্তু আজ ভার্সিটিতে এসে কথাটা একদম বাতাসের তোড়ে ছড়িয়ে যায়। কালকের বাগদানের কথাটি মেহনূর তখনই জেনেছিল। অথচ এ কথা আবরার সাদাফ আগে থেকেই জানে। অনেক কিছু খোলসা না করেই আজ নিত্যদিনের মতো ভার্সিটি এসেছে। কিন্তু যেই থেকে এসেছে এক এক করে মেয়েরা এসে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এমনকি সিনিয়র কিছু আপুরাও। আবার কিছু কিছু মেয়েরা তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে। ভার্সিটির শেষ প্রান্তে মেহনূর একটি বেঞ্চের উপরে গিয়ে বসে। অপেক্ষা করে তার প্রাণের বান্ধুবী পৃথার জন্য। যে কীনা আবরার সাদাফের ছোট বোন। বেশ কয়েক মিনিট পার হতেই পৃথা আসে। বান্ধবীকে দেখা মাত্রই দৌড়ে তার কাছে চলে আসে। পৃথা মেহনূরের পাশে বসেই ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়। আফটার অল আজ তার বান্ধবীর অনেক কথার কৈফিয়ত দিতে হবে তো। পানি খেয়ে একটু রয়েসয়ে বলল,

“বল ভাবী বান্ধুবী তোর কী কী প্রশ্ন আছে।”

পৃথার এমন অদ্ভুত কথা শুনে মেহনূর ভ্রু কুঁচকায়। ভাবী বান্ধুবী কী আবার? এ কেমন ধরনের কথা? মেহনূর ব্যাগটা পাশে রেখে বলল,

“চুপ কর বেয়াদব। তুই আমার এত বড় সর্বনাশ করবি জানলে তোকে জীবনেও বান্ধবী বানাতাম না।”

পৃথা ভীষণ অবাক হয়। সে ভাবল আজ বান্ধুবীর সাথে কিছু সময় কুশল বিনিময় করবে তা না দিল মেজাজটা খারাপ করে।

“কি সর্বনাশ করেছি আমি?”

“কাল আমাদের বাসায় কেন তোর ভাই কে নিয়ে গিয়েছিলি? আর এসব বাগদান কী হয়েছে কিছু বুঝছি না। আর আমার মা বাবা কীভাবে এত সহজে রাজি হয়ে গেল সেটাও মাথায় ঢুকছে না। এমনকি এসব কিছুই আমাকে আগে থেকে জানানো হয়নি। তুইও কিছু বলিসনি। অথচ কাল সেজেগুজে আমার বাসায় মেহমান হয়ে গিয়েছিস।”

পৃথা আস্তেধীরে কথাগুলো হজম করল। সে জানত আজ ভার্সিটি আসলে এমন মুহূর্তের সাক্ষী হতে হবে। তাই ইচ্ছে করেই একটু লেট করে এসেছে। তারউপর এখন আবার চুপচাপ কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেকি হাসে হুট করে।

“সোজা কথা বলছি। ভাইয়ের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছিল। তার কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ নেই বিধায় সম্পূর্ণ দায়িত্ব মা বাবার উপর পরে। আগেই বলে রাখছি আমি প্রথমেই তোর কথা বলিনি। আমার মা এই প্রস্তাব রাখে। তারপর একদিন আমাকে এটা জানানো হয়। তখন ভাইয়া কিছু জানে না। শুধুমাত্র মা, বাবা আর আমি জানতাম। আর আমার প্রিয় বান্ধুবীর এমন কথা শুনে আমি এক পা না দু পায়ে রাজি ছিলাম। তারপর ভাইয়াকে জানানো হয়। সে কিছুই বলেনি। আর মা তোর পরিবারের সাথে কথা বলে। শুনেছিলাম আন্টি আঙ্কেলের ও সায় ছিল। তাই বাগদানের অনুষ্ঠান করা হয় কাল। আমি তো ভেবেছিলাম তুই জানিস সবকিছুই। এজন্য আগ বাড়িয়ে বলিনি। এখন বল দোষটা কার আমার নাকি আন্টি আঙ্কেলের?”

মেহনূর অবাক হয় এসব শুনে। তার মানে এতদিন তার বাবা মা চুপিচুপি এসব অনুষ্ঠানের আলোচনা করেছিল দিন রাত ভরে। মেহনূরের চিন্তিত মুখমণ্ডল মিলিয়ে যায়। কিন্তু এখানে তাকে না জানানোর কারণটা বুঝল না। আস্তে আস্তে শরীরে যত রাগ ছিল সব উবে যায়। অধর দ্বারা জিহ্বা ভিজিয়ে পৃথার দিকে তাকায়। ওমনি পৃথা থুতনিতে হাত দিয়ে বাচ্চাসুলভ স্বরে বলে,

“ওরে আমার ইনোসেন্ট ভাবী বান্ধুবী। এত মিষ্টি দেখতে তুই।”

মেহনূর পৃথার হাত সরিয়ে দিল। পরক্ষণে বলল,

“তুই জানিস না তোর ভাই আমাকে কতবার ক্লাসে সবার সামনে কানে ধরে দাঁড় করিয়েছে? তাহলে এ কথা কাউকে জানাসনি কেন? আর ওনিও বা কীভাবে রাজি হলো?”

পৃথার পেটফেঁটে হাসি এলো। তবুও এই হাসি দমিয়ে রাখল। মাথা চুলকে বলল,

“আমাকেও তো কতবার ক্লাসে কান ধরিয়েছে। এসব লজ্জার কথা কীভাবে কাউকে জানাই বল? তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো তখন তুই আমার বান্ধুবী ছিলি আর এখন তুই ভাইয়ের হবু বউ। চাইলেও আর দাঁড় করাবে না। তারও তো একটা মান সম্মান আছে তাইনা? আর ভাইয়া কিন্তু বিয়েতে হ্যাঁ না কিছুই বলেনি। চুপ থেকেছে বলে মা ধরে নিয়েছে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ বুঝেছিস।”

মেহনূর কিছুক্ষণ ভাবল। পৃথার দিকে তাকাতেই দেখল সে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। বিরক্তিকর আওয়াজ করে বলে উঠে,

“এরপর থেকে যদি আর দাঁড় করিয়ে রাখে তাহলে কিন্তু বিয়ে করব না। চল এখন ক্লাস শুরু হয়ে যাবে একটু পরেই।”

পৃথা মেহনূর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পা বাড়ায় ক্লাসের উদ্দেশ্যে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সেকেন্ড ফ্লোরে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে সাদাফ মেহনূরের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহনূরের একবার নজর যেতেই সে চোখ নিচু করে ফেলে। আকস্মিক খানিকটা লজ্জাও অনুভব করল। সেকেন্ড ফ্লোরের সবার শেষের রুমটাতে তাদের ক্লাসরুম। পৃথা সেখানে ভাই কে দেখে থেমে গেল। মেহনূর একটু দূরত্ব বজায় রেখে দূরে সরে দাঁড়ায়। এই গম্ভীরমূখো স্যারকে দেখলে আগে হাঁটু কাঁপতো। এখন তো অনুভব করছে তার অবলা হৃদয়টাও কাঁপছে ভীষণ। কাল যখন হাতে রিং পরিয়ে দিচ্ছিল তখন তো এক প্রকার হাঁসফাঁস লাগছিল। সবার আড়ালে ভয়ে শাড়ীটাকে চেপে ধরেছিল। কিন্তু মানুষটি নির্লিপ্ত ভাবে হালকা স্পর্শ করে রিং পরিয়ে দিয়েছিল হাতে। সাদাফ মেহনূরের হাতের দিকটায় তাকিয়ে আছে। কাল যে ছোট্ট হিরার রিং পরিয়ে দিয়েছিল এখনো সেটা হাতেই আছে। খুলে আসেনি। সর্বপ্রথম ভার্সিটি এসে বিপাকে পরেছিল যখন তার সিনিয়র, সমবয়সী, জুনিয়র প্রফেসররা শুভকামনা জানিয়েছিল। এত গোপন রাখার পর ও কীভাবে জানল সেটা নিয়েই ভাবছে অনেক্ক্ষণ ধরে।

সাদাফ ভ্রু কুঁচকে পৃথাকে জিগ্যেস করে,

“কোঁথায় ছিলে এতক্ষণ?”

পৃথা আমতাআমতা করে বলল,

“নিচেই ছিলাম ভাইয়া। তুমি বোধহয় দেখোনি।”

সাদাফ ফের বলল,

“ভার্সিটি আড্ডা দেওয়ার জন্যে নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা মিনিটের পর মিনিট বেঞ্চের উপর বসে সুখ দুঃখের আলাপ করার জন্য ভার্সিটি নয়। পড়াশোনা করো মন দিয়ে। নিজের সখীকেও উৎসাহ দেও পড়াশোনা বিষয়ে। যাই হোক লাঞ্চ টাইমে দেখা কোরো দু’জন। এখন চুপচাপ ক্লাসরুমে গিয়ে বসো।”

পৃথা বেচারা মাথা নেড়ে চলে আসে। মেহনূর সাদাফের কথায় ভীষণ অপমানবোধ করে। এমন করে বলছে যাতে তারা পড়াশোনা করে না। পৃথা মেহনূরের পরিস্থিতি বুঝে জোর করে টেনে নিয়ে আসে। কাঁধে হাত রেখে আস্তে করে বলে, ‘রাগ করিস না বান্ধুবী। এই রষকষহীন লোকটা তোর হবু বর। বিয়ের পর তুই ঠিক করিয়ে নিস। এখন ক্লাসে চল। নাহয় তোর আর আমার অবস্থা রফাদফা করে ছাড়বে।’ মেহনূর পৃথা ক্লাসরুমে চলে আসে। পর পর দু’টো পিরিওডের পর সাদাফের ক্লাস। পৃথা মেহনূর একদম সুন্দর ভদ্রভাবে বসে। প্রতিদিন এই ক্লাসেই তাদের বকা শুনতে হয়। সাদাফ ক্লাসে ঢোকা মাত্রই অনেক শিক্ষার্থীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাল। এ মুহুর্তে মেহনূর লজ্জায় মাথাও তুলেনি। ক্লাস যে অনেক্ক্ষণ হলো শুরু হয়েছে তাতেও তার খবর নেই। এদিকে পৃথা খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। সাদাফ লেকচার দেওয়ার সময় দু দু’বার মেহনূর কে ফলো করে। মেয়েটা মাথা নিচু করে কী ভাবছে। সাদাফ কখনোই ক্লাসে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী পছন্দ করে না। মেহনূরের ক্ষেত্রেও একটুও ব্যতিক্রম নয়। হাত থেকে মার্কার নামিয়ে কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠে,

“মিস মেহনূর ইবনাত আপনি কী ক্লাসে মনোযোগী? ক্লাস ভালো না লাগলে বেরিয়ে যেতে পারেন।”

পুরো গল্পটি যারা পড়তে চান তারা গল্প বাজার অ্যাপ থেকে শুধু পড়তে পারবেন আর যারা ইন্ডিয়া থেকে কিনতে চান তারা ফোনপে থেকে কিনতে পারবেন তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন

এ হৃদয়ে তুমি এসেছিলে পর্ব ২