ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৫

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৫
সারিকা হোসাইন

মেঘমেদুর দিন সাথে শিরশিরে সমীরণ সমকিছু মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ।আকাশে বিরাজমান হালকা কালচে রঙা মেঘ সকাল বেলায়ই সূর্যকে লুকিয়ে ফেলেছে এখনো বের হতে দেয়নি।তাই ঘড়ি দেখা ব্যাতিত সঠিক সময় অনুমান করা বেশ কষ্টকর।অল্প সময় বাদে বাদেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঝরে পড়ার পরেই আবার সামান্য আলোর ঝলক দৃষ্টি গত হচ্ছে।
রেজোয়ান চৌধুরীর বিশাল ড্রয়িং রুমে বিরস মুখে মাথা নিচু করে বসে আছেন সাদাফ শাহীর।মুখে তার কোনো কথা নেই শুধু ভেবে চলেছেন আসন্ন বিপদ নিয়ে।এদিকে সামিনা উৎসুক হয়ে বারবার ফিসফিস করে মিসেস তনুজার সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছেন।নিস্তব্ধ পরিবেশে তাদের ফিসফিসানি কথাবার্তা যেনো বিশাল কোলাহল ঠেকছে দুই ভদ্রলোকের কাছে।।

কিন্তু রেহান আর যুবরাজ দুজনেই নির্বিকার।তারা তাদের ধ্যানে ব্যাস্ত।এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখা গেলো না।কিন্তু এক কোনে বসে বসে রাজ্য সমানে ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
তার কাছে সাদাফ শাহিরকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।টিভিতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাকে দেখা গিয়েছে খুব রিজার্ভ ভাবে থাকতে।যুবরাজের থেকেও জেনেছে ভদ্রলোক খুবই রাগী।
“এখন যদি উনি বিয়েতে অমত করেন তখন কি হবে?আমাকে কি শেরহামের গলায় ঝুলে পড়তে হবে?ওহ নো!আ উইল ডাই।
এক নাগাড়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি কামড়ে নানান ভাবনা ভেবে চলেছে রাজ্য।এদিকে যুবরাজের কোনো হেলদোল না দেখে রাজ্যের মাথায় দপ দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দেখো কেমন ফাজিলের মতো বসে বসে দাঁত কেলাচ্ছে।মনে হচ্ছে সব চিন্তা আমার,তার কোনো ভাবান্তরই নেই।ব্যাটা বজ্জাত !দেবো নাকি বুক বরাবর একটা শুট করে?
আবার পরক্ষণেই মাথা নাড়িয়ে মনে মনে বলে উঠল
“আস্তাগফিরুল্লাহ, ছি ছি কি ভাবছি আমি এসব?এমন পরিস্থিতি কখনো না হোক আমাদের।আমার বন্দুক কখনো যেনো যুবরাজের দিকে না উঠে”
অবশেষে সাদাফ শাহীর মুখ খুললেন,খুব মেপে মেপে সমান্য কিছু কথাই তিনি বললেন ।আর সেই কথাগুলো শুনে সকলেই নড়েচড়ে উঠলেন।

‘”আমার ছেলের বিয়ে নিয়ে আমার সেরকম কিছু বলার নেই চৌধুরী সাহেব।ওর মায়ের মৃত্যুর পর আমি সেভাবে ওকে কিছুই দিতে পারিনি।আর যুবরাজ কখনো কিছুর জন্য জেদ ও করেনি।কিন্তু আপনার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে গতকাল সন্ধ্যায় ছোট বাচ্চাদের মতো খুব জেদ করেছে আমার ছেলেটা ।ছেলে আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছে আর আমি দেবো না এটা কিছুতেই হতে পারেনা।কিন্তু একমাত্র ছেলে হিসেবে ওর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক ফ্যান্টাসি ছিলো।হয়তো এই টুকু বেলার মধ্যে সেসব আমি কমপ্লিট করতে পারবো না।কিন্তু কিছু অপূর্ন ও রাখবো না মিস্টার চৌধুরী।
রেজোয়ান চৌধুরী সামান্য গলা খাকরি দিয়ে আহত স্বরে বলে উঠলেন

“কি বা করার আছে বলুন? খাল কেটে কুমির এনেছি,এখন সেই কুমির আমাদের সবাইকে ভক্ষণ করতে চাচ্ছে।যদি ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেতাম এরা বাপ ছেলে এমন ধুরন্দর তাহলে এভাবে বাপ হিসেবে নিজের মেয়েকে জলাঞ্জলি দিতাম না।ছেলেটা একদম হাত ধুয়ে মেয়েটার পিছনে লেগেছে।সকাল বিকাল বাড়িতে এসে বিয়ের জন্য তাগাদা দিয়ে চলেছে।
সাদাফ শাহীর পুরো ঘটনাই জানেন তাই বেশি কিছু না ঘাটিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন

“ওরা দুজন মিলে আমার ছেলেটার লাইফ টাই হেল করে দিয়েছে।মামা হয়ে ভাগ্নের পিছনে এভাবে লেগে থাকবে সেটাই তো আমার কল্পনার বাহিরে।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।শেরহাম যাতে আপনাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেই ব্যাবস্থা আমার ছেলে অবশ্যই করবে।শুধু একটু সময় দিয়ে ভরসা আর বিশ্বাস রাখুন যুবরাজের উপর।”
রেজোয়ান চৌধুরী আর সাদাফ শাহীরের আলোচনার মাঝে হঠাৎই সামিনা তাগাদা দিয়ে বলে উঠলেন
“ভাইজান দুপুর গড়াতে চললো বিয়ের কেনাকাটা ,এরেঞ্জমেন্ট সব বাকি পরে আছে।কখন কি হবে?
সাদাফ শাহীর সামান্য হেসে বলে উঠলেন

“তোর ছেলে সকল প্রস্তুতি নিয়ে তবেই মাঠে নেমেছে।তোর কিছুই ভাবতে হবে না।সময় মতো সবকিছুরই ব্যাবস্থা হয়ে যাবে দেখবি!
সাদাফ শাহীরের এমন অদ্ভুত কথা শুনে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যুবরাজের দিকে বিস্ফারিত নেত্রে তাকালো রাজ্য।মুহূর্তেই চোখাচোখি হলো দুজনের।সুযোগ বুঝে যুবরাজ বাঁকা হেসে চোখ টিপে জানান দিলো
“আজ তোমার খবর আছে!
যুবরাজের এমন আচরণে লজ্জার শিহরণ বয়ে গেল রাজ্যের সর্বাঙ্গে।রক্তিম আভায় ছেয়ে গেলো পুরো গাল আর নাকের ডগা।না চাইতেও বারবার ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক চলে আসছে।তাই নিজেকে এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে চুপিচুপি নিজের কক্ষে এসে দরজা লাগিয়ে দুই হাতের আজলায় মুখ লুকিয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো রাজ্য।

নিজের অন্ধকার ঘুটঘুটে কক্ষে পাগলের মতো সমান তালে পায়চারি করে চলেছে শেরহাম আর থেকে থেকে ওয়ালের সাথে নিজের মাথা নিজেই বাড়ি মারছে।কানের কাছে বারবার যুবরাজের বলা কথা গুলো কে যেন চিৎকার করে বলে যাচ্ছে সমানে
‘তুই কাপুরুষ, তুই ব্যার্থ শেরহাম ফাইয়াজ।তুই রাজ্যকে ছুঁয়েও দেখতে পারলি না আর যুবরাজ মেয়েটাকে আজ রাতে পুরো দমে ভোগ দখল দেবে।ইউ আর এ লুজার শেরহাম ফাইয়াজ ইউ আর এ লুজার।
দুই হাতে কান চেপে ধরে সজোড়ে গর্জে উঠছে শেরহাম।তবুও কানের কাছে থেকে কথা গুলো সড়ছে না।উপায়ন্তর না পেয়ে দেয়ালে মাথা দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করতে করতে এক পর্যায়ে নিজের মাথাই ফাটিয়ে ফেললো সে।কপাল গড়িয়ে নাকের ডগা বেয়ে ঠোঁটের কাছে এসে বিলীন হলো সেই রঞ্জন তরল।সেসবে শেরহামের ভ্রূক্ষেপ নেই।সে শুধু যুবরাজকে কিভাবে শেষ করবে সেই ভাবনা ভাবতে লাগলো।

একপর্যায়ে নিজের ফোন বের করে সুবহান শেখের নম্বরে ডায়াল করে ফোন কানে তুললো শেরহাম।বার কয়েক রিং হয়ে ফোন কেটে গেলো।রাগে শেরহাম তার বোধ শক্তি হারালো।সে একের পর এক কল করতেই থাকলো।অবশেষে ওপাশ থেকে সুমিস্ট স্বরে উত্তর এলো
“সুইচড অফ”

সবকিছু যখন সহ্যের বাহিরে চলে গেলো ঠিক সেই মুহূর্তে সুবহান শেখ কে অকথ্য গালিগালাজ করে শেরহাম চলে গেলো ড্রিংক্স কর্নারে।ড্রিংক্স কর্নার থেকে কোকেইন পাউডার ,কটন ফিল্টার সিরিঞ্জ আর মিনারেল ওয়াটার এর বোতল নিয়ে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে গেলো সে।এরপর নিজের শরীরে ড্রাগস ইনজেক্ট করে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় উঠে দাঁড়ালো এবং এলোমেলো পায়ে বিছানায় শুয়ে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই শেরহাম তার পরিচিত জগতে চলে গেলো এবং অস্ফুট স্বরে কি যেনো বির বির করতে করতে মুহূর্তেই তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।

রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়িতে ঘরোয়া ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।সেরকম কোনো নিকট আত্মীয় না থাকায় রাজ্যের কিছু বন্ধু আর কলিগ কে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে শুধু।বরযাত্রী হিসেবে আছেন সাদাফ শাহীরের অফিসের সেক্রেটারি আর কয়েকজন ব্যাবসায়িক বন্ধু।
দুপুরের পর থেকে রেহান খুবই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে,এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।রাজ্যের মেসেজ পেয়ে এনি দুপুরের পর পরই এসে পড়েছে।কিন্তু এই সাড়ে পাঁচ ঘন্টায় এক মুহূর্তের জন্যও রেহানের দেখা পায়নি সে।এতে অবশ্য মন আকাশে বিষাদের মেঘেরা উড়াউড়ি করেছে।কিন্তু এনি তা কাউকে বুঝতে দেয়নি।

পার্লার থেকে কয়েকজন মেয়ে এসে রাজ্যকে সাজাতে বসে গেলো।এনি এসেই রাজ্যের দুই হাত ভরে মেহেন্দির নিখুঁত ডিজাইনে আল্পনা একে দিয়েছে।সুন্দর করে অভিনব কায়দায় দুই হাতের তালুতে যুবরাজের নাম খানা লিখতে মোটেও ভুল করেনি সে।নাম লিখা নিয়েও বন্ধু মহলের কতো হাসি তামাশা।বহুত দিন বাদে বেনজির আশফী কেও আজকে অনেক খুশি লাগছে।নিজের হাতে দায়িত্ব নিয়ে সব কিছুর খেয়াল রাখছেন তিনি।আজকে মোটেও তাকে কোনো খবিস রাগী বজ্জাত অফিসার মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে সে রাজ্যের খুব কাছের কেউ।বেনজির আশফির হাসিখুশি ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের বুক ভেঙে কান্না এলো।সহসাই তার মনে হলো
“দায়িত্ব বড় অদ্ভুত জিনিস।নিখুঁত ভাবে এমন দায়িত্ব পালন করতে কজন পারে?আমি আপনার রেগে যাবার কারন আজ বুঝতে পেরেছি স্যার।ভবিষ্যতে আমি আর কোনো কাজে হেয়ালিপনা করবো না প্রমিস”
হঠাৎই হন্তদন্ত করে রেহান দৌড়ে এসে খবর জানালো বর আসছে।

এই খবর পুরো বাড়ি ছড়িয়ে যেতেই রাজ্যের কানেও চলে এলো এনি মারফত।
পার্লারের মেয়েটা তখন ব্লাশন এর লাস্ট টাচ আপ করবে।বর আসার খবর শুনে ভয়ে রাজ্যের মুখ পাংশু ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।হঠাৎ অজানা আতঙ্কে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে দুই চোখ ছলছল করে উঠলো।
রাজ্যের মনের ভয় এনি বুঝতে পারলো।সে রাজ্যকে বুকে জড়িয়ে হাতের ইশারায় পার্লারের মেয়ে গুলোকে রুমের বাইরে চলে যেতে নির্দেশ দিল।

এনির নির্দেশ পেতেই মেয়ে গুলো তাদের ব্যাগপত্র নিয়ে রুমে বাইরে বেরিয়ে যেতেই দরজা লক করে দিলো এনি।
“ভয়ের কিছুই নেই,যুবরাজ বাড়ির বাইরে তার নিজস্ব লোক সেটিং দিয়ে রেখেছে।আর আমরা তো আছিই।তোর কি মনে হয় আমরা শুধু বিয়ে খেতে এসেছি?আজ তোদের পুরো পরিবারের সেফটির দায়িত্ব আমাদের।তুই ভয় না পেয়ে জাস্ট চিল কর।নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোর ভাইকে আমি প্রটেক্ট করবো প্রমিস”
কথা গুলো শক্ত কন্ঠে বলে রাজ্যকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে রিল্যাক্স করার চেষ্টা চালালো এনি।এনির দেয়া সাহসে রাজ্য কিছুটা স্বস্তি পেলো।তবুও ভয় পুরোপুরি কাটলো না তার।
“শেরহাম কে একদম বিশ্বাস নেই।দাদাভাই কে পেলে এবার সে আর ছাড়বে না।আমরা দাদাভাই কে এবার হারালে আর বাঁচবো না রে এনি।”

এনি রাজ্যের মাথায় হাত বুলিয়ে নম্র কন্ঠে বলে উঠলো
“কিচ্ছু হবে না তার।তুই আমার উপর ভরসা রাখ”
“তুই কি দাদাভাই কে ভালোবাসিস?
রাজ্যের এহেন আকস্মিক প্রশ্নে ভড়কে গেলো এনি।নিজের থেকে রাজ্যকে ছাড়িয়ে এদিক সেদিক মুখ ঘুরিয়ে খুক খুক করে কাশতে লাগলো শুধু।
“আমি জানি তুই দাদাভাই কে ভালোবাসিস,আমার চোখে ফাঁকি দিতে তুই অক্ষম হয়েছিস এনি রহমান”
রাজ্যের এমন জিজ্ঞাসাবাদে লজ্জায় রাঁঙ্গা হলো এনির শ্যাম বর্ণের পাতলা গাল।রাজ্যের প্রশ্নের উত্তর কি দেবে সেটাই মস্তিস্ক হাতড়ে খুঁজতে লাগলো।অবশেষে সন্তোষজনক কোনো উত্তর না পেয়ে অযথাই এটা সেটা ধরে নাড়াচাড়া করতে লাগলো!

“আমার দাদা ভাইকে বিয়ে করবি!
জানিনা”
“আলবাত জানিস,বল বিয়ে করবি?
“যদি বলি হ্যা করবো তাহলে কি করবি”?
“কি করবো আবার বিয়ে দেবো”
“আচ্ছা তাহলে তোর দাদা ভাইকে আমাকে দিয়ে দে আমি তার সারাজীবনের খেয়াল রাখবো।কখনো কষ্ট পেতে দেবনা।ছোট বাচ্চার মতো বুকে ভেতর আগলে রাখবো।”
দরজার এপাশ থেকে কেউ একজন সব গুলো কথা শুনে লজ্জায় মুচকি হেসে মাথা চুলকে নিজের কক্ষে চলে গেলো।

বরপক্ষ এসেছে আরো আধ ঘন্টা আগে।কাজী তার পেপার্স গুলো রেডি করে যুবরাজের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।কোনো প্রকার বাছবিচার ছাড়াই ঘসঘস করে সিগনেচার দিয়ে সেই কাগজ কাজীর পিএর কাছে দিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো
“তাড়াতাড়ি আমার বউয়ের সিগনেচার এর ব্যাবস্থা করুন।আবহাওয়ার অবস্থা বেশি ভালোনা।আমি বউ নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবো।বহুদিন পর বিয়ে করতে আসছি।মনের অবস্থা বুঝেন না?
কাজীর পি এ মনে মনে বলে উঠলো

“আচ্ছা নির্লজ্জ্ব তো এই লোক,এভাবে এতো গুলো মানুষের সামনে এভাবে কেউ কথা বলে?
“নির্লজ্জ্ব ই আমি।নিজের বউ নিয়ে টানাটানি কোন সাধু পুরুষ সহ্য করবে বলুন দেখি?
যুবরাজের এমন কথায় থতমত খেলো কাজীর পিএ।যুবরাজের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি মেলে দৌড়ে কাজীর কাছে চলে এলো।
এসে কাজীর কানে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো

“আমার মনে হয় মেয়েটির বাবা মা মেয়েটিকে জোর করে কোনো পাগল ছাগলের হাতে তুলে দিচ্ছে”
পান চিবুতে চিবুতে পানের পিক বাইরে ফেলে আঙুলের ডগা থেকে খ্যানিক চুন জিহবার আগায় নিয়ে চশমার উপর দিয়ে পি এর দিকে তাকিয়ে ভারিক্কি ঝনঝন গলায় কাজী ধমকে উঠলেন
“যাকে পাগল বলছো জানো সে কে?
কাজীর পিএ চমকে উঠে মিনমিন করে বলে উঠলো
“কে স্যার?
“আমি নিজেও জানিনা”
বলেই কাজী তার কাজে মনোযোগ দিলেন ।এদিকে কাজীর উত্তর শুনে রেগে আগুন লাল হয়ে কোমরে দুই হাত রেখে কাজীর দিকে ক্রুর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো তার পিএ ।

কাবিনের পেপারে রাজ্য সিগনেচার দিয়েছে আরো অনেক আগেই।এখন শুধু বিয়ে পড়ানো বাকি।মিসেস তনুজা তজবিহ হাতে ফ্যাকাশে মুখে সমানে আল্লাহকে ডেকে চলেছেন।
“হে মাবুদ আমার ছেলে মেয়েকে ভালো রাখো।কোনো বিপদ তুমি আমার সন্তানদের উপর দিও না।বাবা মা হয়ে সন্তানের এমন দুর্ভোগ সহ্য করার ক্ষমতা যে নেই গো মাবুদ”..
তনুজার হুশ ফিরলো সকলের হইহুল্লোড় এ।রাজ্যের বন্ধুরা নাচ গান করতে করতে একটা টকটকে লাল রঙা সামিয়ানার নিচে খুব যত্নের সাহায্যে রাজ্যকে নিয়ে নীচে নেমে আসছে।মুহূর্তেই বউ এসেছে বউ এসেছে বলে পুরো ড্রয়িংরুম অস্থির হয়ে উঠলো।
বউ এসেছে শুনে যুবরাজের টনক নড়লো।
ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলকের জন্য রাজ্যকে দেখে সে হার্টবিট মিস করে বুক চেপে ধরে ঠাঁয় বসে রইলো।আর মুখ ফুটে সজোড়ে বেরিয়ে এলো

“মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ””
রাজ্য তার গায়ে অফ হুয়াইট রঙের জামদানি জড়িয়েছে যার জমিন পাড় আর আঁচল জুড়ে সোনালী জরি সুতার কাজ।সারা শরীরে শোভা পেয়েছে ভারী ভারী স্বর্ণালঙ্কার।মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোয়া,চোখে ডার্ক আইশ্যাডো ঠোঁটে ন্যুড কালার লিপস্টিক আর হালকা ব্লাশনের টাচ।যুবরাজের কাছে রাজ্যকে সাধারণ কোনো মানবী ঠেকছে না ।
“আরে আমার বউ তো পুরা রূপকথার শেহজাদীর মতো সুন্দরী।ইয়া মাবুদ এতো সুন্দর বউ আমার কপালে কেমনে রাখলে তুমি?
খুশিতে দেয়ালে মাথা বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে যুবরাজের।নিজের উচ্ছাস ধরে রাখতে না পেরে খুশি খুশি মুখ নিয়ে সাদাফ শাহীরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“পাপা আমার হুরমতি বউ,কতো সুন্দর দেখেছো?

সাদাফ শাহীর ছেলের এমন বোকা বোকা কথায় আবেগে আপ্লুত হয়ে গোপনে চোখের জল মুছলেন।কতদিন বাদে তিনি তার একমাত্র ছেলেকে এতোটা খুশি দেখেছেন মনেই করতে পারলেন না।
রাজ্যকে নীচে আনা হলে ফুলের তৈরি ছাদনা তলায় বসানো হলো তাকে এরপর মাঝখানে দেয়া হলো ধবধবে সাদা রঙের পাতলা পর্দার বেড়া।সেই বেড়ার ওপর পাশে বসানো হলো যুবরাজকে।
সকলের মধ্যে উপচে উঠা উচ্ছাস।কাজিকে সাদাফ শাহীর দ্রুত বিয়ে পড়ানোর হুকুম দিলেন।শুরু হলো বিয়ের কাজ।
রাজ্যকে কবুল বলতে বললে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।সেই কান্নার শব্দে রেহান,তনুজার হৃদয় মুষড়ে উঠলো।কঠিন হৃদয়ের মানুষ রেজোয়ান চৌধুরী ও আজকে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।সকলের কান্নায় যুবরাজের চোখ থেকেও এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
রেহান রাজ্যকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আহত স্বরে কবুল বলতে আদেশ দিলো।সেই আদেশ মান্য করে রাজ্য নিভু কন্ঠে বলে উঠলো

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৪

“কবুল”
সকলে সজোড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে যুবরাজের মতামত জানতে চাইলে সর্বাধিক খুশি যুবরাজ প্রশস্ত হাসিতে সজোড়ে বলে উঠলো
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল”

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৬