ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৭

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৭
সারিকা হোসাইন

সারা রাতের ভারী বর্ষনের পর শেষ রাতের দিকে বৃষ্টির দমক কিছুটা কমেছে।তবে এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝড়েই যাচ্ছে।আকাশ কিছুটা সাফ হয়ে হালকা করে সূর্যের মুখ দেখবার সুযোগ করে দিয়েছে।ভোরের আলো ফুটেছে তাও ভালোই কিছুক্ষণ আগে।কোনো জন মানবের সাড়া শব্দ পাওয়া না গেলেও থেকে থেকে দুই একটা চড়ুই পাখির কিচিরমিচির ডাক কর্ণকুহরে এসে ধাক্কা খাচ্ছে।যুবরাজের বাংলোর থাই জানালার কাঁচে ছোট ছোট মুক্ত দানার ন্যায় বৃষ্টির কনা সেটে বাইরের দৃষ্টি সীমানা ঝাপসা করে রেখেছে।তাই বাহিরের প্রাকৃতিক পরিবেশ আবছা আবছা দৃষ্টি গত হচ্ছে।

যুবরাজের পেশীবহুল বাহুডোরে পরম শান্তিতে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে রাজ্য।সারা রাতের উষ্ণ আদরে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে কখন ঘুমে তলিয়েছে সে নিজেই জানেনা।কিন্তু ঘুম নেই যুবরাজের চোখে।সারা রাত সে এক সেকেন্ডের জন্যও দুই চোখের পাতা এক করেনি।প্রচন্ড জেদ আর ক্রোধে শরীরের রক্ত টগবগিয়ে ফুটছে তার। এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করলেই সুবহান শেখের ক্রুর হাসি যুক্ত বিশ্রী চেহারা খানা চোখের সামনে ভেসে উঠছে যা যুবরাজের একদম সহ্য হচ্ছে না।ক্রোধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দাঁতে দাঁত চেপে ফুঁসে উঠে দুই হাতে পিষে ধরলো রাজ্যকে।ব্যাথায় ককিয়ে ঘুম ভঙ্গ হলো শীর্ন দেহের মানবীর।রাজ্যের আর্তনাদে হুঁশে ফিরলো যুবরাজ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাজ্য কিছু বুঝে উঠার আগেই যুবরাজ বিচলিত হৃদয়াহত হলো।কন্ঠে উদ্বিগ্নতা আর আকুলতা নিয়ে বলে উঠলো
“আম সরি, আম রিয়েলি সরি।একদম খেয়াল ছিলো না যে আমার বুকে একটা ছোট তুলতুলে হ্যামিং বার্ড শুয়ে আছে।অনেক ব্যাথা লেগেছে জান?
রাজ্য তার ছলছলে দৃষ্টিতে মাথা নাড়িয়ে নিচু স্বরে মলিন কন্ঠে বলে উঠলো
“না অতোটা লাগেনি”

কথাটি বলেই যুবরাজের বুকে মুখ লুকিয়ে ব্যাথায় বেরিয়ে আসা অশ্রুকে গোপন করার প্রয়াস চালালো।চৌকস যুবরাজ ঠিকই বুঝলো ব্যাথার মাত্রা কতো খানি।তবুও না বুঝার ভান ধরে বসে রইলো।কারন এখানে বেশি কথা বলতে গেলেই পাল্টা পাল্টি প্রশ্নের সৃষ্টি হবে।যা এই মুহূর্তে যুবরাজ একদম চাচ্ছে না।নিজেকে কোনো মতে ধাতস্থ করে যুবরাজ রাজ্যের ঘন চুলে বিলি কাটলো।
“আসলে ঘুম ভেঙেই তোমাকে এই এবস্থায় দেখে সহ্য হচ্ছিলো না।মনে হচ্ছিলো তোমাকে দুমড়ে মুচড়ে খেয়ে ফেলি।কনট্রোল লেস হয়ে বেশি ব্যাথা দিয়ে ফেলেছি।এজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত।আর কখনো এমন সিরিয়াস হবো না।প্রমিস।

যুবরাজের এমন আদুরে কন্ঠে রাজ্য তার মোলায়েম হাত দিয়ে যুবরাজের কোমর জড়িয়ে ধরে পরম আবেশে পুনরায় চোখ বুঝলো।কিন্তু মনন আর মস্তিষ্কে চললো সন্দেহের খেলা।
“কিছু তো একটা হয়েছেই!সেই কিছুটা কি তা আমাকে অবশ্যই জানতে হবে।গত রাতে যুবরাজের নগ্ন পিঠে অসংখ্য কাটা ছেড়া আর জখমের দাগ দেখা গিয়েছে।কিছু জখম একদম নতুন।এগুলোর রহস্য খুব দ্রুত আমাকে জানতেই হবে আর আমাকে এভাবে ফেলে সে গেছিলো ই বা কোথায়?”
বিভিন্ন ভাবনা ভাবতে ভাবতে না চাইতেও রাজ্যের হাত যুবরাজের খালি পিঠে চলে এলো।এবং উৎসুক হয়ে কাটা জখমের উপর নিজের জহুরী আঙ্গুলি চালনা করলো।ঘটনার পুরোটাই বুঝতে পারলো যুবরাজ।মুখে কিছুই না বলে স্মিত হেসে রাজ্যের ব্রেন ওয়াশে ধ্যান দিলো।

“আমাকে সিডিউস করার চেষ্টা করলে কিন্তু তোমারই লস ডিয়ার ওয়াইফ”
“আমি মোটেও আপনাকে সিডিউস করছি না ডিয়ার শেইমলেস”
“তাহলে উষ্ণ হাতের শিহরণ কেনো দিচ্ছ?জানোনা বারুদ থেকে আগুনের দূরে থাকতে হয়?
“আসলে আপনার পিঠে…….
রাজ্যকে কথা শেষ করতে না দিয়েই রাজ্যের চোয়াল চেপে ধরে জবরদস্তি তে নিজের উষ্ঠদ্বয় দিয়ে আকড়ে ধরলো রাজ্যের নরম পাতলা শুষ্ক ঠোঁট জোড়া।কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে যাবার পর শ্বাস নিতে না পারায় হ্যাচকা টানে যুবরাজের হাত সরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে যুবরাজের দিকে দৃষ্টি মেললো রাজ্য।
“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি ”

মুখে ফিচেল হাসি ঝুলিয়ে রাজ্যের গলার ভাঁজে নিজের মুখ গুঁজে দিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো
“এতো কৌতুহল মোটেও ভালো না।সময় এলে সব জানতে পারবে।এখন আদর করতে দাও,সহ্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।ছোটা ভিম কন্ট্রোলের বাইরে”
না চাইতেও যুবরাজের সাথে তাল মেলাতে হলো রাজ্যকে।কিন্তু আনন্দ উপভোগের চাইতে নানাবিধ ভয়ঙ্কর ভাবনা ভর করলো দুজনের মস্তিষ্কেই।কিন্তু কেউ কারো মনোভাব প্রকাশ করলো না।

নিজের তুলতুলে নরম বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে এলোমেলো ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে আছে শেরহাম।কোকেইন এর নেশা এতোটাই গভীর ভাবে জেঁকে বসেছিলো তাকে যে সে আর সারা রাতের কোনো খবরই বলতে পারে না।রাত ফুরিয়ে কখন ভোর নেমেছে এটাও তার অজানা।দরজা জানালা এমন ভাবে আটকে রাখা হয়েছে যে বাইরের শব্দ তো দূর একটু আলো পর্যন্ত কক্ষে প্রবেশ করছে না।
ধীরে ধীরে হালকা হয়ে এলো শেরহামের ঘুম।অল্প পিট পিট করে তাকিয়ে কিছু সময় সে ওভাবেই বিছানায় পড়ে রইলো।নেশার ঘোর অল্প অল্প করে কেটে যাচ্ছে।শরীর খুব হালকা লাগছে।মাথাটা ব্যাথায় টনটন করছে।এই মুহূর্তে একটা হ্যাঙওভার ড্রিংক্স খুব প্রয়োজন।কিন্তু কে দেবে তাকে এই ড্রিংক্স?
হঠাৎই রাজ্যের হাসিমাখা মুখশ্রী মনে পড়তেই অনিন্দ্য ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো শেরহামের মন।

“তুমি ই একমাত্র লাকি গার্ল যাকে শেরহাম ফাইয়াজ ভোগ নয় রানী করে রাখতে চেয়েছে তার নিজ রাজ্যে।এবং খুব শীঘ্রই তোমাকে দখল করবো আমি।
রাজ্যকে পাবার সুখে মুখের হাসি প্রশস্ত হলো শেরহামের।কিন্তু নিমিষেই যুবরাজের চেহারাখানা মস্তিষ্কে হানা দিতেই রাগে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো পুরো শরীর।
শোয়া থেকে চট করে উঠে বসে নিজের চুল নিজেই শক্ত মুঠিতে টেনে ধরলো শেরহাম।
“তোকে আমি দেখে নেবো যুবরাজ!আমি তোকে ছাড়বো না।রাজ্যকে জড়িয়ে অনেক বড় বড় ভাষণ তুই দিয়েছিস।তোর জিভ যদি আমি কে*টে না নিয়েছি তবে আমার নাম ও শেরহাম নয়।
রাজ্যকে এক পলক দেখার বাসনায় মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো শেরহামের।কতো বার নির্লজ্জের মতো চৌধুরী বাড়িতে গিয়েছে সে।কেনো গিয়েছে এই খবর কি কেউ রেখেছে?

রাজ্যকে কখন সে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা তো সে নিজেই জানেনা।এক পলক মেয়েটিকে চোখের দেখা দেখার জন্য নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে সময় অসময়ে ছুটে গিয়েছে ওই বাড়িতে।কিন্তু মেয়েটি একবারের জন্য চোখ তুলে দেখেই নি তাকে।
“কিসের এতো অবহেলা আমার প্রতি তার?কি নেই আমার?যুবরাজের থেকে সবকিছুই বেশি বেশি আছে আমার।তবুও কেনো রাজ্য আমাকে ভালোবাসবে না?দরকার হলে হিরে জহরতে মুড়িয়ে রাখবো।তবুও আমাকে তার ভালোবাসতেই হবে!
আর ভাবতে পারেনা শেরহাম।এখনই একবার রেজোয়ান চৌধুরীর মুখোমুখি হওয়া চাই।

“ভালোয় ভালোয় মেয়েকে আমার হাতে তুলে না দিলে জোর করে উঠিয়ে আনবো।”
রাগে ফুঁস ফুঁস করতে করতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।ঝটপট ফ্রেস হয়ে পোশাক পাল্টে সিঁড়ি ধরে নীচে নেমে এলো।এদিকে একের পর এক ফোনের ভাইব্রেট হয়ে যাচ্ছে শেরহামের মুঠোফোনে।।রাজ্যকে দেখার উত্তেজনায় সেই ফোন তুলতে বেমালুম ভুলে গেল সে।দ্রুত হাতে সু রেক থেকে এক জোড়া স্নিকার্স পায়ে তুলে খট করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো।
ঘরের বাইরে দৃষ্টি মেলতেই বেশ কিছুটা অবাক হলো শেরহাম।
বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে দুটি ফুলে সজ্জিত খয়েরি রঙা কফিন সার বেঁধে রাখা হয়েছে।

“এগুলো কিসের কফিন রাখা হয়েছে এখানে?আর কে রেখেছে?শেরহাম ফাইয়াজ এর বাড়ির সামনে কফিন রাখার স্পর্ধা হয়েছে কোন কলিজা ওয়ালার?
কথা গুলো গর্জে উঠা কন্ঠে বলে দৌড়ে কফিন দুটোর নিকট এগিয়ে গেলো শেরহাম ।শকুনি দৃষ্টিতে কফিন দুটোর দিকে নজর বুলাতেই কুচকুচে কালো রঙের একটা খাম চোখে পড়লো।খয়েরি ফুলে সজ্জিত কফিনে এমন কুচকুচে কালো রঙের খাম দেখে কপাল কুঞ্চিত হলো শেরহামের।
বাজ পাখির মতো ছো মেরে সেই খাম হাতে তুলে উল্টে পাল্টে দেখতেই দুই রঙা চোখের মণি জলন্ত কয়লার খনিতে পরিণত হলো।

অত্যাধিক ক্রোধে কপালের আর ঘাড়ের শিরা গুলো নীল হয়ে ফুলে উঠলো।অস্বভাকি ভাবে ভারী শব্দে নিঃশাস পড়তে লাগলো।
কালো রঙের খামটিতে খুব যত্নের সাথে খোদাই করে লিখা হয়েছে
“গিফট ফ্রম ইউভরাজ”
নিজের থাবা যুক্ত হাতে সেই খাম দুমড়ে মুচড়ে ছুড়ে ফেললো শেরহাম।এরপর সজোড়ে পা দিয়ে লাথি মেরে কফিনের ঢাকনা খুলে ফেললো।

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৬

কফিনের ঢাকনা খুলতেই চোখে পড়লো ভেজা ফ্যাকাশে বর্ণের নিজের বিশ্বস্ত ভাড়াটে খু*নি সিরাজের মৃ*ত মুখশ্রী।
নিজের ক্রোধের লাগাম আর টেনে ধরতে পারলো না শেরহাম।ধরণী কাঁপিয়ে জলন্ত চোখে গর্জে উঠলো শেরহাম
“যুবরাজ”

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৮