কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৪৮

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৪৮
লাবন্য ইয়াসমিন

চমৎকার আপনার অতিথি সেবা। আমি দারুণ খুশী এবং মুগ্ধ হয়েছি হাকিম খয়রুল্লা বিন আলিম। এবার বলুন আসল সত্যি টা? লুকোচুরি খেলা তো অনেক হলো। সাঈদের বাবাকে কেনো হ/ত্যা করা হয়েছিলো। উনি সাধারণ কোনো মানুষ ছিলেন না।

জ্বীন ছিলেন উনি। কহিনুরের সঙ্গে উনার পূর্বপুরুষের সম্পর্ক ছিল মানছি কিন্তু এই হ/ত্যাটা কেনো হলো? আচ্ছা একজন জ্বীনের আয়ুষ্কাল কত বছর হতে পারে?
কহিনুরের কথা শুনে হাকিম সাহেব কিছুটা বিচলিত হলেন তবে ঘাবড়ালেন না। মৃদু হেসে সামনে বসতে বসতে উত্তর দিলেন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহারে সময় এতো কথা বলতে নেই।খাবার গ্রহণ করুন। আপনি আমার গৃহের অতিথি হয়ে এসেছেন এতে আমি ধণ্য হয়েছি। আর আপনি কি সেই হাদিস সম্পর্কে অবগত না যেখানে আপনার আমার প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন আমার উম্মতের আয়ুষ্কাল ষাট সত্তরের মধ্যে। উনার উম্মতের মধ্যে মানুষ এবং জ্বীন দুটোই আছে কিন্তু।
হাকিম সাহেবের কথা শুনে কহিনুর তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসলো। আঙুরের টুকরো মুখে ঢুকিয়ে উত্তর দিলো,

সেটা আমিও জানি তবে ইবলিশ শয়/তানকে সম্পর্কে কিছু বলুন?জ্বীন সম্প্রদায়ের একটা অংশ জুড়ে তো তারা অবস্থান করছে হাকিম সাহেব। কহিনুর সৃষ্টি হয়েছিলো এক ঈমানদার জ্বীনের অংশ থেকে তবে তাঁকে কে পরিচালনা করেছিলো? কৃষকদের ছয় কন্যার হ/ত্যা এসব কি শুধুই কাকতলীয়ভাবে হয়েছিলো?

এতো এতো রহস্য ছড়িয়ে রাখা হয়েছে কিছুটা উন্মুক্ত করুন। বলুন এসব ছিল শয়/তানের প্ররোচনা। কালো শক্তি বিস্তারারের কৌশল। মানুষকে খারাপ পথে পরিচালনা করার একটা মাধ্যম। কি চমৎকারভাবে জাল বিস্তার করা হয়েছে। একে একে লোভ দেখিয়ে অর্থ সম্পত্তি দিয়ে ঈমানদার মানুষের ঘরে শয়/তানের বসবাস গড়া হয়েছে তাইনা হাকিম সাহেব? বলে ফেলুন কে এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। আমার বিশ্বাস আপনি জানেন। এই যে আমি এখানে এসেছি এটাও আপনি জানতেন।

কহিনুর শেষের কথাগুলো বেশ কড়া ভাবেই বলল। সত্যি তো একজন ঈমানদার ব্যক্তি হঠাৎ করে কিভাবে মানবীর রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে উঠেছিলো? শয়তা/নের প্ররোচনা নিশ্চয়ই ছিল। কৃষকদের ঘরে সেতো সাহায্য করতে গিয়েছিলো। কহিনুরের ভাবনার অবসান ঘটলো হাকিম সাহেবের কথা শুনে,

যার বন্ধু নিজে শয়/তান সে কিভাবে ঈমানদার হয়ে মৃত্যু লাভ করবে বলুন? কৃষকদের গৃহে প্রবেশদ্বারেই তো ছিল বাঁধা। রূপবতী রমনীদের উপরে শয়/তানের নজর আগে থেকেই ছিল। ওকে ব্যবহার করেছিলো মাত্র। তাছাড়া আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল জ্বীনের দেহজ্যোতি থেকে উৎপন্ন শক্তি থেকেই কহিনুর সৃষ্টি হলে সেটা সাধারণ হবে না।

সঙ্গে মিলবে ওই ছয় রমণীর আত্মার শক্তি। আর ওটা একবার যদি শয়/তানের কাজে ব্যবহার করা যায় তবে তাদের বিস্তার ঘটানো শুধু সময়ের অপেক্ষা। সাঈদের পিতা ছিলেন একজন লোভী আর পাপী একজন। ওর ধারণা ছিল কহিনুর সৃষ্টি হয়েছে ওর পূর্বপুরুষের ভস্ম থেকে। তাই ভেবেছিলো এতে ওর হক আছে। তাই ওটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলো। ফলে কালো শক্তির হাতে ওর প্রাণঘাতী হয়েছে আর সাঈদের আম্মি পরি রাজ্যের বাসিন্দা।

জ্যোতির্বিদ্যাতে এই জন্যই উনি বেশ পারদর্শি ছিলেন। সাঈদের পিতা উনাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেন। পরে ভালোবাসার জন্য উনি সব ছেড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যাননি। ভেবেছিলেন সাঈদকে নিয়ে বাকীটুকু জীবন পার করবেন এখানেই কিন্তু ওই যে নিয়তি পিছু ছাড়ে না। উনাকে হঠাৎ গায়েব করা হলো। তবে ঘটনার আগে উনি কৌশলে সাঈদকে লুকিয়ে রাখলেন। বলে গেলেন ওখানেই অবস্থান করতে। সাঈদের আম্মি জানতেন আপনি ওখানে আসবেন। আপনাকে দরকার ছিল সাঈদের আর ওর আম্মীর জন্য। একমাত্র আপনি পারবেন উনাকে উদ্ধার করতে। আমি এইটুকুই জানি।

হাকিমের কথা শুনে কহিনুর খেতে খেতে উত্তর দিলো,
আসল অপরাধী কে সাঈদের পূর্বপুরুষের ভাই নাকি উনার বন্ধু?
অবশ্যই ওর বন্ধু। ওর ইশারায় সবটা হয়েছে। শয়/তানের কাজ ঈমানদারদের ধোকা দেওয়া। আর সেটাই দেওয়া হয়েছে আর সফলও হয়েছে। বহুপরে যখন কহিনুরের শক্তি কমে গিয়েছিলো ওটার শক্তি ফিরিয়ে আনতে আপনার জন্মানোটা দরকার ছিলো। এখন আপনার মৃ/ত্যুর মধ্যে দিয়েই কহিনুর পাথর আবারও শয়/তানের কাজে আসবে।
হাকিম সাহেব বেশ আবেগপূর্ণভাবে কথাগুলো বললো। কহিনুর মোটেও ভয় পাচ্ছে না। খাওয়া শেষ করে উত্তর দিলো,

আমার মৃ/ত্যু কিভাবে হবে এটাতো আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে না হাকিম সাহেব। আপনার থেকে কিছুটা সাহায্য পাওয়ার আশা নিয়ে এসেছি। নিরাশ করবেন কি উপকার করতে রাজি হবেন সম্পূর্ণ আপনার বিষয়। জোর করবো না। ভেবে চিন্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে আমার জন্য সুবিধা হতো। সাঈদকে ব্যবহার করে আপনার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছনোটা এক প্রকার অপরাধ মনে করছি। তবুও কিছু করার ছিল না।

কহিনুর বেশ নম্রভাবে কথাগুলো বলল। এখানে আসাটা খুব সহজ ছিল না। সাঈদ সাহায্য করেছে তাছাড়া হাকিম সাহেব অনুমতিও দিয়েছিলো। নীরবতা ভেঙে হাকিম সাহেব বললেন,
নিশ্চয়ই করবো। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। বলুন কি কাজে লাগতে পারি?
কহিনুর কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,

এমন একটা ওষুধ তৈরী করুণ যেটা ব্যবহার করলে আমি নিরাপত্তার সহিত চলাফেরা করতে পারবো। শত্রুরা আমার উপস্থিতি কখনও বুঝতে না পারে। একদম সাধারণ ভাবে চলতে পারবো।
হাকিম সাহেব উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে ফিরলেন বোতল ভর্তি ঔষুধ নিয়ে। সেটা সামনে রেখে বললেন,

সুগন্ধি আতর এটা ব্যবহারের ফলে আপনার নিজস্ব গায়ের গন্ধ গায়েব থাকবে। অনায়াসে চলতে পারবেন। তবে রূপ পরিবর্তন এটা জ্বীন ছাড়া সম্ভব না। তবে ধোয়াসা তৈরী সম্ভব।
কহিনুর হাত বাড়িয়ে ওষুধের কৌটা তুলে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। অদৃশ্য রূপ পরিবর্তনের কোনো দরকার কাছে বলে ওর মনে হচ্ছে না। তাছাড়া ওতো মানুষ। দরকার নেই ওমন শক্তি নিয়ে। তাই উঠতে উঠতে বলল,

দরকার পড়লে সাঈদ আসবে দয়াকরে বিরক্ত হবেন না। যুদ্ধে নেমেছি জয় নিশ্চিত করেই হার মানবো।
নিশ্চিন্তে থাকুক। দোয়া করি আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন।
কহিনুর হাকিম সাহেবের থেকে বিদাই নিয়ে সাঈদকে নিয়ে ফিরে আসলো। নতুনভাবে শুরু করতে হলে অনেক কিছুই দরকার হয়। জ্বীনদের আয়ুষ্কাল জিঞ্জাসা করেছিলো কারণ যে এসবের পেছনে দোষী সে আজও জীবিত আছে কিনা জানাটা দরকার ছিলো। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না।

রাতের আঁধার পেরিয়ে সোনালী সূর্যের আলো ঝরা সকালের শুভ সূচনা হলো। গতকাল রাতে তুষারপাত হয়েছিলো ফলে ভেজা গাছের পাতায় সূর্যের রশ্মি পড়ে চিকচিক করছে। ঠান্ডা পরিবেশের সমাপ্তি ঘটিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরণী উতপ্ত হয়ে উঠবে। সুলতান ভিলাতে সকাল হয় অনেক দেরীতে কারণ ঘুম থেকে উঠতে সকলেই দেরি করে।

অধরা নামাজ শেষ করে কিচেনে ঢুকে। নিজেদের নাস্তা তৈরী করে কক্ষে চলে আসে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি তেমন নেই। ঐশ্বর্য আর আদির জন্যও রান্না করতে হবে। ওদের ভালোর জন্য এমন ব্যবস্থা। অধরার উপরে অতিরিক্ত ঝামেলা এসে জুঁটবে তাই নতুন কাজের লোকের খোঁজ করা হয়েছে। এই বাড়ির কাউকে অধরা বা জুবায়েরের বিশ্বাস করেনা। আদি জগিং করতে সকালে বেরিয়েছে। ঐশ্বর্য আড়মোড়া দিয়ে চোখ খুঁলতেই চমকে উঠলো একজনকে দেখে।

ওর সামনে কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। গায়ে লাল রঙের আলখাল্লা টাইপ গাউন ফর্সা তকের সঙ্গে ফুটে উঠেছে। হালকা বাদামী চুলগুলো পেছনে ক্লিপের সঙ্গে আটকানো তবে কিছু কিছু সামনের দিকে ঝুকে আছে। মোটামুটি চমৎকার দেখতে। শুধু মুখটা দেখা বাকী। মাস্কের জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঐশ্বর্য হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসতে বসতে বলল,

কে তুমি? আমার কক্ষে কার অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করেছো?
ওর কথা শুনে সামনের মেয়েটা চনচল হয়ে উঠলো। ঘনঘন চোখের পাড়ি নাড়িয়ে জার্মান ভাষায় উত্তর দিলো,
শুভ সকাল ম্যাম। আপনার দেখাশোনার জন্য আমাকে আনা হয়েছে। আপনার কফি। নাস্তার জন্য কি কি রেডি করবো বলবেন প্লিজ?

কাজের মেয়েটার কথা শুনে ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে বাঁকা হাসলো। বেশ মজা লাগছে। নিজের গুরুত্ব যে হারিয়ে যায়নি সেটা বুঝতে পারছে। তাছাড়া কহিনুর কোথাও একটা আছে। এখানে ফিরতে পারছে না। সেটা শুনেই শান্তি শান্তি অনুভব হয়েছিলো। কথাগুলো ভেবে ও উত্তর দিলো,

সকালে সালাত ছাড়া আমি তেমন কিছু খাইনা। শুনো আমার অনুমতি ছাড়া এই কক্ষে আর ঢুকবে না। বাইরে অপেক্ষা করবে। আর তোমার মুখটা দেখতে চাই।

ঐশ্বর্যের বলতে দেরী হলো কিন্তু সামনের মেয়েটার মাস্ক খুলতে দেরি হলো না। ঐশ্বর্য এক পলক তাকিয়ে হতভম্ব হলো। কাজের মেয়েও বুঝি এতোটা সুন্দর হয়? মেয়েটা ঘনঘন চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে কথা বলছে। পাতলা গোলাপী ওষ্ঠের দিয়ে তাকিয়েই হিং/সাতে শরীর জ্বলে উঠলো ঐশ্বর্য। কি দরকার এই মেয়েকে রাখার? মেজাজ ওর হুড়হুড় করে খারাপ হচ্ছে। তাই গর্জন করে বলে উঠল,

দ্বিতীয়বার মাস্ক খুঁললে তোমার বিপদ আছে মেয়ে। ঢেকে রাখো তোমার চেহারা। কোন দেশ থেকে এসেছো?
ঐশ্বর্যের হুকুম পেয়ে মেয়েটা মাস্ক পরতে পরতে উত্তর দিলো,
আমি কুপি খানম। আমার বাবা জার্মানির আর মা আমেরিকার বাসীন্দা।প্রেমের বিয়ে তারপর ছাড়াছাড়ি।কেউ আমাকে রাখতে চাইনি তাই হোমে আমার বেড়ে উঠা। সেখান থেকেই আমাকে আনা হয়েছে ম্যাম।

ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। মেয়েটার প্রতি মায়া হচ্ছে তবে এর ভুবন ভুলানো রূপ সেটাই ওকে রাগিয়ে দিচ্ছে। কহিনুরকে ওর এই জন্য পছন্দ না। তাই ইশারা করলো বেরিয়ে যেতে। কুপি সময় নষ্ট করলো না। দ্রুতগতিতে বেরিয়ে আসতে গিয়ে জামসেদের সম্মুখে পড়ে গেলো। জামসেদ কিছু একটা চিন্তা করছিলো হঠাৎ মেয়েটাকে দেখে থেমে গেলো। কাজের মেয়ে হয়ে কহিনুরের আসার কথা ছিল কিন্তু হুটকরে একটা সংস্থা থেকে এই মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছে। সামনের মেয়েটাকে দেখে ও উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলো,

তোমাকে পাঠিয়ে দিলো আর তুমি চলে আসলে? নামকি তোমার?
জামসেদের কথা শুনে কুপি হেসে ফেলল। মুখে হাত দিয়ে উত্তর দিলো “কুপি”। জামসেদ আচ্ছা বলে সামনের দিকে পা বাড়ালো। কুপি আবার কেমন নাম কে জানে। ভাবলো আচ্ছা কুপি শব্দের আর্থ কি? এটা বাংলা শব্দ নাকি জার্মান? অনেক ভেবে মনে হলো কুপি অর্থ বাতি, অপরদিকে নূর অর্থ বাতি। কি জানি সব গুলিয়ে গেলো। ভাবতে ভাবতে ও নিজের কক্ষে ঢুকে পড়লো।

দুপুর না আসতেই সুলতান ভিলাতে আরেক জঞ্জাল এসে হাজির হয়েছে। নতুন কাজের ছেলে এসেছে। জামসেদ ভিবিন্ন সংস্থাই ফোন করেছিলো কিন্তু পরে আর কাউকে মানা করতে পারেনি ফলাফল হিসেবে এক যুবক কাজের জন্য এসেছে। যদিও এখানে সেসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। যুবকের মাত্রারিক্ত ভাব যার দরুন জোড়াতালি লম্বা পোশাক মাথায় ইংলিশ টুপি আর চোখে কালো চশমা।

দেখতে বড়ই অদ্ভুত লাগছে। জুবায়ের বিরক্ত হয়ে ওকে থাকতে বলল। অসহায় মানুষের পাশে থাকা উচিৎ ভেবে। জামসেদ আতেল বনে গেলো। মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। যার আসার কথা ছিল সে না এসে কারা এসে হাজির হলো বাড়িতে? মীরা খুটিয়ে খুটিয়ে ছেলেটাকে দেখছে। ডাইনিং রুমের মেঝেতে বসে থাকা যুবককে ঘিরে আরও কয়েকজন আছে। দাদুর ঘুম ভেঙেছে সকালে। যুবকের দায়িত্ব হলো দাদুর কাজকর্ম করা। আরমান ফারুকী ভ্রু কুচকে চলে গেলেন। উনি যেতেই মীরা প্রশ্ন ছুড়লো,

তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
ছেলেটা হেসে উত্তর দিলো,
আপাতত কেউ নেই। আমার স্ত্রী লোকের বাড়িতে কাজে আছেন। ছুটিতে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

মীরা আরও কিছু প্রশ্ন করতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের ওকে নিষেধ করলো। এসব নিয়ে কথা বাড়াতে ওর ইচ্ছা হলো না। একে একে ডাইনিং রুম খালি হয়ে গেলো। ছেলেটা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। হঠাৎ কিচেন থেকে আওয়াজ শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো। তাই হন্তদন্ত হয়ে কিচেনে গিয়ে থমকে গেলো। রান্নার জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুপি। মেয়েটা যে রান্নাতে কতটা পারদর্শি সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ছেলেটা তাড়াতাড়ি গিয়ে সব উঠাতে উঠাতে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

কাজ না শিখে লাফাতে লাফাতে কাজ করতে আসলে এমনিই হয়। কি রান্না করতে হবে?
কুপি ভ্রু কুচকে ফেলল। হুট করেই ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এই ছেলেটাকে ওর পছন্দ হচ্ছে না। তাই কর্কশকণ্ঠে উত্তর দিলো,
সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি কি পারি আর কি পারিনা সেটা আপনার থেকে শুনতে আমি রাজি নয় মিস্টার। আপনি আপাতত আসুন।
কুপি কথা শুনে ছেলেটা জ্বলে উঠলো। ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অন্য হাত দিয়ে ওর মুখটা শক্ত করে ধরে উত্তর দিলো,

আর একটাও শব্দ উচ্চারণ করলে বিপদ নিশ্চিত। চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে।
কুপি থমথমে মুখ নিয়ে পাশে সরে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই ওর ডাক পড়বে। ঐশ্বর্য একটার পর একটা হুকুম জরি করছে। যেটা শুনতে গিয়ে ওর অবস্থা খারাপ। যেটা ভেবেছিলো তাঁর কিছুই হচ্ছে না। মাঝখানে এই আরেটা ঝামেলা এসে জুটেছে। বিড়বিড় করতে করতে ও বেরিয়ে গেলো।

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৪৭

গভীর রাত ,নির্জন সুলতান ভিলা। সবাই ঘুমিয়ে থাকলেও দুজন মানুষের ঘুম নেই। একজনের অবস্থান স্টোর রুমে আরেকজন দাদুর কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ঘুমন্ত দাদুর মাথার পাশে এক রমণী ঘোমটা টেনে বসে আছে যার ঠান্ডা শীতল ফেকাশে হাত দুটো ক্রমগত দাদুর গলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কি হতে চলেছে সামনে? আর সুলতান ভিলাতে রহস্যজনক চরিত্র দুটো কে হতে পারে?

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৪৯