কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১৯
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
দিনের ঝিম ধরা মূহুর্ত। ফাঁকা বাড়ি। সবকিছু নিস্তব্ধ শ্রান্তিতে বুজে আসা সময়ের মতো।
ভাঙা পা-টা লম্বালম্বি সামনে ছড়িয়ে খাটে বসে আছে তুশি। রেশমী ওকে ঘরে দিয়ে গেছে অনেকক্ষণ হবে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত খাবার-টাবার কিচ্ছু দেয়ার নাম নেই। ঘুম ভাঙার পর থেকে তুশি দাঁতে দানা অবধি কাটেনি।পেট মুচড়ে ওঠার কষ্টে মেয়েটা আর বসে থাকতে পারল না। রেশমীর চুল অতিরিক্ত লম্বা। সব সময় অজগরের মতো বিশালাকার বেনুনি করে রাখে। তুশি গলা তুলে ডাকল,
“ বেনুনিওয়ালি, এই বেনুনিওয়ালি! হুয়াই নট গিভেন মি নাস্তা? টাইমলি ইট নাস্তা ইজ ইমপরটেন। ও বেনুনি,শুনছো?”
দু ডাকেই ছুটে এলো মেয়েটা। ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে এসে দাঁড়াল ঘরে। বিরক্ত হয়ে বলল,
“ বেনুনিওয়ালি লাগাইছো ক্যান? আমার নাম রেশমী। নাম ধইরা ডাকতে পারো না?”
“ পারি না বলেই তো ডাকিনি। আমাকে নাস্তা দাও,জলদি,
খিদে পেয়েছে।”
“ দিতাছি বাপ। সময় তো লাগে। ধৈয্য সইহ্য নাই মাইয়াডার। সংসার করব ক্যামনে ক্যাডা জানে।”
বিড়বিড় করতে করতে ঘর ছাড়ল রেশমী। তুশির ওসব শোনার সময় নেই। ওকে যা বলার বলুক গে,খাবার এলেই চলবে। রেশমী ফিরে এলো নাস্তা নিয়ে। দুটো রুটি আর ডিম পোচ। সাথে এক গ্লাস টলটলে জল। সবকিছু দুম করে রাখল বিছানায়৷
বলল ছুড়ে ছুড়ে,
“ লন মেমসাহেব,আপনের নাস্তা। খাইয়া আমারে উদ্দার কইরালান।”
এত খোঁচাখুঁচি কথা তুশির পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মেয়ের মন,চোখ আপাতত খাবারের থালায়। ত্রস্ত ঝাঁপ দিলো সেখানে। রুটি ছিড়ে ডিমে ছোঁয়াল। মুখে দেয়ার মাঝেই রেশমী বলল,
“ আমি বাজারে যাইতাছি। আইতে সময় লাগব। কিছু দরকার পড়লে কও,দিয়া যাই। আমার হইছে জ্বালা। বাড়ির মাইনষের সেবা করতে করতে অহন কামের মাইয়ারও সেবা করোন লাগে। ক্যান যে আমার পাওডা ভাঙল না,তাইলে তো আমিও বিছনায় বইয়া নাস্তা খাইতে পারতাম!”
তুশি কপাল কুঁচকে চাইল। আগের-পরের সব কথা ফেলে প্রশ্ন করল ঝটপট,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ তুমি কেন বাজারে যাবে? বাজারের জন্যে অন্য লোক থাকে না?”
রেশমীর চটপটে খই ফোটানো জিভ মিইয়ে এলো অমনি। আমতাআমতা করে বলল,
“ যামু,ওই, কাম আছে কয়ডা। বড়ো মায় কইছে আমারে যাইতে৷ আর যেয় বাজার করে হেয়ও তো যাইব।”
তুশি ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
“ সত্যি বাজারে যাচ্ছো,নাকি অন্য কিছু? কোনোভাবে ওই লোকের সাথে কোনো চক্কর-টক্কর চলছে নাতো,হু!”
রেশমীর চোখ বেরিয়ে এলো। আচমকা ধড়ফড়িয়ে বসল ওর সামনে। অনুরোধ করে বলল,
“ কাউরে কইও না পিলিচ! মোবারক খুব জোরাজোরি করতাছে। বাসাত কেউ নাই তো! আমি, আমি সব কাম শ্যাষ কইরাই যাইতেছি। সবাই আওনের আগেই চইলা আমু। তুমি কিছু কইও না তুশি। মোবারকের বাইত্তে কতা পাকা হউক,হেইরপর আমিই সবাইরে জানামু । এর আগে জানলে আমারে কামতে বাইর কইররা দিবো।”
তুশি হোচট খেল। চোখের হোচট। হতভম্ব বনে শুনে গেল শুধু। রেশমী ওর হাত ধরে অনুনয় করল কতক্ষণ। ঘরের বাইরে থেকে মোবারক চিকণ স্বরে ডাকল হঠাৎ। আরেক দফা অনুরোধ সেরে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল মেয়েটা। তুশি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল,
“ কিন্তু আমি তো মজা করছিলাম।”
পরপরই বীতস্পৃহ আওড়াল,
“ কী আজব বাড়ি মাইরি! এ ওকে, ও একে, অমুক তমুককে পছন্দ করেই যাচ্ছে । আবার প্রত্যেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছে। ধুর,শুধু আমিই আজ অবধি একটা প্রেম করতে পারলাম না। এই যে বিটকেল পুলিশটা আমাকে আটকে রাখল এখানে,আজ যদি আমারো একটা প্রেমিক থাকত, ঠিক ও ব্যাটার নাক ফাটিয়ে দিয়ে নিয়ে যেতো আমাকে। না রে তুশি, জীবনের কিছু কিছু ঘটনায় প্রেম করা খুবই জরুরি।”
একটু থামল মেয়েটা। হতাশ শ্বাস ফেলে ভাবল,
“ কিন্তু আমি প্রেমিক কোথায় পাবো? আমার তো কাউকে পছন্দই হয় না।”
বাক্যের শেষে তুশি আবার থম মেরে গেল। অদ্ভুতুরে কাণ্ডের মতন চোখের পর্দায় ভেসে উঠল ইয়াসিরের ফরসা,শক্ত মুখটা। পাঞ্জাবি-টুপি পরে সৌম্য যুবকের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসার দৃশ্য। নিঃশ্বাসের খুব কাছে এসে কপালে ব্যান্ডেজ করার অতীত ভেবে ত্রস্ত সোজা হয়ে বসল সে। মাথাটাকে ঘনঘন ঝাঁকাল দুবার। না না, এসব হাবিজাবি ভাবা যাবে না। এই বিটকেল থেকে যত দূরে থাকা যায়,অত মঙ্গল।
দরজায় খট করে শব্দ হলো তখনই। রেশমী বাইরে যাচ্ছে তার মানে । তুশির এত আফসোস হলো এবার! কত্তগুলো দিন বাইরে যায় না ও। ঘুরতে পারছে না। হাঁটাও বন্ধ। ইশ,আজ পা-টা ভালো থাকলে এক্ষুনি ভেগে যাওয়া যেত। বাড়িতে কেউ নেই। এমন মোক্ষম সুযোগ কি আর আসবে?
ধ্যাত! বিরক্ত চিত্তে কসরত পুহিয়ে শুয়ে পড়ল তুশি। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করল একটু।
কিছু সময় কাটল তারপর। হুট করে বিকট এক আওয়াজ ভেসে এলো বাতাসে। কাচের কোনোকিছু তীব্র ঝনঝনানি তুলে ভেঙে পড়ার শব্দে,
হুড়মুড়িয়ে চোখ মেলল তুশি। কোথায় কী ভাঙল? বাড়িতে তো কেউ নেই। চোর ঢুকল না তো! এই রে,ওই তো বড়ো চোর। ওর ওপর বাটপারি করতে আবার কে এসেছে এখানে? তুশির পায়ে ব্যথা! তাও টেনেটুনে নামল কোনোরকম। কেউ না ধরলে হাঁটাচলা মুশকিল। পা-টা অল্প উঁচুতে তুলে ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে দরজায় এলো ও। স্টোর রুম থেকে খাবার রুমের প্রবেশপথ সোজাসুজি। চোখদুটো সেখানেই তাক হলো তুশির। গোটা আকাশ মাথার ওপর ভেঙে পড়ল অমনি। মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো কাচের মধ্যে পড়ে আছেন শওকত। সদ্য গলার নলি কেটে ফেলে রাখা পশু যেমন ছটফট করে মাটিতে? ঠিক একইরকম বক্ষপট দাপাচ্ছে । জোরালো শ্বাস টানছেন, হাঁপাচ্ছেন । বুকে হাত দিয়ে কাতরাচ্ছেন এপাশ-ওপাশ। তুশির মাথার সব ফাঁকা হয়ে গেল। হুশ এলো যখন,ছুট লাগাল ঝড়ের মতো৷ সহসা টান পড়ল গোড়ালিতে। ব্যথায় বিবশ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মেয়েটা। অথচ থামল না আজ। ককিয়ে,গুঙিয়ে ভীষণ কষ্টে উঠে দাঁড়াল ফের৷ প্লাস্টারের শক্ত বাঁধা ভুলে আবার ছুটল তুশি।
ধড়ফড়িয়ে শওকতের পাশে গিয়ে বসল। ভদ্রলোকের প্রৌঢ় মুখ ফ্যাকাশে। ঠোঁটের কোণে চকচক করছে ঘাম। বুকের বা-পাশ ধরে কাতরাচ্ছেন। তুশির মনে পড়ল পুরোনো কিছু কথা। বস্তিতে ওরা যেই ঘরে থাকে? সেই ঘরের মালিকের একবার এমন দশা হয়। ঠিক এমনই করছিলেন লোকটা। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা গেলেন। ডাক্তার জানালেন,
হার্ট অ্যাটাক করেছে।
তুশি ঘাবড়ে গেল। তড়িঘড়ি করে শওকতের মাথাটা কোলে তুলল নিজের।
ভদ্রলোকের চোখ বুজে আসছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে একটু একটু তুশির মুখখানা দেখলেন। খুব কষ্টে বললেন,
“ বুক জ্বলে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছি। হাসপাতা…”
বাকিটা বলার আগেই,ভারী শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ল। চোখজোড়া বুজে ফেলতেই,বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল তুশির।
উদ্ভ্রান্তের ন্যায় দেখল এদিক-ওদিক। কী করবে এখন! কোথায় যাবে?
কাকে ডাকবে? বাড়িতে তো কেউ নেই। না ওর ফোন আছে। আর না ও এ বাড়ির কারো নম্বর জানে!
ভয়ে,চিন্তায় ঘাম ছুটল তুশির। খুব জোরে ধড়ফড় করছে বুক। শওকতের গাল চাপড়াল কোমল হাতে। হাত পায়ের তালু ঘষল কিছুক্ষণ। না, সাড়াশব্দ নেই। এমনকি চোখের পাতা অবধি নড়ছে না। এক্ষুনি, হাসপাতালে না নিলে তো বাঁচানো মুশকিল।
তুশি কোথায় যাবে বুঝতে পারল না। শওকতের মাথাটা নামিয়ে রাখল আবার। ব্যথায় নীল হয়ে যাওয়া পা-টা টেনেহিঁচড়ে দৌড়ে এলো দরজার কাছে। ভাগ্যক্রমে রেশমী লক করে যায়নি। হয়ত ভেবেছিল,ভাঙা পা নিয়ে তুশি নড়তেচড়তে পারবে না। ও দরজা খুলে মেঝেতে বসে পড়ল। গোড়ালির ব্যথায় যেন পা খুলে পড়ছে। গলার সবটুকু জোর দিয়ে
চ্যাঁচাল,
“ কেউ আছেন? কেউ আছেন,এদিকে আসুন। ওনাকে হাসপাতালে নিতে হবে। কেউ আছেন এখানে?”
মূল গেইটের পাশে বসে ঝিমোচ্ছিলেন দারোয়ান। মেয়েলি চিৎকারে লাঠিটা বগলে গুঁজে ছুটে এলেন তিনি। বিধ্বস্ত তুশিকে দেখে চমকে গেলেন খুব। অধৈর্য গলায় শুধালেন,
“ কী হয়েছে? কে অসুস্থ?”
তুশি হাঁপাচ্ছে। শ্বাসের তোড়ে চট করে কথা বলতে পারল না। আঙুল দিয়ে দেখাল অদূরে। বাড়ির মালিককে নিথরের মতো পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠলেন ভদ্রলোক। আর্তনাদ করে বললেন,
“ হায় হায়,বড়ো সাহেবের একী অবস্থা?”
স্যার, স্যার বলতে বলতে দৌড়ে কাছে গেলেন তিনি। পুরোপুরি অচেতন শওকত। দারোয়ান ব্যস্ত গলায় বললেন,
“ আমি সার্থ স্যারকে কল দিচ্ছি। বড়োসাহেবকে তো হাসপাতালে নিতে হবে।”
তুশি বলল,
“ তাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। ওনার অবস্থা ভালো নয়। আপনি একটু ওনাকে তুলুন। এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
“ আমি তো গেইট রেখে নড়তে পারব না। বাড়ি ফাঁকা,কিছু একটা হয়ে গেলে আমার চাকরি চলে যাবে। হাসপাতালও বেশ দূরে।”
তুশি একটু দম টেনে বলল,
“ আপনি ওনাকে ধরে নিয়ে আসুন বাইরে। আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
“ তোমার তো পা ভেঙেছে শুনলাম। তুমি কীভাবে যাবে?”
“ আমি পারব,আপনি আসুন। সময় নেই,তাড়াতাড়ি করুন।” তুশি দরজার কাঠ ধরে উঠে দাঁড়াল। খুড়িয়ে খুড়িয়ে, দাঁত-মুখ চেপে ছুটল বাড়ির বাইরে। দারোয়ানের বয়স বেশি নয়। দেহটা শক্তপোক্ত এখনো। শওকতের নিস্তেজ শরীরটা টেনে তুললেন তিনি। দুকাঁধে ভর নিয়ে এগোলেন সামনে।
ইয়াসিরদের বাড়ি মেইন রোড থেকে একটু ভেতরে। অনেকটা জায়গা নিয়ে করায়,আশপাশ অতটা সরব নয়। এই রাস্তায় রিকশা,সি এনজি, প্রাইভেট কার ব্যতীত ভিন্ন বাহন খুব একটা দেখা যায় না৷ তুশি বাইরে এসে চারপাশে চাইল। কপাল মন্দ থাকলে যা হয়! অন্য সময় লাইন বেঁধে গাড়ি ছোটা রাস্তাটায় আজ কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। দু একটা রিকশা এলেও,তাতে প্যাসেঞ্জারে ভরা। তুশির মাথায় হাত পড়ার অবস্থা। কোন দিকে যাবে,কীসে করে নেবে ও জানে না। শুধু জানে বাঁচাতে হবে ওনাকে।
দারোয়ান, জ্ঞানশূন্য শওকতকে সাথে এনে দাঁড়ালেন মাত্র। ভদ্রলোকের মাথা হেলে পড়ছে। ঢুলছে দেহ। উনি বললেন,
“ একটু তাড়াতাড়ি করো মা, আমি তো বেশিক্ষণ ভর রাখতে পারব না।”
তুশির কথায় ব্যস্তভাব,
“ দেখছি দেখছি।”
ওর হঠাৎ চোখ পড়ল একটা খালি ভ্যানের ওপর। চালক সদ্য থামিয়ে রেখে প্রকৃতির ডাকে সাঁড়া দিতে, রাস্তার পাড়ে গিয়ে বসেছেন। তুশি উদ্বেগ নিয়ে বলল,
“ ওই তো একটা ভ্যান। চাচা,আসুন নিয়ে আসুন ওনাকে।”
ভ্যানের দুরুত্ব কয়েক পায়ের। দারোয়ান নিয়ে এলেন শওকতকে। তুশি বলল,
“ এখানে শুইয়ে দিন। তাড়াতাড়ি করুন।”
ভদ্রলোক বিস্মিত বনে বললেন,
“ এই ভ্যানে করে নিয়ে যাবা? কী বলো,সময় লাগবে তো।”
“ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ভ্যানে নিয়ে যাওয়া অনেক ভালো। আপনি কথা না বাড়িয়ে ওনাকে শুইয়ে দিন।”
দারোয়ান তাই করলেন। শুনলেন ওর কথা। নিজের ভ্যানের কাছে দুজন অচেনা মানুষ দেখেই, তড়িঘড়ি করে দৌড়ে এলেন চালক।
“ এই কী হইছে? কী লাগব? আর এরে আমার ভ্যানে উঠাইছেন ক্যান? ক্যারা আপনেরা?”
তুশি নরম গলায় বলল,
“ দেখুন,উনি অসুস্থ। ওনাকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিতে হবে। আপনি একটু…”
লোকটা মাঝপথেই খ্যাক করে উঠলেন,
“ মগের মুল্লুক নাকি! কতা নাই বার্তা নাই,আমার ভ্যানে শোয়াইয়া কন হাসপাতালে নেওন লাগব? এই মাত্তর কত্তডি মাল নামাইয়া রাইক্ষা আইলাম। শরীর ম্যাজম্যাজ করতাছে। বাড়ি যামু,ভাত খাইয়া ঘুমামু। অহন এডি পারতাম না। নামান এরে,নামান।”
শেষটুকু ধমকে বললেন তিনি। কণ্ঠে কী তেজ! মেজাজ খিচড়ে গেল তুশির। কুস্তি জেতা সৈনিকের সত্তাটা ছিটকে এলো বাইরে। খপ করে থাবা দিয়ে লোকটার স্যান্ডো গেঞ্জির গলা টেনে ধরল ও। ভদ্রলোক হকচকালেন, থমকে গেলেন। চোখ ছানাবড়া করে তাকালেন ওর দিকে। তুশি কটমটিয়ে বলল,
“ শালা তেজ দেখাস আমারে?
তুই জানোস আমি কে?
মাইয়া মানুষ দেইখা খুব হালকা ভাবে নিয়া ফালাইছোস তাই না? এমন ঘা দিবো,ম্যাজম্যাজানির জন্যে শরীরটাই থাকবে না।”
লোকটা হতবাক হয়ে চেয়ে রইলেন কিয়ৎক্ষণ। পরপরই হম্বিতম্বি ছুড়লেন,
“ কী,কী করবেন আপনে? মারবেন? মারেন দেহি,কত সাহ…”
কথা শেষ করার আগেই,ঠিক নাকের ডগায় একটা ঘুষি মারল তুশি। হ্যাংলা-পাতলা লোকটা কাগজের মতো উড়ে গিয়ে পিচের রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল।
দারোয়ানের মাথা চক্কর কাটল তাতে। গোল চোখে একবার লোকটাকে দেখে তুশির পানে চাইলেন। ভ্যানচালক ব্যথায় সোজা হতে পারলেন না। নাকে হাত দিতেই রক্ত এলো আঙুলে। আর্তনাদ করে বললেন,
“ ও আল্লাহ,এইডা মাইয়া না ডাকাইত?
আমারে মাইরা ফালাইল রে। কেউ বাঁচান আমারে।”
তুশির ওসব দেখার সময় নেই। চালকের জায়গায় ও নিজে উঠে বসল। দারোয়ান তখনও হাঁ করে তাকিয়ে। ও বলল,
“ সামনে যে হাসপাতাল পাব,সেটাতেই নিয়ে যাবো। আপনি বাড়ির সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দিন।”
ভদ্রলোক নড়ে উঠলেন। ফাঁকা মুখটা বন্ধ করলেন তড়িৎ। রয়েসয়ে বললেন,
“ তুমি ভ্যান চালাতে পারবে?”
“ রান্না ছাড়া তুশি পারে না,এমন কোনো কাজ পৃথিবীতে পয়দা হয়নি এখনো। ”
তারপর চোখের সামনে দিয়ে ভ্যান চালিয়ে তরতর করে চলে গেল মেয়েটা। চালক হাহুতাশ করে উঠলেন,
“ হায় হায় আমার ভ্যান,আমার গাড়ি।”
পেছনে ছুটতে নিলে থামালেন দারোয়ান। বললেন,
“ যেতে হবে না। এটা পুলিশের বাড়ি। গাড়ি পেয়ে যাবেন আপনি।”
“ সত্যি পামু?”
দারোয়ান হু-হা করলেন না। তুশির কথামতো ফোন বের করে কল দিলেন কাউকে।
শওকতকে হাসপাতালে নেয়ার ঘন্টাখানেক শেষ। প্রথমে ইমিডিয়েট ইমার্জেন্সি রুমে নেয়া হয়েছিল। জটিলতা দেখে ক্যাথ ল্যাবে শিফট করেছে কেবল।
করিডোরের লম্বা সাড়ির একটা বেঞ্চে মাথা নুইয়ে বসে আছে তুশি। পা ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়। গোড়ালি আবার ফুলেছে। বেগুনি রঙের গোল একটা আস্তরণ পড়েছে ত্বকে।
অতটা রাস্তা ভ্যান চালিয়ে আসা তো মুখের কথা ছিল না। এটা বেশ নামি-দামি হাসপাতাল। অথচ আসার পরপরই ভর্তি নিতে চায়নি। টাকা জমা করার কথা বলল প্রথমে। তুশি তো ভিখেরির চেয়েও কম কিছু না। টাকা কোথায় পাবে! ভাগ্যিস বুদ্ধি করে ইয়াসিরের পরিচয় দিয়েছিল! আচ্ছা,
বাড়ির সবাই কি খবর পেয়েছে? ও যে কাউকে জানাবে,সেই উপায়টাও নেই। কী যে হবে এখন! লোকটা সুস্থ হবে তো?
তার ভাবনার মাঝেই ক জোড়া পায়ের ধুপধাপ শব্দ ভেসে এলো কানে। চকিতে
ফিরে চাইল তুশি।
চেনা মুখগুলো দেখে নড়েচড়ে বসল। জয়নব,আইরিন ছাড়া প্রায় প্রত্যেকে এসেছে। ছেলের শোকে কাহিল বৃদ্ধা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই মূহুর্তে এতটা পথ ওনাকে টানাহেঁচড়া করা যাবে না বলে, রেখে এলো বাড়িতে। সাথে দেখভালের জন্যে আইরিন আছে।
সবার আগে উদ্বীগ্ন পায়ে ছুটে এলো অয়ন। খুব তাড়াহুড়োতে শুধাল,
“ বাবা কোথায় তুশি?”
তনিমার চোখে এক প্রস্থ জল। কেঁদেকেটে মুখখানার যা তা দশা। প্রশ্ন ছুড়লেন হড়বড়িয়ে ,
“ ও কোথায়? ও ঠিক আছে? কোথায় ও তুশি?”
তুশি ঢোক গিলল। জবাব দিলো ধীরস্থির,
“ ওই রুমে।”
ক্যাথ ল্যাবের দরজাটা একবার ফিরে দেখল সবাই। সাইফুল বললেন,
“ কখন হলো এসব? কীভাবে হলো? আমাদের জানাওনি কেন তুমি?”
“ আমার কাছে তো মোবাইল নেই।”
ভদ্রলোক দমে গেলেন। স্বর নেমে এলো,
“ তাও ঠিক!
ভাইজান এখন কেমন আছেন,ডাক্তার কিছু বলেছে?”
তুশি মাথা নাড়ল দুপাশে। বোঝাল,বলেনি। তনিমার কান্না বাড়ল। দুহাত দিয়ে ওনাকে আগলে রাখলেন রেহনূমা। আর্দ্র স্বরে বললেন,
“ আপা কেঁদো না, ভাইজান ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে আপা। তুমি বোসো,একটু বোসো এখানে।”
দূর্বল রমণীকে ধরে ধরে কেদারায় বসালেন তিনি।
ইয়াসির এসে দাঁড়াল তখন। রিসেপশনের বিল মিটিয়ে এসেছে । বাকিরা যতটা উৎকণ্ঠায় মরছে,ততোধিক শান্ত সে । জিজ্ঞেসও করল ঠান্ডা গলায়,
“ কী অবস্থা ওনার?”
সাইফুল বললেন,
“ জানি না রে। আসুক ডাক্তার,দেখি কী বলে?”
তনিমা কেঁদে কেঁদে বললেন,
“ এজন্যেই তোকে এসব বলতে আমি বারণ করি, সার্থ। কী দরকার ছিল সবার সামনে ওসব ঝামেলা করার? মানুষটা অসুস্থ! প্রেসার ঠিক থাকে না। তার মধ্যে দেখলি তো কী হয়ে গেল?”
ইয়াসির চুপ।
রেহনূমা বললেন,
“ আপা, ওকে দোষ দিচ্ছো কেন? ও কী ইচ্ছে করে এসব করেছে? কোনো ছেলে কি চায়,তারা বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসুক?”
তনিমা কিছু বললেন না। ফ্যাচফ্যাচে কান্নার তোড়টা বাড়ল শুধু। অয়ন পায়চারি করছে। মাঝমধ্যে কব্জি তুলে চোখ বোলাচ্ছে ঘড়িতে। ইউশা ফোঁপাচ্ছে।
কোনো একটা খবর পাওয়ার আশায় অধৈর্য সকলের মাঝে,
চোখের কোণ তুলে ইয়াসিরকে এক পল দেখল তুশি। দুহাত বুকে গুঁজে মানুষটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। উদ্বেগ নেই,কথা নেই,না আছে নিষ্প্রাণ চোখে একটুখানি ভাষা! মানুষ এত নিষ্পৃহও হয়?
কয়েক মিনিট পরেই ক্যাথ ল্যাবের দোর খোলা হলো। চিকিৎসকের সাথে একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকা মানুষগুলোকে জানালেন,
“ পেশেন্টকে আপাতত আইসিউতে রাখা হবে। এরপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা, আপনারা অপেক্ষা করুন।”
তনিমা ধপ করে বসে পড়লেন আবার। আঁচলে মুখ চেপে হুহু করে কাঁদলেন। চিন্তায় শুকনো চেহারাগুলোয় গাঢ় মেঘ ছুটে এলো ফের।
একটু পর স্ট্রেচারে করে শওকতকে বের করা হয় । তনিমা কাছে যেতে চাইলে বাধ সাধলেন নার্স। স্ট্রেচার নিয়ে আইসিউয়ের পথ ধরলেন সোজা। ইয়াসির চেয়ে রইল ওদিকে। যতক্ষণ বাবাকে দেখা যায়, দেখল সে। শূন্য চোখ নামিয়ে ঢোক গিলল তারপর। বুকের কোথাও জেগে ওঠা সূক্ষ্ণ চিনচিনে ব্যথাটাকে দমাতে? মাথা নুইয়ে ফোস করে শ্বাস ফেলল শুধু।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার ভাব। হাসপাতালের প্রাঙ্গণ ছেড়ে কেউ এক চুল অবধি নড়েনি। তনিমার কান্না ছাড়া কারো কোনো টু শব্দ নেই। তুশি নিস্তব্ধের ন্যায় বসে আছে। পায়ের শিরায় ফুঁসে ওঠা যন্ত্রণা গিলে অসহায় চোখে বাড়ির মানুষগুলোকে দেখছে সে।
ইউশা,তনিমা দুজনেই কাঁদছে। রেহনূমাও একটু পরপর চোখের জল মুছছেন।
তুশির বাবা, মা, ভাইবোন কিচ্ছু নেই। পরিবার কী,কেমন হয়, জানেই না ও। তবে ইয়াসিরের বাড়িতে আসার পর সবাইকে এক টেবিলে খেতে দেখেছে । গল্প করতে দেখেছে চায়ের আসরে। দুই জা মিলে হাতে হাতে রান্না করা, একে অন্যের ছেলেমেয়েকে আগলে রাখা বুক দিয়ে,বৃদ্ধা শাশুড়ীর যত্ন,ইউশা মিন্তুর খুনশুঁটি সব মিলিয়ে সৈয়দ ভবন তুশির চোখে অন্যরকম আলো।
ও চায় না এই পরিবারের সাথে খারাপ কিছু হোক। অবশ্য, তনিমার মতো সুকোমল নারীর সাথে খারাপ কিছু কি সৃষ্টিকর্তা করবেন কখনো? না না,এ হতেই পারে না। তুশি নিশ্চিত, মানুষটা সুস্থ হয়ে যাবেন। ঠিক ফিরবেন তার আপনজনের কাছে।
সৃষ্টিকর্তা হয়ত শুনলেন আজ। কমসে কম দু ঘন্টা পার করে চিকিৎসক জানালেন,রোগী সুস্থ আছে। জটিলতা কেটেছে তার। প্রাইভেটে শিফট করার আধ ঘন্টা পর সবাই দেখা করতে পারবে।
আর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসতেই,সবাইকে ফেলে ছুটে গেলেন তনিমা।
সাইফুল থেকে ইউশা অবধি কেউ বসে রইল না।
তবে ইয়াসির ভেতরে ঢোকেনি। কেবিনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে , বাবার শুষ্ক মুখটায় চেয়ে রইল সে। কাঠিন্যে মোড়ানো দৃষ্টিতে আজ নম্রতার জোয়ার। বেডে শোয়া প্রৌঢ় মানুষটাকে দেখে বুকখানা মোচড় দিলো ফের। শওকত নড়ে উঠলেন সেসময়। নিভু চোখ মেলতেই,চট করে সরে এলো ইয়াসির।
তনিমা স্বামীর খুব কাছে বসেছেন। ওপাশটায় সাইফুল। নিরন্তর ভাইয়ের মাথায় হাত বোলাচ্ছেন ভদ্রলোক। শওকত চোখ খুলে সবাইকে দেখলেন একবার।
রেহনূমা জিজ্ঞেস করলেন,
“ এখন কেমন আছেন ভাইজান? ভালো লাগছে একটু?”
অল্প ঘাড় নাড়লেন তিনি।
ভেজা গলা ছাপিয়ে তনিমা কিছু বলতে পারছেন না। স্বামীর শীর্ণ হাতটা ধরে কাঁদলেন শুধু। মৃদূ হাসলেন শওকত। রুগ্ন স্বরে বললেন,
“ কেঁদো না তনিমা,আমি ভালো আছি এখন।”
ইউশা চোখ মুছল ওড়নায়। শওকত হাত বাড়িয়ে ডাকলেন,
“ বোকা মেয়েটা কাঁদছে কেন? আয় দেখি,এদিকে আয়।”
নরম পায়ে এসে দাঁড়াল সে। শওকত গাল ছুঁতেই ঠোঁট উলটে চোখের জল ছেড়ে দিলো ফের।
“ আহা,আবার কাঁদে কেন? চাচ্চু তো ভালো আছি এখন।”
ইউশা নাক টেনে বলল,
“ আমরা খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম চাচ্চু। তুমি আর এরকম ভয় দেখাবে না আমাদের।”
“ আচ্ছা বাবা, দেখাব না। অয়ন,তোমার মুখ কালো কেন? সবাই এখনো এমন মনমরা হয়ে থাকলে চলবে বলোতো?”
অয়ন ফোস করে শ্বাস ফেলল।
“ বাবা, তুমি নিশ্চয়ই নিজেকে নিয়ে খুব খামখেয়ালিপনা কোরছো। মায়ের কথা শুনছো না, তাই না? নাহলে সুস্থ মানুষ হঠাৎ এমন অসুস্থ হবে কেন?”
শওকতের ঠোঁটের ওই অল্প হাসি মুছল না। ভেতর থেকে জেগে ওঠা দীর্ঘশ্বাস মিটিয়ে নিলেন বুকে। আর্ত চোখে একবার কেবিনের দরজাটা দেখলেন তিনি। সবাই এলো,অথচ
ইয়াসির? ও এলো না!
তারপর হুট করে কপাল গোটালেন ভদ্রলোক। রুমের চারিদিক ভালো করে দেখলেন। সাইফুল খেয়াল করলেন ব্যাপারটা। জিজ্ঞেস করলেন,
“ কিছু লাগবে ভাইজান?”
“ ওই মেয়েটা কোথায়, সাইফুল?”
রেহনূমা বললেন,
“ কোন মেয়ে, ভাইজান?”
“ ওই যে,তুশি মেয়েটা৷ যে আমাকে নিয়ে এলো এখানে।”
ইউশা বলল,
“ ও তো বাইরে বসে আছে।”
“ ডাকো তো ।”
সবাই অবাক হলো৷ বিভ্রান্ত হয়ে মুখ দেখল নিজেদের। শওকত তো তুশির নাম শুনতেও পারে না। ডাকছে কেন তাহলে? ইউশা
সময় নিলো না।
“ আনছি” বলেই স্ফূর্ত পায়ে ছুটে গেল সে।
তুশির ক্লান্ত লাগছে। কতক্ষণ ধরে বসে আছে এখানে। একটু শুতে পারলে ভালো হতো! পায়ের সাথে পিঠটাও ব্যথা করছে এখন। একা একা তো কোথাও যেতেও পারবে না। উফ,পা ভাঙারও এত জ্বালা! মেঝের বুকে চোখ নামিয়ে মেয়েটা ঝিম ধরে রইল।
পায়ে হঠাৎ এত ব্যথা করছে কেন? ভ্যান চালানোর সময়ও তো এমন করেনি।
তক্ষুনি একটা দীর্ঘ কালো অবয়ব ভেসে উঠল ফ্লোরে। তড়িৎ মাথা তুলল সে। পর্বতের মতো দেহটা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ইয়াসির। তুশির চোখ গিয়ে সরাসরি পড়ল মানুষটার নয়নতারার মাঝে। ক্ষুরধার, নির্জীব দৃষ্টি দেখেই,বাঁকা শিরদাঁড়া সোজা হলো অমনি।
ইয়াসির বলল,
“ বাবাকে তুমি ভ্যানে করে এনেছ?”
মেয়েটা ঘাবড়ে গেল একটু। ইয়াসিরের চোখমুখ এত নিরুদ্বেগ! বুঝতে পারল না কাজটা ভালো, না খারাপ করেছে! মিনমিন করে বলল,
“ আসলে, কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। বাড়ির গাড়ি তো আপনারা নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমি.. মানে।”
এলোমেলো উত্তর দিয়ে ঠোঁট টিপল তুশি। ইয়াসির কিছু বলবে,তক্ষুনি দুরন্ত পায়ে হাজির হলো ইউশা। থেমে গেল সে। মেয়েটা প্রফুল্ল স্বরে বলল,
“ তুশি,তোমাকে বড়ো চাচ্চু ডাকছেন।”
ও অবাক হয়। কণ্ঠে বিভ্রম,
“ আমাকে? কেন?”
ইউশার পেছনে মাত্র এসে দাঁড়িয়েছে অয়ন । উত্তর ছুড়ল সে,
“ সেটা বুঝতে হলে তো ভেতরে আসতে হবে।”
তুশির মুখ কালো হয়ে গেল। পায়ের যা অবস্থা, মাটিতে ছোঁয়াতে পারবে কিনা কে জানে! কিছু বলার আগেই হাত ধরে টানল ইউশা।
“ এসো এসো, তাড়াতাড়ি এসো।”
ইয়াসির বলল,
“ আস্তে,পা ভাঙা ওর।”
জিভ কাটল মেয়েটা।
“ সরি! খুশিতে সব ভুলে গেছি। আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি। তুশি তুমি আস্তে ধীরে ওঠো।”
তুশির মনে হচ্ছে, ধরলেও কাজ হবে না। পা নাড়াতেই পারবে না ও। কিন্তু বলল না ওসব। উঠে দাঁড়াল চুপচাপ। ঠিক ঘটলও তাই। আঙুল মাটিতে ছোঁয়াতেই, যেন বাজ পড়ল হাড়ে। বিদ্যুৎ এর মতো স্ফূরণ তুলে কেঁপে উঠল জায়গাটা। ব্যথায় টাল হারিয়ে ঢলে পড়তে নিলো তুশি। ইয়াসির হাত বাড়িয়ে ধরতে গেল, তুরন্ত বজ্রের ন্যায় মাঝখানে চলে এলো অয়ন। বলল অকপট,
“ তুমি ছাড়ো ভাইয়া,ওকে আমি দেখছি।”
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১৮
তারপর আর কথা নয়। সবার মাঝে হুট করে তুশিকে কোলে তুলল সে। মেয়েটা চমকে গেল। স্তব্ধ হোলো।
ইউশার মুঠো থেকে তুশির হাতটা ছুটে গেল সাথে। হতবাক বনে বড়ো ভাইয়ের পানে ফিরে চাইল সে। ইয়াসিরের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তীক্ষ্ণ, নিঃশব্দ দৃষ্টি অয়নের চলে যাওয়ার পথে। কিন্তু অয়ন,সে ওসব দেখলই না। তার ধ্যান-জ্ঞানের রাজ্যে তুশি আছে যখন,এই মূহুর্তে আর কী চাই?