কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৮
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
গভীর রাত,
সুনসান চারিদিক। নিস্তব্ধ বাতাবরণে কেবল হিমেল হাওয়ার তীক্ষ্ণ শ্বাস বইছে। অদৃশ্য ছুরির মতো কেটে যাচ্ছে শরীরটা। ইউশা বারান্দায় এসে দাঁড়াল। খুব ঠান্ডা বাতাসে তার খোলা চুল উড়ছে। ভিজে চপচপ করছে চোখ। হাতের মুঠোয় রেলিং ধরে অন্ধকার আকাশের দিকে চাইল সে। তুরন্ত,নিরাশার ঘন আবরণে ছেয়ে এলো ভেতরটা। ইউশা ফুঁপিয়ে উঠল। ছোট্ট খাট্টো আদুরে শরীর কেঁপে কেঁপে ভেঙে পড়ল কান্নায়।
প্রেমের যন্ত্রণায় আজ সে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। কাউকে একবার ভালোবাসলে,তার রাশ টানা এত কঠিন? এত বেদনার! ইউশা তো এসব চায়নি। চায়নি এই না পাওয়ার বিষাদে ধুকে ধুকে মরতে। ও বাঁচতে চেয়েছিল। অয়নের তরে নিজের সব আশা,ভরসা সব অনুভূতি বিলিয়ে কাটাতে চেয়েছিল সারাজীবন। হলো না! কিচ্ছু হলো না। অয়ন ভাই হতে দিলো না।
পাষণ্ড পুরুষের মতো ওর সামনেই অন্য কাউকে মন দিয়ে বসল। ভালোবেসে ফেলল তাকে। এইভাবে ওকে আহত করে কিছু কম পড়েছে বুঝি? এখনো যে ওনার সাধ মিটল না। ইউশাকে প্রাণে মারাতেই ওনার একমাত্র আনন্দ।
কত চেষ্টায় এসব সহ্য করার শক্তিটুকু নিজের মাঝে টেনেহিঁচড়ে এনেছিল ও। অথচ অয়ন ভাই আজ সেটাও দুমড়েমুচড়ে দিলেন!
ইউশার দম ফুরিয়ে এলো। ছটফট করতে করতে হাঁ করে শ্বাস টানল বারবার। শীতল বাতাসের গা ছুঁয়ে যেভাবে নিঃশ্বাস বেরিয়ে যায়,ওর সব দুঃখরা সেভাবে বেরিয়ে যেতে পারে না? ওরা আটকে আছে কেন? কেন এমন কুপিয়ে কুপিয়ে ওর অন্তরটা নিঃশেষ করে দিচ্ছে!
বাতাসে বোধ হয় তুষার উড়ছে আজ । হিমের তোড়ে জমে যাচ্ছে ওর ক্ষুদ্র শরীর। কিন্তু ভেতরের চুরমার হওয়া সত্তার কাছে এসব মাথা তুলতে পারল না।
ইউশা অনেকক্ষণ বসে বসে কাঁদল। গুনগুন করে রিনরিনে স্বরে। বারবার কানে বাজল,অয়নের ওসব তিক্ত কথা। একটা নিষ্ঠুর সত্যি হলো,
এক তরফা ভালোবাসায় কোনো দাবি নেই, কোনো অধিকার নেই। শুধু আছে নীরব চোখের জল আর অকথ্য কিছু গোপন ব্যথা।
ইউশা মর্মাহতের ন্যায় চেয়ে চেয়ে ভাবল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ পৃথিবীতে আমি যাকে আমার সবটা দিয়ে চাই,তার কাছে আমি কখনো চাইবার মানুষই নই! এত দুঃখ আমি কোথায় লুকোবো আল্লাহ?”
“ আমার হৃদয়টা শেষমেশ এক তরফা চিঠি হয়ে গেল। ভালোবেসে বেসে আমি শুধু পাঠিয়েই যাব,কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসবে না।
চাইলে আমি অয়ন ভাইকে আর আমার মতো করে ছুঁতে পারব না,আবার চাইলে তাকে ভুলতেও পারব না,তাহলে আমি কী করব? এত কুৎসিত ভাগ্য আমার! কেন তুমি আমাকে এমন নির্মম পরীক্ষায় ফেললে ! আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। আমি এখন কী করব? কেউ অন্তত বলে দাও এখন আমার কী করা উচিত….”
ইউশা হেচকি তুলে তুলে কাঁদল। কিছু সময় কাটল তারপর। আচমকা তার সিক্ত,ঝাপসা নজরজোড়া ঠিকড়ে পড়ল অদূরে। কান্না থেমে গেল অমনি। নিচে সুইমিংপলের ওখানটায় সব সময় সোডিয়ামের মতো একটা লম্বা আলো জ্বালানো থাকে। সেদিকে চেয়ে কপালে ভাঁজ পড়ল ইউশার। চারপাশের অন্ধকারের ওই অল্প প্রভায় একটা মেয়েলি অবয়ব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ও অস্ফুটে আওড়াল, ,
“ তুশি…..”
তড়িৎ যেন হুশে এলো মেয়েটা। এতক্ষণে নিজের দুঃখ ছাপিয়ে অয়নের বলা কথা ছুটে চলল মাথায়।
“ ভাইয়া বলেছে ও তুশিকে চায় না। পছন্দই করে না। বিয়ের কথা বলাতে খুব চ্যাঁচামেচিও করল!”
ইউশা ধড়ফড় করে নিজের চোখ মুছল। এই রে,তখন না তুশি ভাইয়াকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েছিল? তাহলে ভাইয়া বড়ো মাকে যা যা বলেছে, সেসব কি তুশি শুনতে পেয়েছে? তবে যে মেয়েটাও কষ্ট পাচ্ছে এখন। ইউশা আর সময় নষ্ট করল না। নিজেকে ভুলে হন্তদন্ত পায়ে ছুটে চলল নিচে।
সুইমিংপুলের টলটলে জল নীল রঙে মোড়ানো। মাথার ওপর থেকে কড়া লাইটের আলো ফিনকি দিয়ে পড়ায় আরো মনোরম লাগছে ।
ওই ঠান্ডা জলে নিরলস দুটো ফরসা পা ডুবিয়ে বসে আছে তুশি। হাঁটু অবধি সালোয়ার ভিজে মিশে গেছে গায়ে। ঘাড়ে ঝুলানো অবহেলিত ওরনার এক মাথাও ভাসছে পানির ওপর।
সুস্থির বসে থাকা মেয়েটার সেসব নিয়ে উদ্বেগ অবশ্য নেই। তার নির্লিপ্ত নজর অন্য কোথাও। হয়ত দূরাকাশে,কিংবা দাপট চালানো তিঁমিরের বুকে। তুশির ভেতরে যে ঘূর্ণিঝড়, যে তোলপাড় চলছে,তার কাছে চোখের দৃষ্টি কিছু নয়। চেয়ে থাকতে থাকতে রেললাইনের মতো দুটো লম্বা জলের লাইন ওর গাল বেয়ে নেমে গলায় পৌঁছে গেল। গড়াতে গড়াতে ভাসিয়ে দিলো বুক। তুশি হাত উলটে মুছে ফেলল অমনি। অথচ ভিজে গেল আবার। মেয়েট বিরক্ত হয়। চ সূচক শব্দ করে ওরনার মাথা দিয়ে ডলে ডলে মোছে। একা একা বলে,
“ বোকা চোখ,এত মরা কাঁন্নার কী আছে ভাই? কষ্ট হচ্ছে আমার,কাঁদছিস তোরা। কেন,এত ঢং কেন? এমন ছিচকাঁদুনে চোখ তো আমার পছন্দ না। চুপ করে থাক। কথা না শুনলে উপড়ে পানির মধ্যে ফেলে দেবো কিন্তু!”
বিধিবাম,চোখেরা কথা শুনল না। ওরা ফের ভিজে ভিজে কার্নিশ ডুবিয়ে দিলো। এই অবাধ্যতায় হেসে ফেলল তুশি। পানির গায়ে ফুটে ওঠা নিজের বিম্বে চেয়ে বলল,
“ দ্যাখ তুশি,তোকে কেমন নির্বোধের মতো লাগছে। ভালোবেসে তুই একটা গর্দভ হয়ে গেছিস। কী যেন বলেছিলেন উনি,ডাফার? হ্যাঁ তুই ওটাই। যেখানে তোর শরীরের অংশই তোকে দাম দেয় না,সেখানে তুই আদৌ ওই মানুষটার দাম পাবি?”
তুশি ঢোক গিলল। একটু চুপ করল তারপর।
বড়ো শ্বাস নিয়ে বলল,
“ শুনুন বিটকেল পুলিশ, তুশি খুব এস্টরং। আপনি আমাকে বলবেন,তোমাকে আমি ভালোবাসি না আর আমিও হাউমাউ করে কাঁদব? একদম না। আমি কিন্তু কাঁদছি না। এখানে এমনি বসেছি। আপনার বিরহে কিন্তু নয়। আমি, আমি…”
তুশি আর বলতে পারল না। গলা প্যাঁচিয়ে ধরল কান্নায়। ডুকরে উঠে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলল। সেকেন্ড কয়েক পর সরাল সেই হাত। এক ডলায় ফের চোখ মুছে, নাক টেনে সহজ করল নিজেকে। বলল,
“ শুনুন…
আমার ভালোবাসা আমি নিঃশব্দে বুকে বয়ে বেড়াব। যার গন্তব্য না থাকলেও, স্রোত কিন্তু থাকবে। যদি আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসে থাকি,আপনি একদিন ঠিক সেই স্রোতে গা ভাসাবেন।”
আর না ভাসালেও বা,
আপনি আমাকে ভালোবাসেন না তো কী হয়েছে? আমি তো বাসি। আর সারাজীবন তুশি শুধু আপনাকেই ভালোবেসে যাবে। শুধু আপনাকেই চাইবে। আপনাকে পাওয়ার আশায় গোটা জীবন কাটাতে হলেও,আমি তাই করব। আপনার জন্যে অপেক্ষা করাও আমার কাছে প্রশান্তির….”
তুশি শক্ত থাকতে চাইছিল। কিন্তু হলো না। বিশীর্ণ শরীর গুটিশুটি মেরে কেঁদে ফেলল নিঃশব্দে। ভেজা, সিক্ত গলায় গুনগুন করে উঠল,
“ চাহা হ্যায় তুঝকো,চাহুঙ্গি হার দাম।
মারকে ভি তুঝছে, এ পেয়ার না হোগি কাম।
তেরি ইয়াদ জো আতি হে,
মেরি আসু ব্যাহতি হে।
আপনা তো মিলান হোগা,
পাল পাল এ ক্যাহতেহে
ক্যায়ে জিন্দেগানি হ্যায়,
বাস তেরি কাহানী হে…
একটু থামল তুশি। দম টেনে ফের গাইবে,
আচমকা পেছন হতে ভেসে এলো আর্দ্র এক স্বর,
“ তেরি হু তেরি,যো চাহে কাসাম লে লে,
মুঝকো হাম রাহি তু আপনে গাম দে দে।
সারি উমার হে মুঝকো দারদ যুদাই কা স্যাহনা।”
রাস্তেমে কোয়ি হ্যায়,মাঞ্জিলে মেরি,
মেরে সাথ যায়েঙ্গে,মুশকিলে মেরি,
তুশি চমকে পিছু ফিরল। চোখে এক প্রস্থ জল নিয়ে ধীরুজ পায়ে হেঁটে এলো ইউশা। পাশে বসল ঠিক ওর মতো করে। স্বচ্ছ জলে পা ডোবাতে ডোবাতে গাইল,
“ চাহাহে তুঝকো চাহুঙ্গি হার দাম,
মার কে ভি দিলসে এ প্যেয়ার না হোগা কাম।”
তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরল ইউশা। তৈলাক্ত,স্যাঁতস্যাঁতে,শুভ্র মুখটা দেখে
যেন কেমন করে হাসল তুশি। দুজন একইসাথে সুর ধরল,
“ তু সামনে হ্যায় মেরে,ফির কিউ এ দূরি হে,
তুঝে ক্যায়সে বাতায়ু ম্যায়,হায় ক্যা মাজবুরি হে,
এ ভি কোয়ি যিনা হ্যায়,
সির্ফ আসু পিনা হ্যায়,
সির্ফ আসু পিনা হ্যায়,
এ ভি কোয়ি যিনা হ্যায়।
গান শেষ করে থামল ওরা। বিদীর্ণ কিছু নীরবতা মিলিয়ে দিলো বাতাসে। ইউশার চোখের জল কার্নিশ বেঁয়ে পড়বে, চট করে এপাশ ফিরে ছিটকে ফেলে দিলো মেয়েটা। তুশির পানে চাইল স্বাভাবিক মুখে। জিজ্ঞেস করল অবসন্ন গলায়,
“ তোমার কষ্ট হচ্ছে, তুশি?”
তুশি তাকাল,
“ সব শুনেছ?”
ইউশা মাথা নাড়ল। প্রহৃতের ন্যায় শুধাল,
“ কষ্ট হচ্ছে তাই না? ভাইয়া যে কেন তোমাকে ভালোবাসলেন না! কেন যে এরকম করছেন?”
তুশি সামনে তাকাল। সময় নিয়ে বলল,
“ মিথ্যা বলব না। কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে জানো! মনে হচ্ছে গোটা পৃথিবী যদি ধ্বসে পড়ত,সেই ধংস্বস্তুপের নিচেও হয়ত এতটা যন্ত্রণা হতো না আমার। ওনার এই প্রত্যাখান আমার ভালোবাসার গায়ে যেন ছোবল মারল ইউশা। চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছি,আমার সারা শরীর নীল হয়ে যাচ্ছে।”
ইউশা চোখের জল ফেলে দিলো এবার। মেয়েটার জন্যে মায়ায় তার বুক পুড়ে যাচ্ছে। সৈয়দ বংশের মেয়ে হয়েও, জন্ম থেকে কিচ্ছুটি পেলো না। মানুষ হলো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। আর আজ,আজ যখন ভালোবেসে একজনকে চাইছে তাও পেলো না!
ইস,ও যেভাবে এক পাক্ষিক ভালোবেসে কাতরাচ্ছে,তুশিকেও সেই একই পথের পথিক বানাতে হলো? সৃষ্টিকর্তা,
এমন না করলেও তো পারতেন। ইউশা কোমল হাতটা তুলে তুশির গালে রাখল। বলল,
“ তাহলে কাঁদো তুশি,মন খুলে কাঁদো। চিৎকার করে সব হাহাকার বের করে দাও।”
অথচ ফিক করে হাসল সে। হাসিটা স্বাভাবিক লাগেনি। দুশ্চিন্তায় ইউশার হৃদয় শুকিয়ে যায়।
পরপরই,তুশির চেহারা বদলে গেল। বিমর্ষ, গাঢ় কণ্ঠে বলল,
“ কাঁদলে কী হবে ইউশা? উনি কি ফিরবেন?
ফিরবেন না। ফেরার কথাও তো নয়। সত্যিই তো,ওনার সাথে কি আমাকে মানায় বলো? কোথায় উনি আর কোথায় এই চোর। পড়াশোনা জানি না,ঠিক করে ইংরেজিটাও পারি না। না পারি ঘরের কোনো কাজ। না জীবনে কোনো ভালো কিছু অর্জন করতে পেরেছি। না আছে কোনো গুণ।
উনি আমার কাছে অদূরের ওই বিশাল আকাশ হলেও,ওনার কাছে আমি চোখের ধুলোবালিও নই। ওনার মতো সুদর্শন,বড়ো পুলিশ অফিসার আমাকে ভালোবাসার অন্তত একটা তো কারণ দরকার, ইউশা। সেসব তো আমার মাঝে নেই!”
ইউশা ভাবল,
“ আছে তুশি। কিছু তো আছে তোমার মাঝে। নাহলে এই বাড়ির সব চেয়ে মেধাবী ছেলেটা তোমার প্রেমে এত বাজে ভাবে পড়তো না!”
তুশি বলল,
“ আমি তো ওনাকে পাওয়ার আশায় ভালোবাসিনি, ইউশা। আমি ভালোবাসব,তার বিনিময়ে উনিও আমাকে ভালোবাসবেন,এতটা দুঃসাহসী ভাবনা আমি সত্যিই ভাবিনি। কিন্তু কাল যখন উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,তখন এক মূহুর্তের জন্যে মনে হয়েছিল হয়ত কোথাও ওনার মনে আমি আছি। হয়ত উনিও আমাকে….”
ও থামল আবার। দম নিলো। সাথে গিলে নিলো সব ক্লেশ।
মাথা নুইয়ে বলল,
“ অথচ আজ বুঝলাম,ওটুকু এমনিই ছিল। জড়িয়ে ধরলেই কী আর ভালোবাসা হয় নাকি! আমিই তো বোকা। আমি যেমন ঠিক করব,আমি কাকে ভালোবাসি তেমন ওনারও তো অধিকার আছে বলো! ওনার আমাকে ভালো লাগে না,তাহলে কেন উনি আমাকে ভালোবাসবেন? ভালোবাসতে হবে না। দরকার নেই ভালোবাসার। এমনই চলুক!”
ইউশা হতবিহ্বল চোখে চেয়ে রইল। অবাক হয়ে বলল,
“ এত মনের জোর তোমার? এতটা মনের জোর তুমি কোথায় পেলে তুশি?”
টলমলে চোখ নিয়েও হাসল সেই মেয়ে।
বলল,
“ জানি না। কিন্তু আমার কাছে
না পাওয়াও এক ধরণের পাওয়া, ইউশা। ওনাকে না পেয়ে আমি যে শূন্যতায় ভুগব ওটাই ভালোবেসে আমার আমাকে দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হবে।”
ইউশা আর শুনতে পারছে না। কান্নায় তার বুক ভেঙে আসছে। তড়িঘড়ি করে তুশির কোলে মাথা রেখে শুলো। যেন আড়াল করল ঠোঁটের ভেঙেচুড়ে আসা। তুরন্ত, সরল রেখার মতো দু ফোঁটা অশ্রুজল নেমে গেল চোখের পাপড়ি ছুঁয়ে। খুব কষ্টে কান্না চেপে বলল,
“ আচ্ছা তুশি,আমরা যাদের ভালোবাসি তারা কেন আমাদের ভালোবাসে না বলো তো! কেন খুব সহজে ধরা দেয় না? খুব সহজে কেন পাওয়া হয় না তাদের?”
তুশি ওর মাথায় নিবিড় স্নেহে হাত বুলিয়ে দেয়। চোখের জল যে কোনো সময় টুপ করে পড়বে। অথচ একইরকম উদাস হেসে বলে,
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৭
“ বা রে, খুব সহজে পেয়ে গেলে সেটা আর ভালোবাসা কোথায় হোলো?
ভালোবাসা মানেই তো একটু দুঃখ,একটু লড়াই,আর অনেকটা অপেক্ষা।”