কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪০

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪০
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি

সার্থ তৈরি হয়ে নামল। তার ত্রস্ত গতি একটু থমকাল সেই বসার ঘরে এসে। অয়ন এখনো তুশির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। কী গদগদ হয়ে হেসে হেসে কথা বলছে দুজন!
অয়ন বলল,
“ তোমার কেকের কী অবস্থা? বানানো হয়নি?”
“ না বোধ হয়।”
“ কিন্তু হঠাৎ কেক কেন?”
“ আছে। খাওয়ার সময় বলব।”
“ আমাকে দেয়া হবে বলছো?”
“ কেন হবে না? আপনি বললে কেকের প্রথম পিসটাই আপনাকে দেয়া হবে। তাই না ইউশা?”

ইউশা মাথা নাড়ল। ঠোঁট চেপে হাসল মিটিমিটি। তার দুষ্টু চোখ তুশির পেছনে থাকা সার্থের ওপর। কেমন কটমট করে চেয়ে আছে দেখো! ভাইয়ার কী জ্বলছে? রাগে ছিড়ে যাচ্ছে মাথাটা?
সার্থ নাক ফুলিয়ে দুজনের কাণ্ড কারখানা দেখল কিছু পল। হঠাৎ
চ্যাঁচিয়ে উঠল ভারি স্বরে,
“ মা, আমি বের হচ্ছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তনিমার উত্তর এলো না। ভদ্রমহিলা নিজের ঘরে ছিলেন। তবে এটুকু কথা হয়ত সার্থের মায়ের জন্যে ছিল না। ছিল কারো মনোযোগ পাওয়ার মাধ্যম। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার, তুশি তার কণ্ঠ শুনেও উল্টোঘুরেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তাও কেমন শক্ত শরীরে। অয়ন তাকাল,হাসল ভাইকে দেখে আর সেই মেয়ে! ফিরলই না?
সার্থের ব্রক্ষ্মতালু অবধি ছারখার হয়ে যায়। হনহনে পায়ে বাড়ি ছাড়ে অমনি। ইউশা চিপস খেতে খেতে ভাইয়ের প্রস্থান দেখে। মেয়েটার চোখে স্বচ্ছ দুষ্টুমি।
অয়ন কব্জি উলটে হাতঘড়িতে চাইল।
মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলল,

“ এই রে,আমার তো এগারটায় একটা অনলাইন ক্লাস আছে। আমি এখন যাই তুশি। তোমার কেক হলে ডেকো।”
তুশি ঘাড় নাড়ল। অয়ন ওপরে যেতেই লাফ দিয়ে উঠে এলো ইউশা। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল ,
“ তুশি তুশি শোনো,তুমি না এখন থেকে অয়ন ভাইয়ের সাথে বেশি বেশি কথা বলবে, হ্যাঁ?”
তুশি ভ্রু কুঁচকায়,
“ কেন?”
“ আছে, বলা যাবে না। কিন্তু বলবে। পারলে হাসতে হাসতে ওনার গায়ের ওপর পড়ে যাবে।”
“ ইস, ছিঃ তা আবার হয় নাকি?”
“ কেন হবে না? হওয়ালেই হবে।”
“ আমি জানতাম আমি পাগল। এখন দেখি সাথে আরেকটা পাগল জুটেছে। শোনো ভালোবাসার কথা চেপে রাখতে রাখতে তোমার মাথা পুরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
ইউশা কিছু বলতো,এর আগেই রেহনূমার কণ্ঠ শোনা গেল। স্ফূর্ত চিত্তে ডাকলেন,
“ তুশি তোর কেক রেডি।”
চকচকে মুখে অমনি ছুটে গেল মেয়েটা। ইউশা একা দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাসল৷ বিড়বিড় করে বলল,
“ খেলা এবার জমে যাবে তুশি। মেজ ভাইয়াকে বাগে আনার পথ পেয়ে গেছি। এইবার তোমার দুঃখের দিন শেষ। আমি অয়ন ভাইকে না পেলেও,তোমাকে তোমার ভালোবাসা পাইয়ে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

আইরিন গোমড়ামুখে ঘরে ফিরেছে। ঘরটা তার মায়ের। এই বাড়িতে রোকসানার জন্য আলাদা শোবার ঘর বরাদ্দ। যদিও বাড়িটা তোলার আগেই তার বিয়ে হয়ে গেছিল। কিন্তু ভাগ তো ছাড়া যাবে না! আর এতদিন এখানেই থাকতো আইরিন। ও এসে দেখল,মা এখনো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। ব্লাঙ্কেটে পা থেকে মাথা অবধি ঢাকা। ঘরে বোধ হয় বরফ পড়ছে। এসি একেবারে ১৮ তে নামানো। আইরিন তাড়াতাড়ি রিমোর্ট টিপে তাপমাত্রা বাড়াল। ঠোঁট উলটে এসে বসল মায়ের কাছে। টের পেয়ে মুখ থেকে কম্বল সরালেন রোকসানা। খুব আহ্লাদ করে শুধালেন,

“ মাই কিউটি,হোয়াট হ্যাপেন্ড? এমন মুখ ফুলিয়ে আছ কেন?”
“ ভালো লাগছে না মাম্মাম।”
রোকসানা উঠে বসলেন অমনি।
“ কেন? কেন ভালো লাগছে না? তোমার মামিরা কিছু বলেছে?”
আইরিন চ সূচক শব্দ করে বলল,
“ কিছু হলেই মামিদের কেন টানো মাম্মাম? ওনারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন।”
“ না বেসে যাবে কোথায়? তোমার মাকে তারা চেনে বুঝলে।”
আইরিন ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
“ মামীদের ওপর স্ট্রেস না দিয়ে,আমার মন খারাপে স্ট্রেস দাও না মাম্মাম। ”
রোকসানা মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলালেন,

“ শপিং করতে যাবে?”
“ না।”
“ তাহলে? কী হয়েছে বলোতো তোমার? মাম্মামকে বলো বেটা। তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। তোমার মুড অফ থাকলে আমার ভালো লাগে!
আইরিন মায়ের দিকে ঘুরে বসল।
বলল,
“ মাম্মাম,তুমি সার্থ ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলে?”
রোকসানা প্রশ্নটা আশা করেননি। চেহারার আগ্রহ নিভে যায়। ফোস করে শ্বাস ফেলে বলেন,
“ চেয়েছিলাম। এখন সেসব বলে লাভ কী? ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
আইরিন উদ্বেগ নিয়ে বলল,

“ কিন্তু আমাকে আগে কেন বলোনি এসব?”
“ আগে জানলে কী করতে?”
মায়ের সরু চোখ দেখে আইরিন নেতিয়ে আসে। আমতা-আমতা করে বলে,
“ না মানে…একবার জানাতে অন্তত।”
রোকসানা একটু চুপ থেকে মেয়ের মুখখানা দেখলেন। বললেন পরপর,
“ সার্থকে আমার ভালো লাগে। দেখতে-শুনতে খুবই সুন্দর। কিন্তু ও যা অ্যারোগেন্ট। কারো সাথে দু সেকেন্ড ভালোভাবে কথা বলতে পারে না। ভদ্রতা নেই, নম্রতা নেই। যা ছিল তাও পুলিশের চাকরিতে ঢোকার পর তোল্লায় উঠেছে। আত্মীয় স্বজনের দিকেও কেমন আসামী আসামী চোখে তাকায়। বিয়েটা না হওয়ায় ভালোই হয়েছে বুঝলে।”
আইরিন মাথা নুইয়ে বলল,

“ কিন্তু মাম্মাম,আমি ওনাকে খুব পছন্দ করি।”
রোকসানা চমকে বললেন,
“ কী?”
আইরিনের চোখ ছলছল করে উঠল। কণ্ঠ ভিজে একাকার। বলল,
“ ওনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে মাম্মাম। আই লাভ হিম। ওনার ওই অ্যারোগেন্স,অমন চলাফেরা ওসবই আমাকে খুব টানে। তুমি একটা কিছু করো মাম্মাম,যাতে উনি আমার হয়। প্লিজ মাম্মাম,প্লিজ!”
রোকসানা তাজ্জব চোখে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আইরিন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে। এতদিনে যেন নানুবাড়ি আসার জন্য ওর মরিয়া হয়ে ওঠা,আর বারবার বাবার কাছে যেতে না চাওয়ার অনাগ্রহটুকু পরিষ্কার বুঝে নিলেন তিনি। পরপর মৃদূ ধমকে বললেন,

“ বেবি,চুপ করো। কার জন্যে কাঁদছো তুমি? মনে রেখ সার্থর বিয়ে হয়ে গেছে। তুশি তোমার কাজিন। এখন এসব মাথাতেও এনো না।”
আইরিন তেতে বলল,
“ ওই বস্তির মেয়েকে আমি আমার কাজিন বলে মানি না। বেয়াদব,অসভ্য মেয়ে। তখন সবার সামনে কীভাবে আমার ফেস নিয়ে বলল!”
“ ভালো তো মেয়েটাকে আমারো লাগেনি। এই বাড়িতে আমার মুখের ওপর কেউ এভাবে জবাব দেয়নি আগে। তাও যতই হোক,ও ছোটো ভাইজানের মেয়ে। তোমার আমার মানায় এখন কিচ্ছু এসে যাবে না।”
“ কিন্তু বিয়েটা তো ওদের ইচ্ছেতে হয়নি মাম্মাম। ভাইয়া কত বার বলেছেন,এই সম্পর্ক উনি টেনে নিতে চান না। তারপরেও কেন?”
“ সেটা তুশির পরিচয় জানার আগে বলেছে। জানার পরে বলেনি। এখন তো ওর মত বদলাতেই পারে। পারে না? ওই সার্থর বউ। তাই ভালো হবে এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফ্যালো।”

“ মাম্মাম!”
“ শোনো বেবি,আমি শুধু সার্থর জন্যেই তোমার বিয়ে এ বাড়িতে দিতে চাইনি। তোমার বড়ো মামি খুব ভালো,নরম একজন মানুষ। কখনো তোমাকে এক ফোঁটা জ্বালাতন করার কথাও ভাবতে পারবে না। তোমার সংসার,তোমার সুখেও আমার নিয়ন্ত্রণ থাকবে,এরকম অনেক কিছু ভেবে বলেছিলাম। আর তাছাড়া সার্থর বিয়ে হয়েছে তো কী? অয়ন ইজ স্টিল ব্যাচেলর। তুমি ওর কথা ভাবো। ও তো অনেক ভালো টাকা ইনকাম করে। ডাক্তারের সম্মানও বেশি। দেখতেও তো খারাপ না।”
আইরিন রেগেমেগে বলল,

“ না,অয়ন ভাইকে আমার সহ্য হয় না। সব সময় পিঞ্চ করে কথা বলে।”
“ সেটা সার্থ আরো বেশি বলে।”
“ কিন্তু ওনারটা আমার ভালো লাগে, মাম্মা।”
রোকসানা অতীষ্ঠ হয়ে বললেন,
“ আচ্ছা মুশকিল তো। বিবাহিত পুরুষ নিয়ে এত ঘ্যানঘ্যানানি আমার পছন্দ না। হয় অয়ন,নাহয় অন্য কেউ। সার্থকে ভুলে যাও,ব্যস।”
আইরিন হাঁ করতেই,উনি কড়া গলায় বললেন,
“এই টপিকে আর কোনো কথা না।”
রোকসানা ফের শুয়ে পড়লেন। আইরিন হতাশ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখল। কার্নিশের জল প্রায় গড়িয়ে পড়ার অবস্থা।
কিন্তু তেজী হাতে ডলে ওটুকু মুছে নিলো সে। মাম্মাম বললেই হলো! দুদিনের তুশির জন্যে ও সার্থ ভাইকে ভুলে যাবে? কোনোদিন না।

সার্থ থানায় ঢুকতেই পিনপতন নীরবতা নামল। ঝট করে একেক জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে গেল একেকজন। সালাম ঠুকল,শুভ সকাল জানাল,কিন্তু ছেলেটা একটা টু শব্দ পর্যন্ত করল না। কেমন খিটমিটে একটা চেহারায় সোজা নিজের রুমে রওনা করল।
তারপর দুম করে এসে বসল চেয়ারে। তার গলা অবধি তেতো হয়ে এসছে। চিবুকের অবস্থা পাথুরে।
টেবলের জিনিস পত্র আগে থেকেই গোছানো ছিল। অথচ তাও অযথা এটা ওদিক থেকে এদিক,ওটা ওদিক থেকে এদিক করল সার্থ।
টিস্যু নিতে নিতে তুশির গলে পড়া ‘’ থ্যাংকিউটা মনে পড়তেই মেজাজ ১৮০° তে চটে গেল আবার। বিড়বিড় করে বলল,

“ খাতায় খুব ভালোবাসার কথা লেখা হচ্ছিল,অথচ এই হচ্ছে তার নমুনা। এক ফোটা দুঃখও নেই। লাফাচ্ছে,হাসছে,কেক বানাচ্ছে। আবার অয়নকেও খাওয়াচ্ছে।”
তারপর থামল সার্থ। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ আর এই অয়ন,ওর কোনো কাজ নেই? যখনই দেখি চোরটার সাথে চিপকে থাকে। কখনো ফুল দিচ্ছে,কখনো কেক খাচ্ছে। বিরক্তিকর!”
সার্থ ফের থামল। সতর্ক চিত্তে বলল,
“ কিন্তু আমি এত রেগে যাচ্ছি কেন? ওই চোরের করুক যা ইচ্ছে। ও কেক খাওয়াবে না বিষ খাওয়াবে, আমার তাতে কী? স্ট্রেইঞ্জ!”
দুই ভ্রুয়ের মাঝে আঙুল ডলে মাথা দুপাশে ঝাঁকাল সার্থ। যেন উড়িয়ে দিলো সব।
চটজলদি গলা তুলে ডাকল,

“ শরীফ,২৫ তারিখের ফাইলটা নিয়ে এসো।”
শরীফ তখন ব্যস্ত। নেহার টেবিলে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হেসে হেসে বলছিলেন,
“ আপনাকে আজ কেমন অন্যরকম লাগছে নেহা। কী ব্যাপার বলুন তো! দিন দিন এত সুন্দরী হয়ে যাচ্ছেন।”
নেহা অপ্রস্তুত হাসল। তক্ষুনি ওপাশ থেকে জানালেন একজন,
“ স্যার আপনাকে মনে হয় এ-এস পি স্যার ডাকলেন।”
শরিফ চটক কাটার ন্যায় নড়েচড়ে তাকালেন।
“ স্যার এসছেন? কখন?”
নেহা বললেন,

“ কিছুক্ষণ আগে। আপনি তখন ওয়াশরুমে ছিলেন।”
“ হায়রে, আগে বলবেন না! ”
চটপট মাথায় টুপি চড়িয়ে ফাইল নিয়ে ছুটলেন শরীফ।
সার্থ দু সেকেন্ড মতো অপেক্ষা করে চেয়ারটাকে এদিক ওদিক দোলাল। তারপর মাথা এলিয়ে রাখল পেছনে। চোখ বুজতেই বিদ্যুৎ চমকানোর মতো ছলকে উঠল কিছু দৃশ্য। লাল টুকটুকে একটা জর্জেট শাড়ি পরা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। শরীর জুড়ে তার এক প্রস্থ জড়োতা। দৃষ্টিতে লজ্জা সামান্য। কোত্থেকে ছুটে আসা বাতাসে উড়ছিল কাঁধের দুপাশে খুলে রাখা চুল। পাশ থেকে কোনো মেয়েলি স্বর শুধাল,

“ দেখো তো বড়ো মা,কেমন লাগছে?”
চোখ বুজেই ঢোক গিলল সার্থ। মানস্পটে ভেসে উঠল, সমুদ্রের রঙে মাখা আনারকলিতে এক তরুণীর ছুটে এসে দরজা খুলে দেয়া। চোখাচোখি হতেই যে পুর্নিমার চাঁদের মতো হাসল।
সহসা ঝট করে চোখ খুলল সার্থ। সোজা হয়ে বসলেও অস্থিরতা গেল না। টেবিলে দুহাত রেখে মাথা ঠেসে রাখল তাতে।
শরীফ দরজায় এলেন তখনই। অনুমতি চাইবার আগেই সার্থ বলল,

“ এসো।”
ভেতরে ঢুকে সালাম ঠুকলেন তিনি । ফাইলটা টেবিলে রেখে বললেন,
“ স্যার এই ফাইল…”
সার্থ মাঝপথেই বলল,
“ রেখে যাও। পরে দেখব।”
“ কিন্তু স্যার…”
“ রেখে যেতে বলেছি।”
“ না মানে স্যার আমি..”
“ একবার বললাম না? আবার প্যাঁচাচ্ছো কেন?”
“ আমি বলছিলাম যে ফাইল…”
সার্থ তপ্ত চোখে মুখ তুলল। ভীষণ রেগে বলল,
“ খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে অয়ন।”
শরীফ মিনমিন করে বললেন,
“ কিন্তু স্যার আমার নাম শরীফ “

সার্থ থমকাল।
চোখের মণি ঘোরাল একটু। জিভে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“ নাম যাইহোক,বাড়াবাড়ি করছিলে সেটাই আসল কথা।”
ভদ্রলোক চুপসে বললেন,
“ আমি মানে স্যার বলতে চাচ্ছিলাম ফাইলটা একটু ছিড়ে গেছে। কোনো অসুবি…”
এবারেও কথা কেড়ে নিলো সার্থ,
“ তো?”
“ স্যার আপনার কি আজ মাথা গরম?”
ঠাড় চোখে চাইল সে,

“ কেন?
“ না মানে,অয়ন তো আপনার ছোটো ভাইয়ের নাম স্যার।”
“ তো?”
শুধু তো,তো করায় শরীফ বেশ মিইয়ে এলো। শুধাল রয়েসয়ে,
“ আপনার কি কিছু হয়েছে স্যার?”
সার্থ কেমন ফটাফট জবাব দিলো,
“ মেয়ে হয়েছে। মিষ্টি খাবে?”
শরীফ চোখ কপালে তুলে ফেললেন,
“ কী বলছেন স্যার? আপনার না সবে তিন মাস হয়েছে বিয়ে হলো। এর মাঝে মেয়ে কীভাবে হবে?”
“ যেভাবে হয়।”

শরীফ ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট ফাঁকা করে রইলেন। স্যার না বলেছিলেন ওনার এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ? তবে কি তা মিথ্যে? মেয়ের সাথে আগেই পরিচয় ছিল! বাচ্চাটা কি আগেই…”
সার্থ হুঙ্কার ছুড়ল তক্ষুনি,
“ হাঁ বন্ধ করো শরীফ। নাহলে মুখের ভেতর গুলি করে দেবো।”
শরীফ আঁতকে উঠলেন। পুলিশ হিসেবে এ কাজ অবৈধ কিন্তু সার্থকে সে বিশ্বাস করে না। শেষ বার ২৪-এ রাজনৈতিক দলের এক ডান হাতকে এনকাউন্টার করেছিল ও। তদন্তের নাম করে তাকে রাজধানীর বহির্ভাগে ট্রান্সফার দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তারপর টানা চার মাস সেখানে থাকার পর ওদের আবার মনে হলো সার্থকে দরকার। এরপরই না শরীফকে জ্বালাতে তাকে আনা হলো এখানে!
ভদ্রলোক থতমত খেয়ে সোজা হলেন তড়িৎ। মাথা নুইয়ে বললেন,

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩৯

“ সরি স্যার।
এপাশে এসে দাঁত পিষলেন শরীফ। চিড়বিড় করে ভাবলেন,
“ ব্যাটা নির্ঘাত বউ এর সাথে ঝগড়া করে এসেছে। আর সেই রাগ ঝারছে আমার ওপর।”

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here