কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪৫
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
আইরিন কাঁদছে। চোখের জলে গালে বন্যা ছুটেছে প্রায়। এমনিই মেয়েটা ক্যাটক্যাটে ফরসা। নাক থেকে সারামুখ লাল হয়ে ফুলে গেছে আরো। মেয়ের লাগাতার ফোঁপানোর শব্দে মহাবিরক্ত হলেন রোকসানা। চ সূচক শব্দ করে বললেন,
“ কেন কাঁদছো তুমি? তখন সবার সামনে আমার নাক যা কাটার কেটে এখন এসব চোখের জল নাকের জল এক করার মানে কী?”
আইরিন হেঁচকি তুলে বলল,
“ মাম্মা তুমি আমাকে বোঝো না। একটুও বোঝো না।”
“ আমি বুঝতে চাইও না। তুমি আজ যা বেহায়াপনাটা দেখালে,লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম আমি। সার্থর থেকে তোমাকে আমি দূরে থাকতে বলেছিলাম। সেখানে তুমি ওকে ভাত-ডাল বেড়ে বেড়ে খাওয়াচ্ছো! আবার ওর কোলেও উঠতে চাচ্ছিলে? শেম অন ইউ আইরিন। আমি যাস্ট ভাবতে পারছি না।”
আইরিনের কণ্ঠে অটল জেদ,
“ আমি কেন ওনার থেকে দূরে থাকব? আই লাভ হিম মাম্মা, আমি বলেছি তোমাকে।”
রোকসানা চ্যাঁচিয়ে উঠলেন,
“ আমিও তোমাকে বলেছি, ও বিবাহিত। কোনোদিন ওর সাথে তোমার কিছু হবে না।”
“ মাম্মা তুমি তো নিজেই দেখতে পাচ্ছো ওরা আলাদা থাকে। যে যার মতো। তাহলে কীসের বিয়ে,কীসের বিবাহিত!”
রোকসানা অতীষ্ঠ হয়ে বললেন,
“ ফর গড শেইক আইরিন আর কোনো নির্লজ্জতার পরিচয় দিও না। ওরা আইনত স্বামী স্ত্রী। বিয়েটা ফ্রড হোক যাই হোক সার্থ ক্যান্সেল করেছে কী? করেনি। কাবিননামা নামক বস্তুটা এখনো ওর কাছেই আছে। তাই তুমি যা কিছু করছো এগুলো খুব নোংরা লাগছে দেখতে। ধীরে ধীরে মানুষ তোমাকে চরিত্রহীনার আখ্যান দেবে আইরিন।
আচ্ছা,ধরো তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম সার্থর তুশির ওপর ইন্টরেস্ট নেই। কিন্তু কত দিন?
তুশি দেখতে সুন্দরী। সারাদিন সার্থর সামনে ঘুরে বেড়ায়। আমি নিজে ওদের চোখাচোখি দেখেছি। সার্থ যে পরবর্তীতে কোনোদিন তুশির ওপর গলে যাবে না,তার কী গ্যারান্টি? আজ তোমার জেদ অনুযায়ী আমি তোমাকে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম,কিন্তু সার্থ তুশির ওপর ঘুরে গেল তখন কী করবে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ এর মানে তুমি আমার জন্যে কিছু করবে না,মাম্মাম?”
“ করতাম,যদি সার্থ স্টিল নাও ব্যাচেলর থাকতো। এখন আর কিছু করার নেই।”
আইরিন শক্ত গলায় বলল,
“ আমি কিন্তু এত সহজে হাল ছাড়ব না মাম্মাম।”
রোকসানার গলা সুদ্ধ তেতো হয়ে বসল। বীতস্পৃহ হয়ে বললেন,
“ তোমার যা ইচ্ছে তুমি করো।”
ঘর থেকে বের হতে নিলেই পেছন হতে চ্যাঁচিয়ে উঠল আইরিন,
“ আমি ওনাকে ছাড়া মরে যাব মাম্মাম।”
রোকসানা চোখ বুজে শ্বাস নিলেন। কঠোর ভাষায় বললেন,
“ এসব বলে লাভ নেই। সার্থর জন্যে সুইসাইড করবে,এতটাও ন্যাকা তুমি নও আমি জানি।”
তারপর বেরিয়ে গেলেন তিনি। আইরিন রাগে বালিশটা ছুড়ে মারল ফ্লোরে।
ইউশা এসাইনমেন্ট করছিল। তুশি পা টিপে টিপে এসেই পেছন থেকে চোখজোড়া চেপে ধরল ওর। লেখা থামিয়ে হাসল মেয়েটা। ফটাফট বলল,
“ আমার ঘরে চাঁদ এসেছে।”
তুশি চোখ ছেড়ে,ঘুরে এসে বিছানায় বসল। মুখ গোঁজ করে বলল,
“ তাও তো আমি এলাম। তুমি তো এখন আর আসোই না।”
“ কী করব বলো! এত্তগুলো এসাইনমেন্ট দিয়েছে। লিখতে লিখতে আঙুল ব্যথা করছে এখন। এজন্যেই বলি,আমার ঘরে শিফট হয়ে যাও। সারাদিন একসাথে থাকব। আর আলাদা করে ওপর নিচ করতে হবে না।”
তুশি সরল গলায় বলল,
“ উম,আমার ওই ঘরটার ওপরে ভীষণ মায়া পড়ে গেছে। নিজের হাতে গোছগাছ করেছি তো। তবে আমিত মাঝেমধ্যে এসে থাকব বলেছি।”
ইউশা বলল,
“ মিন্তু বলল,মায়ের সাথে তোমার সব মিটে গেছে।”
“ হুঁ। ভাবলাম ছোট্ট একটা জীবন,রাগ করেই কাটিয়ে দিলে ভালোবাসব কখন!”
ইউশা স্ফূর্ত কণ্ঠে বলল,
“ এইত! লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা।”
তুশি হাসল। পরপরই সচকিতে বলল,
“ তোমার জন্যে একটা জিনিস আছে দাঁড়াও।”
ওরনার ভাঁজ হতে বেলির গাজরাটা বের করে টেবিলে রাখল সে। খুব আনন্দ নিয়ে বলল,
“ অয়ন ভাই এনেছেন, তোমার জন্যে।”
ইউশার চকচকে মুখখানা অমনি মলিন হয়ে গেল। বিমর্ষ চোখে সতেজ ফুলের গাজরাটাকে দেখল এক পল! ও জানে এই ফুল ওর নয়। ওর জন্যে অয়ন ভাই আনেনি। জোর করে হাসল তাও। তুশি ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ কী হয়েছে? খুশি হওনি?”
টেনেটুনে গলার স্বর ধরে রাখল ইউশা,
“ কেন হব না। হয়েছি,ভীষণ খুশি হয়েছি।”
তুশি উঠে এসে কাঁধে হাত রাখল,
“ কী হয়েছে তোমার ইউশা! মুখটা এমন বিষণ্ণ কেন? আর সেদিন যে বললে,আমাদের ভালোবাসার মানুষ আমাদের ভালোবাসে না! কেন বলেছিলে এখনো কিন্তু বললে না আমাকে। তোমাকে তো অয়ন ভাই ভালোবাসেন। তাহলে? ওনার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে!”
“ আরে না না। ঝগড়া কেন হবে? আমরা এখন ওসব ঝগড়াঝাটিরও উর্ধ্বে চলে গেছি তুশি। কতটা উর্ধ্বে তুমি নিজেও জানো না। আর,আর ওই কথাটা তো আমি তোমার জন্যে বলেছিলাম। তোমার দুঃখকে আমি নিজের দুঃখ ভাবি যে তাই।”
তুশি এত কথার মারপ্যাঁচ ধরতে পারল না। সরল বিশ্বাসে মাথা ঝাঁকাল।
পরপরই বলল,“ দেখেছ, অয়ন ভাই তোমার পছন্দ-অপছন্দের কতত খেয়াল রাখেন। ঠিক মনে করে ফুল এনে আমাকে দিয়ে পাঠাল।”
ইউশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুল মুড়িয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলো। তুশির মাথায় হুট করে একটা কিছু খটখট করে ওঠে। টেবিলের কাঠ নখ দিয়ে খুটতে খুটতে উশখুশ করল বেচারি। অয়নের কিছু কথাবার্তায় আজকাল ওর ভীষণ অস্বস্তি হয়। ওই যে সেদিন বলল,তোমার জন্য সব পারব। তারপর ওর হাসির প্রশংসাও কেমন করে করল তখন! আজ আবার বলল- আমাদের মাঝে ধন্যবাদ কীসের? তুশির যে একদম এগুলো গায়ে লাগেনি তা না! শুধু বড়ো ভাই ভেবে এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু এসব তুশি ইউশাকে কী করে বলবে! দুজনের অত সুন্দর সম্পর্কটাতে একটা অহেতুক ভেজাল হবে না?
ইউশা খেয়াল করতেই বলল,
“ কিছু বলতে চাইছো মনে হয়!”
“ হু? না কিছু না। আমি আসি,তুমি লেখো।”
তুশি যেতে নিলেই ইউশা ডাকল,
“ শোনো তুশি।”
ফিরল ও।
“ কাল কত তারিখ জানো?”
তুশি একটু ভেবে বলল,
“ সেপ্টেম্বরের চার। কেন?”
ইউশার ঠোঁট মৃদূ হাসি,
“ কাল মেজো ভাইয়ার জন্মদিন!”
তুশির চোখের দৃষ্টি থমকে গেল। দু সেকেন্ড পর ছোট্ট করে বলল,
“ ওহ।”
“ উইশ করবে না?”
“ না। আমার উইশের জন্যে কি আর উনি বসে থাকবেন।”
তুশি বেরিয়ে যায়। ইউশা ফোস করে শ্বাস ফেলে নজর ফেরায় খাতাতে। কিন্তু কিছু যাতনার দাবদাহে ভেতরটা চৌচির হয়ে খাক হলো তার। টের পেলো বুকের কোথাও খুব সূক্ষ্ম ব্যথা কিলবিল করে ঘুরছে। ড্রয়ার খুলে ফুলের গাজরা তুলে বাইরে আনল সে। চোখের ভেতর জ্বলেপুড়ে এক ঝটকা বর্ষা ছুড়ল সহসা। টুপ করে দু ফোঁটা ছিটকে পড়ল পৃষ্ঠায়। ইউশা তড়িঘড়ি করে সেই জল মুছে ফুলটা ছুড়ে মারল ডাস্টবিনে। এই মায়া সে বাড়াবে না। শক্ত হবে,খুব শক্ত। যতটা শক্ত হলে অয়নের সংসার দেখলেও ওর হৃদয় কখনো ছিঁড়ে না যায়!
সার্থ সুধীর পায়ে ঘরের ভেতর পায়চারি করছে। থুত্নীতে আঙুল ডলতে ডলতে হাঁটছে এদিক ওদিক। হঠাৎ থামল। ঠোঁট কামড়ে ভাবল,
“ সত্যিই কি অয়ন তুশিকে পছন্দ করে?”
পরপর মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“ নো ওয়ে। তা কেন হবে? অয়ন জানে তুশির সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল৷ ও এসব কক্ষনো করবে না। হতে পারে কাজিন সিস্টার ভেবে ফুল এনে দিয়েছে। এটা আর এমন কী ব্যাপার? আমিও ইউশাকে অনেক কিছু কিনে দিই। হয়ত বা অয়নও তুশিকে সেভাবেই ট্রীট করে,যেভাবে আমি ইউশাকে করি।
তাহলে কি তুশি ওকে পছন্দ করে?”
ভাবতেই সার্থর বুকে দুম করে লাগল কিছু একটা। কেমন ব্যগ্র চিত্তে ভাবল,
“ বুলশীট, শী লাইক্স মি! ওইদিন তো খাতায় আমার কথাই লিখেছিল। সাথে কী একটা উদ্ভট নাম দিয়েছে – বিটকেল! হোয়াট’স কাইন্ড অফ নেইম ইজ দ্যাট। কী মানে এই নামের?
ওই চোর যখন দিয়েছে, মানেটা নির্ঘাত খুব খারাপ কিছুই হবে। চোরটা আমার সম্পর্কে কী জানে যে এই এত বাজে নাম দিলো? ও জানে ইউনিভার্সিটিতে কত মেয়ে আমার এ্যাটেনশান পাওয়ার জন্যে কত কী করতো? ডিপার্টমেন্টের কত মেয়ে – সার্থ আই লাভ ইউ বলে মুখে ফ্যানা তুলেছিল,কোনো ধারণা আছে ওর? যেখানে আমি সারাজীবন মেয়েদের পাত্তা না দিয়ে এলাম,সেখানে ওই চোর এখন আমাকে এ্যাটিটিউড দেখাচ্ছে। ভাইয়া ডাকছে, আবার দুপুরে ভ্যাঙালও! দিনের পর দিন সাহস বেড়েই যাচ্ছে শুধু। যেই শুনেছে ও চাচ্চুর মেয়ে,প্রিন্সেস ডায়না ভাবছে নিজেকে।”
ফের হাঁটা ধরল সার্থ। পরপরই থামল আবার। সতর্ক চোখে ভাবল,
“ ওয়েট আ মিনিট! আচ্ছা আমার কেন এত রাগ হয়? অয়নকে তুশির আশেপাশে দেখলে মেজাজ এত বিগড়ে যায় কেন?
এটা কি শুধু অয়নের পাশে দেখলে হয়,নাকি অন্য কারো সাথেও! আমি কি তাহলে সত্যিই জেলাস?
না,আমি তো এরকম ছিলাম না। আম সৈয়দ সার্থ আবরার, এত সিলি ব্যাপার নিয়ে আমি কেন জেলাস হব? তাহলে এতক্ষণ এতগুলো কথা বললাম কেন? গড! আই হ্যাভ টু চেক মাই সেল্ফ।”
তৎপর হাতে ফোন তুলল সার্থ। ব্যস্তভাবে ডায়াল করল কাউকে। কানে গুঁজেই বলল,
“ হ্যালো, দেশে এসেছিস?”
হাসনা আজ এশার নামাজে দেরি করে দাঁড়িয়েছিলেন। জায়নামাজ গুছিয়ে উঠলেন সবে,আচমকা তুশি ভোদৌড়ে ঘরের ভেতর ঢুকল। চ্যাঁচিয়ে ডাকল,
“ দাদিইই.??”
হঠাৎ ব্যাপারটায় চমকে আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি,
“ ও মা গো ক্যাডা!”
তুশি শ্বাস টানছে। এরকম
হাঁপাতে দেখে বললেন,
“ গলায় অজগর ডুকছেনি? এমন করোস ক্যা?”
“ ওহ হো দাদি, আই নিড ইউ। ইউ হেল্প মি অর নো হেল্প মি?”
হাসনা ক্লান্ত গলায় বললেন,
“ আল্লাহর ওয়াস্তে মাইনা নিছিলাম এই বাড়িত আইসা তোর ইংজিরির ভূত নামছে। কিন্তু নাহ,অহনও নামেনাই।”
তুশির চোখ পড়ল দেওয়ালঘড়িতে। সাড়ে এগারটা বাজে। অমনি অধৈর্য হয়ে বলল,
“ আরে দাদি এত কথা বোলো না। বোসো এখানে।”
দুহাত ধরে দাদিকে খাটে বসিয়ে, সুই-সুতার সাথে একটা কাপড় দিয়ে বলল,
“ দাদি, আমাদের বালিশে কী যেন একটা সেলাইয়ের ফোর করেছিলে। ওটা অনেক সুন্দর। আমাকে জলদি জলদি করে একটু শিখিয়ে দাও তো।”
“ এডি শিক্কা কী করবি?”
“ লাগবে দাদি, কথা না বলে দাও।”
“ তুই পারবি না বু। অনেক খাটনি। সুই ঢুকপো হাতে। আমারে দে, আমি করি।”
“ উহু,এটা আমাকেই করতে হবে দাদি। আমার একটা বিশেষ দিন আজ। তুমি শেখাও। আর সুতা কীভাবে গাঁথতে হয় তাও শেখাও।”
হাসনা নাতনির জেদ সম্পর্কে জানেন। তাই কথা না বাড়িয়ে ব্যস্ত হলেন কাজে।
তুশি সবটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখল। কাজ শেষেই সুই-সুতা টেনে নিয়ে বলল,
“ ওকে থ্যাংকিউ!”
তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল ফের। হাসনা কিছুই বুঝলেন না। মেয়েটা এত দুরন্ত। দু দণ্ড পাশে এসে বসারও ফুরসত নেই। তাও গাল ভরে হাসলেন তিনি। সেই চোর তুশি আজ কত বদলে গেছে। সেলাইও শিখছে এসে?
সার্থর ঘুম ভাঙল সকালে। শনিবার হওয়ায় আজ থানার চাপ নেই। কিন্তু একটা বিশেষ কাজ আছে ওর। একেবারে ঝকঝকে শার্ট-প্যান্ট তৈরি হয়ে বের হলো তাই। দরজা টেনে খুলতেই কিছু একটা ঝুপ করে ওপর থেকে খসে পড়ল ঘাড়ে। সহসা একটু থমকাল ছেলেটা। চোখ নামিয়ে,কপাল কুঁচকে চাইল। কাঁধের ওপর একটা সফেদ রুমাল লেগে আছে।
সার্থ অবাক হয়। রুমাল হাতে নিয়ে ছাদের দিকটা এক পল মাথা তুলে দেখে। এই জিনিস এখানে কোত্থেকে এলো? ওইপাশ উল্টাতেই বিভ্রান্ত চোখমুখ অমনি টানটান হয়ে বসল।
খুব ভাঙা ভাঙা হাতে ক্যাপিটাল ইংরেজিতে লেখা- “ শুভ জন্মদিন!”
পুরোটা সুতো দিয়ে বোনা। আঁকাবাঁকা ফোর। পাশে দুটো গোলাপও এঁকেছে। সার্থ গালের ভেতর জিভ নেড়ে কী যেন ভাবল। পরপরই রুমালটাকে পাশের বড়ো ফুলদানিটার ওপর রেখে দিলো আবার। ঘরের ভেতর ঢুকেই ধরাম করে আটকে দিল দরজাটা। পিলারের এপাশে থাকা তুশি ছলকে উঠল শব্দে। উঁকি দিলো ঘাড় নামিয়ে। রুমাল বড়ো ফুলদানির ওই নকল ফুলের ডালে ঝুলছে। অমনি মেয়েটার সারামুখ ভীষণ বিবশ ব্যথায় নীল হয়ে গেল। খণ্ড হলো বুকের ধার।
আর্ত চোখে শত ফুটো হওয়া আঙুলটা তুলে দেখল এক পল। কাল সারারাত জেগে ও এটা সেলাই করে বানিয়েছে। কতবার সুই ঢুকেছে চামড়ায়। এক ফোঁটাও ঘুমায়নি বলে এখনো মাথার এক পাশ টনটন করছে ব্যথাতে। অথচ উনি খুশি তো দূর,সাথেও রাখলেন না। এভাবে ফেলে দিলেন!
অবশ্য যে মানুষ ব্রান্ডেড জিনিসপত্র ছাড়া ব্যবহার করে না,তার কাছে ওই সামান্য একটুকরো কাপড়ের রুমাল কী আর রেখে দেয়ার জিনিস! ও একটু বেশিই আশা করে ফেলল বুঝি?
তুশি মন খারাপ করে চুপচাপ নিচে নেমে এলো।
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪৪
ঠিক তার দু সেকেন্ড পরেই খুব আস্তে করে দরজা খুলল সার্থ। নিচে চেয়ে দেখল,চলে যাচ্ছে তুশি। অমনি তাড়াহুড়ো করে রুমাল হাতে নিয়ে ফের মেলল সে। লেখাটা আবার পড়ে নিঃশব্দে ঠোঁটের কোণ তুলে হাসল।
এরমধ্যেই তারস্বরে ফোন বাজল ওর। সার্থ তড়িঘড়ি করে রুমাল পকেটে ভরে। ফোন বের করতেই স্ক্রিনে লেখা উঠল –
“ জামিল…”
