কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪৭
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
এতক্ষণ আনন্দ,আর সুরে মজে থাকা বসার ঘর নিমিষেই কেমন থম ধরে গেল। সার্থর আচমকা কাণ্ডে হতবিহ্বল সকলে। প্রত্যেকে অবাক চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। এরপর এক দফা মুখ দেখাদেখি!
রেহণুমা অস্থির হয়ে পড়লেন,
“ ওভাবে,ওভাবে মেয়েটাকে নিয়ে গেল কেন আপা?”
অয়ন বলল,
“ আমি দেখছি।”
উঠতে নিলেই, হাতটা চেপে ধরলেন জয়নব।
“ দরকার নেই। ওদের ব্যাপার ওদের বুঝে নিতে দাও।”
“ ওদের ব্যাপার কবে হলো?”
জয়নব পুরু কণ্ঠে বললেন,
“ দাদুভাই, নো মোর আর্গুমেন্টস। বসে থাকো চুপ করে।”
বাড়ির সবথেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠা নারীর ওপর কথা বলার অভদ্রতাটুকু অয়নকে দিয়ে হলো না। অনীচ্ছায়,অনীহায় বোম মেরে বসে রইল সে। মনে হলো কোথাও না কোথাও আজ বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। তুশি ভাইয়াকে যেভাবে দেখছিল,আবার ভাইয়াও তুশিকে যেভাবে নিয়ে গেল তাতে কী কোনো বিশেষ ইঙ্গিত দিচ্ছে!
অয়ন মূহুর্তে মাথা ঝাঁকায়। ভাবে,
“ না না, হয়ত তুশির প্রতি অবসেশন থেকেই ও উল্টোপাল্টা ভাবছে। ভাইয়া তো বলল ওদের মাঝে কিছু নেই। আর থাকলেও বা, এতগুলো দিনে ও তুশির ওপর অনেক বেশি দূর্বল হয়ে পড়েছে, এখন পিছু হটা অসম্ভব।”
আইরিনের সব উচ্ছ্বাস,উল্লাস শেষ। ব্যাকুল হয়ে বারবার ঐ পথটা দেখছিল সেও। রোকসানা ফিসফিস করে বললেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ কালই বলেছিলাম সার্থর মতিগতি ভালো না। প্রমাণ মিলল কিউটি?”
আইরিনের কান্না পেয়ে গেল। যখনই ও একটু সিগন্যাল পেয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে,তখনই তুশি কিছু না কিছু করে ওর থেকে সার্থকে দূরে সরিয়ে দেয়। এই মেয়েটাকে কবে না রেগেমেগে ও খুনই করে বসে।
সবার এই নিস্তব্ধতা কাটাতে জামিল গলা ঝারল। বলল,
“ আচ্ছা এত চিন্তার কী আছে বলুন তো। হাজবেন্ড তার ওয়াইফকে নিয়ে গেছে,নিশ্চয়ই দে নিডস কোয়ালিটি টাইম।
ছাড়ুন ওদের। চলুন আমরা আমাদের কথা বলি।”
নাসীর বললেন,
“ একদমই তাই। আড্ডা জমে উঠেছে মাটি করে লাভ নেই।”
ইউশা চোরা চোখে অয়নের পানে চাইল। শক্ত মুখে হাত মুঠো করে মেঝের দিকে চেয়ে আছে সে। চিবুকের দুপাশের রেখা স্পষ্ট।
তনিমা-রেহণূমা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। সার্থ যে বিয়ের ব্যাপারটা পুরোই নাকচ করে দিয়েছিল,কাউকে এখনো বলেননি তারা।
এখন জানানোর সময়ও নয়। প্রসঙ্গ কাটাতে হাসলেন তনিমা,বললেন,
“ সেই ভালো!”
সার্থর রুষ্ট চাউনিতে উত্তপ্ত আগুন। নিঃশ্বাসে সাঁইসাঁই শব্দ। এসেই তুশির কনুই ছাড়ল,পরপরই নিজের শক্ত দুহাতে সজোরে চেপে ধরল দুবাহু। মেয়েটা নিজের ক্ষুদ্র শরীর সহ তার বুকের কাছে ঘেঁষে এলো অমনি। পুরুষালি আঙুলগুলো হিংস্রের ন্যায় জামা ভেদ করে বসে গেল ত্বকে। তুশি ব্যথায় ঠোঁট কুঁচকে নেয়। সার্থর সিসকার শ্বাসের তপ্ত বাতাস এসে চোখেমুখে লাগে। ভালো করে তাকানোর আগেই কেমন গর্জে উঠল সে মানুষ,
“ এনাফ তুশি,যাস্ট এনাফ। যথেষ্ট হয়েছে। যথেষ্ট করে ফেলেছ। এবার এসব বন্ধ করবে তুমি। আই কান্ট টলারেট ইট এনিমোর।”
তুশি বিস্ময়ে আকাশ থেকে পড়ল।
হুট করে সার্থর এত রাগ,এত ক্ষোভ আর এই কঠিন চাউনির এক ফোঁটা মানেও ঢুকল না মাথাতে। সরল গলায় শুধাল,
“ কী করেছি আমি!”
সার্থ ক্ষেপে গেল আরো,
“ ইনোসেন্ট সাজছ? বোঝাতে চাইছ তুমি কতটা নিষ্পাপ!
অয়নের সাথে তোমার কী চলছে আমি জানি না? আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি?”
তুশি তাজ্জব হয়ে বলল,
“ ওনার সাথে আমার কী চলছে মানে! ওনার সাথে কী চলবে আমার?”
সার্থ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে চেপে ধরল বাহুটা।
তুশি আর্তনাদ করে বলল,
“ লাগছে!”
সার্থ কথায় কান দেয় না, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য যেন। বরং ক্রুদ্ধতায় দাঁত খিচে বলল,
“ আই যাস্ট ফাকড আপ ইয়র এক্টিং লেভেল। এতটাও শেয়ানা এখনো হতে পারোনি তুমি।
যখনই আমি তোমাকে রিজেক্ট করলাম,অমনি অপশন বি হিসেবে অয়নকে বেছে নিয়েছ। কেন! ও ডাক্তার, ভালো বেতন পাচ্ছে,দেখতে ভালো তাই?”
তুশি নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল৷ বিমূর্ততায় ঠোঁট দুটো সরে গেল দুপাশে। সার্থ বলেই গেল গড়গড় করে,
“ কী করছো এসব ওর সাথে? তোমাদের এত মেলামেশা কীসের? কীসের এত হাসাহাসি! বিয়ে করবে ওকে? বলো,আমি তোমাকে বউ বলে স্বীকার করিনি দেখে এখন কি তুমি অয়নের বউ হতে চাইছ! এত সেজেগুজে, সিডিউস করছো ওকে? ’’
তুশি কিংকর্তব্যবিমুঢ়! বাকরুদ্ধ জিভ খসিয়ে কিচ্ছুটি বলতে পারল না।
সার্থর রাগ আরো বাড়ল তাতে। হাতটা জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে বলল
“ উত্তর দিচ্ছো না কেন ডাফার? নাকি বলার মতো কোনো কথাই নেই। সত্যিটা ধরে ফেলেছি তাই না? বুঝে গেছি তুমি কেমন, তাইত?”
তুশি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল তাও। শুধু ঠোঁট জোড়া সময় নিয়ে নাড়ল,
“ আপনি আমাকে এরকম ভাবেন!”
“ ভাবার কী আছে? তুমি তো এমনই। তোমার কি মনে হয় আমি এক দুদিন দেখে কথা গুলো বলছি। নো!
দিনের পর দিন চোখের সামনে অয়নের সাথে তোমার বেহায়াপনা গুলো দেখেছি আমি। এই তুমি সৈয়দ বাড়ির মেয়ে?”
বিদ্রুপ করে হাসল সার্থ।
বলল,
“ শরীরে এ বাড়ির রক্ত থাকলে কী হবে,মানুষ তো সেই বস্তিতেই হয়েছ। কুকুরের লেজ তো আর কখনো সোজা হয় না। আর না চোর হয় সাধু। লোভী মেয়ে একটা! “
তুশির চোখের কোণে জল ছুটে এলো। ভেঙেচূড়ে টুকরো হলো বুকের পাশ।
সার্থ হুঙ্কার ছুড়ল স্থূল স্বরে,
“ অয়নের থেকে দূরে থাকো তুশি। দূরে থাকো আমার ভাইয়ের থেকে। সার্থ আবরারের খারাপ রূপ দেখতে চেয়ো না। ইউ কান্ট বিয়ার ইট!”
সার্থ থামল,শ্বাস নিলো। ধাক্কা দেয়ার মতো করে ছাড়ল ওর বাহুজোড়া। পিছু ঘুরে হাঁটা ধরবে, তুশি মুখ খুলল সবে। খুব মৃদূ গলায় বলল,
“ অনেকক্ষন বললেন,ভদ্র মেয়ের মতো শুনলাম সবটা। এবার আমাকেও কিছু বলতে দিন। ”
ঘুরে চাইল সার্থ। ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“ এখনো তোমার বলার মতো কথা আছে?”
তুশি ঠোঁট টেনে মলিন হাসল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের তালুতে মুছল কার্নিশের জলটুকু।
বলল,
“ আপনি একদম ঠিক বলেছেন,আমি আসলেই লোভী। আমি আসলেই কুকুরের লেজের মতো বেহায়া। নাহলে প্রথম দিন থেকে আপনার এত অপমান,অসম্মানের পরেও আপনার প্রতি আমার সম্মান বেঁচে থাকে!”
সার্থর চেহারা ঝিম মেরে গেল। টানটান হলো ভ্রু দুটো। তুশি এসে ওর মুখোমুখি দাঁড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে,
“ আপনার যদি মনে হয় আমি অয়ন ভাইয়ের সাথে হেসেছি মানেই তাকে বিয়ে করব বলে হাত করছি,তাহলে তাই। আপনার যদি মনে হয় আমি অয়ন ভাইয়ের বউ হতে চাইছি কারণ তার আপনার থেকেও বেশি টাকাপয়সা আছে,তাহলেও তাই। আপনি যা যা বলেছেন, সব সত্যি,সব ঠিক।
কিন্তু, তাতে আপনার কী? আমি কী করেছি,কী করছি,কী করব সেসব আমার সিদ্ধান্ত। আপনি এ নিয়ে আমাকে কথা শোনানোর কে?
হু আর ইউ, মিস্টার সার্থ আবরার! “
সার্থ হতবাক,হতবুদ্ধি। প্রথম দিন দেখা হওয়া সেই মিনমিন করে ভুলভাল ইংরেজি বলা মেয়েটার কণ্ঠে আজ প্রচণ্ড তেজ। গরিমা তার চোখেমুখে। সার্থ স্তম্ভিত আওড়াল,
“ তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো?”
“ ডাকছি। কী করবেন?
নাম ধরে ডাকার জন্যে নিশ্চয়ই জেলা ভরা যায় না। তাও তো যথেষ্ট সম্মানের সাথে ডাকলাম। কিন্তু আপনি কোনো সম্মান পাওয়ার যোগ্যই নন।”
আগুন চোখে হুঙ্কার ছুড়ল সার্থ,
“ তুশি!”
“ কী তুশি!
আপনি তো নিজেই বলেছিলেন, আপনার আমার বিয়ে হয়নি,আমি আপনার কেউ নই। আপনিও আমার কেউ নন। তাহলে এখন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন কীসের জোরে?
কেন আমাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন?”
সার্থ দাঁত চিবিয়ে বলল,
“ আমি তোমাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। ইউ যাস্ট গো টু হেল। অয়ন আমার ভাই,আমি আমার ভাইয়ের জন্য বলেছি। আজ তুমি আমাকে ভালোবাসবে, আমি রিজেক্ট করলে গিয়ে অয়নকে ভালোবাসবে এসব চলতে পারে না!”
“ আপনাকে কে বলেছে,আমি আপনাকে ভালোবাসি? আমি বলেছি কখনো?”
সার্থ সচেতন চোখে চাইল,থেমে থেমে বলল,
“ মানে! ভালোবাসো না?”
তুশির স্বর পাথর সম,
“ না।”
“ তাহলে কাগজে সেদিন কী লিখেছিলে?”
“ ওখানে কোথাও আপনার নাম লেখা ছিল?”
সার্থর কথা হারিয়ে যায়। বিমূর্ত চেয়ে থাকে কিছু পল। পরপরই উদ্বেগ নিয়ে বলে,
“ তার মানে আমার সন্দেহই ঠিক?”
“ হ্যাঁ!”
সার্থ উত্তেজিত হয়ে বলল,
“ এর মানে,এর মানে ইউ লাভ অয়ন?”
“ সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”
“ ইউ কান্ট ডু দিস তুশি। বাড়ির সবার চোখে আমরা এখনো স্বামী- স্ত্রী। অয়নের ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে তুমি ওকে এভাবে ঠকাতে পারো না।”
তুশি গলার জোর বাড়াল,
“ স্বামী-স্ত্রী? কারা স্বামী-স্ত্রী?
মানি না। এতদিন আপনি মানেননি,এবার আমিও মানি না।”
মেয়েটার চোখ ফের টইটম্বুর হয়ে উঠল। কণ্ঠ ভেঙে এলো কথা বলতে গিয়ে,
“ আপনার মতো একটা নোংরা মানসিকতার লোক আমার স্বামী হতেই পারে না। যে কোনোকিছুর বাছ-বিচার না করেই নিজের ছোটো ভাইয়ের সাথে একটা মেয়েকে জড়িয়ে এত বিশ্রী বিশ্রী কথা ভাবতে পারে, সে কতটা নিচু মনের আমি শুধু ভেবেই অবাক হচ্ছি!”
সার্থ চটে কিছু বলতে গেলেই কথা কেড়ে নিলো তুশি। মুখের সামনে আঙুল তুলে বলল,
“ আপনি নিজের সীমায় থাকুন। আমার সিদ্ধান্ত আর আমার মধ্যে নাক গলানোর অধিকার আমি আপনাকে দিইনি। তাই আমার জীবনে অয়ন আসবে, না কে আসবে আমি বুঝব। এসবে আপনি আমাকে নিয়ে কী ভাবলেন না ভাবলেন আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। যে আমার কাছে কোনো মানেই রাখে না,তার ভাবনা দিয়ে আমার কী? আমার তো এখন আপনার মুখ দেখতেও রুচিতে বাঁধছে। ছিহ!”
সার্থর ব্রক্ষ্মতালু অবধি পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তুশি উল্টোঘুরে হাঁটা ধরতেই সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ফুলদানির গায়ে লাথি মারল সে। শব্দটায় এক কদম থামল তুশি। ঢোক গিলে পরপরই ঢুকে গেল রুমে। এই নিষ্পৃহতায় ভীষণ
রোষে ফেটে পড়ল ছেলেটা। উন্মাদের ন্যায় দড় হাতে আট-দশটা ঘুষি মারল দেওয়ালে। আঙুল সহ ছুলে চামড়া উঠে এলো তাতে।
ফুলদানি ভাঙার শব্দে ছুটে হাজির হলেন তনিমা। রেহনূমাও পিছনে এসে দাঁড়ালেন।
“ কী হলো, কী ভাঙল?”
পরপর মেঝেতে ছড়ানো টুকরো গুলো দেখেই আঁতকে উঠলেন দুজনে ।
“ এ কী! এটা ভাঙল কী করে?”
ছেলের দিকে তাকাতেই চোখ পড়ল হাতে। জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্ত দেখা যাচ্ছে। তনিমা আর্তনাদ করে বললেন,
“ এ মা, কেটে গেছে দেখি। কীভা…”
হাতটা ধরতে গেলেই সার্থ ঝট করে সরিয়ে নিলো। একটা কথাও না বলে হনহন করে ফিরে গেল ঘরে। তার চেহারার দুরুহ, কটমটে দশায় বসার ঘরের সবাই বুঝে ফেলল একটি নীরব দাঙ্গা শেষ হলো এখনই।
তুশি অধৈর্য হাতে দরজা আটকে দেয়। পিঠ ঠেসে মেঝেতে বসে পড়ে। হাঁটুতে মুখ চেপে হুহু করে কেঁদে ওঠে পরপর।
“ আপনি আমাকে এতগুলো খারাপ কথা বলতে পারলেন? এত জঘন্য ভাবতে পারলেন আমাকে? আপনাকে ছাড়া, আপনার শূন্যতায়, আপনাকে চাওয়ার পরেও আপনাকে না পাওয়ার অপূর্ণতায় যেখানে প্রতি মূহুর্তে গুমড়ে মরছি সেখানে আমি অন্য কাউকে নিয়ে ভাবব? তাও তার টাকা, তার অবস্থা দেখে? এও সম্ভব!
আপনি আমাকে বুঝলেনই না বিটকেল। আমার ভালোবাসাও বুঝলেন না।
আপনি শুধু নিজের রাগ,নিজের ইগোকেই বুঝলেন। এতটা নিচে নামতে কী করে পারলেন আপনি!
আমার চরিত্র নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে এভাবে বলতে আপনার একটুও বাঁধেনি!”
তুশি মুখ তুলে এক ঘষায় চোখ মুছল। নাক টেনে সামলাল নিজেকে। দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“ আচ্ছা বেশ, আমার ভালোবাসা যখন বুঝলেনই না,তখন তুশিও আর ভালোবাসবে না আপনাকে। এবার থেকে
আপনাকে শুধু ঘৃণা করব আমি। আজ আপনি যা যা বললেন,সেজন্য তুশি কক্ষনো আপনাকে মাফ করবে না,কক্ষনো না।”
ইউশা উদ্বীগ্ন চিত্তে ছুটে এলো। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখল দরজা বন্ধ। সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে ডাকল,
“ তুশি,তুশি কী হয়েছে? দরজাটা খোলো তুশি!”
উত্তর এলো ভাঙা স্বরে,
“ আমাকে একটু একা থাকতে দাও, ইউশা।”
“ না। আমাকে তো কখনো একা ছাড়োনি,তাহলে আমি কেন ছাড়ব? খোলো প্লিজ,কী হয়েছে বলো আমাকে!”
“ বললাম না যাও?
আমাকে একা থাকতে দাও। আল্লাহর দোহাই তোমার।”
ইউশা হাঁ করতে নিলেই,অয়নকে দেখে থেমে গেল। ছেলেটার চেহারায় উৎকণ্ঠার বন্যা।
এসে নিজেও দরজায় বাড়ি দিলো দুটো।
“ তুশি! তুশি! শুনতে পাচ্ছ?”
ভেতর থেকে উত্তর এলো না। অয়ন ইউশার দিকে চাইল।
“ ভাইয়া ওকে কী বলেছে,তুই জানিস?”
ইউশা মাথা নাড়ল দুপাশে,জানে না।
অয়ন চোখ গরম করে একবার ওপরে সার্থর ঘরের দিকে চাইল। পোক্ত চিবুকে হাঁটা ধরতেই হাতটা টেনে ধরল ইউশা,
“ ভাইয়ার কাছে যাচ্ছ?”
“ আজ আমি এর একটা বোঝাপড়া করব। যার সাথে ওর কোনো সম্পর্কই নেই,তার সাথে এসব আচরণের মানে কী? কী ভাবে ও নিজেকে!”
“ পাগল হলে? এখন পরিস্থিতি হাতে নেই অয়ন ভাই। এমন কিছু কোরো না।”
“ কীসের পরিস্থিতি? এমনিতেও আমাকে ব্যাপারটা নিয়ে কথা তুলতে হতো। তুশির সাথে ওর বিয়েটা একটা ছেড়া তারের মতো ঝুলছে। শেষ করুক এটা। যাতে ওর ওপর আর কোনো অধিকার না থাকে সেটা অন্তত আমার এনশিয়র করা উচিত।”
“ সেসব পরেও করা যাবে। এখন তুশির মন-মেজাজ ঠিক নেই। হয়ত কাঁদছেও। এক্ষুনি আরেকটা অশান্তি না বাড়ালে হয় না? আর, তুমি কেন আগে গিয়ে ভাইয়াকে চার্জ করবে? তুশিকে তো এখনো তুমি নিজের কথা কিছু জানাওইনি।
আগে অন্তত ওর থেকে শুনে নাও,ও কী চায়। তারপর নাহয় ভাইয়াকে কিছু বোলো। তুশিরও তো একটা মতামত থাকতে পারে।”
অয়নের কপালে ভাঁজ পড়ল। চিন্তার তোড়ে নেমে গেল রাগটা। সত্যিই তো,ও যে এখনো তুশিকে কিছু জানায়ইনি। তবে মনে হলো জানালেও উত্তর বদলাবে না। তুশি ওর সাথে এতটা সাবলীল যখন, না বলবে না নিশ্চিত !
সার্থ সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ট্যাপ ছাড়ল। পেটানো শরীরটা নিয়ে দাঁড়াল তার তলায়। আঙুলের প্রত্যেকটি করের হাড়ে ভেসে আছে রক্তের লালচে রং। কতক জায়গায় চামড়া উঠে হাঁ করে আছে। অথচ এক ফোঁটা ব্যথাও সে পাচ্ছে না। বরং ভিন্ন এক রাগে সারা শরীর ঝলসে যাচ্ছে এসিড পড়ার মতো। এর তোড় ভয়ানক।
ট্যাপের ঠান্ডা জল শুকনো শার্ট থেকে শুরু করে,পকেটে থাকা ফোনটা অবধি ভিজিয়ে দিলেও ওই জ্বলন-পোড়নের ছিঁটেফোঁটাও কমিয়ে দিতে পারল না।
ছুলে যাওয়া হাতটা দেওয়ালে রেখে মাথা নুইয়ে দাঁড়াল সার্থ। দৃষ্টিতে বারুদ। ক্ষুব্ধ চোয়াল। বলিষ্ঠ দেহ থরথর করছে ভীষণ ক্রোধে। নিঃশব্দে কিছুক্ষণ মেঝের টাইলসেই চেয়ে রইল সে। হঠাৎই ঠোঁটের কোণ তুলে হাসল একটুখানি। দাঁত পিষতে পিষতে ভাবল,
“ সার্থর জেদ,সার্থর ইগো সম্পর্কে তুমি জানো না তুশি। খুব বড়ো ভুল করলে আমাকে ক্ষেপিয়ে। এবার যতক্ষণ না তুমি আমার জন্যে কেঁদে অস্থির হবে,মাফ চাইবে আজকের বেয়াদবির জন্যে ততক্ষণ অবধি সৈয়দ সার্থ আবরার তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। এন্ড দিস ইজ মাই প্রমিস টু ইউ বেইব!”
ঘরের পরিবেশে একটা থমথমে হাওয়া বয়ে গেল আজ। আর কোনো হাসি-মজা কিচ্ছুটি হলো না। রাতে খেলো না তুশি। সার্থও এলো না নিচে। না খেলো অয়ন,আর না খেলো
ইউশা। শুধু আইরিন দুটো দানা মুখে তুলে শুতে চলে গেল। চিন্তায় তার মরমর দশা। দোটানা মাথা জুড়ে। সার্থ-তুশির মধ্যে যদি গুরুতর কিছু হয় তাহলে ভালো। কিন্তু ঐ গুরুতর কিছু ঘটবেই বা কেন? ওদের মধ্যে তো গভীর কিছু নেই। আর যাদের মাঝে গভীর কিছু নেই,তাদের মাঝে…
আইরিন ভাবতে গিয়ে পাগল হয়ে যায়। কোনোরকম চোখ বুজে ঘুমোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু না,যতবার চোখ বন্ধ করছে সার্থর তুশিকে টেনে নেয়াটাই ভাসছে পর্দায়।
ও বিরক্ত হয়ে উঠে বসল ।
ছাদের দিকে মুখ তুলে ভাবল,
“ একটা কি মিরাকল হতে পারে না? যাতে সার্থ ভাই পুরোপুরি আমার হয়ে যায়!”
জামিল অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল সার্থ নিচে আসে কিনা। এলো না, ফোনও ধরল না। ওকে ধরেবেঁধে রাতের খাবারটা খাইয়েছিলেন তনিমা। সবাই আজ থেকে যেতেও বলল।
কিন্তু জামিল এসেছিল সোজা এয়ারপোর্ট থেকে। এখনো নিজের বাসার মুখ দেখেনি। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল তাই।
তারপর সেই রাতটা কাটল কোনোরকম। বাড়ির প্রত্যেকেই ঝুলে রইল বিস্তর দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে। সার্থ তুশিকে ওভাবে কেন নিয়ে গেল,ওদের কী কথা হলো আর কেনই বা দুজন এমন রুমে খিল দিয়ে রইল কারো কাছে কোনো উত্তর নেই। কেউ চাইলও না ঘাটাতে।
কারণ,সবার চোখে ওদের বিয়ের মানে আছে।
মন থেকেই তো তারা মেনে নিয়েছিলেন। সার্থ গাইগুই না করলেই তো ধুমধাম করে সহীহ মতে বিয়ে হতো আবার। তাও, হুট করে মুখে সব বাতিল বললেই কি মন থেকেও বাতিল করা যায়!
সকালবেলা সবাই খেতে বসেছে। শওকত, সাইফুল থেকে প্রত্যেকেই আছেন। শুধু নাসীর বেরিয়েছেন একটা জরুরি কাজে।
শওকত কালকের ব্যাপারে কিছু জানেন না এখনো। তবে খেয়াল করলেন টেবিলে বসা মুখগুলো বড্ড শুকনো শুকনো লাগছে।
এদিকে রেহণূমা তখন থেকে তুশিকে ডাকছেন। রাতেও খায়নি,এখনো খাবে না!
ইউশা তক্ষুনি ওকে জোর করে টেনেটুনে আনল। পথে বারবার হাত ধরে মোচড়াচ্ছে তুশি।
“ আমার খিদে নেই ইউশা,প্লিজ!”
“ তোমার জন্য আমিও রাতে খাইনি তুশি। এখন না খেলে এখনো কিন্তু খাব না।”
তুশি এ যাত্রায় নিভে গেল৷ ওর দুঃখের জন্যে তো আর ইউশাটাকে কষ্ট দিতে পারে না। চুপচাপ অন্ধকার চেহারায় বসল এসে। আইরিন অমনি ভেঙচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিলো। গা পিত্তি সহ জ্বলে যাচ্ছে তার। অয়ন খেতে খেতে তুশিকে দেখল এক পল। মেয়েটার মুখচোখ সেই একইরকম কালো।
কী এমন বলল ভাইয়া যে এখনো মুভ অন করতে পারল না!
ওর মনের প্রশ্নটাই করে ফেললেন তনিমা,
“ ওমা, তোর চোখ ফুলেছে কেন তুশি? এই, সত্যি করে বলতো সার্থ তোকে কী বলেছে কাল!”
তুশি মিহি স্বরে বলল,
“ কিছু না, ছাড়ো এসব।”
শওকত কপাল কুঁচকে বললেন,
“ বাড়িতে আসলে ঘটেছেটা কী? সবারই তো দেখছি মুখচোখ অন্ধকার।”
রোকসানা ফোস করে শ্বাস ফেলে বললেন,
“ আর বোলো না ভাইজান, কাল তোমার ছেলে যে কী খেলা দেখাল।”
তারপর এক নাগাড়ে গড়গড় সবটা বললেন তিনি।
সাইফুল বললেন,
“ আহা থাক না। ওদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপারে কেন আমরা কথা বলতে যাচ্ছি। ওদেরও নিজস্ব কিছু বোঝাপড়ার দরকার আছে।”
তুশি বিমর্ষ শ্বাস ফেলে আওড়াল,
“ স্বামী-স্ত্রী! ”
অয়ন খুব সাবলীল গলায় বলল,
“ কিন্তু ভাইয়া তো এসব চায় না চাচ্চু। ও তো চাইছেই না তুশির স্বামী হয়ে থাকতে। তাহলে বারবার এই সো কলড সম্পর্কের ফ্যাসাদে ওদের জড়াচ্ছ কেন?”
“ সার্থ চায় না মানে!”
“ মানেটা মামুনিকেই জিজ্ঞেস করো । ছোটো মাও সব জানে বোধ হয়।”
দুই রমনী নড়েচড়ে দাঁড়ালেন। মুখ শুকনো করে তাকালেন একে-অন্যের দিকে।
শওকত শুধালেন,
“ কী হয়েছে তনিমা? কী জানো তোমরা যেটা আমরা এখনো জানি না।”
তনিমা মাথা নোয়ালেন। খুব মন খারাপ করে বললেন,
“ আসলে সার্থর সাথে তুশির বিয়ে তো সেভাবে হয়নি। তখন তুশির নাম-পরিচয় সব ভুল ছিল। সার্থও জানতো না আসল বউ কে! আমি আর ছোটো ভেবে দেখলাম যে ইসলামিক দিক থেকে ওদের বিয়েটা সহীহ হয়নি। তাই সার্থকে বলেছিলাম,নতুন করে আবার ওদের বিয়ে দেয়ার কথা।
কিন্তু সার্থ শুনেই মানা করে দিয়েছিল। বলেছিল,ও তুশিকে পছন্দ করে না। ও এসবের ধারেকাছেও নেই।”
ঘটনা যারা জানতো না,একটা ছোট্ট বাজ অমনি মাথায় পড়ল তাদের।
তুশি চোখ বুজে ঢোক গিলল। এই কথা গুলো শুনলে ওর ওইদিনটার কথা মনে পড়ে যায়। বুকের ভেতর ফের হিংস্র প্রহার পড়ে। ছিন্নভিন্ন হয় ওর অনুভূতি গুলো। কিন্তু কাকে বোঝাবে,কীভাবে বোঝাবে!
এদিকে আইরিনের মুখ ঝলকে উঠল। তড়িৎ মায়ের পানে চাইল সে।
রোকসানা অবাক হয়ে বললেন,
“ ওমা তাই ! কই ভাবি, তুমি তো আমাদের আগে এসব বলোনি। এজন্যেই তো ভাবছিলাম দুজন কেন এখনো আলাদা আলাদা থাকছে।”
সাইফুল যেন বিশ্বাসই করতে পারলেন না। তার আদরের ভাইয়ের ছেলে,যাকে মনে মনে মেয়ের জামাতা হিসেবে ভেবেও ফেলেছেন! এখন সব এভাবে বদলে যাবে?
নিশ্চিত হতে শুধালেন,
“ সার্থ সত্যিই এসব বলেছে ভাবি?”
“ হু।”
ভদ্রলোকের মুখ কালো হয়ে গেল। একবার আর্ত চোখে তাকালেন স্ত্রীর পানে। রেহনূমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“ ওরা যখন চায় না আমাদের আর এগিয়ে কী লাভ বলো! সম্পর্ক-সংসার এসব কখনো এক তরফা জোর করে হয় না!’’
শওকতও একটা ধাক্কা খেয়েছেন। ভদ্রলোকের অবস্থা আরো বেশি খারাপ এতে। এখানে সবাই অন্তত সার্থকে দুটো কথা বলবে,বোঝাবে, চাইলে উপদেশও দিতে পারবে। কিন্তু উনি চেয়েও কিচ্ছু করতে পারবেন না।অসহায় চোখে তুশির নত মুখটা দেখলেন তিনি। ইস,মেয়েটার চেহারাতেই স্পষ্ট কী সাংঘাতিক কষ্ট পাচ্ছে।
সবার নীরবতার মাঝেই রোকসানা আচমকা বলে বসলেন,
“ আচ্ছা ভাইজান, বিয়ে যখন সহীহই হয়নি তাহলে তো সার্থকে এখনো ব্যাচেলর ধরা যায়। তাই না?”
জয়নব বিরক্ত গলায় বললেন,
“ তুই হঠাৎ এসব নিয়ে পড়লি কেন?”
“ মা,আইরিনের গ্যাজুয়েশন তো প্রায় শেষের দিকে। আজ বাদে কাল ওকেও তো বিয়ে দিতে হতো। তো এখন যেহেতু তুশির সাথে সার্থর বিয়ে-ফিয়ের সব ল্যাটা চুকে গেছে, তাহলে এবার আইরিনের সাথে বিয়েটা দিলে হতো না? কী ভাইজান,আমিতো একবার বলেছিলাম তোমায়।”
তুশির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। থরথর করে উঠল পায়ের জমিন। পাশে বসা ইউশার হাতটা চেপে ধরল অমনি।
ইউশা ফিসফিস করে বলল,
“ শান্ত হও, শান্ত হও। ভাইয়া আইরিনকে একটুও পছন্দ করে না। ফুপি বললেই হবে নাকি। ভাইয়া শুনলেই রেগে যাবে,দেখো।”
শওকতের মেজাজ খারাপ হলো। এসব কি এখন বলার সময়! তাও তুশির সামনে। রেহনূমা-সাইফুলও খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। অথচ অয়ন স্ফূর্ত গলায় বলল,
“ মাই গুডনেস! আইরিন আর ভাইয়া? মানে এই পিচ্চি আইরিনকে আমি ভাবি বলে ডাকব হু?”
আইরিনের মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
তনিমা বললেন,
“ এখন এসব নিয়ে ভাবছি না। এগুলো এখন ছাড়ো রোকসানা। পরেরটা পরে দেখা যাবে!”
রোকসানা নাছোড়বান্দা হয়ে বললেন,
“ কেন ভাবি? আমার মেয়েটা তোমাদের কত পছন্দ করে। সব সময় এখানেই থাকতে চায়। দেখতেও আমার মেয়ে তুশির থেকে কোনো অংশে কম নেই। তুশি তো পড়াশোনা জানে না,কালচার জানে না। বড়োদের সাথে কথা বলার ভদ্রতাটাও ওর নেই। তাহ…”
অয়ন কথা টেনে নিলো অমনি,
“ ফুপি প্লিজ! তুমি তোমার মেয়ের প্রশংসা করছিলে করো। মাঝখানে তুশিকে কেন টানছো?”
ইউশা জিভে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“ তাছাড়া ফুপি, ভাইয়া তো বলেছিল ভাইয়া কাউকেই বিয়ে করতে চায় না। তাই না বড়ো মা? তো সেখানে আইরিন আপুকেই বা কেন বিয়ে করবে?”
তনিমাও তাল মেলালেন,
“ সেইত। ও এসব শুনলে রেগে যাবে রোকসানা। এগুলো ছাড়ো। খাও খাবার ঠান্ডা হচ্ছে।”
রোকসানা বাধ্য হয়ে কথা গিললেন। আইরিনের উত্তেজনাতেও জল পড়ল। কোনোমতে এতক্ষণের রুদ্ধ দমটা একটু ছাড়ল তুশি,আচমকা কেউ বলল,
“ কার বিয়ের কথা হচ্ছে?”
সবাই ঘুরে চাইল সে পথে। থানায় যাবে বলে তৈরি হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সার্থ। সারা শরীরে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ। মুখখানা স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্যে ভরা। দৃষ্টি স্বাভাবিক, শীতল। গতকালকের ঘটনার চিহ্ন মাত্র নেই।
রোকসানা উদ্বেগ নিয়ে বললেন,
“ তোমার বেটা। শুনলাম তোমার আর তুশির বিয়ে হয়নি। তুমিও নাকি এই সম্পর্কটা নতুন করে এগিয়ে নিতে নারাজ। তাই আমি ভাবলাম আইরিনের সাথে তোমার চার হাত এক করলে কেমন হয়। ভাইজানকে বলেওছিলাম এর আগে। আইরিনটাও তোমাকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু তোমার বাবা -মা তো এ নিয়ে কথা বলতেই চাইছে না।”
সার্থ আড়চোখে একবার তুশির ফ্যাকাশে মুখটা দেখল। কেমন উদগ্রীব নয়নে চেয়ে আছে মেয়েটা। সরাসরি সেই চাউনি এড়িয়ে আইরিনের দিকে তাকাল সে। ভ্রু নাঁচিয়ে শুধাল,
“ তাই! ডুই ইউ রিয়েলি লাইক মি আইরিন?”
আইরিন গুটিয়ে গেল। লাজে রাঙা মুখটা নুইয়ে মাথা নাড়ল আস্তে।
সার্থ ফের তাকাল তুশির পানে। মেয়েটার মুখের উৎকণ্ঠা আরো বেড়েছে। হাঁসফাঁস করছে নীরবে। ফ্যাসফ্যাসে শ্বাসের তোড়ে গলার শিরাগুলো ভেসে আছে স্পষ্ট।
রোকসানা রয়ে সয়ে বললেন,
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৪৬
“ সার্থ,তোমার কি কোনো আপত্তি আছে বেটা?
সার্থ পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়াল।
হাসল খুব চমৎকার করে। এত শীতল,সুন্দর হাসি তার ঠোঁটে আগে কখনো দেখা যায়নি।
বলল,
” না,আমি রাজি।”
 
