কাজলরেখা পর্ব ১
তানজিনা ইসলাম
আমার চাচাতো বোন বিয়ের আসর ছেড়ে অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়েছে।এখন সবাই দোষা*রোপ করছে
আমি তাকে পালাতে সাহায্য করেছি, তাই তার হবু বর কে আমায় বিয়ে করতে হবে। অথচ আমি তার পালানোর কথা জেনেছি এই মাত্রই। কিন্তু কেউই আমার কথা বিশ্বাস করছে না কারণ, পার্লারের মেয়েরা তাকে যে রুমে সাজাচ্ছিলো সে রুমে শুধু আমি ছিলাম।
আমার মেজোমা মেঝেতে বসে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কাঁদছেন।অর্পিতা আপু খুব আদরের মেয়ে তার। কাঁদতে কাঁদতে নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছেন তিনি, একটু পর আবার হিচকি তুলে কাঁদছেন। আমাকে দোষারোপ করছেন।গা*লি দিচ্ছেন।আমি নির্বাক বসে আছি। এতোক্ষণ নিজেকে জাহির করতে করতে নিজের গলা ভেঙে গেছে।ক্লান্ত হয়ে চুপ করে গেছি।তবুও মনে হচ্ছে না কেও আমার একটা কথা বিশ্বাস করেছে।
মেজোমা আবার শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।চোখের পানি মুছে আমার দিকে তাকিয়ে গজগজ করে বললেন
-“তুই এখনো ঠাট ধরে বসে থাকবি! এতো জেদ তোর, এতো! এতোবার জিজ্ঞেস করার পরও বলবি না অর্পা কোথায়?কার সাথে গেছে ও?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“আমি জানি না তোমার মেয়ে কোথায়, কার সাথে গেছে?যখন কিছু জানিই না তখন উত্তর দেবো কোত্থেকে!”
জবা বেগম অগ্নি দৃষ্টি তে চাইলো চাঁদনির দিকে।উঠে দাড়িয়ে চাঁদনীর গালে ঠা*স করে চ*ড় মারার ইচ্ছে পোষণ করলেন।কিন্তু সাহসে কুলাতে পারলেন না। চাঁদনি গো ধরে বসে রইলো। বাড়ির সবাই জানে অর্পিতার সাথে ওর কেমন সম্পর্ক।মেয়েটা ওঁকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারতো না। সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিলো ওঁদের। চাঁদনীর গায়ের রং শ্যাম বর্ণের হওয়ায়, ছোটবেলা থেকেই অর্পিতা খুব তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো ওঁকে। যদিও এসব চাঁদনী গায়ে মাখাতো না কোনো কালেই।বাড়িতে যেমন অর্পিতার অধিকার ছিলো, সমান অধিকার চাঁদনীরও ছিলো।আর চাদনী নিজের অধিকার নিয়ে সবসময় খুব সতর্ক।
অর্পিতা পালানোর আগে চিরকুট এ লেখে গেছে, সে এ বিয়েটা করতে পারবে না। যাকে ভালোবাসে তার সাথেই পালাচ্ছে, তাকে যাতে খোঁজার চেষ্টা করা না-হয়। অথচ বাড়ির সবাই জানতো অর্পিতা আর আধারের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।দু’জনের সম্মতিতেই ওঁদের ভালোবাসা পূর্ণতা দেওয়ার জন্য আজকের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিলো। কিন্তু অর্পিতা পালিয়ে গেলো।জবা বেগম তবুও মেয়ের দোষ দেখতে পাচ্ছেন না।যখন চাদনীর অন্যান্য কাজিনদের থেকে জানা গেলো অর্পিতা কে সাজানোর সময় সে রুমে শুধু চাদনী ছিলো, তখন তিনি চাদনী কে কথা শোনানোর খুব সুন্দর ছুতো পেলেন। এ দুই মা মেয়ের ওঁকে নিয়ে সমস্যা টা কী, তা চাদনী আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলো না।
বাইরে পদচারণের শব্দ শোনা গেলো।শিকদার বাড়ির তিন কর্তা কক্ষে এসে ঢুকলেন।তাদের দেখেই জবা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। মাথায় ঘোমটা টানার কথা ভুলে, এলোমেলো পায়ে স্বামীর কাছে গিয়ে বললেন
-“অর্পার কোনো খোঁজ পেয়েছো?আমার মেয়েটা কোথায়?”
আরমান শিকদার অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন স্ত্রীর পানে যার অর্থ অর্পিতার খোঁজ পায়নি তারা। জবা বেগম আবার কাঁদতে শুরু করলেন।চাঁদনী নিঃস্বহায় এর মতো বসে আছে।সবার উপর খুব অভিমান জমেছে ওর।না জেনেই কিভাবে, বকাবকি করলো। সবাই মেঝো মার কথা বিশ্বাস করলো।কেও ওর কথা একবারো শুনলোও না। আরমান শিকদার অসহায় দৃষ্টিতে বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
-“আধার কোথায়? খুব রে*গে আছে নিশ্চয়ই?”
অপূর্ব শিকদার গম্ভীর স্বরে বললেন
-“ড্রইং রুমে চুপচাপ বসে আছে।”
অথচ তার এখন ভাং*চুর করার কথা।সবার সাথে রাগারাগি করার কথা।জংলির মতো চিল্লা-ফাল্লা করার কথা।খুব বেশিই রাগী আর জেদ্দি সে।কিন্তু এর একটাও আধার করছে না।তার হবু বউ পালিয়েছে, যার সাথে বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো তার।অথচ সে নিশ্চুপ।অল্প শো*কে কা*তর,অধিক শো*কে পাথর।
চাঁদনী মাথা নিচু করে বসে আছে।কারোও একটা কথাও ওর কানে ঢুকছে না।
আরমান শিকদার অসহায় গলায় বললেন
-“এখন কী করবো?এতো আত্মীয় -স্বজন,সবাইকে কী জবাব দেবো।মেয়ে পালানোর কথা এতোক্ষণে হয়তো জেনে গেছে সবাই!”
অপূর্ব শিকদার গলা খাকাড়ি দিলেন।চাঁদনীর বাবা, আকিব শিকদারের দিকে তাকিয়ে বললেন
-“চাঁদ কে আমি আমার আধারের বউ করতে চাচ্ছি, আকিব!”
-“সেটা কখনোই সম্ভব না ভাইজান।আঁধার কখনোই মানবে না।আমার মেয়েটাকে এমনিতেই সবাই যথেষ্ট কথা শুনিয়েছে।দোষ না করেও বারংবার দোষী করা হচ্ছে ওঁকে।”
আকিব শিকদার মুখ কালো করে বললেন।শেষ কথাটা জবা বেগমকে ঠেস মেরে বলেছে বোঝা যায়।
-“আঁধার অবশ্যই মানবে।মানতে ওঁকে হবেই।এটা পরিবারের সম্মানের বিষয়!”
-“চাঁদনী হ্যাঁ না বলা পর্যন্ত। সম্মতি দিতে পারছি না!”
আকিব শিকদারের কথার প্রেক্ষিতে সবাই চাঁদনীর দিকে তাকালো।মুখ ফুলিয়ে খাটের উপর বসে আছে ও।বাচ্চাদের মতো পা দু’টো দোলাচ্ছে। চাদানীর মুখে এতোক্ষণ কথা ফোটে।বিমূঢ় স্বরে আওড়ায়
-“তোমার সুদর্শন ছেলে আমার মতো কালী কে বিয়ে করবে না বড়বাবা।এমনিতেই উঠতে বসতে আমার গায়ের রং নিয়ে খোঁটা দেয় আমাকে।আমি যদি এই দুনিয়ার শেষ নারী হই, তবুও তোমার ছেলে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না!”
অপূর্ব শিকদার সাফাই গেয়ে বললেন
-“কেন নিজেকে এরকম বলছিস আম্মা।তুই খুব সুন্দর বিশ্বাস কর।ঢাকা যাওয়ার পর থেকেই ওর মতিভ্রম হয়েছে, জানিস তো।নয়তো আগে তো এমন করতো না!”
-“সেটাই তো ভয়।তোমার ছেলে খুব মর্ডান হয়ে ফিরে এসেছে।মানুষ কে মানুষ বলে গণ্য করে না।আমাকে গেঁয়ো ভুত ছাড়া কথাই বলে না।এতোকিছুর পর যদি আমি তাকে বিয়ে করি, তাহলে সে ভাববে আমার আত্মসম্মান নাই।আমি ছ্যাচড়া, তখন সে আমাকে পদে পদে অপমান করার রশিদ পেয়ে যাবে।”
চাঁদনীর একগুয়ে জবাব।অপূর্ব শিকদার অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন আকিব শিকদারের দিকে।তিনি পরলেন মাইনকার চিপায়।একদিকে বড় ভাই,আরেকদিকে মেয়ে। অপূর্ব শিকদার অনুরোধ করলেন ভাইয়ের কাছে, চাঁদনী কে বোঝাতে।এবারে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।বললেন
-“আঁধার কে গিয়ে বলো কথাটা। চাদনী কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।কিন্তু আঁধার যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে, বা আমার মেয়েকে অপমান করার চেষ্টা করে তখন কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম!”
অপূর্ব শিকদার সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।জবা বেগম রাগে ফোঁসফোঁস করছেন।আধারের সাথে চাদনীর বিয়ে হবে এ বিষয়টা কিছুতেই তিনি মানতে পারছেন না।তার মেয়ের বর, ঘর সবকিছু চাদনীর হবে এটা ভাবতেই চাদনীর গলা টিপে দিতে মন চাচ্ছে তার।ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলেন তিনি।আরমান শিকদার একপলক ভাই আর ভাইঝির দিকে তাকিয়ে তিনিও বেরিয়ে গেলেন।
আকিব শিকদার হাঁটু মুড়ে মেঝেতে মেয়ের কাছে বসলেন।ওর হাত দু’টো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন
-“আধার কে বিয়ে করবি আম্মা?”
-“মেঝোমা আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে বাবা। মারতেও এসেছে।মেঝো বাবা বাঁচিয়ে নিয়েছে!”
প্রশ্নের উত্তরে এমন পাল্টা অভিযোগ আকিব শিকদারের কাছে স্বাভাবিক। মেয়েটা খুব ইন্ট্রোভার্ট। সবকিছু নিজের মধ্যে গুমরে রাখে।কিন্তু বাবার কাছে সে একটা খোলা ডাইরি।তার সকল,অভিযোগ, আবদার, অভিমান সব বাবার কাছে।আকিব শিকদার মলিন হেঁসে বললেন
-“আই এম সরি আম্মা!আমি সে সময় তোর পাশে থাকতে পারিনি।অর্পিতা কে খোঁজায় ব্যস্ত ছিলাম যে!”
-“ইট’স ওঁকে! বাট আমি ওই সাদা গন্ডার কে বিয়ে করবো না!”
-“তুই বাবার কথা রাখবি না?”
-“এটা অনুরোধ করো না প্লিজ!”
-“আঁধার অনেক ভালো ছেলে আম্মা!”
-“জানি, কিন্তু তার জন্য আমি ভালো মেয়ে না, কারণ আমি কালো!”
-“আমার আম্মা খুব সুন্দর।”
-“মিথ্যা স্বান্তনা দিয়ো না।খুব গায়ে লাগে।”
আকিব শিকদার অসহায় দৃষ্টিতে চাইলেন। চাদনী চোখ ফেরালো।ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মানুষটা সবসময় ওঁকে দুর্বল করে দেয়।
আকিব শিকদারের কথার জালে শেষমেশ বাধ্য হয়ে রাজি হলো চাদনী।বাড়িতে অবিবাহিত বা বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে বলতে শুধু ওই আছে।এখন মান-সম্মান বাঁচানোর জন্য ও ছাড়া ওর বাপ-চাচা আর কাওকে খুঁজে পায়নি।চাঁদনীরও আর কিছু করার ছিলো না, বড়দের চাপে পরে নিজের সবচেয়ে অপছন্দের মানুষটার বউ সাজতে হচ্ছে ওঁকে। চাদনী নিজের মায়ের বিয়ের লাল লেহেঙ্গা টা পরলো।ওর কয়কজন কাজিন মিলে খুব সাদামাটা ভাবে সাজিয়ে দিলো ওঁকে।
যখন চাদনী সবার সাথে দোতলা থেকে ড্রইংরুমে নেমে আসছিলো, সিড়ি তে থাকা অবস্থায় আঁধারের উচ্চস্বরে বলা কথাগুলো শুনেই থমকে গেলো চাঁদনী।
-“তুমি ভাবলে কী করে বাবা আমি ওই গাঁইয়া ভুত কে বিয়ে করবো?ওর কোনো যোগ্যতা আছে আমার বউ হওয়ার।নিজের মুখ আয়নায় দেখেছে ও!ওঁকে তো আমি আমার বেড পার্টনার হিসেবেও রাখবে না।এই জন্য বুঝি মিথ্যে বলে নিয়ে এসেছিলে আমাকে।আজই আমি ঢাকা ফিরে যাবো, একমুহূর্তও থাকবো না এ বাড়িতে!”
চাদনী টলমলে দৃষ্টিতে মাথা তুলে তাকালো বর বেশে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষটির দিকে।বাবার কথা রাখতে বিয়ের পিড়িতে বসেছিলো ও।তবে বাবার ভালো মেয়ে হতে গিয়ে যে এভাবে বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে নিজের ইজ্জত সম্মান সব খোয়া যাবে সেটা তো জানা ছিলো না ওর!আঁধার শিকদার রাগে ফুঁ*সছে।সিড়ির উপর চাদনী কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতেই রাগটা আরো তড়তড়িয়ে বাড়লো ওর। সামনে বধূূবেশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামা রঙের মেয়েটাকে অ*সহ্য ঠেকছে তার নিকট।নিজের স্ট্যান্ডার্ডের ব্যাপারে বরাবরই কনসার্ন থাকা আঁধার শিকদার না-কি বিয়ে করবে অজপাড়াগাঁয়ের এই কালো মেয়েটাকে!রুচিতে ধরবে ওর?প্রশ্নটা মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠতেই টলমলে চোখে তাকিয়ে থাকা চাঁদনীর দিকে ক্রু*দ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো ও।ঝাঁঝালো স্বরে চিল্লিয়ে বললো
-“কালির ঘরের কালি, এতো শখ আমাকে বিয়ে করার!নিজের মুখ আয়নায় দেখেছিস তুই?তোকে দেখলে বমি আসে আমার।বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার স্বপ্ন দেখিস!”
কথাটা ঠোঁট ফস্কে বের করতে না করতেই ছেলেকে ধমকে উঠলেন অপূর্ব শিকদার।আঁধার যে সিনক্রিয়েট শুরু করবে সেটা তিনি জানতেন, ছেলের অধঃপতন সম্পর্কেও ভালোই ধারণা ছিলো ওনার। কিন্তু চাঁদনী কে যে সবার সামনে এতটা হেনস্তা করবে সেটা তার ভাবনারও বাইরে ছিলো। রাগে গজগজ করতে করতে তিনি বললেন
-“এসব কী ড্রামা হচ্ছে আঁধার।চাঁদ মা’কে এভাবে অপমান করার অধিকার কে দিয়েছে তোমাকে? একে তো তোমার বউ পালিয়েছে। দ্বিতীয়ত চাদনী কে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি আমরা, তোমাকে বিয়ে করতে।বাড়ির মান-সম্মানের কথা ভেবে মেয়েটা নিজেকে বলি দিচ্ছে, আর তুমি তাকে কথা শোনাচ্ছো?চুপচাপ বিয়েটা করে নাও, খবরদার কোনো ধরণের নাটক করবে না!”
অ*গ্নি দৃষ্টি তে অপূর্ব শিকদারের দিকে তাকালো আঁধার।তপ্তস্বরে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“নাটক তো তোমরা সবাই করছো, আমার সাথে।পেয়েছো টা কী আমাকে!তোমাদের হাতের পুতুল আমি? না আমার কোনো লেভেল নেই, যে যাকে তাকে ধরে এনে আমার উপর গছিয়ে দিচ্ছো তুমি!”
অপূর্ব শিকদার চঞ্চল দৃষ্টিতে আশেপাশে চাইলেন।ইতোমধ্যেই গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর শুরু করে দিয়েছে সবাই।একে তো বাড়ির এক মেয়ে পালিয়েছে, অন্যদিকে বাড়ির অন্য মেয়েকে তাঁদেরই বাড়ির ছেলে যা তা বলে অপমান করছে।
আগত অতিথিরা যে ইচ্ছে মতো তাঁদের পরিবার নিয়ে সমালোচনা করছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না অপূর্ব শিকদারের।লজ্জায় মাথা হেঁইট হলো তার।ছেলের দিকে তাকিয়ে উদগ্রীব স্বরে বললেন
-“এসব কী বলছো আঁধার! সবাই দেখছে, নিজের আচরণ সংযত করো।”
-“দেখুক সবাই। সবাইকে নিজেই দাওয়াত করে নিয়ে এসেছো, আমার ধ্বং*সযজ্ঞ দেখাতে। এখন যখন আমি উল্টো গান গাইছি, তোমার কেনো গায়ে লাগছে?তুমি করলে আরাম, আর আমি করলে হারাম?
শক্ত কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো আঁধার।চাঁদনী ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো নিজের বাবার দিকে।আকিব শিকদার অসহায় চোখে তাকাতেই কপোল বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু গড়ালো ওর।মা হারা মেয়েটার এহেন অবস্থা সহ্য হলো না ওনার।ছোটবেলা থেকে বুকের সাথে আগলে রেখে পুতুলের মতো বড় করেছেন তিনি চাঁদনী কে।সেই মেয়ের এতো বি*শ্রী অপমান বুকে কম্পন ধরালো।
তিক্ত ঢোক গিললেন আকিব শিকদার। ফুঁ*সতে থাকা আধারের দিকে তাকিয়ে ভা*ঙা গলায় আওড়ালো
-“আঁধার, আমার মেয়েটাকে আর অপমান করো না! ওর কোনো দোষ নেই।আমাদের কথা রাখতেই ও বিয়েতে রাজি হয়েছে।সব আমাদের দুই ভাইয়ের দোষ।প্লিজ ওঁকে এতো কষ্ট দিয়ে কথা বলো না।”
চাচার দিকে তাকাতেই আঁধারের দৃষ্টি নরম হলো।সেই শক্ত খোলস ধরে রাখা সম্ভব হলো না আর ওর পক্ষে। আকিব শিকদারের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বললো
-“দেখছো চাচু, সবাই কেমন করছে আমার সাথে!আমি বিয়েটা করতে চাইছি না, তবুও জোর করছে আমাকে।তুমি বলো এটা ঠিক?প্লিজ বাবাকে মানা করো আমার সাথে এমন করতে।আমি বিয়ে করবো না তোমার মেয়েকে।”
আকিব শিকদার মাথা নিচু করে দাঁড়ালেন। অথৈ জলে পরেছেন তিনি।একদিকে মেয়ের কান্না ভেজা মুখ,মেয়েটার সম্মান।অন্যদিকে আঁধারের নাকচ।আজ যদি তার মেয়েটার বিয়ে ভেঙে যায়, তবে যে গ্রামবাসী ওঁকে কথার ছোবলেই মেরে ফেলবে। এই সমাজ যে শুধু মেয়েদের দোষ দেখে। আঁধার বিয়ে ভেঙে দিলেও, দোষ হবে চাঁদনীর।সবাই চাঁদনী কে দুষবে, পেছনে কথার ছোবলে পি*ষে মা*রবে।বলবে হয়তো চাঁদনীর কোনো সমস্যা আছে, তাই তার বোন পালিয়ে যাওয়ার পর, তার বোনের হবু বরের উপর গছিয়ে দিতে চাওয়া হয়েছিলো ওঁকে, তবুও মেয়েটার বিয়ে হয়নি,
বর তাকে বিয়ের আসরে ফেলে চলে গেছে।নয়তো তার মেয়েটাকে আবার গায়ের রং নিয়ে খোঁটা দেবে।এ খোঁটা তো ছোটোবেলা থেকে কম পায়নি ও।মেয়েটা যদি সহ্য করতে না পেরে কিছু ঘটিয়ে বসে! তখন? বুক ধ্ব*ক করে উঠলো আকিব শিকদারের।পিতৃত্বে আঘাত আসতেই হৃদয় কাপলো অচিরাৎ! বাবা হয়ে মেয়ের এই অবস্থা কী করে সহ্য করবেন তিনি!
চাঁদনী, পরণের লেহেঙ্গা টা দু’হাতে উঁচু করে ধরে, সিড়ি বেয়ে সোজা নেমে এসে, অপূর্ব শিকদারের মুখোমুখি দাঁড়ালো। চোখের পানি তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ছিটকে ফেলে ভেজা স্বরে বললো
-“আমায় ক্ষমা করে দিও বড় বাবা।এতো অপমানের পর তোমার ছেলেকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সে ঠিকই বলেছে আমার কোনো যোগ্যতা নেই তাকে বিয়ে করার।আমার মতো কালো একটি মেয়েকে তোমার সুদর্শন ছেলের পাশে মানাবে না।আই এম সরি, মাফ করে দিও।তোমার কথা রাখতে পারলাম না।”
-“চাঁদ মা, কষ্ট পাস না তুই।ও তোকে বিয়ে না করে যাবে কই!একটু সময় দে আমাকে।”
অসহায় সুরে বললেন অপূর্ব শিকদার।চাঁদনীর হৃদয়ে আঘাত হানলো কথাটা।হু হু করে কেঁদে দিয়ে বললো
-“আমি ফেলনা নই বড়বাবা। কালো হতে পারি,কিন্তু আত্মসম্মান বোধ আমারও আছে।এতোটাও নিচু হয়ে যায়নি, যে কেও বিয়ে করতে না চাইলে এভাবে তাকে জোর জবরদস্তি আমার সাথে বিয়ে বসাবে তুমি।বানের জলে ভেসে আসিনি আমি!”
চাঁদনীর কান্নায় আকিব শিকদার অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালেন ওর দিকে।চাঁদনী ওনার দিকে ফিরে চাইলো।হিঁচকি তুলে ভেজা গলায় আওড়ালো
-“এতটা বোঝা হয়ে গেছি বাবা, যে এভাবে বিদায় করতে চাইছো।তাও অন্যের গলার কাটা বানিয়ে। সে তো আমাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্যই সহ্য করতে পারছে না,পুরো জীবন কী করে কাটাবে আমার সাথে?”
আঁধার একপলক চাঁদনীর দিকে চাইলো।মনে মনে ভেংচি কাটলো ও।বিড়বিড় করে বললো
-“ঢং! আমার মতো ছেলে তুই সাতবার জন্ম নিলেও পাবি না।বিয়ে করার জন্য তড়পাচ্ছে,তবুও মেয়ের নাটক দেখো!দয়ার মূর্তিকে তো সবার সামনে মহান সাজতে হবে।”
আঁধারের মা বর্ষা বেগম এগিয়ে এসে দু’হাতে আঁজলে নিলেন চাঁদনী কে। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।চাঁদনী জড়িয়ে ধরলো ওনাকে।
বিরক্তিকর শ্বাস ফেললো আঁধার।মুখ দিয়ে চ-বর্গীয় শব্দ করে, গম্ভীর স্বরে আওড়ালো
-“তোমাদের নাটক শেষ হলে বলো আমাকে, আমি বরং যাই!বিরক্ত লাগছে আমার। আজকেই ঢাকা ফিরে যাবো আমি।”
-“তুই এখনো আমার কথা রাখবি না আঁধার?আমার কথার কোনো মূল্য নেই তোর কাছে?”
অপূর্ব শিকদারের কথায় ফের ওনার দিকে ফিরে চাইলো আঁধার। ফিচেল হেঁসে, তাচ্ছিল্য সুরে বলে
-“যার কাছে আমার কোনো মূল্য নেই, তার কথা আমি কেন ভাবতে যাবো!”
বলেই সামনে হাঁটা দিলো আঁধার।অপূর্ব শিকদার অসহায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন ছেলের পানে।চক্ষু দুটো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসলো তার।বুকের টন*টনে ব্যা*থা নিমিষেই ছড়িয়ে পরলো পুরো শরীরে।শরীরের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পা দু’টো কাঁপতে শুরু করলো। বুকে হাত দিয়ে, চোখ-মুখ খিঁ*চে বসে পরলেন অপূর্ব শিকদার।
চাঁদনী দেখতেই ছুটে এলো তার কাছে।হাটু মুড়ে বসে ধরলো ওনাকে।একে একে সবাই ছুটে এলো ওনার কাছে।সবার চিৎকার চেঁচামেচিতে আঁধারের পা থেমে যায়।পিছনে ফিরে চাইলো ও।দেখলো, অপূর্ব শিকদার মেঝেতে লুটিয়ে পরেছেন।আঁধারের হৃৎপিণ্ড ছলকে উঠে। আ*তঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছুটে এলো ও।সবাইকে সরিয়ে অপূর্ব শিকদারের মাথাটা নিজের কোলে নিলো। ভ*য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গালে হাত ঘষে বললো
-“বাবা, বাবা কী হয়েছে তোমার?”
অপূর্ব শিকদারের চোখ উল্টে আসে।আঁধারের বুক ধ্বক করে উঠলো।কন্ঠ শৃঙ্গে তুলে চেঁচিয়ে বললো
-“কেও ডক্টর ডাকো না! বাবা, বাবা….
-“আম্ মার চাঁদ মা’কে বি্য়ে করবিনা তুই!এভাবে বিয়ের আসরে ফেলে চলে্ গেলে যে ওর জীবনটা শেষ হয়ে যাবে!”
অনেক কষ্টে টেনে টেনে বললেন অপূর্ব শিকদার।আঁধারের হৃৎপিণ্ড তখন তড়িৎ বেগে লাফাচ্ছে। একাধারে বাবা বাবা করে ডেকে যাচ্ছে ও।অপূর্ব শিকদার বহু ক*ষ্টে আবার প্রশ্ন ছুড়লেন ছেলের উদ্দেশ্যে।আধার চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস ফেললো। অপূর্ব শিকদারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো
-“চুপ করো বাবা।প্লিজ চুপ করো।হাইপার হয়ে যাচ্ছো তুমি!”
-“আগে বল তুই বিয়েটা করবি কি-না?”
অকূল পাথারে পড়লো আঁধার। আশেপাশে অসহায় দৃষ্টি বুলিয়ে আবার চিৎকার করে বললো
-“ডক্টর আসছে না কেন এখনো?”
-“আমার প্রশ্নের উত্তর দে! নয়তো আমি মরেও শান্তি পাবো না।”
আহাজারি করে বললেন অপূর্ব শিকদার। চোখ দু’টো কিয়ৎক্ষণ বন্ধ করে মেললো আঁধার।নিজের বাবার আহাজারি সহ্য হলো না ওর।পলক ঝাপটে হড়বড় করে বললো
-“করবো বিয়ে! তুমি যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবো!”
ডক্টর এসে অপূর্ব শিকদারের চেকআপ করে গেছেন। জানিয়ে গেছেন অতিরিক্ত টেনশন সহ্য করতে পারেননি।আগে থেকেই যেহেতু ওনার হার্টে প্রবলেম ছিলো,তাই অতিরিক্ত হাইপার হওয়া ওনার জন্য ভালো না।ভাগ্যক্রমে আজ তিনি বেঁচে গেছেন, অতটা আঘাত হয়নি।তবে ওনাকে যাতে সর্বদা চিন্তামুক্ত রাখা হয়।
অনেকটা সময় কেটে গেছে।অপূর্ব শিকদারের এখন খানিকটা ভালো লাগছে।আঁধার এখনো জড়িয়ে ধরে বসে আছে তাঁকে।ভ*য়ে, আ*তঙ্কে ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা ওর।পরিবারের সবাই, আগত অতিথিরা সবাই ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তাকে। অপূর্ব শিকদার পিটপিট করে চোখ খুললেন।সোফার উপর থেকে ভারী মাথাটা তোলার চেষ্টা করলেন।আধারের খেয়ালে আসতেই অশান্ত হয়ে উঠলো ও। তড়িঘড়ি করে বললো
-“বাবা, ঠিক লাগছে তোমার?”
-“তুই বলেছিস চাঁদ মা কে বিয়ে করবি!এখন তোর কথা রাখার পালা।”
নিম্নস্বরে বললেন অপূর্ব শিকদার।আঁধার কপালে ভাজ ফেলে তাকালো।ব্যগ্র স্বরে বললো
-“উফ!এই এক কথা কতবার বলবা?”
-“যতক্ষণ না বিয়ে করতে বসবি ততক্ষণ।কথার খেলাপ করবি না আধার! নয়তো আমার ম*রা মুখ দেখবি তুই!”
-“বাবা…
চিল্লিয়ে উঠলো আঁধার।মুখ ছোট করে বসলেন অপূর্ব শিকদার।আঁধার একপলক তাকালো ভয়ে জুবুথুবু হয়ে আকিব শিকদারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদনীর দিকে।নাকটা সিকেয় তুলে এগিয়ে গেলো ও।শক্ত করে চাঁদনীর হাত আঁকড়ে ধরে, ট্রলি ব্যাগের ন্যায় টেনে নিয়ে গেলো ওঁকে স্টেজের দিকে।টেনেহিঁচড়ে স্টেজে তুলে ছুড়ে মারলো ওঁকে সোফার উপর।গলা উঁচিয়ে ডাকলো কাজি সাহেব কে।ডাক শুনতেই কাজি সাহেব দ্রুত পায়ে উঠলেন স্টেজে।আঁধার ক্রো*ধান্বিত স্বরে গলার স্বর উচিয়ে বললো
-“এক্ষুনি বিয়ে পড়ান,কাজি সাহেব। এই মুহুর্তেই বিয়েটা হবে!”
-“আমি তোমাকে বিয়ে করবো না দাদাভাই!”
চাঁদনীর কান্নাভেজা কন্ঠ কানে বাজতেই পেছন ফিরে তাকালো আঁধার।ভ্রু কুঁচকে বললো
-“কী বললি!”
-“আমি তোমাকে বিয়ে করবো না!”
-“কেন করবি না?”
-“কারণ তুমি আমাকে না পারতে বিয়ে করছো!মন থেকে করছো না!”
ব্য*ঙ্গ করে বিকট শব্দে হাসলো আঁধার।চাঁদনী অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।ওঁর মতো কালো মেয়েকে বিয়ে করার শোকে কী ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে!নয়তো যে ছেলে এতোটা সময় রেগে আগুন হয়ে ছিলো, সে ছেলে এখন গা কাঁপিয়ে হাসছে।
অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামালো আঁধার।চাঁদনীর অবাক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললো
-“এটিটিউড দেখাচ্ছিস তাই না! ঐ যে প্রথমে রিজেক্ট করেছিলাম সেটার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছিস! কিন্তু তোর তো সে ক্ষমতা নেই রে, আমাকে রিজেক্ট করার। নিজের মুখ আয়নায় দেখে, নিজের অবস্থান জেনে তারপর আমার পাঙ্গা নিতে আসবি।আমাকে যে বিয়ে করছিস পারছিস, সেটা তোর সাত কপালের ভাগ্য।নেহাত বাবার এই অবস্হা, তাই বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছি তোকে।নয়তো আমাদের বাড়ির ড্রাইভারটাও তোকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।কারণ তার গায়ের রং তোর চেয়ে দশগুণে উজ্জ্বল!”
বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো চাঁদনী।ভেজা চটচটে গালদুটো নিমিষেই লজ্জায়,অপমানে লাল হয়ে উঠলো।প্রতিউত্তর করতেও যেন ভুলে বসলো ও।
আঁধার ফের তাগাদা দিয়ে বললো
-“কাজি সাহেব, আপনি আপনার কাজ শুরু করুন।”
চাঁদনী নাকচ করার সময়টুকু পেলো না।আঁধারের বি*শ্রী অপমানে সেই ইচ্ছে বা শক্তি দুটোই হারিয়ে গেলো ওর। একে একে স্টেজে এগিয়ে আসলো সবাই। আঁধারকে হতভম্ব করে দিয়ে এতোক্ষণ চোখ দু’টো টেনে খুলতে না পারা অপূর্ব শিকদারও দিব্যি হেঁটে এলেন।আঁধার আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে, ভ*ঙ্গুর পাথর হয়ে তাকিয়ে থাকলো তার দিকে।অপূর্ব শিকদার আসতেই তাগাদা দিলেন জলদি বিয়ে পড়ানোর জন্য। স্তব্ধ, বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আঁধারের দিকে চোখ পরতেই আমতা আমতা করে হাসলেন তিনি।আঁধারের মেজাজ সপ্তমে চড়লো।অপূর্ব শিকদারের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে, চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“বাহ!সুস্থ হয়ে গেছো এতো জলদি! আমিতো ভেবেছিলাম কয়েকদিন বিছানা ছেড়েই উঠতে পারবে না।”
-“সব দয়ালের ইচ্ছে!”
দু-হাত উপরে তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন অপূর্ব শিকদার।ক্রোধান্বিত আঁখি তে তাকিয়ে থাকলো আঁধার।শাণিত স্বরে বললো
-“ভাবছি তোমাকে ঢালিউডে, ভিলেন চরিত্রে ভর্তি করিয়ে দিব।ঐ যে নায়িকার বাপ, চৌধুরী সাহেব থাকে না, সে চরিত্রে! নাটক তো দেখি ভালোই পারো!” দাঁত দেখিয়ে হাসলেন তিনি।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।আঁধারকে কবুল বলতে বললেই সেকেন্ডে গড়গড়িয়ে তিন কবুল বলে দিলো সে।এবার কাজি সাহেব কনে তথা চাঁদনী কে কবুল বলতে বললেন।চাঁদনী একপলক আকিব শিকদারের দিকে তাকালো।আকিব শিকদার অপরাধী দৃষ্টিতে তাকালেন ওর দিকে।
চাঁদনী মনে মনে নিজের মৃত মা কে স্মরণ করলো।তবে সে সময়টুকুও ধৈর্য ধরতে পারলো না আঁধার। দৃষ্টি নত করে রাখা চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠে বললো
-“কীরে তুই আবার এটিটিউড দেখাচ্ছিস? কবুল বলতে এতো সময় লাগে?”
আঁধারের বাজখাঁই কন্ঠে ভ*য়ের চোটে ধরফরিয়ে কবুল বললো চাঁদনী। তিন কবুল বলতেই আঁধার উঠে দাঁড়ালো। কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা স্টেজ ছেড়ে চলে গেলো।পেছনে রেখে গেলো স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলো কে।সাথে লাল লেহেঙ্গা পরিহিত একটি মেয়ে, নববধূ।যে চোখে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে এই জায়গাটিতে এসেছিলো, আঁধারের নামে কবুল বলেছিলো।তার স্বপ্ন চূ*র্ণবি*চূর্ণ হয়ে ভে*ঙে যাওয়ার দায়ভার কি হনহনিয়ে চলে যাওয়া পুরুষটি নেবে!