কাজলরেখা পর্ব ১১
তানজিনা ইসলাম
আবরার ভাইয়ের আগমন,শুভেচ্ছা,স্বাগতম
আবরার ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা,স্বাগতম
স্লোগানে মুখরিত কলেজ প্রাঙ্গণ।প্রিন্সিপাল স্যার তাকে সাথে করে স্টেজে নিয়ে গেলেন।পিছনে একঝাঁক ছেলেপেলে রাজনৈতিক স্লোগান দিতে দিতে এলো। গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসলো আবরার রাত। একে একে অতিথিবৃন্দদের ভাষণ শুরু হলো। তবে মনে হয় না কেও তাঁদের ভাষণ মনোযোগ দিয়ে শুনছে। কারণ মাঠে বসা প্রায় প্রতিটা মেয়েই নেতা কে দেখতে ব্যস্ত। চাদনী আর ওর বন্ধুরা সেলফি তুলছে।
চাদনী তুলছে না, তবে হাসনা এই নিয়ে বোধহয় দুশোটার উপর ছবি তুলেছে নিজের আর ওর বন্ধুদের। চাদনী ভীষণ এক্সাইটেড।প্রথমবার ওর এতোগুলো বন্ধু হয়েছে। হাসনা আর বৃষ্টি ওর সাথে কথা বলছে কন্টিনিউয়াসলি। চাঁদনীর কলেজ নিয়ে অজানা তথ্যগুলো জানাচ্ছে ওঁকে। তবে ছেলে দু’টো এখনো সহজ হতে পারেনি চাঁদনীর সাথে।তাই তেমন কথা বলছে না ওর সাথে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অবশেষে সবার বক্তব্য শেষ হয়ে বিশেষ অতিথির স্পিকারের সামনে দাঁড়ানোর সময় হলো। রাত উঠে স্টেজের সামনে দাঁড়াতেই সবাই এক্সাইটমেন্টে চিল্লানি দিয়ে উঠলো একসাথে, যেন সবাই এতোক্ষণ এই মোমেন্টারই অপেক্ষা করছিলো। রাত প্রথমে স্পিকারের সামনে দাঁড়িয়ে গলা খাকাড়ি দিলো।
তারপর কোনো সম্বোধন নেই, পরিচয় পর্ব নেই, কুশলাদি বা ভাষন কিচ্ছু নেই। স্পিকারের সামনে দাঁড়িয়েই তিন আলিফ টান মেরে স্লোগান দিলো
-“জয়য়য়য় বাংলা!”
মাঠে গিজগিজ করা পোলাপান সবাই প্রতিত্তোরে সমস্বরে স্লোগান দিয়ে চিল্লানি দিলো
-“জয়য়য়য় বাংলা!”
একের পর এক দলীয় স্লোগান পাঁচ মিনিট ধরে চললো। স্লোগানের তালে তালে হাত তালি দিচ্ছে সবাই। চাঁদনীর দু’পাশে বসা হাসনা আর বৃষ্টি গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। চাদনী কনফিউশানে পরলো স্লোগান দিবে না-কি দিবে না। ওর উল্টাপাল্টা ভাবতে ভাবতেই স্লোগান শেষ হয়ে যায়। স্লোগান শেষে তালি দিলো সবাই। আবারো নেতার জয়জয়কার শুরু হলো। চাদনী পাশে বসা হাসনার উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বললো
-“বুঝলে হাসনা, দালালী একটি মহৎ পেশা।”
হাসনা ছ্যাৎ করে উঠলো। হুড়মুড়িয়ে বললো
-“তুমি আবরার কে দালাল বলছো?”
-“বাহ! আবরার?”
-“হ্যাঁ তো! নেতাদের সবাই নাম ধরেই ডাকে। আর শোনো, খবরদার আমাদের নেতা কে নিয়ে কিছু বলবে না। সে তার দলের স্লোগান না দিয়ে নিশ্চয়ই অন্য দলের স্লোগান দিবে না। স্লোগান দিচ্ছে মানে এই না, আমাদের নেতা দালাল হয়ে গেছে। আমাদের নেতা সবার থেকে আলাদা।”
-“তাই?”
-“হ্যাঁ।”
চাদনী কিউরিওসিটি নিয়ে প্রশ্ন করে
-“আচ্ছা, ওনি কী অনেক আগে থেকেই এখানকার মন্ত্রী? অনেক পরিচিতি দেখা যাচ্ছে ওনার। কিন্তু বয়স তেমন বেশি না, মনে হচ্ছে!”
হাসনা বললো
-“বেশি না তো, সাতাশ-আটাশ হবে।ওনি এই প্রথমবারই নির্বাচনে দাড়াচ্ছেন।বংশগত ঢাকার। ওনার পরিবার এখানেই থাকেন।কিন্তু ওনি,ওনার মা’কে নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামে, ওনার নানা বাড়িতে।”
চাদনী উদগ্রীব স্বরে বললো
-“আমিও তো চট্টগ্রামের।”
-“সত্যি?”
-“হ্যাঁ!”
-“তুমি চট্টগ্রামের হলে তুমি ওনাকে চিনলে না কেন! চট্টগ্রামেও ওনার পরিচিতি কম না।”
চাঁদনী বোকা বোকা হেঁসে বললো
-“আমি আমার বাড়ি আর আমার প্রাইমারি আর হাইস্কুল ছাড়া আর কিছুই চিনি না। ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রামে বড় হয়েও আর কোথাও যাওয়া হয়নি আমার, শুধু বাড়ির রাস্তাটায় ভালোভাবে চিনি।”
-“আচ্ছা। এখানে কেন এসেছো তাহলে? বাবার বদলি হয়েছে?”
চাদনী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো
-“না, তেমন না। এমনিই এখানে পড়তে এসেছি।”
-“আচ্ছা!”
চাদনী তাকালো সামনে। রাত ভাষণ দিচ্ছে। সিম্পল লেকচার, যেমন মা-বাবার কথা শোনা উচিত,মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা উচিত আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট যেটা,সেটা হলো আঠারো বছরে পরলে তাদের পছন্দের দল বা ক্যান্ডিডেট কে ভোট দেওয়া উচিত। তবে তার পার্সোনালিটি টা সিম্পল না, চোখে লাগার মতোন। গম্ভীর আদলে মাঝে মাঝে মুচকি হাসি দেখা যাচ্ছে, হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন, পুরুষালী কন্ঠ তবে শুনতে ভালো লাগে।মনোমুগ্ধকর! চাদনী ওনার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবনা শেষে আবার তওবার দোয়া পড়লো। গুণাহ হচ্ছে ওর৷এভাবে বেগানা পুরুষকে দেখা ঠিক না। ওর স্বামী বা ও যতোই তাঁদের বিয়ে টা না মানুক,কিন্তু কবুল বলাটা তো মিথ্যা ছিলো না। এভাবে একটা অচেনা অজানা পুরুষকে নিয়ে এসব ভাবতে পারে না ও। চাদনী দৃষ্টি সরিয়ে নিচে তাকালো। মাইন্ড ডাইভার্ট করা দরকার কিছু একটা নিয়ে। হাসনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো রাতের দিকে। চাদনী ওর মুগ্ধতায় বাগড়া দিয়ে বললো
-“ওনার মা-বাবা আলাদা থাকেন?”
হাসনা সামনে তাকিয়েই বললো
-“কীরকম?”
-“ওনার ফ্যামিলি থাকেন এখানে। আবার ওনি,ওনার মা’কে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন। তার মানে ওনার মা-বাবা আলাদা থাকেন!”
-“তেমনটাই তো জানি।”
-“আলাদা কেন থাকেন?”
হাসনা এবার ওর দিকে ফিরে ফিসফিস করে বললো
-“শুনেছি বাপের দুই বিয়ে। ওনার বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর ওনার নিজের মায়ের মেন্টাল হেলথ বিগড়ে গেছে। সেই থেকে বাপের সাথে ওনার ঝগড়া।একজন আরেকজনের মুখদর্শনও করেন না। ওনি ওনার পরিবারের সাথে থাকেন না।কিন্তু ওনাকে প্রায়শই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দেখা যায়। এতোদিন ওনার বাপ মন্ত্রী ছিলেন, এবছর ওনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। আর কলেজে এসেছেন নির্বাচনের প্রচারণার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই হাই, হ্যালোর চেয়ে দলীয় স্লোগান ওনার কাছে বেশি মূখ্য। আর বিশ্বাস করো আমি হলফ করে বলতে পারি এবারে উনিই নির্বাচনে জিতবে।তখন আমরা একজন হ্যান্ডসাম মন্ত্রী পাবো।”
উৎফুল্ল হয়ে বললো হাসনা। রেহান অনেক্ষণ ধরেই ওঁদের বকবকানি শুনছিলে। এ পর্যায়ে সে গম্ভীর হয়ে বললো
-“তাদের ফ্যামিলি তে কী হয় না হয়, সেটা জেনে তো আমাদের কাজ নেই। মানুষের ব্যাপারে এতো নাক গলানো ঠিক না।”
হামনা মুখ বাকালো। চাদনী মুখ কালো করে বললো
-“আমরা তো এমনিই বলছিলাম।সেলিব্রেটিদের নিয়ে তো মানুষ একটু গসিপ করবেই। এতে এমন রিয়েক্ট করছে কেন তোমার বন্ধু?”
-“ধূর ওর কথা শুনো না তো। ও খুব সুশীল। সবকিছুতে বাগড়া দেওয়া স্বভাব ওর।”
রাত খুব শর্টকার্টে বক্তব্য শেষ করলো। স্টেজের পাশে গিজগিজ করে ছেলেপিলে দাঁড়ানো।রাত হাতের ইশারায় একজনকে স্টেজে ডাকলো।ছেলেটা স্টেজে উঠে তার হাতে লিফলেট ধরিয়ে দিলো।রাত কাগজগুলো উচিয়ে বললো
-“এই লিফলেটগুলো স্টুডেন্টদের মাঝে বিলানোর জন্য আমাদের, তোমাদের মধ্যে থেকেই একজনকে দরকার। বলো কে হবে আমাদের দলের একনিষ্ঠ সমর্থক?”
সবাই একযোগে হাত তুললো। বাদ গেলো না হাসনা আর বৃষ্টিও। চাদনী কপাল চাপড়ালো ওঁদের অবস্থা দেখে।আশ্চর্য মেয়েগুলো এমন ছ্যাবলামে করছে কেন? ছেলে কী এরা আগে দেখেনি!
একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো রাতের পাশে। ছেলেটার নাম সুহাশ। সারাক্ষণ আঠার মতো চিপকে থাকে ওর সাথে। এসেই রাতের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
-“স্যার,এই কাজটা একজন নারীকে দিলে ভালো হবে। ইউ নো এসব কাজে মেয়েদের কে ফার্স্ট প্রায়োরিটি তে রাখা হয়!”
-“এখন নারী কোথায় পাবো আমি?” ভ্রু কুঁচকে বললো রাত। সুহাশ হকচকিয়ে বললো
-“সামনে তাকিয়ে দেখুন,মাঠে নারীর অভাব নেই স্যার।”
রাত চঞ্চল দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালো।আসলেই মেয়েদের অভাব নেই। উল্টো ছেলেদের তুলনায় মেয়ে বেশি।সবাই হাত উঁচিয়ে রেখেছে। অনেকেই চিল্লিয়ে বলছে তাকে দিতে।তক্ষুনি ওর দৃষ্টি পরলো একেবারে পিছনের সারিতে বসা গাউন পরা একটার মেয়ের উপর। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। অন্যদের মতো হাত উঁচিয়ে রাখেনি। লজ্জায় আটসাট হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। হাজারো শাড়ি পরা নারীর মাঝে তাকে সবার চেয়ে আলাদা লাগছে।রাত স্পিকারে সবার উদ্দেশ্যে বললো
-“ধন্যবাদ সবাইকে, এতোটা এক্সাইটমেন্ট দেখানোর জন্য। তবে আমরা যাকে খুঁজলিাম তাকে পেয়ে গেছি। শেষের সারিতে বসা, বাসন্তী রঙের গাউন পরা, লম্বা চুলের মেয়েটা স্টেজে আসো।”
চাঁদনী চকিতে তাকালো। কারণ সবার মাঝে একমাত্র ওই গাউন পরে আছে। হাসনা আর বৃষ্টি অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। পরক্ষণেই হাসনা উৎফুল্ল হয়ে বললো
-“বন্ধু তোমাকে ডাকছে!”
-“আমাকে না, অন্য কেও হবে হয়তো!”
দ্বিধায় পরলো চাঁদনী। এতোগুলো মেয়ের মাঝে ছেলেটা ওঁকে ডাকবে এমন কনফিডেন্স খুঁজে পাচ্ছে না ও।
-“আরে গাধা, তোমাকেই ডাকছে। যাও স্টেজে যাও।” হাসনা ঠেলেঠুলে উঠিয়ে বললো।
-“আমার ভয় লাগছে হাসনা।”
-“আরে পাগল না-কি তুমি? আমরা সুযোগ পাচ্ছি না, আর তুমি ভয় পাচ্ছো। যাও তো মেয়ে।”
তড়িঘড়ি করে বললো বৃষ্টি। চাদনী বুকে থুতু ছিটিয় স্টেজের দিকে হাঁটা ধরলো। কচ্ছপ পা ফেলে, স্টেজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রাতের ছেলেপেলেরা ভিড় ঠেলে জায়গা করে দিলো।
চাদনী মাথা নিচু করে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাত লিফলেটগুলো ধরলো ওর সামনে। চাদনী হাত বাড়িয়ে নিলো।পিছু মুড়ে হাঁটা দিতে যাবে তার আগে রাত গম্ভীর স্বরে বললো
-“সিনিয়রদের সালাম দিতে হয়! জানো না? ফার্স্ট ইয়ার?”
চাদনী উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করেই বললো
-“আসসালামু আলাইকুম!”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।স্টেজে আসতে এতোক্ষণ লাগছিলো কেন?”
-“সরি ভাইয়া!” ভয়ে ভয়ে বললো চাদনী।
-“যাও!”
চাদনী চোখ খিচে হাটা দিলো।স্টেজ থেকে নামতে যাবে তার আগেই রাত আবার ডেকে বললো
-“তোমার নাম কী কাজল চোখের শ্যামাঙ্গিনী?”
চাঁদনীর পা থেমে যায়। পিছনে ফিরে তাকালো ও। প্রথমবার রাতের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
-“চাঁদনী!”
আলোর বেগে নামলো স্টেজ থেকে চাঁদনী।ও নামতেই সবাই ঘিরে ধরলো ওঁকে। চাঁদনীর লিফলেট গুলো দিতে হলো না ওঁদের হাতে। সবাই নিজেরাই ভাগাভাগি তরে নিয়ে নিলো।আবার অনেকে পেলোই না। অনেক মেয়ে আবার লিফলেট নেওয়ার বদলে চাদনী থেকে জিজ্ঞেস করলো রাত ওঁকে কী বলছিলো! চাদনী আতঙ্কে কিছুই বলতে পারেনি।
সন্ধ্যা নামছে প্রকৃতিতে। আলো-আঁধারের মিশেলে ছেয়ে আছে চারপাশ। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আজ পুরো দিন টা চাঁদনীর খুব বেশিই ভালো কেটেছে। ওর স্বল্পপরিচিত বন্ধুগুলো এতো অমায়িক চাঁদনীর মনেই হয়নি, আজই দেখা হয়েছে ওঁদের সাথে। ওঁদের সাথে পুরোদিন কাটিয়ে মনে হয়েছে কতোদিনের বন্ধুত্ব ওঁদের। আজ পুরোদিনে রেহান আর সিয়ামের সাথেও ভালো বন্ডিং হয়েছে ওর। ওরাও বৃষ্টি আর হাসনার মতো অনেক ভালো। স্টেজের ঘটনার পর চাদনী অনেক আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলো। অজানা কারণেই ভয় লাগছিলো ওর। এসব কখনো সামনাসামনি ফেইস করেনি ও। কিন্তু বন্ধুদের সান্নিধ্যে ওর সব ভয় কেটে।ওঁদের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে পা দু’টোর অবস্থা খারাপ চাদনীর। গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত চাদনী। আঁধার ড্রাইভিং এ মত্ত। ও চাদনী কে নিতে এসেছে কলেজ থেকে।সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পর চাদনী জীবনেও একা বাসায় ফিরতে পারতো না। চোখের পানি নাকের পানি একসাথে করে কাঁদতে বসতো। তাই আঁধারের সব কাজ ফেলে ওকে নিতে আসতে হয়েছে।
আঁধার ড্রাইভিং করার মাঝেই বললো
-“তো, আজকের দিনটা কেমন কাটলো?”
চাদনী বাইরে তাকিয়েই বললো
-“অনেক সুন্দর!”
-“ফ্রেন্ড হয়েছে তোর?”
-“হুম! চারজন!”
-“ছেলে ফ্রেন্ড হয়নি?”
চাদনী এবারে সোজা হয়ে বসলো। আঁধারের দিকে তাকিয়ে দু আঙুল উচিয়ে বললো
-“দু’জন!”
-“ভালোই। তুই যে এখন আপডেট হচ্ছিস এটা দেখেই ভালো লাগছে আমার।শোন, প্রতিদিন কলেজে যাবি,পড়বি, ঘুরবি, ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিবি, তাহলেই মাইন্ড ফ্রেশ থাকবে। কি সারাক্ষণ মুখ একটা পেচার মতো করে বসে থাকোস!”
চাদনী চুপ থাকলো। আঁধার আবার বললো
-“তোদের ওখানে কী আজ সেলিব্রেটি টাইপের কেও এসেছিলো?”
-“কেন মনে হলো?”
-“তোদের কলেজের রোডটাতে দুপুরের দিকে অনেক জ্যাম ছিলো।”
-“তুমি আমাদের কলেজেে এসেছিলে?”
-“হ্যাঁ। বাট তোর দেখা তো পাইনি। দুপুরে খেয়েছিলি কি-না সেটা দেখতেই এসেছিলাম।”
-“মিথ্যা কেন বলতেছো?”
-“সত্যি! মিথ্যা কেন বলবো তোকে? ফোন ধরছিলি না। টেনশন হচ্ছিলো। এমনিতেই চাচ্চু কে উল্টাপাল্টা বলিস আমার নামে, তুই হারিয়ে গেলে তাকে কি জবাব দিতাম!জেল খাটতে হতো আমাকে! পেত্নী, সবসময় আমাকে ফাসানোর ধান্দা!”
মুখ বাকালো চাদনী।
-“কে এসেছিলো রে?”
-“মন্ত্রী!”
-“আচ্ছা,মন্ত্রী আসলে ফোন ধরা যায় না?”
-“আমি তখন লিফলেট দিচ্ছিলাম সবাইকে, আই গেস! পরে তো কল ব্যাক করেছিলাম, তুুমি তো বলোনি যে এসেছো!”
-“লিফলেট দিচ্ছিলি? কীসের?”
ভ্রু কুঁচকে বললো আঁধার। চাদনী পুরো ঘটনাটা বললো। আঁধার বিহ্বল স্বরে বললো
-“এতো মেয়ের মাঝে উনি লিফলেট দেওয়ার জন্য তোকেই স্টেজে ডাকলেন?”
-“হুম, ডাকলেন!”
-“কেন? মানে তোকেই কেন? কলেজে এতো সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে থাকতে উনার চোখ তোর উপরই পরলো কেন? তুই তো সুন্দর না!”
-“সবাই তো আর তোমার মতো সুন্দর খোঁজে না দাদাভাই। বাট আমিও কনফিউজড, ওনি আমাকেই কেন ডাকলেন! তুমি তো বলো আমাকে অন্ধকারে দেখা যায় না, উনি কী করে দেখলেন?”
-“আই থিংক, ওনার চোখে সমস্যা আছে রে চাঁদ! নয়তো তোর মতো মেয়েকেই ওনার চোখে পরবে কেন!”
-” চোখে সমস্যা ওনার না, চোখে সমস্যা তোমার! তাই তো তুমি দেখতে পাও না আমাকে, কিন্তু বাকি সবাই দেখে। আর শোনো, এখন থেকে ভেবেচিন্তে কথা বলবে আমার সাথে বুঝছো, সেলিব্রেটি হয়ে গেছি আমি! নেতারা নিজ তাগিদে আমাকে স্টেজে ডাকে।”
কাজলরেখা পর্ব ১০
-“ওরে আমার সেলিব্রেটি! আয় তোকে ধাক্কা মেরে ফেলেদি গাড়ি থেকে।”
চাদনী বাঁকা চোখে চেয়ে বললো
-“তুমি কী চাও, আমি এক্ষুনি হেল্প হেল্প করে চিল্লিয়ে তোমাকে গণধোলাই খাওয়াই?”
-“চিল্লা দেখি, আমার মতো সুন্দর ছেলের পাশে তোকে দেখে, ওরা তোকেই কিডন্যাপার ভেবে নিবে!”
চাঁদনী চিল্লানোর জন্য হা করলো। আঁধার এক হাতে মুখ চেপে ধরলো ওর। বিমূঢ় স্বরে বললো
-“শয়তান! আজকেই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে রাখবো আমি তোর! বেশি উড়ছিস! তোর নেতার ভূত ছোটাবো আমি তোর মাথা থেকে, ওয়েট!”