কাজলরেখা পর্ব ১২
তানজিনা ইসলাম
চাদনী কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই আঁধার একটা পড়ার টেবিল এনে দিয়েছে ওঁকে। ওর কক্ষে এই জিনিসটার কমতি ছিলো। এতো আসবাবপত্র থেকেও কেন যেন রুমটা খালি খালি মনে হতো।কলেজে ভর্তির দু-তিন পরেই আঁধার পড়ার টেবিলটা আনিয়েছে। চাঁদনী সাইন্সের সে হিসেবে দুইজন ভিন্ন রাইটারের বইও এনে দিয়েছে। চাঁদনীর কিছু বলতে হচ্ছে না, আঁধার সবকিছু নিজ থেকেই করছে।
চাদনী বলতোও না, ইন্টারের পড়াশোনা টা কোনোভাবেই হচ্ছে না ওর।এসএসসির পর টানা তিনমাস ছুটি কাটিয়ে এমন একটা বিতৃষ্ণা, আলসেমি জেগে গেছে, চেয়েও চাদনী বই খুলে বসতে পারছে না। তবে ও সবগুলো বই সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়েছে। বাট একবারো ধরে দেখেনি। মোবাইল রেখে পড়তে বসার মতো কঠিন কাজ এ দুনিয়ায় আর একটাও নেই।আঁধারের উচিত হয়নি ওঁকে ফোন কিনে দেওয়া৷বিষয়টা এখন চাদনী রিয়ালাইজ করতে পারে।তাও একটা চলনসই ফোন দিলেই হতো, দিয়েছে আরো আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স। সেটা নিয়ে চাদনী রিলস দেখেই বাঁচে না!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ওর চারজন বন্ধুর ফ্রেন্ডস ফরএভার নামের একটা গ্রুপ আছে হোয়াটসঅ্যাপ এ। চাদনী কে সেখানে এড করেছে ওরা। সেখানে সারাদিন টুংটাং মেসেজ আসে। একটা পিঁপড়া মরলেও সে খবর পাওয়া যায় গ্রুপে। চাঁদনী সেদিনই ক্লাসে যায়, যেদিন ওর সব বন্ধু কলেজে আসে। নয়তে যাওয়া অফ। একা বাড়িতে বসে থাকে।
আজ অনেকদিন পর চাঁদনীর মনে হয়েছে ওর একটু পড়াশোনা করা দরকার। তাই টেবিলে ও বই খুলে বসেছে। বইগুলো একদম নতুন, কড়কড়া।ইয়া মোটামোটা বই।চাদনী কিছুক্ষণ গন্ধ শোকে৷ কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে কিন্তু কী পড়বে কিছুই বুঝতে পারে না।
মোবাইলে আবারও নোটিফিকেশনের শব্দ আসছে। চাদনী আবারো ফোন হাতে তুললো। গ্রুপে ওইদিনের ঘটনাটা নিয়ে তুমুল তর্ক বিতর্ক হচ্ছে। কয়েকজন সিনিয়র আপু চাদনী কে নিয়ে উল্টাপাল্টা বলেছে, রাত ওঁকে লিফলেট দেওয়া নিয়ে। সেটা শুনেছে বৃষ্টি। আপুদের মুখের উপর কথা বলেও ওর শান্তি হয়নি, এখন গ্রুপে এসে রাগ ঝাড়ছে। চাদনী হাসলো ওঁদের মেসেজ দেখে। কম সময়ের মধ্যেই এ মানুষগুলোর সাথে ওর খুব সুন্দর বন্ডিং তৈরি হয়েছে। ছেলেমেয়েগুলো এতো ভাবে চাঁদনীর কথা। একমাত্র ওঁদের সামনেই নিজের গায়ের রং নিয়ে ফ্রাস্ট্রেশন ফিল করেনা চাদনী।ওরা চাদনী কে এতো সুন্দর করে ডেসক্রাইব করে। ওঁদের সাথে থাকলেই চাদনী রিয়ালাইজ করে গায়ের রং টাই সবকিছু না। তার চেয়েও দামী আরো অনেককিছু আছে।
-“চাঁদ!”
আঁধারের ডাক কানে আসতেই চাদনী ধরফরিয়ে মোবাইল রেখে দিলো।দ্রুত হাতে ফিজিক্স বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো শুরু করলো। আঁধার উঁকি দিলো ওর কক্ষে। চাদনী তাকালো সেদিকে। আঁধার দরজার পাটাতন ধরে বললো
-“বিজি?”
-” না তো!”
-“কথা ছিলো তোর সাথে!”
-“এসো।”
আঁধার কক্ষে ঢুকলো। বিছানার উপর বসে বললো
-“পড়ছিলি!”
-“না, এমনিই বইগুলো দেখছিলাম। কী যেন বলবে বলছিলে বলো না।”
আঁধার সে কথা না বলে ভ্রু উঁচিয়ে বললো
-“পড়ছিলি না মোবাইল দেখছিলি?”
চাদনী আমতা আমতা করে হেঁসে বললো
-“পড়ছিলাম!”
-“আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। তোর পড়ালেখার এই বিশ্রী অবস্থা কেন হয়েছে বলবি আমাকে চাঁদ!”
চাদনী অসহায় স্বরে বললো
-“আমি পড়তে চাচ্ছি, কিন্তু পারছি না৷”
-“কেন?”
-“জানি না।”
-“পড়াশোনার ইচ্ছা নাই? না থাকলে বল বিয়ে দিয়েদি।”
চাদনী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বললো
-“বিয়ে দিবা মানে?”
-“পড়াশোনা না করলে বিয়ে তো দিতেই হবে তাই না!নয়তো তোকে কোনো কাজবাজ ছাড়া ঘরে বসিয়ে রাখবো না-কি!”
চাদনী কিছুক্ষণ বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। কি কপাল ওর! ওর স্বামী ওঁকে আবার বিয়ে দিবে বলছে। আঁধার নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চাদনী বললো
-“ঠিক আছে, বিয়ে দিয়ে দাও।পড়াশোনা হচ্ছে না আমার দ্বারা! বইগুলো দেখেই ভয় লাগছে আমার। এতো বড় বড় বই দুই বছরেরও কম সময়ে কি করে শেষ করবো আমি!”
আঁধার মুখ বাকিয়ে বললো
-“তোকে কে বিয়ে করবে,পেত্নী? সুন্দর হলে একটা কথা ছিলো। তোর বিয়ে নিয়ে এতো টেনশন করতে হতো না আমাকে। এখন তো পরিবারের কেও নেই আমাদের কাছে, তোর দায়িত্ব আমার। তোর জন্য পাত্রও আমাকে জোগাড় করতে হবে। তুই যদি পড়াশোনা করে লাইফে কিছু একটা করতে পারতি, তাহলে পাত্র জোগাড় করতে আমাকে এতো বেগ পেতে হতো না। এখন তুই মাত্র এসএসসি পাশ করেছিস, তারউপর তোকে অন্ধকারে দেখা যায় না তোরে তো আমাদের ফ্ল্যাটের দারোয়ানও বিয়ে করবে না।”
চাদনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলে মাথা রাখলো। এখন এসব নিয়ে আর আঁধারের সাথে কথা কাটাকাটিও করতে মন চায় না ওর।একটা মানুষ ঠিক কি টাইপের বিরক্ত ওর প্রতি! কতোটা বোঝা ভাবে ওঁকে।
-“তুই রাগ করলি আমার উপর?”
চাদনী মাথা না তুলে উদাস স্বরে বললো
-“না। রাগ করার জন্য অধিকার লাগে আঁধার ভাই। তোমার উপর আমার কোনো অধিকার নাই।”
-“আমি তো দুষ্টামি করছিলাম। মজাও বুঝিস না!”
-“তোমার সাথে আমার মজার সম্পর্ক না।”
-“ছিলো না বুঝি! সে সম্পর্ক চলে গেছে?”
-“তুমি নিজেই শেষ করে দিয়েছো সে সম্পর্ক। তুমি সবকিছু শেষ করে দিয়েছো! তোমার কথার বানে আমিও শেষ হয়ে যাবে কোনো একদিন।”
আঁধার শ্বাস ফেলে হাসলো। ধুপ করে শুয়ে পরলো বিছানার উপর। মাথার নিচে দু-হাত আড়াআড়িভাবে দিয়ে বললো
-” দিয়ে দেওয়া এতোই সহজ? তুই ভাবলি কী করে তোকে আমি আরেকজনকে দিয়ে দিবো! বিয়ে না মানি, বউ না মানি বাট তোকে সারাজীবন আমার কাছেই থাকতে হবে। ইউ নো তোরে আমি কাওকে দিব না। কাওকে না! তুই চায়লেও যায়তে পারবি না আমাকে ছেড়ে!”
-“হ্যাঁ!আমি তো তোমার হাতের পুতুল, তুমি যেভাবে নাচাবা ওভাবে নাচবো!”
চাদনী সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আঁধার সিরিয়াসভাবে বলেনি একটা কথাও। মেয়েটা ইদানীং ওর কোনো কথায় স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। আঁধার উঠে বসলো।কথা ঘোরাতে বললো
-“তোর একটা হোম টিউটর লাগবে চাঁদ!নয়তো তোর এভাবে পড়াশোনা হচ্ছে না।”
চাদনী চেয়ারে পা দু’টো তুলে আঁধারের দিকে তাকিয়ে বললো
-“হোম টিউটর রাখার চেয়ে, অনলাইনে ক্লাস করা বেশি ভালো না?সবাই দেখি পরামর্শ দিচ্ছে এইচএসসির জন্য অনলাইনের পড়া বেশি ইফেক্টিভ!”
-“ধূর! এদের কথা শুনিস না। এরা কোর্স বিক্রি করার জন্য যা তা বলে। আমি তোর জন্য একটা টিচার ঠিক করেছি!”
-“মেইল টিচার?”
মুখ ফসকে বলে ফেললো চাঁদনী। ছোটবেলা থেকেই ও সবসময় ফিমেল টিচারের কাছে পরেছে, সেটা প্রাইভেট হোক বা ঘরে টিচার রেখে পড়া। শুধু স্কুলে বাধ্য হয়ে ওঁকে মেইল টিচারের কাছে পড়তে হতো। এটা খুবই স্বাভাবিক। অথচ চাদনী স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। কিন্তু আঁধার বুঝলো উল্টো। নাক ফুলিয়ে বললো
-“মেইল টিচারের কাছে পড়ার খুব শখ? চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আমি বারো ঘন্টায় বাড়িতে থাকি না। তুই একা বাড়িতে একটা মেইল টিচারের কাছে পড়বি। বাহ! কি আক্কেল তোর!”
মুখ বাকালো চাদনী। বাকা হেঁসে বললো
-” আরে ইয়ার বুঝলা না তো তুমি! তুমি নিজেই বলো আমাকে কেও চয়েস করবে না। আমার রূপের বাহারে ছেলেরা আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। সো মেইল টিচার রাখলে ক্ষতি কী? একা বাড়ি তে পড়লেই বা ক্ষতি কী? না, আমার দিকে তাকানোর চান্স আছে তার, না উল্টাপাল্টা কোনো কিছু ভাবার চান্স আছে।”
চাদনী ইদানীং কথায় কথায় বাঁশ মারে আঁধারকে। ও আগেও আঁধারের সব কথা চুপ করে শুনতো এমন না। বাট এখন আঁধারের সাথে মুখে মুখে তর্ক করার হার টা বেড়ে গেছে। আঁধার সে যুক্তি খন্ডন করতে পারে না। তাই রেগে যাওয়ার ভং ধরে। উঠে দাড়িয়ে গাঁটা মারে চাঁদনীর মাথায়। এখনো সে, সেইম কাজটা করলো। চাদনী নাক মুখ কুঁচকে তাকালো। আঁধার শাসিয়ে বললো
-“বাপ রে বাপ! মুখ তো মুখ না! কোন দিন যে ঠোঁট দু’টো সেলাই করে দিব আমি, নিজেও জানি না। আগামী মাস থেকে তটিনী পড়াতে আসবে তোকে। কাল থেকেই আসতে বলেছি, সময় হচ্ছে না ওর। স্টুডেন্ট পড়ায় না ও, তারপরও তোর জন্য টাইম ম্যানেজ করেছে। অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর রাজি হয়েজে। এ মাসটা কোনোমতে পড়। আগামী মাস থেকে ও গাইডলাইন দিবে। প্যারা নাই।”
চাদনী ঘাড় বাকিয়ে আজ্ঞা গ্রহণ করলো।
চাঁদনীর মুখে আবরার রাত নামে একজন নেতার কথা বেশ কয়েকবার শুনেছে আঁধার। ও প্রায়শই কলেজ থেকে ফিরে তার কথা বলে ওঁকে। বন্ধুদের সাথে তাকে নিয়ে আড্ডাও দেয়৷ চাদনীর গলার স্বর মাশাল্লাহ! দোতলায় থেকে কথা বলে অথচ নিচ তলা পর্যন্ত শোনা যায়। ওর স্বাভাবিক গলার স্বরও অনেক বড়। আঁধার নিচে বসে বা পাশের রুমে থেকে ওর প্রতিটা কথা স্পষ্ট শুনতে পায়। বিষয়টা অতটা সিরিয়াস না। চাদনী সিরিয়াসভাবে বলেও না। মানুষ যেভাবে সেলিব্রেটিদের নিয়ে গসিপ করে সেভাবেই বলে ও।
স্বাভাবিক ব্যাপার। অথচ আঁধার সেটা না স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। খুব করে ইগো হার্ট হয় ওর। কেন হয় আঁধার জানে না! ও জানতো কিছু কিছু মেয়েরা তাদের সামনে আরেকটা মেয়ের প্রশংসা সহ্য করতে পারে না। কারণ মেয়েরা খুব হিংসুটে হয়। আঁধার ছেলে হয়েও কেন যেন এ বিহেভটা করে!কিন্তু আঁধার হিংসুটে না একটুও।হ্যাঁ ও বর্ণবাদী, কিন্তু কোনোদিন কাওকে হিংসা করতে হয়নি ওঁকে। ও ছোটবেলা থেকেই সব বিষয়ে পার্ফেক্ট। নিজের চেয়ে আহামরি পার্ফেক্ট কাওকে দেখেনি ও। কিন্তু চাদনী এমনভাবে ছেলেটার কথা বলে, আঁধারের খুব দেখতে মন চায় তাকে।
ও রাত নামের সে ছেলেটার প্রশংসা নিতে পারে না, যাকে ও দেখেইনি কোনোদিন। গা জ্বলে ওর। অথচ চাদনী নিজ থেকে বলতেও আসে না।ও তো তেমন কথায় বলে না আঁধারের সাথে। আঁধার ওঁকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে। আবার চাদনী এসব বললে, সে কথাগুলো বিষের মতো লাগে ওর কাছে। এক জ্বালায় পরেছে আঁধার।
আঁধারের খুব ইচ্ছে ছেলেটাকে একবার দেখার। কোন আসমান থেকে নেমে আসা হুর-পারা(পরীর মেইল ভার্সন), যাকে বর্ণনা করে চাদনী জ্বালিয়ে দিচ্ছে ওঁকে সেটা একবার দেখতে চায় ও। এ কথাটা দু-তিন বার চাদনী কে বলেও ফেলেছে আঁধার। তবে সেটা খুব তাচ্ছিল্য ভাবে। যেমন, কে এমন ওয়ার্ল্ড হ্যান্ডসাম! আমাকেও একটু দেখাস তো!” অথচ ভেতরে ভেতরে ফা*টছে ওর। কিন্তু যেভাবেই হোক এটিটিউড তো দেখাতেই হবে ওঁকে। এমন ভাব ধরে থাকতে হবে আঁধার কাওকে গোণে না। মানুষের কথা শোনার সময় কই ওর!
আজ শুক্রবার। চাদনী আর আঁধার দু’জনেই ঘরে। কারোও কলেজ ভার্সিটি নেই।চাদনী সোফায় বসে টিভি দেখছে। ডোরেমন! ও কার্টুন দেখে টিভির স্ক্রিনে। বড় স্ক্রিনে কার্টুন না দেখলে, ভালো ফিল পাওয়া যায় না কেমন যেন, চাঁদনীর মনে হয়। এড আসতেই চাদনী চ্যানেল পাল্টালো। খবরের চ্যানেলে, রাজনৈতিক দলের লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। সবাই লিফলেট বিতরণ, ভোটের প্রচারণায় ব্যস্ত। চাদনী চ্যানেল পাল্টে দিতো গেলে, কিন্তু স্ক্রিনে একজনের স্বল্পপরিচিত আদলের দেখা পেতেই থেমে গেলো ও। রাত জার্নালিস্ট দের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। চাদনী গলা ফেড়ে ডাকলো আঁধার কে। আঁধারের আসার সময়টা দিলো না ও। চিল্লিয়ে ডাকলো
-“আঁধার ভাই!”
আঁধারের হন্তদন্ত হয়ে নামলো নিচে। রেগেমেগে বললো
-“জানো*য়ার!গাভীর মতো চিল্লাচ্ছিস কেন?”
আঁধার হাঁপাচ্ছে। কয়দিন ধরেই একটা প্রজেক্ট বানানো নিয়ে অবস্থা খারাপ ওর। চাদনী ত্যাড়া কিছু বললো না ওঁকে, আধারের কথা আমলে না নিয়ে বললো
-“তুমি না নেতা কে দেখতে চাচ্ছিলে। উনিই।”
সামনে ইশারা করে বললো চাদনী।
আঁধার টিভির স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো।ফিচেল হেঁসে বললো
-“যে লেভেলের নেতা নেতা করছিলি, তোদের নেতা ওই লেভেলেরও সুন্দর না!”
-“সিরিয়াসলি? আমি যে কালো সেটা তুমি স্পষ্ট দেখতে পাও, অথচ নেতা যে সুন্দর সেটা তুমি দেখতে পাচ্ছো না।”
-“যেভাবে বর্ণনা করেছিলি অতো আহামরি না। ওনার চেয়ে তো আমিই বেশি সুন্দর!”
নিজের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে বললো আঁধার। চাদনী নিজের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার একটা রাস্তা পেলো যেন। আঁধার ওঁকে কম কথা শোনায়নি ওর গায়ের রং নিয়ে। এবার ওর পালা। যেভাবেই হোক আজকের বিতর্কতে ওঁকে জিততেই হবে। চাদনী বললো
-“নো! নেতা বেশি সুন্দর!”
আঁধার গিয়ে সোফার উপর বসলো। চাদনীর দিকে তাকিয়ে ধমকে বললো
-“থাপ্প*ড় খাবি বেয়াদব। ছি* চাঁদ, চোখের সামনে এতো সুন্দর একটা ছেলে থাকতে, তোকে টিভিতে আরেকটা এভারেজ ছেলেকে দেখতে হচ্ছে!”
-“ওনি এভারেজ?”
-” আমার সামনে অবশ্যই এভারেজ। দেখ, ভালো করে দেখ আমাকে! আমি বেশি সুন্দর!তোর আমাকে দেখা উচিত।”
আঁধার ছো মেরে রিমোটটা নিয়ে নিলো ওর হাত থেকে।চাদনী বললো
-“নেতা বেশি সুন্দর!তোমাকে দেখার মানুষের তো অভাব নাই। আমি বরং ওনাকেই দেখি।”
-“এভাবে বলবি না, ইগো হার্ট হচ্ছে আমার। গুণাহ হবে তোর।স্বামী রেখে আরেকজনের দিকে চোখ দিচ্ছিস।”
চাদনী বাকা চোখে তাকালো ওর দিকে। বললো
-“গুণাহ হলে আমার হবে। তোমার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। রিমোট দাও।”
-“না, দিব না। যেভাবে টিভিতে ওনাকে দেখছিলি সেভাবে আমাকে দেখ, তবেই রিমোট পাবি।”
চাদনী বিরক্তিকর দৃষ্টি ফেলে তাকালো। আঁধার খুব জেদি। ওর চেয়েও বেশি। ওর মুখ থেকে নিজের মর্জিমতো কথা বের না করা পর্যন্ত শান্ত হবে না ও।চাদনী অতিষ্ঠ হয়ে সত্যি কথা বললো
-“আমি ওনাকে দেখছিলাম না। কার্টুন দেখছিলাম, এড এসেছিলো তাই চ্যানেল পাল্টাচ্ছিলাম। তুমি ওনাকে দেখতে চেয়েছিলে, তাই ডাক দিয়েছি তোমাকে। অনেক বড় অন্যায় হয়ে গেছে আমার তোমাকে ডেকে।রিমোট দাও।”
-“আগে আমাকে দেখ!”
চাদনী নাক ফুলিয়ে তাকালো। আঁধার গো ধরে বললো
-“কে বেশি সুন্দর বল, আমি না-কি টিভিতে যাকে দেখছিলি সে।”
-“টিভিতে যাকে দেখছিলাম সে!
-“ভালো করে দেখ। তোরে মেরে লাশ সহ গুম করে দিব আমি, বলে দিলাম। খুব নেতা নেতা করছিলি। আমি কি না কি ভেবেছিলাম! ঠিক আছে, সে হ্যান্ডসাম,সুন্দর। তবে তোর বর্ণনার মতো না, আমার চেয়ে বেশিও না।আমি তার চেয়ে বেশি সুন্দর চাঁদ, আমাকে দেখ।
-“নেতা বেশি সুন্দর!”
ঝগড়া লেগে গেলো দু’জনের মধ্যে।আঁধার থাবা দিয়ে ধরলো চাদনী কে।পিঠপিছনে হাত মুচড়ে দিয়ে বললো
-“বল, কে বেশি সুন্দর!”
-“নেতা!”
আঁধার হাতের চাপ বৃদ্ধি করলো। তবে তা একেবারেই সহনশীল।
-“বল কে বেশি সুন্দর। তোর চিকন চিকন হাতগুলো ভেঙে যাবে। হাতের মায়া কর। সত্যি বলছি আমি, ভেঙে দিব।
চাঁদনী হার মেনে বললো
-“আচ্ছা, তুমি বেশি সুন্দর!”
-“ছাড়া পাওয়ার জন্য বলছিস না তো?”
-“কি মুসিবত! বললাম তো তুমি বেশি সুন্দর। আমার ভুল হয়ে গেছে তাকে সুন্দর বলে।মাফ চাই। ছাড়ো আমাকে। ব্যাথা পাচ্ছি।”
আঁধার ছাড়লো।দূরে সরে বসলো চাদনী থেকে। চাদনী হাফ ছেড়ে বাচলো। আঁধারের মুখের উপর কুশন ছুড়ে মারতেই আঁধার ক্যাচ ধরে ফেললো সেটা। চাদনী ধুপধাপ পা ফেলে সিড়ির কাছে দাড়ালো।
-“আঁধার ভাই।” আঁধার পিছু ফিরে তাকায় চাদনীর দিকে।
চাদনী মিষ্টি করে হেঁসে বললো
কাজলরেখা পর্ব ১১
-“নেতা বেশি সুন্দর!”
তারপর ভো দৌড় দিয়ে চলে গেলো উপরে। আঁধার মুখ কালো করে তাকালো টিভির স্ক্রিনের দিকে। এখনো লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। রাত স্পিচ দিচ্ছে। আঁধার চিন্তিত হয়ে বললো
-“আসলেই সুন্দর ছেলেটা। কিন্তু যায় হোক, চাঁদনীর সামনে হার মানা যাবে না!”