কাজলরেখা পর্ব ১৬ (২)
তানজিনা ইসলাম
চাদনী নিঃশব্দে কাঁদছে। ওর পায়ের অবস্থা শেষ। হাঁটুতেও ব্যাথা পেয়েছে বেশ অনেকটা। বুড়ো আঙুল থেকে একাধারে র*ক্ত পরছে। ওর বন্ধুরা সবাই মিলে ওঁকে কলেজ ডক্টরের কাছে নিয়ে এসেছে। সে বেন্ডেজ করে দিলো চাদনীর পায়ে। ওর গোড়ালি ধরে দেখলো কোনো ফ্র্যাকচার হলো কি-না! না তেমন সমস্যা হয়নি। মেঝেতে না পরায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছে। তবে ব্যাথা পেয়েছে অনেকটাই। চাদনী হাঁটু দেখাতে পারছে না, তবে বুঝতে পারছে ওখান থেকেও চামড়া উঠে গেছে। ডক্টর ওঁকে একটু বসে রেস্ট করতে বললেন। হাসনা, বৃষ্টি, রেহান, সিয়াম সবাই উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রেহান বাদে বাকি তিনজন কয়েকটা কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করেছে। ওদের চিন্তিত মুখ দেখে, চাদনী চোখ মুছে সুক্ষ্ম স্বরে বললো
-“তোরা প্র্যাকটিস করতে যা। আমি ঠিক আছি। একটু বসলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
হাসনা চোখ পাকিয়ে বললো
-“দেখতে পাচ্ছি, খুব সুস্থ আছো তুমি! হে লা, চোখে দেখিস না তুই? কানা তুই? আসলেই তো কতোবড় এক্সিডেন্ট ঘটতে পারতো! সিড়ি থেকে গড়িয়ে পরলে, তোর একটা হাড্ডিও আস্ত থাকতো?”
চাদনী শিশুর মতো ঠোঁট উল্টালো। বৃষ্টি নিজের ওড়না দিয়ে ওর মুখ মুছিয়ে দিয়ে বললো
-“থাক কিছু বলিস না। বেচারি! এমনিতেই অনেক ব্যাথা পেয়েছে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রেহান মুখ কালো করে তাকিয়ে ছিলো চাদনীর দিকে। হাসনা ওর পায়ে পাড়া দিয়ে বললো
-“জানো*য়ার! তোর ভাই এটা এমন কেন? ইচ্ছে করে গায়ে পরেছিলো রে চাদনী? ও কী গায়ে পরা মেয়ে? পরেছে তো কী হয়েছে, গা ক্ষয় হয়ে গেছে ওনার? এভাবে বকতে পারবে? নেতা হয়েছে বলে সবার মাথা কিনে নিয়েছে?আজই আমি আমার ক্রাশের লিস্ট থেকে তোর ভাইয়ের নাম মুছে দেব!”
রেহান পা ধরে লাফাতে লাফাতে, হাসনা কে গালি দিতে দিতে বললো
-“শয়*তান ছেমড়ি, আমারে মারিস কেন? ভাইয়াকে যায় বল না। আমি করেছি মনে হয়? ভাইয়া মেয়েদের টাচ পছন্দ করে না, তাই এরকম বিহেভ করেছে। আর কোথাও গেলে তাকে কিছু কিছু মেয়েরা খুব বিরক্ত করে, ফেইড আপ হয়ে গিয়েছিলো। ভুলবশত হলেও চাঁদনীর গায়ে পরা মানতে পারেনি।”
প্রতিত্তোরে হাসনা মুখ বাকালো। বৃষ্টি পাংশুটে মুখে বললো
-“বাদ দে। নেতাদের এমন এটিটিউড না থাকলে চলে? মানছি চাঁদনীর সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে। বাট আমি আমার ক্রাশের লিস্ট থেকে আবরার ভাইকে মুছতে পারবো না। এই ব্যাপারে আমি তোর সাথে নাই।”
হাসনা আমতা আমতা করে বললো
-“আরে, ওটাতো আমি রাগের বশে বলেছি। ক্রাশ কে কখনো লিস্ট থেকে মুছে দেওয়া যায়? আবরার ভাই কে আমার মেলা ভালো লাগে। বাট রাগটা বেশিই!”
দু’জনে একসাথে হা হুতাশ শুরু করলো। রেহান আর সিয়াম কপাল চাপড়ালো ওঁদের অবস্থা দেখে।
চাদনী সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো এতোক্ষণ। এ পর্যায়ে মুখ খুললো ও, রেহানের উদ্দেশ্যে বললো
-“উনি তাহলে তোর ভাই?”
-“হুমম!”
-“নিজের?”
-“তা বলতে! একদম সেইম ডিএনএ!”
-“ছি! এসব কেন বলছিস!”
রেহান হাসতে থাকলো। বললো
-“তুই অনেক ইনোসেন্ট রে! আমরা তো আরো এইটটিন প্লাস কথা বলি!”
-“বললি না তো একবারো।”
-“প্রয়োজন পরে নাই। ওরা চারজন জানতো। তুই কখনো জানতে চাস নাই।”
চাদনী আর কিছু বললো না। চুপ করে বসে থাকলো। বাকি চারজন গল্প করছে। চাদনী ওঁদের গল্প মনোযোগ দিয়ে শোনে। খুব কমই ও নিজের বক্তব্য পেশ করে। ওর প্রধান কাজ ওঁদের আজাইরা কথাগুলো শোনা। যেমন ক্লাসে কে কার সাথে রিলেশনে আছে, কার ব্রেকআপ হয়েছে, কে কয়টা প্রপোজাল পেয়েছে এই পর্যন্ত, কোন ম্যামের সাথে কোন স্যারের কাহিণী চলছে এসব কিছুই ওদের গল্পের মূল টপিক। আর সত্যি কথা হচ্ছে চাদনীর ওঁদের আজাইরা কথাগুলো শুনতেই ভালো লাগে।
চাদনী একটু রেস্ট করার পর সব বন্ধুরা একসাথে বেরোলো কক্ষ থেকে। চাদনী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারছে৷ বৃষ্টি আর হাসনা তবুও ধরে রেখেছে ওঁকে। হাসনা বিতর্ক প্রতিযোগিতা দিয়েছে। বিতর্কে ও খুব পার্ফেক্ট।মানুষের সাথে ঝগড়া করার জুড়ি নেই ওর। সিয়াম খুব ভালো আর্ট করতে পারে, ও দিয়েছে চিত্রাঙ্কন আর রচনা প্রতিযোগিতা। বৃষ্টি দিয়েছে নাচ, ও রিহার্সাল কতে চলে গেলো। হাসনা আর সিয়ামও নিজেদের প্র্যাক্টিসে গেলো। কোনো কাজ নেই শুধু রেহান আর চাঁদনীর। ওরা এক একবার এক এক ক্লাসে গিয়ে বন্ধুদের প্র্যাক্টিস দেখে।
রেহান আর চাদনী ঘুরছিলো। চাদনী বললো
-“তুই তো অনেক কিউট। তোর ভাইটা অমন বদরাগী কেন? কিভাবে ধমকালো আমাকে!
-“কিছু মনে করিস না, প্লিজ। বাট ভাইয়া বদরাগী না! সে আমার চেয়েও সুইট। বাট মেয়েদের টাচ একদম পছন্দ করে না!”
-“আমি তো জানতাম নেতারা একটু প্লে বয় টাইপের হয়। ফ্লার্ট করে, ওঁদের অনেকগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকে৷”
-“নাহ! ভাইয়া আলাদা। উনার জীবনের একমাত্র মেয়ে ওনার মা। আর কেউ নেই৷ ছিলো না কখনো!
-“আচ্ছা। খুব ভালোবাসে নিজের মা’কে।”
-“হুমম। অনেককক।শব্দে ব্যাখ্যা করা যাবে না। মামুনি যদি বলে আকাশ থেকে চাঁদ এনে দিতে, সেটাও করার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবে!”
চাদনী হেঁসে বললো
-“ধুর! চাঁদ আনা যায়?”
-“যায় না। ভাইয়া চেষ্টা করবে। খুব করে চেষ্টা করবে। ওনার মা ওনার পুরো দুনিয়া!”
-“তুই তোর মা’কে মামুনি বলিস?”
রেহান কথা ঘুরিয়ে বললো
-“চল বৃষ্টির রিহার্সাল দেখতে যাই!”
বৃষ্টি আর ওর টিম রিহার্সাল করছিলো, হাসনা বিতর্ক প্র্যাকটিস করছিলো, সিয়ামও ছিলো সেখানে।
চাদনী আর রেহান কে যেতেই, বৃষ্টি ওঁদের দেখে দৌড়ে আসলো৷ চাঁদনীর হাত ধরে বললো
-“গানের কম্পিটিশনে তোর নাম দিয়েছিলাম আমি। তুই তো খুব সুন্দর গান করিস! তোকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম, তার আগে চলে এলি।”
চাদনী ছোটবেলা থেকে মোটামুটি ভালোই গান পারে। ওঁদের কে গল্পের ছলে বলেছিলো একবার।সেটার জের ধরে বৃষ্টি নাম দিয়েছে। চাদনী অবাক হয়ে বললো
-“কেন নাম দিয়েছিস? গান পারি, বাট সেটা কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করার মতো না। পাগল তুই, এতো গুণী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমি জিতবো?”
-“জেতাটা বড় ফ্যাক্ট না। পার্টিসিপেট করাটা বড়। মাঝে মাঝে আমাদের গেয়ে শোনাস না, আমার খুব ভালো লাগে। আর এখানে প্র্যাক্টিসও করতে পারবি, মেন্টর আছে। প্লিজ, না করিস না দোস্ত। আমি নাচ দিচ্ছি, তুই গান দে।
-“না, না প্লিজ। আমি পারবো না। আমার দ্বারা এসব হবে না।”
-“হবে। চেষ্টা করলেই হবে।”
রেহান বললো
-“হ্যাঁ। পারবি তুই। একটু চেষ্টা করলেই পারবি!”
-“ভাই না প্লিজ। এসবে আমি খুব কাঁচা!”
বৃষ্টি চাদনীর কথা শুনলো না। টেনে নিয়ে গেলো ওঁকে। গানে তেমন কেও নাম দেয়নি। চাদনী সহ মোট চারজন। ওঁদের কয়েকজন সিনিয়র গান শুনে ক্যান্ডিডেট বাছাই করছিলো।
চাদনীর নাম ধরে ডাকতেই চাদনী গেলো সেখানে। ওর খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছিলো। একটুও প্র্যাক্টিস করে আসেনি ও। করবে কী করে? জানতোই না ও এসব। কালচারাল প্রোগ্রাম হবে সেটা পর্যন্ত না। মেয়েটা নাম দিয়েছে ঠিক আছে, বোকা মেয়েটা একটাবার সে কথাটা জানাবে না ওঁকে। এখন প্র্যাক্টিস ছাড়া কি ছাতার মাথা গাইবে ও।
সিয়াম গিটার নিয়ে এসেছিলো, পশ দেখানোর জন্য। ও চাদনীর দিকে নিজের গিটার এগিয়ে দিলো। বললো
-“শুরু কর।”
চাদনী গতকাল রাতেই পুণর্জন্ম শুনেছিলো। ও সেটাই গেয়ে শোনালো। গান শেষ হলে সবাই হাত তালি দেয়।
ওঁদের একজন ক্লাসমেটও নাম দিয়েছে গানের জন্য। তবে সমস্যা হলো যে সিনিয়ররা বাছাই করছিলো সেখানকার একজন, মেয়েটার বড় বোন। স্বাভাবিক সে পার্শিয়ালিটি করে শুধুমাত্র তার বোন কে জেতাতে চাচ্ছে। চাদনী মেয়েটার চেয়ে সুন্দর গাইলেও, সিনিয়ররা সবাই মেয়েটার নাম ঘোষণা দিলো। অথচ চাঁদনীর বন্ধুরা বাদেও, উপস্থিত সবাই ভেবে রেখেছিলো চাদনী জিতবে। কথা-কাটাকাটি এমন পর্যায়ে গেলো যে ঝগড়া লেগে যায়। হাসনা তো একটা কথা ছেড়ে বলছে না।
মেয়েটার বড় বোন চোখ পাকিয়ে বললো
-“বেয়াদবি কেন করছো তোমরা? আমরা না তোমাদের সিনিয়র।”
-“সিনিয়র হলে সিনিয়রদের মতো আচরণ করতে হয়। এটা চিটিং হচ্ছে। আপনি তো পার্শিয়ালিটি করছেন। উপস্থিত সবাই শুনেছে, আমার ফ্রেন্ড ভালো গেয়েছে!”
-“সেটা তোমরা ডিসাইড করবা না। কোনো পার্শিয়ালিটি করা হচ্ছে না। স্যার রা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে, আমরাই যোগ্য কাওকে বাছাই করবো।বেয়াদবি করলে একদম প্রিন্সিপাল কে বলে দিবো।”
চাদনী হাসনাকে থামানোর চেষ্টা করে। হাসনা থামে না।
তবে মেয়েটার বলতে হলো না। ওঁদের চিল্লাপাল্লা শুনে প্রিন্সিপাল এসে ঢুকলো ক্লাসে। ওঁদের কথা থেমে গেলো। প্রিন্সিপালের সাথে রাত কেও আসতে দেখা গেলো, পিছনে একপাল ছেলেপিলে। বোঝায় যাচ্ছে, ওরা একসাথে কোথাও যাচ্ছিলো, চিৎকার চেচামেচি শুনে এখানে এসে ঢুকেছে।
-“কী হয়েছে মেয়েরা?”
প্রিন্সিপাল ওঁদের না ধমকে সুন্দর করেই প্রশ্ন করলেন। হাসনা কোনোকিছু না ভেবে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটার বড্ড সাহস! অভিযোগ ছুঁড়ে বললো
-“পার্শিয়ালিটি হচ্ছে স্যার!”
-“পার্শিয়ালিটি? কীভাবে?”
মেয়েরা আবার চেচামেচি শুরু করলে, প্রিন্সিপাল ঘটনার অদ্যোপান্ত জানতে পারলেন। সিনিয়রদের উদ্দেশ্যে গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-” এটা সত্যি?”
-“একদমই না স্যার। আমরা যোগ্য যে তাকেই বাছাই করেছি। ওরা ওঁদের ফ্রেন্ডদের জন্য সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করতেছে। ম্যানার্স নেই!”
রাত বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। ওর খুব বিরক্ত লাগছে। আজ কলেজে আসাটাই ভুল হয়েছে ওর। সুহাশ পাশ থেকে ফিসফিস করে বললো
-“আবরার ভাই, আপনাকে বদনাম করা মেয়েটা।”
চিবিয়ে ফেলবে এমন দৃষ্টিতে তাকালো রাত।সুহাশ ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিলো।
হাসনা উচু গলায় বললো
-“আপনারা যাকে বাছাই করেছেন, তার চেয়ে আমার ফ্রেন্ড বেশি যোগ্য! ওর গান বেশি সুন্দর হয়েছে।”
মেয়েটা মুখ বাকালো। তাচ্ছিল্য করে বললো
-“হ্যাঁ। খুব যোগ্যতা তোমার বান্ধবীর! যোগ্যতা গলে গলে পরছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা!”
হঠাৎ করেই মেয়েটার মুখ দিয়ে খুব বর্ণবাদী একটা কথা বের হয়ে গেলো।অপমানে চাঁদনীর সর্বাঙ্গে কাটা দেয়। ও হাসনা কে দৃঢ় গলায় বললো
-“আমি গান গাইবো না হাসনা। যথেষ্ট হয়েছে এবার বন্ধ কর!”
হাসনা প্রতিবাদ করে বললো
-“না, তুই নাম দিবি। একশোবার দিবি। তুই জিতেছিস, সুযোগ পাওয়ার অধিকারটাও তোর।”
আবারো শুরু হলো দু’দলের মধ্যে কথা-কাটাকাটি। অনেকে রাতের সামনে হাইলাইট হওয়ার জন্য একটু বেশিই প্রিটেন্ড করতে চাচ্ছে নিজেকে। প্রিন্সিপাল থামাতে পারছে না ওঁদের। তিনি রাতের দিকে তাকিয়ে বললেন
-“রাত তুমি বিরক্ত হচ্ছো না তো? ব্যাপারটা মীমাংসা করা দরকার।তুমি অফিসে গিয়ে বসো, আমি আসছি!”
রাত কপাল কুঁচকে, গম্ভীর স্বরে বললো
-“তোমরা এতো বেয়াদব কেন? টিচার পর্যন্ত মানছো না! সুন্দর করে কথা বলে, বিষয়টা মীমাংসা করা যায় না? এতো উগ্রতা তোমাদের? চিল্লাচ্ছো কেন এভাবে?”
সবাই চুপ করে তাকালো ওর দিকে।রাত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বললো
-“খুব সুন্দরী তুমি?সৌন্দর্য গলে গলে পরছে? মা-বাবা এসব শেখায়? মানুষ কে মানুস গণ্য করছো না! এতো শিক্ষিত হয়ে লাভ কিসের, মনুষ্যত্ব না থাকলে! একটা মানুষের যোগ্যতা বিচার করার তুমি কে? একে তো নিজের মানুষের জন্য পার্শিয়ালিটি করছো, আবার বড় বড় কথাও বলছো? এই গোবরে ঠাসা ব্রেইন নিয়ে সিটি কলেজে টিকলে কী করে?”
হেঁসে দিলো সবাই। মেয়েটা খুব অপমানিত বোধ করলো৷ রাত জোড় কন্ঠে বললো
-“সাইলেন্স! যে যোগ্য, বেস্ট কিছু পাওয়ার অধিকারও তার। যোগ্যতা কখনো সৌন্দর্যতার মারপ্যাচে আঁটকে যায় না।সুন্দরী না হয়েও নিজের যোগ্যতায় কোনো কিছু অর্জন করে নেওয়া অনেক বড় পাওয়া। আর হুরপরী হয়ে এই গোবরঠাসা ব্রেইন নিয়ে নখের সমান এটিটিউড দেখানোর কোনো মূল্য নেই! সিটি কলেজে পার্শিয়ালিটির কোনো জায়গা নেই। ফারদার যদি তোমার এমন উগ্রতার কোনো খবর আমার কাছে আসে, রেড টিসি পেতে দেরি হবে না তোমার!”
ক্লাসরুমের পরিস্থিতি থমথমে! চাদনী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। প্রিন্সিপাল, রাতের চ্যালাপালা রা ক্লাসরুম থেকে প্রস্হান নিয়েছে অনেক আগেই। তবে মেয়েটার চাদনী কে উল্টাপাল্টা কথা বলা থামেনি এখনো।চাদনী কে ওর বন্ধুরা স্বান্তনা দিচ্ছে। মেয়েটাকে তার বন্ধুরা স্বান্তনা দিচ্ছে। তবে অনুষ্ঠানের দিন গান গাওয়ার সুযোগটা চাদনীই পেয়েছে। হাসনা সেই নিয়ে বেশ খুশি। বিজয়ী একটা ভাব দেখা যাচ্ছে ওর চোখেমুখে। সিনিয়রদের সাথে জেতা চারটিখানি কথা না।চাদনী উঠে দাঁড়ালো। উদাস স্বরে বললো
-“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। তোরা বোস!”
চাদনী বেরিয়ে এলো। ওর মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। যেখানেই যায়, সেখানেই কেন এসব কথা শুনতে হয় ওঁকে? কেন ওর রূপের নিচে ওর গুণটা চাপা পরে যায় সবসময়?”
চাদনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে, রেলিং ধরে দাড়ালো। সিঁড়ির কাছে যেতেই রাত কে উঠতে দেখা গেলো। চাদনী আঁড়চোখে তাকিয়ে নিচে নামতে গেলো। রাত গম্ভীর স্বরে বললো
-“তোমার পায়ের অবস্থা কেমন এখন?”
চাঁদনী থেমে যায়। পিছু ফিরে বলে
-“ভালো!”
রাত আর কিছু বললো না। চাদনী একটু চুপ থেকে বললো
-“ধন্যবাদ ভাইয়া!”
-“ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমার কলেজের স্টুডেন্টদের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার।”
চাদনী নামতে গেলো। রাত বললো
-“নাম কী তোমার?”
-“চাদনী!”
-“শুধুই চাদনী?”
-“আনতারা শিকদার চাদনী!”
-“সুন্দর নাম। তুমি খুব ভালো গান গাও।”
চাদনী খুশি হয়ে বললো
-“আপনি আমার গান শুনেছেন?”
-“হু! আমরা প্রিন্সিপালের সাথে ওখানেই দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম।”
চাদনী হাসলো।
-“মিস চাঁদনী, মিস অর মিসেস?বিয়ে হয়েছে?”
চাদনী হ্যাঁ বলতে গিয়েও বললো না। এ শহরে আঁধারের বন্ধুরা ছাড়া আর কেও জানে না ও বিবাহিত।এমনকি ওর বন্ধুরা পর্যন্ত না। আঁধার পছন্দ করে না ওর পরিচয় দিতে। কলেজে ভর্তির দিনই শাসিয়ে বলে দিয়েছে, চাদনী যাতে কখনো না বলে ও বিবাহিত। আঁধার কখনোই ওর হাসবেন্ড হিসেবে কলেজে আসতে পারবে না। আসলে, আসবে গার্ডিয়ান হিসেবে। যেহেতু ঢাকাতে ওঁদের কেও নেই। চাদনী মুখ নামিয়ে বললো
-“না!
-“হুম,ছোট মানুষ! এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে না এটাই স্বাভাবিক!”
-“ছোট, তাই বিয়ে হয় না এমন না!”
-“তাহলে?”
চাদনী মলিন হেসে বললো
-“আসলে আমাকে কেও চয়েস করে না। কালো তো!”
-” এভাবে বললে কেন? এ টাইপের মানুষগুলোকে আমার একদম পছন্দ না, যারা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সৌন্দর্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না! নিজেই তো নিজেকে ভালোবাসতে পারোনি। আরেকজন ভালোবাসবে কী করে? আগে নিজেকে প্রায়োরিটি দিতে শেখো, দেখবে মানুষও চয়েস করছে!”
কাজলরেখা পর্ব ১৬
-“সবাই যে বলে, না চাইতেও নেগেটিভ ভেবে ফেলি। কনফিডেন্স রাখতে পারি না নিজের উপর।”
-“তুমি মানুষের কথা শুনবে কেন! তবে আমার মত কী জানো, বিয়ে না করাই ভালো। এ বিয়ে নামক শব্দটাই একটা স্ক্যাম! প্রথম প্রথম ভালোবাসা দেখিয়ে মানুষ, ঠিকই শেষমেশ পিছন মা*রা দিয়ে চলে যায়!”
চাদনী ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে থাকে। রাত উপরে উঠতে উঠতে বললো
-“যাও! আর কখনো আমার সামনে আসবে না!”
চাদনী বলদের মতো তাকিয়ে থাকলো।বিভ্রান্ত স্বরে বললো
-“আজব মানুষ!