কাজলরেখা পর্ব ১৭
তানজিনা ইসলাম
ভার্সিটির ক্যান্টিনটা নির্জনতায় ঘেরা।আঁধার আর ওর বন্ধুরা বসে আছে ক্যান্টিনে।
প্রতিটি টেবিল বুকড।গল্পে মশগুল সবাই।মৃদুস্বরে আলোচনা চলছে সব টেবিলে।উপরে পাখির কলরব।পরিবেশটা সুন্দর,স্নিগ্ধ। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।
ভার্সিটিতে আঁধারের রোমিও নামে একটা টাইটেল আছে। সেটা সুখ্যাতি না দুর্নাম বোঝা যায় না। তবে আঁধারের জন্য সেটা ফ্লেক্স করার একটা বিষয়। ক্লাসের একটা সুন্দরী মেয়ের সাথেও, ও রিলেশনে যাওয়া বাদ রাখেনি। সবাই কে একবার অন্তত হলেও মারা দেওয়া শেষ ওর। কতজন জুনিয়র কে যে মুরগী বানিয়েছে, এ পর্যন্ত তার হিসেব নেই। ওরা এবছর ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট। পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। সবাই জানে আঁধার এ জন্য সবার সাথে প্রেমের ইস্তফা ঘটিয়েছে। আসলে বিষয়টা অন্য। বিবাহিত হয়ে অন্য কারো সাথে মজার ছলে হলেও সম্পর্ক রাখা আঁধারের যায় না। কেমন যেন নিজের প্রতি ক্যারেক্টারলেস ফিল আসে! আঁধার চায় না সেটা। তবে ওর বন্ধুরা বাদে কেও জানো না ও বিবাহিত। বিষয়টা গোপন। খুব গোপন!
ফার্স্ট ইয়ারে রিসেন্ট একটা মেয়ে এসেছে। মেয়েটা সুন্দর তবে একটু বোকাসোকা। দিনদুনিয়া বোঝে না অতটা। চোখে চশমা দেওয়া। চুলগুলো সবসময় মাঝ বরাবর সিঁথি করে, চটচটে ভাবে তেল দিয়ে রাখে। শাবিহা ওর নাম দিয়েছে তেলচুকচুকে। আঁধার একবার ওর সাথে মজার ছলে ফ্লার্টিং করেছিলো। সেই থেকে মেয়েটা এমনভাবে উষ্ঠা খেয়ে পরেছে ওর উপর। আঁধার মাথা ঘামায়নি এসব নিয়ে। ও যেমনই হোক, সবসময় মাথায় রাখে ও বিবাহিত। চাঁদনী কে বউ হিসেবে না মানলেও, মেয়েটার নামে তিন কবুল বলে ফেলেছে ও। সে কবুলের দাম আছে!
বাট আজ খুবই আনএক্সপেক্টেড একটা ঘটনা ঘটেছে ওর সাথে। মেয়েটা ডাইরেক্ট এসে লাভ লেটার দিয়ে দিয়েছে ওঁকে। আঁধার হ্যাঁ, না কিছু বলার সময়ই পায়নি। ডাইরেক্ট হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওর। আঁধার একজীবনে অনেক প্রপোজাল পেয়েছে। ওর মনটা খুব বড়! তাই সুন্দরী দেখলেই কখনো ফিরিয়ে দিতে পারতো না। সবারটাই এক্সেপ্ট করতো, সবাইকে জায়গা দিতো মনে। বাট এমন ওয়্যার্ড প্রপোজাল আজ পর্যন্ত পেয়েছে বলে মনে পরে না।
আঁধার মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ওরা যে টেবিলে বসেছে, ওঁদের পাশে অল্প দুরেই মেয়েটা বসা। কিছুক্ষণ পরপর আঁড়চোখে আঁধার কে দেখছে। আবার লজ্জা পেয়ে মাথা নোয়াচ্ছে। আঁধার কপাল কুঁচকে,মুখ লটকে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ওর বন্ধুরা ঠোঁট টিপে হাসছে।শাবিহার এই নিয়ে অনেকবার আঁধারকে পিঞ্চ মারা হয়ে গেছে। আমান হাসি আটকাতে না পেরে অট্ট হাসলো। সাথে ওর সব বন্ধুরা জোরে হেঁসে দিলো। অনেক্ষণ ধরে হাসি আঁটকে রেখেছে ওরা। আধার টেবিলে বারি মেরে বললো
-” ফালতুমি করার জায়গা পাস না জানো*য়ারের দল!”
শাবিহা দাঁত দেখিয়ে হেঁসে বললো
-“ইশ রে, অন্ধকার।! খুব মানাবে তোর সাথে। একেবারে সোনায় সোহাগা, ছকিনার বয়ফ্রেন্ড!”
আঁধার নাক ফুলিয়ে তাকালো ওর দিকে। তটিনী বললো
-“আমাদের অন্ধকারের মন তো খুব বড়। সব মেয়ে সুন্দর করে এঁটে যায়। আই থিংক ওকেও ফেরাবে না!”
-“তটিনী চুপ কর।ঘি*ন লাগতেছে আমার।”
-“কেন ঘি*ন কেন লাগতেছে।সত্যি বলছি রে, খুব সুন্দর মানাবে তোর সাথে! তুই না ফর্সা খুঁজোস। দেখ, মেয়েটা ফর্সা।চুন্দরী! তোমার ডিরিম রাজকুমারী!”
শাবিহা ব্যঙ্গ করে বললো। আঁধার অতিষ্ঠ হয়ে বললো
-“এমন ফর্সাও চাওয়ার ছিলো না রে বাপ। আর আমার বিয়ে হয়ে গেছে। কেন একটা মেয়ের শিপ করছিস তোরা আমাকে? করছিস তো করছিস তাও এর সাথে?
মানে শিপ করার জন্য আর মানুষ পায়লি না? লেভেল আছে কোনো ওর?”
শাবিহা মুহুর্তেই নিজের খোলস বদলে ফেলে। হাসিমুখে একরাশ হিংস্রতা ঢেলে বললো
-“তোর বউয়ের খুব লেভেল? আসমান থেকে নেমে আসা হুরপরী তোর বউ?”
আঁধার তর্জনী উঁচিয়ে বললো
-“চুপপপপ।একদম চুপ।খবরদার! চাদনী কে নিয়ে কিছু বলবি না শাবিহা।”
-“খারাপ লাগছে? তুই আরেকজন মানুষকে নিয়ে এভাবে গসিপ করছিস যে সে বেলায়? মানুষকে নিয়ে এভাবে তাচ্ছিল্য করা উচিত না! তোর তো নিজের উপর খুব কনফিডেন্স। এতো কনফিডেন্স দিয়ে কী হলো বল, নিখুঁত মানুষ পেয়েছিস? তোর বউয়ের চেয়ে এটলিস্ট ফর্সা আছে!”
খুব কম সময়ের মধ্যেই শাবিহা যেন মাদার তেরেসা হয়ে উঠলো।অথচ মেয়েটা কে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বেশি ও-ই করছিলো। আঁধার মুখ কালো করে বললো
-“বেশি বেশি বলে ফেলছিস না? আমরা জাস্ট মজা করছিলাম,সিরিয়াস কিছুই না!”
-“একটা মানুষকে সবার সামনে তার পার্সোনালিটি নিয়ে বেইজ্জত করা সিরিয়াস কিছু না, তাই না? অন্ধকার, সারাজীবন মানুষের কমতি-খামতি গুলো নিয়ে মজা করেছিস তুই।তোর জীবনসঙ্গী কেমন সেটাও একটু ভাব? কালো রঙে এলার্জি ছিলো তোর, অথচ শেষে একটা কালো মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো তোকে। তুই নিজের লেভেলটা কোথায় নামিয়েছিস দেখ একবার। অথচ আরেজনের লেভেল নিয়ে মজা করছিস! শা*লা বর্ণবাদী!”
আমান বাগড়া দিলো। নয়তো দেখা গেলো দু’জনের মধ্যে এক্ষুনিই তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো। পরিস্থতি শান্ত করতে বললো
-“হয়েছে থাম! মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর। চাঁদনীও খুব মায়াবী। সবাই কে আল্লাহ তায়ালা সুন্দর আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন।তার সৃষ্টি নিয়ে সমালোচনা করার স্পর্ধা আমরা দেখাতে পারিনা। দুই মেয়ের, কারো মধ্যেই কোনো সমস্যা নেই। আসল সমস্যা তো এই অন্ধকারের মধ্যে। শা*লা, লু*চ্চা! সবার সাথেই ফ্লার্টিং করতে হবে তোকে তাই না!মেয়েটার ভালোবাসা কী অপরাধ রে? একটু স্মার্ট হলেই এতোক্ষণে এতো ফেইড আপ হয়ে যেতে না তুমি! এতো মিন তুই! কোনদিন যে এসবের জন্য পেঁ*দানি খাবি ভেবেই আমার চিন্তা হচ্ছে!”
হাসতে থাকলো সবাই ওর উপর। আঁধার নিজেও ওঁদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো। অথচ সবার অদৃষ্টে, অপমানে জর্জরিত হয়ে, মনে মনে বললো
-“উফ চাদনী! তোর জন্য সব জায়গায় অপমানিত হতে হচ্ছে আমাকে।আর কিভাবে নিচু করবি তুই আমাকে!
চাঁদনীর কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে আজ খুব দেরি হয়ে গেছে।ও কখনো বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার করে ফেলেনি। কিন্তু আজ মাগরিবের আজনের পর ও অ্যাপার্টম্যান্টে ঢুকলো। ওর বন্ধুরা সবাই মিলে পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলো। চাদনী যেতে চায়নি, টেনেটুনে নিয়ে গেছে ওঁকে। ও বলেছিলো সন্ধ্যার আগে যে করেই হোক ওঁকে বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু ওঁদের সাথে থাকতে থাকতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো ও বুঝতে পারলো না। মাগরিবের
আজান শোনার পর হুশ ফিরলো ওর। চাদনী খুব ভয় পেয়েছিলো। আঁধার কে ফোন করতে ইচ্ছে করছিলো খুব করে। ও কখনো সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকেনি। চাদনী তবুও আঁধার কে ফোন করেনি। এমনিতেই ওর চিন্তায় অবস্থা খারাপ, বাঁশ খেয়ে আরো অবস্থা খারাপ করতে ইচ্ছে করেনি ওর। যদিও রেহান বলেছিলো ওর গাড়ি করে চাদনী কে বাড়ি পৌঁছে দেবে। চাদনী রাজি হয়নি। ও কারো সাহায্য নেবে না।শেষমেশ একাই বাড়ি ফিরেছে।
সদরদরজা খোলা দেখতেই কপালে ভাজ পরলো চাদনীর। আঁধার তো এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে না।দরজা খোলা কেন? চাদনী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো আঁধার বসে আছে সোফায়। মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।
ওঁকে দেখতেই উৎফুল্ল হয়ে বললো
-“আররে! এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন আপনি, ম্যাডাম? এতো তাড়াতাড়ি কেও আসে? মাত্র সন্ধ্যা ছয়টা বাজে! একেবারে রাত হলে আসতেন! বোকা মেয়ে!”
হাসি মুখে দেওয়া সুক্ষ্ম বাঁশ টুকু নিরবে হজম করে নিলো চাদনী। সাফাই দিয়ে বললো
-“ইচ্ছে করে লেইট করিনি! তুমি যখন লেইট করে আসো, আমি তোমাকে কিছু বলি? মাঝে মাঝে তো রাত দশটা পার হয়ে যায় তোমার আসতে আসতে। তাহলে আমার বেলায় কেন, তুমি আমাকে কথা শোনাবে?”
আঁধার অহং নিয়ে বললো
-“তুই আমাকে কথা শোনানোর কে?”
-“তুমি কে?”
-“জানিস না আমি কে? আমি তোর প্রেজেন্ট হাসবেন্ড। ঢাকা শহরে তোর একমাত্র গার্ডিয়ান।”
-“নিজের বেলায় ষোলো আনা! অন্যের বেলায় চার আনাও না।”
-“হ্যাঁ,তাই।”
-“ছেলে মেয়ের সমান অধিকার! জানো না তুমি?”
-“নাহ তো। জানতাম না। লেইট কেন হলো? কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?”
-“কোথায় থাকতে পারি?”
-” ছেলেদের সাথে ঘোরার তো চান্স নেই।তোরে কোনো ছেলেই চয়েস করবে না।”
চাদনী সরাসরি প্রশ্ন করলো
-“চিন্তা হচ্ছিলো আমার জন্য?”
-“তো! হবে না? সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে আসে। অন্ধকারে তোকে দেখা যায় না। হারিয়ে গেলে, আমি চাচ্চুকে কি জবাব দিতাম!”
চাঁদনী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মুখ বাজাতে ইচ্ছে করছে না একটুও। পায়ের ব্যাথায় মাথা ঘুরে পরে যাওয়া বাকি ওর। পুরোদিন এতোটা খবর হয়নি। হচ্ছেমতো ক্ষত পা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছে৷ হাঁটু তে বেন্ডেজও লাগায়নি। এখন এসে শরীরের প্রতিটা গিটেগিটে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। পায়ের টনটনে ব্যাথা ছড়াচ্ছে পুরো অঙ্গে। গেইট থেকে এখান পর্যন্ত কী করে হেঁটে এসেছে সেটা শুধু ও-ই জানে।খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে আসার চেষ্টা চালালো চাঁদনী। আঁধার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। বললো
-“কী হয়েছে তোর পায়ে?”
-“কিছু না।”
-“আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কিছু একটা হয়েছে পায়ে। বেন্ডেজ কেন বেধেছিস?চাদনী! দাঁড়া।”
চাদনী উত্তর না দিয়ে সিড়ির কাছে যেতে গেলো। ওর হাঁটতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তবুও সে আঁধারের সাহায্য নেবে না। অতো রাস্তা যখন একা হেঁটে আসতে পেরেছে। সিঁড়িটাও একা বইতে পারবে। আঁধার উঠে দাঁড়িয়ে থাবা দিয়ে ধরলো ওঁকে। দু-হাত ধরে চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেলো সোফার কাছে। চাদনী চেচালো
-“দাদাভাই, ছাড়ো আমাকে৷ ছাড়ো বলছি! কী সমস্যা তোমার?”
আঁধার ওঁকে টেনেটুনে সোফায় বসালো। ব্যাথায় চাদনীর কোটরে অশ্রু জমে।টলমলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ও
-“এভাবে টানাহেঁচড়া করছো কেন? এবার বোধহয় পা’টা ভেঙেই যাবে আমার!”
আঁধার ওর পাশে বসে ধমকে বললো
-“এতো অবাধ্য কেন তুই চাদনী? আমার একটা কথা শুনলে জাত যায় তোর? পা দেখা।দেখি কী হয়েছে। বেন্ডেজ কেন?”
-“তোমার ভাবার বিষয় না! ছাড়ো আমাকে।”
আঁধার ওর হাতের মুঠোয় চাঁদনীর চুল পেঁচিয়ে নিলো। শাসিয়ে বললো
-“একটা চিল্লানি দিবি, চুল সব আমার হাতে চলে আসবে। নাপিতের টেকো বউ বানিয়ে দেবো একদম।”
চাঁদনী কে দুর্বল বানানোর জন্য আঁধারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, চাঁদনীর চুল টেনে ধরা। আগে গাঁয়ের রং নিয়ে খোঁটা দিতো। এখন এসব চাদনী আমলে নেই না। শুনেও শোনে না। তাই এখন আঁধারের ট্রিকস একটাই।
আঁধার সবসময় চাঁদনীর চুল টেনে ধরে ওঁকে দুর্বল বানিয়ে দেয়।নয়তো চাদনী আধারের কাছে ভীষণ রকমের দস্যি!
চাদনী মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলো।
আঁধার দু’হাতে ধরে সোফার উপর চাঁদনীর পা তুললো। চাদনী টানটান করে পা টেনে দেয়। সোফার মাথায় হেলান দিয়ে বসে। হাঁটুতে ব্যাথাটা ভীষণ বেড়েছে।ভাজ করলেই ব্যাথা পাচ্ছে।
আঁধার বেন্ডেজের উপর হাত বুলালো।
-“কী হয়েছে পায়ে?”
চাদনী উত্তর দিলো না।আঁধার বেন্ডেজ খুলে ফেললো। বুড়ো আঙুলে জখম হয়েছে, রক্ত জমাট বেঁধে আছে সেখানে। আঁধার রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“কীভাবে হয়েছে?”
-“সিঁড়ি থেকে পরে গিয়েছিলাম!”
-“সবসময় চালাচালি করা জরুরি চাঁদ? চোখ হাতে নিয়ে হাঁটোস? দেখতে পাস না? কী অবস্থা করেছিস নিজের?”
চাদনী ভেজা গলায় বললো
-“প্লিজ, আর বাঁশ মেরো না৷ পুরোদিন অনেক বাঁশ খেয়েছি।আমার অবস্থা শেষ।মনে হচ্ছে মরে যাবো!”
চাদনী আজ একটা সালোয়ার পরেছিলো। ওর পাজামায় হাঁটুর কাছে ভেজা।আঁধার হাঁটুর উপর হাত দিয়ে বললো
-“হাঁটু ভেজা কেন?দেখি পেন্ট উপরে তোল?”
চাদনী হকচকিয়ে বললো
-“পেন্ট কেন উপরে তুলবো? কী করবে তুমি?”
আঁধার চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“ওরে অশ্লীল! কতটা ব্যাথা পেয়েছিস দেখবো! কি কি ভেবে নেস ভাইরে ভাই! কম বয়সে মোবাইল পেয়ে মাইন্ড একদম ডার্টি হয়ে গেছে তোর! ছি*হ!”
-“খুববব সুশীলতা তোমার? এতো সুশীল হলে বুঝলে কি করে, আমি কী মিন করেছি!”
-“এই অবস্থায়ও মুখ চালানো জরুরি! দেখি পেন্ট উপরে তোল?”
-“না! আমি অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নেবো।”
-“দেখতে দে আমাকে।”
-“তুমি দেখে কী করবে, তুমি ডাক্তার?”
আঁধার পাজামায় হাত দিয়ে তুলতে গেলো।চাদনী ওর হাত ধরে বললো
-“না প্লিজ!”
চাদনী জীবনেও পারবে না আঁধারের সাথে।এটা ওর জানা কথা। আঁধার হাটুর উপরে পাজামা তুলে দেখলো হাঁটুর অবস্থা আরো খারাপ। চামড়া উঠে মাংস দেখা যাচ্ছে, থকথকে রক্ত শুকিয়ে আছে।
চাঁদনীর লজ্জা লাগে। লজ্জায় নিজের অবস্থা নিয়ে হাহুতাশ করার সুযোগ টা পায় না ও।আঁধার ভ্রু কুঁচকে বললো
-“লজ্জা কেন পাচ্ছিস তুই, হুম?আমি কী বাইরের কেও?তোকে ডাইপার পরা অবস্থায় দেখেছি আমি। কোলে নিয়েছি, ডাইপার চেঞ্জ করে দিয়েছি তোর।কতোবার আমার কোলে শিশি করে দিয়েছিস তুই!”
চাদনী বিমূঢ় স্বরে বললো
-“থামো! ছোটবেলার ব্যাপার আর এখন কী এক?”
-“এক না?”
-“না। এখন আমি বড় হয়ে গেছি। অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে আমার মধ্যে।”
আঁধার নাক কুঁচকে বললো
-“আচ্ছা,দেখাতো কী কী পরিবর্তন এসেছে তোর মধ্যে!”
-“দূরে যাও।”
আঁধার বাঁকা হাসলো। চাদনী কে জ্বালানোর জন্য ওর সালোয়ার ধরে টেনে বললো
-“দেখা, দেখা বলতেছি। কই আমি তো কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না! স্পেসিফিকলি দেখা, বুঝতে পারছি না!”
-“এই কাছে আসবে না একদম। ছি*! আমাকে অ*শ্লীল বলে নিজে কি করতেছো! দূরে যাও, দূরে যাও বলছি!”
আঁধার চাদনীর পা ধরে রাখলো। বিমর্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“কতটা ব্যাথা পেয়েছিস চাঁদ! একটু দেখেশুনে হাঁটবি না!”
-“আমার পুরো গায়ে ব্যাথা করতেছে। উফ! অনেক কষ্ট!”
-“শুকরিয়া কর আরো। সিড়ি থেকে পরে যে তোর শরীরের হাড্ডি সব ভেঙে যায়নি এটাই রক্ষে!”
চাদনী উদাস স্বরে বললো
-“দ্যা ক্রেডিট গোস টু নেতা সাহেব!”
আঁধার ভ্রু কুচকে বললো
-“নেতা? এখানে আবার নেতা আসলো কোত্থেকে?”
-“এখানে আসে নাই আধার ভাই।পুরো কাহিণী জুড়েই তে উনি। আমি সিড়ি থেকে ধুপ করে পরে যাচ্ছিলাম। উনি হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়ে আমাকে ধরে ফেললেন। একেবারে ফিল্মি স্টাইলে।”
-“নেতা তোরে ধরছে? তুই ধরতে দিলি? এতো বেডি থাকতে নেতাকে তোর সামনেই আসতে হলো।”
আঁধারের চাদনীর জন্য কনসার্ন মুহুর্তেই উবে গেলো। ও নাক ফুলিয়ে তাকালো চাদনীর দিকে।
-“উনি তো ইচ্ছে করে ধরেনি! আমিও ইচ্ছে করে ওনার গায়ে গিয়ে পরিনি। এটা জাস্ট কোইন্সিডেন্স! আর সবচেয়ে উর্স্ট কি জানো, উনি আমাকে গায়ে পরা মেয়ে বলেছেন। যেখানে আমার কোনো দোষই ছিলো না!”
-“ভালো বলছে একদম। ঠিকই তো। বিবাহিত হয়ে যারা বেগানা পুরুষের গায়ে গিয়ে পরে তারাতো গায়ে পরাই। ফার্স্ট টাইম আমি ওনার সাথে একমত হলাম।”
ক্রুদ্ধ স্বরে বললো আঁধার। চাদনী মুখ কালো করে বললো
-“ইচ্ছে করে তো পরিনি। নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম!”
-“না বাঁচাতি!দরকার হলে পরে হাত পা ভাঙতি। শরীরের সব হাড্ডি ভেঙে যেতো। হসপিটালে মাসকে মাস বেডরেস্টে থাকতি। তারপরও তুই আরেকটা ছেলেকে নিজেকে ধরতে দিবি কেন?”
চাদনী বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আঁধারের দিকে।আঁধারের মুখের এক্সপ্রেশন বোঝা যাচ্ছে। চাদনী হুট করেই বললো
-“আঁধার ভাই, আর ইউ জেলাস?”
-“নাহ! আঁধারের জেলাসি এতো সস্তা না, যে যার তার জন্য ফিল হবে। শুধু তোর কলিজাটা টান দিয়ে বের করে দেখতে মন চাচ্ছে।”
-“তোমার মুখ লাল হয়ে গেছে!”
আঁধার পাঁজা কোলে তুললো চাদনী কে। চাঁদনী আঁধারের বুকের দিকের শার্ট মুঠো করে আঁকড়ে ধরে বললো
-“কোলে কেন তুললে তুমি আমাকে? নামাও, আমি হেঁটে যেতে পারবো!”
-“গোসল দিতে হবে তোকে। পরপুরুষের ছোঁয়া লেগেছে তোর গায়ে! নোংরা হয়ে গেছিস!”
-“আর কিছু বলার বাকি আছে আমাকে আঁধার ভাই? শেষমেশ নোংরাও বলে ফেললা!”
চোখের কার্ণিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়ায় চাঁদনীর।
আঁধার এক পা এক পা করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে।ব্যকুল স্বরে বলে
কাজলরেখা পর্ব ১৬ (২)
-“আমি আমার পবিত্র একটা সত্বাকে কি করে নোংরা বলতে পারি! বলেছি নোংরা লেগেছে, এর মানে এই না তুই নোংরা। আমি জানি তুই কেমন! এটা এতো ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। আকাশের চাঁদের গায়ে কলঙ্ক আছে চাঁদনী! কিন্তু আমার চাঁদের গায়ে আমি কোনো কলঙ্ক লাগতে দেবো না!”