কাজলরেখা পর্ব ২
তানজিনা ইসলাম
কক্ষের অবস্থা বেহাল!সুনামি বয়ে গেছে যেন! দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে শিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদনী!ভয়ে বুক কাঁপছে!একটু আগেই ওর কাজিনরা মিলে আঁধারের কক্ষে ঢুকিয়ে দিয়েছে ওঁকে। তবে কক্ষের অবস্থা কেমন তা বর্ণনার বাকি রাখে না।ড্রেসিংটেবিলের কাঁচ ভেঙে, ফুলদানির ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে মেঝেতে।ছেড়া কুশনের তুলো মেঝেতে বিছানো।কারো আগ্রাসী ভয়ঙ্কর রাগ যে সুন্দর কক্ষটার উপর দিয়ে বইয়ে গেছে তা অনুভব করতেই শিরদাঁড়ায় শীতলতা বইয়ে গেলো চাঁদনীর।
সুন্দর কক্ষটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে যেন। কক্ষের যে অবস্থা হয়েছে,একটু পর যে চাঁদনীর এ অবস্থা হবে না তার কী গ্যারেন্টি!কক্ষের মালিক নিজের পছন্দের কক্ষের এ অবস্থা করতে পারলে তাহলে ওর মতো অপছন্দের কী হাল করবে!
বেলকনি থেকে কথার শব্দ ভেসে আসছে!চাঁদনী বুঝলো আঁধার ওখানেই আছে।তবুও এসব ভাঙা জিনিস মাড়িয়ে সামনে যাওয়ার সাহস হলো না ওর।
আধারের কথা থেমে গেছে।গটগট পায়ে কক্ষে ঢুকছে ও।চাঁদনীর হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি চুড়ান্ত হলো।বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে ওর হৃদপিণ্ড লাফানোর শব্দ।
আঁধার কক্ষে আসতেই ওঁকে দেখে থেমে গেলো। হাতে মোবাইল ধরা।চাদনী কে দেখতেই মোবাইলটা ছুড়ে মারলো বিছানার উপর।দ্রত পায়ে চাঁদনীর কাছে এগিয়ে এলো আঁধার!
চাঁদনীর বাহু আঁকড়ে ধরে ঠাস করে দেওয়ালের সঙ্গে বারি খাওয়ালো! চাঁদনীর মনে হলো ওর মেরুদন্ড হয়তো মড়মড় করে ভেঙে গেছে!আঁধার গলা চেপে ধরলো ওর! হিসহিসিয়ে বললো
-“বেয়াদব! এতো শখ আমাকে বিয়ে করার।আমাকেই পেয়েছিলি গলায় ঝুলতে।যে গায়ের রং আর কেও বিয়ে করতো না তো তোকে,তাই পরিবারের সবাই মিলে আবার উপরই গছিয়ে দিয়েছে।”
চাঁদনীর শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো।চোখ উল্টে আসলেও টু শব্দ করলো না ও।ছেড়ে দেওয়ার আকুলতাও জানালো না!চাঁদনীর অবস্থা দেখে আঁধার নিজেই ছেড়ে দিলো ওঁকে।
কাশতে কাশতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে গেলো চাদনী!দু’আঙ্গুল দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে কপালে স্লাইড করলো আঁধার।শক্ত গলায় বললো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“অর্পিতা কোথায়? কার সাথে ভেগেছে ও?মেঝোমা বললো তুই সাহায্য করেছিস ওঁকে, এটা কী সত্যি? উত্তর দে।যদি এটা সত্যি হয় তোকে জিন্দা কবরে পুতবো আমি।এসব আগে থেকেই প্ল্যান ছিলো তোর তাই না?অর্পিতা কে পালাতে সাহায্য করে আমার সাথে বিয়ে করতে বসেছিস।জানতিস আর কারো রুচিতে ধরবে না তোকে।তাই ছলাকলা করে আমাকে বিয়ে করার জন্য বড়দের টোপ হিসেবে ব্যবহার করলি!”
চাঁদনী দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে!বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা!
আঁধার এক দৃষ্টে চেয়ে থাকলো চাঁদনীর দিকে!মেয়েটার অবস্থা দেখে একটুও কষ্ট হচ্ছে না ওর।উল্টো পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে বুকের ভেতর। আরেকটু কষ্ট দিতে পারলে ভালো লাগতো!
আঁধারের এসব ভাবনার মাঝেই,আচমকাই উঠে বুকের উপর দু’হাতে ধাক্কা বসালো চাঁদনী।দু’পা দুরে সরলো আধার।অবাক হতেও ভুলে গেলো যেনো ও।একাধারে ফুঁসছে চাঁদনী!চোখদুটো লাল হয়ে আছে।সাথে কোটরে অশ্রুর উপস্থিতি। কাঁপতে কাঁপতে বললো
-“নিজেকে কী মনে করেছো তুমি? সুন্দর একটা চেহারা আছে বলে যাই নয় তাই বলবে আমাকে।হ্যাঁ, আমি কালো।মানছি, মানছি।দোষ করেছি আমি কালো হয়ে জন্ম নিয়ে।এই সমাজে কালো দের ভালো ভাবে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।আমি নিজের সব দোষ মাথা পেতে নিলাম।কিন্তু আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না তোমাকে বিয়ে করার।বড় বাবা হাত জোর করে অনুরোধ করেছে আমাকে।তার কথা ফেলতে পারিনি আমি।বড় অন্যায় করে ফেলেছি মানছি।কিন্তু!কিন্তু, তুমি কেন বিয়ে করলে?প্রথমে তো চলেই যাচ্ছিলে, যাওনি কেন? থেকে গিয়ে বিয়ে করলে কেন? সারাজীবন খোঁটা দিতে?তুমি ছেলে হয়ে নিজের পরিবারের মানুষগুলোকে মানাতে পারোনি, আমি মেয়ে হয়ে কী করে পারতাম! অর্পিতা আপুর সাথে আমার কেমন সম্পর্ক সেটাও জানো তুমি। সে আমাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না, অথচ আমার থেকেই কিনা সাহায্য নেবে!সেটা সবাই বিশ্বাসও করছে।অপবাদ দেওয়ার বেলায় সবকটা@ ওস্তাদ।
হাহ! সবাই পেয়েছো টা কী আমাকে? যার যা ইচ্ছা তা-ই।সবার কথা মুখ বুঁজে সহ্য করতে হবে? আমার কোনো ইমোশন নেই?আমি মানুষ না?পুতুলের মতো নাচাচ্ছো কেন সবাই মিলে?”
চোখমুখ লাল হয়ে গেছে চাঁদনীর।চোখের কাজল লেপ্টে বিশ্রী অবস্থা হয়ে গেছে।আঁধার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে।মেয়েটার কোনো কথায়ই প্রভাব ফেরতে পারলো না ওর উপর।অহংকারে বুদ আঁধার চাঁদনীর কষ্টের একাংশ ও অনুভব করতে পারলো না।শুধু গম্ভীর গলায় বললো
-“এসব সেন্টি মারা কথা তুই নিজের কাছেই রাখ!তোকে কে কী বলে, কেন বলে এসব আমার ভাবার বিষয় না।ইট’স নট মাই রেসপন্সিবিলিটি! আমি তোকে কোনোদিন স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না!স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করিসও না!”
-“তোমার স্ত্রী হতে বয়ে গেছে আমার।নেহাত বড়বাবা তোমাকে বিয়ে করতে অনুরোধ করেছিলো আমাকে।যে মানুষটার কাছে ছোট থেকে বড় হয়েছি তার কথা ফেলতে পারিনি।নয়তো আমার বাপ-জেঠার কাছে কম টাকা নেই, একটা রাজপুত্রের মতো স্বামী পেতে বেশি কসরত পোহাতে হতো না আমাকে।”
-“টাকা দিয়ে স্বামী কিনতি?”
-“হু,কিনতাম।তাতে তোমার সমস্যা?”
-“সে তো তোর সাথে টাকার জন্য থাকতো!তোকে ভালোবাসতো না!”
-“এখনও বা কী ভালোবাসা পেয়ে উল্টে যাচ্ছি, বলো!”
নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আঁধার।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“এই রুমে থাকবি?”
-“হু!সবাই ঠেলেঠুলে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে।মেনে না নাও, বিয়েতো করেছো।নিজের ভাগ না দিলেও তোমার জিনিসের ভাগ দিতে হবে!”
-“না দিলে কী করবি?”
-“মামলা ঠুকবো!”
-“কীসের?”
-” নারী নির্যাতনের!”
-“ডরাই না তোকে!আমাকে এতোটাও আন্ডারেস্টিমেট করিস না!”
-“পুলিশের ডান্ডার বারি পরলেই ডরাবা!”
আঁধার ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থাকলো।কুটিল হাসলো চাঁদনী !সামনে দাঁড়ানো আঁধার কে উপেক্ষা করে,কাঁচ থেকে সাবধানে পা ফেলে বেডসাইডে গেলো।ব্যাগ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
বিছানার উপর গিয়ে বসলো আঁধার! ওয়াশরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে গালি ছুড়লো কয়েকটা।
লেহেঙ্গা বদলে, একটা বাদামী রঙের সুতির থ্রি পিস পরে আসলো চাঁদনী!আধার তখনও বিরস ভঙ্গিতে বেডের উপর বসে ছিলো।চাঁদনী দাঁড়িয়ে থাকলো, হাত কচলে নিজের অস্বস্তির জানান দিলো। আধারের দিকে তাকিয়ে আইঢাই করে বললো
-“আমি কোথায় ঘুমাবো?”
-“যেখানে মন চায় শুয়ে পর! আমার থেকে জিজ্ঞেস করছিস কেন?তোর প্যানপ্যানানি বিরক্ত লাগছে আমার।”
মুখ বাকালো চাঁদনী। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটলো।পরক্ষণেই ধপ করে শুয়ে পরলো বিছানার একপাশে।আঁধার একপলক চাইলো ওর দিকে, ভ্রু কুঁচকে বললো
-“এখানে শুবি তুই?”
-“তুমিই তো বললে যেখানে মন চায় শুতে!”
-“তোর সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো না আমি!”
-“তাহলে মেঝেতে শুয়ে পরো।বিছানার নরম বেড ছাড়া ঘুমাতে পারি না !ব্যাড নাইট!তোমার সাথে কোনো রাত গুড হবে বলে মনে হয় না!”
হামি তুলে বললঁ চাদনী!বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আঁধার। চাঁদনী ভেঙচি কেটে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।দীর্ঘশ্বাস ফেললো আঁধার। চাঁদনীর থেকে একহাত দুরত্ব রেখে বিছানার এক সাইডে শুয়ে পরলো!আবার উঠে বসে ব্যালকনিতে চলে গেলো।আজ খুব বিশ্রী ভাবে ইগো হার্ট করেছে অর্পিতা।আধার যে ওঁকে খুব ভালোবাসতো এমন না। পছন্দ করতো।সুন্দর ছিলো মেয়েটা।নিজেই আঁধারের সাথে চিপকে থাকতো সবসময়।অপছন্দ করার কোনো কিছু ছিলো না।আর আঁধার বরাবরই সুন্দরের পূজারী। কিন্তু আজ খুব রাগ হচ্ছে ওর অর্পিতার উপর।বিয়ে না করলে আগেই বলে দিতো।বা বিয়ের আগেই লা*ঙের সাথে পালিয়ে যেতো।
অর্পিতার, ওর সাথে চিপকে থাকা দেখে সবাই ভেবেছিলো অর্পিতা ওঁকে ভালোবাসে।আঁধার নিজেও এমনটাই কল্পনা করেছিলো।কেও যে ওঁকে রিজেক্ট করতে পারে, আঁধার সেটা বিশ্বাস করতে পারে না।নিজের উপর খুব কনফিডেন্ট ও।কিন্তু অর্পিতা ওঁকে বিয়ে না করার জন্য পালিয়ে গেলো, এর চেয়ে বড় রিজেক্ট আর হয়না,হতে পারে না।যে ইনভিজিবাল থাপ্পড় মেয়েটা মারলো ওঁকে, তা শুধে আসলে ফেরত দেবে ও। আঁধারের আফসোস নেই, অর্পিতার পালানো তে।এমন হাজারটা সুন্দরী কে ও নিজের পেছনে পাগল বানিয়ে ঘোরাতে পারে।বাট ওই মেয়ের জন্য অমন অমাবস্যার মতো কালিকে বিয়ে করতে হলো ওর।বাপ-চাচা কী ভেবে যে অমন কাইলানির নাম চাদনী রেখেছিলো কে জানে! বন্ধুমহলে আর মুখ দেখানোর অবস্থায় নেই ও।এই বউ নিয়ে তো আঁধার ওদের সামনে যেতেই পারবে না। মূলত আফসোস টা এখানেই।আজ রাতে আর ঘুম আসবে বলে মনে হয় না।জীবনটা এতো কঠিন না হলেও পারতো।
বর্ষা বেগম কিচেনের সবকিছু গুছিয়ে মাত্রই সোফায় এসে বসেছেন।এখনও কয়েকজন কাছের আত্মীয় থেকে গেছে তাঁদের বাড়িতে।তাঁদের জন্য রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকাতে আজ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। বর্ষা বেগম সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসেন।রাফিয়া বেগম একটু আগেই ঝেড়ে গেছে তাকে।রাফিয়া বেগম আঁধারের দাদি।বড়ই জালিম ধাঁচের একটা মহিলা।মানুষ কে কথা শুনিয়ে বড্ড তৃপ্তি পান।আর সে মানুষটা যদি বর্ষা বেগম হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।অথচ বাড়ির আরেক বউ মহারানীর মতো কক্ষে খিল দিয়ে বসে আছে।কী এক মেয়ে পালালো তার, শোকের শেষ নেই।কিন্তু শোক টা বেশি হওয়ার কথা ছিলো বর্ষা বেগমের।কিন্তু বাড়িতে কামলা খাটতে গিয়ে শোক পালন করার ফুসরত কই তার।
না, চাদনী কে তিনি ভালোবাসেন না এমন না।মা মরা মেয়েটাকে বাড়ির সব ছেলে মেয়েদের চেয়ে একটু বেশিই আদর করতেন তিনি।সুন্দর ব্যবহারের জন্য পছন্দও করতেন খুব।কিন্তু সেটা ছেলের বউ হিসেবে না! তার সুদর্শন ছেলেটার বউ কি-না অমন শ্যামা রঙের! এ দুঃখ কাকে বোঝাবেন তিনি।মা হিসেবে অমত করার অধিকার টুকুও তার ছিলো না। আগেই জানতেন কেউ তার কথা আমলে নিবে না। ইন্ট্রোভার্ট হওয়ার দরুন সব বিষয়ে চুপ থাকেন তিনি, তাই তো বড়ো জা হওয়া সত্বেও মেঝো জায়ের হম্বিতম্বি সহ্য করতে হয় তাকে। তার মেয়ে পালিয়েছে,শুধুমাত্র ওই মেয়ের জন্য ওনার ছেলেটাকে একটা কালো মেয়েকে বিয়ে করতে হয়েছে। কোথায় সে নত হয়ে থাকবে, উল্টো তাকে এসে বাঁশ দিচ্ছে। বর্ষা বেগম বিমর্ষ হয়ে বসে থাকেন।মনটা খারাপ হয় গেছে তার।প্রত্যেক মা’ই মনে মনে দোয়া করে তার ছেলের বউ খুব সুন্দরী, ফর্সা হবে।উনিও তার ব্যাতিক্রম নন। চাঁদনীর দজ্জাল শ্বাশুরি তিনি কখনোই হবেন না।এসব তার ধাঁচের না।তিনি মেয়েটা কে ভালোবাসবেন, কিন্তু মন থেকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না কখনোই।
অন্ধকার কামরায় অপূর্ব শিকদার আর আকিব শিকদার সামনাসামনি বসে আছেন।দু’জনের মুখেই অমানিশা! অপূর্ব শিকদার যদিও মনে মনে ভীষণ খুশি,অবশেষে বিয়েটা হওয়াতে।কিন্তু ছোট ভাইয়ের কালো মুখ দেখে সে খুশি আর বেশিক্ষণ টেকেনি তার।
-“মন খারাপ তোর?”
ঘাড় উঁচিয়ে চাইলেন আকিব শিকদার।অপূ্র্ব শিকদার কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছেন।দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আকিব শিকদার। বিমর্ষ স্বরে বললেন
-“নিজেকে বড়ই ব্যর্থ বাবা বলে মনে হচ্ছে ভাইয়া।মেয়ের এতো অপমানের পরও প্রতিবাদ করতে পারিনি। তার সাথে বিয়ে দিয়েছি যে আমার মেয়েটাকে এভাবে ভরা আসরে যাই নয় তাই বলেছে।আমি রাগ করিনি আঁধারের উপর।ওর রাগ জায়েজ। কিন্তু তাই বলে আমার মেয়েটাকে অপমান করবে?শুধু তোমার কথা রাখতে চাদনীর সাথে এতো বড় অন্যায় করেছি আমি।”
অপূর্ব শিকদার তিক্ত ঢোক গিলেন।কাতর স্বরে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলেন
-“তুই তো জানিস,অনেক আশা নিয়ে ঢাকা শহরে পাঠিয়েছিলাম ওঁকে।ভেবেছিলাম এই গ্রাম-গঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওর মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারবে না। কিন্তু ছেলেটা যে এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, বিগড়ে যাবে তা তো ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।শহরে গিয়ে নেশায়, নারীসঙ্গে আসক্ত হয়েছে!মেধা শুধু পড়ালেখায় না, অন্য কত জায়গায় যে খরচ করেছে তা আমার মুখে উচ্চারণ করতেও বাঁধছে।জানি আমি চাঁদ মায়ের সঙ্গে অপরাধ করেছি!দোষ করেছে অর্পিতা আর আঁধার। অথচ শাস্তি পেলো আমার নিরীহ মেয়েটা।কিন্তু আমি জানি আকিব, চাদনী ছাড়া আমার আঁধারের জন্য আর কেও পার্ফেক্ট হতো না।আমু আঁধারের জন্য চাদানী কেই পছন্দ করেছিলাম।কিন্তু অর্পিতার সাথে ওর সম্পর্ক জানার পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি।কিন্তু কাল যখন নিজের ইচ্ছে পূরণ করার একটা সুযোগ পেলাম,আমি সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। ও ছাড়া যে আমার ছেলেটা কে কেওই সুপথে ফিরিয়ে আনতে পারতো না!আঁধার আমার হাতের বাইরে চলে গেছে রে আঁকিব! একমাত্র চাঁদ মা পারে ওঁকে সুধরাতে!”
-“তোমার মনে হয় চাঁদ এতো বড় একটা দায়িত্ব নিতে পারবে?আমার মেয়েটা এখনো অনেক ছোট ভাইজান।
সংসারের কী বুঝবে ও?নিজেকেই তো সামলাতে পারে না ও, একটা আস্ত ঘর, একটা বর কে কী করে সামলাবে ও?”
-“মনে হয় কী বলছিস রে!আমার বিশ্বাস আমার চাঁদ মা পারবে!তুই জানিস না আঁধার ওঁকে কতটা ভালোবাসে ছোটবেলা থেকে।ওর জন্য হলেও নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করবে আঁধার, দেখিস!”
-“ছোট বোন হিসেবে আদর করতো! সেটাকে ভালোবাসার নাম দিও না।যদিও তুমি সেটা ধরে বসে থাকো, তবুও
এখন আর সে ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই ভাই।অনেক বছর কেটে গেছে।ঢাকা যাওয়ার পর আঁধার কতটা বদলে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।ও তো চাঁদনী কে সহ্যই করতে পারছে না।ভালোবাসলে বুঝি এভাবে অপমান করতো!প্রিয় মানুষকে এভাবে অপমান করা যায়?আমার অনেক ভয় লাগছে ভাইয়া!শুধু তোমার কথা রাখতে, আমি আমার মেয়েটাকে বলি দিয়েছি।ওর কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবো না!
কাজলরেখা পর্ব ১
অপূর্ব শিকদার অনেকটা সময় কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকলেন।বড় করে শ্বাস ফেলে বললেন
-“ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায় না আকিব।আমার বিশ্বাস আমার ছেলেটা বুঝতে পারবে।এখন রেগে আছে তাই এমন করছে।একটু বিশ্বাস রাখ আমার উপর।আমার চাঁদ মায়ের উপর আমি কোনো আচ আসতে দেব না।আমাকে ক্ষমা করে দিস তুই!”
আকিব শিকদার বিরস স্বরে বললেন
-“আমি ক্ষমা করার কেউ নই ভাইয়া।যার প্রতি এতো অন্যায় করেছি সেই মেয়েটাই কোনো অভিযোগ রাখলো না।বিয়ের পর একটা শব্দ কথা বলেনি আমার সাথে।তোমার ছেলেকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে আমি আমার মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললাম।”