কাজলরেখা পর্ব ৫
তানজিনা ইসলাম
আঁধারের ফ্ল্যাট টা খুব সুন্দর! তিমিরে ঘেরা আলিশান ফ্ল্যাট!বাইরে থেকে ভৌতিক বাড়ি দেখা গেলেও বদ্ধ জানালা দিয়ে নিভু নিভু আলো অবলোকন করা যায়। আভিজাত্যের ছোয়ায়, সৌন্দর্যে মোড়ানো রাজকীয় ঝকঝকে ড্রইং রুম।ডিজাইনার আসবাবপত্র, ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ দেওয়াল, বিশাল ডাইনিং টেবিল সবকিছু মিলিয়ে রাজকীয়, দৃষ্টিনন্দিত ভাবসাব।ড্রইংরুমের মাঝবরাবর বিশাল ঝাড়বাতি।
দেখেই বোঝা যাবে এখানে বসবাস করা মানুষটি খুব বিলাসবহুল লাইফ লিড করে।
চাদনী ঘুরে ঘুরে দেখে সবকিছু।কি আলিসান সবকিছু! দেখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়।ঝাড়বাতির নিচ বরাবর মাস্টার কাউচ সেট করা। তার মাঝখানে কাঁচের গোল টেবিল।চাদনী ধীর পায়ে গিয়ে কাউচের উপর বসলো।দারোয়ানের দৃষ্টি এখনো ভুলতে পারছে না ও।লোকটা কীভাবে হেয় চোখে দেখছিলো ওঁকে! যেন ও কোনো বাজারি মেয়ে।চাঁদনীর কান গরম হয়ে আসে। আসতে না আসতেই প্রথম দিনেই এতটা অপদস্ত হলো ও।সামনে আরো কী কী যে অপেক্ষা করছে ওর জন্য তা ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। কাউচে গা এলিয়ে দিলো চাঁদনী।চোখের পাতা বন্ধ করতেই কুকুরের ভৌ ভৌ ডাকের শব্দ কানে এলো ওর।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এক লাফে উঠে দাঁড়ালো চাদনী। সামনেই সাদা লোমশে আবৃত একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।লেজ নাড়ছে সমানে। অথচ মনে হচ্ছে একটা পুতুল।বিদেশি কুকুর হবে হয়তো। আঁধার করিডোর লক করে এগিয়ে আসে।
চাদনী আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। ভয়ার্ত স্বরে আওড়ালো
-“ও কী? কুকুর ঘরে ঢুকলো কী করে?”
-“আমি ঢুকিয়েছি। ওর নাম চ্যাম্প! আমার সাথেই থাকে।”
চাঁদনী খুব কুকুর ভয় পায়।কুকুর সামনে থাকলেই ভীষণ প্যানিক করে ও।ছোটবেলায় ও একবার দুষ্টামি করতে গিয়ে কুকরের কামড় খেয়েছিলো। এরপর ইয়া বড় বড় ৫ টা ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছিলো ওঁকে। একমাস বেডরেস্টে থাকতে হয়েছিলো।আলাদাভাবে খাবার খেতে হয়েছিলো।কী যে কষ্টের দিন ছিলো সেসব, এর পর থেকেই চাঁদনীর ফোবিয়া হয়ে গেছে কুকুরের প্রতি।
চাদনী কাঁপা কন্ঠে বললো
-“ও কী এ বাড়িতে আমাদের সাথেই থাকবে প্রতিদিন?”
-“হ্যাঁ। এখানেই থাকবে! কেন তোর কোনো সমস্যা? এভাবে ভয় পাচ্ছিস কেন?”
-“আমার ছোটবেলা থেকেই কুকুর ভয় লাগে।তুমি তো জানো!”
-“ভয় পেয়ে লাভ নাই, ও এখানেই থাকবে।ও আমার একাকীত্বের সঙ্গী। তুই এসেছিস কখন চাদনী? আজ।অথচ ও শুরু থেকেই আমার সাথে আছে।”
চাদনী বললো
-“এখন তো তুমি একা না। আমি আছি। এখন তো ওর দরকার নেই।প্লিজ, আমার ভয় লাগে। আমি ওর সাথে এক বাড়িতে থাকতে পারবো না।”
-“তুই চলে যা।আমার ওঁকে বের করা সম্ভব না।”
-“কোনো কারণ ছাড়া কুকুর পালা হারাম দাদাভাই!”
আঁধার ব্যঙ্গ করে বললো
-“আরে মাওলানা-মুফতি সাহেবা, এতোদিন কোথায় ছিলেন আপনি?হাদিস নিয়ে পিএচডি করে এসেছেন দেখা যায়!”
-“মজা মনে হচ্ছে তোমার? এটা সত্যিই!”
-“যেখানে তোর মতো কালিকে এখন থেকে পালতে হবে আমাকে, সেখানে একটা কুকুর পালা তেমন কোনো বড় বিষয় নয়!”
-“এ বাড়িতে আমার চেয়েও একটা কুকুরের দাম বেশি?”
-“এটলিস্ট ও আমার অনেক কাজে আসে। তোকে তো শুধু শুধুই ভাত, কাপড় দিয়ে পালবো আমি। কোনো লাভ আছে তুইই বল?”
চাঁদনী নিজের উত্তর পেয়ে যায়, অতিশয় যন্ত্রণা নিয়ে তাকায় আঁধারের দিকে। রোধ হয়ে আসা কন্ঠে বলে
-“তুমি আমার সাথে যেমন বিহেভিয়ার করো, তেমন বিহেভিয়ার মানুষ কুকুরবিড়ালের সাথেও করে না। কালো হয়ে জন্মানোই আমার আজন্ম পাপ!”
আঁধার গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো চাঁদনীর দিকে। খরখরে গলায় বললো
-“ফালতু কথা রাখ। ওর থেকে দূরে দূরে থাকলেই হলো। ও খুব আদুরে।কামড়াতে জানেই না।পোষা কুকুর রা হিংস্র হয় না।”
চাদনী কিছু বললো না।আঁধার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো।চাদনী পিছে পিছে গেলো ওর।একটা রুমের তালা খুললো আধার। চাদনী কে ডেকে বললো
-“এ রুমটা তোর।আমি পাশের রুমে থাকবো!সব ঠিকঠাক আছে কি-না দেখ!”
চাদনী ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলো।আঁধার চলে গেলো নিজের কক্ষে।
খুব গোছানো একটা রুম। কক্ষে একটা বেড, একটা আলমিরা, একটা ড্রেসিং টেবিল আছে।ভালোই সব।একটা পড়ার টেবিলের কমতি অনুভব করলো চাদনী।এখন না-হয় পড়াশোনা নেই। এসএসসির পর তিন মাসের ছুটি কাটাচ্ছে।কিন্তু ক’দিন পরই তো রেজাল্ট তারপর কলেজ চয়েস।আচ্ছা, আঁধার ওঁকে পড়তে দিবে তো?
ভাবতে ভাবতেই বেলকনিতে চলে গেলো চাদনী!
আনমনা হয়ে রেলিং ধরে নিচে তাকাতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে ওর। ঠিক কতো তলা উপরে আছে ওরা বোঝা যাচ্ছে না। সামনে ফিরতেই চাদনী আঁতকে উঠলো।আঁধার শয়তানি হেঁসে বললো
-“তোকে এক্ষুণি ধাক্কা মেরে ফেলে দিব আমি।”
-“আমার অপরাধ?”
-“মুখে মুখে তর্ক করা!”
-“আমরা এখন কয়তলা উপরে আছি?”
-“বিশ তলা! এখান থেকে পরলে তোকে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না।”
দু-হাত দিয়ে আঁধারের বুকে ধাক্কা বসালো চাদনী।বড় করে শ্বাস টেনে বললো
-“এতো কাছে আসলে কেন?”
-“বিয়ে করেছি, কাছে আসবো না?”
-“আমার মুখ দেখলে না, তোমার বমি আসে? বমি হয়ে যাবে আবার সাবধানে!”
আঁধার রাগী দৃষ্টিতে চাইলো।চাদনী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
-“তুমি এখানে কেন এলো?”
-“আমার ফ্ল্যাট, আমার বেলকনি।”
-“কিন্তু রুমটা তো আমাকে দিয়েছো।”
-“হ্যাঁ দিয়েছি।দয়া করেছি তোর উপর।যখন মন চায় তখন আসবো আমি।কিন্তু তুই আমার রুমে যেতে পারবি না পারমিশন ছাড়া।”
-“যেতে চাইও না।”
আঁধার তর্জনী উঁচিয়ে বললো
-“তোর গলাটা কোন দিন টিপে দিব আমি! এতো মুখ চলে কেমনে ভাই?”
-“এই মুখটাই তো আছে।আর তো কিছু নেই।তাই চব্বিশ/সাত ঘন্টা চালাতে থাকি।কাজের কথায় আসো!”
-” তুই কীসে পড়াশোনা করছিস যেন?”
-“এসএসসি দিয়েছি এ বছর!”
-“পড়বি না আর সামনে?”
-“যদি তুমি পড়াও!”
-“অবশ্যই পড়াবো।কিছু একটা তো করতে হবে তোকে! ক্যারিয়ার বানাতে হবে।নয়তো যে রূপ তোর, তাতে…
চাদনী বাঁধা দিয়ে বললো
-“হয়েছে, বুঝেছি।আর বলতে হবে না। পনেরো দিন পর রেজাল্ট দিবে।এরপর কলেজ চয়েসের কথা ভাববো।”
-“আচ্ছা!”
আঁধার চলে গেলো।চাদনী বিছানার উপর গিয়ে বসলো। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে ওর।সেই সকালে বাড়ি থেকে খেয়ে বেরিয়েছিলো, এরপর আর পেটে একটা দানা-পানি পরেনি।চাদানী খিদে সহ্য করতে পারে না। অথচ এখানে আসার পর আঁধার কে বলতেও পারছে না।সেও সকালেই খেয়েছিলো।তারও খাওয়া হয়নি।এখন চাদনী খেতে চায়লে ওঁকে খোঁটা মেরে কিছু বলে দিলে! এমনিতেই তো কম কথা শোনে না ও।চাদনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুয়ে পরলো বিছানার উপর।পেটে শব্দ হচ্ছে, ওর পেট খাবার চায়ছে।অথচ চাদনী দিতে পারছে না।সিলিংয়ের দিকে তাকাতে তাকাতেই, চাদনী হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে মখমলের বিছানায়।
চেচামেচির শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভাঙলো চাঁদনীর।নিচ থেকে চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসছে।চাদনী ধরফরিয়ে উঠে বসলো।ঘড়িতে দশটা বাজে।দু’ঘন্টা ঘুমিয়েছে ও।চাদনী তড়িঘড়ি করে নিচে নামতে গেলো। এ বাড়িতে আঁধার ছাড়া আর কেও থাকে না।এতোগুলো মানুষের কথার শব্দ কোত্থেকে আসছে তাহলে। বিছানার উপর একটা চিরকুট রাখা।আঁধারের ঘড়ি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাতে ফ্যানের বাতাসে উড়ে না যায়।চাঁদনী ভ্রু কুঁচকে সেটা হাতে তুলে নিলো।আঁধারের হাতের লেখা
-“শোন, রাতে আমার বন্ধুরা আসবে।আমি তখন নিচে থাকবো, কিন্তু তুই ভুলেও নিচে নামবি না।আমি আমার বন্ধু বান্ধবের সামনে নিজের ইজ্জত খোয়াতে পারবো না।কথা অমান্য করলে খবর আছে তোর! এসব কেন বলছি বুঝতে পারছিস নিশ্চয়ই। বুঝতে না পারলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়া, বুঝে যাবি।”
চাঁদনীর মনে হলো ঠাস ঠাস করে কেও ওর গালে জুতার বারি বসিয়েছে।এতোটা অপমান, এতোটা! আল্লাহ তায়ালা ওই মানুষটারে বানাইছে।ওরে বানায় নাই? তাহলে এতো বৈষম্য কেনো হলো ওর প্রতি।ওই মানুষটার সাদা চামড়া আছে, ওর নাই।এটাই ওর অপরাধ! এতেই ও ফাঁসির আসামী!
চাঁদনীর বিছানার উপর বসে, হাটু জড়িয়ে কিছুক্ষণ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদলো। ওর কি যে কষ্ট হচ্ছে!এতো অপমান আর গায়ে সয় না।কাছের মানুষটাই যখন এভাবে পদে পদে হেনস্তা করে, তখন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হারিয়ে যায়।
খাবারের সুগন্ধ নাকে আসতেই চাদনীর পেটের ক্ষিদে আরো তড়তড়িয়ে বাড়ে। কিচেনে রামেন রান্না হচ্ছে, গন্ধ শুঁকেই ও বলতে পারে।চাঁদনীর ফেবারিট অনেক।রাতে ভাত ও খুব কম খায়।মাঝে মাঝে সেটুকুও খাওয়া হয় না।
ফরস্বরূপ মধ্যরাতে খিদে লাগে ওর।তখন শিকদার বাড়িতে থাকতে ও চুপিচুপি কিচেনে গিয়ে নুডলস রান্না করতো।
রাতভর মুভি দেখে দেখে খেতো।
এখন রামেন পাওয়ার আশা নেই, আঁধার ওঁকে নিচে যেতে নিষেধ করেছে।বাট কিছু একটা খেতে পেলেই চলবে।এখন ওঁকে যা দেওয়া হবে তাই গাণ্ডেপিণ্ডে গিলবে ও এতোটাই খিদে পেয়েছে চাদনীর।
বারান্দায় গিয়ে নিচে উঁকি দিলো চাদনী।নিচে ছয়-সাত জন বসে আছে।আড্ডায় মশগুল তারা।কথাগুলো এখানে পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। মাঝেমাঝে চিল্লানি দিচ্ছে ঘর কাঁপিয়ে।
সিড়ির কাছে একটা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো।চাদনী কে চোখে পরতেই সে গলা ফেড়ে ডাকলো
-“কে ওখানে?”
চাদনী ভো দৌড় দিলো। ছেলেটা উপরে চলে এলো চাদনীর পিছু পিছু।আঁধার সবার অদৃষ্টে কপাল চাপড়ায়। বকাবকি করে চাদনী কে! একটু পর ছেলেটা নিচে নামে।পিছু পিছু চাদনী মাথা নিচু করে নামলো। ছেলেটা এসেই ঘোষণা দিলো
-“বন্ধুরা দেখো, আঁধার রাতবিরেতে তার ঘরে মেয়ে লুকিয়ে রেখেছে।”
চাদনী মাথা তুলে তাকালো।সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।আঁধার অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে।চাদনী ঢোক গিললো, অসহায় দৃষ্টিতে বোঝালো ওর কোনো দোষ নেই।পেটের অবস্থা করুণ।
আঁধারের পাঁচজন ক্লোজ ফ্রেন্ড।তার মধ্যে দুইজন মেয়ে, শাবিহা, তটিনী। তিনজন ছেলে, আমান, মাহাদী, রাবিব।চাদনী যার চোখে পরেছে তার নাম, আমান।
চাদনী হাতের তালু কচলাচ্ছে সমানে। মনে হচ্ছে চামড়া উঠিয়ে ফেলবে।
মাহাদী বললো
-“কে তুমি আপু?”
-“আমার পার্সোনাল সার্ভেন্ট।”
আঁধারের উত্তরে সবাই ওর দিকে তাকায়।রাবিব মুখে হাত দিয়ে বললো
-“সার্ভেন্ট,তাও আবার পার্সোনাল? আহারে, কী বোঝাতে চাও বন্ধু! এক রাতের জন্য আনছো?”
চাদনী শিউরে উঠলো।আঁধার তড়িঘড়ি করে বললো
-“না, না দুষ্টামি করছিলাম। মানে আমার চাচাতো বোন!”
নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকালো চাঁদনী। গম্ভীর স্বরে বললো
-“চাচাতো বোন ছিলাম।এখন বউ হয়ে গেছি।”
-“কী?” একযোগে চিল্লিয়ে বললো সকলে।
আঁধার ওর দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন ও চাদনী কে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
রাবিব হুড়মুড়িয়ে বললো
-“এই আধার তুই না বলেছিস, তুই বিয়ে না করে চলে এসেছিস? তোর বিয়ে হয়নি।তাহলে বউ কোত্থেকে এলো?”
আঁধার টু শব্দ করলো না।চাদনী দাঁড়িয়ে ছিলো, আমান ওঁকে আধারের পাশে বসতে বললো।চাদনী বসলো না। দাঁড়িয়ে থাকলো।মাহাদী বললো
-“মিথ্যাবাদী!মিথ্যা বললি কেন?” পরপর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বললো
-“কোন ক্লাসে পড়ো আপু?”
-“এবছর এসএসসি দিয়েছি!”
-“আঁধার এ বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস তুই!”
আঁধার কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না।ছেলেগুলো ভীষণ এক্সাইটেড চাদনী কে নিয়ে।আধার এ বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে করেছে এটা ওরা কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
চাদনী দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।ওর পা টলছে।কিছু খাওয়া দরকার।টেবিলের উপর রামেন, কফি, বিস্কেট, পিৎজা অনেক কিছু রাখা আছে।ওরা এখনো খাওয়া শুরু করেনি।চাদনী এক খাবলা খাবার হাতের মুঠোয় নিয়ে উপরে দৌড় দিবে? দিলে কী বেশি খারাপ দেখাবে? খিদের চোটে উল্টাপাল্টা চিন্তা আসছে ওর মাথায়।
সবাই একে একে পরিচিত হলো চাঁদনীর সাথে।তবে একেবারে কর্ণারে বসা মেয়েটা কিছু বললো না।পরিচয় না দিয়ে মিষ্টি করে হেঁসে বললো
-“তুমি খুব সুন্দর!”
চাদনীর কপালে ভাজ পরে। মেয়েটা ওকে বাঁশ মারলো? ও তো জানে ও সুন্দর না।অন্তত আঁধার ওঁকে পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছে চাদনী কতটা অসুন্দর। মেয়েটা এমন বলছে কেন!
চাদনী হাসলো তার সাথে।বললো
-“আল্লাহ বানায়ছে! আমার হাতে তো কিছু নাই।ধন্যবাদ আপনাকে।আমি জানি আমি সুন্দর!”
মেয়েটা বিনিময়ে হাসলো।আঁধার চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বললো
-“খিদে পেয়েছে তোর? পুরোদিন কিছু খাসনি তুই।”
-“হ্যাঁ খুব।”
-“কিচেনে তোর জন্য পিৎজা আর কফি রাখা আছে।নিয়ে আয়!”
-“আমি রামেন খাবো!”
-“রামেনও আছে।”
চাদনী কিচেনের দিকে পা বারালো। ওর জন্য বরাদ্দকৃত খাবারগুলো ট্রে তে সাজিয়ে নিয়ে উপরের দিকে পা বাড়ালো। শাবিহা ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে।আধার বললো
-“কী? এভাবে কী দেখছিস?”
-“খুব সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করেছিস দেখছি! যখন আমাকে রিজেক্ট করে গ্রামে চলে গিয়েছিলি, আমি তো ভেবেছিলাম কোন প্রিন্সেস ডায়নাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবি! তোর বাবা না-কি তোর জন্য মেয়ে ঠিক করে রেখেছিলো, তুই তার কথা অমান্য করতে পারবি না।এমন মেয়ে ঠিক করেছে? এরে তো অন্ধকারে খুজেই পাওয়া যাবে না! আমি তো জানতাম তোর চয়েস সবসময় বেস্ট হয়! তোর যে এতো ঘাটিয়া চয়েস সেটা তো জানতাম না!”
আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলো শাবিহার দিকে।কিছু বলছে না ও।
তটিনী বাঁধ সেধে বললো
-“এই কী বলছিস? পাগল হয়েছিস? শুনতে পাবে। বাচ্চা একটা মেয়ে।”
-“শুনতে পাক।শোনার জন্যই বলছি।মেয়েটার জনা উচিত না, তার হাসবেন্ড এক নাম্বারের ফ্রড!আমার সাথে তিন-বছর প্রেম করেছে।আমাকে বলেছিলো আমার চেয়ে বেটার কাওকে পাবে।ও ওর বাবার উপর ভরসা রাখে।এই ওর ব্যাটারের নমুনা। এ মেয়ে তো আমার পায়ের নখের যোগ্যও না।”
আমান প্রতিবাদ করে উঠলো। বললো
-“ব্রেকআপ কিন্তু তুই করেছিলি শাবিহা।আঁধারের উপর দোষ দিচ্ছিস কেন? তোর আচরণে কষ্ট পেয়েই কথাগুলো শুনিয়েছিলো তোকে।মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর! সবাইকে গায়ের রং দিয়ে বিচার করবি না।কালোরা সুন্দর না এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আয়। আর মেয়েটা কালো না, শ্যামলা। কতো মায়াবী একটা চেহারা!”
-“খুব মায়া লাগছে তোমার? বন্ধুর চেয়ে স্বল্পপরিচিত একটা মেয়ে বেড়ে গেছে তোমার কাছে?”
আমান উত্তর দেওয়ার আগে আঁধার শান্ত গলায় বললো
কাজলরেখা পর্ব ৪
-“আস্তে চিল্লা! গলার আওয়াজ এতো বড় কেন তোর? বিয়ে করতে দেখে ফাটতেছে খুবব?”
-“না, না। ফাটবে কেন?আমি ভেবেছিলাম তোর বউ দেখে আমার হিংসা হবে।তোর পাশে তো কাউকে পানতে পারি না আমি।বাট ওঁকে মানতে গিয়ে হাসি পাবে আমার।বুক জ্বলবে না। একদমই না।কী যেন চ্যালেঞ্জে করেছিলি, আমার চেয়ে হাজার গুণ সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করবি? আমার চেয়ে সুন্দরী সে? এটা বলিস না! হাসি পাবে আমার। চ্যালেঞ্জে হেরে গেছিস তুই! মেনে নে।”
-“আমি আমার পরাজয় মেনে নিলাম!”
শাবিহা বিজয়ের হাসি হাসলো।