কাজলরেখা পর্ব ৮
তানজিনা ইসলাম
চাঁদনীর সিটি কলেজে চান্স হয়েছে।ওর মনটা তবুও খারাপ। ও চেয়েছিলাে ওমেনে পড়তে, আঁধার দিলো না। ওর ইচ্ছের কোনো দাম নেই এ বাড়িতে।ওরই তো দাম নেই।বাড়ির মালিক উঠতে বসতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ওঁকে। তবুও ও কোন কলেজে পড়বে সেটা নিয়ে ডিসিশন নেওয়ার অধিকার পর্যন্ত নেই ওর?এটাতো ওর জীবন, চয়েস টাও ওর হওয়া উচিত।
চাঁদনী একবার আকিব শিকদার কে জানিয়েছিলো ব্যাপারটা নিয়ে। ওর মাথা থেকে বিষয়টা যাচ্ছে না। ওর ছেলেদের সঙ্গ একটুও পছন্দ না।চাদনী আসলেই ঘরকুনো হয়ে গেছে, ওর কোনো বন্ধু হয়নি কোনোদিন।ছেলে বন্ধু তো দূর মেয়ে বন্ধুও হয়নি।সারাজীবন মানুষের কথার ভয়ে গুটিয়ে থেকেছে।
আকিব শিকদার প্রথমে বলেছিলেন চাঁদনী ওমেনে পড়তে চাইলে ওখানেই পড়ুক। মেয়েদের কলেজে পড়লে সেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে।মেয়েটা গ্রামের স্কুলেই যেভাবে গুটিয়ে থাকতো, শহরে কিভাবে খাপ খাওয়াবে! কিন্তু আঁধার উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে তাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চাঁদনী আসার সময় ওর একাডেমিকের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়েই এসেছিলো।আঁধার আবার রেজাল্ট বেরোনোর পর চাঁদনীর স্কুল থেকে টিসি আনিয়েছে।তাই ভর্তি নিয়ে বেশি প্যারা খেতে হয়নি চাঁদনী কে।
ভর্তি সংক্রান্ত যা যা করার দরকার তা আঁধার নিজেই করেছে, চাদনী কে বলতে হয়নি কিছুই।চিন্তাও করতে হয়নি।
আঁধার নিজেই অফার করেছে, আজকে একবার চাঁদনী কে কলেজ থেকে ঘুরিয়ে আনবে।কাগজপত্রও জমা দিয়ে আসবে। চাদনী রাজি না হতে চেয়েছিলো, কারণ আঁধার ওঁকে নিয়ে হাঁটতে ফ্রাস্টেটেড ফিল করে।ওঁকে পরিচয় করাতে লজ্জা পায়। চাদনী এটার দোহাই দিয়ে যাবে না বলেছিলো, আঁধার আবার কথা শুনিয়ে দিয়েছে। আঁধার কে চাঁদনীর বুঝে আসে না।এই পারে না ওর জন্য দেহ থেকে কিডনি টা বের করে পিসপিস করে কেটে লবণ মরিচ দিয়ে ওঁকে রান্না করে খাইয়ে দিতে।
আবার এই ওঁকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারে না।তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, গায়ের রং দিয়ে খোঁটা দেয়।ছেলেটার মাথায় আসলেই সমস্যা আছে।ভাবলো চাদনী। আবার ওর কলেজে যেতেও ইচ্ছে করছে।নতুন কিছু এক্সপ্লোর করার ইচ্ছে কার না থাকে! সেখানে তো চাদনী জীবনটাকে কোনোদিন উপভোগ করতেই পারে নি।
চাদনী রেডি হয়ে বেরোলো কক্ষ থেকে। সকাল বাজে দশটা।চাদনী অনেক লেইট করে ঘুম থেকে উঠে। কারণ ওর পুরো রাত মোবাইল টিপতে হয়।রিলস দেখতে হয়।কতো কাজ ওর।কিন্তু আজ আঁধার ওঁকে আটটা বাজে ডেকে দিয়েছে। চাদনীর ঘুম পাচ্ছে। বারংবার হামি তুলছে ও। একেবারে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছিলো ও। চারঘন্টাও ভালো করে ঘুম হয়নি। আঁধার চাদনী কে ডাকতেই আসছিলো, বারান্দায় দেখা হয়ে গেলো ওঁদের।
আঁধার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে নিলো ওঁকে। সাদা রঙের সালোয়ার পরেছে চাদনী। চুলগুলো পোনিটেল করে বাঁধা।শ্যামলা মুখে কোনো কৃত্রিম সাজ, কাজল কিচ্ছু নেই।খুব সাদা-মাটা, স্নিগ্ধ, মায়াবী একটা মেয়ে। তারপরও আধারের মায়া লাগলো না।ওর চোখে চাঁদনীর শ্যামলা ত্বক ছাড়া আর কোনো রূপ ধরা পরে না।
-“অন্য রঙের কাপড় নেই তোর? এই বিঁধবার পোষাক পরতে হবে কেন তোকে?”
চাঁদনী একবার নিজের দিকে তাকালো, আবার আধারের দিকে তাকিয়ে কপালে ভাজ ফেলে বললো
-“আছে তো! কেন এটাতে সমস্যা কী? আমার তো এই ড্রেসটাই ভালো লাগে।কম্ফোর্টেবল!গরমে পরেও আরাম পাওয়া যায়।”
আঁধার চাদনীর নরম কথা গুলো আমলে নিলো না, নিষ্ঠুরের মতো বললো
-“তুই কম্ফোর্টেবল ফিল করলেও আমি ফিল করতে পারছি না।সাদা রঙের পোষাকে আরো বেশি কালো লাগছে তোকে। ডার্ক কালারের কিছু পরে আয়,যা।”
চাদনী বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো আঁধারের দিকে।আপমানে স্তব্ধ ওর মুখ দিয়ে অনেকটা সময় কথা বের হলো না। সময় পেরোতেই, জেদ্দি, গুমোট স্বরে আওড়ালো
-“না! আমার এটাই ভালো লাগে তাই আমি এটাই পরবো।কালো লাগলে আমাকে লাগবে, তোমাকে না।তোমার এতো চিন্তা কীসের?”
-“ফালতুমি করবি না। যেটা বলছি সেটা কর।”
-“তুমি যেটাই বলবে সেটাই আমাকে মানতে হবে এমন কেনো কথা নেই। বাইরে অনেক গরম, আমি এই ড্রেসেই কম্ফোর্টেবল ফিল করতেছি এখন।তাই আমি এটাই পরবো।তোমাকে চিন্তা করতে হবে না!”
চাদনী ঔদ্ধত্য দেখালো। আঁধারের খুব গায়ে লাগলো।মেয়েটা খালি মুখে মুখে উত্তর দেয়। অকস্মাৎ খেপে হিসহিসিয়ে বললো
-“চিন্তা নেই আমার? থাপড়ে তোর গাল লাল করে দিব আমি বিয়াদব।মুখে মুখে এতো তর্ক করিস কেন? মুখ সেলাই করে দেব একদম।তোর এতো জেদ কীসের রে? এই তো রূপের বাহার তোর!যাবি তো ঠিকই আমার সাথে। উজ্জ্বল কালারের ড্রেসে শুধু ফর্সাদের মানায়, তুই আরো পরেছিস সাদা। বিশ্রী লাগছে তোকে!সবাই বলবে একটা কালির ড্রাম নিয়ে ঘুরতেছি আমি।”
চাদনীর চোয়াল শক্ত। অথচ চোখে থইথই অশ্রু! জীবনের এই পর্যায়ে এসে সৃষ্টিকর্তার উপর ভীষণ অভিমান জমলো ওর। অসহায়ত্ব ঘিরে ধরলো মেয়েটা। আল্লাহ তায়ালা তার গায়ের রংটা একটু ফর্সা দিলো না কেন! কী অপরাধ ছিলো চাদনীর। কেন ও এভাবে উঠতে, বসতে কথা শুনছে নিজের গায়ের রং নিয়ে।
চাদনীকে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁধার চোখ পাকালো।তর্জনী উচিয়ে বললো
-“লিসেন, আমার বাড়িতে থাকতে হলে আমার কথা মতোই চলতে হবে।আমি যেটা বলবো সেটাই মানতে হবে। শিকদার বাড়ির মতো এখানেও নিজের মন-মর্জি করবি, এমনটা হবে না।বুঝেছিস?মাথায় ঢুকেছে? না ঢুকে থাকলে ঢুকিয়ে নে।নয়তো ফল খুব খারাপ হবে। আমার প্রতিশোধপরায়ণতা তুই সহ্য করতে পারবি না।
চাদনী যন্ত্রের মতো পা ফেলে কক্ষে চলে গেলো।আঁধার বাঁকা হাসলো। এই তো! এটাই তো চেয়েছিলো ও।চাদনী ওর সব কথা মানবে। মানতে বাধ্য হবে।আঁধার বাধ্য করবে। মুখে মুখে তর্ক করা, জেদ দেখানো সব ছোটাবে। এই মেয়ের উড়া কী করে বন্ধ করতে হয় তা আঁধার ভালো করেই জানে, সব ডানা ছেটে দেবে ও।
আঁধার বিজয়ীর বেশে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো। ড্রইংরুমে গিয়ে সোফার উপর বসে টিভি অন করলো।
পরক্ষণেই চাদনী কে ধুপধাপ পা ফেলে নিচে আসতে দেখা গেলো।
আঁধার ঘাড় বাঁকিয়ে চায়লো।চাদনী কিচেনে গেলো, কিছু একটা হাতে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠে গেলো আবার। আঁধারের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না। ও নিজের কথা রচাতে পেরেছে এটাই ওর জন্য যথেষ্ট।
ড্রেসিংটেবিলের উপর দু-হাত ঠেকিয়ে,আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে চাদনী।ওর গা মৃদু কাঁপছে। গালদুটো চটচটে ভেজা,চুলগুলো এলোমেলো। অথচ নাক ফুলাচ্ছে, নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজের উপরই রাগ হচ্ছে খুব করে। আসলেই তো, সাদা কাপড়ে শ্যামলা রঙটা কালো মনে হচ্ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় গায়ের রংটা বেশিই ডার্ক মনে হচ্ছে। কালো রংটা ফুটছে খুব।
আসলে তেমন না।চাদনী কে সুন্দরই লাগছে।সাদা কাপড়ে কাকে না সুন্দর লাগে!
কিন্তু আঁধারের কথাগুলো তীরের মতো ঢুকে গেছে ওর মস্তিষ্কে।
চাদনী ঠাস করে চড় বসালো নিজের গালে, সর্বশক্তি দিয়ে। একবার, দু’বার, তিনবার, পরপর অনেকবার। একটু পর ক্লান্ত হয়ে নিজেই থেমে গেলো।মুখটা খুব জ্বলছে। মনে হচ্ছে গাল ফেটে রক্ত বেরোবে।তবে তা হৃদয়ের জ্বলন থেকে খুব কম।মনের যন্ত্রণার সামনে এ যন্ত্রণা কিছুই। অপ্রকৃতস্থ হয়ে চাদনী নিজের চুল টেনে ধরলো। দুপা মুড়ে অসহায়ের মতো বসলো মেঝেতে। চোখের পানি গাল বেয়ে মেঝেতে পরে।ড্রেসের বুকের কাছটায় ভিজে গেছে। চাদনী হিচকি তুললো।আঁধারের ওর গায়ে হাত তুলতে হয় না,শয়তান টা ওঁকে কথা দিয়েই মেরে ফেলে। চাদনী একদিন সত্যিই মরে যাবে আর সহ্য করতে না পেরে।
চোখ মুছে উঠে দাড়ালো চাদনী। এলোমেলো ভঙ্গিতে, সবগুলো সাদা ড্রেস বের করলো আলমিরা থেকে। ওর বেশিরভাগ ড্রেস সাদা। এ বাড়িতে আসার পর অনেকবার পরেছেও।ছোটবেলায়ও চাদনী বেশিরভাগ সাদা রঙের কাপড় পরতো।দু’পাশে দু’টো ঝুটি করতো। ওর বাবা মিষ্টি হেঁসে ওকে প্রিন্সেস ডাকতো।বলতো, চাদনী কে সাদা ড্রেসে ডিজনি প্রিন্সেস টিয়ানার মতো লাগে। এর পর থেকেই চাদনীর ফেবারিট রং সাদা হয়ে যায়।আর ফেবারিট ডিজনি প্রিন্সেস হয়ে যায় টিয়ানা।
কিন্তু বাবা মিথ্যা বলতো! কেন মিথ্যা বলতো? চাদনী কষ্ট না পাওয়ার জন্য। মিথ্যা স্বান্তনা দিয়ে লাভ কি! আঁধারের মতো সত্যি বলে দিলেই তো হয়, যে ওঁকে সাদা ড্রেসে কালির ড্রামের মতো লাগে।সেটা শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেলেই তো আজ চাদনী এতো কষ্ট পেতো না। আজ প্রথমবার শুনেই তো এতো কষ্ট লাগছে।
চাঁদনীর অনেকগুলো ড্রেস। সাদা রঙের তবে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের।এই সবগুলো ড্রেস ওর বাবা নিজে চুজ করে কিনে দিয়েছিলো ওকে। সাদা ড্রেসের স্তুপ হয়ে আছে মেঝেতে। চাদনী লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলো।একটু আগেই কিচেন থেকে লাইটার টা নিয়ে এসেছে ও। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। ওর স্নিগ্ধতা, শুভ্রুতা ওর ভালোবাসার, পছন্দের জিনিসগুলো পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, ওর চোখের সামনে।
চাদনী হাঁটু মুড়ে বসে থাকে আগুনের সামনে। এই আগুন শুধু কাপড়গুলো কে জ্বালাচ্ছে না, জ্বালিয়ে দিচ্ছে চাঁদনীর হৃদপিণ্ড, সমস্ত সত্তা। ওর ধারণ করা কালো রঙের কলঙ্ক। সবকিছু পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যায় এই দাবানলো।
আঁধার নিচে বসে অপেক্ষা করছিলো চাদনীর নেমে আসার। দোতলা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে কপালে ভাজ ফেলে চাইলো ও।ধোয়ার পরিমাণ বাড়ছে।আঁধার সাতপাঁচ কিছু না ভেবে দৌড় দিলো উপরে।চাঁদনীর কক্ষের সামনে গিয়ে হতভম্ব হয়ে দেখলো সবকিছু।চাদনী পাথরের মতো বসে আছে আগুনের সামনে।
আঁধার গিয়ে টেনে তুললো ওঁকে। চাদনী ঝাড়া মেরে ছাড়ালো ওর হাত।দূরে সরে দাঁড়ালো ওর থেকে। আধার দৌড়ে জগ নিয়ে এলো নিচ থেকে।জগের পানি সব ঢেলে দিলো আগুনের উপর। আগুন নিভলো, তবে নিভু নিভু ধোয়া বেরোচ্ছে পোড়া কাপড়গুলো থেকে।কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।কিছু আধপোড়া অবস্হায় আছে।
চাদনী কাঁপছে। আঁধার বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। এই মেয়ে এতোটা ডেঞ্জারাস! ওর চাচা আদরে আদরে এতোটা জেদি বানিয়ে ফেলেছে ওঁকে। আঁধার ভেবেছিলো, চাদনী কে একটা ধমকেই নরম করে ফেলবে। ওর গায়ের রং নিয়ে খোঁটা দিলে এমনিতেই দুর্বল হয়ে যাবে।
কিন্তু এ মেয়ে তো আঁধারের বাড়ি ঘরই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
চাদনী আগুন দৃষ্টিতে তাকালো আঁধারের দিকে। উচ্চ কন্ঠ তীব্র আক্রোশে বললো।
-“খুশি হয়েছো তুমি?শান্ত হয়ে গেছে তোমার কলিজা? জ্বালিয়ে দিয়েছি সবগুলো সাদা ড্রেস। ক্ষমতা থাকলে আমি তোমাকেও জ্বালিয়ে দিতাম।আমার হৃদয় জ্বালিয়ে তুমি শান্তিতে থাকতে পারবে না আঁধার ভাই।আমি ভালো থাকতে না পারলে তুমিও ভালো থাকতে পারবে না।”
আঁধার ঢোক গিললো।চাদনী বিছানার উপর থেকে হ্যান্ডব্যাগটা কাঁধে নিলো। সাদা সালোয়ার যেটা পরা ছিলো, যেটার জন্য আঁধার ওঁকে এতো কথা শুনিয়েছে, সেটা বদলে একটা খয়েরি রঙের সালোয়ার পরেছে ও।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় আবারো পরিপাটি করে আঁচড়ে নিলো। ওর প্রতিটা কর্মকাণ্ড হতভম্ব দৃষ্টিতে দেখলো আঁধার। অবাকের চোটে মুখ দিয়ে কথায় বেরোচ্ছে না ওর।চাদনীর জেদ ছোটবেলায়ও এমন ছিলো, এখনো আগের মতোই আছে।
চাদনী কক্ষ থেকে বের হতে গিয়ে বললো
-“স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে এসো।”
আঁধারের একপলক মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছাইয়ের
দিকে তাকিয়ে,দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরোলো কক্ষ থেকে।দু’জনে
একদম স্বাভাবিক ভাবেই বেরোলো ফ্ল্যাট থেকে।আঁধার বাকা চোখে দেখে চাঁদনী কে। চাদনীর মুখ অনুভূতি শুণ্য।এতোক্ষণ যে রাগে ফোঁসফোঁস করছিলো তার ছিটাফোঁটাও নেই মুখে।
অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরোতেই পার্কিং লটে দেখা মিললো দু’জন মানব-মানবীর।ওরা আগে থেকেই দাড়িয়ে ছিলো সেখানে।চাদনী বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো।সেদিনের সে মেয়েটা। পাশে কে ওটা? মেয়েটার স্বামী? চাদনী তাকিয়ে থাকে ওঁদের দিকে।এতো সুন্দর মেয়েটার স্বামী অমন কালো।তবুও মেয়েটা কী সুন্দর করে কথা বলছে তার সাথে। ছেলেটার চোখ পরলো ওঁদের দিকে।আধারের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে বললো
-“আরে আঁধার যে!”
-“ভালো আছেন সামিন ভাইয়া?”
-“আলহামদুলিল্লাহ! তুমি?”
-“জ্বি আমিও।”
হাসলো সে।চাঁদনীর দিকে নজর বর্তাতেই বললো
-“ও কে?”
আঁধারের উত্তর দেওয়ার আগেই,মেয়েটা উৎফুল্ল হয়ে বললো
-“এই তুমি চাদনী না! ভালো আছো?”
চাদনী হাসলো।বললো
-“জ্বি। আপনি?”
-“তোমাকে দেখে ভালো লাগছে। তুমি বেলকনিতে আর আসো না কেন? তোমাকে কতো খুঁজেছি আমি।”
আঁধার বললো
-“আপনি ওঁকে চেনেন ভাবি?”
-“হ্যাঁ। কয়েকদিন আগে বেলকনিতে দেখা হয়েছিলো। ভাইয়া ও আপনার কে হয়? চাদনী,তুমিও তো বলোনি তুমি আঁধার ভাইয়ার কে হও?”
আঁধার ইতস্তত বোধ করে।হাসফাস করে তাকালো চাঁদনীর দিকে। ওরা আঁধারের হাবভাব বুঝতে না পারলেও,
চাদনীর দৃষ্টিতে ধরা পরলো ঠিকই।আঁধার কথা কাটাতে বললো
-“অফিসে যাচ্ছেন ভাইয়া?”
-“হ্যাঁ। দেখো না, শ্রেয়া জেদ ধরেছে ঘুরতে যাবে।এদিকে আমি যাচ্ছি অফিসে।বাচ্চাদের মতো করছে।বুঝতে চায়ছে না!”
আঁধার হাসলো। চাদনী বুঝলো মেয়েটার নাম শ্রেয়া।চাদনীর খালি তাকিয়ে থাকতে মন চায় মেয়েটার দিকে।কি যে সুন্দর গায়ের রং তার।কোমড় সমান চুল, যদিও মাথায় ঘোমটা দেওয়া তবুও বিনুনি স্পষ্ট। হাতে, কানে, গলায় সোনার অলংকার। রোদের আলোয় চকচক করছে।আগের আমলের জমিদার গিন্নির মতো লাগছে মেয়েটাকে। ওনার স্বামী কে ওনার সাথে কোনো দিক দিয়েই যায় না।তবুও কি সুন্দর বন্ডিং তাদের।চাঁদনীর ভালো লাগলো। ভালোবাসলে তো এভাবেই বাসতে হবে।ভালোবাসার মানুষ ফর্সা, কালো যায় হোক তার সত্তা, সচ্ছতাই তো আসল। এদিকে ও! ওর সাদা কাপড় পরাও মানা।ওর স্বামী ওঁকে আরেকজনের সামনে পরিচয় করাতে লজ্জা পায়।
চাদনী অক্লিষ্ট ঢোক গিললো। ওঁদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলো সামনে। আধারও ওদের থেকে বিদায় নিয়ে গাগির কাছে চলে আসে। চাদনীর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে
-“চলে এলি যে?”
-“তুমি ওনাদের সামনে আমার পরিচয় দিতে লজ্জা পাচ্ছিলে তাই না?”
-“হ্যাঁ।” কাঠকাঠ স্বীকারোক্তি। কোনো ইতস্ততা নেই। ওর মতো ক্ষুদ্র,কালো একটা মানুষের নিন্দে করতে কীসের ইতস্ততা?
চাদনী মাথা নুইয়ে হাসলো।আঁধার বললো
-“ভদ্রলোক নিজের ওয়াইফ কে নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস! সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। ওনার বউটাকে দেখেছিস! কি সুন্দর! কালাচাঁদ হয়ে হুরপরী পেয়েছে, আর আমার কপাল দেখ! শুধু সুদর্শন হলেই হয় না ভাই, সুন্দরী বউ পাওয়ার ভাগ্যও থাকা লাগে।ওনাকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক মজা উড়াতাম আমি। অথচ ওনার পার্টনার কে দেখ, আর আমার পার্টনার কে দেখ। তোর পরিচয় দিলে উনি আমার উপরেই হাসতো! নিশ্চয়ই কোনো বড় পূণ্য করেছে যার জন্য এমন গায়ের রং নিয়েও সুন্দরী জীবনসঙ্গী পেয়েছে!”
-“আর তুমি কী পাপ করেছো?”
-“মানে?”
-“এই যে তুমি সুন্দরী জীবনসঙ্গী পাওনি সুদর্শন হয়েও।”
-“নিজের অজানায় কী পাপ করে ফেলেছি কে জানে! বাট ছেলেদের ক্ষেত্রে এসব গায়ের রং ফ্যাক্ট না।ছেলেদের টাকায় আসল।মানি টকস। টাকা থাকলে হিরো আলমের মতো ফেইস নিয়েও অমন সুন্দরী পাওয়া যায়।বাট আমার দুর্ভাগ্য! টাকাও আছে থোবড়াও আছে বাট সুন্দরী বউ নেই।”
আঁধার তাচ্ছিল্য করে হাসলো।চাঁদনী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এখন আর ওর কষ্টও লাগে না। শুধু আফসোস হয় কালো হয়ে জন্ম নেওয়ায়। মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায়।এ দু’টো পাপের প্রায়শ্চিত্ত সারাজীবন ধরে করে যেতে হবে ওঁকে।
আঁধার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর চোখে সানগ্লাস। একটু আগেই সব ইম্পর্ট্যান্ট কাগজপত্র জমা করে এসেছে ও। চাদনী কে বলেছে কলেজ ক্যাম্পাসের একটা চক্কর দিয়ে আসতে।যেহেতু আর কয়েকদিন পরই এ কলেজে আসতে হবে, তাই আগেভাগেই চিনে রাখলে ভালো না! চাদনী ঘুরে ঘুরে দেখছিলো সবকিছু, আঁধার বেরিয়ে এসেছে।এভাবে ওর সাথে সাথে ঘোরা নেহাতই ক্রিঞ্জ মনে হচ্ছিলো ওর।তার চেয়ে ও না থাকলে চাদনী আরো ভালোভাবে ঘুরতে পারবে।
আঁধার তাকিয়ে আছে গেইটের দিকে।অপেক্ষা করছে চাদনীর বেরিয়ে আসার।
চাদনী আসে না, তবে গেইট দিয়ে শাবিহা বের হয়ে এলো।আঁধার কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতেই ওর কাছে এগিয়ে এলো।আঁধার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কিছু বলবে তার আগেই ওর বন্ধুগুলো কোত্থেকে টপকে পরলো সেখানে।আধার অবাক হয়ে বললো
-“তোরা এখানে?”
সবাই চিল্লানি দিলো আঁধার আর শাবিহা কে একসাথে দেখে।দুজন সামনাসামনি দাঁড়িয়ে ছিলো। আঁধার সাফাই গেয়ে বললো
-“আশ্চর্য! এমন করছিস কেন?”
আমান বললো
-“আন্ধারের বাচ্চা, তোর না ঘরে বউ আছে? শাবিহার সাথে এখানে কী করিস তুই? পরকীয়া করছিস দু’জনে?”
আঁধার চোখ পাকিয়ে বললো
-“জুতা মারবো জানোয়ার।ক্যারেক্টারল্যাস মনে হয় আমাকে?আমি মাত্রই দেখলাম ওঁকে। কথা বলার সময়টা পর্যন্ত দিলি না তোরা, তার আগেই চিল্লানো শুরু করলি।পাগল-ছাগলের দল।”
রাবিব চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওর দিকে।সন্দিহান কন্ঠে বললো
-“আমরা নাহয় পাগল। কিন্তু তুই সত্যি করে বলতো, তুই এখানে কেন এসেছিস? সিটি কলেজে কী কাজ তোর?”
-“ভাই কলেজে তো কেও নাচতে আসে না তাই না! নিশ্চয়ই কোনো কাজ ছিলো তাই এসেছি।”
-“বাহ! যেই শাবিহার কাজ পরলো এখানো, ওমনি তোরও কাজ উদয় হয়ে গেলো কোত্থেকে।শাবিহা তো শুধু আমাদেরকে ডেকেছিলো।তোকে তো ডাকেনি।ছুতো বানিয়ে আসতে হতো তাই না।স্বীকার কর। এখনো ওর প্রতি ছুকছুকানি থেকে গেছে তোর।বলদ মনে হয় আমাদের কে?”
আঁধার অতিষ্ঠ হয়ে বললো
-“তোরা বলদই। কী বলছিস, কথার আগামাথা কিচ্ছু বুঝতেছি না।”
পরক্ষণেই শাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো
-“এই শাবিহা তোর কী কাজ রে এখানে? তুই এখানে কেন ডেকেছিস ওদেরকে? সবাই উল্টাপাল্টা ভাবছে। প্লিজ ব্যাপারটা ক্লিয়ার কর। বল যে আমি তোর জন্য আসিনি এখানে।”
শাবিহারও মনে হচ্ছে আঁধার ওর জন্যই এসেছে এখানে।আগেও আঁধার এমনই করতো। ওর সাথে দেখা করার জন্য উল্টাপাল্টা বাহানা বানিয়ে আসতো। অজুহাত খুজতো।যদিও এখন ও শিউর না, আসলেই আঁধার ওর আসার খবর পেয়েই এখানে এসেছে কি-না। শাবিহা বিহ্বল স্বরে বললো
-” আমার ছোট ভাইয়ের টিসি সাথে অন্যান্য ইম্পর্ট্যান্ট কাগজগুলো জমা দিতে এসেছিলাম।জানিস তো, ওর এখানে চান্স হয়েছে।কাল রাতে ওঁদেরকে বলেছিলাম কলেজের সামনে আসতে।একসাথে ঘুরতে যাবো।তোকে বলতে মানাও করেছিলাম।তুই ভাই নিউ ম্যারিড।বন্ধুদের সাথে হ্যাং আউট এ যাওয়ার চেয়েও বউয়ের সাথে টাইম স্প্যান্ড করা বেশি জরুরি। কিন্তু ওরা ভাবছে তুই সে খবর পেয়ে আমার জন্য এসেছিস!”
শেষের কথাগুলো ব্যঙ্গ করে বললো শাবিহা। আঁধার গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো।বললো
-“কিন্তু তুই তো জানিস এটা সত্যি না।”
-“তাহলে কোনটা সত্যি?”
একযোগে জিজ্ঞেস করলো সবাই।আঁধার বললো
-” আরে ইয়ার, চাঁদনীরও এখানেই চান্স হয়েছে। ওঁকে কলেজটা দেখাতে নিয়ে এসেছিলাম। ও ভেতরেই আছে। এলেই দেখতে পাবি। আর আমি নির্দোষও প্রমাণ হয়ে যাবো।আগে টিনএজ ছিলাম, পিছু পিছু ঘোরা ভালো লাগতো এসব।এখন ক্রিঞ্জ মনে হয়। এন্ড সবচেয়ে বড় কথা আমার বউ আছে।”
শাবিহার মুখটা কালো হয়ে গেলো।রাবিব গদগদ হয়ে বললো
-“ওয়াও আমাদের ভাবীও এসেছে।”
-“ডোন্ট কল হার ভাবী।অনেক ছোট হয় তোদের থেকে!”
-“তারপরও!”
শাবিহা জ্বলছে ভেতরে ভেতরে।কিন্তু দেখাতে পারছে।তক্ষুনি সেখানে চাদনী এলো।মাহাদী এগিয়ে গিয়ে বললো
-“হাই ভাবী।”
আচমকা সামনে চলে আসায়, চাদনী শিউরে দুপা পিছিয়ে গেলো। মাহাদী হাসিহাসি মুখে বললো
-“ভয় পেয়েছেন?”
আঁধার পেছন থেকে বললো
-“ওর গায়ের উপর গিয়ে পরতি, তাহলেই ভয় পেতো না ষাঁড়। সরে দাড়া ওর থেকে, ও এসবে ইউসড টু না।”
মাহাদী নিয়ে এলো ওঁকে। চাঁদনী ওঁদের সবাইকে দেখে অবাক হলো ভীষণ। সবাই যেচে কথা বললো ওর সাথে শাবিহা ছাড়া। ওর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।রাগ লাগছে খুববব। আঁধার যতই ওর প্রাক্তন হোক তবুও চাদনীর উপর হিংসা লাগছে ওর।
আঁধার চাদনীর হাত ধরে বললো
-“তাহলে তোরা যা। আমিও যাই ওঁকে নিয়ে।”
আমান ধরফরিয়ে বললো
-“যাবি মানে! আমাদের সাথে যাবি না?”
-“কেন যাবো তোদের সাথে? তোরা তো একবারও ডাকলি না আমাকে।”
-“শাবিহার জন্য হয়েছে সব।ওই বিয়াদব মহিলাই মানা করেছে তোকে ডাকতে। প্লিজ ভাই রাগ করিস না।আমাদের মধ্যে রাগ কীসের?”
শাবিহা ছাড়া সবাই জোরাজুরি করতে থাকলো আঁধার কে।আঁধার ওঁদের থামিয়ে বললো
-” আরে আমি রাগ করিনি।যেতাম তোদের সাথে।বাট চাদনী আছে। ওঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে আমাকে।”
তটিনী বললো
-“চাদনী আছে তো সমস্যা কী? চাদনীও যাবে আমাদের সাথে। ঢাকা শহরও ঘোরা হবে ওর।”
আঁধার চাদনীর দিকে তাকিয়ে বললো
-“যাবি? তোর বড় আপুদের সাথে থাকবি আরকি! তোরও তো ঘোরার অনেক শখ!”
চাদনী কনফিউজড হয়ে পরলো।উত্তর দিতে যাবে তার আগে শাবিহা ছ্যাৎ করে উঠে বললো
-“ও কেন যাবে? আমাদের বন্ধুমহলে অন্য কারও ঢোকার পারমিশন নেই।”
-“ভাই ও আঁধারের বউ আমাদের সাথে গেলে সমস্যা কী? এমন নিষ্ঠুরের মতো বিহেভ করছিস কেন?” আমান বললো।
শাবিহা ঝাঝালো কন্ঠে বললো
-“সমস্যা নেই।আবার আছেও। আমরা যখন ফ্রেন্ডরা একসাথে হই আমরা আমাদের বয়ফ্রেন্ড বা তোরা তোদের গার্লফ্রেন্ড কে পর্যন্ত নিয়ে আসিস না।তটিনী একবার ওর বিএফ কে নিয়ে এসেছিলো বলে যে ঠেস মারলি! সেটা আঁধারের বেলায় হবে না কেন? ওর বউ আমাদের সাথে যেতে পারবে না। আমাদের ফ্রেন্ডশিপে আমি কাউকে ঢুকতে দেবো না!”
চাঁদনীর খুব গায়ে লাগলো কথাগুলো। আঁধার জানতো এমনটাই হবে।কেও রিএক্ট না করলেও শাবিহা করবেই।
এটা ওদের বন্ধুমহলের রুলস।ওরা মানে শুধু ওরাই।এখানে ওদের জিএফ, বিএফ, বউ কিচ্ছু এলাউ না।
চাঁদনীর দিকে একপলক তাকালো ও। চাদনী ইশারা দিয়ে বলছে ও যাবে না।
আঁধার শাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো
-“ঠিক আছে চাদনী যাবে না।”
-“কিন্তু তুই যাবি।”
-“না! আমিও যাবো না।”
-“কেন কেন? যাবি না কেন? ও তোর বউ যেতে পারবে না তাই? একমাসের একটা সম্পর্কের জন্য ছয় বছরের বন্ধুত্ব ভুলে যাচ্ছিস। আমাদের চেয়ে ও বেড়ে গেছে? খুব গুরুত্বপূর্ণ ও তোর জন্য?”
আঁধার উত্তর দেওয়ার আগেই আমান বললো
-“চাদনী আঁধারের বউ।অবশ্যই ও সবার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওর কাছে।ও বেড়ে না গিয়ে নিশ্চয়ই তুই বেড়ে যাবি না।”
-“চুপপ একদম।আমি আঁধারের সাথে কথা বলছি।নাক গলাবি না একদম।”
আমান মুখ ফেরালো।শাবিহা তাকালো আঁধারের দিকে। রেগেমেগে বললো
-“তুই যাবি না আমাদের সাথে?”
আঁধার পরলো অথই সাগরে। ওর খুব যেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু চাদনী কে একা ছাড়তেও পারছে না। আঁধার অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো চাদনীর দিকে।চাদনী বলছে না কিছু।
আধার শাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো
-“চাদনী একা কী করে যাবে?”
-“ক্যাব বুক কর ওর জন্য। ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে দে তাহলেই তো হয়। আমার ছোট ভাইও ওর বয়সীই, একাই বাড়ি চলে গেছে।”
-“তোর ছোটভাই ছোটবেলা থেকে এখানেই বড় হয়েছে। চাদনী এখানকার কিছুই চেনে না।ওর গ্রামে তোর ছোটভাই কে নিয়ে ছেড়ে দিলে সেও অসহায় হয়ে পরবে।”
শাবিহা মুখ বাকালো।আঁধার অবশেষে শাবিহার কথা মেনে নিলো, সিদ্ধান্ত নিলো সে ওঁদের সাথেই যাবে।চাদনী কে গাড়িতে উঠিয়ে দেবে। ও ওর বন্ধুদের ছাড়তে পারবে না। ওর মনও মানছে না ফ্ল্যাটে চলে যেতে। ওঁদের সাথে একটা হ্যাংআউট ও মিস দেয় না আঁধার। চাদনী তো বাচ্চা না, কলেজের দূরত্বও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেশি দূরে না।চাদনী কে যখন জিজ্ঞেস করা হলো ও একা যেতে পারবে কিনা, চাদনী বললো ‘পারবে!’
কাজলরেখা পর্ব ৭
আঁধার সিএনজি দাঁড় করালো ওর জন্য। চাদনী উঠে বসলো গাড়িতে।আঁধার নিজের অ্যাপার্টমেন্টের ঠিকানা বলে দিলো ড্রাইভার কে।সাথে ভাড়াও দিয়ে দিলো।আবার চাদনীর কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
-“সাবধানে যাস। সরি বাচ্চা। আমি চলে গেলে ওরা রাগ করতো।”
চাঁদনী মলিন হাসে ওর দিকে তাকিয়ে। গাড়ি ছেড়ে দেয়। আঁধার তাকিয়ে থাকে গাড়িটির দিকে।যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়ে থাকে।চাঁদনী অদৃশ্য হয়ে যায় আঁধারের চোখের দৃষ্টিসীমানা থেকে।