কাজলরেখা পর্ব ৯

কাজলরেখা পর্ব ৯
তানজিনা ইসলাম

মনমরা হয়ে গাড়িতে বসে আছে চাঁদনী।ক্ষণকাল পর পর বারংবার চোখ মুচছে ও।ওর খুব কান্না পাচ্ছে! আকিব শিকদারের কথা মনে পরছে ভীষণভাবে।মানুষটা কোনোদিন ওঁকে একা ছাড়তো না।চাদনী হাইস্কুলে ওঠার পরও সে সঙ্গে করে নিয়ে যেতো ওঁকে। বলতো তার মেয়েটা খুব নরম, ননীর পুতুল।একা একা কোথাও যেতে পারবে না। যদি হারিয়ে যায়, আকিব শিকদার কি করে বাঁচবে!অথচ তার মেয়েটাকে আজ ওই মানুষটা একা ছেড়ে দিলো যাকে ওর বাবা বিশ্বাস করে ওর দায়িত্ব দিয়েছিলো।এই বিশাল শহরে যার ভরসায় ওঁকে পাঠিয়েছিলো, সে একবারো চাদনীর পরোয়া করলো না। চাদনী খুব অসহায় হয়েই আসতে পারবে বলেছিলো।কারণ আঁধার চাচ্ছিলো, চাদনী এ কথাটা বলুক আর ও চাদনীকে একা পাঠিয়ে দিবে। চাদনী চায়নি ওর উপর আর বোঝা হতে। তাই একা আসতে ভয় লাগবে জেনেও হ্যাঁ বলতে বাধ্য হয়েছে।

আঁধার ওঁকে কতটা অসহায় বানিয়ে দিয়েছে।নিজে তো কথা শোনায়-ই, এখন বন্ধুদের দিয়েও কথা শোনাচ্ছে।কোলের উপর রাখা ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরলো চাদনী। আঁধারের বন্ধুগুলোকে দেখেই এখন ও রিয়ালাইজ করতে পারছে, কেন আঁধার ঢাকায় আসার পর, এতোটা বদলে গেছে।ঢাকা বড় শহর হলেও এখানকার মানুষগুলোর মন একটুও বড় না।ওরা নিষ্ঠুর। চাঁদনীর খুব করে একটা সাহারার প্রয়োজন। ও একা পারছে না।ও কখনো একা হাঁটতে শেখেনি। একা কোথাও যায়নি।সারাজীবন ওর বাবা ওর সাথে ছিলো।কেন ওঁকে বিয়ে দেওয়ার সময় মানুষটা ওর কথা একবারো ভাবলো না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই চাদনীর ভাবনার সুতো কাটে। ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নামলো ও।গেইট দিয়ে ঢুকতেই দারোয়ান দেখলো ওঁকে। কেমন করে যেন তাকালো ওর দিকে। তাকানোর ধরণ দেখে চাদনীর গায়ে কাটা দেয়।ওড়নার কোণা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে, নিজেকে ওড়নার আড়ালে আরেকটু ভালো করে আবৃত করে ও।
চাবি দিয়ে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢোকে চাদনী। তক্ষুনি চ্যাম্প দৌড়ে এসে ওর সামনে দাড়ায়।হাঁটু মুড়ে, লেজ নেড়ে ওঁকে স্বাগত জানায়। চাদনী মলিন হেঁসে হাত বুলিয়ে দেয় ওর গায়ে।এ কয়েকদিনে ভালোই বন্ডিং হয়েছে ওঁদের। চাদনী এখন আর ভয় পায় না।

চাদনী গিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসলো সোফার উপর। ড্রইংরুম অন্ধকার। জানালাগুলোর উপর পর্দা টানানো। দিন না রাত বোঝা যাচ্ছে না। চাদনী সিলিংয়ের দিকে তাকালো। অপলক তাকাতে গিয়ে চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়ালো। চ্যাম্প লাফিয়ে লাফিয়ে ডাকতে থাকলো ওঁকে। চাদনী কে কাঁদতে দেখে উতলা হয়ে গেছে ও।চাদনী মাথা তুলে তাকালো ওর দিকে। হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলো ওঁকে।চ্যাম্প এগিয়ে আসে দুপা তুলে দেয় ওর হাঁটুর উপর।চাদনী শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওঁকে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো

-“হেই, তুমি আমার কথা ভাবছো চ্যাম্প।আমাকে কাঁদতে দেখে কষ্ট হচ্ছে তোমার? আমার কথা কেও ভাবে না জানো! আমাকে ওরা মানুষ বলে মনে করে না।আমাকে কেও ভালোবাসে না চ্যাম্প।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”
চ্যাম্প করুন স্বরে ডেকে ডেকে কী যেন বোঝালো ওঁকে। চাঁদনী হিচকি তুললো। ও বুঝলো না চ্যাম্পের ভাষা।ওর শুধু কাঁদার জন্য একটা কাঁধের দরকার ছিলো।ও খুব একা! ওঁকে কাদতে দেখে স্বান্তনা দেওয়ার মতো কেও নেই।
চ্যাম্প ওর পুরো পুতুলের মতো দেহটাকেই দিয়ে দিয়েছে যাকে ধরে চাদনী কাঁদতে পারবে।
অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর চাদনী ছাড়লো ওঁকে। দু’হাতে বাচ্চাদের মতো করে চোখ মুছলো। বিরবির করে বললো

-“আঁধার ভাই, খুব কী দরকার ছিলো আমাকে এভাবে ভাঙার? আমি তো তোমার শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী নই।আমার প্রতি কীসের এতো আক্রোশ তোমার? কেন তুমি আমাকে মানুষ বলে মনে করো না? সহ্য না হলে দূরে থাকো, আবার কাছে এসে ভালোবাসা দেখাও কেন? আমি তো দেখতে চাইনা। তোমাকে ছাড়ার ক্ষমতা আছে আমার, কিন্তু তোমার এভাবে গিরগিটির মতো রং বদলানো মেনে নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।বহু বছর ধরে কথার আগুনে জ্বলে আসা অঙ্গার আমি, আমাকে এভাবে ধ্বংস করার যুদ্ধে নেমো না। আমি হেরে যাচ্ছি। তোমাকে ভালোবাসা হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই না!”

আঁধারের মুখটা কালো। চাদনী কে বিদায় দিয়ে আসার পর থেকেই নিরীহ মুখ করে বসে আছে ও।
শাবিহা অনেক্ষণ ধরেই খেয়াল করছে ব্যাপারটা।ইভেন সবাই।কারণ আঁধার আসার পর থেকে একবারও হাসেনি। অথচ বন্ধুদের সাথে ওঁকে ভীষণ উৎফুল্ল দেখা যায়।রেস্টুরেন্টে বসে হাসিতামাশা করছে সবাই।কর্ণারের দু’টো টেবিল বুক করেছে ওরা। অথচ আঁধারের মুখে অমাবস্যা! শাবিহা ওর পাশেই বসেছিলো।ক্ষণকাল পরপর বাঁকা চোখে দেখছিলো ওঁকে। আঁধারের এ নিরবতা ভীষণ চোখে লাগছে ওর। শাবিহা একটু কাছে গেলো ওর। পাংশুটে মুখে বললো

-“কী হয়েছে?”
আঁধার একপলক তাকালো ওর দিকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“কী হবে?”
-“ঠিক আছিস তুই?”
শাবিহা ওর হাত ধরতে গেলো। আঁধার ছাড়িয়ে নিলো।গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“ঠিক আছি আমি!”
-“তুই এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকার জন্য এসেছিস?”
-“ঘুরতেই এসেছি।কিন্তু ইচ্ছা করছে না এখন।”
-“কেন ইচ্ছে করছে না?”
-“জানি না।বাসায় চলে যাবো!”
-“বউয়ের জন্য মন পুড়ছে?”
ব্যঙ্গ করে বললো শাবিহা। আঁধার চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“যেটা ভাবিস।”
শাবিহা জ্বলে উঠলো। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা দু’জন ছাড়া বাকি সবাই গল্পে মশগুল। ফিসফিস করে বললো

-“বাহ! বিয়ের একমাসও তো হলো না। তাতেই এ অবস্থা! বউ পাগল হয়ে গেছিস। আচ্ছা, এমন পাগলামি তো তুই আমার জন্যও করতি। তুই বলেছিলি তোর বউ আমার চেয়েও সুন্দর হবে, তাকে তুই আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবি। বাট ও আমার চেয়ে সুন্দর না, বেশি কী হবে আমার চেয়ে কম সুন্দরও না। একদম কালোই বলা চলে ওঁকে। খুব সুন্দরী হলে তোর এসব পাগলামি আমি মেনে নিতাম।বাট ও যেমন তাতে তোর এসব কনসার্ন ঠিক মেনে নিতে পারছি না।”
আঁধার আগুন দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে।বিমূঢ় স্বরে বললো

-” মুখ সামলা শাবিহা।সবসময় ওঁকে নিয়ে এসব কথা বলার সাহস কই পাস তুই? কিছু বলি না বলে লিমিট ক্রস করে ফেলছিস! ও কালো না, শ্যামলা। ও ওর মতোই সুন্দর। তোর মতো সুন্দর হওয়ার দরকার নেই ওর। আর আমি পাগলামি করছি না ওঁকে নিয়ে।শুধু চিন্তা হচ্ছে ও একা যেতে পেরেছে কি-না!বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে এসব বলছিস লজ্জা করছে না?তোর ছোট ভাইয়ের বয়সী ও।তুই আমাকে পিঞ্চ মেরে এসব শোনাস আর আমি বাসায় গিয়ে ওর উপর এসব ঝাড়ি।রেহাই দে ভাই। বিয়ে আমি করেছি তো, তাই কনসার্ন টাও আমার। ও কালো না সাদা সেটা না-হয় আমিই বুঝে নেবো।”

আঁধার শেষের কথাগুলো কিছুটা উচ্চস্বরে বললো। শাবিহা থতমত খেলো।ওর বন্ধুরা সবাই অবাক হয়ে তাকালো ওঁদের দিকে।শাবিহা লজ্জায় পরে যায় ওঁদের সামনে। তটিনী উদ্বিগ্ন স্বরে বললো
-“কী হয়েছে আধার? এমন করছিস কেন?”
-“তোর বান্ধবী কে নিজেকে সামলাতে বল। ওঁকে বোঝা যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।নিজেই ব্রেকআপ করেছে ও, এখন কেনো এমন করছে?”

-“কী করেছে ও?”
-” আমি ম্যারিড এটা জানা সত্বেও, গায়ে পরছে আমার! চাদনী কে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা শোনাচ্ছে। সবসময়ই শোনায়। হজম করে নিই।এখানে হজম করি, ওখানে গিয়ে বেচারি মেয়েটার উপর ঝাড়ি সব। ও কী ভাবছে, ওরে রাগ দেখাইতে পারবো না আমি? ও আমাকে রাগায় দেয়, আর আমার রাগের স্বীকার হয় অন্য আরেকজন।ওঁকে কে অধিকার দিয়েছে একটা মানুষকে নিয়ে এভাবে কথা বলার! বেয়াদব!”
শাবিহার রাগে অপমানে কোটরে অশ্রু জমে।অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাকালো ও। ব্যকুল স্বরে বললো

-“ব্রেকআপ করিনি আমি। শুধু একটু সেপারেশন চেয়েছিলাম।একটু সময় চেয়েছিলাম তোম থেকে।
তুই সময় দিলি না আঁধার। গ্রামে চলে গেলি,আরেকজনকে বিয়ে করে নিলি। আমার কথা একবার ভাবলিনা পর্যন্ত। এটাই আমি মানতে পারছি না।তুই মুভ অন করেছিস ঠিকই।কিন্তু আমি এখনো এ সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারিনি।”
-“আমার ঠেকা নাই তোর কথা ভাবার।কতোটা পাগলামো করেছিলাম, আমি তোর জন্য তখন। তুই আমার সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলি।নিজের ইচ্ছায় সম্পর্কটা ভেঙেছিস তুই! আমার ইগো হার্ট করেছিস।”

-“এতো ইগো তোর? ভালোবাসার চেয়ে ইগো বেড়ে গেলো। তাহলে তো তুই আমাকে ভালোইবাসিস নি কোনোদিন। একবারো ভেবেছিস কেন যোগাযোগ বন্ধ করেছিলাম। ভাবিস নি! শুধু তোর সাথে না, সবার সাথে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছিলাম। আমি কতোটা মেন্টাল ডিপ্রেশন, ফ্যামিলি প্রবলেমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম একবারো জানার চেষ্টা করিসনি।তুই খালি ভাবিস নিজের কথা।তুই কী ফিল করিস, তোর কেমন লাগে! আরেকজনের ইমোশন,আবেগের কোনো দামিই নাই তোর কাছে।তুই একটা স্বার্থপর মানুষ।”
অসহায় স্বরে বললো শাবিহা।

-“হ্যাঁ আমি স্বার্থপর-ই। আসলেই আমি অনেক স্বার্থপর। নয়তো তোর মতো একটা বেইমানের কথা আমলে নিয়ে আমি চাদনীর সাথে খারাপ বিহেভ করতাম না।বাচ্চা মেয়েটা কে আমি এতোটা কষ্ট দিতাম না।ওর মুখের দিকে তাকালেই আমার খারাপ লাগে।কতটা কষ্ট দিই আমি ওঁকে।”
শাবিহা তীব্র আক্রোশে চায়লো।ঝাঝালো স্বরে বললো

-“আমার কথায় কষ্ট দিস?বাহ! এতোটা মানিস আমার কথা, জানতাম না তো।জানো*য়ার! নিজের দোষ বলবি না তারপরও তাই না।তুই যে কতো বড় সুন্দরের পূজারী আমি জানি না?কালো মানুষদের দেখলে কীভাবে তুই ঠেস মেরে কথা বলিস, আমাদের সাথে গসিপ করিস আমি জানি না। ভাই তোরে ছয় বছর ধরে দেখে আসতেছি আমি। মানুষের একটা খুত পাইলে কীভাবে সেটা নিয়ে ঘাটাস তুই!কীভাবে মানুষের বডি শেমিং করিস, বর্ণবাদ করিস। ইউ আর এ রেসি*স্ট!

সেখানে তোর বউ কালো।আর আসল কথা কী জানিস, তুই এটা মানতে পারিস না যে তোর বউ কালো। তাই তুই ওর সাথে এতোটা খারাপ বিহেভ করিস।এখানে আমার ইন্ধন দেওয়ার কিছু নেই।”
আঁধার কিছু বলতে পারলো না। শাবিহার কথাগুলো ওর পয়েন্টে পয়েন্টে লেগেছে একদম।আসলেই আঁধার এমন। ও নিম্নলেভেলের রে*সিস্ট। ছোটবেলায়ও সে এমনই ছিলো। তবে তখন ওর বিহেভিয়ারগুলো তেমন বেশি প্রকাশ পেতো না। বড় হওয়ার সাথে সাথে ওর এই বডি শেমিং, বর্ণবাদ আরো বেড়ে গেছে।
আঁধার শাবিহার সাথে কথায় হেরে যাওয়াটা মানতে পারলো না। টেবিলে বারি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে।ওর বন্ধুরা সবাই পিছু ডাকলো অনেকবার।আঁধার শুনলো না।

সদরদরজা ভেতর থেকে লক করা না।শুধু আজলে বেঁধে রাখা হয়েছিলো। একবার ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো আঁধারের কপালে ভাজ পরে। চাদনী দরজা লক করলো না কেন! বিভ্রান্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো ও। দেয়াল হাতড়ে সুইচ টিপে লাইট জ্বালালো।চাঁদনী ঘুমিয়ে আছে সোফার উপর। পা দু’টো ঝুলে আছে সোফার নিচে।ওর পায়ের কাছে চ্যাম্প ঘুমাচ্ছে। আঁধার গিয়ে মেঝেতে সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসলো। চাদনী এমন গুটিশুটি মেরে শুয়েছে যে উঠলেই হাড়ে হাড়ে ব্যাথা টের পাবে।ওর পা দু’টো সোফার উপর তুলে দিতে চায়লো আঁধার। চাঁদনীর ঘুম ভেঙে গেলো। আঁধার কে দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসলো ও। চোখ কচলে বললো

-“তুমি চলে আসছো?”
-“হ্যাঁ! এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিস যে দু’জনে।”
-“বাবার সাথে কথা বলার পর কখন যে ঘুম চলে এলো টেরই পেলাম না।”
আঁধার তাকালো ওর মুখের দিকে।উদগ্রীব স্বরে বললো
-“রাগ করেছিস তুই আমার উপর?”
-“রাগ কেন করবো?” কপালে ভাজ ফেলে বললো চাঁদনী।
আঁধার উত্তর দিলো না। মেঝেতে ঘুমন্ত চ্যাম্পের দিকে তাকিয়ে বললো
-“সরি চাঁদ! আই এম সো সরি!”
-“আরে ভাই সরি কেন বলছো সেটাতো বলবে।”

আঁধার চুপ করে থাকলো বললো না কিছু। চাদনী সোফার উপর রাখা ওর মোবাইলে সময় দেখে নিলো।দু’টো বাজে। মাত্র দুপুর হয়েছে! আঁধার এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। চাদনী বললো
-“তোমার বন্ধুদের সাথে না বেড়াতে গেলে! এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে যে?”
-“এমনিই ভালো লাগছিলো না।তোর আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?”
-“আমার অসুবিধার কথা খুব ভাবো? এতো ভাবলে তো একা ছেড়ে দিতে না।তুমি জানো আমি একা কোথাও যেতে পারি না।একা চলতে শিখিনি আমি।তারপরও আমাকে একলা ছেড়ে দিলে!”
আঁধার হাঁটুতে থুঁতনি ঠেকিয়ে বসলো।মিনমিন করে বললো

-“শাবিহার কথায় কষ্ট পাস না।ও আসলে এমনই।একটু রুড।”
-“তোমার চেয়ে বেশি না। তোমার কথা এতো শুনেছি আমি, তার কথা পান্তাভাতই মনে হলো আমার কাছে।”
চাদনীর পা দু’টো আঁধারের গা ছুইছুই ছিলো। আঁধার ওর পা দু’টো নিজের কোলে নিলো। চাদনী সরাতে চায়লো।আঁধার চেপে ধরে রাখলো।
-“পায়ে হাত দিও না!”
-“তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হয় চাঁদ। আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই না।তবুও কেমন যেন উল্টাপাল্টা বিহেভ করে ফেলি তোর সাথে।”

-“সেন্টিমার্কা কথা বন্ধ করো।ঘিন লাগতেছে আমার!”
-“তুইও এখন রুড বিহেভ শুরু করেছিস আমার সাথে।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো আঁধার। চাদনী বাবু হয়ে বসে থাকে।আঁধার ওর পা ছাড়ে না। ওর আঙুল গুলো নেড়েচেড়ে দেখে।যেন ওর পা একটা খেলনা, আঁধার ওর পা নিয়ে খেলছে।অনেকটা সময় নিরবতায় কেটে যায়। চাদনী একটু পর কেমন করে জিজ্ঞেস করে

-“তুমি আর শাবিহা আপু রিলেশনে ছিলে?”
-“রিলেশন কী?”
-“জানো না তুমি?”
-“না তো!”
আঁধার হাসলো।চাদনীর মনে হলো আঁধার ওঁকে তাচ্ছিল্য করে গা জ্বালানো হাসি দিয়েছে। চাদনী মুখ বাকালো।
-“নাটক করো কেন?”
-“অনেক কিছু জানিস দেখি! আমি তো তোরে অনেক ইনোসেন্ট মনে করেছিলাম!”
-“বাচ্চা নই আমি। বড় হয়েছি অনেক।এসব তো এখন নর্মাল।”
-“বাহ! বাহ! নর্মাল এখন? তা, কতো বড় হয়েছেন আপনি? রিলেশন জানেন, রিলেশন এ যুগে নর্মাল সেটাও জানেন। খুব পেকে গেছেন? গ্রামে তো এসব নর্মাল না! ইন্টারনেট তোদের কে একদম বরবাদ করে দিয়েছে! শুনেছিলাম ক্লাস সিক্সে থাকতে এন্ড্রয়েড পেয়েছিলি। এসব শিখেছিস তাই না!”

-“পিঞ্চ মারছো কেন? তোমার মতো বরবাদ হইনি অন্তত।”
আঁধার হাসলো।ভাবুক স্বরে বললো
-“আচ্ছা চাঁদ, তোর কেন মনে হলো আমি আর শাবিহা রিলেশনে ছিলাম?”
-“জানি না।হঠাৎ মাথায় আসলো, তাই বললাম!”
-“ওঁকে নিয়েই কেনো? তটিনীও তো আমার ফ্রেন্ড। ওর কথা তো বললি না! শাবিহাই কেন?”
-“কেমন করে দেখছিলো আমাকে! তারউপর ওইরকম বিহেভিয়ার করলো। ওনার প্রতিটা কথায় জেলাসি খুঁজে পাচ্ছিলাম।”
-“তোর কমনসেন্স খুব ভালো! তুই অনেক টেলেন্টেড চাঁদ। দেখিস তুই একদিন অনেক সাকসেসফুল হবি!”
চাদনী চুপ করে থাকে। একটু পর জিজ্ঞেস করে

-“তুমি শাবিহা আপু কে ভালোবাসতে?”
-“ভালোবাসা কী?”
-“আমি কী করে জানবো? আমাকে তো কেও কোনোদিন ভালোবাসেনি।”
আঁধার তাকালো চাঁদনীর দিকে। ওর মুখটা গোমড়া। দিনের বেশিরভাগ সময় ওর মুখে এভাবে ঠাডা পরে থাকে।যেন হেঁসে কথা বলা মানা। আঁধার উদাস হয়ে ওর হাঁটুর উপর মাথা রাখলো। চাদনী ঠোঁটে ঠোঁট চাপলো, সরিয়ে দিতে চায়লো ওঁকে। আঁধার আরো গেড়ে বসে।অস্থির স্বরে বল
-“আমি যদি বলি, আমি ওঁকে ভালোবাসি।তুই কষ্ট পাবি?”
-“না আমি কেন কষ্ট পাবো!”

-“কষ্ট পাবি না? এই যে তোর হাসবেন্ড আরেকজনকে ভালোবাসে এটা জেনে তোর খারাপ লাগবে না।”
-“খারাপ লাগতো! যদি আমাদের মধ্যে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকতো। সেটা হাসবেন্ড হোক বা কাজিন নামক একটা খুব প্রিয় মানুষ। কিন্তু তুমি তো আমাকে মানুষ বলেই মনে করো না, বউ তো অননেক দূর। সেখানে অন্য নারীর কথা শুনে খারাপ লাগার প্রশ্নই উঠে না!”
-“তুই অনেক ম্যাচিউর হয়ে গেছিস চাঁদ। তুই আর আগের মতো নেই, বদলে গেছিস।”
-“তোমার বদলে যাওয়ার সামনে আমার বদলে যাওয়া কিছুই না।”
-“প্লিজ তুই বদলাস না।তুইও যদি বদলে যাস, তোর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কী থাকলো! তুই তো অনেক ভালো, আমার মতো খারাপ নোস। তোর বদলে যাওয়া আমার সহ্য হবে না।”
চাদনী গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো আঁধারের দিকে। আঁধার বললো
-“কিন্তু শাবিহা আমাকে ভালোবাসতো জানিস।খুবব ভালোবাসতো! ইভেন, এখনো হয়তো ওর ফিলিংস আছে আমার জন্য!”

-“দেখেই বোঝা যায়!ভালোবাসা তো হারিয়ে যায় না। তুমি ভালোবাসতে কি-না সেটা তো বললে না?”
-“ভালোবাসতাম কি-না জানিনা, কিন্তু ওর জন্য অনেক পাগলামি করেছিলাম।”
-“কীরকম পাগলামি?”
-“খুব ক্রিঞ্জ! শুনলে, হাসবি!”
-“শাবিহা আপু তোমাকে এতো ভালোবাসলে,ব্রেকআপ কেন হলো তোমাদের?তুমি ভেঙেছো সম্পর্ক?”
-“না। ও ভেঙে দিয়েছে।”
চাদনী চুপ করে গেলো।আধারও চুপ। একটু পর চাদনী বিমর্ষ স্বরে বললো
-“শাবিহা আপু যদি ফিরে আসতে চায়?”
-“চাবে না! ও জানে আমি কতোটা টক্সিক!”
-“ধরে নাও! চায়লো।”

কাজলরেখা পর্ব ৮

-“ধরতে টরতে পারবো না ভাই কিছু।কিন্তু যদি সত্যিই এমন কিছু হয়, আমি খুব খুশি হবো চাঁদ। কারণ আমি সেদিন তোকে মুক্ত করে দিতে পারবো।তোর এই বন্দিদশা, এই অসহায়ত্ব আমার আর ভালো লাগছে না।তুই আমার চেয়েও বেস্ট কাওকে ডিজার্ভ করিস!”

কাজলরেখা পর্ব ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here