কালকুঠুরি পর্ব ২০

কালকুঠুরি পর্ব ২০
sumona khatun mollika

সামিরকে দুরন্ত বেগে গাড়ি ছোটাতে দেখে কাশেম আর রনি বাইক নিয়ে তার পিছু ছুটেছে। সামির সোজা তিহানের ক্লাবে । সকলের মাঝে থেকে তিহান আর শায়েখকে ধরে বেধে গাড়িতে তুলে পদ্মা নদীর পাড়ে চলে আসে। পার্ক কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে।

কাশেম আর রনি মিলে দুজনকে দড়ি দিয়ে বেধে সামনে বসিয়ে রাখল। সামান্য ভয় দেখাতেই কর্মরত লোকগুলো সরে দাড়ালো।
কাশেম মোটা একটা দড়ি দিয়ে তিহান আর শায়েখকে ক্রেনের মাথায় বেধে দিল। কালবৈশাখীর মৌসুম। নদীতে ভয়াবহ পাক। বাঁধার কাজ শেষ হলে সামির সোজা ক্রেনের ভেতরে চড়ে বসে। হুইল ঘুরিয়ে ক্রেনের মাথা নদীর পাড় থেকে একটু দূরে পানির ওপর নিয়ে থামালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুজনকে একবার ডুবিয়ে তুলতেই দুজনা কাহিল। কাশেম গলা উচিয়ে বলল,,
” বল, মাহাদিবা কোথায়? ”
– আমরা জানিনা। সামির,, সত্য আমরা জানিনা।
আবারো এক চুবানি দিয়ে ৩ মিনিট অপেক্ষা করে আবার ওপরে তুলে সামির অকপট স্বরে বলল,,

– অসময়ে দুষ্টুমি একদম পছন্দ নয় ভাই,,, আমার নাম , সামির বাঙ্গি ,, এমনি এমনি এলাকা কাপানো শুয়োরের নাতি নই। ৷,,, চোখদুটোর সীমানা বহুতদূর,, ৩ সেকেন্ডে মুখ না খুললে আমি তোদের শহীদ কইরা দিম । শায়েখ চেচিয়ে উঠলো,
– নাআ ,, নাআ,, আমি জানি,, রাফি,, রাফি, রাফি কিডন্যাপ ক করেছে মা,, মা,, মাহাকে।
বাকি কিছু জানিনা। আমার কাজ ছিল জুড়ে জুড়ে গান বাজানো। আর কাদানে গ্যাস মারা । কখন মারবো, এটার খবর দিতেই ছদ্মবেশে ওখানে গেছিলাম।

তিহান আর শায়েখ কে ওভাবে ঝুলিয়ে রেখেই সামির, কাশেম আর রনি চলে যায়। কন্সট্রাকশনের লোকগুলো ধরাধরি করে নামায় দুজনকে। ।
গাড়িতে চড়ে বসতেই কল আসে বান্টির। শুকনো
কণ্ঠে জবাব দেয়,,
” ভাই ফেরত আসেন ”

সামির কিচু জিজ্ঞেস না করে সোজা সিকান্দার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। পথিমধ্যে কল আসে ইনায়ার।
” সামির ভাই? নিতে আসবেন? ”
” কোথায় তুই? ”
” জ্বি এখনো নানুর বাড়িতে। ”
” ফিরিসনা। আরো কিছুদিন থেকে আয়, সিকান্দার বাড়ির কারো কল তুলবিনা। ”
” কেন? আপনি ঠিকাছেন? ”
” আমি কখনো বেঠিক থাকিনা, যা বললাম তাই শোন। সময় মতো লোক পাঠিয়ে দেব ”
“আচ্ছা ”

সিকান্দার বাড়ি পৌঁছাতেই বান্টি এসে বলল,,,
” ভাই,, ভাবি নিজ দোষে হারায়ছে ”
জজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সামির, বান্টি অন্য একজনের ফোনে একটা ভিডিও চালু করে দেখাল,,
” আপনার বিয়া বলে কথা, ছুড়ারা সব ছবিটবি তুলে বিডিও বানাইছে ”

ভিডিওতে আবছা দেখা যাচ্ছে, গাড়ি দাড় করানোর সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক নারীর কোল থেকে তার শিশু বাচ্চা মাটিতে পরে যায়। ধোয়া বেশি হলে বাচ্চাটাকে হয়ত গাড়ি পিষে ফেলত, মাহা নিজে থেকে বেরিয়ে এসে বাচ্চাটাকে তুলে হাতরে হাতরে মায়ের হাতে তুলে দেয়। ধোঁয়া নাকে মুখে ঢুকে যাওয়ায় কাশতে থাকে ,, পেছন থেকে পুরো মুখটা কালো কাপড়ে ঢাকা এক লোক মাহাকে নাকে রুমাল চেপে অজ্ঞান করে কাঁধে তুলে নিয়ে যায়।

সাফিন কিছুই বলছেনা চুপচাপ বসে বসে কিসের কাগজপত্র দেখছে। সিয়াম বলল,,
– যাইহোক না কেন ওকে খোঁজাটা বেশি জরুরি। খুজবো কিভাবে?
সামির সোজা নিজের ঘরে চলে গেল। সিয়ামের ইশারায় কাশেম পিছে পিছে গেল। ঘরে গিয়ে সামির গায়ের পাঞ্জাবি খুলে লাল শার্ট আর সাদা লুঙ্গি পড়ল, হাতের চেইনের মতো ব্রেসলেটটা তো কখনই খোলেনা। আরেকহাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিংটেবিলের ওপর রাখলো।

প্রথম ড্রয়ার খুলে রুমালের মতো কালো কাপড় বের করল। নাক পর্যন্ত বেঁধে কাশেমের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কেও আমার পিছু করেনা জেন, নাহলে ভালোবাসা পেছনে দিয়ে দেব, , ”
হাতে একটা ছোট তবে ধারালো ছুড়ি নিয়ে নিচে নেমে বাইরের পথে পা বাড়াতেই সালার সিকান্দার বাদা দিয়ে বলল,,
” পুলিশ কে ইনফর্ম করেছি,, ওরা মাহাদিবা কে পেল বলে, তোর বেরোনোর প্রয়োজন নাই ”
” পুলিশ কটা বাল ছিঁড়তে পারে আমার জানা আছে। , হাত সরান নাহলে হাত কাইট্টা সামনে আগামু ”

সালার সিকান্দার হাত নামাতেই সামির ওভাবেই বেরিয়ে যায়। বাড়ির বাইরে এসে জোরেসোরে শিস বাজাতেই, কোথা থেকে একটা কুকুর ছুটে আসে ,
সামির তাকে দেখে বাকা হেসে বলে,,
– রিটো,, আমার বউ চুরি গেছে,, খুঁজে দে না,, নইলে শালার ইজ্জতের পেছনমারা যাবেগা।
রিটো, গলায় লাল বেল্ট জড়ানো ভয়ানক দাঁতের অধিকারী , বাদামি রঙের একটা বিদেশি কুকুর৷ এদের গ্রাণশক্তি প্রচন্ড প্রখর,

সামির মাহার ওড়নাটা তার দিকে এগিয়ে দিলে সে সেটা শুঁকতে শুঁকতে জ্বীভ বের করে তার আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে৷ তারপর ছুটতে ছুটতে সামিরকে পথ দেখায়,, বাইক ছুটিয়ে সোজা গোরস্থান সংলগ্ন ৩ নাম্বার গলিতে গিয়ে পৌছাল। রিটো এখান থেকে আর নড়ছেনা। মানে, হয় মাহা আশেপাশেই আছে আর নাহয় এখান পর্যন্তই তার শেষ উপস্হিতি। বাইক থেকে নেমে একটা বেশ বড় দ্বিতল বাড়ির সামনে দাড়িয়ে দেখল সামনে লেখা,,,,, ” কালকুঠুরি ”

চারপাশ ঘন জঙ্গলে ঘেরা রহস্যময় এক পথ । অপরপাশে স্হানীয় কোর্ট,, ” রাজশাহী কেন্দ্রীয় কোর্ট ” চারপাশ পরিষ্কার, উজ্বল আলোয় ভরা কিন্তু এই কালকুঠুরি টার ভেতর কেমন গা ছমছমে পরিবেশ,, ,
মাঝখানে একটা কাজলজলা পুকুর , । দড়জা বাহির থেকে লাগানো। সামির বাঁকা হেসে তাচ্ছিল্য করে বলল,,
” কথায় আছে, সবচে সহজ জায়গা হয় লুকোনোর জন্য সবচে কঠিন জায়গা,, কিন্তু আমি বাঙ্গির কাছে সবি সহজ ,,, !! ”

হাতের ছুড়িটা লুঙ্গির খুঁটে বেধে কাছা টাইট করে দেয়াল টপকে ভেতরে চলে যায় সামির। দুইকদম দাঁড়িয়ে পুরো বাড়িটাকে একবার তদারকি করে নেয়। নিচে কোনো পাহারাদার নেই। তারমানে সব ওপরে।
ভেতরে গিয়ে দড়জা খুলে দিতে রিটো আবারো দুরন্ত বেগে ছুটতে আরম্ভ করল। দুইতলায় পৌঁছাতে সামনে ৩ জন লোক,, কালো কাপড়ে ঢাকা চেহারা দেখে গা শিউরে উঠলো,, এটাতো সামির সিকান্দার এদ্রুত খুঁজে পেল কি করে!

তারা নিজ জায়গা থেকে উঠে দাড়াতেই রিটো তাদের ওপর হামলে পরল,, একটা মাত্র ছুড়ি দিয়ে সামির দুইজনের রামদায়ের আঘাত প্রতিহত করেছে। তিনজনের রক্তে ভেসে গেল দ্বিতীয় তলার করিডর।
রিটো এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো একটা দড়জার সামনে সামির দুইচোখ তুলে দড়জাটার দিকে তাকালো,, বুকটা কেমন ভারী হয়ে আসছে রাগে মাথা ঝিম ধরে যাচ্ছে। বামপা দিয়ে সজোড়ে লাত্থি মারতেই দড়জা খুলে গেল। ভেতর থেকে চমকে তাকালো রাফি সহ আরো দুজন এক মাাহা আর দুই রাফির সেই ভাই যাকে মাহা চড় মেরেছিল, রিটো দৌড়ে গিয়ে রাফিকে হামলা করে বদ্ধ ঘর থেকে রাফি বের হতে পারেনি সামির নিজের হাতের ছুড়িটা ছুড়ে মারতেই তা রাফির গলায় গেঁথে যায়।

সামির খালি হাতেই ছেলেটার দিকে এগিয়ে বাঘের মতো থাবা দিয়ে ধাক্কা মেরে তার বুকের ওপর চড়ে দাড়ায়। ডানপা দিয়ে গলার ওপর খুসে ধরে, বেশ হাতাহাতির পর ছেলেটা সামিরের মাথায় আঘাত করে,, রিটো ছুটে এসে তার বামপা কামড়ে ধরলে, সামির রাফির গলা থেকে ছুড়িটা বের করে,, ছেলেটার বুকে উম্মাদের মতো ভযাবহ আঁচড় কাটতে থাকে।

মাথার বাঁপাশ থেকে বেরিয়ে পড়ে গাড় লাল রক্ত! চোখের সামনে এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মাহা জ্ঞান হারায়,,, ততখনে সেখানে পুলিশের টিম উপস্হিত,, কাশেম আর রনি ছুটে এসে সামিরকে টেনে তোলে,, রাফি আর ওই ছেলেটার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে মাহা কে তোলার সাহস করতে পারছেনা কেও। কাশেম সহসা এগিয়ে গিয়ে মাহার বাঁধন খুলে তাকে পাঁজা কোলে তুলে বেরিয়ে যায়।

সাফিন সরাসরি অর্ডার করে পুলিশ কে ভালোমতো তেল মেরে দেয়,, ওই দুইজনকে যে সামির সিকান্দার মেরেছে এটা সেই কালকুঠুরির ওপারেই বদ্ধ ঘরের রহস্য রয়ে যায়। নুসরাত দৌড়ে দৌড়ে দুজনের সেবা করছে, বাড়িতে মেয়েমানুষ বলতে উপস্থিত সে আর কাজের মেয়ে জরিনা। ইতি আর সাথি সেদিনি তাদের বাড়ি ফেরত গেছে। ইনায়া আর সুফি বেগম , ইনায়ার নানুর বাসায় গেছে আজ ৪ দিন। বিকেল থেকে অনেকবার কল করেছে নুসরাত, ইনায়া কল তোলেনি ।

মাহার চোখ খুলতেই দৃশ্যমান হয় কাঠরঙের শাড়ি পড়া সুন্দরী এক মেয়ে তার পাশে বসে, মাহাকে চোখ খুলতে দেখে নুসরাত বলে,
– এখন কেমন লাগছে? আমি তোমার মেজ ভাসুরের বউ।
– জ্বি আমি চিনি, আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম সালাম শুয়ে থাক। ওঠার প্রয়োজন নেই।
– জ্বি, আমি কোথায়? জামাকাপড়,,,,
– আমি খুলে দিয়েছি, এই ঘরে কেও আসবেনা।

মাহার পড়নে বিয়ের ব্লাউজ আর পেটিকোট। শাড়িটা নুসরাত আর জরিনা ধরাধরি করে খুলে দিয়েছে। মাহার মাথায়ও আঘাত লেগেছে। বড্ড অগোছালো অবস্থা। কাঁথা টা মুড়িয়ে বসে বলল,,
– আপু, কষ্ট করে আমাকে জামা বদলানোর সুযোগ করে দেবেন, খুব অস্বস্তি লাগছে।
– হ্যা হ্যা, কেন নয়, এটা তোমারি ঘর। তোমার লাগেজ থেকে বের করব?
– জ্বি,
নুসরাত মাহাকে ধরে ধরে মাহাকে বাথরুমে পৌঁছে দিল । চেঞ্জ করে ওযু করে এসে মাহা বলল,,
– ভোর হয়ে গেছে, রাত থেকে নিশ্চয়ই খুব ধকল গেছে আপনার, আপনি গিয়ে বিশ্রাম নেন। কোনো প্রয়োজন হলে জরিনাকে বলব।

– ঠিকাছে। তুমি রেস্ট নাও। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকবে। আর উঠবেনা একদম দাও আমি স্যালাইন সেট করে দিচ্ছি।
মাহা আবারো নিজ জায়গায় শুয়ে পরল। নুসরাত তার হাতে ক্যানোলার সাথে স্যালাইনের পাইপ সেট করে দিল। মাহা ইশারায় নামাজ পড়ে,, চোখ মেলে পুরো ঘরটা একবার দেখলো,,

বড়সড় রুমের এক পাশে কারুকাজ করা খাট,, পাশে বেশ সুন্দর ছোট একটা টেবিল। টেবিল ভর্তি বইখাতা। কলম পেন্সিল এলোমেলো করে অযত্নে ফেলে রাখা। আরেকপাশে বেশ ঝকঝকে পরিষ্কার একটা ড্রেসিং টেবিল,, তার ওপর পারফিউম, চিরুনি, সানগ্লাস, ঘড়ি উল্টো পাল্টা করে রাখা। তারপাশে ৩ দড়জার কাঠের আলমারি। পুরো দেয়াল জুরে সামির সিকান্দার এর ছবি। কোনোকোনোটায় সাথে সিভান, ইতি, ইনায়া, সাথি, সিয়াম, ,, সবার মাঝখানে একটা ছবি ফ্রেম করে রাখা তবে সেটা একটা পেন্সিল স্কেচ। নিজের ছবি নিজেই এঁকে ঝুলিয়ে রেখেছে।

ছবিটার দিকে বেশ কিছুসময় নিষ্পলক তাকিয়ে রইল মাহা। যেই হাত দিয়ে এতসুন্দর নিখুঁত চিত্রাঙ্কন সেই হাত দিয়ে কতই ভয়াবহ খুন!!
দৃশ্যটা মনে ভেসে উঠতেই মাহা জোড়ে করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করল। ভোর হচ্ছে,, চারপাশের আঁধার সরে নতুন দিনের সূচনা হচ্ছে।পাখির কলকাকলীতে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠছে। বারান্দার কাঠের দড়জাটা খোলা।
মিটিমিটি বাতাস আসছে সেদিক দিয়ে। মাহা চোখটা আঁটতে ক্লান্তিতে চোখটা ঝিমিয়ে আসতে থাকে। তখনি দড়জা ঠেলে ভেতরে ঢুকল জরিনা,,

– ভাবিসাব,,,,?
– জ্বি?? কিছু বলছ??
– আপনে জাইগ্যা আছেন?
– হ্যা।
-কাশেম ভাই আর রনি ভাই ভিতরে আইতো।
– হ্যা আসতে বল,,,

অভ্যাসবশত মাহা নিজের ওড়না টেনে মাথায় দিয়ে বাহাতে ওড়নার একপ্রান্ত টেনে মুখ ঢাকলো। কাশেম আর রনি কেও কোনো ভূমিকা না করে ঘরে ঢুকে সোজা মাহার স্যালাইন খুলে নিল। রনি বলল,,
– ভাবিজান,, আপনাকে নিচে শিফট করা হবে, উঠতে পারবেন?
– জ্বি পারবো।
– জিজ্ঞেস করবেনা কেন?
– আমার কথা গ্রাহ্য করার মতো কে আছে এখানে? যা হচ্ছে হতে থাকুক। কাশেম ভাই,, আমার খুব খুদা লাগছে।

কাশেম মাথা নিচু করে কথা টা শুনলো,, তারপর ভদ্রলোক এর মতো আওড়াল,,
– হ্যা নিচে চল ব্যাবস্হা হচ্ছে।
মাহাকে ধরে নিচতলার বামপাশের ঘরে নিয়ে গেল জরিনা। বিছানায় শুয়ে থাকা সামিরকে দেখে তখনকার ঘটনা মনে পরে গেল মাহার। মাথা টা বনবন করে ঘুরে উঠলো। এখন এই মুহূর্তে ওই ব্যাক্তির মুখদর্শন বড্ড ঘেন্না লাগছে,,
তকে ধরে ধরে সামিরের পাশের খাটে শিফট করা হলো। জরিনা এসে তাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। সিভান এসে দড়জায় দাড়িয়ে বলল,,
– আসবো?

মাহা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হাসি দিয়ে বলল,,
-এসো।
সিভান ভদ্রলোক এর মতো মাহার পাশ ঘেঁষে বসল। মাহা আদুরে কণ্ঠে শুধালো,,
“তোমার নাম কি? ”
” সিভান সিকান্দার তোমাকে দেখেছি মনে হচ্ছে ”
” হ্যা,, তুমি আমাকে সাহায্য করেছিলে, মনে নেই”
” ওও তুমি? কাকার চড়ওয়ালী ! ”
” উমমমম???? ”
” কিছুনা রেস্ট নাও ”

সিভান মাহাকে টপকে সামিরের পাশে বসে বলল,,
– এ কাকা,, জিন্দা হওনাই,, কাকা?
সামির তখনো অচেতন। সিভান চলে গেলে মাহা ডানকাত ঘুরে শুয়ে পরল। মাথায় আঘাত লাগায় মাথা ব্যাথা কমেনি। একটা কথা কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা,, সামির সিকান্দার যখন এতই গুরুতর অসুস্থ, হাসপাতালে না রেখে বাড়িতে কেন রেখেছে,,,
সমিরের জায়গায় যদি অন্য কেও হতো মাহার হয়তো মায়া হতো। কিন্তু গতকাল সকালের ঘটনা মনে পরতেই ঘৃণায় চোখমুখ সিটিয়ে গেল নিষ্পলক তাকিয়ে রইল সামিরের দিকে মনে হলো পাপ না হলে একে এখানেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলে।

সামির জেগে উঠে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,
– এত মনোযোগ দিয়ে বরকে দেখছ মানে,, something something,,,, ।
মাহা কোনো জবাব দিলনা। ডান কাত থেকে উপরের দিকে মুখ করে শুতেই সামির বলর,,
– নাক শিটকোচ্ছিস কেন রে ঝগড়ুইট্টা মহিলা,, আসলে ছেলে ভালো, দেখতে একটু কালো, । বিরক্ত লাগছে?
– ভীষণ,,
– লাগাই উচিৎ, নাহলে কেসটা ঠিক জমবেনা। বলো?

কিছুক্ষণ নিরবতা, সামির নিজে নিজেই হেসে বলল,
– ওরেস শাল্লা! আমারতো সবি ইউনিক! জানো কি করে? বিয়ার রাইতে উপরে তাকাইলে ফুল দেখা যায়, আর আমরা দুজন স্যালাইনের ব্যাগ দেখতে পাচ্ছি। ইউনিক না?
মাহা নিরুত্তর,
– আরে বলো,, ইউনিক বিয়া কইরা কেমন ফিল হইতেছে? খুশিই লাগার কথা, ইউনিক বিয়া, ইউনিক বাসর প্লাস ইউনিক ভাতার,, ইউনিক আর ইউনিক!

মাহা ছাদের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,
– এতই যখন ইউনিক তাহলে মার খেয়ে বেডে পরে আছেন কেন?
– আসলে আমিতো আর বাংলা ছিনেমার হিরো শাকিপ খান নই, যে ১০ -১৫ জনকে টিগিস টুগুস সাউন্ড করে মারবো, আমি হচ্ছি ভিলেন, কোব না খেলে চলে? হিরো মরলে স্যাড এন্ডিং, ভিলেন মরলে সব হ্যাপি,

– ঠিক বলেছেন।
– ইশশ,, ফাটছে না?? একটামাত্র বাঙ্গি জামাই তাও অসুস্থ,, বুঝি বুঝি, এটাই লক্ষ্মণ সামথিং something…..
মহা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
– এ্যাহা,,, পুরোটা শুনে বলুন,, এতই যদি ইউনিক তাহলে মার খেয়ে বেডে পরে আছেন কেন, সোজা জাহান্নামে চলে যেতেন, ,,,,

– সত্যি মরুম? আমি মরলে তুই ফকিন্নির ঝি থেকে ফকিন্নি প্রো ম্যাক্স হয়ে যাবি। বুঝিস সত্যি মরুম?
– মরে যান।
তখন ঘরে ঢোকে নুসরাত মাহার পাশে বসতে বসতে বলে কি হয়েছে?
সামির মাথার ওপর বাহাত তুলে ফাটা কণ্ঠে গেয়ে জবাব দেয়,

কালকুঠুরি পর্ব ১৯

~ আমার বউ বলেছে মরতে আমায়
আমার বউ বলেছে মরতে আমায়
জীবন আর রাখতে পারবোনা
বউ আমার নয়নমণি
ফেলতে কথা পারবোনা।

কালকুঠুরি পর্ব ২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here