কালকুঠুরি পর্ব ২২
sumona khatun mollika
সময়ের সাথে রাতের প্রহর হুইহুই করে ছুটে চলেছে। ঘরের সামনে পৌছে এককদম দাড়ালো সামির। আজ ঘর অন্যরকম দেখা যাচ্ছে। শার্ট প্যান্টগুলো আলনাতে গুছিয়ে রাখা। সাথে রঙবেরঙের দু চারটে মেয়েলি পোশাক। ড্রেসিং টেবিলের ওপর একটা নয় দুটো চিরুনি। বইখাতা গুলো সব নিজ নিজ জায়গা সটান হয়ে দাড়িয়ে।
বিছানা বালিশও গোছানো।
মাহা টেবিল বসে পড়ছে। কোনো ভূমিকা না করে সামির শিষ বাজিয়ে ভেতরে ঢুকে নাটকি স্বরে বলল,,
– ও মাই গড! রুমতো পুরো হুলিয়া বদলে ফেলেছ,, হুমম এতদিন ইনু গুছিয়ে শেষ করতে পারেনি। তুমি কিনা একদিনেই শাই করে হুলিয়া বদলে দিলে,,,, দিস ইজ দা ডিফরেন্ট বিটুইন ঘরওয়ালী এন্ড বাহারওয়ালী
লুঙ্গি ছেড়ে দিয়ে টেবিলের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে গিটারটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে সামির। মাহার দিকে না তাকিয়েই বলে,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– ওসব সাইন্সের ভাষা। আর্সে পড়া ফকিন্নির ঝি রা ওসব বুঝবেনা।
– আর্সের স্টুডেন্ট রা কি মানুষ নয় নাকি,,
– হুমম অবশ্যই মানুষ, আমি অমানুষ সেজন্য আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট। আমার বই খাতা ঘেটেকি আমার সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে? উমমম something something!
– ঠিক ধরেছেন। ,, । আমি আপনার অমানবিকতার লেবেল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছিলাম।
– আমি? সামির সিকান্দার এর মানবিকতার লেবেল?
– জ্বি।
– শর্টকাটে বললে, কঠিন লেবেলের জাউড়া।
– বোঝাই যায়।
সমির গাল টেনে হাসে। মাহা খোড়াতে খোড়াতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। মাথার ব্যাথা আবার বারছে। সামিরের কথা আরো এক ধাপ বারিয়ে দিচ্ছে ব্যাথা। সামির চেয়ারে বসে একটা খাতায় কিছু আঁকিবুঁকি করে একটুপর গিয়ে বিছানায় শুয়ে মাহার গায়ের কাঁথা টা ধরে টেনে তাকে আলগা করে দেয়। ইচ্ছে করে কিন্তু মাহা কোনো প্রতিক্রিযা দেখায়না।
সামির খুব ভালো করে জানে মাহা যখন ঘুমায় খুব গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। একটু পর মাহার দিকে কাত ঘুরে তর্জনী আঙুল দিয়ে অতি সাবধানে মাহার পিঠে আস্তে করে খোঁচা মারে। বুঝতে পারে জাগনা নেই ঘুমিয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলেতো মাহা কখনই সোজা করে উত্তর দিবেনা, তবে সাবধানে চুলগুলো সরিয়ে মাথার আঘাতটা দেখে সামির বুঝতে পারে কাচের বোতল বা গ্লাস দিয়ে আঘাত করেছিল। মাহা সম্ভবত ছোটার অনেক চেষ্টা করেছে। তার কারণেই তাকে আঘাত করা হয়েছে।
সামির কাঁথা টা আবারো মাহার গায়ের ওপর দিয়ে মনে মনে বলে,,
– ঠিকি আছে,, জ্ঞান দেযা পাব্লিকের এমনি হাল হয়। পায়না খাইতে জ্ঞান দেয় নিশি রাইতে! হুহ
হঠাৎই বারান্দায় কারো উপস্থিতি টের পেলে সামির নিজেই এগিয়ে যায়। যা ভেবেছে তাই৷ কাশেম এসেছে।
সামির তার মাথায় চাটি মেরে গালি দিয়ে বলল,,
– শাউয়োর নাতি, আমার ঘরে এখন বউ আছে, তুই কেন মিড নাইট ডেটিং করতে আসছিস?
– ভাই আপনের ফোন বন্দ! দরকারি তাই আইছি। আপনি কি ঘুমাইছিলেন গা?
– পেঁচা কোনোদিন রাইতে ঘুমায়? কিজন্য আইছছ ক?
– ভাবিজানরে শায়েখ মারছে। । শালার পুত মিছা কতা কয় কত দেখছেন! শায়েখই তুলছে। শায়েখই ককটেল মারছে।
– আচ্ছা, চল একটু বলি টলি দিয়ে আসি, আমার যে জাইরা বউ এমনেই মরতে কয়, এহানে থাইকে আর লাভকি সেত ঘুমাচ্ছে নাক ডেকে।
– এপার দিয়াই চলেন ভাই, সাফিন ভাই জাগনা।
-চ চ চ,,,,,
ক্লাবে গান বাজছে,, ভেতরের এক রুমে রনি আর লেমন মিলে শায়েখকে হকিস্টিক দিয়ে মেরে আধমরা করে ফেলেছে।
সামির আর কাশেম এসে পৌছুতেই শাযেখ বিভৎস চিৎকার করে ক্ষমা চাইতে লাগল,, আর এমন হবেনা ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দে ভাই,
– ইউউ!! ক্ষমাআ!! ক্ষমা একটি মহত গুণ, মহৎ মাইনষের কাম,, আমিতো সামান্য জীব। তুই আমাকে নাড়ার জন্য আমার বউয়ের পিছে কেন গেছিলি বুঝলামনা। ওও রূপের টানে। ওকে ওকে নো প্রবলেম৷ কাইশসা।।। ??
– ভাই?
– কয়ডা বোতল ভাঙছছ
– মাত্র ১০ টা ভাই । ১১ নাম্বারটা আপনার অধিকার।
– অবশ্যই। হালকার ওপর ঝাপসা করে একটু ভালোবাসা দেখাই। বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো আংকেল এখন কাম করব,,
কাশেমের ইশারায় রনি তার হাতে একটা ধারালো চাপাতি এগিয়ে দেয় । শায়েখ চোখ বড়বড় করে চিৎকার করতে থাকে। কেও এগিয়ে যায়না।
সামির চেয়ারের সাথে বেধে রাখা শায়েখের হাতে চুমু দিয়ে বলে,,
– এই হাতদুটোর কি ভাগ্য,, পানি সুন্দরীর গালে চড় মেরেছে, বোতল দিয়ে আঘাত করেছে! এমন সন্মানিত আঙুল এই পাক্কা শুয়োরের হাতে শোভা পায়না!
বলেই চাপাতি দিয়ে এক কোবে শায়েখের পাঁচ আঙুল নামিয়ে ফেলল,, তীরের মতো ছুটে পরল রক্ত।
শায়েখ সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায়। সামির পাশের টেবিল থেকে একটা বলপয়েন্ট কলম তুলে নিয়ে সোজা শায়েখের গলায় গেঁথে দেয়। ৫,৪,৩,২,১,,,,,,, শায়েখের জীবনবৃত্যান্ত শেষ।
সেখান থেকে একটা মদের বোতল তুলে ঢকঢক করে গিলতে গিলতে বাইরের রুমে যায় সামির । বাকি কাজ রনি বুঝে নেবে।
গান বাজছে আর গানের তালে নাচছে সোমা সহ আরো কয়জন বিশিষ্ট নারী,, সাথে রাগিবের পোষা কুত্তাগুলো। সামির একটা সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে মদ গিলছে।
মিউজিক বক্সে গান বাজছে,,,
– আমার দিলের উইলে লিখে দেব
যার নাম রে সে আমার
পেয়ার লাল রেএ
পেয়ার লাল রে এএএ
পেয়ার লাল রে,,
ভোর হওয়ার কিছু সময় আগে সামির দেয়াল টপকে ঘরে ফিরে আসে। মাহা এখনো ঘুমাচ্ছে। জামা কাপড় বদলে চুপচাপ নিজের জায়গায় গিয়ে মাহার দিকে কাত ঘুরে নিজে নিজেই বলতে থাকে,,
– এখন যদি আমি একটু দুষ্টু করি!! উহুহু সামির বাঙ্গি, দিবা আপু অসুস্থ। তুই যদি কিছু করিস চড়ওয়ালী চড় বসিয়ে দেবে। নাহয় মেজিস্ট্রেট আফুজান্স কেস ঠুকে দেবে, ! ঘুমিয়ে যা, ঘুম,, ঘুম,, ঘুউউ,,,,,,,,,,,,,,,
বলতে বলতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরবেলা মাহা নামাজ পরতে উঠে দেখে সামির বালতির ভেতর রক্তভেজা লুঙ্গি ভিজিয়ে রেখে এসেছে। তা থেকে কেমন জঘন্য গন্ধ আসছে! একবার ভাবলো বালতিটা নিয়ে গিয়ে মাথার ওপর পানিগুলো ঢেলে দেয়।
কিন্তু শুধু শুধু ঝামেলা বারাতে চায়না। তাছাড়া এমনিতেই মাহা শারিরীক ভাবে দুর্বল। বালতিটা সরিয়ে রেখে ওযু করে নামাজে দাড়িয়ে যায়।
সামিরের গা থেকে ধেয়ে আসা জঘন্য গন্ধে মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। দুচোখের পানি ফেলে ধৈর্য চাওয়া ছাড়া কি আর করার আছে।
দুপুরে সাফিন এর সাথে দেখা হয়, নিজের ব্যাপারে কিছু না বলে মাহা সোজা জিজ্ঞেস করে,
– আপনি সিভানকে সময় দেন না কেন? আপনাদের মধ্যে কি মানবিকতা বলতে কিছু নেই, ওইটুকু বাচ্চা কতটাইনা অপেক্ষা করে, বাবা এলে খেতে বসব, বাবা এলে ঘুমাবো, বাবার সাথে ঘুরতে যাবো। আগে শুনতাম এখন দেখতেও পাই জন্ম দিলেই বাপ হওয়া যায়না। এখন দেখে নিলাম ।
– তুমি যদি আমাকে জ্ঞান না দিয়ে নিজের রাস্তা মাপো ব্যাপারটা সুবিধার হয়। আমার ছেলে আমি পাত্তা দেব না কেটে গাঙে ভাসাবো আমার ব্যাপার। সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করবে। অতিরিক্ত জ্ঞানী ব্যক্তি আমার পছন্দ নয়।
রাগে মাহার মাথা গরম হয়ে যায়। এই বাড়ির প্রত্যেকটা পুরুষ একি রকম। সালার সিকান্দার তো কথাই বলেন না। এরা সারাদিন বাইরেই থাকে। বাড়িতে আনাগোনা থাকে শুধু সামির সিকান্দার এর ।
বিকেলে মাহা, নুসরাত, সিভান, ইনায়া মিলে মার্কেটে যাবে। সামিরও তাদের সাথে যাবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সামির চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাহাকে রেডি হতে দেখছে। একেইতো কাঠফাটা রোদ, গরম তারওপর মাহা নিকাব পরেছে, হাতে পায়ে মোজা পরেছে। গরমে দুইবার হাফ ছাড়তেই সামির তার সামনে দাড়িয়ে বলল,,,
– এইযে ফকিন্নির ঝি, তোর চেহারাতো সবাই দেখেই ফেলছে, গরমের মধ্যে বালগুলান পরার দরকার কি, এসব ঝালর মালর খুল।
– আমি কেন পর্দা ছাড়ব আমার আল্লাহ জানে আমি কোনো পাপ করিনি। এই কলঙ্ক সত্যি নয়। এটা আপনার পাতা একটা জঘন্য ফাঁদ। যেখানে ভুক্তভোগী একমাত্র আমি এবং আমি।
– যা খুশি মারাগা,, ভালোর জন্যে বললাম চ্যাট ঠেকাইলা না , গরমের মইদ্যে দাপাবি তখন দেখবি ভাল্লাগছে। যা বেরো,,
ইনায়াকে অনেকবার ডেকেছে নুসরাত কিন্তু ইনায়ার কোনো সাড়া নেই। নিজের দরকারি জিনিসের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলেছে,,
– এত গরমে বাইরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তোমরা সব যাও। আমি ঘুমাবো।
নুসরাতও আর জোর করেনি। ইদানীং মেয়েটা কেমন শান্ত হয়ে গেছে। আগের মতো ছুটোছুটি করে না। রান্নাঘরেও খুব একটা যায় না। ঘরেই থাকে।
বাজারে গিয়ে একটা থ্রিপিসের দোকানে ঢুকে নুসরাতের একটা জামা খুব পছন্দ হয়। দোকানদার জানায় জামাটার দাম, ছয় হাজার টাকা।
নুসরাত হ্যা বলতে যাবে তখনি মাহা ফুট করে বোম ফাটানোর মতো করে বলে উঠলো,,
– পঁচিশশো দিব,
দোকানদার ভূত দেখার মতো করে সামিরের দিকে তাকায়। সামির ভ্রু কুচকে বলে,,
– কি বাল আমার দিকে তাকান ক্যান মিঞা আমি এদের চিনিনা। এরা দূর্সম্পর্কের মুরগি টুরগি হয়।
সিভান মুখে হাত চেপে হাসতে থাকে। দোকানী বলে,,
– ঠিকাছে ৫ হাজর দিয়েন।
– একদাম পঁচিশ শো। একটাকাও বারাতে পরবনা।
দীর্ঘ ৯ মিনিট দর কষাকষির পর একদম পঁচিশ শো টাকাতেই দোকানী জামাটা দিয়ে দিয়েছে।
নুসরাত হা করে তাকিয়ে দেখছে শুধু। সামির মনে মনে বলছে,,
– প্রমাণ রাখতে হবেনা সে যে ফকিন্নির ঝি!
যাওয়ার সময় দোকানদার বলল,,
– আপনে জিতছেন ভাই।
সামির বাকা হেসে দোকানী কে আরো ২ হাজর টাকার দুটো নোট ধরিযে দিয়ে চলে গেল। গাড়িতে বসে,, নুসরাত বলে,,
– তুমি পারোও,, এত কিপ্টামির কি ছিল,
– কিপ্টামি না আপু। জামাটা ভালো করে দেখো। এর দাম এমনি। উনারাতো দাম চাইবেই।
কালকুঠুরি পর্ব ২১
সিভান বলে,,
– কাকি সুন্দরী ঠিক বলেছে। টাকা থাকলেই উড়াতে হবে নাকি!
সামির কোনো কথা বললনা। চুপচাপ গাড়ি ছুটিয়ে বাড়ি পৌছল।
