কালকুঠুরি পর্ব ২৭
sumona khatun mollika
ভার্সিটি চত্বরে গোল বেধেছে । সবার কথা একটাই রনি আর শায়েখ কে মারলো টা কে, সিয়াম আর কাশেম সবাইকে ভুজুংভাজুং বোঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু ছাত্র জনতা জবাব চায় সামির সিকান্দার এর কাছে। সেকি বিয়ে করে বউয়ের আচলের তলায় লুকাইছে?
সামির পৌঁছনোর পরে চারপাশে কেম স্তব্ধতা ছেয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে বলে,,,
– ক,, কার কি সমস্যা ক?
কাশেম বলে,,,
– অগর কথা হইছে,, শায়েখ আর রনি তো শক্ত-সামর্থ্য ছিল, পাওয়ার ও ছিল, ওদের যদি এভাবে মেরে দেয়া হয় তাহলে এদের কে রক্ষা করবে??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– নিজের পেছন নিজেকে বাঁচাতে হবে। তাছাড়া আমার চেহারায় কি বোকাচোদা লেখা? তোদের চেহারায় থাকতে পারে। পারে কি, আছে, আমি দেখতে পাচ্ছি । তরা তো গু খাওযা পাগল।
সিযাম বলে,,,
– ভাষা সংযত করে বল কথাটা।
– আমার যা ইচ্ছা কমু। কোনো সমস্যা? কোনো সমস্যা চলবেনা। তাছাড়া এই বাঙ্গির দল তোরা যদি বলদি না হবি একটা কথা ভাইবা দ্যাখ,, রনি মরছে সেই কোন শ খানেক কিলোমিটার দুরে, আর শায়েখ মরছে ক্লাবে। ক ওই দুই জায়গার সাথে কারো কোনো সম্পর্ক আছে???
জনতা নিশ্চুপ । সামির এবার বাকা হেসে বলল,,,
– আজাইরা ডং মারানি বন্ধ কর। তগো কানে খবর দিছে পাব্লিক গরম করার জন্য বুজস নাই? আমি কিন্তু কথা কম বলি। যদি ভদ্র ভাষায় বুজাই সবটিরে একজোট হওয়ার সাধ মিটাই দেব।
মোটামুটি সকলেই সামিরের ভক্ত । উত্তাল জনতার মধ্যে থেকে একটা যুবকের আওয়াজ ভেসে এলো,,
– অদের কি সামির ভাই মারছেন??
কথাটা কে বলল তা খোঁজ পাওয়া গেলনা৷ তবে সামির জবাব দিল,,,
– যে মরেছে বেঁচেছে । পাপের সংখ্যা কম হযেছে। হাযাত শেষ মরে গেছে। কাহিনি শেষ । আর কোনো সমস্যা? তাহলে গিয়ে মেয়র রে রিপোর্ট কর।
আসলে কি হলো না হলো সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে গেল। সাফিন এর কাছে খবর চলে যেতে সে পাল্টা খবর পাঠিয়ে দিল,, এই দুই খুনের সাথে সামির সিকান্দার এর কোনো হাত নেই৷ শায়েখ নেশা করে মরেছে। আর রনি কে যে খুন করেছে তার খোঁজ চলছে। অতি শিঘ্রই তারে ধরে ফেলা হবে। ছাত্র গণ যেন এইসকল ঝামেলায় না জড়ায়।
ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তায় মুহিবের সাথে দেখা হয় সামিরের৷ মুহিব তার চোখের দিকে তাকালো না৷
সামির গাড় বাঁকা করে বলল,, জ্বলচে পেছনে মাথা নিচু করে আছিস সামনে ক্যান?
মুহিব নিরুত্তর। সামির মুহিবের ঘাড়ে হাত রেখে বলল,,
– চিন্তা করিস না। বাঁইচা গেছস,, তর বইন যে খান্নাস “!! খানদানি খান্নাস ! থাবড়াইড়া চোপা উল্টায় ফালায়। তর বিয়া দিমু আমি,,, দা গ্রেট সামির বাঙ্গি। মেয়ে ঠিক করা আছে। শুধু সুযোগ দরকার। অপেক্ষা কর। নিজেকে প্রস্তুত কর।
মুহিব বাকা করে হেসে স্হান ত্যাগ করল। সামির কাশেমের উদ্দেশ্যে বলল,,
– শাল্লা , ওইদিন মাযের কোলের মইদ্যে বইসা আছিল এখন শোক দেখাচ্ছে !!
কাশেমের ফোনে কল ঢুকতেই সে রিসিভ করে বলল,,
-আচ্ছা বলতেছি। ভাই,,, আপনের ফোন কি বন্দ? রাগিব ভাই কল দিতেছে।
– আমার ফোন কই আমিই জানিনা।
– জানবেন কেমনে,, আপনার ফোন ভাবির কাছে । সে কল ধরেছিল ।
– কি বলেছে,,
– সোমা আপা চেঁচাচ্ছিল, সে জবাব দিয়েছে,, পরে মরেন, আপনার নাগর এখানে নেই। বলে কেটে দিয়েছে।
– আয় হায় মারহাবা ওয়াল্লা হাবিবি। কে যেন বলেছিল সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে,, সে আমার থেকে ট্রেনিং নিচ্ছে। যাইহোক চল, দেখি কে মরছে।
ক্লাবে উপস্থিত হওয়ার সময় দেখা হয় ইনায়ার সাথে । সে আর তার বান্ধবী টিউশন শেষে ওই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফেরে। আজ সাফিন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে তাই তারা হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল।
সামিরকে দেখে ইনায়া দাড়িয়ে রইল। সামির চলে যেতে বললেও ইনায়া বলল,,
– আপনি আসুন । একসাথেই যাই।
রাগিবের কথাটা যে কি হতে পারে এটার সামিরের ভালো ধারণা আছে । নিশ্চয়ই কোনো কাজ পরেছে। তাছাড়াতো আর কোনো কারণে তাকে তলব করা হয়না। ক্লাবের ভেতর ঢুকে গেলে প্রথমেই সাক্ষাৎ হয় সোমার সাথে । সোমা বলে,,,
– এবার আমারো বিয়া করা দরকার৷ বউ মাইনষের যে পাওয়ার বাপরে বাপ,, যা তোকে রাগিব তলব করেছে।
সামির সোজা হেঁটে ভেতরে চলে গেল । কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে ইনায়াকে সাথে করে বাড়ি চলে গেল।
ভার্সিটি থেকে ফিরে, গোসল সেরে নামাজ পড়ার পর উঠে বসতেই দেখে সিভান আর ইতি দড়জায় দাড়িয়ে।।৷ তাদের কথা,, এখন ঘুমের সময় কিন্তু ঘুম ধরছেনা। একটা গল্প শোনাও। মাহা রাজি হলো। দুজনকে দুপাশে শুইয়ে নিজে মাঝখানে বসল। আনমনে বলতে শুরু করল,,
– এক ছিল রাজকুমারী। পাখির মতো চঞ্চল সেই রাজকুমারী। রাজার বড় সন্তান সে। তাই রাজা রাণি রাজকন্যা কে খুব ভালোবাসত। তার এক়
ছোট ভাই ছিল। খুব ভালো দিন যেত তাদের।
এভাবেই কয়েকবছর যায় । রাজকন্যা বড় হয়। রাজপুত্র হাঁটা শেখে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে শিখল। তারপর ধিরে ধিরে নেমে আসে বিপদ। একদিন রাজা রাণী আর, অসুস্থ রাজপুত্র কে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায় । বাড়ি ফেরার সময় তাদের এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। সেই দুর্ঘটনায় ৩ জন মারা যায়। আপনজন হারিয়ে রাজকন্যা পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তখন রাজকুমারীর চাচা আর চাচি প্রাসাদ দখল করে নেয়। রাজার বড় ইচ্ছে ছিল, তার যদি।কোনোদিন কিছু হয়ে যায়, তাহলে রাজকন্যা কে যেন পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ বানায়। । রাজকন্যা সময়ের হাত ধরে অতি কষ্টে বড় হতে থাকে । কাজ করলেও দোষ না করলেও দোষ৷ এভাবে দিন যায় রাত যায়,, রাজকন্যার বড় হয়। পড়াশোনায় মনযোগী হয়। ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে বড় এক কলেজে ভর্তি হয় । বছর না ঘুরতেই কলেজের এক সিনিয়র ছেলে তাকে বিরক্ত করে। রাজকন্যা তাকে একটা ঠাস করে চড় মেরে দেয়। সেই চড়ের শোধ তুলতে, সিনিয়র রাজকন্যার ঘরে রাতের বেলা চুপিচুপি গিয়ে ঘাপটু মেরে থাকে। সকালে সবাই রাজকন্যা কে ধরে প্রচুর অপমান করে সিনিয়র এর সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। ৷ রাজকন্যা এখন এক আকাশ সমান দুঃখ আর রাগ নিয়ে সিনিয়র এর বাড়িতেই থাকে।
তোমরা কি শুনছো?
মাহা একটু বাঁকা হাসল। দুজনেই ঘুমিয়ে গেছে। বাহির থেকে একটা সরু কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,,,
“তাহলে রাজকন্যা সিনিয়র কে ছেড়ে চলে গেলেইতো পারে। তারতো আর টাকার অভাব হবেনা। রাজার সম্পত্তি তো সব তারই। ”
ইনায়ার বলা ঠান্ডা কথাটার কোনো প্রতিক্রিয়া করলনা মাহা। ইনাযা ভেতরে ঢুকে বলল,,
– রাজকন্যা চাইলেই চলে যেতে পারে। কারণ সিনিয়র তার সঙ্গে বেইমানি করেছে। যদি সিনিয়র এর চিন্তার কথা বলো,,, তাহলে জুনিয়র তাকে গুছিয়ে নেবে।
– কোথায় যাবে কার কাছে যাবে। মানুষ সামাজিক জীব একা একা কি করে বাঁচবে? রাজকন্যার চাচারা সম্পত্তির লোভে তাকে মেরে দেবে।। ।
– আমি তোমার সংসার ভাঙার আগ্রহ রাখিনা। কিন্তু তোমার যদি কষ্ট হয় সামির সিকান্দার কে সামাল দিতে,, তুমি চলে যেতে পারো। আমি নিঃসন্দেহে তাকে সামলে নেব।
– এটাই প্রমাণ যে তুমি এখনো ছোট। তুমি কি তোমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নেয়ার দোষে আমাকে সাজা দিতে চাও? লাভ নেই কারণ আমাকে জোড় করে নিজের ঘাড়ে তুলে নিযেছে সামির সিকান্দার।
ইনায়া কোনো প্রতিক্রিয়া না করে চলে যায়। যতই হোক মাহা বয়সে বড় । তার সাথে এভাবে তর্ক করে সে কখনই পারবেনা। মাহা যুক্তিতর্কে সবসময়ই সেরা। যাওয়ার সময় তার হাত লেগে সামিরের কয়েকটা বইখাতা পরে যায়। মাহা আবার সেগুলো উঠিয়ে টেবিলে গুছিয়ে রাখার সময় ওই খাতাটা সামনে পরে। ঘাড় কাত করে দেখে,৷ সামির এর পরে বাঙ্গি লেখাটা কেটে মাহা সিকান্দার লিখেছিল। সামির সেটা কেটে আবার বাঙ্গি লিখেছে। মাহা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর আবকরো বাঙ্গি কেটে সিকান্দার লিখে রাখল। খাতাটা আবার একদফা খুলল,,
এতদিনে বুঝে গেছে,, যে লেখাগুলো সে বোঝেনি সেগুলো সব, পদার্থের রাসায়নিক সংকেত। ক্রিয়া বিক্রিয়া, জৈব অজৈব আরো কি কি সব। মাহা খাতার কয়েকটা পাতা উল্টো করে ছবিগুলো দেখতে লাগল। । আজ আরেকটা নতুন ছবি পেয়েছে। মাহা মনে মনে ভাবে,, আকার হাতটা কিন্তু সিনিয়র এর বড্ড ভালো। মাঝে মাঝে দু একটা কবিতাও লিখেছে।
এমনিতে মাহা কখনো সামিরের ব্যাপারে ভাবেনি। তবে বেশ অবাক হয়েছে এটা ভেবে যে,, হতেও পারে সামিরের একটা ভালো দিক আছে! না। একটা নয় অনেকগুলো আছে। প্রথমত সামিরের হাতের লেখা, দ্বিতীয় আর্ট স্কিল। তৃতীয়ত কাব্যিকতা। সামিরের খাতায় যে দুই চোখের ছবি দেখেছিল তা নিসন্দেহে দুই নারীর। একপাশে লেখাছিল বেইমান অন্য টায় nacl,, । তাছাড়াও খাতার মাঝে মাঝে পৃষ্ঠা জুড়ে ছবি। একটা পাতায়, একটা ছোট্ট বাচ্চার ছবি যে মাঝখানে বসে আছে আর চারপাশ দিয়ে অনেকগুলো হাত তার দিকে তাক করে আছে, নিচে আবার লেখা,,
~ তুমি ভালো ভাবে বাচতে চাবে,
তবে তুমি শাস্তি পাবে..
কালকুঠুরির ওপারেতে
অন্ধকারে থাকতে হবে৷
যত ভালো সাজতে চাবে
দুঃস্বপ্ন তোমার পিছু নেবে
খারাপ হয়ে দেখ বাঙ্গি
দুনিয়ার সব তোমার হাতে।
চরণগুলোর অর্থ বড্ড গভীর । মাহার মাথা কাজ করছেনা ওই কালকুঠুরি টায় কি কোনোভাবে সামিরের অতীত জড়িয়ে , নাকি কালকুঠুরি বলতে সে কোনো বিপদ বা দুঃখ বোঝাচ্ছে ।
খাতাগুলো গুছিয়ে মাহা আসরের নামাজে দাড়িয়ে গেল। সিভান আর ইতি এখনো ঘুমাচ্ছে । সামির মাত্র ঘরে ঢুকছে। মাহা একবার তার দিকে তাকালো। জায়নামাজ ভাজ করতে করতে দেখল সামির কি একটা গভীর মনোভাব নিয়ে চিন্তা করছে । তারপর গা দুলিয়ে নিজেই হাহা করে হেসে ফেলল । হাসির মাত্রা এমন যে বসে পরবে হাসতে হাসতে। মাহা বড্ড বিরক্ত হলো।
– পাগলের মতো হাসছেন কেন? মাথা খারাপ না মদ গিলে এসেছেন ?
– না না,, কেন হাসছি জানো? মনে হচ্ছে,, খাটের ওপর দুটো মানব পুতুল ঘুমাচ্ছে , তার মা তুমি ঘর গোছাচ্ছ । আর আমি বাপ বাহির থেকে আসছি। হাহাহা। এবার তুমি আমার শার্ট, প্যান্ট খুলে দাও।
– কিই?
– আরে সিরিয়ালগুলোতে দেখায় না বর বাইরে থেকে আসলে বউ জামাকাপড় খুলে দেয় । ঐটাই বলছি।
– এ্যাহ?
মাহাও এবার গা দুলিয়ে হেসে ফেলল । অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি৷ সামির শান্ত হয়ে যায়। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। বুকের বাঁ পাশে কি কিছু নড়াচড়া করছে? মনেত হয় করছে । নাকি করছেনা,, করারতো কথা না।
-এভাবে হাসছ কেন?
– কোন সিরিয়াল এ দেখেছেন আপনি বউ প্যান্ট ও খুলে দেয় । হাহা
– এভাবে হাসিস না শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইড বেরে যাবে!
মাহা চুপসে গেল। সিভান চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,,
– তোমরা দুজন কিসের হাসাহাসি লাগিয়েছ! ঘুমটা ভেঙে গেল। এই ইতি চল বাইরে যাই।
তারা চলে গেলে সামির মাহার দিকে একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,,
– আজ একটু বাইরে যাব,, সন্ধ্যা বেলায় । তোমাকেও সাথে যেতে হবে। এটা পড়ে যাবে।
– একি সবুজ শাড়ি! হিজবটা ঠিকাছে, সবুজ রঙের শাড়ি? কেমন রঙ?
– হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন , সবুজে নারীদের খুব সুন্দর মানায় তবে তারা কেন যেন সবুজ রঙ পছন্দ করে না। ,,, । আমি অত বাছ বাছাই জানিনা। কাশেম বলেছে এটায় মানাবে তোমাকে ।
– সে ঠিকাছে কিন্তু আমি এটা পরবনা।
– কেন রে, দামি জিনিস গায়ে সয় না?
– তার জন্য না। আমি কখনো উপহার যাচাই বাছাই করিনা। আমার একটু সমস্যা আছে তাই পড়তে পারবনা।
মাহাকে নজর চুরাতে দেখে সামির দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বলল,
– পানি সুন্দরী,, আপনি শাড়ি পরতে জানেন না?
– আ,, আমি কখন বললাম আমি শাড়ি, পরতে পারিনা?
-হেহেহে, চিন্তা কোরোনা সাথিকে বলে দিও। বেশি লজ্জা লাগলে আমাকে বইলো ।
– প্রযোজন নেই।
সামির বাকা হেসে বেরিয়ে গেল। ইনায়াকে নামিয়ে দেযার পর পদ্মার পাড়ে বসে সামির কাশেমকে জিজ্ঞেস করছিল ,,
-আচ্ছা কাইশসা?
– ভাউ,,, ইয়ে মানে ভাই
– শালা গেন্ডু একটা,, বউরে কি গিফট দেওয়া যায়? এক কেজি বাঙ্গি?
– আপনের সাথে ওইটাই যায়!
– যেমন তোর সাথে কাইলানী যায়,।
– ক্ষমা,, একটা শাড়ি মাইরা দেন। বেডিরা শাড়ি খুব পছন্দ করে ।
– কি রঙের দিমু?
– আপনে জানেন ভাবির রঙের সাথে কোনটা যায়?
সামির ঠোঁটে সিগারেট নামিয়ে নদীর পানির ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত কণ্ঠে বললো,
– সবই যায় । নীলে নীলাঞ্জনা, লালে টুকটুকি, সাদায় মোহময়ী , কালোয় আবেদনময়ী , সবি যায়।
– আপনের পছন্দের রঙ এর দিয়েন। তাইলেই হইবো।
সামীর বাজারে গিয়ে খুঁজে খুঁজে ৩ ঘন্টা পরিশ্রম এর পর ওই শাড়িটা কিনে এনেছে।
মনে মনে একটু খুশিই হলো,, কাশেমের কথা না বললে হয়ত মাহা শাড়িটা ফেলে দিত। বা পড়ত না। আগুন ধরিয়ে দেয়ারো সম্ভাবনা ছিল৷
সন্ধ্যার পর দুজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে অচেনা গলির দিকে গাড়ি ছুটিয়ে যেতে থাকে। মাহা জিজ্ঞেস করল,,
– কোথায় যাচ্ছেন? আমাকে মারতে নিয়ে যাচ্ছেন?
– ঠিক ধরেছ।
– এক কোবে মাইরেন। কষ্টটা কম হবে।
– ঠিকাছে।
হঠাৎ মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সামির বলল,,
– নামো,
– ওহ মেরে তাহলে পদ্মায় ভাসিয়ে দেবেন?
– হুমম। নামো।
মাহা নির্ভয়ে গাড়ি থেকে নামলো। মুখের নিকাব বাধা গোল্ডেন হিজাবের জোরিগুলো চিকচিক করছে। পদ্মার পানিতে চাঁদের আলো পরে নদীর সৌন্দর্য কয়েকগুণ বারিয়ে তুলেছে।
সামির পেছন থেকে হাত দরে টেনে পাশে দাড়িয়ে বলল,, তাকাও কটা ছবি তুলি,, মরে গেলে পরে দেখে আফসোস করব,, পরির মতো সুন্দর একটা বউ ছিল।
মাহা প্রস্তুত হওযার আগেই চিক চিক শব্দ করে কযেকটা ছবি তুলল সামির। তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা।
মাহা সদিচ্ছায় বলল,,
– কি সুন্দর আবহাওয়া , একদম চোখ ধাধানো ।
সামির কোনো কথা বলরনা চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলল,,
– চলো, আবার রওনা দেই। দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
মাহা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ির গোল চাকা ঘুরিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগল সামির। খালি গলায় সজোরে গেযে উঠলো গান যার প্রতিটি ধ্বনি মাহার কেমন অদ্ভুত লাগছে,,
কালকুঠুরি পর্ব ২৬
~
দিশেহারা মনে ব্যাথা সুখ পেতে,
দিয়েছি তো আমি এই বুক পেতে
দূরে দূরে কেনো তবু সাথিয়া
দিশেহারা মনে ব্যাথা সুখ পেতে,
দিয়েছি তো আমি এই বুক পেতে
দূরে দূরে কেনো তবু সাথিয়া
