কালকুঠুরি পর্ব ৪১
sumona khatun mollika
সামিরের রক্তমাখা চোহারাটা ভয়ানক দেখতে লাগছে। সুফি বেগম কাঁদতে ও পারেনি, চুপ থাকতেও পারেনি তবে সেও হা করে তাকিয়ে আছে সামনের দৃশ্যে,, এই ঘটনা বহুবছর আগেও ঘটেছিল তখন সে ছিল সিকান্দার বাড়ির নববধূ । একইভঙ্গিতে সেদিন সালার সিকান্দার পিছে দাড়িয়ে ছিল আর সাফিন সিকান্দার এর হাতে ছিল অস্ত্র । সামনে রক্তাক্ত চেহারার সজল সিকান্দার ।
কিছু মুহুর্ত নিস্তব্ধতা,, সাফিন ভ্রু গুটিয়ে সিভানের পিছনে দাড়িয়ে রইল। সিভান সামিরের দিকে বন্দুক তাক করে দাড়িয়ে । একটুও অবাক, ভয়, চকিত কোনো আবেগই তার চেহারায় স্পষ্ট নয়।
বরাবরের মতোই সে পাগলের মতো হাসছে। হাসতে হাসতে দুইপা ছড়িয়ে মেঝেতে বসে পরল সামির।
– মার আমাকে। চালা গুলি। তোর মনে হচ্ছে? তোর কি মনে হচ্ছে সামির বাঙ্গি তোকে দেখে টাল্লি খেয়ে গেছে। নারে পাগলা। আমার সাথে সবাই বেইমানি করে, সবাই। সেজন্য এসব আর গায়ে বাঁধেনা । চালা গুলি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সিভান গুলিটা তার দিকে তাক করল। ট্রিগার পর্যন্ত হাত উঠালো। কিন্তু বন্দুক চালালোনা। মেঝেতে বন্দুক টা ছুড়ে ফেলে দৌড়ে সামিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে উঠল। সামির বা হাতে তার মাথা নেড়ে বলল,,
– তুই পারবিনা। সিভু। যেমন আমি সজল সিকান্দার নই। তেমন তুইও সাফিন সিকান্দার হতে পারবিনা।
– সাফিন সিকান্দার কে তার বাপ সেসব শেখাত কিন্তু আমাকে আমার বাপ কিছুই শেখায়নি। কি করে মারবো কাকা। এ কাকা তুমি একদম কষ্ট পাবেনা। তুমিতো সামির সিকান্দার বলো।
– ঠিক বলেছিস। আমি সামির সিকান্দার । আমার কোনো অনুভূতি নেই। আমার কাঁদার অধিকার নেই। আমি একটা জন্তু । কাঁদতে পারিনা আমি।
কাদতে পারিনা।
সিভানকে ছেড়ে ধির পায়ে নিজের ঘরে ফিরে গেল সামির। সাফিন সিকান্দার পুরো ঘটনা টা নিজ মন মতো সাজিয়ে ফেলল। ওদিকে নির্বাচন সভাপতি রাগিব দেওয়ান মরেছে জন্যও তাকে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।।
এই সপ্তাহ টাই সাফিনের বড্ড কঠোর গেছে। কমিশনার এমপি, নির্বাচন সভাপতি সকলের মৃত্যুর দায় তাকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে । তবে তাকে সাহায্য করেছে রাগিব দেওয়ান এর দলীয় মাহার চাচা মফিদ উদ্দিন ।
সামির আবারো ভয়ানক অসুস্থ হয়ে যায়। কঠোর এলার্জির কারণে প্রায় অর্ধমৃত সে। কাশেম আর লেমন সবসময় তার পাহারাদার হিসেবে রয়। মাহবুব উদ্দিন এসেছিল সামির সিকান্দার কে ধরতে তবে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ঘটনার সময় সে ছিল জেলে তাছাড়া সে নিজেও অসুস্থ। সাফিন সিকান্দার চাপিয়ে দিয়েছে সালার সিকান্দার আর ইনায়া সিকান্দার ও অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
সাত থেকে পাঁচ মাসের মতো সময় ধরে সামির সিকান্দার এর অবস্থান হয় হাসপাতালের বেড। সিভান সহ বাকিরা সামিরের যত্ন করে মোটামুটি তবে সেই দুর্ঘটনা থেকে দীর্ঘ ৭,৮ মাস সামিরের সাথে সাফিন কিংবা রাহার কোনো কথা হয়না।
সিয়াম মাঝেমধ্যে ফোন দিয়ে খোজখবর নেয়। এদিকে মফিদ উদ্দিন কয়েকদিন ভালোই কামাই কারার পরে নতুন নির্বাচন সভাপতি নির্বাচিত হয় রাগিব দেওয়ান এর চাচাতো ভাই রুবেল দেওয়ান।
তাকে ওই পজিশনে বসতে সাফিন সিকান্দার বড়রকমের সাহায্য করেছে।
বড়বড় পোস্টের রাজনীতিবিদের মৃত্যু পুরো রাজশাহী শহরের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাড়ালো। মানুষ বাহিরে বের হলে আগে পরিবারের লোকজনদের বিদায় জানিয়ে যায় ঘুরে যদি দেখা না পায়। তবে সামির সিকান্দার এর পজিশন সবার মন মস্তিষ্কে একি জায়গায় রয়ে গেল। তার ওপর মানুষের ভয় তেমনটা বাড়েনি বললেও ভুল হয়ে যায়। কারণ সেও সিকান্দার বাড়ির লোক ।
লোকদের মনে একপর্যায়ে এই কথা সেট হয়ে গেল সিকান্দার মানেই ঝামেলা।
দীর্ঘ ৬ মাস পরে সিকান্দার বাড়ির দক্ষিণেরঘরে আগমন হয় সাফিন সিকান্দার এর । বারান্দায় বসে খাতায় আঁকাআকি করা সামির তার পূর্বের ন্যায় বলে ওঠে,,
– যা বলার বলে চলে যাও। বাঙ্গিমারা ড্রামা দেখার টাইম নাই আমার।
– সামির সিকান্দার!! হুমম? নামটা কতো ভারী বল আমার দেওয়া নাম বলে কথা । এনিওয়ে, ফ্যামিলি ড্রামা শেষ হলে কাজে ফিরে যা।
– বলে ফেল।
– ইন্সপেক্টর বিজয় দাস,, এইতো দু চার মাস হলো জয়েন করেছে। মাহবুব উদ্দিন এর মতোই জাউরা শালা। তথাকথিত সৎ পুলিশ অফিসার। হাত করা গেল না।
– মূল পয়েন্ট বলো,
– আদ্রিত কে দিয়ে বর্ডার ক্রস করানোর ডিল
ছিল। পু…..
– পুলিশ আদ্রিত সহ মাল আটক করেছে, আমাকে ছাড়াতে হবে?
– সঙ্গে ওই ৫ কেজি চাপাই বর্ডার ক্রস করে ইন্ডিয়া পাঠাতে হবে। একবার তার ক্রস করলেই কাম সারা। আজ পারবিনা শনিবারে কাস্টমস ডিউটি কম থাকবে
– আজকেই যাবো।
– ইউর উইশ।
সাফিন আবারো নিজের কাজে ফিরে যায়। আজ আর সামির বসেবসে মদ গেলেনি। কাশেম এসেছে
আশেপাশের সকল খবরাখর দিয়ে জানিয়েছে ভার্সিটিতে ২ টা মিসিং আইডি জমা হয়েছে। একটা আপনার মানে সামির সিকান্দার আর দ্বিতীয় ভাবির মানে মাহাদিবা ফারনাজ মাহার
আপনি কি আর যাবেন না ভাই?
– যাব। ঠিক আগের মতোই যাব। কাইশসা,
– জ্বি ভাই?
– আমার রুমাল বদলে দে।
– কালা তো আপনার পছন্দের রঙ ভাই।
সামির কিঞ্চিৎ ঠোঁট টেনে বলল,,
– কালায় রক্তের দাগ বোঝা যায় না।
বলেই কাশেম কে টপকে সামির নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। কাশেম একটা শুষ্ক ঢোক গিলে বেরিয়ে যায়। রাত যত গভীর হয় সামিরের তত বিরক্তি বারতে থাকে। সিভান এসে টেবিলের ওপর চড়ে বসে। আঁকাআকি করা খাতাটা তুলে ধরে বলে,,
– ভালো হয়নি। ভেটকে গেছে।
– ঘুমাসনি কেন?
– ঘুম ধরছেনা। এ কাকা ছাদে যাবে?
সামির মানা করেনা। দুজনে হাটতে হাটতে ছাদে চলে গেল। এক কর্নারে বসে সিভান গিটারটা টুংটাং করে বলল,,
– শেখাবে?
– পারবোনা।
– তাহলে তুমি বাজাও।
– ইচ্ছে নেই।
গিটারে আরো দুটো টুংটুং শব্দ করে সিভান বলে,,
– কি ভাবছ?
– ভাবছি, আমাদের নাম না বিসর্গঃ হতে হতো
– কেন?
– কারণ আমাদের শুধু দুঃখে মানায় ।
– এ কাকা?
– উমম?
– তুমি আবার ভার্সিটি যাবে?
– উমম।
– ওহ।
সিভান যেন কিছু বলতে এসেও না বলে চলে যায় । সামির আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,
– আমি বলেছিলাম সময় যেন না যায় , কিন্তু বারা সময় আরো দ্রুত চলে গেল। আমি শালা যুদ্ধে জয়ী হয়েও পরাজিত । নইলে শত্রু না থাকায় ফাকা ফাকা ফিল হয় কোন বাঙ্গির!
হঠাৎ খেয়াল হয় তার দেওয়া সেই সবুজ শাড়ি টা পড়ে মাহা তার সামনে দাড়িয়ে । কেমন একটা অহংকারী ভাব নিয়ে মাহা বলল,,
– কি সামির সিকান্দার? আমি বলেছিলাম আপনি একটু হলেও বদলাবেন। খুব তো বলেছিলেন, আপনাকে খুঁজে পেতে আমাকে গভীর সমুদ্রের অতলে তলিয়ে যেতে হবে? গভীরে দুর পানিকে স্পর্শ ও করতে হলোনা আপনি বদলেছেন সামির সিকান্দার।
সামির বাকা হেসে জবাব দিল,,
– তুই এমন একটা বাঙ্গির নাতনি না সরি কাল নাগিনি। নাগিন সিরিয়ালের মতো হুট করে এলি বাঁশ ভরা ছোবল মেরে বিদায় হয়ে গেলি।
– আপনিও তো আমার জীবনটা মাত্র ১ বছরের ব্যাবধানে তছনছ করে দিলেন। আজ আপনি যদি আমার তথাকথিত স্বামী না হতেন তবে আমি আর আমার বাচ্চাটা মরতাম না।
– না দিবা। তুই ইচ্ছে করে বাচার চেষ্টা করিসনি। নাই আমার বাচ্চাটাকে বাচানোর চেষ্টা করেছিস। এতটা ঘৃণা? তুই বাচাতি যদি বাচ্চাটার বাপ সামির সিকান্দার না হতো।
– আপনি তো সাইন্সের স্টুডেন্ট। কোন যুক্তিতে বাচ্চাটাকে আপনার একার দাবি করছেন?
– আমাকে তুই জানতেও দিলিনা। আমি বাপ হতাম। রক্তের আকর্ষণ কি জিনিস জানিস? জানবিনা। বুঝবিওনা। হাসছিস? হাস যত পারিস হেসে নে। এই জগৎএর সবাই এই সামির বাঙ্গি কে নিয়ে হয় ঘৃণা করে নয় হাসে। কেউ নেই যে ভালোবাসে। আর,,,
সামির ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মাহা নেই। নাই আছে তার ছায়া।
কিছুমুহূর্ত চুপ থেকে সামির আবারো একা একাই হেসে উঠে দাড়ায়। কেমন করে নিজেই নিজেকে বলে,,
-“কিছু বিদায় শব্দহীন, কিছু সম্পর্ক শেষ হয় ব্যাখ্যা হীন, সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিদায়গুলো ওইগুলোই, যা কখনো বলা হয় না ব্যাখ্যা করা হয় না, শুধু নীরবতার গভীরে হারিয়ে যায়! তবুও নিয়ম করে, রাত্রি আসে.”” ভনুমতীও এভাবেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে. ..”
দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস ফেলে সামির নিচে চলে যায়। পড়ার টেবিলের ড্রয়ারটা খুলে তার ধারালো ছুরি টার দিকে তাকিয়ে রইল। ছুড়িটা যেন তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। অর্ডার করতেই পারেনি কাশেম একটা নতুন বড় রুমাল টেবিলে রেখে গেছে। রুমালটা মেলে ধরে দেখল,,
সাদা কালো চেক রুমাল। সামান্য একটু হাসলো সামির। বুঝলোনা কাশেম কেন এই রুমাল দিয়ে গেছে এটাতো হুজুর পীরেরা পড়ে সম্ভবত। তারপরেও রুমাল টা ভালো লাগছে। এটা দিয়ে পুরো চেহারা ঢাকা যাবে।
রুমালটা মুখে পেচিয়ে সামির দেখল তাকে একদম সামির সিকান্দার বলেই মনে হচ্ছে । খুনি, উগ্র, পাক্কা হারামি সামির সিকান্দার ! রাজশাহী সেরা মাস্তান, ফুটো মস্তান সামির সিকান্দার !
পুরোনো দিনের মতো সামির সবার অগোচরে বারান্দা টপকে বেরিয়ে যায় । অন্ধকার ভেদ করে চলে যায় নিজ গন্তব্যে।
ইন্সপেক্টর বিজয় দাস, শেলের ওপারে থাকা আদ্রিত কে জিজ্ঞেস করছে,,
– আর কেকে জড়িত এসবের সাথে ?
– আমি জানি না আমার যেটুক কাজ ওইটুকুই করতে গেছিলাম।
– আসলে কি বলত, এতদিন ইয়াং অফিসার ছিল তাই সামলাতে পারেনি। আমার সাথে কেও পারবিনা তোরা।
– না স্যার,, আমাদের হাত কাঁচা ওইজন্য ধরে ফেলাইলেন। এমন একজন আছে যে আসলে আপনিও টিকতে পারবেননা। দেখাগেল আপনারে জীবিতই রাখলোনা।
– মেয়র আবু সাফিন সিকান্দার তাইতো?
– নাহ। সে সহজে মাঠে নামেনা।
– তাইলে কেডা?
– আমাদের দিলের বাদশাহ কইতে পারেন।
– আচ্ছা?
-জ্বে ।
– চিহ্নিত করব কিভাবে?
– চোখ! ভাইয়ের দৃষ্টি একদম বাজের মতো। আমাদের মতো নরমাল না। যদি দেখেন মুখ বান্দা তাইলে বুজবেন আপনে শেষ ।
– দেখে নেব। তার আগেই কাল সকালে তোরে কোর্টে তুলমু
আদ্রিত আর কোনো কথা বললনা। দম ফেলে মনে মনে বলল,
– মনে হয় না ভাই আসবে।
রাত গভীর হয়,, বিজয় তখন বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে । আদ্রিত পেছন থেকে বলল,,
– স্যার?? ওই ৫ করজি মাল আপনি কি কোর্টে জমা দেবেন?
– না রে পাগলা। তোর শশুড় বাড়ি দেব।
– কোথায় রাখছেন? আপনার বাড়ি?
– অফিসের কাজে ব্যাক্তিগত জীবন লাগানোর পারমিশন নেই।
আদ্রিত আর কোনো কথা বললনা। বিজয় দাস থানা থেকে বেরিয়ে নিজের বাইকে করে বাড়ির পথে রওনা দেয়। মাঝপথে হঠাৎ একটা কুকুর তার রাস্তা আটকে ধরে। হর্ন বাজানোর পরও সে সরছেনা। শুধু ভাউ ভাউ করে চলেছে। বিজয় দাস গাড়ি থামানোর বদলে আরো জোরে চালাতে লাগলো। কুকুরটা তার পিছনে পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে বাইকে হেলান দিয়ে একটা ছেলেকে বসে থাকতে দেখলে ভ্রু কুচকে তাকায় বিজয় ।
বাইক থামিয়ে বিজয় জিজ্ঞেস করে,,
– এই ছুড়া,, কে বে তুই? রাস্তার মাঝে বসে কি করছিস? এইযে,, শুনতে পাচ্ছিস না??
ছেলেটা দুইকদম সামনে এগিয়ে আসে,, বাইকের আলোয় তার দেহের ওপর অংশ দৃশ্যমান হতেই বিজয় দাসের কপাল প্রসারিত হয়। সাদা কালো রুমালে আবৃত মুখের শুধু রহস্যময় চোখদুটো দেখা যাচ্ছে । কপালটা হালকা কুচকে আছে। চোখদুটো বড্ড ভয়ানক! একদম দক্ষ শিকারীর চোখ বলা যায়।
বিজয় দাসের একটু আগের কথাগুলো মনে পরে অদ্রিত বলেছিল, চোখই যথেষ্ট কিন্তু নামটা জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। একটু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,,
– আদ্রিত কে ছাড়াতে এসেছিস? নাম কি তোর? কে তুই??
– সামির সিকান্দার !
ধিরে ধিরে সামির তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পেছন থেকে রিটো আরো জোরে জোরে চেঁচাতে থাকে। সামির হাতের ইশারায় তাকে চুপ হতে বললে সে একদম স্তব্ধ হয়ে যায় । সামির মাজায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে বলে,,
– চেঁচাচ্ছে কেন জানেন? মালিক কে দেখে ক্ষিদে বেরে গেছে । খাবার চাইছে ও। এতদিন ছিলামনা না জানি কেও কিছু খেতে দিয়েছে কিনা। তাই আজ আমার কিউটিটাকে গুদাম ভরে গেলাব।
– এসব আমাকে বলছিস কেন?
– দাপাদাপি না থাকলে শিকারে মজা নাই। আমি একটু বাঙ্গিমারা টাইপ শিকারী।
– বাঙ্গিমারা মানে?
– বুঝবেন না পুলিশ বাবু,, এটা সামির বাঙ্গি স্টাইল!
বিজয়ের তখন একটু ভয় হতে শুরু করে কারণ এখানে এসেই শুনেছে প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের খুনির নাম সামির সিকান্দার । যদিও প্রমাণিত নয়। তবে সে দাগী সন্দেহের অধীন। তাছাড়া সামির সিকান্দার এর ভয়াবহ দৃষ্টি দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় সেই খুনি।
বিজয় উল্টে হাঁটতে লাগলে সামির বলে,,
– তোকে শেষ একটা চান্স দি৷ বয়সে বড় বলে কথা। বল,, তোকে এক লাখখ টাকা দেয়া হবে। এক লাখ। বল রাজি?
বিজয় সোজা নিজের রিভলবার তাক করে বলল,
-স্যালেন্ডার সামির সিকান্দার!
সমির বুড়ো আঙুল দিয়ে ভুরু চুলকে বলল ইউর উইশ।
মিনিট খানেক স্তব্ধতা। হঠাৎ করে সামির নিজের পিছে থেকে ধারালো ছুরি টা বের করে তার দিকে ডাইরেক্ট একশান । সোজা হাতে গিয়ে লেগে রিভলবার টা ছিটকে পরে যায় । রিটো সেটা শুঁকে শুঁকে চেটে অন্য দিকে ফেলে দেয় । সামির যেন উড়ে গিয়ে বিজয় দাসের কলার চেপে ধরে ।
তারপর নিজের ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাতে আঘাতে তার বুকপুরো ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। অতঃপর তার পা ধরে টেনে নিয়ে যায় থানার সামনে। সিসিক্যামেরাগুলো তখন নির্জীব। দক্ষ সাইবার এট্যাকটা সাফিনের।
কালকুঠুরি পর্ব ৪০
তার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সুতরাং সচরাচর করা কাজে তার দুদন্ড সময় ও লাগেনি। থানার সামনে আসতেই সকল কনসটেবল, হাবিলদারসহ সকলে কেঁপে ওঠে । তাদের আরো ভয় ধরে সামির সিকান্দার এর হিংস্রতা দেখে। বিজয় দাসের মরদেহ থানার মধ্যিখানে ফেলে আরো ভয়ানক কাজ করে সে। পিছনে গুজে রাখা ধারালো কুড়াল দিয়ে এক কোবে বিজয় দাসের হাতের কব্জি দেহ থেকে আলাদা করে ফেলে শিষ বাজিয়ে রিটোকে ডেকে তার দিকে ছুড়ে মারে।
রিটো বেশ মনোযোগ দিয়ে রক্তাক্ত হাতের কব্জি চাবাতে থাকে। দু চারজন পুলিশ জ্ঞান ও হারিয়ে ফেলে। একজন দৌড়ে শেলের তালা খুলে দেয় । আলমারি থেকে সীল মারা একটা বক্স বের করে। আদ্রিতের হাতে বক্স আর কুড়াল টা দিয়ে সামির নিজ মতো বেরিয়ে আবারো মিশে যায় রাতের অন্ধকারে ।৷।
