কালকুঠুরি পর্ব ৪৫
sumona khatun mollika
প্রফেসর সামির সিকান্দার আজ ভার্সিটিতে আসেনি। কাশেম জানে আজকে আসবেওনা। বিগত রাতে নিশ্চয়ই আবারো কোনো ডিলারের সাথে হাত মেলাতে গিয়েছিল । কাশেম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভার্সিটির স্মৃতি চত্বরের কাছে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ কোথায় থেকে মেধার আগমন। তাকে হাঁপাতে দেখে কাশেম হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে শ্যামা? কি হলো?
– কাশেম ভাই? বাইরে,, বাইরে আপনাদের ব্যাচের নাহিদ নামের ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে।
– নাহিদ? নাহিদ তো ভালো ছেলে কিন্তু এসব কেন?
– তাড়াতাড়ি সামির সিকান্দার কে কল লাগান৷ নাহিদের চিঠি দেখে বাইরে জনতা বেশ উত্তাল। সম্ভবত পুলিশ আনতে হবে।
– কি বলো?
– হ্যা।
– তুমি বাইরে যেওনা। এখানেই দাড়িয়ে থাক। পারলে বাড়ি চলে যাও। সাবধানে যাবে কেমন?
– জ্বি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাশেম প্রথমে সামিরকে কল করলে লাইন বিজি আসে মানে সে এখন কল তুলবেনা। তারপর লেমনকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে সেও বলে তাকে সেখানে পৌছুতে। কাশেম গিয়ে দেখে নাহিদের লাশ নামানো হয়েছে৷ পরিবারকে খবর দেওযা হয়েছে তারা এখনো এসে পৌছায়নি। সবাই গোলযোগ শুরু করতেই সিয়াম এসে জিজ্ঞাসা করে,, কিসের চিঠি রেখে গেছে??
একজন জুনিয়র ছাত্র , জোড়ে জোড়ে তার চিঠি পড়ে শুনাতে থাকে,,
সবার উদ্দেশ্যে,,
আমি নাহিদ, আর এই স্বৈরাচারী বাংলাদেশে থাকতে পারবোনা৷ আমি পড়েছি বেশি। আমার মেধা বেশি। আমার পয়েন্ট ও বেশি। কিন্তু কার দাদা কোন আমলে যুদ্ধ করে রেখে গেছে তার বদৌলতে একজন অযোগ্য কে চাকরি দেওয়া হলো। আমি অনাথ । মাথায় ছোট ভাইবোনের বোঝা, পারিবারিক চাপ আর এই নিষ্ঠুরতা আমার পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়। আমাকে ক্ষমা করো। এই চাপ বইতে পারছিনা।
সবাই ভীষণ রেগে যায়৷ বেশ কয়েকবছর ধরে এসব চলে আসছে। কোটার জোড়ে অযোগ্য রাও চাকরি পায়। আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়ে যায়।
তৈমুর নামের ছেলেটাও সেখানে উপস্থিত ছিল। সে মূলত আপাতত ভার্সিটির সিনিয়র। হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করছে। আগে শান্ত শিষ্ট থাকলেও এখন সেও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। কাশেমকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
– কোথায়? প্রফেসর সামির সিকান্দার ভিরান কোথায়? ডাকো তাকে,, এই বৈষম্যের বেলায় ও তিনি চুপ থাকবেন?
অনেকে অনেক কথা বলতে বলতে আবহাওয়া গরম হয়ে ওঠে । কাশেম সামিরকে কল লাগালেও সামির তোলেনা৷ সিয়াম ফোন তুলে সাফিনকে কল লাগালে আধা ঘণ্টার ভেতরে ভার্সিটি পুলিশ দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। তারি মধ্যে সাদা গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে নব নির্বাচিত এমপি আবু সাফিন সিকান্দার। পরিবেশ মোটামুটি শান্ত চারপাশ নিরব হলে সাফিন সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
– নিজের জানের মাযা যার যার আছে,, সে সে যেন এসব বিষয়ে গোলমাল না পাকায়। হরিণ হয়ে নিজ ইচ্ছে তে বাঘের গুহায় যেওনা। তোমরা জাতির ভবিষ্যৎ। এই কোটা নিয়ে ফাকড়া আজকালের কথা না। ২০১৩ সালেও একবার এসব গোলমাল হয়েছিল। কিছু পরিবর্তন হযেছে? যুগযুগ ধরে চলে আসক রীতি কি কেও বদলাতে পারে?
– না পারলে যুগ এতদূর এগোতোনা এমপি সাহেব। জনগণ দেশের মূল সম্পদ। ছাত্র জনতা একজোট হলে কেন এই অত্যাচারী নিয়ম বদলানো যাবে না?
সাফিনের মনে হয় ভেসে আসা নারীকণ্ঠ টি তার বহুল পরিচিত। শান্ত জনতার বাপাশে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একজনের আওয়াজ৷ভিরের মধ্যে থেকে মাহা গলা উচিয়ে কথাটা বলে সাফিন ঘুরে আর জিজ্ঞেস করতে পারলোনা কে বলল কথাটা? তার আগেই তৈমুর বলে উঠলো,,
– যুগ ধরে চলে আসা রীতি ভঙ্গ করেই বাংলাদেশ একাত্তরে স্বাধীন হয়েছিল । এখন কেন সামান্য কোটা বদল করতে পারবেনা? শহীদ হয়েছে দাদা, পরদাদা। তাদের সুকর্ম ফলে অন্য মেধাবী রা কেন বঞ্চিত হবে?
সফিন চোখ থেকে সানগ্লাস টা নামিয়ে বলল,,
– তোমরাওতো বাপের টাকায় এই পর্যন্ত এসেছ? মায়ের পেট থেকে পরেই কি কামাই করতে নাকি?
– আপনি কি বলতে চাইছেন এমপি স্যার?
– সবাই মন দিয়ে শোনো আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তোমাদের বিরুদ্বাচারও করছিনা শুধু সাবধান করছি। আমি চাইনা এসব গোলমাল করে আমাদের ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি রাজশাহীর সৌন্দর্য নষ্ট হোক।
-তাহলে এভাবেই মরতে থাকব? পড়াশোনা ছেড়ে দেব? যোগ্যতা দিয়ে কি হবে এমপি স্যার,, দিনশেষে কর্ম পাবে ওই সুবিধাবাদী লোকজন।
– মরবে কেন বলতো? আত্মহত্যা তারাই করে যারা জীবনের ঘানি টানতে পারেনা। চাকরিই যে করতে হবে তারতো মানে নেই। নিজ উদ্যোগে কিছু করো।
– আমরা নিজেদের অধিকার চাই।
-তোমাদের যা ইচ্ছে করতে পারো তবে,, ওপর মহল থেকে যদি উল্টো হামলার অর্ডার আসে, আমার সেক্ষেত্রে কিছুই করার থাকবে না।
তৈমুর সহ সকলেই চুপচাপ সাফিনকে যেতে দেয় । কি করবে কি বলবে। সাফিনতো তাদের ছোটোখাটো একপ্রকার হুমকি দিয়ে গেছে। কাশেম গিয়ে দেখে সামির পরে পরে ঘুমাচ্ছে এখনো। ফোন সাইলেন্ট করে দুরে সরিয়ে রেখেছে। সিভানো পাশে শুয়ে আছে। কাশেম এর উপস্থিতি টের পেতে সামির জিজ্ঞেস করে,,
– চাইয়া থাকস কেন কি কবি ক।?
– জাগনা তে ফোন ধইরছেননা কেনে?
– কি বইলবি বুল?
– নাহিদ নামের এক ছুড়া আত্মহত্যা কইরেছে ভাই। বাড়ি মনে হয় বগুড়া৷
– কি করণে?
– ওইযে আবারো কোটা। গরিবের ছুড়া, কোটা নাই জন্য চাকরি হয়নাই।
সামির হাই তুলে অগ্রাহ্য করে বলে,
-এই সামান্য কারণে কেও জান দেয়? বোকাচোদা**।
সিভান গড়ান দিয়ে বসে বলে,
-হ,, দুনিয়ায় সবাই বোকাচোদা তুমি একাই চালাকচোদা।
– কথার মধ্যে বাহাত মারিসনা।
কাশেম মুখ বেকিয়ে বলে,
– কি এক আজব জুটি রে বাপ! ভাতিজা চাচারে গালাচ্ছে। চাচা কিছুই বলছেনা। সায় দিচ্ছে ।
-এজন্যই আমরা বাঙ্গি জুটি। তারপর কি হলো??
– এমপি সাহেব যায়া বইলেছে কোনো গোলমাল না কইরতে।
– তাহলেতো মিটেই গেল।
– মিটে নাই ভাই। আমার মনে হয়না মিটেছে। শুধু এই একদুইডা না। এরম কেস মেল্লা আছে।
– যার যা খুশি মারাক গা। তোর এত চিন্তা কিসের?
– ভাই অরা আমগো জুনিয়র, আমাদের উচিৎ ওদের বিষয়টা মাথায় তোলা। তাছাড়া যা শুরু হইছে কতগুলি মিসিং আইডি জমা হইছে কে জানে?
– দেখছি কি করা যায় ।
তাদের থেকে বিদায় নিয়ে কাশেম চলে যায় । সিভান বিষয়টা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। তাই ঘুরে জিজ্ঞেস করে,,
– এ কাকা,, তুমি আবার খুন খারাবি ধরে ভার্সিটি ফাকা করছো নাতো?
– না বুঝে আন্দাজে কথা বলবিনা। কোটা নাইতো কি হয়েছে? আমারোতো ছিলনা। তবুও আমি বরাবরি ভার্সিটি টপার ছিলাম। শালারা পড়বেনা, সময় নষ্ট করবে মেধা তালিকায় নাম না আসলেই অন্যের লেজে পারা।
– কিন্তু কাকা, সবাইতো আর একসাথে প্রথম হবেনা। মানছি যে আমার দাদা যোদ্ধা ,, যার দরুন আমি একটু সুযোগ সুবিধা পাবো। কিন্তু সবক্ষেত্রে এটাতো জুলুম মেধাবিদের ওপরে । তোমার নাহলে অঢেল টাকা সবারতো আর তা নাই।
– জ্ঞান মারায়ো না বাঙ্গি। ভালো কইরা পড়া মারাও। নাহলে তর কিন্তু কোনো কোটা নাই।
– আমি ওসব জুলুমি কারবার চাইওনা। আমার কাকি সুন্দরী শিখিয়েছে সবসময় নিজের যোগ্যতায় সব অর্জন করতে। সুবিধাবাদী না হতে ।
সামির চুপ করে যায় । তার যতটুকু কাজ থাকে সে ততটুকুই হাত চালায়। কতজনকে রক্তাক্ত করতে হয়েছে তারো কোনো হিসাব নাই। কখনো স্বিকার করা হয়না কিন্তু তার পুরো নাম সামির সিকান্দার ভিরান! মাঝেমধ্যে তার ভিরান স্বত্তা থেকে জবাব আসে, এত টাকা, পয়সা, ক্ষমতা দিয়ে কি হবে? যার জন্য গোছানো উচিৎ সেত নেই। এর চেযে যাযাবর জীবন ভালো। মরে গেলে এসব সয় সম্পত্তি, টাকা পয়সা ক্ষমতা সবতো আর সঙ্গে করে নিতে পারবেনা। তবুও সে সাফিনের হাতের পুতুল। জীবন বাঁচানোর সময় সাফিন প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল,,
“তোকে মরতে হলেও আমার অনুমতি নিতে হবে। জংলী হিংস্র পশুর মতো ভয়ানক হতে হবে । দিনশেষে তোর কেউ থাকবেনা। আজ ভানু নেই কাল সাফিনও থাকবেনা,,, বল তুই রাজি? ”
ছোট্ট সামির সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে সাফিনের অনুমতি ছাড়া মরবেনা। যত বাঁচবে তার চাকর হয়ে বাঁচতে হবে। ভার্সিটিতে টিচারের পজিশন টা ছিল সামিরের স্বপ্ন । কোনোদিন ও কাওকে বলেনি। বুঝতেও দেয়নি। সাফিনও জানে প্রয়োজনের তাগিদে নিজের ভদ্রলোক পরিচয় ধরে রাখতে৷ সে সামির সিকান্দার থেকে প্রফেসর সামির সিকান্দার ভিরান । যদি সাফিন কোনোদিনও জানত তবে হয়তো তাকে দিনমজুর হিসেবে লাগাতো তবু টিচার হতে দিতনা। তাই এমন ভাব ধরে থাকে যেন টিচিং প্রফেশনটা তার একদম অপছন্দ ।
সিয়েরা আর ইতি সামিরের ঘরের বারান্দায় বসে খেলছে। বরাবরি ছোট পুচকে সৈন্য গুলো সামিরের ঘরে খেলাধুলা করে । সিয়েরার বয়সও তিন বছর মাত্র । তবে সিকান্দার দের রক্ত তো বাপ চাচার মতো বংশীয় ট্যালেন্ট আর কম বয়সে মানসিকভাবে বিকাশিত। তার কথা খুব একটা তোতলায় না। হঠাৎ হঠাৎ একটা দুটো। সিয়েরা সামিরের টেবিলে চড়ে বসে বইখাতা ঘাটাঘাটি করতেই সামিরের খাতা হাতে পরে। দু একটা পাতা উল্টাতেই মাহার ছবিটা চোখে পরে। সামিরকে নয় সোজা সিভানকে জিজ্ঞেস করে,,
– বায়া,,, এটা কে?
– ওটা? কাকি সুন্দরী। সুন্দর না?
– হুউউ।
সামির সিয়েরার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে বলে,,
– এই একটা বাঙ্গিমারা ,, এ মহিলা তোর বইখাতা নেই? আমার খাতাপাতি ঘাটোস কেন? একদম বোম মেরে দেব।
– ইত্তু দেকি?
– না৷ যা বেরো। সব বেরো রুম থেকে । এখন আর কেও ডাকবিনা। যা যা যা
রাত ঢলে যায় আপন বেগে। নৈশপ্রহরী রিটো এখনো সিকান্দার বাড়ির আশেপাশে অজানা ঝোপে লুকিয়ে থাকে। অপেক্ষা করে সামির সিকান্দার এর শিষের। সকলে যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, সামির একটা রঙচটা জিন্সের প্যান্ট আর লাল শার্ট পড়ে দক্ষিণ পাড়ার গোরস্থানে চলে যায় ।
মাহা হয়ত কখনো খেয়াল করেছে কিনা জানা নেই তবে এটা সেই শার্ট আর প্যান্ট যেটা প্রথম দেখার সময় সামিরের পড়নে ছিল। আজ হুট করে সামির আবারো সেই পোশাক বের করেছে। শার্টের পিছে একটা জায়গায় ছিড়ে গিযেছিল। যার দরুন এতগুলো দিন পড়া হয়নি। ইনায়া ভাজ করে রেখেছিল। সেখানে পশ্চিম পাশের এক কবরের কাছে বসে সামির নিজে নিজেই বলতে থাকে,,
– বাচ্চারা ঠিকি বলে,, তুমি সুন্দরী । এজন্যই অহংকারী পানি সুন্দরী । দেখতে পাও? কখনোকি শুনতে পাও আমাকে? বিরোধের প্রহর কি একটুও কমেনি? তুমি জানো তুমি কেমন সুন্দরী?
~তুমি সেই চাঁদ যার
আমি বাদে কোনো দাগ নেই
তুমি সেই সূর্য যাতে
আমি ব্যাতীত কোনো সৌরকলঙ্ক নেই।।
তুমি এতই সুন্দর যার কোনো বর্ণনা নেই।।
তুমি আমার ভয়ঙ্করী পানি সুন্দরী দিবা।
রাতের পর রাত চলে যায় কেও জানেনা সামির সিকান্দার মাঝেমধ্যে রাতের আঁধারে লুকিয়ে এখানে আসে। তার ভেতরটা আফসোসে পুড়ে যায় । কেও তা দেখেনা। মাহা জীবিত এটাও সে কল্পনা করে না। আবার মৃত এটাও মেনে নিতে পারেনা।
পরেরদিন ভার্সিটিতে আবারো সেই বাচ্চাটির সাথে সামিরের দেখা। সামির তাকে বাইকের ওপর বসিয়ে তাকে মুখ বরাবরে বসায়। বাচ্চাটা গাল টেনে টেনে হাসছে,, সামিরের তার হাসি দেখে কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে ।
– এ সামহা তোমার নাম কি?
– থামহা থিকাদদাল বুমি ।
– এ্যাহ হাহাহা আবার বলো তোমার নাম কি?
– থামহা থিকাদদাল বুমি ।
– আচ্ছা! থামহা থিকাদদাল বুমি, আম্মার নাম কি?
– মাআআ।
– সেটাতো বুঝেছি তোমার মামণির নাম কি?
– থেতু।
– হাউ ফানি থেতু!
ভূমি ঠিকি জবাব দিয়েছে। তার কাছে আম্মু মাহা, যার উচ্চারণ বিগড়ে গিয়ে হয়ে গেছে মাআ। মামণি মানে সেতু, আর মিমি মানে আরেকজন।
সামিরের গলায় সবসময় একটা ক্রসের লকেট ঝুলত। এখনো ঝোলে। ছোটবেলা থেকে বেয়ারা সামির সিকান্দার একবার মেলায় গিয়ে দেখে জেদ ধরেছিল এই তলোয়ারের মালা আমার চাইই চাই। সুফি বেগম বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু লাভ হয়নি। সেখানেই গড়াগড়ি করে দোকানের জিনিসপত্র ভাংচুর করতে শুরু করলে দোকানী নিজেই দিয়ে দিয়েছিল।
সামহা আঙুল দিয়ে ইশারা করে আটকা আটকা গলায় বলে,,
– ইটা কি?
– বাঙ্গি!
মাহা মাথা নেড়ে না করে। সামির ভুরু কুচকে জিজ্ঞেস করল,, এটা বাঙ্গি না? সামহা আবারো মাথা নাড়াতে থাকে। তারপর দুই হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝায়,, বাঙ্গি এমন না
– মাথা দোলাচ্ছেন কেন বোরখাওয়ালী বেবি?
– ইটা বান,, বাম,,, বাননি না
– হ্যা বাননি না বল বাঙ্গি। বল, বান
– বান
– গি
– গি
– বাঙ্গি
– বাননি
– দুষ্টু বাঙ্গি কোথাকার!
– তোমি দুততু। তোমি ইটা কি পলেত? আম্মু বলেতে ইটা পরতে অয়না।
– আচ্ছা? তোর আম্মু বেশি জানে। কে বলেছে মালা পরতে হয়না?
– মামা, বাবাও পলেনা।
ভূমির আস্তে করে আঙুল ছুইয়ে সামির জিজ্ঞেস করে,,,
– তুমি রোজ এখানে কেন আসো?
– আমি নিয়াসি৷
সেতুর কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সামির। সেতু ভূমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
– চলে এসো,, বাড়ি যেতে হবে।
– উমম।
– ছোট এটুক বাচ্চা নিয়ে রোজ রোজ ভার্সিটি না আসাই ভালো । এমনিতেও ইদানিং দেখছনা কত গোলমাল চারেদিকে?
– জ্বি ভাই। আর আসবেনা৷ কয়দিন পর থেকে আর আনবোনা৷
– বাড়ি চলে যাচ্ছ?
– হ্যা।
– সাবধানে যেও। এই দুততু থামহা থিকাদদাল বুমি ? বাই বাই।
– আথ,, আথালা মলাইকুম।
– আআ,, হুউউ৷
কালকুঠুরি পর্ব ৪৪ (২)
সেতু কোলে করে সামহাকে নিয়ে চলে যায় । এই সামজার সালামের জবাব দিতে পারেনা সামির, গলাটা কেমন ধরে যায়৷ সে বেশ খেয়াল করত,, মাহারো একি অভ্যাস ছিল। যেখানে সামির ইচ্ছে করে তার সাথে দুষ্টুমি করত, তাকে খোঁচাখুঁচি করতো, মাহা যত রাগ হোকনা কেন, সালাম দিত। সামির যদি রেগেও থাকত জবাব নিত। তবে সামহার জবাব নিতে তার গলায় ভার হওয়ার রহস্য সে নিজেও ধাচ করতে পারলোনা।
