কালকুঠুরি পর্ব ৪৬

কালকুঠুরি পর্ব ৪৬
sumona khatun mollika

বেলা ঢলে পরেছে কৃষ্ণগহব্বরে। অন্ধকার নেমেছে ধারার বুক জুরে।
ভূমি মাহার পাশে বসে। তিতিন তার নরম কোলে জায়গা করে নিয়েছে পরম আগ্রহে। মাহা ভূমির মাথার হিজাবটা ঠিক করে দিয়ে বলল,,
– কি দেখছ?
ভূমি আঙুল তুলে ইশারা করে বোঝায় তোমাকে । মাহা ভ্রু উচিয়ে বলে,,
– হুমমম?? আমাকে?

ভূমি চট করে দুই গালে হাত দিয়ে বলে” ইয়া মালহাবা”। মাহা গাল টেনে হাসে। নাকের ছোট নকুলদানাসম নাকফুলটা চকচক করে ওঠে। ভূমি মায়ের হাটুতে ভর দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,
– ইটা কি??
– এটা নাকফুল। এটাকে নাকের নথ বলে।
– কোতায় পেলে?
– তোমার আব্বু দিয়েছে।
– আব্বু??
– জ্বি।
– আমাকেও দাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেতু পেছন থেকে বলে,,,
– এইযে মহামান্য সামহা সিকান্দার ভুমি?? ওটা বউ মানুষেরা পরে। তোমারতো বিয়ে হয়নি।
ভুমি বড্ড চিন্তায় পড়ে যায়। বউ মানুষেরা পরে? একজনকে বউ সেজে দেখেছিল সে। । ভূমি সেখান থেকে উঠে আলনা থেকে মাহার লাল ওড়না টা টেনে নিয়াসে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মায়ের ওড়না টা মাথায় তুলে বলে,,
– আমি বিয়ে কলব, আমাকে বিয়ে দেও।
সেতু হাহা করে হাসলেও মাহার মুখের হাসি মিইয়ে যায়। বিয়ের পর সিভান একদিন তাকে বলেছিল,,

“জানো কাকি সুন্দরী, কাকা তোমার ওপর কোনো শোধ টোধ তুলতে চায়না। কাকা তোমারে বিয়ে করতে দেওয়ানা হয়ে গেছিল। বুঝতে দেয়না তাই। বাবার কাছে এসে সরাসরি বলেছিল, আমি বিয়ে করব আমারে বিয়ে দেও, কোনো মেয়ে মানুষের সাথে ভদ্র আচরণটুকুও করতনা কিন্তু তুমি থাবড়া মারলেও তোমারে কিছু বলেনা। “”
সেতুর ডাকে মাহার ঘোর কাটে। সেতু ভূমি কে নিয়ে গুম পারাতে চলে গেলে মাহা নিজের ফোনটা বের করে একটা আনসেভ নাম্বারে কল লাগায়। ওপাশ থেকে জবাব আসে,,
-হ্যালো,, মিস মাহাদিবা?
-কেমন আছেন স্যার?
– এখনতো কিছুদিন পরেই আমি আর স্যার না আপনি মেডাম।
– হাসালেন স্যার।
– বলুন কি সমাচার?
– আপনি বর্তমানে কোথায় ? আর রাজশাহী তে কবে আসবেন??

– আমার এখনো পোস্টিং ডেটের দেরি আছে। ধরা যায় , এবারে আবারো রাজশাহীই আসবে। বেবি কেমন আছে?
-আলহামদুলিল্লাহ। কোটা টপিকটা নিয়ে ভার্সিটিতে গোলমাল হযেছিল । নাহিদ নামের এক জুনিয়র, কাশেম হালদার দের ব্যাচ খুব সম্ভব , আত্মহত্যা করেছে।
– কি আর বলি বলুন, আমার সময়ে ঘুষ দিতে পারিনি। দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিল সেই কোটায় আজ আমি গোটা থানার ওসি মাহবুব উদ্দিন।
– জানিনা সঠিক সময় কবে আসবে,, ততদানে কি কেও এসবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেনা। ও তো মারাই গেল। কিন্তু কতজন যে শিক্ষিত বেকার হয়ে পরে আছে!
– মেডাম? আপনি নিজের লক্ষ্যে কতদূরে?
– গতিবিধি জানাতে ইচ্ছুক নই।

মাহবুব উদ্দিন এর কল কাট হতেই মাহা তার পড়ার টেবিলে বসে যায় । একটা ডায়েরি বের করে সেটার পাতা মেলতেই দেখা যায় লালকুঠি এবং কালকুঠুরির নকশা। যেন পুরো লালগলির নকশা সেই পাতায় ।
সামির এখনো বাড়ি ফেরেনি। সিভান তার বাহিনী নিয়ে বসে বসে লুডু কেলছে। সঙ্গ দিচ্ছে রাহা। নুসরাত দড়জার কাছে দাড়িয়ে সাথিকে বলছে,,

– একটা জিনিস বুঝিনা,, এই রাহার রহস্য আমার কাছে একদম উল্টোপাল্টা উপন্যাসের মতো।
– কি বলতে চাচ্ছো?
– সিকান্দার বাড়িতে এর এন্ট্রি টা কিন্তু এরকম ছিলনা। আমারতো এখনো ভয় হয়। বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি না করে বসে আবার।
– আর যাইহোক এটুকু জানি, দাগ দিয়ে বলতে পারি,, সামির ওকে ছাড়বেনা বাচ্চাদের কিছু হলে।
– সে পরে ছাড়ুক বা ধরুক, বাচ্চাদের ক্ষতিটা যদি চিরস্থায়ী হয়ে যায় তাহলে??
– আমার মনে হয় না ও কোনো ক্ষতি করবে। ভয় থাকলে একটু সতর্ক থেক।
– এমনিও থাকি। ইনায়াকে করে যে ভয় হয়ে গেছে এ তো রাহা!
– আমি যাচ্ছি বুঝলে, সাবধানে থেক।
– আচ্ছা ।

সাদা কালো রুমালে ঢাকা চেহারায় সামনের দিকে বাজ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামির। পড়নে কালো শার্ট আর সাদা লুঙ্গি। পেছনে কালো শার্ট পরিহিত চারজন দাড়িয়ে । কাশেম, লেমন, রকি, আদ্রিত।
সাদা প্লাস্টার করা দেয়াল। ওপাশে বিপরীতে দাড়িয়ে আরো ৪জন৷ তাদের যে হেড সে হিন্দু । পড়নে ধুতি পাঞ্জাবি । ঘাড়ে শাল। কর্কশ কণ্ঠে সে বলে উঠলো,,

– এমপি সাব ডার গেয়া? যো আপনা ছোটা ভাইকো ভেজদি? তুম জানতে হো হাম কওন?
– কিউ? কোই সাপ হো? ইয়া এনাগন্ডা? ( কেন? কোনো সাপ না এনাগন্ডা)
– উসসেভি জেহরিলা। ( তারচে বিষাক্ত)
লেমন বলে,,,
– ফির হামভি চিল হেয়। ( তবে আমরাও চিল)
অধীর পেছন থেকে তাচ্ছিল্য করে বলে,,,
– সাপ, চিল কিচ্ছু হওয়ার প্রয়োজন নাই। তার একটাই পরিচয় ভয়ানক,, সে সামির সিকান্দার!

– সে যে দারি হোকনা কেন? কার্তিক ভাই বোঝাতে চায়,, আসল কাজের কথায় আসো।
সামির শ্বাস ফেলে বলে,,
– আসল নকল আমি বুজিনা । আমার কাম আমি কইরা যামু। চুপচাপ টাকার ব্যাগ দিয়ে চলে যা জানে বেচে যাবি। আমি খোকা পুত্র নই।
– টাকা এনেছি। তবে ছিনিয়ে নিতে হবে। কারণ তোমরা চিট করেছ,, মাল পাঠানোর কথা ছিল ৫০ প্যাকেট। ৫ টা শর্ট। কিউ?
– সেটা জানা নেই। হয়তো কোথাও পরে গেছে।

কার্তিক ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। তার বাংলা বলা চেলা টা জবাব করে,,
– অবশ্যই দেখার বিষয় । টাকা নিযে এসেছি। তবে আমাদের আরো ৫ প্যাকেট দিতে হবে।
রকি বলে,,,
– না ভাই। অয় মিথ্যা বুইছে। এক্কের ৫০ এর ৫০ই ফিট কইরা পাঠায়ছে সাফিন ভাই। এই দেহেন,, প্যাকেজিং এর ফটোো উঠানো আছে।

সামির দেখলো, ছবিতে একদম ৫০ প্যাকেটই প্যাক করা হয়েছে। তাছাড়া চেলাপেলারা সহজে গোলমাল করেওনা। সামির লুঙ্গির এক কোনা উচিয়ে বলল,,
– টাকা দিয়ে দে জানে বেচে যাবি। নয়ত আর ইন্ডিয়ার মাটিতে পা পরবেনা।
-ও সাব ঝুট,, মেরে পাস ৫০ প্যাকাট আয়া হেয়।
– এ বাঙ্গি চোপপপ!!! তোর চেলারা মাল ঝেড়েছে। ওদের ধর।
– হামে অওর ৫ প্যাকেট দে দো। পেয়সা লে যাও। ডেবিট অওর ক্রেডিট সামান।
– হিসাববিজ্ঞান তোমার স্যাটার মধ্যে ভরে দিচ্ছি !

সামির রাগলে কাশেম তাকে শান্ত থাকতে বলে কিন্তু কার্তিকের দলের একজন রেগে ওঠে,,
– বেজন্মা হারামি, আমাদের দোষ দিচ্ছিস! একদম মেরে দেব। ।
ব্যাস! সামিরের কান মাথা গরম হয়ে যায় । তার লজিকটা এমন সে সারা দুনিয়াকে গালাগালি করলেও তাকে কেও কিছু বলতে পারবেনা। সে তাকে পুতে ফেলবে। এখানেও হলো তাই।
– শুয়োরের বাচ্চা! দেখাচ্ছি আমি কিসের জন্মা!
কথাটা বলতেই যা দেরি। কাশেম, রকি, লেমন আদ্রিত কেও আর আটকালোনা। সামির পেছন থেকে ছুড়ি টেনে বের করে দেখিয়ে বলল,,
– রূপার ছুড়ি দিয়ে সন্মান বরব তোদের। টাকা দিবিনা মানে!!

তারা রিভলবার বের করেও লাভ হলোনা। সামিরের দক্ষ হাতের ছুড়ি নিমিষেই তাদের গলা ফেড়ে পার হয়ে গেল। কার্তিক নিজের জায়গায়ই দাড়িয়ে রইল । লাস্টে একজনে বাচিয়ে রেখে রক্তাক্ত ভয়ানক চেহারায় কার্তিকের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল,,,
– দেখলিয়া? হাম চিল ভি নাহি। শের ভি নেহি। হাম সামির! সামির সিকান্দার ! মোস্ট ওয়ান্টেড কন্ট্র্যাক্ট কিলার অব এমপি আবু সাফিন সিকান্দার।
ছোড় দিয়া। ফের হামছে পাঙ্গা মাত লেনা।
রদ্রকণ্ঠে কথাগুলো বলে সামির টাকার ব্রিফকেসটা তুলে কাশেমের দিকে ছুড়ে মারে। লুঙ্গি উচিয়ে তাতে হাত মুছে পাচজনের স্হান ত্যাগ করে। কার্তিক বুঝে যায় । সামির সিকান্দার ! আসলেই কাজের জিনিস!

কালকুঠুরি পর্ব ৪৫

বিগত একটা ডিলে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে লালকুঠির দুই নারী আর ৫০ প্যাকেট ড্রাগস পাঠিয়েছিল সাফিন। সে ঠিকই ৫০ প্যাকেট পাঠিয়েছে । গড়বড় করেছে কার্তিক আরিয়ানের লোক। কিন্তু স্বিকার করেনি। কার্তিক চৌকষ লোক ঠিকি বুঝেছে। তবে কোনো এক উদ্দেশ্যে তার মূল লক্ষ্য ছিল সামির সিকান্দার । দেখে চলে গেল। সামির বাড়ি ফিরে আজ আবারো পেছন দড়জা দিয়ে ঢুকেছে। বাচ্চারা দেখলে ভয় পেতে পারে।

কালকুঠুরি পর্ব ৪৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here