কালকুঠুরি পর্ব ৫

কালকুঠুরি পর্ব ৫
sumona khatun mollika

বাড়ি আসার পর সামির সাফিনকে জিজ্ঞেস করল,,
– আচ্ছা, ভাঙা টিন,, সিভানের ব্যাপারে কিছু ভাবলে?
– না।
– তা ভাববে কেন,, পয়দা করার সময়ওতো ভাবোনি, তোমার বাপ বলেছে ওকে নিয়ে আসতে।
– নিয়ে আয়। তাছাড়া এর পরেরবার আমি ইলেকশনে দাড়াবো,, ওকে যদি তুই সেফ রাখতে পারিস সমস্যা কোথায়!
– সেফ!! আমি নিজেই সবসময় পুলিশের নলের ডগায় বসে থাকি,, ওকে আর কি সেফ করব?

সাফিন আর কোনো জবাব দেয়না। যেদিন তার স্ত্রী ইন্দুলেখাকে খুন করেছিল,, সেদিনি শশুড় বাড়ির লোক তার ৮ বছরের বাচ্চা সিভান সিকান্দার কে অনেক হট্টগোলের পর নিয়ে গেছে।
সুফি বেগম অনেক করে বলেছিলেন সিভান কে না নিতে কিন্তু সালার সিকান্দার তখন গোলমাল করতে মানা করেছিলেন। সাফিনের সাথে খুব একটা বেশি কথা বলেন না তিনি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সামির ষাঁড়ের মতো চেচিয়ে চেচিয়ে ইনায়া কে ডাকছে,, ভিডিও কলে কথা বলছে সিভান। ইনায়া দৌড়ে চলে আসে ডাক শুনে,, সামির তার মুখের ওপর শার্ট টা ছুড়ে বলে,, এটা এমন কুচকে আছে কেন,, আয়রন করে নিয়ায়। ইনায়া দৌড়ে চলে যায়। সিভান বলে,
– এই গরু, তোমার গাভীকে নিআসছনা কেন? আমার ফুপুকে জ্বালাও কেন?
– মন চাই তাই। কালকে সুন্দর মতো চলে আসবি। তর মামারে ক,, আমি গেলে কিন্তু,,,
– আচ্ছা।

ইনায়া শার্ট নিয়ে আসতেই সামির তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল,,
– আজকাল পাপাকা পরীর ভেতরে তুই আর ডিপজলের মাই দেখি,, ঘরের চাকরানী। কি মজা পাস?
– ভাল্লাগে।
– রঙ্গ, তামাশা!! কাম করতে নাকি ভাল্লাগে। আমার আসতে দেরি হবে। তর চাচারে বলিস৷
– আচ্ছা।
সামিরের যাওয়ার পানে চেয়ে ইনায়া বলে,,
– কামরে না আমার সামির সিকান্দার রে ভাল্লাগে সামির ভাই।

আজ অক্টোবর ৪ , সামিরের জন্মদিন। সাফিন আসার পরদিনই, সব উল্টো পাল্টা করে ঘুরিয়ে দিয়েছে সাফিন। বর্তমানে সাফিন সভাপতি, সিয়াম উপসভাপতি আর সামির তথাকথিত ফুটো মস্তান! সালার সিকান্দার কে সামির সহজে বাপ বলে ডাকেনা। কারণ সামির সালার সিকান্দার এর অবৈধ সন্তান। সেটার মানন কেও মানেনা৷ তবে সামির সালারকে বাপ বলে ডাকেনা।

ভাটাপাড়া এলাকায়, যুব উন্নয়ন ক্লাবে, রাতে সাঙ্গপাঙ্গরা ধুম করে তার জন্মদিন পালন করেছে৷ তারপর যখন বড়রা চলে গেছে,, কাশেম টেনে বের করেছে এক ক্যারেট বিয়ারের বোতল। ঢকঢক করে মদ গিলেছে সবাই।
কাশেম টাল্লি হওয়া সামিরকে বলছে,,
– ভাই, আর গিইলেন না। সাফিন ভাই কোবাইবো।

সমির ঢুলছে আর বলছে,,
– এই চোপ শালা, এটা মাল নয়। এটা হইল কস্ট রিমুভার।
– আপনার আবার কিসের কষ্ট ভাই?
– হেটট! কষ্ট নাই মানে,,, আরে আমার কোনো কষ্ট নাই! এটা একটা কষ্টের বিষয় না? তাই মাল ঢেলে কষ্টের আগুন নেবাচ্ছি। কাইশসা, গান বাজা,,

কাশেম দৌড়ে গিয়ে মিউজিক সিস্টেমে গান চালালো,,
– বাংলা মাল চেড়ে হাতে শরবত নিয়েছি
পাপের পিছন ছাইড়া দিয়া মন্টু হইয়াছি,,,

সামির খপ করে গান বন্ধ করে কাশেমের মাথায় চাটি মেরে বলর,, শালা কাইশসার কাইশসা, পদ্মায় আইছে ভাইসসা! আমি কবে পাপের পিছন ছাড়ছি বে,, এসব গান আমার সাথে যায়না। সর,
বলেই নিজে গান লাগাল আর টেবিলের ওপর উঠে পড়নের নীল লুঙ্গি ঝাকিয়ে নাচতে আরাম্ভ করল,,

– হেএ,, হাজীর বিরিয়ানি,,
মালে ঢাল পানি, গাজা দেরে টানি,
চড়বে নেশা জমবে খেল,,
থাকলে আমদানি, নেইরে পারেশানি
বাংলা হিসেব জানি
ভালো করি মাখো তেল
বাবা খেয়ে হাবা হয়ে নাচব নেশার খেয়ালেএ,,
মাতাল হয়ে ঢলে পড়ব দেয়ালে
আরে যা হবে দেখা যাবে কাল সকালে
উমম লালা লা লা লালা লা,,

গান শেষ হতেই সামিরের গালে পড়ল কষা এক চড়। মাথা ঝাকিয়ে
– কেরে শালা?
সাফিন তার শার্টের পেছনে কলার চেপে ধরে বলল,
– তোর বাপের পয়দা করা শালা। কি করচিস?
– ওহ! না ওই দুঃকু নেভাচ্ছিলাম।
– নিভেছে?
– হ্যাএ।
– বাড়ি চল।

সাফিন গাড়ি বের করতে গেলে কাশেম সামিরকে বলল,,
– ভাই কি টাল্লি খাইছেন গা।
– হেশশ,, এইসব ছোটখাটো বোতলে আমি টাল্লি খাইনা। দিবার মতো ফকিন্নির ঝি নই।
– কার মতো,,
– হ্যা!! তোর মতো।
– ভাই, সাফিন ভাই যে এত জোড়ে মারলো দাগ হয়া গেছে গা।
– আরে ভালোবাসা যেখানে পিওর, বাঁশ সেখানে শিওর। কোনো ব্যাপার না।

বাড়ি ফিরে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে ধাম করে বিছানায়। ইনায়া এসে পায়ের জুতা খুলে দিয়ে গেছে। লুঙ্গি, শার্ট, পুরো গা দিয়ে ঘিন্না মার্কা গন্ধ আসছে!
এদিকে,,,
মাহা রান্নাঘরে রান্না করছে। চাচি মধুকে বলচে,,
– এভাবে পড়ে পড়ে বশ হলে কেও বিয়ে করবেনা। বলি মাহার থেকেতো কিছু শিখে নিতে পারিস। কে করবে তোকে বিয়ে?

মধু কানের হেডফোন নামিয়ে বলর,,
– তুমি জানোনা? ময়ূরপঙ্খী ঘোড়ায় চড়ে
আসবে রাজপুত্র স্বর্গ ঘুরে,,
এসে নিয়ে যাবে।

মাহা আস্তে করে একটু হাসে। চাচি মাহার কাছে এসে বলে,,,
– আচ্ছা শোন,,, ওই আমি এক জায়গায় তোর বিয়ে ঠিক করেছি। মানে ঠিক না, ওরা কাল দেখতে আসবে তোকে৷ আমি জানি, আসলেই পছন্দ করবে। ওই সব টিকঠাকি। তবে সমস্যা হলো,, লোকটার মানে ছেলেটার আগের বউ মারা গেছে। আর সে কখনো বাবা হতে পারবেনা। তবে অনেক বড়লোক জানিসতো। তুই একদম হেব্বি সুখে থাকবি। মত নিতে আসিনি। জানিয়ে যাচ্ছি। কাল ভার্সিটি যাবিনা।
– কিন্তু কাল আমার পরীক্ষা আছে।
-ওরা চলে যাওয়ার পরে যাস।
– আচ্ছা।

কালকুঠুরি পর্ব ৪

বলেই মাহা রাতের রান্না শেষ করে ঘরে চলে গেল। নামাজে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে বলল,,
– হে খোদা, আমার কি এই পৃথিবীতে দুঃখ ছাড়া আর কোনো অস্তিত্ব নেই! মাঝে মাঝে মন চায় অজানা পথে পা বাড়াই কোনো নতুন অস্তিত্বের খোজে।

কালকুঠুরি পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here