কালকুঠুরি পর্ব ৮

কালকুঠুরি পর্ব ৮
sumona khatun mollika

রাফির সাথে দেখা করার পর মাহা পদ্মা পাড়ে একাই দাড়িয়ে রইল। লোকটা এমনি ছিচকে,, মাহাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে চায়নি। তবে এলাকা সুনশান-নিস্তব্ধ। বিপদের সম্ভাবনা একশোয় দুইশ।
মুহিবকে কখন থেকে কল করার চেষ্টা করছে সে ফোন তুলছেনা। তখনি মাহা দেখে,, সামির আর সিভান কে। সিভানকে সে চেনেনা। তবে সামিরের সাথে বেশ ভালোই বন্ডিং মনে হচ্ছে। মাহা না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। সিভান আর সামির তার সামনে আসতেই,, সামির বলল,,

– সিভান ওই দেখ একখান ফকিন্নির ঝি,, ভিক্ষা দিয়ায় যা।
– ওটা কোথায় ফকিন্নি?
– তোরো মনে হচ্ছে না?
– নাতো কাকা।
– আমিই ভুল তাহলে,, চলতো,, কি ব্যাপার দেখে আসি,,
– চলো,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সিভান মাহার হাত টেনে বলল,
– এইযে মে,, এই বাজে রাস্তায় একা কি করছ? আজতো হরতাল গাড়ি পাবেনা। এলে কি করে?
মাহা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,
– একজনের গাড়িতে করে এসেছিলাম। চলে যাব। তোমার নাম কি?
– সিভান সিকান্দার।
সামির এগিয়ে গিয়ে বলল,,
– তুমি যেমন তোমার উড বিও তেমন,, কেমন ফকিন্নির ঝি,, বেডি মানুষ রে সাথে নিয়াইলে ফেরত নিয়া যাওন লাগে যানেনা। চল আমরা তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি,, ভাই ব্রাদারের বইন লাগো,, মানে আমারো ওইরমি কিছু! চলো

মাহা কোনো কথা বললনা। সামির সিভানকে ডেকে বলল,,
– চল সিভু,, মাইনষের ভালা করতে নাই,,, মাছ যদি নিজে হাইটে বিড়ালের কাছে যায় কি আর করুম !!
সিভান বলল,,
– এই মে,, চলনা,, তোমাকে নামিয়ে দি,, এলাকাটা নাকি ভালোনা।
মাহা কোনো জবাব দেয়না। সামির বলে,,
– এ বাঙ্গি,, চ নাইলে তর বাপে কোবাইবো!
সিভান গিয়ে সামিরের পেছনে বসতেই মাহা এগিয়ে গেল,, ,
– আমাকে থানার মোড়ে নামিয়ে দিলেই হবে।
-উঠে পড়।

সামির মাঝখানে সিভান আর পেছনে মাহা। রাস্তায় সিভান মাহাকে সারা দুনিয়ার প্রশ্ন করছে,, নাম কি,, বাবা কে,, থাকে কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি। মাহাও ধৈর্য্য ধরে জবাব দিয়েছে। কদমতলীর মোড়ে থামতে বললেও সামির সোজা তাদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় করিয়েছে।

মাহা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বলল,,
– আপনার কাছে ঋণী থাকতে চাইনা।
– আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয়? শালি ফকিন্নির ঝি,, উপকারের গুষ্টি মারছিস কেন,,
– আপনাকে ছোট করার উদ্দেশ্য নেই। তবে পরপারের হিসাবে আপনার কাছে ঋণী থাকতে চাইনা।
-থেকে যাও,, সেই সুবাদে ওপারে একবার দেখা হবে।

বাইক চালু দিতে দিতে সামির মাহাকে উদ্দেশ্য করে ফাটা কণ্ঠে গান গাইতে লাগল,,
-সব সখিরে পার করিতে নেব আনা আনা
তোমার বেলায় নেব সখি তোমার কানের সোনা
সখিগোওও
আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি
তোমার কাছে পয়সা নেব নাাআ!!

অবাক চোখে তাকিয়ে মাহা মনে মনে ভাবে,,
– এটা পুরাই একটা পাগল! মাথা খারাপ পাগল যাকে বলে,, যখন মানুষের মতো আচরণ করে দেখে বোঝাই যায় না এতো হারামি। আল্লাহ রক্ষা করুন।

সামিরকে সিভান বলছে,,
– এ,, কাকা,, মেয়েটাকে তুমি চেনো কি করে?
– প্রতিপক্ষকে চিনবোনা?
– এটাই তোমার চড়ওয়ালী?
– কাইশসা তোকেও বলছে না,, শালার কাইশসা তুই পদ্মায় যাবি ভাইশসা থাম!
– মেজমা বলেছে,, কাইশসা কাকার দোষ নাই।
– শালার বাড়িতে সব আমার বিরুদ্ধবাদীর সংখ্যা দিনদিন বেরেই চলেছে

বাইক জোড়েসোড়ে ঝাকি খেলে সিভান বলে,,
– দেখে চালাও,, মারবে নাকি,, দেখতে পাচ্ছ না?
– কি আর করবোরে সিভু,,, দুঃখের কতা কি আর কইতাম!! আমারতো আর ব্যাক্তিগত চাঁদ নাই, তাই অমাবস্যায় ঝাপসা দেখতে পাই!!
– ইনায়া তো আছে,,,
– দু একটা চাকরানি ফ্রিতে পাওয়া যায়,, চাঁদ তারার পার্থক্য বুঝিস? বুঝবিনা। এইটুকুতো ল্যাদাবাচ্চা!
– অপমান না করে ইনসাল্ট করলেও পারতে কাকা।

সিভানকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সামির আবার ডেরায় চলে যায়। দেখে কাশেম, রনিসহ আরো কয়েকজন ছোড়াছুড়ি বসে কি একটা নিয়ে মিটিং করছে,, ওখানেরই একটা মেয়ে নাম সোমা, সামিরকে দেখে বলে,,
– ভাই আপনি কি এবারো গোলমাল বাজাবেন নাকি,, ভাইয়ের দিকে ভোট দেবেন,,
– আমি দুই ডারেই দিমু,, আমিতো তগো সরকারি কামলা,, সত্যি কারের নাগরিক বিবেচনায় কাওরেই ভোট দিয়ামনা।
– কাওরেই দিবেন না মানে?
– বাপ চাচা দাদা টাকুরঝি কাওরেই দিমুনা! খালি খালি যাইয়া কাইজ্জা বাধাবো। এলাকার সেরা ফুটো মস্তান বলে কথা। তবে এডা শিওর, মেয়র আমাদের ভাঙা টিন ই হবে।

কাশেম এসে বলল,,
– ভাই রাগিব ভাই এসেছে,, আপনের সাথে ব্যাক্তিগত কথা বলবে কিসের জানি,,
– আজব,, বালের দুনিয়া,, বেডি মানুষ রাইখা সব খালি আমার চিপায় ডাকে কোন দুঃখে!
সামির বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে রাগিবের সামনে গিয়ে বসল,,,
– বলো,, কিসের লাইগা চিপায় ডাইকেছ?
– বোস,,

সামির বসতেই রাগিব একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে,, কোয়ালিটি ঠিকাছে?
সামির পাউডারের মতো দেখতে প্যাকেট থেকে কিছু গুড়া বের করে খুব সাবধানতার সাথে শুঁকে বলল,,,
– এক্কেবারে খাসা মাল! রেট কত ফেলেছ?
– ৩০ লাখ,,
– এত স্ট্রং ড্রাগ*স মাত্র ৩০!
– অর্ডার বেশি আছে,, খাপ হয়ে যাবে।
– তা মানলাম তবে আমার লাভ আর কাজ?
– তোকে বেশি কিছু করতে হবেনা। মাথা খাটিয়ে এটাকে মাহবুবের নজরের বাইরে পাঠাতে হবে। সাফিন আপাতত ইলেকশনে বিজি,, তোকে আমার এখন ২৪ ঘন্টাই চাই,,,

সামির ঘাড় নেড়ে ঢং করে বলল,,,
– কি বলছেন ভাই!
আমি হইলাম পুরুষ মানুষ
তুমি হইলা ভারীই
আমি কি আর
তোমার সাথে
২৪ ঘন্টা পারি??

– মষ্করা মারায়োনা। আমি সিরিয়াসলি বলছি। ওই শালা বাইন মাছের পুলিশ বড্ড ধুর্ত। একে কি পোস্টিং দেযার জন্য আমাদের এলাকাই জুটেছিল!
– এসব চোট চোট ব্যাপারে বাঙ্গি মার্কা টেনশনে করে আমি মেধা লস করতে পারমুনা। ওই শালাকেতো ছাপড়ি আইডিয়া দিয়েই কাত করা যাবে।
– কিভাবে?
– কাইশসারে ডাকেন,,, কাইশসাআ,,

কাশেম দৌড়ে আসে, সামির লুঙ্গি ঝেড়ে চেযারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলে,
– একটা কাগজে চিঠি লেখা শুরু কর যা বলব তাই লেখবি
– এই ১৬, ১৭ সালে আইসে চিঠি কে লেখে ভাই,
– আমি তর আব্বা লেখি। থেড়াবেড়া করে লিখবি যাতে বোঝা নাযায়! বুঝেছিস কিনা? আজকে আবার ভন্ডামি করতে যাব। ফিরতে লেট হবে। বাড়িতে বলে দে।
– বুঝছি ভাই।

কাশেম কে দিয়ে চিরকুট লিখিয়ে তা রাগিব কে দেখিয়ে বলল,
– মাল, বাল সব রেডি রাখবা। কালকে রাতেই পাঠায় দিমু। বদলে আমার একাউন্ট?
– ডেবিট হয়ে যাবে। এডভান্স ডান।

ঠিক তার কথা মতো সামির আর কাশেম চুপচাপ চলে যায় মাহবুব উদ্দিন এর বাড়ির সামনে,,
তবে দেয়াল টপকে ঢুকতে যাবে ওই সময় মুহিব বলে ওঠে,,
– ভাই আপনারা এখানে?
– তুই কেন এখানে?
– মন খারাপ,, আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম।
– আমার কাছে কেন সোমা আপার কাছে যা,,
– লম্বা কাহিনি। আপনে আগে যান,, কাম সাইরা আসেন। আমি এখানে দাড়াচ্ছি। ধরতে হবে?নিচ থেকে ধাক্কা মারবো?
– ওরেস শালা,, লুঙ্গির তলে উকি মারার ধান্দা না? তোর বোইনের মতো ফকিন্নির ঝি নই। নিচে জাইঙ্গা আছে। ।
মুহিব আর কিছু বললনা। সামির একটা কথা পাড়লে সেটা আর তুলতে চায়না সহজে। অতি সহজেই দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পরল। কৌশলে কাগজটা মুহিবের ছোট বোনের ঘরে ঢিল মেরে আবার বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ৩ জন মিলে আবারো ডেরায় ফিরে,, দেখে সোমা এখনো যায়নি। সাথে সিতু ও যায়নি।

সোমা ফ্যানের নিচে বসে ঘাম শুকচ্ছে। মুহিব বলল,,
– তোমার কি প্রেশার হাই হয়ে গেছে?
সামির বোতলে মদ ঢালতে ঢালতে বলল,,
– হয়নি,,, রাগিব ভাই করে দিয়েছে। শখ মেটেনি? নাকি আরেক রাউন্ড চাই?
সোমা বলল,
– তুই চলে আয়, আরেক কেন আরো দুই রাউন্ড দিয়ে আসবো৷
সামির মুখ চোখ বেকিয়ে বলল,,
– তোর মতো মা*র পেছনে পাওয়ার খরচ করতে আমার বয়ে গেছে। আমি একমাত্র পবিত্র বাঙ্গি!! শুকে দেখি মুখ দেইনা।

এখন সামির মুহিব কে বলে কেও ঠেঙিয়েছে নাকি?
মুহিব বলে,,
– ভাই আজকে আমারে এক বোতল দেন। বাড়িত যাবনা। বলে আসছি।
– ব্যাপার মনে হচ্ছে সিরিয়াস!!
– ছোট থেকে মানুষ করলাম আমি,, যথাসাধ্য প্রটেক্ট করলাম আমি,,, এতগুলো বছর ধরে ভালোবাসলাম আমি,,, আর অন্য বিয়ে হবে অন্য জনের সাথে! বেঈমানী মানতে পারছিনা ভাই।

– আচ্ছা! এইটুকু ব্যাপার! বাপ মা কে বলে দে ,
– বলেছি,,, কাম হয়নি।
– বাঙ্গিটাকে উড়িয়ে দে,,, ।
– ব্যাংকের চাকরি করে, পুলিশের সাথে হাত ভালো, তাছাড়া ছোট বাচ্চা আছে।
– তাহলে মর,, নইলে মাল ঢেলে গাল ফুলিয়ে বসে থাক। ।

কালকুঠুরি পর্ব ৭

মুহিবের মন খারাপ দেখতে সামিরের কেন জানিনা ভালোই লাগছিল। মুহিব আজকে প্রথমবারের মতো বেশি ড্রিংক করে তার অবস্হা বেগতিক করে ফেলেছে। ওদিকে সামির বাড়ি না ফেরায় ইনায়ার চিন্তার শেষ নেই।

কালকুঠুরি পর্ব ৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here