কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ১৯+২০

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ১৯+২০
লেখিকাঃঅনন্যা অসমি

আজ ভার্সিটিতে তাড়াতাড়ি এসেছে অথৈ।সে একা একা ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখছে।ঘুরতে ঘুরতে অথৈ একটা নির্জন জায়গায় চলে আসে।জায়গাটা নির্জন যে তা না তবে ভালো স্টুডেন্টরা এদিকটায় কম আসে।
” এইযে ব্ল্যাকপিংক এদিকে এসো।”
অথৈ নিজের দিকে তাকাই।দেখে সেই আজ ব্ল্যাক আর পিংকের কমবিশেনে একটা ড্রেস পড়েছে।অথৈ কিছুনা ভেবেই তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

” কি হয়েছে?”
” আমরা তোমার সিনিয়ার সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলো।” একটা মেয়ে বলে।
” আমাকে কেন ডেকেছো?”
” বাহ্ মেয়ের ঝাঁঝ আছে বলতে হবে।” একটা ছেলে বলে।
” ওসব ঝাঁঝটাঝ না আমাদের সামনে চলবেনা।” আরেকটা ছেলে বলে।
” আমি কোন মরিচ বা কোলড্রিংকের বোতল না যে আমার মধ্যে ঝাঁঝ থাকবে।আর থাকলেও তোমাদের তাকে কি?কি জন্য ডেকেছো সেটা বলো নয়তো ফুটো।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আই লাইক ইউর এটিটিউট।” প্রথম ছেলেটা বলে।
অথৈ বিরক্তদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাই।
” তো ব্ল্যাকপিংক তুমি এখন একটা কাজ করবে।” প্রথম ছেলেটা বলে।
” কি কাজ তাড়াতাড়ি বলো।তোমাদের মতো এতো ঢং করার সময় আমার নেই।”
” যেই ছেলেটা প্রথম এই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকবে তাকে গিয়ে একটা কিস করে আসবে।”
” আর যদি না করি তো?” ভাবলেশহীন ভাবে বলে অথৈ।
” না করলে তোমার পানিশমেন্ট আছে।” মেয়েটা বলে।
” করবোনা।দাও পানিশমেন্ট।”
” এই মেয়ে তোমার আমাদের ভয় লাগছেনা?” প্রথম ছেলেটা বলে।

” ভয় কেন লাগবো?অবশ্য ছোট বাচ্চা হলে ঠিকই ভয় পেতো।তোমাদের আচরণের যা অবস্থা।আর শোন আমি নিউ স্টুডেন্ট না।আমি সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট আর তোমরা থার্ড ইয়ারে।মানে এক ইয়ার সিনিয়র জুনিয়ার।সো আমি তোমাদের কোনকালেই ভয় পাবোনা।আর তোমরা আমার থেকে আরো বড় হলেও আমি ভয় পেতাম না।”
অথৈ চলে যেতে নেয়।তবে কিছুদূর গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকাই।
” আর হ্যাঁ রেগিংটা না ভালো করে করতে শিখো।তোমাদের এই ফুদুসা রেগিং দেখে কেউ ভয় পাবেনা।এবার একটু নতুন স্টাইলে রেগিং করতে শিখো।আর যদি না জানো তাহলে আমার কাছে এসো আমি টিপস দিবো আসল রেগিং কিভাবে করতে হয়।বাই বাই।”

অথৈ হেলেদুলে সেখান থেকে চলে যায়।সবাই অবাক হয়ে অথৈয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাদের সাথে আগেও অনেকে এভাবে কথা বলেছে কিন্তু কেউ কখনো বলেনি ‘রেগিং এর টিপস লাগছে আমার কাছে এসো।’ অথৈ এর অদ্ভুত কথায় সবাই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায় চলে গিয়েছে।তবে প্রথম ছেলেটা এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে অথৈয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।তবে এতোক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনাটা যে শুধু মাত্র চারজন ব্যক্তি দেখছিল তা কিন্তু না এখানে একজন পঞ্চম ব্যক্তিও ছিল আর সেটা আর কেউ নয় বরং শান্ত।অথৈয়ের সবকথা শান্ত শুনেছে আর অথৈয়ের এসব কথা শুনে শান্ত অবাক প্লাস অনেকটা হ্যাপি এটা জেনে যে অথৈ নিজেই নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারে।তবে শান্ত ওই প্রথম ছেলেটার হাবভাবও খেয়াল করেছে।ছেলেটার নাম রুদ্র।প্লে-বয় টাইপের ছেলে।কাপড়ের মতো সে মেয়ে চেঞ্জ করে।এই বিষয় নিয়ে শান্তের কিছুটা চিন্তা হচ্ছে তবে আজকের ঘটনায় শান্ত বুঝে গিয়ে অথৈয়ের কোন সমস্যা হলে সে নিজেই সলভ করতে পারবে।আর তা না হলে সে আছে তো।

ক্লাসে টিচার পড়াছে।সবাই মন দিয়ে স্যারের কথা শুনছে কিন্তু মেহেকের পড়ায় কোন মন নেই।তার মন অন্যকোথাও।আজ আবারো মেহেকের মুগ্ধের কথা মনে পড়েছে।সে এখন মুগ্ধের কথায় ভাবছে।
” এই মেয়ে দাঁড়াও।”
স্যার মেহেককে ডাকছে কিন্তু সে তো তার চিন্তা মগ্ন।
” মেহু,স্যার ডাকছে।” রিফা আস্তে আস্তে মেহেককে বলে।কিন্তু মেহেক এখনো নিজের চিন্তায় মগ্ন।
” মেহু স্যার ডাকছে।” অথৈ মেহেককে ধাক্কা দেয়।ধাক্কা খেয়ে মেহেক নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলে মেহেক তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।
” মন কোথায় তোমার?” স্যার রেগে বলে।
স্যারের রাগি গলা শুনে মেহেকের জান যায় যায় অবস্থা।

” পড়া পারবে?”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।স্যার পড়া জিজ্ঞেস করলে ভয়ের চোটে মেহেক সব গুলিয়ে ফেলে আর কিছুই ঠিক মতো বলতে পারেনা।স্যার রেগে মেহেককে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে।
মেহেক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।হঠাৎ তার চোখ যায় জানালার বাইরে।সৌন্দর্য তার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে।সৌন্দর্যকে দেখে মেহেক জিভে কামড় দেয়।
” হায় আল্লাহ মিস্টার সৌন্দর্য আমাকে শাস্তি পেতে দেখে নিয়েছে।ছিঃ,ছিঃ,ছিঃ এবার না জানি উনি আমার ব্যপারে কি ভাববে।”
মেহেক আস্তে আস্তে জানালার দিকে তাকাই তবে এবার সে আর সৌন্দর্যকে দেখতে পাইনা।এটা দেখে মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেই।

ক্যাম্পাসে একটা গাছের নিচে বসে আছে মেহেক,অথৈ আর রিফা।মেহেক আবারো মুগ্ধের খেয়ালে ডুবে গিয়েছে।অথৈ আর রিফা নিজের মতে কথা বলছে।হঠাৎ তাদের খেয়াল হয় মেহেক আবারো ভাবনায় ডুবে গিয়েছে।
” মেহু,মেহু এই মেহু।” ধাক্কা দিয়ে বলে রিফা।
” হ্যাঁ বল।”
” কি হ্যাঁ বল?সবসময় কোথায় হারিয়ে যাস?ক্লাসেও তুই অন্যমন্সক ছিলিস আর এখানো অন্যমন্সক আছিস।কি হয়েছে বলতো।” অথৈ বলে।
” না কিছু হয়নি।”

” সত্যি তো?” সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে অথৈ।
” আরে বাবা হ্যাঁ।এই রিফু তোর ফোন বাজছে।দেখ কে ফোন করেছে।”
রিফা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ইভান ফোন দিয়েছে।ইভানের ফোন দেখে বাঁকা হাসে রিফা।
” কে আপনি?আর আমার নম্বর কোথা থেকে পেলেন?”
” কে আপনি মানে?বাবু আমি ইভান,তুমি আমাকে ভুলে গেলে।”
” কে আপনি?আপনাকে তো আমি চিনিইনা ভুলবো কেমন করে?”
” বাবু এরকম করোনা।আমার কান্না পাচ্ছে।” ঢং করে বলে ইভান।

” ওলে আমার বাবুরে।কেন?সেদিন না কে জেনো বলেছিল আমাকে আর ফোন দিবেনা।”
” আরে সেটা তো কথার কথার বলেছিলাম।কিন্তু তুমি তো সত্যিই আমার সাথে কথা বলোনি।কাল কতো বার ফোন করেছিলাম।”
” ধরবেনা বললে কেন?যাও তুমি তোমার রোমান্টিক মুড নিয়ে থাকো।আমার সাথে কথা বলা লাগবেনা।”
” আরে বাবু রাগ করোনা।আচ্ছা তুমি এখন কোথাই?”
” ভার্সিটি।তুমিও মনে হয় কলেজে?”
” হুম।ব্রেক ছিলো তাই ভাবলাম তোমাকে একটা কল দিয়।”

” এই আমাকে দে অনেক্ষণ কথা বলেছিস।” এটা বলেই অথৈ এর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে নেয় অথৈ।
” বাবু কেমন আছো তুমি?” ঢং করে বলে অথৈ।
” আরে আমার কলিজাটা কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।জানো কত মিস করেছি আমি তোমাকে।”
” হু….সব মিথ্যা কথা।তুমি আমাকে একটুও মিস করোনি।মিস করলে কি আর আমার সাথে কথা না বলে থাকতে নাকি?” রাগ করার অভিনয় করে বলে অথৈ।

” আরে কলিজা বোঝোনা,ওই রিফু আছেনা ওর জন্যই তো আমার তোমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে হয়।”
” হু….ওতোটা একটা পেত্নী।ও হচ্ছে বিরিয়ানির মধ্যে এলাচি।বোঝোনা ও আমাদের ভালোবাসা দেখে জ্বলে।”
” ঠিক বলেছো কলিজা।”
” আমি কিন্তু এখানে আছি।”
” তো কি হয়েছে?তোরে ভয় পাই নাকি আমি।” ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে অথৈ।
” ইভান সোনা তোমার না এখন ক্লাস আছে?”
” হুম আছে তো।”
” তো যা ক্লাসে যা।লুইচ্চা বেটা।”
অথৈর এর থেকে ফোনটা নিয়ে কট করে কেটে দেয় রিফা।অথৈয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে মুখ ভেঙিয়ে ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে উদ্দেশ্য যেতে থাকে রিফা।রিফাকে রাগাতে পেরে তো অথৈ অনেক খুশি।
” তুই আবার মেয়েটাকে রাগিয়ে দিলি।” ব্যাগ গোছাতে গোছাতে মেহেক বলে।
” কি করবো বল,ওরে রাগাতে ভালোই লাগে।”

ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে মেহেক।তবে আজ নিচে নেমে কেন যেন মেহেকের ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মেহেক এদিক-ওদিক খুঁজে রান্নাঘরের দিকে যেতে থাকে।
” আপুনি,আপুনি,এই আপুনি।”
কিন্তু সৃষ্টির কোন সাড়াশব্দ মেহেক পাচ্ছেনা।মেহেক আগ্রহ নিয়ে রান্নাঘরে যায় কিন্তু যে যা দেখে তা সে কখনোই আশাকরি।
” আপুনি….” চিৎকার বলে উঠে মেহেক।

হসপিটালে চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে মেহেক আর তার বোনের শশুড় বাড়ির লোক।আসলে মেহেক রান্নাঘরে গিয়ে দেখে তার বোন অজ্ঞান হয়ে মাটি পড়ে আছে।এটা দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায় আর চিৎকার দেয়।মেহেকের চিৎকার শুনে রিফা আর তার মা নেমে আছে।সৃষ্টিকে এ অবস্থায় দেখে তারাও ঘাবড়ে যায়।ভাগ্যবসত তখন সৃষ্টির হাসবেন্ড স্বচ্ছ অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছিল।সে আর তাদের ড্রাইভার মিলে সৃষ্টিতে গাড়িতে তোলে আর সোজা হসপিটালে নিয়ে আসে।অন্য গাড়িতে করে মেহেক,রিফা আর রিফার মা আসে।বড় ভাবী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে শুনে সৌন্দর্য আর স্পর্শও তাদের কাজ ফেলে চলে আসে।সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ডাক্তার বের হওয়ার।অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।স্বচ্ছ তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যায়।

” ডক্টর সৃষ্টি কেমন আছে?”
” আপনি ওনার কি হন?”
” আমি ওনার হাসবেন্ড।শাহরিয়ার স্বচ্ছ।”
” কংগ্রটেস মিস্টার স্বচ্ছ।সি ইজ প্রেগনেন্ট।আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
ডাক্তারের কথা শুনে স্বচ্ছের গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।সে নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে বাবা হতে চলেছে।
” এটা সত্যি ডক্টর?”
” জ্বি।”

” আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে স্বচ্ছ।
” অবশ্যই।আপনার কথা হয়ে গেলে আপনি আমার সাথে একটু দেখা করে যাবেন।”
” ওকে ডক্টর।”
স্বচ্ছ ভেতরে চলে যায় আর অনেকটা সময় পর বাইরে আসে।এরপর একেক করে সবাই সৃষ্টিকে দেখে আসে।সবার শেষে যায় মেহেক।মেহেক ঢুকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দেয় তারপর দেয় এক চিৎকার।
” আপুনি……।” শক্ত করে সৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে মেহেক।
” আস্তে আস্তে।”

” নো আস্তে।আপুনি…আমি খালামণি হতে চলেছি।ওয়াও….তুমি বুঝতে পারছো কতো সুন্দর ব্যপারটা।একটা কিউট বেবি হবে তোমার।আমাকে খালামণি বলে ডাকবে।আ…..আপুনি কবে আসবে কিউট বেবি?” বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বরে মেহেক।
” মৃদু মাত্র দু’মাস হয়েছে আর আজই তো খবর জানলে পারলি।এতো তাড়াতাড়ি কি করে বেবি আসবে?কমসে কম আরে ৮/৯ মাস লাগবে।”
” এইযে কিউট বেবি তাড়াতাড়ি আমার আপুনির পেট থেকে বেরিয়ে আসো তো।আর হ্যাঁ আমার আপুনিকে কিন্তু একটুও কষ্ট দিওনা তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে রাগ করবো।” সৃষ্টির পেটে হাত দিয়ে বলে মেহেক।
বোনের এরকম পাগলামি দেখে হেসে দেয় সৃষ্টি।

আধাঘন্টা ধরে পার্কে বসে আদিবের জন্য অপেক্ষা করছে লিজা কিন্তু আদিবের কোন খবর নেই।এই কড়া রোদে বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে গিয়েছে লিজা।সে যখন চলে যেতে হবে তখন দেখে গেট দিয়ে আস্তে ধীরে আসছে আদিব।
আদিব এসে লিজার সামনে দাঁড়ায়।লিজা অগ্নি দৃষ্টিতে আদিবের দিকে তাকাই।
” হ্যালো বেবি।”
লিজা কোন উওর না দিয়ে চলে যেতে নিলে আদিব তার হাত ধরে ফেলে।
” আরে বেবি চলে যাচ্ছো কেন?”

” এতো তাড়াতাড়ি কেন এসেছো?আরো একটু দেরি করে আসতে।”
” তাড়াতাড়ি এসেছি?আচ্ছা ঠিক আছে পরের বার আরো দেরি করে আসবো।”
লিজা নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে আদিব আবারো তার হাত ধরে ফেলে।
” আরে বেবি রেগে যাচ্ছো কেন?আচ্ছা এর পরের বার থেকে আসে তাড়াতাড়ি আসবো।”
তাও লিজা কিছু বলেনা।মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে তাকে।আদিব পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে।
” আমি একটা গোলাপ ফুল এনেছিলাম।কিন্তু যার জন্য এনেছিলাম মনে হয় তাকে দেওয়া আর হবেনা।মনে হচ্ছে ফুলটা এখন অন্যকাউকে দিয়ে দিতে হবে।”

আদিবের কথা শেষ হওয়ার আগেই লিজা আদিবের হাত থেকে ফুলটা ছিনিয়ে নেয়।
” আমার জন্য আনা জিনিস অন্যকাউকে দিলেনা খুন করে ফেলবো।”
” এবার রাগ কমেছে।”
” হুম।চলো কোথাও গিয়ে বসি।” হাসি মুখে বলে লিজা।
আদিবা মুচকি হেসে লিজার সাথে পাশের একটা বেঞ্চে বসে।আদিব জানে লিজা গোলাপ ফুল পছন্দ করে,তাইতো সে এই ফুলটা নিয়ে এসেছে।
লিজা নিজের মতো কথা বলছে হঠাৎ সে খেয়াল করে আদিবের কথায় মন নেই।সে শুধু হুম হুম করছে আর অন্য মেয়েদের দেখছে।এটা দেখে লিজার রাগ তো আকাশ ছুঁয়ে যায়।

” আদিব তুমি শুনছো আমার কথা?”
” হুম।”
” আমাদের রাজধানী ঢাকা।”
” হুম।”
” পানির রঙ লাল।”
” হুম।”
” তাজমল আমেরিকায় অবস্থিত।”
” হুম।”

লিজা আর নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারছেনা।সে উঠে খপ করে আদিবের চুল ধরে ফেলে আচমকিক এরকম কিছু হওয়ায় আদিব ঘাবড়ে যায়।
” আরে বেবি কি করছো?ছাড়ো আমার চুল।আ….লাগছে তো।”
” তোর চুলতো আমি আজ ছিঁড়েই ছাড়বো।আজ যদি তোরে আমি টাকলা না বানিয়েছি তো আমার নাম ও লিজা না।”
” কি হয়েছে বেবি?”

” কি হয়েছে।পানির রং লাল না?তাজমল আমেরিকায় অবস্থিত না?”
” আরে বেবি না না।পানি তো নীল হয় আর তাজমল তো আগ্রায় অবস্হিত।”
” তো আমি যখন বলেছি তখন হুম হুম করছিলি কেন?তোর সাহস তো কম না আমার সাথে বসে তুই অন্য মেয়েরে দেখোস।”
” আহ্…..বেবি লাগছে প্লিজ ছাড়ো।তোমার কোথাও ভুল হয়েছে।আমি কেন অন্য মেয়েদের দেখবো?তুমি জানোনা আমি ভালো নম্র ভদ্র একটা ছেলে।”
” হুম জানি তুই কতটা ভদ্র।আজ তোর চুল ছেড়ে দিলাম কিন্তু আজকের পর থেকে তুই যদি আর আমার সাথে কথা বলতে আসিস না তো তোর চুল আর থাকবেনা।মনে রাখিস।”
কথাটা বলেই লিজা রেখে গটগট করে চলে যায় আর আদিব এখনো সেখানে বসে নিজের চুলে হাত বুলাচ্ছে।

মাত্রই কলেজে এসেছে অথৈ।হঠাৎ পাশে থেকে তাকে অদ্ভুত নামে কেউ ডাকে।
” এই ব্ল্যাকপিংক।”
অদ্ভুত এই নাম শুনে অথৈ আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।বাম পাশে তার চোখ পড়তেই সে দেখে এটা তো সেই রেগিং করা ছেলেটা।অথৈ সেদিক পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে ছেলেটা মানে রুদ্র দৌড়ে অথৈয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়।
” কি হলো ব্ল্যাকপিংক?কথা না বলে চলে যাচ্ছো কেন?”

” কি চাই?”
” যদি বলি তোমাকে?”
” সোজাসুজি বলবেন না আমি যাবো।”
” সত্যি বলছি।জানো তোমাকে দেখে না আমার মনের ঘরের ঘন্টাটা না ঢংঢং করে বাজে।”
” আর কিছু?” বিরক্ত নিয়ে বলে অথৈ।
” আর আমার হার্টবিটটা ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকে।”
” এটা হার্ট নাকি ব্যাঙের মতো ঘড়ি।” অন্যদিকে তাকিয়ে বলে অথৈ।
” সে যাই বলো সব তো তোমার জন্যই।”

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ১৭+১৮

” হয়েছে আর এতো ফ্ল্যার্ট করতে হবেনা।আমি তোমার নেচার সম্পর্কে অলরেডি জানি।তো আমার সামনে এসব চলবেনা।”
” বাহ্ তার মানে তুমি আমার খবর রাখো,রাইট?”
” ও হ্যালো আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি যে আমি তোমার খবর রাখতে যাবো।আর তোমার কীর্তিকলাপ না ভার্সিটির সবাই জানে।” অথৈ চলে যেতে নিলে রুদ্র আবার তাকে আটকিয়ে দেয়।
” আরে দাঁড়াও না,একটু কথা বলি।”

” কেন কথা বলবো?তুমি কি আমার ফ্রেন্ড বা পরিচিত কেউ?”
অথৈয়ের কথা রুদ্রের গায়ে লাগে তাও সে সেটা ইগনোর করে।
” আচ্ছা তুমি বলেছিলে না তুমি রেগিং করা শেখাবে।শেখাবি নাকি তুমি।”
” নাউ আই এম নট ইন্টারেস্ট।এখন সরো হয়তো তোমার ক্লাস না থাকতে পারে তবে আমার ক্লাস আছে।আর হ্যাঁ আর আমার পথ আটানোর চেষ্টা করবেনা।নয়তো এমন হাল করবোনা যে হাঁটারো জোর থাকবেনা।”

” ওকে ওকে।”
রুদ্র একপাশে সরে দাঁড়ায় আর অথৈ বিরক্তি নিয়ে নিজের ক্লাসে যায়।এদিকে দূর থেকে আজো শান্ত তাদের দুজনের উপর নজর রেখেছি।হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত।তাকে দেখে মনে হচ্ছে পারলে এখনই সে রুদ্র মেরে হসপিটালে পাঠিয়ে দিতো।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ২১+২২