কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩
মিসরাতুল রহমান চৈতী

লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বেডে তাকিয়ে থমকে গেলো রাতুল চৈতী ঘুমিয়ে আছে চোখে মুখে উপচে পড়া কি মায়া? এই মুখটা দেখে রাতুলের পাষণ্ড বুকটা থেকে থেকে কেমন কম্পন সৃষ্টি হলো। সে একপা দু পা করে চৈতীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ঘুমন্ত চৈতীর উপর ঝুঁকে তারপর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
চৈতীর নিঃশব্দ শ্বাসপ্রশ্বাস তার কাছে এক অদ্ভুত মাধুরী হয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। সে অজান্তেই চৈতীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তার চোখে কিছু একটা ছিল—এক ধরনের অতৃপ্তি, এক ধরনের অজানা আকর্ষণ যা সে কখনো অনুভব করেনি।
ঘুমের মধ্যে চৈতীর অস্বস্তি বোধ হচ্ছে মনে হচ্ছে কেউ তাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তীব্র অস্বস্তি নিয়ে চৈতী চোখ খুলে রাতুলকে এতো কাছে দেখে অবিশ্বাস্যভাবে ভয়ে তার হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে এবং এক মুহূর্তে চৈতী চিৎকার দিয়ে ওঠে, কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “আপ…নি আমার সাথে কি করতে চেয়েছেন?” ছুঁবেন না, আপনার অপবিত্র হাত দিয়ে আমাকে!”
তার কণ্ঠে আতঙ্ক এবং ঘৃণার মিশ্রণ ছিল।

চৈতীর এই কথায় রাতুলের মুখে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার চোখে রাগের আগুন জ্বলতে থাকে, এবং এক ঝটকায় চৈতীর গাল ধরে চেপে বলতে থাকে, “কেনো, আমি ছুঁয়ে দিলে কি তোর গা এ ফোঁস্কা পড়বে?” তার কণ্ঠে ছিল তীব্র রাগ ও অবজ্ঞা, যেন চৈতীর প্রতি তার অনুভূতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
চৈতী অনেক কষ্টে বললো,,, আপনার এই হাতে ছুঁলে আমার গা এ ফোঁস্কা পড়বে কিনা জানিনা তবে আমি অপবিত্র হয়ে যাব। যে হাতে হাজারো নারীর স্পর্শ লেগে আছে, সেই হাত আমি চাই না, আমাকে ধরুক। এমন পরিস্থিতির চেয়ে আমার মৃত্যুই শ্রেয়।”
রাতুল চৈতীর কথায় আরো রেগে গেলো রেগে গিয়ে চৈতীর চুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে বললো , খুব শখ তোর মরার তাই না। আজ তোকে তোর মৃত্যুই দেখব আর বাকি রইলো স্পর্শ তাহলে একবার না হাজার বার তোকে আমার স্পর্শ সহ্য করতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে চৈতী। ঠোঁট দুটো কম্পিত হচ্ছে। রাতুল চৈতীর ঠোঁটে ঠোঁট রাখল, তখন চৈতীর পুরো শরীরটা আতঙ্কে কেঁপে উঠল। এক মুহূর্তের জন্য যেন তার শরীর অবশ হয়ে গেল,চৈতী হঠাৎই হাতের সমস্ত জোর একত্র করে রাতুলকে ধাক্কা দিল কিন্তু এক চুলও নাড়াতে পাড়লো না। এতে রাতুলের কোন হেরফের নাই রাতুল তার মতো চৈতীর ঠোঁটের সুধা পান করতে ব্যস্ত।
ঠোঁট ছাড়া পেতে চৈতী হা করে শ্বাঃস নেয়। কিন্তু চৈতীকে সে একটুও টাইম না দিয়ে সে চৈতীর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে তাকে সিঁড়ির নিচে নিয়ে চলে যায়। সিঁড়ির নীচে কোনো এক অন্ধকার কোণায়, এক এক পা পেড়িয়ে, একটি পুরনো মুগুর ভরানো রুমে নিয়ে আসে। দেয়ালে আঁকা কিছু পুরনো শিলালিপি, আর কোলাহলহীন বাতাস সেখানে ছড়িয়ে ছিল।

রুমের ভেতর ছিল এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। চৈতী নিজের ভিতরে এক অস্থিরতা অনুভব করে। তার সমস্ত দেহ যেন ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তারপরও সে অবাক ছিল। এই অসীম অন্ধকারে, এই ভয়ঙ্কর জায়গায়।
রাতুল দেয়ালের পাশে রাখা একটি টংঙ্গানো থেকে একটি মশাল তুলে নেয়। সে এক হাতে ম্যাচের প্যাকেট থেকে একটি ম্যাচ বের করে, ম্যাচের আগুনের আলোর নিচে তার চোখের আগুন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
রুমটি ছিল এক ভয়ঙ্কর স্থান, যেন সময় সেখানে থেমে গিয়েছিল। দেয়ালের কোণায় কোণায় অন্ধকারের একটি তীব্র আবেশ ভর করে ছিল, যেন এখানকার বাতাসও এক নিঃশ্বাসে আটকে আছে। মেঝে ছিল পুরনো পাথরের, যেগুলোর মধ্যে ভেঙে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। পাথরের মাঝে ঘুরে বেড়ানো অদ্ভুত চিহ্নগুলো যেন হাজার বছরের পুরনো কোনো গল্প বলছিল। এক পাশে একটি বড়, স্লেটের দরজা ছিল, তবে তাতে লাল রঙের শিকল পেঁচানো ছিল, যেন কোনো কিছু আটকানোর জন্য সেই দরজা বন্ধ করা হয়েছিল। সেই শিকল ছিল যেন এই রুমের ইতিহাসের অংশ—শাস্তির, বন্দীদশার, এবং ভয়াবহতার।

রুমের মধ্যে অদ্ভুত একটা ঠাণ্ডা,গাঢ় গন্ধ ভেসে ছিল, যেন দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো প্রাণী প্রবাহিত হয়নি, আর বাতাসে ভিজে যাওয়া কাঠের গন্ধ মিশে গিয়েছিল। সেই গন্ধ ছিল পুরনো পাথর, মরিচা, এবং নির্জীবতার এক অদ্ভুত সমাহার, যা মনে হতো, এখানে থাকা সব কিছুই সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে, আর এখন শুধুই নিঃশব্দ অবসান।”
রুমটি দেখে চৈতী ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। রাতুল বাঁকা হেসে চৈতীর চুলে মুটি ধরে মেঝেতে ফেলে বললো,, আমার বাপ চারাচারা একটা সময় জমিদার ছিলো তাদের বানানো এই ঘর। আমি বাড়ি ঘরে ঠিক করলেও এই রুমটি আমি ঠিক করি নাই যেমন ছিলো তেমন আছে ভ্যাগিস করিনি এই জন্য ই তো কাজে লাগলো। এইখানে মানুষ আটকে রাখতো বিশেষ করে মেয়েদের আজ এই ২০২৫ সালে তোকে আমি আটকালাম তুই মৃত্যু চেয়েছিলিনা আজ তোকে ফিল করাবো মৃত্যু কথাটা ভয়ংকর থাক তুই আটকা এই খানে ২ ঘন্টা আটকে থাকলেই বুঝবি মৃত্যু শব্দটা উচ্চারণ করা যতটা সহজ মৃত্যু টা ঠিক কতটা কঠিন নে উপভোগ কর।
জলন্ত মশাল টা দেওয়ালে টাংঙ্গীয়ে রেখে তারপর সে চলে গেলো পাষণ্ড বুকটাতে একটুও মায়া হলো চৈতীনামক এইটুকু মেয়েটা কিভাবে ২ ঘন্টা পড়ে থাকবে এই রুমে। হাটু ভাঁজ করে তার উপর মাথাটা রেখে জড়সড় হয়ে বসে আছে। আর কিছুক্ষণ পর পর কান্না করছে।

রাতুল রুমে প্রবেশ করলো, তার হাতে একটি বিয়ারের বোতল। সে বোতলটির ক্যাপ খুলে দ্রুত গলায় ঢেলে দিল, আর কিছুক্ষণ পর পর তৃষ্ণা মেটাতে আবার কপ কপ করে পান করছিল। রুমের ভিতরে তখন এক অদ্ভুত নীরবতা ছিল, কেবল বোতলের শিস আর রাতুলের গলাধঃকরণের শব্দ ভেসে আসছিল।
সে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ছিল একদৃষ্টিতে সেইখানে দেখা যাচ্ছে চৈতী হাটু ভাঁজ করে তার উপর মাথা দিয়ে বসে আছে। কান্নার ফলে সে কেঁপে উঠছে।

পাষণ্ড বুকটা কেমন মুচড় দিয়ে উঠলো চৈতীর এমন বিধ্বস্ত রূপ দেখে। যেন কোনো এক গভীর অনুভূতি থেকে তার অন্তর শীতল হয়ে গিয়েছিল। চৈতীর কষ্টের দৃশ্য তাকে এক অদ্ভুত অনুরাগের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, অথচ সেই অনুভূতি তার নিজের কাছে একেবারে অস্বাভাবিক ছিল। রাতুল নিজেকে একে একে হারিয়ে যেতে দেখছিল, কিন্তু সে বুঝতে পারছিল না, কেন তার মনে এমন অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে
সে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বিয়ারের বোতলটি আবার তুলে নিয়ে এক টান দিয়ে পান করে। চৈতী তখনো কাঁপছিল, এবং তার সমস্ত শরীর থেকে আতঙ্কের স্পর্শ স্পষ্টভাবে প্রতিটি শ্বাসে ছড়িয়ে পড়ছিল। অতিরিক্ত ভয়ে আর আতঙ্কে চৈতী চেতনা হারিয়ে ফেলে ঢলে পড়লো অন্ধকার মেঝেতে।
রাতুল বিয়ারের বোতল টা রেখে ছুটে গেলো সেই গোপ্ত কোঠরীতে কোলে তুলে নিয়ে সে গোপ্ত কোঠরী থেকে বের হয়ে নিজের রুমে নিয়ে এসে চৈতীকে শুয়ে দিলো।

রাতুল কিছুক্ষণ চৈতীর নিথর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, চোখের নিচে ক্লান্তির ছাপ। ভেজা চোখের পাতাগুলো বন্ধ হয়ে আছে, নিঃসঙ্গ আর অবসন্ন এক অনুভূতিতে সে হারিয়ে গেছে।
রাতুল ধীরগতিতে উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো তোয়ালে এনে চৈতীর কপালে চেপে ধরলো। কিন্তু কেন? সে নিজেই বুঝতে পারছিল না। কিছুক্ষণ আগেও সে এই মেয়েটাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিল, অথচ এখন তাকে কষ্টমুক্ত করতে চাইছে। এই অনুভূতিটা কেন তাকে গ্রাস করছে?
চৈতীর চোখের পাতাগুলো একটু নড়ল, হয়তো অজ্ঞান অবস্থা থেকে ফিরতে শুরু করেছে। রাতুল কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে তার হাতটা ছাড়লো, তারপর উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালো।
একটু পরে চৈতী হালকা গোঙানোর শব্দ করলো। রাতুল দ্রুত ফিরে এল। চৈতী ধীরে ধীরে চোখ খুললো, কিন্তু সে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, শরীর কাঁপছে।

“আপনি…. এইখানে আমাকে আনলেন কেন?” চৈতীর গলাটা ভাঙা, দুর্বল।
রাতুল কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকলো, তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি।”
চৈতী ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করলো, কিন্তু মাথা ঘুরে আবার বিছানায় পড়ে গেলো।
দুজনেই চুপ ছিল, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেই একটা অদ্ভুত টান যেন ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল—একটা অজানা, অব্যক্ত অনুভূতি, যা রাতুল নিজেও বোঝার চেষ্টা করছিল।
একটু পর দরজায় নক হলো ,,
রাতুল ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে ফেললো হঠাৎ আবার তার রুমে কে আসলো,,, রাতুল দরজাটা খুলে দেখলো একটা সার্ভমেন্ট এসে দাঁড়িয়ে আছে।
স্যার নিচে দুই জন লোক আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে।

রাতুল সামান্য বিরক্তি নিয়েই তাকালো, তারপর বলে উঠলো, “তাদের একটু অপেক্ষা করতে বলো কথাটি বলে দরজাটা হাল্কা চাপিয়ে বেডের দিকে নজর দিলো। হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব হলো। মনে হলো পৃথিবীর সব মায়া তার এই বিছানা জুড়ে বিরাজ করছে। চৈতীর কাছে এসে ভালো করে কম্বল টা জড়িয়ে দিয়ে তারপর সে রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা ভালো করে নিচে গেলো।
নিচে গিয়ে দেখলো তার সব থেকে বড় দুই শত্রু তার বাসায়। সবে মাত্র প্রেস কনফারেন্স সেরে এসেছে এর মধ্যে ওদের ঝামেলা। মেজাজটাই তিরিক্ষি হয়ে আছে।
রাতুল গম্ভীর কন্ঠে বললো, “আপনারা এইখানে কি চান? আমার বাড়িতে আসতে আপনাদের ভয় করলো না? মনে হলো না আমি আপনাদের মেরে ফেলতে পাড়ি?”
তার প্রতিটি শব্দ যেন তীক্ষ্ণ তরবারির মতো আঘাত করছে। তার চোখে ভয়ংকর রাগের আগুন জ্বলছিল, এবং তার কণ্ঠে এমন এক ধ্বংসাত্মক তেজ ছিল যা শত্রুদের ভিতর শীতল স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল।
তুমি যেইটা করছো সেইটা ঠিক করছো না?

রাতুল কিঞ্চিৎ পরিমানের হাসলো তারপর বললো,, তাই না কি মিস্টার চৌধুরী?
তিনি আবার চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,, নিজেকে কি সাধু মনে করো তুমি? তুমি নিজেকে সেইটা দেখো?
রাতুল চোয়াল জোড়া শক্ত করে বলে উঠলো,,, চোখের সামনে আমরা যা দেখি তা কিন্তু সত্যি না। চোখের আঁড়ালেও লুকিয়ে থাকে সত্যি তবে এই সত্যি আপনাদের ধরা ছোঁয়া বাহিরে। মিস্টার খান আপনি কিছু বলবেন? যদি বলার না থাকে তাহলে যেতে পারেন। আমি আমার নিয়মে চলবো। আজ জান নিয়ে ফিরে যেতে পেরেছেন কাল কিন্তু পারবেন না। এইসব চেট-বাল নিয়ে আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় আর আসবেন না।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২

মিস্টার খান বলে উঠলো,,, কেন? আসলে কি হবে বাড়িতে কি লুকিয়ে রাখছে গুপ্তধন?
মহামূল্যবান জিনিস। যা কেউ দেখুক আমি চাইনা। সো গেট আউট বলে চলে গেলো উপরে সিঁড়ি পেরিয়ে।
আর দুইজন লোক যারা ওর সব থেকে বড় শত্রু সবসময় চায় ওর ক্ষতি। মিস্টার শিহাব চৌধুরী আর মিস্টার জাফর খান তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। যেনো কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করছে।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৪