খড়কুটোর বাসা সিজন ২ পর্ব ৮

খড়কুটোর বাসা সিজন ২ পর্ব ৮
Jhorna Islam

দিনা স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেলে দুলে বাসায় প্রবেশ করে। চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পায় মা তার রান্না ঘরে। আর বাবা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে।
চুপচাপ নিজের রুমে যেতে থাকে। এর মধ্যে তার বাবা তাকে ডেকে উঠে।
দিনা তার বাবার গম্ভীর কণ্ঠে কেঁপে ওঠে। কন্ঠে কিছু একটা ছিলো। তার বাবা রে’গে গেলেই মূলত এমন গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলে।

দিনা কে উনার পাশে যাওয়ার জন্য ডাকছে।দিনা গুটি গুটি পায়ে বাবার কাছে এগিয়ে আসে।দিনার মা ও ততক্ষণে পাশে এসে দাড়িয়েছে। দিনা মায়ের দিকে এক পলক তাকায় তার মা ও কপাল কোচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
জি- জ্বি বাবা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে দিনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তা আম্মাজান পড়াশোনা কেমন চলছে?
— ভা-ভালো।
স্কুলে গিয়েছিলেন?
দিনা মাথা নাড়ে।
তো আম্মাজান আপনার স্যার তো আমাকে ফোন দিয়ে বললেন আপনি স্কুলে যাননি।
বাবার কথা শুনে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে দিনার।হাত পা কাঁপা কাপি শুরু হয়ে গেছে।
পাশ থেকে দিনার মা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে কিরে কথা বলছিস না কেন?

দিনা এইবার কেঁদে দেয়। আ-আসলে বাবা আ-আমি আমার বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ভিতরে তার উৎকন্ঠা। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। ঢুক গিলতে ও কষ্ট হচ্ছে যেনো।মে/রেই ফেলবে যদি ওরা ইশানের কথা জানতে পারে। হাত পা এমন ভাবে কাপছে মনে হচ্ছে যেন এখনই লুটিয়ে পরবে মাটিতে । যদি ওরা ওর বান্ধবীর কাছে খোঁজ নেয় তাহলেতো সব শেষ। সে তো স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীর বাড়িতে যায়নি।ইশানের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল।

দিনার মা দিনাকে মিথ্যা কথা বলার জন্য মা/রতে নিবে তার আগেই দিনার বাবা থামিয়ে দেয়। আহ্ কি করছো কি দিনার মা?
যা দিনা ঘরে যা।ভবিষ্যতে যেনো এমন আর না হয় ঠিক আছে মা? দিনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন তিনি।
দিনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছিলো।বাবার কথা শুনে দৌড়ে রুমে ঢুকে যায়।

যুথির এই বাড়ির লোকজন কে কেমন যেন লাগে।দাদি কে ছাড়া একটা কে ও সুবিধার মনে হয় না। এমন অদ্ভুত পরিবার যুথি আর একটা ও দেখেনি।সবগুলো কে কেমন স্বার্থপর মনে হয়। এই পরিবারে ইরহান কিভাবে ছিল ভেবে পায় না যুথি।
কোথায় এসে সে পরলো মনে মনে ভাবতে থাকে যুথি।ছোট বেলা থেকে মামা মামির কাছে বড় হয়েছে। ভেবেছিলো বিয়ের পর নিজের একটা পরিবার পাবে।মায়ের মতো শ্বাশুড়ি পাবে।শ্বাশুড়ি হাহ এই মহিলা মা হওয়ার ই যোগ্য না।
যুথির ভাবনার মাঝেই যুথির ফোন বেজে উঠে। সবকিছুর মধ্যে এইতো একটা প্রশান্তি। তার মানুষ টা। ফোন হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে।
হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

–ওয়ালাইকুম আসসালাম যুথি রানী।
— কেমন আছেন?
— এতো সময় কেমন ছিলাম জানিনা।তবে আমার যুথি রানীর সাথে কথা বলে ভালো হয়ে গেছি। তুমি কেমন আছো?
— আলহামদুলিল্লাহ।
— কি করো?
— বসে আছি।কিছু ভালো লাগছে না আমার।আপনি কবে আসবেন বলুন তো। কথাটা বলতে বলতে যুথির গলাটা ধরে আসে।

— আমার ক্ষমতা থাকলে বিশ্বাস করো যুথি রানী এই মুহূর্তে তোমার কাছে আমি একছুটে চলে যেতাম।তবে চিন্তা করো না খুব শিঘ্রই আসতে চলেছি।
— সেই আশাতেই আছি আমি।
— মাত্র আর কয়েকটা দিন বউ।তারপর অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
— হুম।
— তোমার টাকা লাগলে বা অন্য কিছু লাগলে আমাকে বলবে নয়তো দাদিকে ঠিক আছে?
— এখন আমার কিছুই লাগবে না। টাকা আছে আমার কাছে।

যুথি ইরহান কে আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার মধ্যে কেউ টোকা দেয়।যুথি জানতে চায় কে?
বড় বউ মা আমি তোমার শ্বশুর।
যুথি বেশ অবাক হয়ে যায়। কয়েকদিন তো হয়ে গেলো এই বাড়িতে এসেছে লোকটা ভালো করে দুইটা কথা ও বলেনি।
যুথি ইরহানকে একটু পরে কল দেওয়ার কথা বলে কল কেটে দেয়। তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ভিতরে আসুন আব্বা।
ইরহানের বাবা ভিতরে ঢুকে যুথির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। যুথিও উনার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলে বসুন আব্বা।

না বড় বউ মা বসবো না। তা ভালো আছো তো? এখানে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?
না আব্বা আমি ভালো আছি।আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
যাক। কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে ঠিক আছে?
জ্বি আব্বা।

যুথি বুঝতে পারে ইরহানের বাবা এসব জানার জন্য আসেনি।তাই নিজে থেকেই জানতে চায় কিছু হয়েছে আব্বা? আমাকে কি কিছু বলবেন?
— একটা জিনিস চাওয়ার ছিল কি করে বলি বলতো বউ মা।
— এতো জড়তার কি আছে আব্বা বলে ফেলুন না।
— আ-আসলে বউ মা তোমার কাছে কিছু টাকা হবে? কিছু মনে করো না বউ মা। খুব দরকার আমি আবার পরে তোমায় দিয়ে দিবো।

যুথি ভেবে পাচ্ছে না ওর কাছে টাকা চাইতে এসেছে ইরহানের বাবা। নিজেকে সামলে বলে কতো লাগবে আব্বা?
এই হাজার দুইয়েক হলেই হবে।
এতো তো নেই আব্বা পনেরো শো আছে।
তাহলে তাই দাও।

যুথি মাথা নাড়িয়ে টাকা বের করে শ্বশুর কে দেয়।উনি টাকা নিয়ে তারাতাড়ি করে চলে যায়। এই কথা আর ইরহান কে জানায় না।জানলে হয়তো ইরহান তার বাবা কে কথা শুনাবে তাই।যুথি এটাও জানতে পারলো না তার শ্বশুর কোন দরকারে তার থেকে টাকা নিয়ে গেছে। কারণ জানলে হয়তো কখনো দিতো ও না টাকা গুলো।

কে জানতো যুথির হাসতে হাসতে বলা কথা গুলো তার জন্য বিপদ ডেকে আনবে। ঐদিন কারেন্ট নিয়ে যুথির করা কাজ টা দাদির সাথে যুথি বলে বলে হাসতে ছিলো। সবাই কে কেমন গরমে না’কা’নি’চু’বা’নি খাইয়েছে।
কিন্তু বুঝতে পারে নি দাদির সাথে বলা কথা গুলো ইমনের বউ লিমা ও শুনে ফেলেছে।
লিমা গিয়ে সোজা তাছলিমা বানু কে জানিয়ে দেয় যুথির করা কাজের কথা। তাছলিমা বানু শুনে রা’গে জ্বলে উঠে। কতো বড় সাহস মেয়ের।

এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। এর আগে ঐ বুড়ি মহিলাকে দেখে নিবে তাছলিমা বানু। যাওয়ার সময় বসার ঘরে দেখতে পায় যুথি আর ইশান কি নিয়ে যেনো কথা বলছে।তাছলিমা বানুকে দেখেই দুইজন চুপ হয়ে যায়। তাছলিমা বানু রাগী চোখে তাকিয়ে হনহন করতে করতে চলে যায়।
ঠাস করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।

— কি হলো তাছলিমা ঘরের দরজা ভেঙে ফেলার চিন্তা ভাবনা করছো নাকি?
শুধু ঘর কেন সব কিছু ভেঙে জ্বালিয়ে দিবো আপনার কোনো সমস্যা? দল পাকিয়েছেন না দুই দিনের সেই মেয়েটার সাথে মিলে? পেটে পেটে কি শ/য়তানি এই মেয়ের। এই মেয়ে তো যে কোনো কিছু করতে পারবে। রাতে আমাদের সকলকে গরমে না’কা’নি’চু’বা’নি খাইয়েছে এই মেয়ে। সা’হসে ভরা। আর আপনি ও তাতে সায় জানিয়েছেন। এই মেয়ের থেকে তো সাবধানে থাকতে হবে কখন কি করে ফেলে না জানি আমাদের কি করে ফা/সিয়ে দেয়। আমার ছোটো ছেলের সাথে দেখে আসলাম কথা বলছে। নিজের বর তো দেশে নাই।আমার ছেলের দিকে আবার ন’জর দেয়নি তো? আমার ছেলে তো সহজ সরল বুদ্ধি নেই।ঐ মেয়ে না নিজের জ্বালে আমার ছেলেকে ফা’সায়।

তাছলিমা বানুর কথা শুনে ইরহানের দাদি গ”র্জে উঠে,, তাছলিমা মুখ সামলে কথা বলো।
এর মধ্যে আরেকটা কন্ঠ ও ভেসে আসে,, দাদি থামাচ্ছো কেন? আমিও দেখতে চাই ঐ নিচু মনের মহিলা আর কতো নিচে নামতে পারে।
ইরহান এতো সময় তার দাদির সাথে কথা বলতেছিলো তাছলিমা বানুর কথা শুনে চুপ ছিল। নিরবে সবই শুনেছে। ফোন লাউডে ছিলো ইরহান বলার কথা গুলো তাছলিমা বানু ও শুনতে পাচ্ছে।

দাদি ঐ মহিলাকে বলে দাও সবাই ঐ মহিলার মতো না। অন্যর জিনিসের উপর সবার আবার ন’জর পরে না।নিজে কি করে অন্য কে খারাপ বলে যখন নিজেই এতোটা খারাপ।নিজের বোনের সংসারকে নিজের করে নিয়েছে। নিজের বোনের স্বামীর উপর যেই মহিলার ন’জর পরে সে কতো টা ভালো? এই লোভী মহিলা যেনো আমার বউকে একটা খারাপ বা কটু কথা বলাতো দূর একটু খারাপ আচরণ করার স্পর্ধা ও না দেখায়।যদি দেখাতে যায় আমি ইরহান কতোটা খারাপ তা হারে হারে টের পাবে।

বলেই ইরহান কল কেটে দেয়।
ইরহানের দাদি তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসে আর বলে বেশ হয়েছে। একেবারে উচিত শিক্ষা হয়েছে।

রাতের বেলা যুথি শুয়ে শুয়ে ইরহানের কলের অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রতিদিন যেই সময় কল দেয় আজ তা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনো কোনো কল আসছে না। যুথি ইরহানের কলের অপেক্ষা করতে করতে এক সময় চোখ টা লেগে যায়। তখনই ইরহানের ভিডিও কল আসে।যুথি রিসিভ করে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে হ্যালো বলতেই ইরহান বলে উঠে যুথি রানী ঘুমুচ্ছিলে?

না চোখ টা একটু লেগে গিয়েছিল এই আর কি।
তারাতাড়ি গিয়ে চোখে পানি দিয়ে আসো।
যুথি ইরহানের কথা মতো চোখে পানি দিয়ে আসে।
ফোনের স্ক্রিনে ইরহানের মুখের দিকে তাকাতেই ইরহান বলে উঠে তোমার চোখ বন্ধ করো তো।
যুথি জানতে চায় কেনো?

আহ করোই না।
যুথি চোখ বন্ধ করে। দুই মিনিট পর খুলতে বললে খুলে।চোখ খুলে অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।
ইরহান হেসে বলে,, আমার বউয়ের কাছে যাওয়ার টিকিট।
যুথি এখনো চুপচাপ চেয়ে আছে।

খড়কুটোর বাসা সিজন ২ পর্ব ৭

তুমি কি খুশি হও নি? আমি কিন্তু আসছি পরশু রাতে মাঝ খানে শুধু একটা দিন বাকি।
এ-এটা কি সত্যি?
একদম সত্যি।

খড়কুটোর বাসা সিজন ২ পর্ব ৯