খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১
আনিকা আয়াত
“ অর্পণ শেখ, তোমার ওই পুঁড়া ঠোঁটে চুমু খেতে চাই জান! ভবিষ্যতে তোমার এক ডজন বাচ্চার আম্মু একমাত্র আমিই হবো। আমার পবিত্র ভালোবাসায় তোমাকে ভালো করে তুলবো। প্লিজ কথা দাও! শুধুমাত্র আমাকেই তোমার সন্তানের মা হিসেবে চাইবে। ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি!”
অপর্ণ হাতের চিরকুট পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। দু চোখে বিস্ময় নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভীতু মেয়েটির দিকে নজর দেয়। ততক্ষণে মেয়েটি মাথা নত রেখে ঠকঠক করে কাঁপছে। অতিরিক্ত ভয়ে তার মুখ চুপসে গেছে। অর্পণ পরক্ষণেই তড়িৎ গতিতে আবারোও লেখাটি পড়লো। মস্তিষ্ক এবার ভয়ংকর ভাবে গরম হলো। তার কথার থেকে হাত বেশী চলার রেকর্ড আছে। এবারও অজান্তেই সামনের মেয়েটার গালে কষে চড় মা/রলো।
“ আমার ঠোঁটে চুমু খাবি? আমার বাচ্চার মা হতে ইচ্ছে করে তোর? খুব শখ জেগেছে অর্পণের বউ হওয়ার? তুই কি ভার্সিটির নতুন? আমি কে ধারণা আছে তোর? স্বয়ং অর্পণ শেখকে প্রপোজ করিস!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভরা ভার্সিটির সামনে অর্পণের গর্জনে কেঁপে উঠে সবাই। অর্পণ হাতে থাকা নীল রঙের কাগজটি দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষিয়ে দিলো। সামনে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হতবাক মেয়েটি প্রচন্ড ভয়ে ফুপিয়ে উঠে। ভোলা ভালা মেয়েটি সপ্তাহ খানিক হলো গ্রাম থেকে শহরে এসেছে পড়াশোনার জন্য। আজ সকালে বন্ধুদের সাথে ট্রুথ ডেয়ার খেলার সময় ভয়ানক ভাবে ফেঁসে যায় চৈতী । ডেয়ার অনুযায়ী তাকে একটি ছেলেকে চিরকুট দিতে হবে। তাও কিনা ভার্সিটি কাঁপানো সবার বড় ভাই অর্পণ শেখকে! সে বারবার না করার পরও বন্ধুরা শুনেনি। অবশেষে, একপ্রকার মনের বিরুদ্ধে মেয়েটি ভয়ে ভয়ে অর্পণকে একটি চিরকুট দেয়। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় চিরকুট পড়ার সময় তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। কল্পনাও করেনি, এমন বিশ্রী শব্দগুলো লেখা থাকবে। এবার তাকে বাঁচাবে কে? এতো বড় দুঃসাহস আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি অর্পণের সাথে। একবার এখান থেকে বেঁচে ফিরুক! তার বন্ধু জিনিয়াকে দেখে নিবে। অপর্ণের হুংকারে ভার্সিটির সবাই তাদের দিকে বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চৈতী কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
“ বিশ্বাস করুন ভাইয়া! এটা ডেয়ার ছিলো। সকালে বন্ধুদের সাথে ডেয়ার পাই আমি। ওরা আপনাকে একটা চিরকুট দিতে বলেছিলো। কিন্তু কথা ছিলো, চিরকুট ওরাই লিখবে। আমি শুধু আপনার হাতে দিয়ে চলে আসবো। কস্মিনকালেও ভাবিনি, এসব বাজে কথা লেখা থাকবে। ”
অপর্ণ দৃষ্টি সরু হলো। সে রাগান্বিত চোখে মেয়েটার আপাদমস্তক দেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“ একদম মিথ্যে বলবি না। আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য এসব নাটক করছিস। ”
চৈতী ফুপিয়ে উঠে তার কথায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলল,
“ সত্যি বলছি ভাইয়া। ওইযে আমার পেছনে দুইজন মেয়ে দেখতে পাচ্ছেন! ওরাই ডেয়ার দিয়েছিলো।”
চৈতী বলেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। ডান হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলো দুইটি মেয়েকে। অর্পণের তীক্ষ্ণ চোখ চট করে সেখানে যায়। খেয়াল করে দেখলো, মেয়ে দু’টি ভয়ে কাঁচুমাচু করছে। একে অপরের দিকে ফ্যাকাশে মুখে তাকাচ্ছে। অপর্ণ তৎক্ষনাৎ যা বুঝার বুঝে ফেললো। আদেশের সুরে বলল,
“ এদিকে এসো সবাই। আজ তোমাদের ডেয়ার খেলা শেখাবো। ফটাফট চলে এসো ছোট বোনগণ। আমি কিন্তু তিন পর্যন্ত গুনবো।”
মেয়েগুলো ভয়ার্ত চেহারায় জোরপূর্বক হেঁসে দুই কদম এগিয়ে যায়। হঠাৎ থেমে তারা চিৎকার করে পেছন ঘুরে দিলো এক দৌঁড়। অর্পণ এবার ঠোঁট টিপে হাঁসলো। চৈতীকে আরেকটু বাজিয়ে দেখার জন্য বলল,
” সত্যি ডেয়ার ছিলো? নাকি এই সুযোগে আমার মতো সুদর্শন যুবককে প্রপোজ করতে এসেছ?”
অর্পণের মুখ থেকে সুদর্শন শুনে মেয়েটি পূর্ন দৃষ্টি মেললো তার পানে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখলো, আসলেই ছেলেটা সুদর্শন। গায়ের টি-শার্ট টা বলিষ্ঠ দেহে আঁটসাঁট হয়ে লেগে আছে। মাথার ঝাঁকড়া চুলগুলো আটকে রেখেছে একটি কালো ব্যান্ড দ্বারা। সরু চিকন নাক হালকা আধ পুঁড়া দুটি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে সে থমকে গেলো। ভীত হলো সে। একটু আগের চড়ের কথা মনে পড়ে যায় তার। চৈতী কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
“ তিন সত্যি ভাইয়া। দয়া করে যেতে দিন। আমি গ্রাম থেকে খুব কষ্টে এখানে ভর্তি হয়েছি। বাবা-মা জানতে পারলে, মে/রেই ফেলবে।”
অর্পণ চোখের ইশারায় চলে যেতে বলল। তৎক্ষনাৎ চৈতীর আত্মায় পানি আসে। হনহনিয়ে চলে যায় ক্লাসে। ধীরে ধীরে সকলের দৃষ্টিও ওদের থেকে মিলিয়ে যেতে থাকে। অর্পণ বাইকে হেলান দিয়ে তুষিবকে বলল,
“ ঠান্ডা পানি আন তুষিব। মাইয়া মানুষের ঝামেলার শেষ নাই। এই নারী বিষয়ক ঝঞ্জালে আমি নাই ভাই। মেয়ে জাতি ভয়ংকর এক আতঙ্ক! সেই ভয়ানক আতঙ্কই কেনো বারবার মৌ মাছির মতো আমার চারপাশে ভনভন করে? বিরক্তিকর! জলদি শিহাবকে কল কর। শা/লায় ভার্সিটি আসবো কখন? ”
তুষিব ওর জুনিয়র। তবুও সারাক্ষণ অর্পণের চ্যালা হিসেবে লেগে থাকে। এলাকায় কিছু হলেই চোখের পলকে নিউজ চলে যায় তার কাছে। মা/রা মা/রি, হানা হানি, বখাটে পানা, উশৃংখল সব প্রকার বাজে বৈশিষ্ট্য থাকলেও, পড়াশোনায় অর্পণ মোটামুটি টাইপের স্টুডেন্ট। ভার্সিটিতে আসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। এমপির ছেলে হওয়ায় কারো সাহস নেই তার উপর কথা বলার। এলাকায় ফুটবল, ক্রিকেট খেলার আয়োজন যেখানে! অর্পণকে চট করে পাওয়া যায় সেখানে। গ্যাঞ্জামের গুরুই নাম্বার ওয়ান অর্পণ। তার সঙ্গে ঘুরে ডজন ডজন ছেলেপুলে। যারা আদেশ পেতে দেরী, মা/রা মা/রি করতে দেরী নেই।
ঘন্টাখানিক পর তার সকল বন্ধু বান্ধবী চলে আসে ভার্সিটিতে। ক্যান্টিনে ভীর জমিয়ে আড্ডায় মশগুল হয়ে যায়। এখন তারাই শুধু ক্যান্টিনে! সকালের সেই ঘটনা শুনার পর একজন আরেকজনকে উপর হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আজকের বিনোদন এর থেকে বড় অন্যকিছু হতেই পারে না। ওদের বন্ধুমহলে তৃধা বলল,
“ মেয়েটার সাহস আছে মামা.! এতো ছেলে থাকতে অর্পণকেই চিরকুট দেয়? দোস্ত! মেয়েটার নাম কি রে? কোন ডিপার্টমেন্টে? দেখা ভাই! প্লিজ! প্লিজ!”
অর্পণ বিরক্ত হয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো।
শহরে ব্যস্ততা বেড়েছে। চারপাশে যানবাহনের শব্দে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। অনবরত গাড়ির হর্নে মাথা ঝিম ঝিম করছে। বাসের ধুঁয়ায় গা গুলিয়ে আসছে স্নিগ্ধার। সে এই শহরে নতুন। দুদিন হয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে উঠেছে। এখানে আসার মূল কারণই হলো ভার্সিটি। তবে, বাসা গুছানোর ঝামেলায় একদিনও ভার্সিটি যেতে পারেনি। আজ মার্কেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়েছে। অথচ, এ শহরের কিছুই চেনাজানা নেই তাদের। প্রচন্ড গরমে স্নিগ্ধা টিকতে না পেরে মায়ের হাত ধরে, একটু এগিয়ে গেলো। হাতের কাছে রিকশা পেয়ে উঠে পড়লো ঝটপট। মার্কেটে গিয়ে আয়েশা জামান মেয়েকে কিছু নতুন ড্রেস কিনে দেয়। স্নিগ্ধা কসমেটিক দেখছিলো, তার মা একটি পার্স ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল,
“স্নিগ্ধা..! কাল থেকে ভার্সিটি যাবি। একটা ব্যাগ প্রয়োজন। এটা কেমন দেখ তো।”
স্নিগ্ধা মুচকি হেঁসে ব্যাগ কাঁধে দিয়ে সামনের আয়নায় এপাশ ওপাশ করে দেখতে লাগলো। নিজেকে দেখার মাঝে হঠাৎ আয়নার ভিতরেই চোখ পড়লো, একটি অসভ্য ছেলের দিকে। ছেলেটা এই মার্কেটের ভেতর সি-গারেট খাচ্ছে। সি/গারেটে এক টান দিয়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো। সেকেন্ডের ব্যবধানে, নত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ময়লা কাপড় পড়া রোগা-সোগা দেহের পিচ্চিকে চড় মা/রলো। ছেলেটা তাকে কি জেনো অনর্গল বলে যাচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে কাঁদছে। অথচ পালাচ্ছে না। এই বিশ্রী দৃশ্য দেখে স্নিগ্ধার ভেতরে ক্রোধ জাগ্রত হয়। এতো টুকু ছেলে! বয়স ১০ কিংবা ১১। তাকে চড় মে/রে গাল লাল করছে? অমানবিক নি/র্যাতন! চরম অসভ্য ছেলে। অথচ আশেপাশে কেউ কিছুই বলছে না? ছেলেটাও হেল্প চাইছে না কেনো? স্নিগ্ধা তার মাকে ডেকে রাগান্বিত গলায় বলল,
“আম্মু! ওই ছেলেটা কিভাবে মা/রছে দেখো! কেউ কিছু বলছেও না?”
আয়েশা জামান কৌতুহল চোখে পেছন ঘুরলো। ততক্ষনে দেখানে আরোও কিছু ছেলেপেলে দিয়ে ভরা। মুহুর্তেই ঝামেলা লেগে গেছে। ভেসে আসছে, চিৎকার চেঁচামেচি! দূর থেকে বুঝার উপায় নেই কে কাকে মা/রছে। আয়েশা জামান ভাবুক কণ্ঠে বলল,
“ হয়তো নিজেদের মধ্যে ঝামেলা। ওসব দেখে কাজ নেই। ঝটপট প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাসায় চল। ”
স্নিগ্ধার চোখের বিস্ময় তখনও কাটেনি। সে এক দৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু মার্কেটে ধীরে ধীরে ভয়াবহ ভাবে গ্যাঞ্জাম লেগে যায়। সেখানে সব ছেলেগুলো পিচ্চিকে এবার কাঁধে তুলে রাস্তায় বেড়িয়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় স্নিগ্ধার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি হচ্ছে এসব? তার ছোট মাথায় ধরে না। শুধু বুঝলো, একটু আগে যাকে চড় মা/রলো। তাকেই কাঁধে নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। বাইরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে। আয়েশা জামান ভীত হলো। মেয়েকে নিয়ে ঝটপট পা বাড়ালো মার্কেটের বাইরে। স্নিগ্ধা সেখানে আবিষ্কার করলো, মাঝরাস্তায় সাত-আটটি ছেলে একটি টগবগে যুবকে দেদারসে মা/রছে। স্নিগ্ধা মনের ভতর কৌতুল লুকিয়ে রাখতে না পেরে রিকশাওয়ালা মামাকে জিজ্ঞেস করল। সে উত্তর দিলো ,
“ ওইসব জেনে কি করবা মামা? অর্পণ শেখ হুটহাট কি করে ফেলে, তা বুঝতেই বাকি জীবন লেগে যাবে। এই ভালো! এই খারাপ! সারাক্ষণ বখাটেপনা করে বেড়ায়। মাথায় রাগ চড়লে জায়গা টায়গা দেখে না। তৎক্ষনাৎ গেঞ্জাম শুরু করে দেয়। সেটা মার্কেট হোক অথবা হসপিটাল। ”
সে তৎক্ষনাৎ পেছন ঘুরে তাকায়। তৎক্ষনাৎ চোখ আটকে যায়, ওই অসভ্য বখাটে ছেলেটার দিকে। মাঝরাস্তায় হাতে একটা রড নিয়ে ইচ্ছে মতো পেটাচ্ছে। ছেলেটা ব্যথায় গগন কাঁপুনি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কান্ড দেখছে। মা/র খাওয়া ছেলেটি বারবার আকুতি মিনতি করে বলছে,
“ অর্পণ! মইরা গেলাম অর্পণ। আর মা/রিস না। হাত থেকে রড ফেলে দে, থাম কইলাম। আমার ভুল হয়ে গেছে। তোর ছেলেদের মা/রতে নিষেধ কর।”
অথচ অর্পণ নির্বিকার ভাবে পেটাচ্ছে। এই তেজীয় গরমে তার দেহের টি-শার্ট ভিজে একাকার। চোখ-মুখে হিংস্রতা। যেনো, মায়া বলতে কিছু নেই মনে। উচ্চস্বরে একের পর এক গা/লি, অশ্রাব্য ভাষা বের হচ্ছে মুখ থেকে। কপালের উপর লম্বা লম্বা ঝাঁকড়া চুলগুলো বাঁধন ছাড়া পেয়ে, হেলেদুলে নেচে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে সে বাম হাত দ্বারা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দেয়। কিন্তু ফলাফল শূন্য। সেকেন্ডেই চলে আসে কপালের চারপাশে। ঢেকে দেয় তার গভীর দুটি চোখ। রোদে পুড়ে অর্পণের মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে এতক্ষণে। এক দৃষ্টিতে স্নিগ্ধা এই হিংস্র অর্পণকে দেখার মাঝেই আয়েশা জামান তার বাহু ধরে সামনে ঘুরালো। শাসনের সুরে বলল,
“ আরেকটু হলেই পড়ে যেতিস। ওইসব না দেখাই ভালো। বাসায় চল চুপচাপ। এ কোন এলাকায় চলে এলাম! বেয়াদব ছেলের বাবা-মা ও কি কিছু বলেনা? রাস্তা ঘাটে মা/রা মা/রি করে। অভদ্র! ”
স্নিগ্ধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে নজর দিলো। রিকশা মামা বলল,
” অর্পণ অকারণে কাউকে মা/রে না। হয়তো পোলাডায় অন্যায় করছে। আপনারা কি এলাকায় নতুন?”
আয়েশা জামান জবাব দিলো,
” জি। ”
” ঠিকই ধরছি। কয়েকদিন থাকেন। সব আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন। ”
বাসার সামনে রিকশা থামার পর স্নিগ্ধা নামতে যাবে তখনই তার চোখ দুটি বড় বড় হয়ে যায়। গেইটের সামনে স্বয়ং অর্পণ শেখ দাঁড়িয়ে। গায়ে তখনও ঘামযুক্ত টি-শার্ট ভিজে পানি ঝরঝরিয়ে পড়ছে। মুখের অবস্থা বেঘাতিক। অথচ, ঠোঁটে তার চমৎকার হাঁসি। দেখে বুঝার উপায় নেই, মাত্রই কাউকে পিটিয়ে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ ভাবটা এমন! যেনো, সে জানেই না কিছু। তার সঙ্গে আরোও একটি হ্যাংলা ছেলেকে দেখা গেলো। সে মনোযোগ সহকারে অর্পণের কপাল টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে। স্নিগ্ধা নাক-মুখ কুঁচকে বিরক্ত মুখে দাঁড়ালো। মনে মনে বলল,
“ বখাটে ছেলেটা এখানে কি করে? অসভ্য। ”
আয়েশা জামান ভাড়া দিচ্ছলো। তৎক্ষনাৎ অর্পণ হঠাৎ উচ্চস্বরে বলল,
“ এইযে ম্যাডাম! আপনার কাছে বিশ টাকা ভাঙতি হবে?”
তার কথায় থতমত খেলো মা-মেয়ে দুজনেই। কারণ সেখানে শুরু তারাই দুজন। কাকে বলেছে, তা ঠাহর করতে পারলো না। স্নিগ্ধা হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকাল। আয়েশার বিস্ময়ের মাঝেই আরেকটু চমকে দিতে সে স্নিগ্ধার সামনে দাঁড়িয়ে হেলেদুলে বলল,
“ বিশ টাকা লাগবে আমার! হবে? বিকেলে শোধ করে দেবো। অর্পণ কথার খেলাপ করে না!”