খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৬
আনিকা আয়াত
“ ম্যামের জন্য? ”
মেয়েটি মিটিমিটি হেঁসে বিল পে করে দেয়। পেমেন্ট করে, অর্পণ বেখেয়ালি বশত পকেটে ওয়ালেট রাখছিল। আকস্মিক মেয়েটির কথায় বিস্মিত নয়নে তাকায়। কণ্ঠে রাগ ঢেলে বলল,
“ নো! নেভার! ”
“ সরি স্যার। ” অর্পণের মেজাজ খেঁকিয়ে উঠেছে।
কুর্তি-টা কিনেছে মানে এই নয়, এটা বিশেষ কারো-র জন্য। ইচ্ছে হয়েছে তাই কিনেছে। ব্যস! এর বেশী কিছু ভাবেনি এখনও। আদোও চৈতী-কে দিতে পারবে কিনা কে জানে? নাকি তার রুমের কাভার্ডেই অবহেলিত হয়ে এক কর্নারে পড়ে থাকবে বছরের পর বছর? যদি পরেই থাকে, তবে কোন একদিন কে হবে এর মালিক? তবে, কোনোদিন মন চাইলে, চৈতীও পেতে পারে এই ড্রেস! তার মাখনের মতো গড়নের দেহে জামাটি জড়িয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁটবে। মুখে থাকবে, এক চিলতে হাঁসি। তখন কেমন লাগবে দেখতে? অবশ্যই অসাধারণ লাগবে। মেয়েটার মুখখানি আদুরে! ভীষণ মায়াবী।
হেয়ালি অর্পণের জীবনে কি আসবে প্রিয় একটি মানুষ? এসবের কোনো উত্তরই জানা নেই তার। শুধু মন মর্জি মতো চলতে পারলেই হলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার একটাই কথা হচ্ছে, জীবনটা মুগ্ধকর অনুভব করতে শুধু মন যা চায় তাই করতে হয়। এখন খেতে ইচ্ছে করছে তবে খাও! কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে, দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নাও! কারণ এ জীবনটা বড্ড ছোট! বড্ড দামী! সময় ফুরিয়ে গেলে, সেই সময় আর কখনও আসেনা। করবো, করবো বলে জীবনের অর্ধেক শখ, আহ্লাদ এবং কাজ কোনোটাই করা হয়না। সেভাবেই থমকে যায় সব কিছু! আর এসবে অর্পণ নেই। সে চলে নিজের গতিতে! নিজের মর্জিতে! নিজেকে ভালোবেসে খুশি থাকো। আজকাল কার দিনের ফেইক রিলেশনে সে নেই। তার এই জীবনে কখনও খাঁটি ভালোবাসা আসবে নাকি-ও সন্দেহ। অর্পণ জানেও না তার লাইফে পারফেক্ট কেউ বেপরোয়া ভাবে ভালোবাসার জন্য আসবে কিনা! শুধু জানে, সিঙ্গেল লাইফ-ই বেস্ট! নেই প্যারা! জঞ্জাল!
সে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো মার্কেট থেকে। পার্কিং লটে তার বাইকে সব প্যাকেটগুলো ঝুলিয়ে রেখে উঠে বসলো। প্রচন্ড স্পিডে স্টার্ট দিয়ে সেকেন্ডের মাঝেই বেরিয়ে গেলো রাস্তায়। আনমনে কিছুদূর যেতেই চোখ আটকে যায় খালি রাস্তায় গাল ফুলিয়ে থাকা দুই বান্ধবীর দিকে। তৎক্ষনাৎ কি মনে করে বাইক ব্রেক কষলো। পেছন ঘুরে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে তাদের পানে তাকায়। দেখলো, দু’জনেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ, আশেপাশে লোকজনে ভরপুর।
“ অর্পণ ভাইয়া না?”
উচ্চস্বরে জিনিয়ার আহ্লাদে গদগদ ডাক ভেসে আসলো তার কর্ণে। অর্পণ তীক্ষ্ণ চোখ নিক্ষেপ করলো চৈতীর নিকট। মেয়েটা মনে হচ্ছে মহা বিরক্ত! পায়ের জুতা দিয়ে রাস্তায় খটখট শব্দ করছে। অর্পণ ঘুরিয়ে নিলো বাইক। তাদের সামনে থামিয়ে, বাইকে গা এলিয়ে বসে এমন ভান করলো, যেনো এই মুহুর্তে-ই দেখা হলো তাদের। থমথমে মুখে বলল,
“ ভর সন্ধ্যা বেলা তোমরা এখানে কেনো?”
“ মার্কেটে গেছিলাম একটু! কিন্তু ভাইয়া ঝামেলায় পড়ে গেছি। রিকশা ভার্সিটির সামনে যেতে রাজি হচ্ছে না। কি করি? চৈতী তো একা। ”
অর্পণ চৈতীর নিকট নজর রেখেই অলস ভঙ্গিতে হাত দুটি অয়েল ট্যাঙ্ককে রেখে ঢোলের মতো বাজিয়ে শব্দ তুলে বলল,
“ চুমকি! তুমি সবসময় কি ভর সন্ধ্যা বেলা বের হও.? দিনে সময় পাও না? যখন দেখি তখন-ই হয়তো সন্ধ্যা নয়তো রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকো। মেয়েদের এত বাইরে ঘুরাঘুরি করতে নেই। ”
চৈতী নিজের নাম শুনে চট করে তাকালো তার পানে। পরক্ষণেই চোখে চোখ পড়লো তাদের। অর্পণ বাঁকা হাঁসলো। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপতেই, জিনিয়ার অগোচরেই শয়-তানি করে চোখ টিপ মা/রলো। মেয়েটা হকচকিয়ে উঠে। অবাক, বিস্মিত নয়নে বড় বড় করে তাকায়। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জায় ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি লাগছে। অর্পণ গলা খাঁকড়ি দিয়ে একটা রিকশা ডেকে দিতেই জিনিয়া গদগদ হয়ে বলল,
“ ভাইয়া.! এত রাতে চৈতী কে একা ছাড়তে আমার চিন্তা হচ্ছে। আমি তো উল্টো রাস্তায় যাবো। প্লিজ আপনি একটু ওকে নামিয়ে দিন। আপনার বাইকে যেতেই পারে।”
চৈতী মাত্রাতিরিক্ত অবাকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লো। হতভম্ব হয়ে তাকালো জিনিয়ার দিকে। মেয়েটা কনুই দিয়ে তার কাঁধে গুতা দিয়ে উল্লাসিত কণ্ঠে বলল,
“ কিরে? যাবি না? ভাইয়া ভীষণ ভালো। উনার সঙ্গে তুই গেলে আমি নিশ্চিন্ত! ”
“ জিনিয়া! চুপ কর। আমি একাই যেতে পারবো। কারো সাহায্য লাগবে না।”
অর্পণ এতক্ষণ বাইকে হেলান দিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করলেও এবার কপাল কুঁচকালো চৈতীর কথায়। বলল,
“ আসলেই হেল্প লাগবে না? ওকে চলে যাচ্ছি। এই রাতে তুই একাই রাস্তায় বসে থাক। একটু পর আরোও গাড়ি পাবি না। অতিরিক্ত দেমাগ তোর? এসব দেমাগ দেখানো অল্প কিছুক্ষণ পরেই টের পাবি। ”
বলেই অর্পণ বাইক স্টার্ট দেয়। তৎক্ষনাৎ জিনিয়া রিকশা থেকে নেমে তার বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,
“ না ভাইয়া। এভাবে ওকে একা ফেলে যাবেন না। আমি চলে গেলে আর কে পৌঁছে দিবে ওকে? শ্রাবণ থাকলে আমি আপনাকে জোর করতাম না। কিন্তু ওই শ্রাবণ টাও নেই। কি করবো আমি? চৈতী এ শহরে নতুন। বিপদ হলে কে দেখবে? প্লিজ ভাইয়া সাথে নিয়ে যান। ”
চৈতী মনে মনে বিরক্ত জিনিয়ার প্রতি। মেয়েটা অতিরিক্ত করছে। সে জিনিয়ার হাত ধরে দূরে সরাতে চাইলো। সবই সুক্ষ্ম নজরে পরখ করে মৃদু হাঁসলো অর্পণ। চৈতী ফিসফিস করে বলল,
“ উনাকে আমাদের মাঝে টানছিস কেনো? তুই নিশ্চিন্তে যা। আমি একাই হলে পৌঁছাতে পারবো। বিশ্বাস রাখ। ”
কিন্তু জিনিয়া এক কথার মানুষ। চৈতীর হাত ছুঁড়ে ফেলে বলল,
“ জেদ করিস না। চুপচাপ ভাইয়ার সঙ্গে যা৷ এখানে একমাত্র ভাইয়াকেই আমরা চিনি। আশেপাশে আর কাউকে তুই চিনিস?”
“ তাতে কি? উনিও সুবিধার লোক নয়।”
বিড়বিড় করে কথাটা বলতেই তেতে উঠে জিনিয়া। কণ্ঠে রাগ ঢেলে বলল,
“ তুই কি বসবি বাইকে?”
“ অসম্ভব! উনার পেছনে বসে এক বাইকে আমি কস্মিনকালেও যাবো না৷ এর থেকে ভালো সারারাত মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা!”
এবার ফোঁস করে চ্যাতে উঠলো অর্পণ। তৎক্ষনাৎ বসা থেকে উঠা গজরাতে গজরাতে শক্ত গলায় বলল ,
“ এ্যাই চুমকি! বেশী ফটরফটর করছিস কেনো? একদম এসব পছন্দ নয় আমার। তুই কি ভাবলি? তোর মতো উটকো ঝামেলা কে আমার বাইকের পেছনে বসাবো? অসম্ভব! তুষিব ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ এই বাইকে বসার সাহস দেখায় নি। আমার পেছনে বসতেও আমার প্রিয় মানুষ এবং বিশেষ কেউ হওয়া লাগবে ! বুঝলি? তুই আমার কেউ নই। নেহাৎ জিনিয়া আমার ছোট বোনের মতো তাই! তাছাড়া তোরা দুটি একা মেয়ে এই রাতের বেলা বলে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোর তিড়িংতিড়িং -য়ে আমি হেল্প করবো না। গেলাম! ”
বলেই অর্পণ বাইক স্টার্ট করে চলে গেলো। ছেলেটা হাত ছাড়া হতেই, জিনিয়া রেগে বোম। চিবিয়ে চিবিয়ে চৈতীকে শাসাল। কিন্তু মেয়েটা নির্বিকার ভঙ্গিতে বুকে হাত গুঁজে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওসব কথায় তার কোনো যায় আসলো না। সে কানেই নিলো না। ডান পা নাচিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“ তুই যা না! এত দরদ কিসের ওর জন্য? আস্ত ফা-জিল একটা। ওর সঙ্গে আমি যাবো? দেখলি না কিভাবে ঠান্ডা মাথায় অপমান করলো? গোবর গণেশ! তোর লেইট হলে চলে যা। আমি এখানেই অপেক্ষা করবো।”
জিনিয়া রাগে দুঃখে তার পাশেই রইলো। সময় গড়ালো কিছুটা। এরপর হঠাৎ-ই একটি রিকশা আর বাইক এসে থামলো তাদের নিকট। সামনের ব্যক্তির দিকে তাকাতেই জিনিয়ার ঠোঁটে হাঁসি ফুটে উঠলো। খুশি হয়ে বলল,
“ আমি এবার যাই। চৈতী আর জেদ করিস না। টাটা দোস্ত!”
বলেই চৈতীর দুগালে চুমু খেয়ে রিকশায় উঠে চলে গেলো। মেয়েটি হতভম্ব! এই সময় কস্মিনকালেও অর্পণকে আশা করেনি। তার ভাবনাকে এক বালতি জল ঢেলে ছেলেটা ফিরে আসলো? চৈতী দরদরিয়ে ঘামতে শুরু করে। অর্পণ নামলো বাইক থেকে। তর্জনীতে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে চৈতীর সম্মুখে গিয়ে, মেয়েটার অস্বস্তি মুখের দিকে তাকালো। বলল,
“ যাবি নাকি হাত-পা ভেঙে নিয়ে যাবো? চুপচাপ রিকশায় বোস! পাঁচ পর্যন্ত গুনবো। তার মধ্যে রিকশায় না উঠলে পা ভেঙে হাতে ঝুলিয়ে দিবো। মাথায় গেছে? ”
সামনের লোকটির মুখ থেকে শান্ত অথচ তেজী গলায় হুমকি ধমকি শুনে কেঁপে উঠলো চৈতী। চমকে তাকাল সম্মুখে। অর্পণ চোখ দিয়ে রিকশার দিকে ইশারা করে শক্ত গলায় বলল,
“ এক..!”
চৈতীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে। হালকা ঢোক গিলে বলল,
“ দেখুন। ”
“ দুই..!”
মৃদু চিৎকার করে উঠলো অর্পণ। মেয়েটা ভয়ে আতংকে রিকশার নিকট গেলো। উঠার আগে কম্পিত গলায় বলল,
“ আমার কথা শুনুন।”
অর্পণ একপা একপা করে এগিয়ে আসলো তার নিকট। গম্ভীর চোখ-মুখে খেঁকিয়ে উঠে বলল,
“ তিন..! ”
সংখ্যা টি শুনা মাত্রই চৈতী এই ঠান্ডা পরিবেশে দরদর করে ঘামতে শুরু করে। ধরফরিয়ে উঠে রিকশা মামাকে বলল,
“ মামা চলুন।”
অর্পণ বাঁকা হাঁসলো। রিকশার হুড নামিয়ে চৈতীর গা ঘেঁষে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ বড্ড অবাধ্য তুই। ভালোই ভালোই কথা শুনলে কি হতো? ত্যাড়ামি করিস কেনো? আমার থেকেও বড় ত্যাড়া তুই? এক থাপ্প/ড়েই সোজা করে ফেলবো। আজকের পর থেকে ভুলেও কোনোদিন যেনো রাতে বাইরে না দেখি। কথা বুঝা গেছে?”
চৈতী হালকা ঢোক গিলে মস্তক নত করে চিবুক বুকে ঠেকাল । মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অর্পণ অধৈয্য হয়ে সিটে ঘুঁষি দিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
“ বল কথা বুঝা গেছে!”
ভীতু চৈতী এবার খুব কষ্টে মুখ খুলে। একটু আগে বান্ধবী থাকায় যতটা সাহস ছিলো। সে চলে যাওয়ার পর সমস্ত সাহস ফোঁস করে পালিয়ে ভয়াবহ ভয় জেঁকে ধরেছে। এ শহরে কতশত খারাপ লোক। তাদের উদ্দেশ্যও এক। এই নিকাষ কালো আধার রাতে যদি কিছু করে বসে? কে বাঁচাবে তাকে? সামনের অর্পণ শেখ ও যদি ভুল কিছু করে তবুও তার কিচ্ছু করার নেই। কিন্তু এ কয়েক মাসে সামনের যুবক টিকে সে দেখেছে, চিনেছে। মানুষটার ভেতরে পড়তে না পারলেও, বাইরে থেকে যথেষ্ট ভালোই মনে হয়েছে। শুধু একটু ঘাড়ত্যাড়া, বেয়ারা লোক। তাকে আজ বিশ্বাস করা যায়। অর্পণের ব্যাপারে একটু হলেও ভরসা আছে। ছেলেটা বখাটে হলেও মেয়েলি বাজে ব্যাপার নেই। চৈতী ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। ছোট করে বলল,
“ বুঝা গেছে ভাইয়া!”
অর্পণ অপেক্ষায় ছিল তার উত্তরের। কিন্তু মেয়েটার মুখ থেকে ভাইয়া” শুনে চোখ-মুখ কুঁচকে গেলো। বিরক্তে সিটে শব্দ করে আঘাত করে হনহনিয়ে বাইকে চেপে বসে। রিকশা চলতে শুরু করার আগে উচ্চস্বরে বলল,
“ এ শহরে তোমার সেইফটি হিসেবে কেউ নেই চুমকি। নিজের সেইফটি তুমি নিজেই! ভালো, খারাপ বোঝার চেষ্টা করো। সবসময় ত্যাড়ামি করা বোকামি! এই রাতে ত্যাড়ামি করে একা একটা মেয়ে ভরা রাস্তায় শীতে কাঁপলে কার ক্ষতি হবে? আমার না তোমার? অবশ্যই তোমার। এ শহরে খারাপ লোকের অভাব নেই। কিন্তু ভালো মানুষের অভাব ঢের বেশী। ”
এক টানে কথাগুলো বলেই থামল। চৈতী মাথা নিঁচু করে চুপচাপ ঠাই বসে সব কথাগুলো শুনলো মন দিয়ে । অর্পণ ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোমল গলায় বলতে শুরু করে,
“আমাকে হয়তো বাজে ভাবো। ভাবাটাও স্বাভাবিক। তবে, এই মুহুর্তে এক ইঞ্চি বিশ্বাস করতে পারো। আমার সঙ্গে চলো। ভুলেও কখন আর একা একা বেরুবে না৷ হলে ফিরে জিনিয়া-কে জানাবে। এই রিকশা ওয়ালা মামা আমার চেনা। এবার নিশ্চিন্তে যাও। আমি তোমার পেছনেই আসছি। ”
বলেই অর্পণ ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে তাদের ওভারটেক করে আগে চলে গেলো। কিন্তু পেছনে রেখে গেলো এক জোড়া বিস্মিত, চকিত দৃষ্টি। রিকশা প্রচন্ড গতিতে চলতে শুরু করলেও, অর্পণের এত কথার মাঝে শুধু তার কানে বাজতে থাকলো একটা কথাই,
“ আমি তোমার পেছনেই আসছি। ”
এই ছোট্ট কথায় কি ছিল জানা নেই চৈতীর। কিন্তু তার বেপরোয়া, উদাসীন মন বারবার অপরিচিত নতুন এক আবেগে ভেসে যেতে থাকলো। আচমকাই ঠোঁটে ফুটে উঠে মিষ্টি হাঁসি। বাইরে ঠান্ডা বাতাসে সমস্ত গা শিউরে উঠলেও আজ হৃদয়ও কেঁপে উঠলো। চৈতী চোখ বন্ধ করে রিকশার বাইরে মুখ দেয়। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার মাঝেই পেছন থেকে আকস্মিক প্রচন্ড স্পিডে বাইকের হর্ণ বেজে উঠলো। কালো হেলমেট পড়া অর্পণ লো স্পিড রেখে তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
“ তোর কি ম/রার শখ হইছে? বাইরে মাথা দিসোস ক্যান? যদি বাস /ট্রাক আসে!”
চৈতী এবার বিরক্ত হলো না৷ বরং মনে মনে ঠোঁট টিপে হাঁসলো। হঠাৎ করেই মনে হলো এই মুহুর্তটা স্পেশাল। সকালের সেই তুষিবের কথাগুলো মনে পড়ে মিটি মিটি হাঁসলো। সে লাজুক হেঁসে পেছন ঘুরে ভেংচি কাটলো। ওড়না চেপে ধরে উচ্চস্বরে বলল,
“ আপনি সঙ্গে থাকলে মনে হয়না বাস-ট্রাকের সাহস হবে আমার উপর দিয়ে যেতে! সো ভয় পাচ্ছি না৷ ”
অর্পণ রাগান্বিত চোখে তাকালো। সম্পূর্ণ রাস্তায় আর কথা হলো না দুজনের। হলে পৌঁছে দিয়ে চৈতীকে শুধু ছোট্ট করে অর্পণ বলল,
“ সর্বক্ষণ রাস্তাঘাটে সাবধানে চলবি। কোনো প্রবলেম হলেই আমাকে জানাবি! মনে থাকবে?”
চৈতী ব্যস্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তার কথায় পা থামিয়ে গেইট থেকে পিছন ঘুরে একগাল হেঁসে উত্তর দিলো,
“ থাকবে।” বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো ভেতরে।
অর্পণ দুহাত আড়াআড়ি করে বুকে গুঁজে বাইকে হেলান দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়। হলের দ্বিতীয় তলায় তাকাতেই মুহূর্তেই চোখাচোখি হলো দুজনের। চৈতী এমনভাবে তাকালো, মনে হলো চোখ দিয়েই বুঝাচ্ছে বাসায় যাবেন না? অর্পণ ঘনঘন মাথা নেড়ে বাইকে উঠে ক্ষুদ্র স্বরে বলল,
“ চলে যাচ্ছি। কিন্তু আবার আসবো। অর্পণ- একবার কথা দিলে চিরকালেও চলে যায়না৷ সে ফিরে আসে বারবার। তার মন মর্জি অনুযায়ী চলতে ভালোবাসে। অন্যকারো আদেশে নয়। আমি ফিরবো শীগ্রই! ”
খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৫ (২)
আনমনে কথা গুলো বলেই পরক্ষণেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে বসলো,
“ কিন্তু কেনো ফিরবো? কিসের মায়ার টানে? নাকি অন্য কোনো অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণে? সেটা কি বিপরীতমুখী আকর্ষণ? নাকি শুধু-ই দ্বায়িত্ববোধ! ”