খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৩ (২)

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৩ (২)
আনিকা আয়াত

চৈতীর কান্নার বেগ কমেছে মাত্র-ই। কিন্তু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে পাথরে পরিনত হয়েছে। পুলিশকে জানানো মাত্রই উনারা জলদি এখানে উপস্থিত হয়। অচেতন হয়ে মুখ থুবড়ে পড়া ইলিয়াস কে পিটিয়ে গাড়িতে তুললো। যাওয়ার আগে অর্পণের নিকট এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করে চটপট থানায় রওনা হলো। কিছুক্ষণ আগের পরিবেশ কিঞ্চিৎ শান্ত হয়ে আসছে! মানুষের মধ্যে চাপা কৌতুহল দমে নি একটুও। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে অনেক কিছুই। অর্পণ সব ঝামেলা চুকিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার নিকট গিয়ে বলল,

“ বাইকে উঠতে পারবে?”
চৈতীর কোনো ভাবান্তর হলো না। এলোমেলো চুলে পা/গলের মতো নত মুখ করে রেখেছে। গায়ে বিন্দু মাত্র বলশক্তি নেই। তার টলটলে পা দুটি এদিক ওদিক হলেই ধপ করে গড়িয়ে পড়বে রাস্তায়। সমস্ত শক্তি শুধু পা দুটি ধরে রেখেছে।
চোখের ইশারায় একটা অটো আনতে বলল তুষিবকে। অটো চলে আসতেই অর্পণ তাড়া দিলো তাকে,
“ উঠে বসো। ”
নিশ্চুপ চৈতী এক পাও বাড়াতে পারলো না। অর্পণ মনের অবস্থা বুঝলো কি? এগিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বাহু শক্ত করে ধরে, চোখের কোণে টলমল করা অশ্রু মুছিয়ে দিলো ঘঁষে ঘঁষে। এরপর নিজের ডানহাতে চৈতীর তুলতুলে হাত শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে টেনে উঠালো অটোতে। মেয়েটা নিজেকে স্বাভাবিক করার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। তার পিঠ জড়িয়ে রাখা ছেলেটির হাত টানতে টানতে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ হাত সরান। ”
কপাল কুঁচকে গেলো তার। ঘাড় গলিয়ে কাঁধ চেপে মেয়েটার মাথা বুকে এনে বলল,
“ বুঝিনি। ”
“ আমাকে ছাড়তে বলেছি। ভালো লাগছে না।”
বলেই চৈতী মাথা বেঁকিয়ে শক্ত হয়ে বসলো। চোখ-মুখ গম্ভীর করে, অর্পণ মেয়েটার রক্তাভ মুখশ্রী দেখে বলল,
“ চুপচাপ বসে থাকো। তোমার রেস্ট প্রয়োজন। হোস্টেলে ফিরে শাওয়ার নিবে। এরপর লম্বা ঘুম। মনে থাকবে?”
“ আমার ব্যাগ তো ফেলে এসেছি। আমার ফোন.!”
সংবিৎ ফিরতেই, উত্তেজিত কণ্ঠে চৈতী কথাটি বলেই সটান হয়ে বসলো। ধড়ফড়িয়ে, চলন্ত অটো থেকে মাথা বের করে পেছনে ঘুরে তাকায়। অর্পণের মেজাজ খারাপ হয়। এক ঝটকায় বাহু টেনে নিজের কাছে এনে বলল,

“ মাথা বাইরে দিচ্ছ কেনো? কিছুর সঙ্গে লেগে গেলে? ”
বলেই ধীর স্বরে বলল,
“ উত্তেজিত হচ্ছো কেনো? তুষিব নিয়ে আসবে। কল করে বলে দিচ্ছি। ”
মেয়েটা ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে রয়। নিজের কাঁধের নিকট মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
“ অনেক ফাইট করেছ। এখানে মাথা রেখে এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাও। ”

বাইক ফুল স্পিডে চালিয়ে হলের গেইটে অপেক্ষা করছে তুষিব। তক্ষুণি অটো এসে থামলো সেখানে। ধীরে ধীরে মেয়েটাকে নামিয়ে দাঁড় করালো। তাহিয়াকে জানানো হয়েছে একটু আগেই। সে ধড়ফড়িয়ে এসে মেয়েটার বিধস্ত, রুক্ষ এরূপ অবস্থা দেখে চমকে উঠলো। চোখের পানি শুঁকিয়ে গাল চটচটে হয়ে আছে। চুল এবং গায়ের অবস্থাও করুণ। চৈতী জ্যাকেট শক্ত করে চেপে ধরে দূর্বল দেহে দাঁড়িয়ে রইলো। তাহিয়া দৌঁড়ে জরিয়ে ধরে মুখে হাতে স্পর্শ করে বলল,
“ এ কি অবস্থা তোমার? কিভাবে হলো?”
চৈতী দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। অর্পণ তাহিয়ার নিকট মেয়েটাকে দিয়ে সাফসাফ বলল,

“ মেয়েকে শাওয়ার করিয়ে কিছু খাওয়াবে। তারপর ঘুম। যদি বলে ঘুম আসছেনা দুগালে কষে গুণে গুণে দশ চড় পড়বে। মাথায় তেল মালিশ করে অবশ্যই আমাকে জানাবে। তাছাড়া ওসব বা/লের ঘটনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলো। কাল নিতে আসবো আমি। ”
বলেই চৈতীর ফোন থেকে ওর নাম্বর তুললো। এরপর কল করে ব্যাগ তাহিয়ার কাঁধে দিয়ে বলল,
“ সাবধানে নিয়ে যাও।”

চৈতীর মাথা যন্ত্রণা করছে। সে কোনো উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। শুধু গেইট পেরিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে একবার পেছন ঘুরল। অর্পণের চোখ-মুখ শক্ত ভঙ্গি দেখে তৎক্ষনাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে হাঁটা শুরু করে।
চৈতীকে আদর করে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে খাবার নিয়ে এলো। মেয়েটার জন্য তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এ শহরে আর কেই বা আছে ওর? প্রতিদিন কতশত গল্প হয় দুজনের। গ্রামের জীবনগুলো সব অনর্গল বের করে মুখ থেকে। সেই সোনালী অতীত, সরল জীবনযাপন, বাবা-মায়ের ভালোবাসা সব কিছুই তার অজানা নয়। মেয়েটা কিছুক্ষণ আগেই কতবড় ট্রমার সম্মুখীন হলো। আকস্মিক ঘটনা সবচেয়ে বেশী কষ্ট দেয়। হৃদয়ে র-ক্তক্ষরণ হওয়ার মতো যন্ত্রণা। না কাউকে বলা যায়। না সহ্য করা যায়। শুধু আজীবন নিজের ভেতরে চেপে রেখেই বয়ে বেড়াতে হয়।
ও কি ভেবেছিল এভাবে আজ ভেঙে পড়বে? বাবা-মা জানলে নিশ্চয়ই এখানে রাখবে না! বলবে,

“ ঘরের মেয়ে ঘরে চলে আয়। ওসব পড়ালেখার দরকার নেই। আমরা বেঁচে থাকতে ভাতের অভাব হবে না। দিব্যি সংসার চলে যাবে। ”
ভাতের অভাব না হলেও ভেঙে যাবে এত বছর দেখা সব স্বপ্ন। চৈতী ওয়াশরুমে বেশ কিছুক্ষণ গুমরে গুমরে কাঁদলো। চাপা কষ্ট গুলো উগলে বের করতেই সাবান দিয়ে হাত জোরে জোরে ঘঁষল। মেয়েটার চুল টেনে ধরেছিল এজন্য শ্যাম্পু করলো ফ্যানা ফ্যানা করে। চোখদুটো তার লাল বর্ণ ধারণ করেছে। নাকের পাটা কাঁপছে তিরতির করে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় পর, তাহিয়ার অনবরত করাঘাতে জানালো, কাপড় পাল্টে আসছে।
খাবার খাওয়ার ইচ্ছে বা রুচি কোনোটাই নেই। তবুও মেয়েটার জোড়াজুড়ি তে অল্প কয়েক লোকমা খেয়ে বিছানায় ঢলে পড়লো। কাঁদতে না চাইলেও পানি বাঁধ মানছে না। যতবার চোখ বন্ধ করছে শুধু ওই দৃশ্য গুলো চোখে ভাসে তৎক্ষনাৎ গা গুলিয়ে হাঁসফাঁস করে উঠে মেয়েটা।
তাহিয়া মাথায় হাত বুলিয়ে সিঁথির মাঝখান বরাবর তেল মালিশ করে দিলো। সাহস ভরা কণ্ঠে বলল,

“ সব ভুলে যাও চৈতী। আজকাল বাচ্চা মেয়েদের তো আরোও অনেক ভয়ানক কিছু ঘটে যায়। ওগুলো সব অতীত হয়ে পড়ে রয় কোনো এক কোণায়। জীবনে ছোট্ট একটি খারাপ এক্সপেরিয়েন্স হলে নিজেকে দ্বিগুণ শক্ত করা যায়। এই ক্ষুদ্র বাজে জিনিস সর্বক্ষণ কল্পনা করে, লাইফের ভীষণ সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো দূরে ঠেলে দিও না। বরং সেগুলে কল্পনা করো। দেখবে মন হালকা লাগছে।”
বলেই থামলো সে। মেয়েটার গালে হাত রেখে উদাস মুখ বলল,
“ শুকরিয়া করো আল্লাহ বড় দূর্ঘটনা ঘটায়নি। মনকে শক্ত করো। মাটির মতো নরম দলা হলে, সবাই ভাঙতে আসে। বি স্ট্রং! আমি জানি চৈতী অনেক সাহসী মেয়ে। ”

চৈতী তার গাল থেকে ওর হাত বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে কেঁপে কেঁপে উঠল। বুকের ভেতর চলা কষ্টগুলো চেপে দিয়ে মনকে শক্ত করার চেষ্টা করলো। চোখ বন্ধ করে ভাবলো, অর্পণের ভরসা ভরা হাত। একটু যত্ন একটু স্নেহ। এরপর ভাবলো, মায়ের হাতের মজার মজার সব পছন্দের খাবার। বাবার প্রতিদিন ফেরার পথে এটা ওটা নিয়ে আসা। সাইমনের দুষ্টুমি, ঝগড়া। সব একেক করে চোখে ভাসতেই অশ্রুভেজা চোখদুটি চকচক করে ভরে উঠল। ফুঁপিয়ে উঠে মনে মনে বলল,
“ মিস ইউ আব্বা-আম্মা। ”

আজ তৃধার গায়ে হলুদ। সকাল থেকে বাড়ি ভর্তি মেহমানে হইচই পরিস্থিতি। কে আগে পার্লারে যাবে, কে শাড়ি পড়বে তা নিয়েই হুলুস্থুল কান্ড। সম্পূর্ণ বাসায় এক বিন্দুও পা ফেলার জায়গা নেই। তৃধার বাবা জানতেন এমন অবস্থাই হবে। সেই ভাবনা থেকেই তার বিলাসবহুল বাংলোতে বিয়ের আয়োজন করেছে। যাতে সবাই শান্তশিষ্ট ভাবে বিয়েতে থাকতে পারে। কিন্তু ওসব হলো কই? ছোট্ট কিছু ভুল হলেই তৃধার বড় ফুপা গাল ফুলিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে থাকছেন। পেন্ডেল সাজানো এবং বিরিয়ানির ডেকচিতে অল্প মশলা কম পড়তেই তিনি চিৎকার চেঁচামেচি বাঁধিয়ে বাড়ি মাথায় তুললেন। তৃধার বাবা ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বাবুর্চিদের সাফ সাফ বলে দিলো। উনার মন মতোই সব হোক। তবুও জ্বালাতন করো না।

কিন্তু তৃধার মেঝ ফুপা কি তাই হতে দিবে? দুজনের একেক মতামতে চলছে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। এ বলছে, তার মতো সব হবে। ও বলছে উনার মতো হবে। মুহূর্তেই চিৎকার চেঁচামেচি করে, ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেললেন দুজনেই। হতাশ! খুবই হতাশ। তৃধা খরখরে দুপুরে শুনতে পেলো এসব কান্ড। মেজাজ তার সপ্তম আকাশে উঠল। বয়স ৬০ এর কোঠায় তবুও বাচ্চাদের মতো ঝামেলা না করলে হচ্ছিল না? এত স্বাদের বিয়ে এখন এই দুজনের জন্য সব ভেস্তে যাবে? নাহ! কখনোই না। বাঙালীর বিয়েতে ফুপা-খালুরা ঝামেলা না বাঁধালে তাদের যেনো পেটের ভাত হজম হয়না। সুযোগ খুঁজতে থাকে, উনিশ-বিশ হওয়ার। মেয়েটা এদের অত্যাচারে অসহ্য হয়ে গেলো। এমনতেই গানের সাউন্ড, লোকসমাগমের হইচই-য়ে মাথা ধরেছে। তার উপর এদের যন্ত্রণা! রাগে-দুঃখে শেষে উপায় না পেয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“ চুপ করো তোমরা। কাউকে কিছুই করতে হবেনা। আমিই বাসা থেকে চলে যাচ্ছি। ”
“ না মা! তুই কেনো যাবি.? ওই হতচ্ছাড়াই সব করুক। আমি বরং চলে যাই।”
তৃধার বড় ফুপা খুবই সুক্ষ্ম কৌশলে খুঁচা মে/রে বললেন। তৎক্ষনাৎ গরম তেলে পানি পড়ার মতো ফোঁসে উঠলেন মেঝফুপা। চোখ-মুখ গম্ভীর করে হনহনিয়ে কর্ণারের রুমে ঢুকলেন। হন্নে হয়ে চারপাশ খুঁজতে লাগলো ব্যাগপত্র! জিনিসপত্র সব না পেয়ে রাগে রণমুর্তি ধারন করল। উচ্চস্বরে তার স্ত্রীকে ডাকলো সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে,
“ লতু..! ব্যাগ গুছিয়ে নাও। এখনই বের হবো। এসব বিয়ে খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। নেহাৎ তৃধা মায়ের কথা ভেবে অফিস ফেলে এসেছিলাম। কিন্তু খুঁচা মে/রে কথা সহ্য করে বিয়ে খাওয়ার দরকার নেই ।”
“ তোমার এত তেজ তুমি যাও। আমার ভাতিজীর বিয়ের ৭ দিন পর ফিরবো। বেশী ত্যাড়ামি কইরো না।”
বলেই মেঝফুপু কাজে চলে গেলেন। বউয়ের থেকেও অপমানিত হয়ে রাগে ফেটে দরজায় খিল দিলেন তিনি। বাড়ি শুদ্ধ ছোট-বড় সবাই পেট ফাটা হাঁসি হাঁসলো। বড় ফুপা টিপ্পনী কাটতেও ভুললো না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু তৃধার বাবা জানেন, মেঝফুপার মাথা ঠান্ডা হলেই তিনি আবার কাজে লেগে পড়বেন। মানুষটা হুটহাট রেগে যায় বড়ফুপার সঙ্গে। সেই বিয়ের পর থেকেই দুজনের ভেতরে ভেতরে একাত্তরের যুদ্ধ চলে। কেউ কারো থেকে কম নয়। কথা শুনানোর সুযোগ পেলে গায়ে ফোস্কা ফেলে দিতে ভুলেন না। অতশত চিন্তা না করে তৃধাকে বললেন দ্রুত রেডি হতে।

সন্ধ্যার ভেতরেই বাংলোর বাইরে বিশাল খোলা স্থানে ফুলে ফুলে পেন্ডেল সাজিয়ে কমপ্লিট করা হলো। চেয়ার, টেবিল, বক্স এবং লাইটের ব্যবস্থা করে তৃধার কাজিনগুলো সাজগোছ করতে গেলো। পার্লার থেকে তিনটা মেয়ে এসেছে। তারাই সাজাতে লাগলো একেক করে। তৃধাকে হলুদ রঙের কাঞ্চিপুরম সিল্ক শাড়ি পড়িয়ে ভারী মেকআপ করা হয়েছে। তৃধার চুলগুলো খোঁপা করে দিলেন মেয়েটি। আয়নায় আজ জেনো নিজেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে তার। বিয়ের বাতাস লাগলে নাকি মেয়েরা দ্বিগুণ উজ্জ্বল হয়? ওর তাই মনে হয়। নিজেকে দেখে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। গায়ের কাঁচা ফুলের গহনায় হাত বুলিয়ে মৃদু হাঁসলো। ফোন বাজতেই দৌঁড়ে বিছানায় বসে দেখলো শিহাবের কল। কানে তুলেই মেকি রাগ নিয়ে বলল,

“ কোথায় তোরা?”
“ গেইটে এসেছি বস। আপনি কোথায় নতুন বউ?”
লজ্জায় তৃধা “ ধ্যাত ”বলেই ন্যাকামো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ সবাই এসেছিস?”
“ হুম। ”
“ দ্রুত আমার রুমে আয়। অর্পণ এসেছে?”
শিহাব ফোন কানে চেপে ব্যস্ত সুরে বলল,
“ আমরা এসেছি পেট ভরেনি.?”
তৃধা রেগে বোম।
“ ফা/লতু কথা বলবি না।”
শিহাব হাঁসলো। শাড়ি পরিহিতা পৃথার হাত ধরে ধীরে ধীরে নামালো গাড়ি থেকে। আঁচল হাতে ধরিয়ে বলল,
“ ও রাস্তায়। আসছে। ”

বলেই রেখে দিল। সমুদ্রের হাতে ইয়া বড় গিফট বক্স। সবাই হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে। সকলের গলায় সবুজ রঙের কারুকাজ। একসাথে পায়ে পা মিলিয়ে আসায় প্রতিটি ছেলেকে সুদর্শনের থেকে কম লাগছে না। হামিম সকলের সামনে যেতে যেতে বলল,
“ গিফট বক্স খুলে রিয়াদ স্যার বৃন্দাবন চলে যাবে।”
“ সমুদ্রের প্ল্যান অলওয়েজ কাজে লাগে।”
“ হয়েছে। চুপ কর চাপাবাজ। এসবের প্ল্যান আমার আর অর্পণের।”

বলেই ভেংচি কাটলো পৃথা। সমুদ্র কটমটিয়ে তাকায়। ওরা পেন্ডেলে প্রবেশ করতেই বিভিন্ন মানুষের সমাগম দেখা গেলো। রমণী থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও। তৃধার ছেলো কাজিনগুলো বক্সে গান বাজিয়ে এখনই নাচা শুরু করেছে। ওরা স্টেজের দিকে খানিক তাকিয়ে দৌঁড়ে গেলো তৃধার নিকট। বন্ধু-বান্ধব দের দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠে তৃধা। পৃথাকে জাপ্টে ধরে বলল,
“ এত দেরী করলি কেনো?”
“ তোকে তো মাশাল্লাহ লাগছে দোস্ত।”
বলেই পৃথা টুপ করে চুমু খেলো ওর গালে। লজ্জায় কাঁধে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বলল,
“ যাহ। ”

ঘর ভর্তি মানুষ। হামিম, শিহাব বসে পড়লো সোফায়। এখানে সবগুলো সুন্দরী মেয়ে কাজিন উপস্থিত। হঠাৎ ওদের চলে আসায় তারা কিছুটা বিব্রতবোধ করেছে। চট জলদি বের হতেই সমুদ্র উচ্চস্বরে বলল,
“ আরেহ রমনীগণ! আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? ”
তার কথায় লজ্জায় মুরছা গেলো অনেকে। বিয়ে হওয়া চাচাতো বোনগুলো টিপ্পনী কেটে বলল,
“ স্বামীর কাছে যাচ্ছি রোমিও। ”
বলেই চোখ টিপ মা/রলো। সমুদ্র ভরকে যায়। চোখ বড় বড় করে বলল,
“ ওমাহ। কলিজা টা লাফিয়ে উঠছে।”
তৎক্ষনাৎ বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরলো। সবাই ঘর কাপিয়ে হেঁসে খু/ন। তৃধা সমুদ্রের পিঠে ধপাস করে কয়েকটা ঘুষি মেয়ে বলল,

“ খবরদার সমুদ্রের বাচ্চা! বিয়েতে ভুলেও যদি উল্টাপাল্টা কিছু করিস। ভালো হবে না।”
সমুদ্র ব্যথায় ছিটকে দূরে সরে গেলো। ঠোঁটে হাত চেপে বুঝালো, চুপ করে থাকবে। পৃথা আয়নার সামনে ঠোঁটের লিপস্টিক পাপ্পাহ পাপ্পাহ করে পেছন ঘুরলো। এপাশ ওপাশ ঘুরে বলল,
“ গাইস। কেমন লাগছে আমাকে?”
হলুদ শাড়িতে বরাবরের মতোই সুন্দর লাগছে তাকে। সবাই প্রশংসা করলো বটে। শিহাব মৃদু হেঁসে হাত দিয়ে বুঝালো,“ দারুণ। ”
খাওয়ার পর্ব একটু পরেই শুরু হবে। সন্ধ্যা ৬ টা বাজতে চলেছে। কিন্তু অর্পণের দেখা নেই। তৃধা রেগে মেগে বলল,
“ অর্পণের বাচ্চা কোথায়? আর স্নিগ্ধা-চৈতী ওরা?”
সমুদ্র টি-টেবিল থেকে মুখে পুড়লো কালোজাম। মজা করে খেতে খেতে বলল,

“ ফোন দিয়েছিলাম বলল, কাছাকাছি। কি জানি এত লেইট করছে কেনো?”
বলেই ভাবুক হলো। মুখের মিষ্টি শেষ করে বলল,
“ চৈতীরা হয়তো আসবে না। না আসলে কি করার?”
চোখ-মুখ কালো আঁধার হয়ে আসলো মেয়েটার। কত সাধনার বিয়ে। সে ভেবেছিল, সবাই আসবে বিয়েতে। তৃধাকে স্টেজে নেওয়ার জন্য ওর বোনেরা তোড়জোড় শুরু করলো। মেয়েটা দাঁতে দাঁত চেপে বিছানায় ঠাই বসে রয়। কল করলো অর্পণের নম্বরে। কোথায় আছে জিজ্ঞেস করতেই জানালো, কাছাকাছি। তৃধা গাল ফুলিয়ে খেঁকিয়ে উঠে,
“ ম/রা! চৈতী ওরা আসবে না। ওদের ছাড়া আমি হলুদ মাখাবো না। কিচ্ছু জানিনা আমি।”
“ এ কেমন পা*গলামি?”
“ জানিনা। তুই কিভাবে ম্যানেজ করবি তুই জানিস। ১ ঘন্টার মধ্যে উপস্থিত হবি।”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো। রাগে হাতের চুড়িতে আঘাত করতে যেতেই পৃথা থামালো তাকে।
“ ছাগলের তিন নম্বর বল/দ..! বাচ্চাদের মতো করছিস কেনো? বিয়ে তোর! ওদের কি প্রয়োজন? বিয়ে না করলে ওদের লস নয় পুরোপুরি তোর লস! স্যারকে স্বামী রূপে পেতে চাইলে চুপচাপ চল। ”

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৩

সমুদ্র, শিহাব অলরেডি স্টেজে উঠে গান গাওয়ার আয়োজন শুরু করলো। এই সুযোগে সমুদ্রের প্রেমে যদি কোনো রমণী পিছলে যায়? ও খেয়াল করেছে ১৬ বছরের আবেগী দুটো মেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখায় ব্যস্ত। এই সুযোগ টাই লুফে নিতে হবে। মেয়েগুলো যথেষ্ট সুন্দরীও বলা যায়। সমুদ্র সুযোগ পেয়ে দূর থেকে চোখে চোখ পড়তেই চোখ টিপ মা/রলো। লজ্জায় মেয়ে দুটো হইচই বাঁধিয়ে দৌঁড়ে পালালো।

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ২৪