খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৬

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৬
আনিকা আয়াত

“ ইট’স ওকে অর্পণ ভাইয়া! ”
চৈতীর মুখ থেকে ভাইয়া শুনে অর্পণের তিক্ত অনুভূতি হলো। মেয়েটার মুখে “ ভাইয়া ” ডাক অর্পণের হজম হলো না। বিরক্তে চোখ-মুখের বর্ন পাল্টে গেল। এই প্রথম খেয়াল করলো, ভাইয়া শব্দটি কুৎসিত! ছিঃ কেমন বিদঘুটে ডাক। এই নামে কেউ কাউকে ডাকে? অর্পণ নাক-মুখ কুঁচকে বিড়বিড় করলো,
“ ভাইয়া?”

চৈতীর কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে খামচে ধরলো। হালকা ঢোক গিলে মাথা নত করে আছে। এই লোকটা সামনে আসলে তার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠে। না জানি আবার কষে চড় মা/রে! তুষিব নিরব দর্শক হয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে পরখ করছে দুজনকে।
অর্পণ মেয়েটির দিকে বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে তাকালো। হঠাৎ চৈতীর ভীতু মুখ দেখে চুপচাপ বাইকে উঠে বসে। উচ্চস্বরে খেঁকিয়ে বলল,
“ চোখের সামনে থেকে দূর হ। তোর মায়ের পেটের ভাই আমি? ”
একটু থামলো অর্পণ। মেয়েদের মতো ব্যঙ্গ করে ঠোঁট উল্টালো। ন্যাকা স্বরে হাত নাড়িয়ে বলল,
“ ভাইয়া….! ইট’স ওকে ভাইয়া..!”
চৈতী অসহায় চোখে তাকালো। অর্পণ জোরে ধমকে উঠে,
“ শুন চুমকি..! ইট’স নট ওকে ভাইয়া..! বুঝলি? যা ফুটট.! অসহ্য।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরক্ষণেই বাইক স্টার্ট করে ঝড়ের বেগে সেই স্থান ত্যাগ করলো। মেজাজের পারদ কেনো জানি আজ একশো ডিগ্রি! নিয়ন্ত্রণের বাইরে! বাইকটি সেকেন্ডের ব্যবধানে চোখের আড়ালে চলে গেলো।
তুষিবের ধ্যাণ ভাঙে তৎক্ষনাৎ। সে হতবাক হয়ে অর্পণের পেছন পেছন দৌঁড়ে যেতে যেতে বলল,
“ ও ভাই.! আমারে রাইখা গেলেন কেনো? নিয়া যান ভাই। ও ভাই। ”
চৈতী এতক্ষণ ভয়ে ভয়ে চুপসে থাকলেও, অর্পণ বেরিয়ে যেতেই দাঁতে দাঁত চাপলো। মনে মনে রেগে ফোঁসে উঠে, মুখ ঝামটা মে/রে বলল,

“ ভাই নয়তো কি? ভার্সিটির ভাই! তাছাড়া তুই আমার মায়ের পেটের ভাই হবি কেনো রে? তুই তো হাঁদারাম! গোবর গণেশ অর্পণ শেখ। আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া! তোর মতো খচ্চর ছেলে আমার ভাই হয়নি। ”
চৈতী চোখ-মুখ শক্ত করে হোস্টেলে চলে যায়। দুপুরে রোদের তাপমাত্রা বেশী থাকায় চৈতী কাঁধের ব্যাগ টেবিলে রেখে দ্রুত শাওয়ার নিয়ে নেয়। হোস্টেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে কল করলো শ্রাবণকে। জিজ্ঞেস করলো,
“ তুই আমাকে টিউশন খুঁজে দিয়েছিস?”
শ্রাবণ তখনও রাস্তায়। সে হাঁটতে হাঁটতে ব্যস্ত গলায় বলল,
“ হ্যাঁ। বিকেল ৪ টা থেকে। এড্রেস মেসেঞ্জারে দিয়েছি। চেক কর। ”
চৈতী মেসেঞ্জার চেক করে দেখলো ঠিকানা কালকে রাতেই মেসেজ করে দিয়েছে। মেয়েটা অনলাইনে তেমন এক্টিভ নয়। যার ফলে জানতে পারেনি। ক্লাসে আজ শ্রাবণের সাথে ভালো করে কথা হলো না। ছেলেটা নাকি ভীষণ ব্যস্ত আজ। চৈতী বিছানায় বসে বলল,

“ বিকেলে এসে আমাকে নিয়ে যাবি? শ্রাবণ..! ”
শ্রাবণের মুখে হাঁসি ফুটে উঠে। বামহাতে ফোন কানে চেপে ধরে উৎফুল্ল সুরে বলল,
“ অবশ্যই চৈত্র মাস। আমি শীগ্রই চলে আসবো। এবার ফোন রাখ। বাসায় যাচ্ছি। ”
“ ঠিক আছে শ্রাবণ মাস। আমি রাখছি।”
চৈতী হেঁসে কল রেখে দিলো। দুপুরের খরখর রোদে হোস্টেলের ঘটঘট শব্দ তুলা ফ্যান টা ছেড়ে দিলো। বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করতেই দুনিয়ার সব চিন্তা ঘনঘন শুরু করে তার ছোট্ট মস্তিষ্কে। পরিবারের সবাই চৈতীর উপর ভরসা করে আছে। তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন সকলের। মেয়েটি কি পারবে? পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে? ছোট ভাই সায়মনের স্কুলের খরচ। সংসারের খরচ সহ, সপ্তাহে কিস্তি। এগুলো রেখে তাকে কিভাবে বাবা টাকা পাঠাবে? এতো দূর কষ্ট করে এসে হেরে যাবে? বাবা-মার কষ্টের দাম কি দিতে পারবে না? তাদের গর্বের কারণ কি হতে পারবে? নিজের খরচ যে তাকেই সামলাতে হবে। গরীব পরিশ্রমী বাবাকে আলোর মুখ দেখাতে হবে।আর এই অচেনা শহরে বন্ধুরাই একমাত্র ভরসা।

পায়েল শেখ প্রতিটি নতুন ভাড়াটিয়াকে একদিন দাওয়াত করে খাওয়ায়। এটা তার অনেক আগে থেকেই শখ। বাসার সকল ভাড়াটিয়ার সাথে মিষ্টি, মধুর সম্পর্ক তৈরি হলে, একসাথে মিলেমিশে থাকা যায়। একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়া যায়। পরিবারের মতো বন্ধন দৃঢ় হয়। জামিল শেখকে বলে তিনি স্নিগ্ধাদের ফ্ল্যাটে গেলো। কারণ, লাস্ট তারাই এ বাসায় উঠেছে।
বিকেলে সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে একটু রেস্ট করে। আয়েশা জামানও দুই মেয়েকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিল। কলিংবেলের শব্দে তিনি ঘুম থেকে উঠলেন। ড্রয়িংরুমে এসে দেয়াল ঘড়িতে দেখলো, প্রায় ৫ টা বেজে গেছে। ঝটপট দরজা খুলার পর পায়েল শেখকে দেখে তিনি সৌজন্যের হাঁসি টেনে বলল,
“ ভাবি আপনি? কি মনে করে? ভেতরে আসুন।”

পায়েল শেখ হাঁসি মুখে ভেতরে গেলেন। নিজের বাসার প্রতিটি ঝকঝকে রঙিন দেয়াল লক্ষ্য করে বুঝলেন, ভাড়াটিয়া গুলো বেশ গুছানো। ঘরের জিনিসপত্র খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। সে মনে মনে খুব খুশি হলো। মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেলো তার। এরকম পরিপাটি ভাড়াটিয়া হলে, নিশ্চিন্তে থাকা যায়।
আয়েশা জামান তার জন্য চা-নাস্তা তৈরি করতে চলে যায়। পায়েল সোফায় বসে তাড়াহুড়ো করে বলল,
“ কিছু করতে হবে না ভাবি। আমি এখন-ই চলে যাবো। আপনার ভাই বাইরে যাবে।একটা কথা বলার জন্য এসেছি। ”

আয়েশা জামান কথা শুনলো না। তিনি ঝটপট চা আর নোনতা বিস্কুট তার সামনে রেখে বলল,
“ এবার বলুন কি কথা?”
পায়েল শেখ হাঁসলো। চা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল,
“ কাল রাতে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদের সবার দাওয়াত। আমার বাসায় চলে আসবেন।”
“ হঠাৎ দাওয়াত? বিশেষ কোনো কারণ? আপনার ছেলে-মেয়ের বিয়ে? নাকি অন্যকিছু ”
পায়েল শেখ তার প্রশ্নে মুচকি হেঁসে বলল,
“ নতুন ভাড়াটিয়াকে আমি দাওয়াত করে খাওয়া-ই। এবার আপনারা নতুন তাই কাল দাওয়াতের আয়োজন করবো।”

“ ভাবি। এসবের কি প্রয়োজন? ”
আয়েশা জামান ইতস্তত বোধ করে বললেন। পায়েল শেখ মেকি অভিমান করে চায়ের কাপে শেষ চুমুক বসায়। তিনি কিছুক্ষণ বুঝিয়ে বলে ফ্ল্যাটে চলে গেলো। তাদের কথার আওয়াজে স্নিগ্ধার ঘুম ভেঙে গেছে। সে বারান্দার নতুন টবগুলোতে পানি দিয়ে মায়ের কাছে আসলো। আয়েশা জামানের কাঁধে মাথা রেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
“ কে এসেছিল আম্মু?”
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে উত্তর দিলো,
“ বাড়িওয়ালার বউ। ”
স্নিগ্ধা নড়েচড়ে বসলো। হঠাৎ কি মনে হতে সে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,
“ আম্মু! একটু ছাঁদে যাই? বাসায় শুয়ে বসে ভালো লাগছে না।”
“ একা যাবি? মিষ্টিকে ডাক।”

“ না আম্মু। ও আরেকটু ঘুমিয়ে নিক। সারাদিন কত খাটাখাটুনি করে।”
মায়ের উত্তরের আশায় না থেকে স্নিগ্ধা তাড়াহুড়ো করে পায়ের জুতা পড়লো। দরজা খুলে দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে চলে গেলো। আশেপাশে উঁকি দিকে কাউকে খুঁজলো বোধহয়। ধীরে ধীরে ছাঁদের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে অবশেষে খুঁজেও পেলো কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে। তৎক্ষনাৎ মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।
ধীর পায়ে হেঁটে রেলিঙের সাথে দোলনায় বসে চোখ বন্ধ করে দোল খেতে শুরু করলো। বাতাসের শাঁ শাঁ শব্দে আর ঠান্ডা আমেজে মন ভরে উঠলো তার। লম্বা ঘন চুলগুলো আজ বাঁধন ছাড়া। তাদের নিজের মর্জিতে এলোমেলো হয়ে সারা মুখে উড়ে বেড়াচ্ছে। কখনো বাতাসের তালে তালে উড়ে যাচ্ছে চারপাশে।

স্নিগ্ধার মনে শান্তি অনুভব হয়। পৃথিবীতে এই সময়গুলো তার থামিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। পাশের বাসার ছাঁদের আধখসে পড়া রেলিঙে একটি কালো কাক উচ্চস্বরে কর্কশ গলায় কাঁ কাঁ করছে। এটাও যেনো এই গোধূলি শেষ বিকেলে স্নিগ্ধার ভালো লাগছে। সে খিলখিল করে হেঁসে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দোল খেতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর থেমে গেলো তার দোলনা। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই সে কেঁপে উঠলো। তার ঠিক ১০ কদম সামনেই অর্ণব শেখ বিষণ্ণ মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধার দিকে কোনো খেয়াল নেই। এমন ভাবে বসে আছে, জেনো ছেলেটির মনে কত কষ্ট! অর্ণব কপালে ভাঁজ ফেললো। দোলনা থেমে যাওয়ার মাঝে স্নিগ্ধার কানে একটি পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো,

“ দোল খাওয়া বন্ধ করলেন কেনো? ভালোই তো লাগছিল। সামনে বিষন্ন আকাশ! পাশে এক চঞ্চল রমনী মনের সুখে দোল খেয়ে যাচ্ছে। ”
স্নিগ্ধা এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। অর্ণব তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে মিহি কণ্ঠে বলল,
“ আপনি কি রোজ ছাঁদে আসেন? মিস..!”
স্নিগ্ধা এবার নড়েচড়ে বসে। অর্ণব হেঁসে আবারোও আকাশের পানে গভীর নয়নে তাকালো। স্নিগ্ধা মাথা নিঁচু করে ঝিরিঝিরি কণ্ঠে বলল,
“ না। মন খারাপ থাকলে আসি। ”
অর্ণব মুহূর্তেই রহস্যময় ভাবে হেঁসে উঠে। আকাশের পানে থেকে চোখ সরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েটির দিকে তাকায়। চোখে একরাশ কষ্ট নিয়ে বলল,
“ অর্পণ কি খুব জ্বালাচ্ছে আপনাকে?”
স্নিগ্ধার কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো। সে দোলনা থেকে নেমে এগিয়ে গেলো অর্ণবের কাছে। ছেলেটির একটু দূরে রেলিঙে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো,

“ হঠাৎ এই প্রশ্ন? ”
আজ অর্ণব কালো টি-শার্ট আর সবুজ টাওজার পড়েছে। ফর্সা গায়ে কালো রঙ যেনো আরোও ফুটে উঠেছে। ছেলেটার হাতে একটি দামী ঘড়ি। চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিকঠাক করে সে মেয়েটির চোখে চোখ রেখে বলল,
“ কারণ প্রতিটি মেয়ের সাথেই ওর কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যায়। আর মেয়েটিকে জ্বালিয়ে অতিষ্ট না করা অব্দি পিছু ছাড়ে না। আমি কি ভাবছি জানেন? হয়তো আমার ভবিষ্যত বউয়ের সাথেও অর্পণের সাক্ষাৎ হয়ে গেছে। ”
স্নিগ্ধা এবার খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। মুখে হাত চেপে হাঁসি থামানোর চেষ্টা করছে। অর্ণব নিজেও বাঁকা হাঁসে। মেয়েটির হাঁসি হাঁসি চোখে তাকিয়ে আনমনে বলল,

“ কাল থেকে রোজ ওই চোখ দুটোতে কাজল লাগাবেন মিস। তাদের যে কাজল ছাড়া খালি খালি লাগে। ”
স্নিগ্ধার হাঁসি তৎক্ষনাৎ থেমে যায়। সে হতবিহ্বল হয়ে অর্ণবের মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে। লোকটা কেমন করে অপলক তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো স্নিগ্ধা। কপালে আর গালে এলোমেলো ছড়িয়ে পড়া চুলগুলো কানে গুঁজে লজ্জা মুখে বলল,
“ আপনার ভাইকে ট্রেনিং দিবেন। সে যেনো ঠিক আপনার মতোই ভদ্র হয়। জমজ হয়েও এতো পার্থক্য বেমানান লাগে। কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। সে আপনার ভাই। ”
অর্ণব কানেও নিলো না সেই কথা। সে উঠে স্নিগ্ধার নিকট দাঁড়ালো। সটানভাবে দাঁড়িয়ে টাওজারে দু-হাত গুঁজে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“ কাল থেকে রোজ চোখে কাজল লাগাবেন তো।”
আজ কেনো জানি স্নিগ্ধার লজ্জা করছে। গাল দুটি রক্তিম বর্ন ধারণ করছে ধীরে ধীরে। সে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আমতা আমতা করে বলল,
“ জানি না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে আমাকে যেতে হবে। ”
কথা বলেই হনহনিয়ে মেয়েটি এক প্রকার পালিয়ে গেলো। অধর বাঁকিয়ে হাঁসলো অর্ণব। চোখের চশমাটা খুলে টি-শার্ট দিয়ে মুছলো। এরপর চোখে পড়ে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামলো।

তৃষ্ণা আজ বায়না ধরেছে পরিবারের সবার জন্য মোগলাই আর আলু পরোটা করবে। সে-ই থেকে মায়ের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে তৃষ্ণা রান্নাঘরে যায়। পায়েল শেখের এক কথা! তৃষ্ণা পারবে না বানাতে। উল্টো রান্নাঘরের বারোটা বাজাবে। সঙ্গে আগুন লাগিয়ে ছাড়বে এই অকর্মা জেদি মেয়েটি। তিনি মেয়ের সঙ্গে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করছেন। তৃষ্ণা মায়ের বকাঝকা তোয়াক্কা না করে, আটা মাখছে।
জামিল শেখ মিটিং শেষে আরাম করছে বিছানায়। মেয়ে আর বউয়ের ঝগড়া শুয়ে শুয়েই উপভোগ করছেন। মিটিমিটি হেঁসে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অর্ণব বাসার ভেতরে এই অবস্থা দেখে তৃষ্ণার উদ্দেশ্যে বলল,

“ দেখে শুনে রান্না কর নবাবজাদী। আবার আগুন লাগিয়ে দিস না। মোগলাই কি আদোও খাওয়ার যোগ্য হবে?”
পায়েল শেখ চেঁচামেচি করে উঠে,
“ ঘন্টা খাওয়াবে তোর বোন। আমার রান্নাঘর শেষ করে ছাড়বে। যে কিনা প্লেট ধুয়ে ভাত খায় না। সে রান্না করবে। ও ম/রন।”
তৃষ্ণা মায়ের কথাও তুমুল প্রতিবাদ করলো।
“ সবসময় খুঁটা দেবে না মা। অর্পণ ভাই বাসায় আসুক। সব বলে দিবো।”
ব্যস হয়ে গেলো! অর্পণের নাম শুনেই হাইপার হয়ে গেলো পায়েল শেখ। মেয়েকে সহ অর্পণকেও বকাঝকা শুরু করলো। মুহুর্তেই বাসায় শুরু হলো হাই-হ্যালো’র। অর্ণব শেখ বিরক্ত হয়ে গটগট পায়ে হাঁটা দিলো রুমের দিকে। এখানে থাকা মানেই বোন আর মায়ের চিল্লাচিল্লি সহ্য করা। দিন দিন এই বাসা যেনো মাছের বাজারে পরিনত হচ্ছে। সব-ই ওই অর্পণের জন্য। আজ আসুক ব্যাটা! মে/রে জেলে পুড়ে দিলেই সোজা হয়ে যাবে। বখাটেপনা বের হবে।

অর্পণ রাত বারোটার পর বাসায় ফিরলো। একজায়গায় ফুটবল খেলা থাকায় তুষিব আর রনিকে নিয়ে সেখানে যায়। খেলা রাত ১০ টার আগে শেষ হলেও, এলাকায় আড্ডা দিতে দিতে দেরী হয়ে গেলো। সে বাসার নিচে বাইক থামিয়ে অর্ণবকে কল করলো। বেচারা ছেলেটা ছিলো ঘুমিয়ে! তার কাঁচা ঘুমকে বারোটা বাজিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
“ অর্ণবের বাচ্চা! এই মুহুর্তে গেইট খুল। মশার কামড়ে দাঁড়াতে পারছি না।”
অর্ণব রেগে মেগে উঠে বসে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে বিশ্রী গালাগাল দিয়ে বলল,
“ তুই ওখানেই পঁচে ম/র শালা। আমি গেইট খুলবো না। ”
“ কুত্তা রে! তুই কি খুলবি? নাকি গেইট ভেঙে ফেলবো?”

দারোয়ান কিন্তু গেইটের ভেতর ঘুমাচ্ছে। তবুও অর্পণ তাকে না ডেকে নিজের ভাই নামক শত্রুকে ঘুম থেকে উঠালো। এবার একপ্রকার আনন্দের ব্যাপার! কারণ, কারো সুখ যে অর্পণ শেখ-এর সহ্য হয়না। কেনো অর্পণ একা দুঃখ পাবে? অর্ণবও পাক ছোট্ট দুঃখ।
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে ফোন ঠাস করে বিছানায় ফেলে উঠে দাঁড়ালো। আরামের ঘুম হা/রাম করে, দরজা খুলে বের হলো। তার গায়ে শুধু টাওজার। উদাম গায়ে রেগে মেগে গেলো সে। ঘুম নষ্ট হওয়ায় মস্তিষ্ক গরম! রাগের বশে মে/রেও ফেলতে পারে অর্পণকে। সে গেইট খুলেই অর্পণের ঘামে চপচপে দেহে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তেড়ে গিয়ে উড়াধুরা শক্ত হাতে অর্পণের চোয়ালে ঘুষি দিয়ে বলল,

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৫

“ এতো রাত অব্দি কোথায় ছিলি? সেখানেই ম/র শালা। বাসায় এসেছিস কেনো? ”
অর্পণ কিছুক্ষণ মুচকি মুচকি হাঁসলো। অর্ণবের মা/ইর খেয়ে সে মুখ বাঁকিয়ে হাঁসে। ছেলেটার চোখের অবস্থা করুন। আহারে কাঁচা ঘুমটাই ভেঙে দিয়েছে। অর্পণের হাঁসি আরোও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিলো, সে শক্ত করে তার গলা টিপে ধরে। এবার ব্যথায় অর্পণও রাগে ফেটে পড়ে। অর্ণবের তলপেটে হাঁটু দিয়ে লাত্থি মে/রে হিসহিসিয়ে বলল,
“ তোর ভাবির কাছে গেছিলাম। চেহারা দেখে বুঝিস না? ফুর্তি করে এসেছি। এবার ভেতরে গিয়ে গোসল করতে দে।”

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৭