গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৩৩
Raiha Zubair Ripti
শক্রবার ছুটির দিন..নওফিল বসে আছে সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার এক পাঁচ তালা বিল্ডিংয়ের বেলকনিতে। গতকাল রাতেই এসেছে নতুন ফ্লাটে। নওরিন ঘুমাচ্ছে বিছানায়। নওফিলের হাতে জলন্ত সিগারেট। সিগারেট খাওয়ার তেমন অভ্যাস নেই। তবে আজ খেতে ইচ্ছে করছে বিধায় সে খাচ্ছে।
সিগারেটে ধোঁয়ার মতো তার স্মৃতি থেকে কিছু অজানা লুকায়িত স্মৃতি বেরিয়ে আসছে। ফারজানা যে নওফিল এর সেকেন্ড ওয়াইফ ছিলো। রজনীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকাকালীন ই ফারজানার সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। যখন নওফিল শুনেছিল রজনী আর মা হতে পারবে না। ফারজানা কে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল নওফিল। বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়েছিল ফারজানা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যা রজনী আজও জানে না। নওফিল রজনী কে ডিভোর্স দিয়ে ফারজানা কে বিয়ে করে। নওফিল পরকীয়া করেছিল অথচ রজনী তা জানলোও না। দিনের পর দিন ঠকিয়েছে নওফিল রজনী কে। রজনী ঘুনাক্ষরে ও টের পায় নি। পেলে বোধহয় তখনই নওফিল এর প্রতি এক আকাশসম ঘৃণা জমা হতো। নওফিল খুব সূক্ষ্ম ভাবে রজনীর থেকে এই বিষয় টা লুকিয়ে গিয়েছে।
রজনী মা হতে পারবে না এটা জানার পর নওফিল ভেঙে পড়লে নওফিল এর কলিগ ফারজানা সেটারই সুযোগ নেয়। রজনীর নামে এটা সেটা বলে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করছে৷ ফারজানা দেখতে শুনতে অসম্ভব সুন্দরী ছিলো। যা দেখে নওফিল দূর্বল হয়ে গিয়েছিল। তারপর ই তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। অথচ বিয়ের এক বছর পাড় হতেই চলে যায় ফারজানা অন্য এক পুরুষের সাথে। নওফিল সেদিন নির্বাক ছিলো। বুঝতে পেরেছিল রিভেঞ্জ হয়েছে৷ তাই দোষ নিজের ভেবেই চুপ রইলো।
সিগারেট শেষ হয়ে আসতেই সেটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় নওফিল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল-
-“ কেটে যাক বছর পেরিয়ে যাক বসন্ত, তোমার সাথে আমার মতো পাপিষ্ঠের আর দেখা না হোক। আমি ভালো ছেলে,ভালো স্বামী হয়তে হতে পারি নি তবে আদর্শ পিতা হয়ে ঠিক নিজেকে প্রমান করবো। বাবা হিসেবে আমি আমার মেয়ের কাছে একজন সুপারহিরো। তোমার জীবনের সব অতীত অধ্যায় আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে মুছে ফেলা হোক। তোমার অভিমান অভিযোগ অন্য কাউকে ঘিরে হোক নতুন করে৷ সাদমান নিশ্চয়ই সব জেনেই বিয়ে করছে তোমায়। খুব উন্নত মানের চিকিৎসা হোক তোমার। আর মাতৃত্বের অনুভূতির স্বাদ কেমন তা অনুভব করো। ভালো থেকো,,আমার অস্তিত্ব জুড়ে তোমরা আর কেউ নেই আমার মেয়ে ছাড়া।
সাদমানের বাবা আর মা দুপুরে এসেছে শাফায়াত দের বাসায় আমেরিকা থেকে। সাদমান কাল যাবে ফ্যামিলি নিয়ে রজনী দের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তবে সাদমান তার বাবার সাথে আলাদা একটু কথা বলবে বলে একাকী রয়েছে বাবার সাথে। সাইদুল ইসলাম ছেলেকে এখনও চুপ থাকতে দেখে বলল-
-“ কি বলবি এখনও বলছিস না কেনো?
-“ কিছু কথা বলবো। প্র্যাক্টিক্যালি ভাববে।
-“ বল।
-“ একটা মেয়ে যে কখনও মা হতে পারবে না। তবে মেয়েটাকে একটা ছেলে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে। ছেলেটা রাজি মেয়েটার সব জেনে বিয়ে করতে। কারন ছেলেটার কাছে সব কিছু আগে মেয়েটা। ছেলেটা আর মেয়েটাকে কোন নজরে দেখছো?
-“ ভালো নজরেই। বাচ্চা হবে না এটাতে তো ছেলে মেয়েটার দোষ নেই। দু’জন যেহেতু দু’জন কে ভালোবাসে তাহলে বিয়ে করবে। তারপর বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করবে যদি মনে হয় বাচ্চা তাদের দরকার।
-“ তারমানে তোমার আপত্তি নেই? মানে এমন বিয়ে তে?
-“ না। তোর মায়ের ও তো এমন সমস্যা হয়েছিল। বাচ্চা কনসিভ হচ্ছিলো না। অনেক চিকিৎসা সাধনা করার পর তুই হলি। এরপর আর কনসিভ করতেই পারে নি তোর মা। আমরা জানি দেখেছি এই সিচুয়েশন। তাই বুঝি।
সাদমান সাইদুল ইসলাম কে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ এরজন্য ই তোমাকে এতো ভালোবাসি বাবা। লাভ ইউ।
রুয়াত আজ ভীষণ ব্যস্ত রান্না নিয়ে। খালা শ্বশুর, খালা শ্বাশুড়ি এসেছে বলে কথা। একা হাতেই সব রান্না করছে। শ্বাশুড়ি কে পাঠিয়ে দিয়েছে বোনের সাথে গল্প করতে। বোন অনেক বছর পর এসেছে। গল্প করবে সুখ দূঃখ শেয়ার করবে এটাই তো হবার কথা। শাফায়াত রুয়াত কে হেল্প করছে। রুয়াত না করেছিল কিন্তু শাফায়াত শুনলে তো! শাফায়াত এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে আবার পেঁয়াজ মরিচ কে’টে দিচ্ছে ।
রুয়াত বারবার বলছে- আর হেল্প করতে হবে না৷ ফ্যানের নিচে গিয়ে বসুন।
শাফায়াত পাখা দিয়ে বউ কে বাতাস করতে করতে জবাব দেয়-
-“ তোমাকে গরমে রেখে আমি ফ্যানের নিচে বসে শরীর জুড়াবো? নো ওয়ে। আমিও হেল্প করবো তোমায়৷ স্ত্রীর হাতে হাতে হেল্প করা উচিত প্রত্যেক স্বামীর।
-“ আমার ভালো লাগছে না। আপনি গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন। গরম তো সহ্য করতে পারেন না। জানি কষ্ট হচ্ছে। যান না।
-“ তোমার ও তো কষ্ট হচ্ছে রুয়াত। নিজের দিকে তাকিয়েছো? পরনের শাড়ি ভিজে গেছে। তাই কথা কম বলো। দু’জনে মিলে করলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে।
রুয়াত হাল ছেড়ে দিলো। তরকারি তে ঝোল দিয়ে শাফায়াত এর থেকে পাখা টা নিয়ে বলল-
-“ চুপচাপ দাঁড়ান। আমাকে একা বাতাস করলে চলবে?
রুয়াত বাতাস করা শুরু করলো। শাফায়াত বুকে হাত গুঁজে রুয়াত কে দেখতে লাগলো। শাড়ির আঁচল কোমড়ে গোঁজা। উন্মুক্ত ফর্সা পেট বেশ আকর্ষণীয়। তৈলাক্ত মুখে ঘাম ব্লাউজ ভেজা। অথচ কি সুন্দর ই না লাগছে তার বউকে এই রূপে। রুয়াত ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো- কি দেখছেন এভাবে?
শাফায়াত বাঁকা হেসে বলল-
-“ তোমাকে।
-“ আমি কি নতুন? আগে দেখেন নি?
-“ হুমম দেখেছি। তবে আজ নতুন ভাবে আবিষ্কার করছি তোমায়।
-“ যেমন?
-“ সুন্দর লাগছে তোমায়।
-“ এই বিশ্রী বেশে?
-“ এটা মোটেও বিশ্রী বেশ না। গিন্নি গিন্নি লাগে।
-“ আমি তো গিন্নিই।
-“ হু শাফায়াত ইমতিয়াজ নোয়াস এর।
-“ সে কপাল গুনে আমাকে পেয়েছে। তার দিন রাত শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
-“ করে তো রোজ প্রতি মিনিটে মিনিটে। সত্যি তোমার মতো একজন কে আমার জীবনে প্রয়োজন ছিলো। আম্মা আমাকে বেস্ট গিফট দিয়েছে তোমাকে আমার জীবনে এনে।
-“ আমাদের নিয়ে একটা গল্প লিখা উচিত।
-“ কিসের গল্প?
-“ উমম আচ্ছা ছাত্রীর প্রেমে পড়ে ভার্সিটির টিচার যখন বউ পাগল। নাম টা কেমন?জোস তাই না? ।
-“ পুরাই করলার জোস। তরকারি হয়ে গেছে নামাও।
রুয়াত তরকারি নামাতে নামাতে বলল-
-“ আমার চেনাজানা অনেক রাইটার আছে জানেন। তাদের বলবে আমাকে আর আমার জামাই কে নিয়ে একটা গল্প লিখে দেন। আমরা আইডল টিচার স্টুডেন্ট দের। তারা আমাদের গল্প পড়ে ইন্সপায়ার হবে।
-“ তোমার মাথা হবে। আমার সুইট মুড টার ১২,১৪ বাজিয়ে দিলা। রান্না তো শেষ আমি শাওয়ারে গেলাম থাকো।
নেহাল আজ রোহান এর বাসায় এসেছে। কাল সভা আছে। সেজন্য দু বন্ধু মিলে সভার প্ল্যান করছে। রোহান বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল-
-“ ভাবছি জীবন টা নিয়ে পূনরায় ভাববে বুঝলি।
-“ যেমন?
-“ উমম বিয়ে শাদী করবো দ্রুত।
-“ কারে? রুয়াত তো ম্যারিড।
রোহান রাগী চোখে তাকালো।
-“ শা’লা দিলি তো আমার মুড নষ্ট করে। রুয়াত কে রুয়াতের জায়গায় রাখ। রুয়াত হ্যাপি আছে তাতেই আমি হ্যাপি।
-“ তাহলে বিয়ে করবি ক্যা? হ্যাপি থাক। বিয়ে করে জীবন বরবাদ করিস না।
-“ তুই তাইলে করবি কেনো বিয়ে বুঝা আমারে।
-“ আমি তো হ্যাপি না। দুঃখে আছি সেজন্য বিয়ে করে হ্যাপি হবো। আমার তো এক্স নেই যার সুখ দেখে হ্যাপি হবো। আছে একটা গার্লফ্রেন্ড শুধু।
-“ শা’লা তুই আমাকো সিরিয়াস ই হতে দিবি না। নিশ্চয়ই কোনো পাপ করছিলাম আগের জন্মে তারজন্য প্যারা স্বরূপ খোদা তরে আমার জীবনে পাঠাইছে।
-“ তুই তাইলে শ’য়তান আছিলি। তাই তোরে ভালো বানাইতে আমারে ফেরেস্তা স্বরূপ পাঠাইছে তর জীবনে। তাই বলছি ভালো হ।
-“ খারাপ ছিলামই বা কবে। শোন নেক্সট ইয়ার বাচ্চার বাপ হবো তোর ছেলেকে আমার মেয়ে দিয়ে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো৷ ছ্যাকাখোর কাকে বলে আমার মেয়েকে দিয়ে দেখিয়ে দিবো তোর ছেলেকে।
-“ আমি তো বিয়াই করলাম না। তুই আমার সন্তান রে ছ্যাকা দেওয়া অব্দি চলে গেছস! তোর ছেলে হোক দোয়া করি। আর ছ্যাকা আমি খাওয়াবো মেয়ে দিয়ে।
-“ ছেলে হলে ছেলেকে বলবো যা বাপ আমার নেহালের মেয়েকে উঠিয়ে এনে বিয়ে কর। আমি আছি তোর পাশে। মেয়েটা ভীষণ পাজি বাপের মতো৷ বিয়ে করে টাইট দে। আমার ছেলেকে ছ্যাকা দেয় কতবার সাহস!
হোস্টেলের রুমে একমনে রোহানের ছবি দেখছে নীতি। হাবিবা ঘড়ি ধরে পাক্কা ত্রিশ মিনিট সেটা দেখে চলছে। এবার বলেই উঠলো –
-“তুমি কাউকে ভালোবাসিস?”
সময় নিলো না নীতি,মুহূর্তে গড়গড় করে বলে দিলো-
-“ হ্যাঁ অসম্ভব রকমের ভালোবাসি একটা মানুষকে
-“ তার ছবিই কি এতো মনোযোগ দিয়ে দেখছিস?
-“ হ্যাঁ.. আমার ভালোবাসা।
-“ কতদিনের সম্পর্ক?
-“ আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো রিলেশনে নেই।
-“ তাহলে এটা আবার কেমন ভালোবাসা?
-“ এক শুদ্ধ ভালোবাসা এটা। এখানে কোনো এক্সপেকটেশন নেই তাকে নিয়ে।
-“ তাহলে তাকে পাওয়া চান্স কত?
স্মিত হাসলো নীতি,সময় নিয়ে শুধালাো-
-“ হয়তো ০%।
-“পাওয়ার চান্স ০% তাহলে ভালোবাসিস কেনো?”
-“ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে?
-“হু সেটা না হয় বুঝলাম,সে তোকে ভালোবাসে?
-“না তো সে তো আমায় ভালোবাসে না।”
“ সে তোকে ভালোবাসে না,পাওয়ার চান্স ও নেই তাহলে ভালোবাসতে গেলি কেনো?”
-“ আল্লাহ যদি মুখ তুলে ভিক্ষা হিসেবে দিয়ে দেয় সেজন্য
-“বোকা মেয়ে তুই।
-“এটা আমি নিজেও মানি।”
-“তাহলে ভুল কেনো করছিস বারংবার?
-“কেউ একজন একদিন নিজ দায়িত্ব ভুল গুলো সংশোধন করে দিবে তাই।
-“ এটা সিনেমা না আর না কোনো রূপকথার গল্প। মনের মিল দু’জন দু’জনার না থাকলে পাওয়া অসম্ভব।
-“ জানি না। তবে মন বলছে আমি তাকে পাবো।
-“ দোয়া করি পা। ডিম নেই.. রান্না করবো কি? থাক দোকান থেকে ডিম নিয়ে আসি।
নীতি বাহিরে তাকালো। আকাশে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। নীতি বিছানা থেকে বলল-
-“ তুই থাক আমি নিয়ে আসছি।
-“ সন্ধ্যা নেমে গেছে। একা যাবি?
-“ কোনো সমস্যা হবে না।
নীতি চলে গেলো। হোস্টেল থেকে পনেরো মিনিট হাঁটলে দোকান। নীতি ওড়না টা ভালোমতো জড়িয়ে হাঁটা ধরলো। সামনে একটু নির্জন রাস্তা। পাশেই জঙ্গল। সেখানে মানুষের আনাগোনা কম থাকে। নীতি পা চালিয়ে হাঁটা দিলো আগের তুলনায়। দোকানে এসে দুই হালি ডিম নিয়ে ফের হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। জঙ্গলের কাছে আসতেই দেখলো সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলয় আর তার বন্ধুরা। নীতির ভেতর আত্মা শুকিয়ে গেলো ভয়ে। পেছনে তাকালো কেউ নেই।
আগে থেকে জানতো নীলয় নীতি এসেছে এখানে। কারন নীতির বাসার নিচে তার চ্যালারা দাঁড়িয়ে ছিলো। নীতি বের হতেই ইনফর্ম করে। নীলয় চলে আসে। নীতি কাঁপা বুক নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে নীলয় হাত ধরে ফেলে। নীতি ভয়ে মুখ ভীত হলো। হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করলে নীলয় শরীর থেকে ওড়না টা এক টান দিয়ে খুলে মুখ বেধে দিলো। ধস্তাধস্তির সময় ডিম গুলো পরে রাস্তায় ভেঙে পড়লো। নীলয় ওড়না টা হাতে পেঁচিয়ে নিয়ে বাইকে বসতেই বাইক টান দিলো জঙ্গলের ভেতর।
নীতি হুড়মুড়িয়ে রাস্তায় পড়ে গেলো। বাইকের সাথে সাথে নীতির দেহটাও যেতে লাগলো সেই পিচঢালা রাস্তা দিয়ে। রাস্তার ধারে ক্ষত-বিক্ষত হতে লাগলো দেহটা৷ পিঠের নিচের জামা ছিড়ে পিঠের চামড়া খসতে শুরু করলো। মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে পারলো না মুখ বাঁধা থাকায়। রাস্তায় র’ক্ত ঝরতে লাগলো। নীতির মনে হলো তার পিঠের মাংস খুলে খুলে পড়ছে। ব্যথায় চোখ দিয়ে পানি গড়তে লাগলো। অসহ্য সেই ব্যথা। নীতি চিৎকার করে ডাকতে পারছে না কাউকে। দু হাত জখম হয়ে গেছে।
শরীরের কাপড় রক্তে ভিজে লাল হতে শুরু করলো। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে এসে বাইক থামালো নীলয় রা৷ নীতির অবস্থা সূচনীয়। গাল কে’টে নাক ছিলে র’ক্ত বের হচ্ছে। কানের এক পাশের অর্ধেক নেই। নীলয় ওড়না টা ছাড়তেই নীতি পাগলের মতো নিজের ক্ষত-বিক্ষত শরীর জড়িয়ে ধরে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো। শরীরে তার অসহ্য ব্যথা। নীতি পারছে না সইতে। হাত মুহূর্তে র’ক্তে ভিজে গেলো। নীলয় সেটা দেখে অট্টহাসি তে মেতে উঠছে। নীতি কে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে বলে-
-“ বলেছিলাম আমার হয়ে যা। হলি না,সবার সামনে আমার গালে চ’ড় বসালি। তার সোধ আমি নিবো না? তোর এমন অবস্থা করবো যে কোনো পুরুষ যেনো তোর বিভৎস চেহারা দেখলে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। নীতি ভয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো। বসা থেকে উঠে দৌড় দিতে নিলে নীলয় চুল টেনে ধরে। নীতি পাগলের মতো হাত জোড় করে আকুতি করতে লাগলো তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। নীলয় ছাড়লো না। তার বন্ধু দের সামনে নীতির কাপড় টেনে ছিঁড়তে লাগলো। নীতি ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়েই নীলয় এর পা চেপে ধরে বলল ছেড়ে দিতে। তার এতো বড় সর্বনাশ না করতে৷ নীতির সারা শরীর ব্যথায় জ্বলে যাচ্ছে। মাংস খসে যাওয়া জায়গায় ময়লা ডুকে পুড়ছে। নীলয় নীতির শরীরের কাপড় ছিড়তে লাগলো। নীতি আর্তচিৎকার করে বলতে লাগলো -“ ভাই ও ভাই বাঁচাও, রোহান ভাই বাঁচান আমাকে। নীলয় প্লিজ ছেড়ে দিন।
নীলয় শুনলো না। নীতির শরীর নিয়ে মেতে উঠলো। নীতির মনে হলো সে নরক যন্ত্রণা পাচ্ছে। নীতির আর্তনাদ কারো মন কে টলাতে পারেনি। শরীরের এমন হাল তার উপর এমন নির্যাতন নীতি নিতে পারছে না। মাটি খামচে চিৎকার করে উঠছে৷ চোখ দিয়ে ঝরছে জল। শুধু নীলয়ই না তার তিন বন্ধু ও ভোগ করলো নীতির শরীর টাকে। নীতি ভাবতেই পারছে না তার সাথে এটা হচ্ছে! তাকে ধ’র্ষণ করা হচ্ছে!
সে নিজেকে বাঁচাতে পারছে না। তার চোখের সামনে রোহানে মুখ টা ভেসে আসছে। তার বাবা তার ভাই, মায়ের মুখ টা ভেসে উঠছে। তার বাবা ভাই জানতে পারছে না তাদের কলিজার টুকরাকে দল বেঁধে গনধ’র্ষন করা হচ্ছে। নীতির চিৎকার নীতির পরিনতি দেখে প্রকৃতি ও আজ স্তব্ধ। কোথায় তার ভাই আর কোথায় রোহান ভাই? তারা কেনো বাঁচাতে আসছে না তাকে? নীলয় রা ধর্ষণ করেই খ্যান্ত হলো না। সাথে করে আনা এসিড নীতির মুখে ছুঁড়ে মারলো। নীতি মুখ চেপে ধরলো। -“ আল্লাহ গো, মা গো, মরে গেলাম. বলে ছটফট করতে লাগলো। নীতির এমন আর্তচিৎকার কারো কান অব্দি পৌঁছালো না।
নীলয় তার বন্ধু দের নিয়ে চলে গেলো নীতি কে ফেলে। নীতির মুখ জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ঝলসে যাচ্ছে মুখ। মাটিতে গড়াগড়ি করা শুরু করলো। ব্যথা তার আর সহ্য হচ্ছে না। এর চাইতে মৃ’ত্যু ই ভালো। নীতির মনে হচ্ছে এই বুঝি জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। বাবার মুখ টা আর দেখা হবে না। মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো হবে না। ভাইয়ের সাথে খুনসুটি করা হবে না। আর রোহান! লোকটা বলেছিলো তাকে ভালোবাসতে না। নীতি চলে গেলে লোকটাকে ভালোবাসবে কে?
লোকটার সাথে সংসার বুঝি আর এ জনমে হবে না? লোকটার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা আর শোনা হবে না? নীতির অপেক্ষা রা বুঝি আর দীর্ঘ হবে না? তার রোহান ভাই যখন দেখবে নীতি আর নেই তাকে জোর করে ধ’র্ষন করেছে৷ মুখে এসিড নিক্ষেপ করেছে। বাঁচার জন্য পাগলের মতো মিনতি করেছে। কত যন্ত্রণা পেয়েছে নীতি তার রোহান ভাই কি উপলব্ধি করতে পারবে? নীতি প্রাণপনে চেষ্টা করেছে নিজেকে বাঁচাতে কিন্তু এতো গুলো পুরুষের সাথে তার এই র’ক্তে সজ্জিত দেহ পারে নি।
গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৩২
সে বাঁচতে চেয়েছিল। ঘর বাঁধতে চেয়েছিল তার ভালোবাসার সাথে। অথচ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল! পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ঘটনা ঘটে গেলো নীতির সাথে! সামান্য এক চ’ড়ে শোধ দিতে হলো এতোটা ভয়ংকর ভাবে! পৃথিবী ও বুঝি আজ লজ্জা পাচ্ছে নীতির এমন পরিনতি দেখে!