গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৪০

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৪০
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী 

ফারদিন এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে ফাইজা’র দিকে। মুখে রয়েছে দুষ্টু হাসি। ফাইজা পিছিয়ে যেতে যেতে লাজুক হাসচ্ছে। ফাইজা পিছিয়ে যেয়ে খাটের উপর পড়ে যেতে নিলে ফারদিন এক টানে ফাইজা’কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। দুই হাতে কোমর জড়িয়ে নিলো ফাইজা’র। ফাইজা এখনো লজ্জায় ফারদিনের দিকে তাঁকাতে পারছেনা। ফারদিন মাথার ব্রাইডাল-ওড়না’টা খুলে বিছানায় ছু’ড়ে মা’র’লো। থুতনি ধরে বললো…..

–তোমার এই লাজুক হাসি’টা নে’শাময় জান। বার বার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে তোমার ওই গোলাপিবর্ণ ঠোঁট গুলো। কি মা’দকতা ছড়িয়ে আছে তোমার মধ্যে। জানতে ইচ্ছে করে খুব…..
ফারদিনের কথায় ফাইজা লজ্জায় কুঁকিয়ে গেলো। চোখ তোলার সাধ্যি নেই ফারদিনের দিকে। থুতনি ধরে মুখ’টা উপরে তুললো। ফাইজা লাজুক চোখে ফারদিনের দিকে তাঁকালো। ফারদিন হালকা হেসে ফাইজা’র চোখের পাপড়ি’তে ঠোঁট ছোয়াঁলো। আলতো করে জড়িয়ে নিলো বুকের মাঝে। ফাইজাও লজ্জায় মুখ লুকালো নিজের স্বামীর বুকে। ফাইজা শান্ত কন্ঠেই বললো….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–একটা গানের লাইন আজ ভীষন করে বলতে ইচ্ছে করছে জানেন?
ফারদিন ও আহ্লাদী কন্ঠে বললো….
–জানি কি গান?
ফাইজা হুট করে ফারদিনের বুক থেকে মাথা তুলে প্রশ্ন করলো…..
–কি করে জানেন? আমি তো আপনাকে গানের নাম বলিনি?
ফারদিন সশব্দে হেসে ফাইজা’র নাকের মাথা টেনে বললো….
–কারন আমিও যে ওই গান’টার কথা ভাবছিলাম।
ফারদিনের কথায় ফাইজা অবুঝ চাহনী নিক্ষেপ করতে ফারদিন সুর টেনে গাইলো…..
–এ জীবনে যারে চেয়েছি…
আজ আমি তারে পেয়েছি….

এইটুকু গেয়ে থেমে গেলো। তারপর দুজনের মুখেই ফুটলো প্রাপ্তির হাসি। ফারদিন এগিয়ে গেলো ফাইজা’র দিকে। যত্ন সহকারে ফাইজা’কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো। একেক’টা গহনা নিজের হাতে খুলে দিলো। চুল গুলো ঘাড়ের এক পাশে রাখলো। ঘাড়ের খালি স্থানে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আচমকা স্পর্শে ফাইজা খানিক’টা কাঁপলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফারদিন পেছন থেকে ফাইজার ঘাড়ে মুখ রাখলো। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ফাইজা’র লজ্জা মাখা মুখ’টা দেখলো।।চোখ বন্ধ করে ঠোঁটে ঠোঁট চে’পে রেখেছে ফাইজা। যা ফারদিন’কে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট। ফারদিন অস্পষ্ট স্বরে বলতে লাগলো…..

–তুমি দেখি আমার নে’শা’টা পঞ্চাশ থেকে লাখ অব্দি করে দিলে জান।
ফাইজা দুইহাত চে’পে ধরে আছে। বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে। ফারদিন ফাইজা’র সামনে হাটু ভেঙে বসলো। বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ফাইজা’র ঠোঁটে স্লাইড করলো কয়েকবার। অনুভূতির প্রবল বেগে কাঁপছে দুজন। হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা হালকা ডলে ঠোঁটের লিপস্টিক গুলো মুছে দিলো ফাইজা’র। ফারদিন ফাইজা’র ঠোঁটে চু’মু খাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে’ই ফাইজা ফারদিনের ঠোঁটে হাত রেখে থামিয়ে দিলো ও’কে। ফারদিন সেই সুযোগে চু’মু খেলো ফাইজা’র হাতে। ফাইজা হাত সরিয়ে নিয়ে দ্রুত উঠে আসলো ফারদিনের সামনে থেকে। চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে নিশ্বাস ছাড়লো। এতক্ষন ওর দম আটকে যাচ্ছিলো। বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষন জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। ফারদিন পেছন থেকে এসে ওর পিঠের খালি জায়গায় হাত দিয়ে স্লাইড করতে’ই ফাইজা আরেক বার কেঁপে উঠলো। ঘুরে ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরলো। ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো…..

–আপনার গান আমার খুব প্রিয়। একটা গান শুনাবেন মিস্টার অভ’দ্র…..
ফাইজা’র কথায় ফারদিন হাসলো। ফাইজা’কে ছেড়ে কেবিনেটের দিকে এগিয়ে গেলো। শেরওয়ানি খুলতে’ই ফাইজা চোখে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..
–এই এই কি করছেন আপনি। লজ্জা শরম তো কিছু নেই আগে জানতাম। এখন আমার সামনে জামা-কাপড় খুলতে শুরু করে দিয়েছেন। লজ্জা করছেনা। খা’রুশ অ’ভদ্র পোলাপাইন…..
ফাইজা’র কথা শেষ হতে’ই কোমরে স্পর্শ পেয়ে ফাইজা চোখ খুলে দেখলো ফারদিন ওর একদম সামনে খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে। তা দেখে ফাইজা চোখ বড় বড় করে কিছু বলতে যাবে তার আগে’ই ফারদিন ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলো। ফাইজা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ফারদিন অন্যরকম কন্ঠে বলে উঠলো….

–তুমি আমার বউ। আমার সব কিছুই তো তোমার জান। তোমার সামনে আবার কিসের লজ্জা বলো তো জান?
ফাইজা জানতো ফারদিন লাগামহীন মুখে এইসব কথাই বলবে। তাই দাতে দাত চেপে ওর দিকে রাগী দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে রইলো। ফারদিন ফাইজার রিয়েকশন দেখে শব্দ করে হেসে দিলো। ফাইজা’কে ছেড়ে দিয়ে একটা ব্লাক হাতা কা’টা টি-শার্ট পড়ে নিলো। তারপর গিটার’টা গলায় ঝুলিয়ে নিলো। তা দেখে ফাইজা খনিক হাসলো। ফাইজা’র চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে ফারদিন গিটার বাজানো শুরু করলো।

“কিছু কথার পিঠে কথা”
তুমি ছুঁয়ে দিলে মুখোরতা”
হাসি বিনিময় চোখে চোখে…
মনে মনে রয় ব্যাকুল’তা…..
এইটুকু গেয়ে ফাইজা’কে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে গাইতে শুরু করলো….
আমায় ডেকো একা বিকেলে…
কখনো কোনো ব্যাথা পেলে..
এর পরের লাইন’টা ফাইজা গাইলো….
আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে
যখনি মন কেমন করে….
তারপর আবার ফারদিন পরের লাইন ধরলো…..
কোনো এক রুপ কথার জগতে..
তুমি তো এসেছো আমারি হতে…
কোনো এক রুপ কথার জগতে
তুমি চিরসাথী আমার জীবনে…
এই পথে…..

এইটুকু গেয়ে আবারো গিটারে সুর তোলায় ব্যস্ত হলো। ফাইজা মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। এর পরের লাইন গুলো ফাইজা গাইতে শুরু করলো….
কোথাও ফুটেছে ফুল..
কোথাও ঝড়েছে তারা…
কোথাও কিছু নেই
তোমার আমার গল্প ছাড়া….
এইটুকু গাইতেই ফারদিন ফাইজা’র হাত ধরে ও’কে ঘুরাতে ঘুরাতে গাইতে লাগলো….
তুমি আমার স্বপ্ন সারথি…
জীবনে তুমি সেরা সত্যি….
এক টানে ফাইজা’কে নিজের সাথে করে এক হাতে ওর কোমরে রাখলো। আরেক হাতে ফাইজা’র হাত শক্ত করে ধরে দুজনে একসাথে গাইতে লাগলো….
কোনো এক রুপ কথার জগতে
তুমি তো এসেছো আমারি হতে….
কোনো এক রুপ কথার জগতে
তুমি চিরসাথী আমার জীবনে….
এই পথে….

এইটুকু গান শেষ করে ফারদিন ফাইজা’র দিকে নেশালো চাহনী দিতে’ই ফাইজা হালকা হেসে ফারদিনের গালে চু’মু খেলো। ফারদিন সময় নষ্ট না করে কোলে তুলে নিলো ফাইজা’কে। ফাইজা ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখলো। ফারদিন কোলে তুলে নিয়ে ফাইজার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফাইজা মুচকি হেসে ফারদিনের গলায় চু’মু খেলো আস্তে করে। ফারদিন ফাইজা’কে বিছানায় নিয়ে সুইয়ে দিলো। জোরে নিশ্বাস উঠানামা করছে ফাইজা’র। ফারদিন কিছুক্ষন ঘোর লাগা চাহনীতে তাঁকিয়ে রইলো ফাইজা’র মুখ পানে। উঠে গিয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে দিলো। এখন সারা রুম জুড়ে লাল’নীল বাতির ঝলক দেখা যাচ্ছে। হালকা রঙিন আলোয় ফাইজা’র মুখ’টা অপ্সীর মতো সুন্দর লাগছে। ফারদিন গায়ের টি-শার্ট’টা এক টানে খুলে নিলো। ফাইজা’র ঠোঁটে হালকা চুমু খেলো। তারপর ওর গালে চু’মু খেয়ে ওর গালে স্লাইড করতে করতে নেশালো অস্পষ্ট কন্ঠে বললো…..

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৯

–তুমি এত সুন্দর কেনো জান? তোমার নেশা আমাকে খুব করে টানে। এক অদৃশ্য নেশা কাজ করে তোমার প্রতি। আজকে সব নেশা কা’টানোর দিন। তোমাকে নিজের করে পাওয়ার দিন। আমার বহুদিনের অপেক্ষার ফল আজ পেয়েছি। সত্যি ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়। কিন্তু এত’টা মিষ্টি হয় আগে জানতাম না তো…..
ফাইনা নিশ্চুপ। এক অদ্ভুত আবেশ ও’কে ঘিরে রেখেছে। শরীর বেগতিক ভাবে কেঁপে উঠছে বার বার। ঠোঁট দুটোও ভয়ংকর ভাবে কাঁপছে। কথা বলা’র শক্তি যেনো ফুরিয়ে গেছে। এ কেমন অনুভূতি। সব’টা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি। ভালোবাসার মানুষ’কে কাছে পাওয়ার অনুভূতি। সব থেকে রোমাঞ্চ কর অনুভূতি। এই অনুভূতি প্রকাশের ভাষা জানা নেই ওর কাছে। ফারদিন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। মুখ ডুবালো ফাইজা’র গলায়। আবেশময় অনুভূতি’তে ফাইজা দুই হাত ডুবালো ফারদিনের চুলে…..

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৪১