ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৪

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৪
নুসাইবা ইভানা

মোর্শেদ চৌধুরী বাংলাদেশ এসেছেন মাস খানেক আগে। নিজের বিলাসবহুল বাড়ির বেলকনির দোলনায় বসে, পায়ের উপর পা তুলে ধোঁয়া উঠা কফিতে চুমুক দিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলে,মোর্শেদ চৌধুরীকে খুঁজে বের করা এতো সহজ নয়। একজন গার্ড এসে বলে স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে চায়।
– তাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলো। আমি আসছি।

লিরা আর উদয় বসে আছে মুখোমুখি। আজ নিরবতা ভেঙে উদয় বললো,আপনিও আমাকে বের করতে ব্যার্থ?
– না মিস্টার উদয়। উদয়ের সামনে কিছু কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে বুধবার আপনার জামিন মনজুর হবে।
– তা এই অসাধ্য সাধন কি ভাবে করলেন?
– নিজের মানুষের জন্য মানুষ কত কিছু করে এটা তো সামন্য জামিন।
– নিজের মানুষ মানে?
– সব কথার মানে খুঁজতে নেই। মানে ছাড়াও অনেক কথা থাকে। যাকগে সেসব কথা ছাড়ুন। আচ্ছা শাফিন স্যারের বাবার কোন ছবি আপনার কাছে আছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– না ছবি নেই।
– কখন তাকে দেখেছেন?
– একবার দেখেছিলাম। তবে তখন সে মাস্ক পড়া ছিলো।
– আপনার সাথে তার এতো কিসের কথা হতো?
– আমার কাছ থেকে শাফিনের খোঁজ নিতো।
– আপনার কাছ থেকে কেন?শাফিনের স্যারের খোঁজ তার কাছ থেকে কেন নিতেননা?
– এই আপনি এমন গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের মতো প্রশ্ন করেছেন কেন?
– কারণ আমি একজন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা। তাই ঠিকঠাক উত্তর দিন।
– সঠিক জানিনা। শুধু জানি ওদের বাপ ছেলের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো না। শাফিন ওর বাবার সাথে সেরকম যোগাযোগ রাখতো না। তবে ওর বাবা প্রতি মাসে ওকে মোটা অংকের টাকা দিতো হাত খরচ হিসেবে।

– তাতে আপনার কি লাভ।
– তিনি আমাকে প্রতি মাসে বেতন দিতো।
– তার ফোন নাম্বার বা এড্রেস কিছু আছে?
– তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার আছে আমার মোবাইলে।
– সেটা তো বন্ধ।
– তাহলে জানিনা।
লিরা উঠে চলে যেতে নিলো। উদয় ডেকে বলে,আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি?
– জীবন বড়ই অদ্ভুত চোখের সামনে থেকেও অনেক কিছু ধোঁয়াসা। আর কিছু না বলে চলে গেলো।
উদয় বোকার মতো তাকিয়ে আছে লিরার দিকে। কি বলে গেলো মেয়াটা?

নুহাস রমিজ রাজের অফিসে বসে আছে। মাথা তার নিচের দিকে।
রমিজ রাজ বললো,এভাবে মাথা নিচু করে রাখলে কি সমস্যার সমাধান হবে?মাথা উঠিয়ে ভাবো কি করা যায়। আগামীকাল আদালতে উঠবে কেস। যদি আয়রাকে রিমান্ডে দেয়! তাহলে তো আমরা শেষ।
– আপনি কিছু করুন আপনি একজন ডিসি।
– এখানেই তো সমস্যা চাইলেও সব করতে পারবো না। তবে সহযোগীতা করতে পারবো। তুমি কাজ করবে।
– সেটা কি রকম।

– আয়রাকে কোন ভাবে একটা ইনজেকশন পুশ করে প্যারালাইস করে দাও।
– পুলিশি হেফাজতে সেটা কি করে সম্ভব!
– আমরাই রক্ষক আর আমরাই ভক্ষক। বুঝতে পেরেছো।
– সেসব তো ঠিক আছে কিন্তু ওকে রেখেছে অন্য সেলে। আমাদের সেলে থাকলে না হয় কাজটা করা যেতো।
– এখনো করা যাবে।ওই থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করো। টাকা থাকলে সব হবে।
– ওকে স্যার আমি ব্যবস্থা করছি।
– ভুলেও কোথাও আমার নাম নেবে না।

নুহাস চলে গেলো। রমিজ রাজ মনে মনে বলছে, মেয়েটা দেখতে সুন্দরী ছিলো তবে কপাল খারাপ।
আয়রা জেলের চৌদ্দ শিকের মধ্যে বন্দী। এতোদিন কতজনকে এখানে বন্দী করেছে। কখনো ভাবেনি সেখানে নিজেকেও আসতে হবে!এক পাশে বসে পরলো আয়রা।একজন মহিলা উঠে এসে বলে,দেখলি তো আল্লাহর বিচার আছে। বিনা দোষে আমারে এই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিলি। আজ নিজেও বন্দী।
আয়রা মহিলাটার চেহারার দিকে ভালো করে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো। প্রায় চাররমাস আগেই এনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। আয়রা বললো দোষ ছিলো আপনার তাই আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

– দোষ আমাদের কপালেই সব দোষ। পেটের দায়ে চুরি করলে সেটা কিসের দোষ। আর আমি সামান্য চুরি করেছিলাম ওই ব্যাগে কি ছিলো তা তো জানতাম না। ব্যাগ রেখে আমাকে ছেড়ে দিতে পারতি। এবার দেখ চৌদ্দ শিকের ভেতরে থাকতে কত মজা।ছারপোকার কামড়। আর মশার আদর পেলে বুঝবি।
আয়রা অপেক্ষায় আছে নুহাসের। আয়রা ভাবছে নুহাস অন্তত তার জন্য কিছু করবে।হাঁটুতে মুখ গুঁজে দিলো। নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। যেই পোশাকের জোড়ে এতো দাপট দেখিয়েছিলো সেই পোশাক খুলে নেয়া হয়েছে।মূহুর্তেই সব ক্ষমতা সব অহংকার ধুলোয় মিশে গেছে।

মিহি রেডি হচ্ছে বেগুনি রঙের সুতি শাড়ি হাত ভর্তি চুড়ি। একদম সনাতন ধর্মের নতুন বৌদের মতো সাজ। চোখে লেন্স লাগিয়ে বাহিরে আসতেই দেখে ঈশান একটা বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পড়া। মিহি কিছু বলার আগেই ঈশান বলে,সবাই যাতে আমাদের রিয়েল কাপল ভাবে তাই মাচিং করা। বাইদা ওয়ে আপনাকে কিন্তু দারুণ লাগছে।কথাটা শেষ করতেই মিহির দিকে

তাকিয়ে দেখে মিহি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশানের দিকে।
ঈশান পাঞ্জাবির উপর দিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে বলে, এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন, মনে হচ্ছে গিলে নেবেন দৃষ্টি দিয়ে।
– আপনি কি একটুও ভালো কথা বলতে পারেন না।সব সময় বকরবকর করতেই থাকেন।
– কথা তো কথাই বকর বকর আবার কি?আমার ভালো কথা কারো কাছে ভালো না লাগলে আমার কি করার আছে।
– আপনি যাবেন? নাকি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অযথা কথা বাড়াবেন।
জো হুকুম মহারানী ভিক্টোরিয়া। আপনি যা বলবেন এই অধম তাই করবে। চলুন।

মিহি আর ঈশান হেঁটে যাচ্ছে প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর মিহি বললো,কি হলো আমরা এভাবে হেঁটেই যাচ্ছি কেন?
– সামনের মোড় পার হয়ে তারপর গাড়ীতে উঠবো। আচ্ছা শাফিনকে আপনার কখনো সন্দেহ হয়নি?

প্রশ্নটা শুনে মিহির পা থমকে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,আমার জীবনে শাফিন ছিলো পূর্নিমার চাঁদের মতো। হুট করে আমার জীবনে এসে জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছিল। কখন আমার মুখ থেকে উঁফ শব্দ বের হতে দেয়নি। বিয়ের পর ওর পরিবর্তনে আমি কষ্ট পেতাম তবে সন্দেহ আসতো না। ও ছিলো সচ্ছ কাঁচের মতো। আমি ভাবতাম বাব,মা ছিলো না একা বড় হয়েছে তাই বিগড়ে গেছে আমার ভালোবসা দিয়ে ওকে ঠিক আগলে নেবো। কথা বলছে আর হাঁটছে এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায়। শাফিনের বুকের উপর মিহি। আবছা আলোয় মিহির অস্পষ্ট চেহারা। শাফিনের হৃদযন্ত্র হঠাৎ মনে হয় বন্ধ হয়ে গেলো এমন অনূভুতি হচ্ছে।

মিহির কেমন অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে। আবছা আলোয় লোকটার চেহারা দেখার বৃথা চেষ্টা করছে। এমন সময় ঈশান মিহির হাত টেনে উঠিয়ে বলে, তুমি ঠিক আছো পারু?
দেখে হাঁটতে পারো না।
শাফিন উঠে দাঁড়ালো। শরির থেকে ধুলো ছাড়িয়ে এক শ্বাসে সরি বলে, হাঁটা ধরলো।
সরি শব্দটা মিহির কানে প্রতিধ্বনি তুলছে বারংবার। মিহি নিজের বুকে হাত রেখে বলে শাফিন।
ততক্ষণে শাফিন চলে গেছে। ঈশান বলে শাফিন। কোথায় শাফিন। মিহি শাফিন যেদিকে গেছে সেদিকে ছুটে যাচ্ছে। কিছু দূর যেতেই নিজের হাতে বাঁধা পেয়ে পিছু ফিরে বলে, হাত ছাড়ুন।

– কি পাগলামি শুরু করেছেন? শাফিন কোথা থেকে আসবে?
– শাফিন আসবে না এসেছিলো। ওই লোকটা শাফিন ছিলো। আমার শাফিন। আপনি প্লিজ ওকে খুঁজে নিয়ে আসুন প্লিজ।মিহির চোখের পানি দেখে ঈশান বলে, রিলাক্স মিস মিহি। শান্ত হোন। যদি ওই লোকটা সত্যি শাফিন হয়ে থাকে তাহলে আমি কথা দিচ্ছি তাকে খুঁজে বের করবো। আর এমনও তো হতে পারে লোকটা শাফিন নয়।
– না হতে পারে না। ওই শাফিন। আপনি আমার কথা বিশ্বাস কেন করছেন না।
– আচ্ছা বিশ্বাস করলাম এবার চলুন দিনের বেলায় খোঁজ করবো।

ঈশান গাড়ীতে বসে মিহির দিকে টিস্যু আর পানির বোতল এগিয়ে দিলো।
মিহি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে। কিছু পানি পান করলো। ঈশান কে উদ্দেশ্য করে বললো,আপনি কোনদিন কাউকে ভালোবাসেননি?
– হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– ভালোবাসলে বুঝতেন ভালোবাসা কি জিনিস।
জানেন…

“পৃথিবীতে ভালোবাসার মতো অন্যায় আর দ্বিতীয়টি নেই।এই অন্যায়ের শাস্তি মানসিক যন্ত্রণা।
না কাউকে দেখানো যায়,না নিজেকে বোঝানো যায়।
ঈশান, মিহির কথা শুনে বলে,বাপরেহহ এতো কঠিন কথা আমার মতো বাচ্চা ছেলের মাথায় ঢুকবে না।
মিহি ঈশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,আপনি বাচ্চা ছেলে!
– ওই আরকি প্রেমে, ভালোবাসার দিক থেকে বাচ্চা।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৩

মিহি ঈশানের কথা শুনে হেসে বলে, আপনি পারেন ও বটে সিরিয়াস মূহুর্তে হাসিয়ে দিলেন।
– যাক আমার জীবনে স্বার্থকতা আপনার মলিন মুখে হাসি ফুটাতে পারলমা, পারু।
– আপনি আমাকে পারু কেন বলছেন?
– ক্যারেক্টারে ঢুকে গেছি তাই।
শাফিন বাসায় এসে খাবারের প্যাকেট গুলো রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো। কেন অস্থির লাগছে। বারবার মনে হচ্ছে মেয়েটা মিহি ছিলো। কিন্তু……

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৫