ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩১

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩১
নুসাইবা ইভানা

গম্ভীর কন্ঠে পি*স্ত*ল তাক করে রাখা লোকটি বললো,বেঁচে থাকতে চাইলে আমার রাস্তা থেকে সরে যাও।
– আপনি আমাকে মারতে পারবেন না। আর ম*রা*র ভয় আমার নেই ও। সো ফাঁকা আওয়াজ দেয়া বন্ধ করে ভালোয় ভালোয় নিজেকে আইনের কাছে সমর্পণ করুন। আমি আপনার শাস্তি কিছুটা কম করার ব্যবস্থা করবো।

– তার মানে তুমি তোমার রাস্তা থেকে সরে আসবে না।
– না কোন দেশদ্রোহীর সাথে আপোস আমি করবো না।
– কোন কৃতজ্ঞতা নেই তোমার। তোমাকে তো আমি কম বিলাসিতা দেইনি।
– যদি জানতাম সেসব পাপের টাকায় তাহলে কোনদিন আপনার থেকে কানা কড়িও নিতাম না।
– এখন বড় বড় কথা বলছো ভুলে যাচ্ছ তোমার এই কথাও আমি শিখিয়েছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– যদি পারতাম তাহলে শুধু ভুলে যাওয়া নয় আপনার অস্তিত্ব আমার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতাম।
– এটাই তোমার শেষ কথা?
– হুম এটাই শেষ কথা আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ সংগ্রহ করে আপনাকে আইনের আওতায় এনে আপনার কৃতকর্মের শাস্তি দেয়া।
– তবে আজ ইতিহাস রচনা হবে। এক বাবার হাতে তার ছেলে খু*ন হওয়ার ইতিহাস। সরি মাইসন ইট’স ওভার। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে গু*লি আওয়াজ ছড়িয়ে পরলো।

ঈশান বাইক নিয়ে ফিরছে রাত শেষ হয়ে তখন নতুন ভোরের আলো ছড়িয়ে পরছে। গ্রামের সবুজ প্রকৃতিতে শিশির বিন্দু গুলো রোদের প্রথম আলোতে মুক্তর মতো চিকচিক করছে। কিছু নাম না জানা বুনো ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। ঈশান বাইক থামিয়ে সেসব উপভোগ করছে। রাস্তার এক পাশে নালার পানির দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হাত দিয়ে পানি থেকে নিজের ছায়া মুছে ফেললো।

পানির দিকে তাকিয়ে বলে,আমি এক হেরে যাওয়া যোদ্ধা। যার হৃদয় অন্যের প্রেয়সী। যার মস্তিষ্কে দায়িত্ব। মুচকি হেসে বলে,শাফিন তুই সব সময় জিতেযাস! নাকি প্রকৃতি তোকে জিতিয়ে দেয়? আমি তো শুধু মিহির প্রতি যাতে তোর কোন ভুল ধারণা না জন্মায় তাই শেহরোজ আর মিহিকে এভাবে উপস্থাপন করলাম। নয়ত ঈশান মুখার্জি ডায়রিতে কখন নিচু হওয়া নেই। আর রইলো যষ,খ্যাতি ঈশান মুখার্জি দেশের জন্য কাজ করে নামের জন্য নয়। নিজের প্রথম ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখতে নিজেকে না হয় একটু ছোট করলাম। তাতে কি বা এমন এসে যায়।

আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,আমি তোমাকে ভালোবাসি মিহি বড্ড ভালোবাসি। তার কথা প্রতিধ্বনি তুলছে যেনো প্রকৃতির মাঝে। ঈশান চোখ বন্ধ করে পাড় থেকে এক মুঠো,মাটি উঠিয়ে পানিতে ভাসিয়া দিয়ে বলে,তোমার প্রতি আমার সব বন্ধন মুক্ত করলাম।এই গঙ্গার চলে ভাসিয়ে দিলাম আমার ভালোবাসা। আজ থেকে আমার জীবন আমি উৎসর্গ করলাম মানুষের কল্যানে। সেখান থেকে উঠে এসে বাইক নিয়ে রওনা হলো।

দীর্ঘ এক বছর তিন মাস পরে নিজের মেয়েকে কাছে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা মিহির বাবা মা। মিহির বাবা রুবেল সাহেব মিহিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। স্থী বেগমও কাঁদছেন। লিরা পেছন থেকে বলে আন্টি আগে ওদের কিছু খেতে দিন। অনেকটা ক্লান্ত ওরা।
সাথাী বেগম খাবারের জন্য যাবে তার আগেই তার হুশে আসলো মিহির কোলের বাচ্চাটাকে?
সাথী বেগম বললেন হ্যাঁরে তোর কোলের বাচ্চাটা কার?

মিহি শেহরোজের কপালে চুমু দিয়ে বলে,তোমার নাতী। আমার আর শাফিনের একমাত্র সন্তান শেহরোজ।
সাথী বেগমের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ছুটে এসে মিহিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলে, তোর বড্ড কষ্ট হয়েছে তাইনারে মা।?তোর যখন আমাকে সবচেয়ে প্রয়োজন ছিলো তখন আমি তোর সাথে থাকতে পারিনি।

মিহি নিজের মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে,বলে কেঁদো না মান।সব ঠিক হয়ে যাবে। যাদের জন্য আমি আর আমার ছেলে আমার সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্তে আমার কাছের মানুষদের থেকে দূরে ছিলাম। তাদেরকে তোমার জামাই শাস্তি দেবেই।
লিরা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নত করে। মিহি শেজরোজকে খাইয়ে শেহরজোকে রুবেল সাহেবের কোলে দিলো। হুট করেই মিহির চোখ পরলো লিরার দিকে। মিহি লিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,লিরা তুমিও ফ্রেশ হও আসো এক সাথে খেতে বসি।

লিরা মিহির কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। যেই দৃষ্টিতে রয়েছে অপরাধ বোধ। রুবেল সাহেব শেহরোজকে কোলে নিয়ে বাহিরে চলে আসতেই লিরা মিহির সামনে এসে বলে,আমাে ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দে।
– তুই ক্ষমা চাওয়ার আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস এতেই আমি খুশী।

– এবার বুঝতে পারছি। সবাই তোর প্রতি মুগ্ধ হয কেন? আমি ভাবতাম তোর চেয়ে আমার গায়ের রং ফর্সা। তাও সবাই আমাকে রেখে তোকে কেন পছন্দ করে? আজ বুঝতে পারলাম তোর ভেতরের সৌন্দর্য তোর রুপের সৌন্দর্য কে সবার থেকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এতো বড় অন্যায় করার পরেও তুই কত সহজে আমাকে ক্ষমা করে দিলি।
এর মধ্যেই সাথী বেগম এসে বলে,অরেক তো কথা হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি আয় দেখি। কিছু মুখে দিয়ে নে।
মিহি আর লিরা দু’জনেই খেতে চলে গেলো।

নুহাসের লা*শে*র পাশে বসে আছে রমিজ রাজ। কি বিভৎস মৃত্যু। চোখ দু’টো কেউ তুলে ফেলেছে। হাত দু’টো কে*টে দিয়েছে।বুকের বা পাশ থেকে হৃদ পিন্ড বের করে নিয়েছে। প্রেস মিডিয়া দিয়ে ভরে গেছে রমিজ রাজের ফার্ম হাউস। পাশেই ধা*রা*লো ছু*ড়ি আর রক্তে মাখামাখি অবস্থা বসে আছে আয়রা। এক ধ্যানে নুহাসের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে।

রমিজ রাজ ভাবছে কাল রাতেই এম,কের সাথে কথা কা*টা*কা*টি করে এসেছিলো নুহাস। রিমজ রাজ এতো করে বলেছিলো, নুহাস এম,কের সাথে বাড়াবাড়ি করিস না। তবে কে শোনে কার কথা। নুহাস এম,কের এক টা ভিডিও ধারণ করেছিলো তার ফোনে আর আসার সময় বলে এসেছিলো,এবার দেখ আমি কি করি। তোকে পুলিশের কাছো ধরিয়ে দিয়ে আমি নিজেকে সাধু প্রমাণ করবো।সাহস কত একজন পুলিশকে মারার হু*ম*কি দেয়!
এম,কে তখন ঠান্ডা মাথায় বলেছিলো, আগামী দিনের সূর্যোদয় দেখলে তবেই না কিছু করবি।বলেই বিশ্রী ভাবে হেসে উঠলো।

নুহাস এম,কের রুমের চেয়ার উঠিয়ে কাঁচের দেয়ালে বাড়ি দিয়ে বলে,ভীতু কাপুরুষ সাহস থাকলে সামনে আয়? আড়ালে থেকে নিজেকে সিংহ ভাবছিস? ভুলো যাসনা যে বনে সিং*হ আছে সে বনে হিং*স্র বা*ঘও আছে।
রমিজ রাজ কোনমতে নুহাস টেনে নিয়ে আসে। নুহাস তখন রমিজ রাজকে বলে, এবার এই এম,কের খেল খতম করবো আমি। আর রইলো শাফিনের কথা ওকে যেমন আমি নিজের স্বার্থে বাঁচিয়ে রেখেছি। ঠিক নিজের স্বার্থে আবার মে*রেও দিতে পারব।

একজন সাংবাদিক রমিজ রাজের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো, একজন আসামি যার মানুষিক ভার সম্য ঠিক নেই। সে জেল থেকে কি ভাবে পালায়?
তাহলে কি আমরা ধরে নেবো আপনাদের গাফেলতির কারনে একজন অফিসার নির্মম ভাবে হ*ত্যা করা হলো।
রমিজ রাজ নিজেকে সংযত করে বলে,তাহলে আমাদের দ্বায়িত্ব আপনি পালন করুন দেখি কতটা নিখুঁত ভাবে করতে পারেন?

সাংবাদিক ক্যামের দিকে তাকিয়ে বলে,এতো বড় একটা দূর্ঘটনার পরেও তাদের গা’ছাড়া কথা বার্তা প্রমান করে তারা নিজেদের কাজে কতটুকু তাৎপর্যশীল।আপডেট নিউজ পেতে স্বদেশের সংবাদের সাথেই থাকুন।
রমিজ রাজের এই মূহুর্তে ইচ্ছে করছে নহাসকে জীবতে করে থাপ্পড় মা*র*তে। একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। রমিজ রাজ নুহাসের লা*শ মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বললো।একটা চেয়ার টেনে আয়রার সামনে বসলো, আয়রার হাত ততক্ষণে বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে জামা কাপড়ে র*ক্তে*র দাগ লেগেই আছে। রমিজ রাজ শান্ত কন্ঠে আয়রাকে বললো,তুমি এখানে কি করে আসলে?

আয়রা কোন উত্তর দিচ্ছে না মনে হচ্ছে সে নিজের মধ্যে নেই। রমিজ রাজ যা বোঝার বুঝে ফেলেছে।
দু’জন মহিলা কনস্টবলকে বললো,আয়রাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে। রমিজ রাজের কপারে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩০

আসসালামু আলাইকুম।গল্পের একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা। আর অল্প কিছু পর্ব বাকি আছে।তাই গল্প নিয়ে কোন কনফিউশান থাকলে জানিয়ে দেবেন। আমি শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবো।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩২