চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৪০
ইশরাত জাহান জেরিন
“ভালোবাসা কি গো নিশু?” রবিনের প্রশ্নটা নিস্তব্ধতা ভেদ করে নিশির কানে বাজে। গাড়ির জানালার বাইরে সময় গাঢ় হচ্ছে। বাতাসে ভেসে আসছে অজানা যাত্রার গন্ধ।
“অন্য কারো দুঃখ নিজের মতো করে অনুভব করা, আর তার সুখে নিজেকে হারিয়ে ফেলা।” নিশি উত্তর দেয় ধীরে। চোখ বুঁজে আছে তার। মাথা রবিনের কাঁধে। নিদ্রাভঙ্গ হওয়া ক্লান্ত মুখে কিছুটা প্রশান্তি।
রবিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আজ এক বছর ছুঁয়েছে। এই এক বছরে বহু স্বপ্ন বোনা হয়েছে, কাঁটা পেরোনো হয়েছে। আর আজ সেই স্বপ্নকেই বাস্তব করতে কোনো কিছু না ভেবেই প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে সে। খুলনার পরিচিত গণ্ডি পেরিয়ে অজানা কোনো গন্তব্যের পথে। রবিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর নিশি… সে অনেক আগেই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। কসমেটিকসের দোকানে কাজ করে সে। আজই তার বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষ আসার কথা ছিল। বিয়ের সাজে বসে থাকার আগে শেষবারের মতো চোখ তুলে তাকিয়ে ছিল আয়নায়। আর তাতেই ভেসে উঠেছিল রবিনের মুখ। সেই মুখ ছাড়া জীবনের কোনো অর্থ নেই এই বিশ্বাসেই সে পালিয়েছে।
“কই যাচ্ছি আমরা?”নিশির কণ্ঠে ক্লান্ত জিজ্ঞাসা।
“কিশোরগঞ্জ, নিকলী,”রবিন উত্তর দেয় নিঃসংশয় দৃঢ়তায়।
“ওখানে কে আছে?”
“বন্ধুর বাড়ি। সেখানেই বিয়েটা সেরে ফেলব। সব ঠিকঠাক কথা বলা আছে। তুমি দেখো, আমরা অনেক সুখী হবো।”
এক মুহূর্ত নীরবতা। নিশির কণ্ঠ এবার ভারী, দ্বিধাগ্রস্ত। “বাড়ির কথা মনে পড়ছে। বাবার এমনিতেই বুকে ব্যথা। আমার বোধহয় পালানোটা উচিত হয়নি…”
রবিন এবার স্নিগ্ধ গলায় বলল, “তুমি যা করেছো, সেটা ঠিকই করেছো। ওরা তোমাকে জোর করে এমন একজনের হাতে তুলে দিত, যার সঙ্গে তোমার যায় না।”
“তবুও…”নিশির কণ্ঠ ভেঙে আসে। “একবার তাদের আমাদের ভালোবাসার কথাটা বলা উচিত ছিল। হয়তো… হয়তো তারা বুঝত।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আর যদি না বুঝত?”রবিনের চোখে ক্ষীণ শঙ্কা “তাহলে তো আমাদের শেষ আশাটুকুও থাকত না। এখন যেটুকু আছে, সেটাকেই আগলে রাখতে হবে। তুমি দেখবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। আস্তে ধীরে…”
নিশি আর কথা বাড়ায় না। রবিনের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে। কিন্তু সেই চোখের অন্ধকারেও ভেসে ওঠে বাবার কাশির শব্দ, মায়ের অশ্রুসজল মুখ, আর ছোট ভাইয়ের হতভম্ব দৃষ্টি। চোখের কোণে যে জল গড়িয়ে পড়ে, তা শুধু ভয় বা অপরাধবোধ নয়। তা ভালোবাসার, বিসর্জনের, আর নারীর চিরন্তন আত্মসংঘাতের এক অব্যক্ত প্রতিফলন। এই মুহূর্তে নিশি জানে না তাদের গন্তব্যে কী অপেক্ষা করছে। সে শুধু জানে, ভালোবাসা বেছে নেওয়ার অপরাধে সে নিজের সবচেয়ে চেনা পৃথিবীটা হারিয়ে ফেলেছে।
নিরু সকাল থেকেই নিজেকে ঘরের চার দেয়ালে গুটিয়ে নিয়েছে। দরজা বন্ধ, বাতাস থমথমে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও তার কোনো সাড়া নেই। বুক ফাটানো কান্নার ভেতর লুকিয়ে আছে নির্মম সত্য। এই কান্না কেবল আবেগের নয়, এর গভীরে আছে ভয়াবহ সংকোচ ও আত্মদ্বন্দ্ব। ফুফাতো ভাই পিয়াস মির্জার সঙ্গে নিরুর বিয়ের কথা চলছে। সমাজ বলছেএটাই শোভন, গ্রহণযোগ্য। কিন্তু নিরুর হৃদয়? সে কী করে তার ভাইকে জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নেবে? পিয়াসকে সে কোনোদিনও ওমন চোখে দেখেনি।
ভালোবেসে যে একজনকে মন দিয়েছিল সে সেই ফারাজ ভাই তো কবেই নিরুর হাতছাড়া। তবুও মন যে তাকে ভুলতে পারছে না। নিরু চোখ বন্ধ করলেই নিশ্বাস আটকে আসে। বুকটা চেপে ধরে অদৃশ্য শিকল। হঠাৎ দরজায় টোকা পরে।
“নিরু, দরজা খুলো,”মোহনার কণ্ঠস্বর দরজার ওপাশ থেকে ভেসে আসে। নিরু চোখের জল মুছে নির্ভুল নিঃশব্দে দরজার দিকে তাকায়।
“এই নিরু! বোন, না ভালো দরজা খুলো।”
দরজা খুলতেই মোহনার মুখটা দেখা যায়। শান্ত, সুন্দর মুখ অথচ চোখে স্পষ্ট উদ্বেগ।
“ভাত খাবে না? নিচে চলো,”মোহনা মৃদু কণ্ঠে বলে।
“না ভাবী, খিদে নেই।”
মোহনা ঘরে ঢুকে, ধীরে খাটে বসে। তার কণ্ঠে এবার আত্মসমর্পণের সুর, “তোমার ভাগ্যে নিরু, যা লেখা আছে তা কেউ মুছতে পারবে না। যার সঙ্গে জোড়া লেখা, তাকেই বরণ করে নিতে হয়। আমিও একসময় ভেবেছিলাম আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো ভালোবাসাকে আঁকড়ে রাখা যেত। কিন্তু এখন বুঝছি, চাইলেই সব পাওয়া যায় না। নিয়তির রূপরেখা আমাদের হাতের বাইরে।”
নিরু মোহনাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
মোহনার হাতের স্পর্শে নিরুর ভেতরকার যন্ত্রণা একটু নরম হয়। “পিয়াস খারাপ ছেলে না নিরু। অন্তত, সে পাপী নয়। তাকে বিয়ে করলে তোমার গা থেকেও পাপীর ছায়া মুছে যাবে। এলাহী বাড়ির মেয়ে হয়েও তুমি সত্যিই ভাগ্যবান। তুমি পাপের রাজ্য থেকে পালাতে পারবে, মুক্তির স্বাদ নিতে পারবে। অথচ আমরা? আমি, নদী ভাবী, আর এখন চিত্রাও। আমরা কেউ পাপী ছিলাম না। তবু পাপীদের ছায়ায় জীবন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ নিজেদের অজান্তেই সেই পাপের অংশ হয়ে যাচ্ছি।”
নিরু স্তব্ধ হয়ে যায়। তার চোখে একরাশ বিস্ময়, অনুশোচনা, আর কুয়াশায় ঢাকা ভবিষ্যতের ভয়।
“এখনও সময় আছে, নিরু।”।মোহনার কণ্ঠ এবার অনুরোধমিশ্রিত দৃঢ়তায় থরে থরে কাঁপে,
“চলে যাও, বাঁচো। এই দুনিয়া নারীদের কাছে কেবল বেদনার নামান্তর। এখানে তাদের নেই মর্যাদা, নেই নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ। ফারাজ যদি সত্যিই তোমায় ভালোবাসত, তাহলে সে তোমার কাছে থাকত, তোমার হাত ধরত। এখন তার সুখে থাকার মানে এই নয় যে তোমাকে কষ্টে ডুবে থাকতে হবে। তার থেকেও বেশি সুখী হতে হবে তোমাকে। ফারাজ সুখে আছে তোমাকেও সুখ খুঁজে সুখী হতেই হবে নিরু। এই পৃথিবীতে কাঁদলে কিছু পাওয়া যায় না। সবটাই গড়ে নিতে হয়,লড়ে নিতে হয়।”
নিরু চোখ মুছে নেয়। ঠোঁটে কোনো শব্দ নেই, চোখে কেবল এক অপ্রকাশ্য প্রশ্ন, “নারীদের সব অভিমান, সব ভালোবাসার শেষ গন্তব্য কি তবে শুধুই আত্মবিসর্জনের মধ্য দিয়ে অন্য এক পুরুষকে বরণ করায় সীমাবদ্ধ?”
ফারাজ ইতিমধ্যেই একটি পদ রান্না শেষ করেছে। চুলায় আরেকটি রান্না হচ্ছে। আর সবশেষে থাকবে একমাত্র চিত্রার জন্য প্রস্তুত বিশেষ মিষ্টান্ন। চিত্রা এখনও তার পাশেই দাঁড়িয়ে। আপেলের কামড়ে কামড়ে রান্নার দৃশ্য দেখছে। মনে তার একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এই লোকটা কি জীবনে কখনো বাবুর্চি ছিল? এত নিখুঁত রান্না সে কোথায় শিখেছে? মানুষের দক্ষতার তো একটা সীমা থাকে। একটা মানুষ এত নিখুঁত কি করে হতে পারে?”
“এই আজাইরা, রান্নাঘরে এসি নেই কেন?” বিরক্তির ভঙ্গিতে বলে উঠল ফারাজ।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে এক চিলতে ভেংচি কাটে, “কারণ এটা রান্নাঘর, আপনার বেডরুম না।”
ফারাজ হেসে উঠে, “আহা, বউ দেখি পাকেছো একেবারে। এখন তো আবার বরের মুখে মুখে তর্কও করো?”
“পাকিয়েছেন তো আপনি নিজেই।”
“নাউজুবিল্লাহ! আমি তো আলাভোলা মানুষ। ভাজা মাছ কীভাবে উলটে খেতে হয় সেটাও জানি না।”
চিত্রা কপট বিস্ময়ে বলে, “ওরে বাবা… থাক, আমি আপনাকে মাছ উলটে খাইয়ে দেবো।”
চুলায় রান্না ফেলে রেখে ফারাজ চিত্রাকে টেনে নেয় নিজের খুব কাছাকাছি। চোখে দুষ্টু হাসির ছটা। “শুধু মাছই খাওয়াবে?”
চিত্রা লাজুক হেসে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, “ফারাজ, আমাকে ছাড়ুন… রান্না পুড়ে যাবে।”
“রান্না যাক চুলায়। আগে উত্তর দাও আমার প্রশ্নের।”
“না দিলে?”
“আদায় করে নেব।”
“আপনি আদায় করতে জানেন?”
“খুব ভালো করেই।”
“ভয় করছে কিন্তু …”
“আরো করবে।”
“সত্যি?”
“উঁহু, মিথ্যা।”
চিত্রা আর কিছু বলার আগেই ফারাজ হঠাৎ চিত্রার কোমল দেহটাকে কোলে তুলে কিচেন টপে বসিয়ে দেয়। তার চোখে তখন কেমন একটা অমোঘ টান, ঠোঁট ছুঁয়ে যায় ঠোঁটে। সময় সেখানে থমকে দাঁড়ায়। পরশে শরীর কেঁপে ওঠে। আবেগের তরঙ্গে মুহূর্তটা ভেসে যায়। কিন্তু হঠাৎই সমস্ত আবেশ ভেঙে যায় চিত্রার আতঙ্কিত চিৎকারে,
“আরে রান্না!”
ফারাজ হুট করে ঘোর থেকে জেগে উঠে। তড়িঘড়ি করে চুলার দিকে ছুটে যায়। মশলার গন্ধ এখন পুড়ে যাওয়া কালচে ধোঁয়ায় রূপ নিয়েছে। আশ্চর্য, তারা তো ঠিক সামনেই ছিল, তবু এতক্ষণে কেন কেউ টের পেল না? চুলা বন্ধ করে ফারাজ এক দৃষ্টিতে পোড়া কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ তার ঠোঁটে একটা নিঃশব্দ হাসি খেলে যায়। মনে মনে নিজেকেই বলে, “ফারাজ, তুই নিজেরই পাতানো ফাঁদে নিজেই ধরা পড়েছিস।”
অভ্র বারান্দার রকিং চেয়ারে বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। মেঘে ঢাকা সেই গাঢ় কালো আকাশ যেন নিজের ভেতরেই গুমরে ওঠা নীরব দীর্ঘশ্বাস। এই শহর, এর কোলাহল, এর মানুষ সবাই কাউকে না কাউকে মনে রাখবে। কারো স্মৃতিতে হয়তো ঝরে পড়বে কিছু ভালোবাসা, কিছু কান্না, কিছু না বলা কথা। অথচ অভ্র? সে কি থাকবে কোনো স্মৃতির কোণে? গল্পের পাতায় হয়তো তার নাম থাকবে কিন্তু জীবনের গল্প পড়ুয়া পাঠক গুলো হয়তো তাকে মনে রাখবে না। পাঠকের অন্য সব চরিত্রের জন্য চোখ ভিজবে, বুক কাঁপবে, হাহাকার উঠবে। কিন্তু কেউ কি একবারের জন্যও অভ্রনীল সরকারের গল্প শুনতে চাইবে? তার হাসিমুখের আড়ালে লুকানো অতীত কেউ কি জানতে চাইবে? আকাশের দিকে তাকিয়ে সে একটুকরো আহত নিঃশ্বাস নিংড়ে বলে ওঠে,
❝নিজেই বুঝি না মনের কথা,
কারে বুঝাই এই ব্যাকুলতা;
মন করে মোর অবাধ্যতা,
কে জানে তার কিসের শূন্যতা!❞
এই শূন্যতা কিসের? একরাশ অদৃশ্য বেদনা তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে রোজ। যার কোনো নাম নেই, কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই, তবু আছে। দিনের শেষে, যখন সবাই নিজ নিজ আশ্রয়ে ফেরে, অভ্রর ও খুব করে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় আপন আশ্রয়। কিন্তু সেই ভাগ্য কি তার আছে? নিজেকে সে খুঁজে পায় না কোথাও। শুধু অন্যের গল্পে, অন্যের প্রয়োজনেই তার অস্তিত্ব।
জীবন কেন এত স্বার্থপর? এত কষ্ট দিয়ে কেন সে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে দেয়, অভ্রর মতো মানুষদের কেউ চায় না?
রাতের কথা মনে পড়ে তার। কেমন করে যেন স্পষ্ট হতে থাকে কাল রাতের কথা। কি ভেবে যেম সে রাতে মদে ঠোঁট ছোঁয়েছিল। কারন অভ্র নিজেই জানে না। অথচ জানে, সে এসব পছন্দ করে না। তেতো স্বাদে তার গলা জ্বলে, বুক ধড়ফড় করে। তবু পান করেছিল। হয়তো ভিতরের দহনকে থামাতে। নাকি জমে থাকা কথাগুলোকে নিঃশব্দে নিঃশেষ করার চেষ্টা ছিল সেটা? রাতে নেশার ঘোরে আয়েশার পায়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল সে।ভুলেও কিংবা নেশায় কে জানে!
অভ্র তো সিগারেটও ছোঁয় না। কারো শরীর ছুঁয়ে থাকার জন্য তার মন কাঁদে না। আত্মনিয়ন্ত্রণে সে অভ্যস্ত, নীতির বাঁধনে বাঁধা এক মানুষ। তবু কই, কেউ তো তাকে ‘আদর্শ পুরুষ বললো না? এই সমাজ কি শুধুই মুখোশ দেখে, না কি তারা আদর্শের সংজ্ঞাটাই ভুলে গেছে? ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক হয়তো। পাপীদের আবার আদর্শতা! বড্ড হাসি পায় অভ্রর। তবুও অভ্র চুপ থাকে। রকিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে সে একা কথা বলে, নিজের সাথে।
নিজের ভেতরে হেঁটে চলে, এক গভীর নিঃসঙ্গতার পথ ধরে।
“আসবো?”দ্বিধাজড়ানো কণ্ঠে আয়েশা জিজ্ঞেস করে।
অভ্রর রুমের দরজাটি হালকা খোলা। অভ্র চোখের ইশারায় আয়েশাকে ভেতরে আসতে বলে। আয়েশা ধীরে পা ফেলে বারান্দায় আসে। আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। আয়েশার চুল খোঁপা করে বাঁধা। গায়ের ওরনা উড়ছে। পেছন থেকে অভ্র তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর শান্ত স্বরে বলে ওঠে,
“খোলা চুলে তোমায় বেশি মানায়।”
আয়েশা বিস্মিত হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। চোখে-মুখে জিজ্ঞাসা, “কেউ তো কোনোদিন কিছু বলেনি। বুঝবো কী করে?”
অভ্র হাসে না বরং দৃঢ়স্বরে বলে, “আজ আমি বলে দিলাম। কথাটা হৃদয়ের এক কোণে তুলে রাখো
ভুলে যেও না।”
আয়েশা খানিকটা চমকায়। অভ্রর চিরচেনা বিতর্কপ্রিয়তা আজ নিখোঁজ। গায়ের ওপর ঝগড়ার অভিযোগ নেই, কটাক্ষের চিহ্নটুকু পর্যন্ত অনুপস্থিত।
এই অভ্র কে? এতটা শান্ত, এতটা সরল। আজ যেন কেউ তাকে ছুঁয়ে দিয়েছে ভেতর থেকে। আয়েশা অভ্রর উজ্জ্বল মুখপানের কিছুক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
“ঝগড়া করো আমার সঙ্গে সরকার ভই। এভাবে গোমড়ামুখো হয়ে বসে থাকলে কি তোমাকে মানায়?”
অভ্র মুচকি হেসে বলে, “বিকেলে ঘুরতে যাবে? চলো না দূর অজানায় হারাই।”
ডাইনিং টেবিলে আগেভাগেই বসে আছে বজ্র আর অভ্র। থালা-বাসন গুছিয়ে চেয়ারে ঠেস দিয়ে অপেক্ষা করছে তারা। চিত্রা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে হতেই বজ্র তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরমুহূর্তে চোখ সরিয়ে ফেলে। চিত্রা কাছে গিয়ে বজ্রের প্লেটে ভাত তুলে দেয়। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে, “আগে মাছ দিবো নাকি মাংস?”
বজ্র গলায় খানিকটা খোঁচা মিশিয়ে বলে,”আমি মাছ খাই না। জানা নেই?”
চিত্রা বজ্রের কথায় ভ্রু কুঁচকে বজ্রের দিলে তাকিতেই বজ্র সংযত হয়ে বলে, “ভাবী আমি মাছ খাই না। মাংস দেন।”
চিত্রা মাথা নাড়ে, “আচ্ছা।”
গোসল সেরে ফারাজ আসে টেবিলের দিকে। সোজা এসে বসে পড়ে। চোখ প্রথমেই পড়ে বজ্রর ওপর। কনুই পর্যন্ত হাতা গুটিয়ে রেখে বলে ওঠে,
“ওহে বজ্রপাত ডু ইউ নো? নিচ তলার ভাড়াটিয়াদের যে ওপর তলার ভাড়াটিয়াদের পিরিত দেখতে নেই। মুরব্বিদের নিষেধ আছে। অন্যের রোমান্স দেখে নিজের কুরকরানি না উঠিয়ে আমাদের জন্য একটা ভাবী আনলেই তো পারো।”
বজ্র থম মেরে যায়। চোখ যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। সকালে বারান্দায় দাঁড়ানো চিত্রা ফারাজের ওপর দৃষ্টিপাত ফারাজের নজর এড়ায়নি। বজ্র বুজতে পারে ফারাজের নজর এড়িয়ে কিছু হয় না আর সেটা এখন স্পষ্ট।
চিত্রা ফারাজের দিকে তাকায়, অসহায় বিরক্তিতে। এ লোকটাকে সে কবে বুঝবে? চিত্রার গায়ে আকাশি রঙের কামিজ। সেও সদ্য গোসল করে এসেছে, চুল এখনও ভেজা। ফারাজ চোখ বুলিয়ে নেয় একবারে মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত। বুকের উপর হাত রেখে হালকা ব্যথা অনুভব করে বলে,
“বউ, তুই আমাকে না মেরে ছাড়বি না মনে হয়।”
চিত্রা হকচকিয়ে যায়। “হায় আল্লাহ কি বলছেন?”
“জানি নারে বউ। তবে চোখের সামনে এত সুস্বাদু খাবার দেখে তোর বরের ক্ষুধা যে চৌদ্দগুন বেড়ে গেছে।”
বজ্র এবার আর সহ্য করতে না পেরে ফারাজের দিকে তাকায়। বজ্র চুপচাপ বসে আছে। মুখে কিছু তুলছে না। শুধু হাত দিয়ে ভাতে আলতো করে ঘষে যাচ্ছে। তার চোখে কিছু একটা আছে। তীক্ষ্ণ, তীব্র। তবে ফারাজের সেদিকে খেয়াল নেই।
হঠাৎ অভ্র নিজের প্লেট চিত্রার দিকে বাড়িয়ে দেয়,
“ভাবী, হেব্বি ক্ষুধা লাগছে। জলদি দেন, তৃপ্তি করে খাই।”
চিত্রা হেসে জবাব দেয়,”খাবার তো আপনাদের জন্যই রাঁধা। সবাই মিলে তৃপ্তি করে খেলেই তো আমি খুশি।”
মুহুর্তে ফারাজ অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” হোপ কুদ্দুসের বাপ। সব খাবার সবার জন্য না। সব খাবার সবাই খেলে পেট ছুটে। আমার খাবারের ওপর যে নজর দিবে তার পেছন দিয়ে মান্দার গাছ ঢুকাবো।”
অভ্রর গলায় খাবার আটকে যায়। কাশতে কাশতে সে চুপ করে যায়। চিত্রা বিরক্ত চোখে ফারাজের দিকে তাকায়, “সব সময় উনার সঙ্গে কেনো যে এমন করেন?”
“তুমি মাথা মোটা আবুলের নাতনি খাওয়া শেষে রুমে যেও। কোন খাবার কাকে খাওয়াতে হয় তার ক্লাস নিবো আজকে।”ফারাজ গম্ভীর গলায় জবাব দেয়।
সোহাগের আজ ভীষণ খারাপ লাগছে। জান্নাতের সঙ্গে সে আর কতটা অবিচার করবে? মেয়েটা এক বুক বিশ্বাস আর স্বপ্ন নিয়ে তার জীবনে এসেছে অথচ সে তাকে অবহেলায় ফেলে রেখেছে। এটা কি ঠিক হচ্ছে? বারবার নিজের ভিতরে প্রশ্ন জাগে, কিন্তু কোনো উত্তর মেলে না। মনের ঘরে জান্নাতের জন্য জায়গা হয়তো আর এই ইহকালে হবে না। সে বিশ্বাস জন্মে গেছে। পরকালের হিসাব পরে হবে, এখন এই জীবনটাই তো বোঝা। সোহাগের একটা দোকান আছে, বলতে গেলে সেটা তার বাবার পুরনো দোকান। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে দোকানে বসত সে। বাবার আকস্মিক দুর্ঘটনার পর থেকেই দোকানটা সোহাগ সামলায়। মাহাদী কখনও এতে আপত্তি করেনি। কিন্তু ইদানীং মাহাদীর ব্যবহার পাল্টে গেছে। একসময় যে ভাই সোহাগকে না খাইয়ে একা খেত না সেই মাহাদী এখন কেমন অচেনা হয়ে গেছে। আসলেই অভাব মানুষকে বদলে দেয়।
হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে, বলা হয়েছে বাবা আগের চেয়ে সুস্থ। সোহাগ ঠিক করেছে পুরো পরিবারকে নিয়ে যাবে দেখতে। কিন্তু মায়ের তেমন আগ্রহ নেই। এমনকি বাবার প্রতি একধরনের বিরক্তি ও অবহেলা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব ভাবলে সোহাগের মনটা ভার হয়ে আসে। মায়ের ব্যবহারে অনেকেই প্রশ্ন তোলে, কিন্তু সোহাগ জানে—এই কঠোরতা, এই রুক্ষতা জন্মেছে অভাবের ধারাবাহিক আঘাতে। বাবার দূর্ঘটনার পর চিকিৎসার কারনে মা নিজের সব গহনা বিক্রি করে দেয়। যতটুকু জমি ছিল তাও হাত ছাড়া হয়েছে। চিকিৎসায় তো কোনো ফল পাওয়ায়ই গেলো না উল্টো দিনকে দিন ঋণের বোজা বাড়তে থাকল। ঋণ শোধ করতে মা সেলাইয়ের কাজ ধরেছিলেন। কত মানুষের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয়েছে তাকে। সেইসব স্মৃতি আজও সোহাগের মনে দগদগে ঘায়ের মতো জ্বলতে থাকে। সেই অসহায় দিনগুলো, মরিচ চটকে পান্তা খাওয়া রাতগুলো আজও তার বুক কেঁপে ওঠায়। তবুও, ভুল হয়েছে। চিত্রার সঙ্গে অন্যায় করেছে মা। কিন্তু চিত্রার প্রতি অন্যায় যে তার জীবনের একমাত্র অন্যায় নয়। সোহাগের জীবনেও তো বহু অন্যায় হয়েছে, অবিচার হয়েছে। সে কথা তো কেউ ভাবে না। সেইসব ভাবনা মাথায় নিয়ে সোহাগ এসে দাঁড়ায় জান্নাতের দরজায়। ভেতরে মারিয়া কাঁথা সেলাই করছিল। সোহাগকে দেখে মাথায় ওড়না টেনে নেয়। ভেতরে আসতে বলে। ঘরে ঢুকেই সোহাগের নাকে পঁচা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ লাগে।বৃষ্টির পানি হয়তো কোথাও জমে আছে, দেয়ালের প্লাস্টারও উঠে গেছে। সোহাগ বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করে,
“ভাবী, ভাই কই?”
“কাজে গেছে।”
“ইদানীং রাতে তেমন দেখা যায় না। কী কাজ করে? আগে তো সন্ধ্যা হলেই ফিরত।”
“আগেরটা ছেড়ে দিছে। এখন নাইট ডিউটি করে।”
“ওহ, ভাই তো বললো না কিছু।”
“হয়তো বলার সময় পায় নি।”
সোহাগ হালকা গলায় বলে, “বাজারে যাবো ভাবী। আপনি ঠিক আছেন তো? কেমন যেন অসুস্থ দেখাচ্ছে। কিছু খাবেন? আনবো?”
মারিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কিছুদিন ধরে শরীর ভালো যাচ্ছে না। খাওয়ার পরপরই বমি আসে, মাথা ধরে থাকে, কিছুই ভালো লাগে না। মাহাদীকে কিছু জানায়নি, চিন্তা করবে বলে।
“না ভাই, ঠিক আছি।”
সোহাগ সন্দেহ করে, “মনে তো হয় না। আমরা যখন হাসপাতালে যাবো বাবারে দেখতে, তখন আপনার একটা চেকআপ করাবো।”
“কী দরকার ভাই এসবের? হাতে টাকা থাকলে জান্নাতরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেও। মেয়েটার বয়স কম, এই সময়টাই তো তার ঘোরাঘুরির। সারাদিন ঘরে বসে থাকে, মন কেমন করে না?”
সোহাগ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর মৃদু হেসে বলে, “আচ্ছা, তবে আপনার বাহানা আর চলবে না। ডাক্তার দেখাতে হবেই।”
“রাতে কল দিয়েছিলাম ধরো নি কেনো চুনাপাখি কুদ্দুসকে জন্ম না দেওয়া পিতা।” ফারাজ ভাত চিবোতে চিবোতে বলল।
অভ্র ঠিক তখনই মাছের একটা টুকরো মুখে তুলেছিল। কথাটা শোনামাত্রই কাশিতে গলা ধরে যায়। গলায় মাছ আটকে যায়। চোখ মুখ লাল হয়ে ওঠে। পাশে দাড়িয়ে থাকা আয়েশা তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। রাতের ঘটনাটা তা সে কী করে ফারাজ ভাইকে জানাবে? কোনোভাবেই না। এখনও তো ‘ইজ্জত’ বলে একটা শব্দ সমাজে টিকে আছে। এভাবে সেটাকে ডুবিয়ে দেওয়া যাবে না।
ফারাজ চোখ সরু করে বলে, “আস্তে গিলো। কী এমন অকাজ করেছো রাতে যে নাম নিতেই গলায় মাছ আটকে গিয়েছে?”
অভ্র হেঁচকি সামলে বলে, “আরে না ভাই, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম… আগেই।”
আয়েশা লজ্জা আর ভয়ে চুপ করে থাকে। ওর কণ্ঠে কোনো শব্দ নেই, মুখটা আরও নিচু। বজ্র কিছুতেই এসব পাত্তা দিচ্ছে না। সে খাওয়ায় ব্যস্ত। যদি পারত, কানে তুলা গুঁজে ফেলত যেন কোনো কিছুরই শব্দ না শুনতে হয়। ফারাজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“সত্যি?”
“হ…হ্যাঁ।”
ফারাজ ঠাণ্ডা গলায় বলে, “মেয়ে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকেছো ভালো ঘুমই তো হওয়ার কথা। তাই না?”
অভ্রর হেঁচকি আবার ওঠে। মাথায় হাত রাখে। সে কেন ভুলে যায়, ফারাজের নজর বাজপাখির মতো? তার সামনে মিথ্যা বলা মানেই নিজেই নিজের কবর খোঁড়া। নিশ্চয়ই গার্ডের মুখে কিংবা ক্যামেরার ফুটেজে ফারাজ সব দেখেছে। খাওয়া শেষে ফারাজ আয়েশাকে ইশারায় ফ্রিজ থেকে ডেজার্ট আনতে বলে। সেটা তার নিজের হাতে বানানো, শুধু চিত্রার জন্য। ডেজার্টের রঙ, গন্ধ সবই লোভনীয়। চিত্রার যদিও মিষ্টি পছন্দ নয়, তবুও দেখে তার খেতে ইচ্ছে করে। এত যত্নে বানানো, এত আকর্ষণীয়, যেন চিত্রার নাম ধরে ডাকছে। এদিকে বজ্র খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেছে। ঘুম তার প্রয়োজন।
আয়েশা ফ্রিজ থেকে কাঁচের বাটিতে রাখা ডেজার্ট নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছিল। ঠিক তখনই ওর ঝুলন্ত ওড়না পায়ের নিচে পড়ে যায়। সে হোঁচট খেয়ে সোজা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। বাটিভর্তি ডেজার্ট মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁচ চূর্ণ হয়ে যায়। চিত্রা দৌড়ে গিয়ে আয়েশাকে ধরে তোলে। মুখে চিন্তার ছাপ। চোখে উদ্বেগ। আয়েশা ভয় করছে। এই ডেজার্ট ফারাজ যত্ন নিয়ে বানিয়েছিল। সে তো সব নষ্ট করে দিলো এখন কি হবে তার? ফারাজ কয়েক মুহূর্ত নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে। তার দৃষ্টিতে জমে থাকা ক্রোধ মেঝেতে ছড়িয়ে পড়া ডেজার্টের দিকে ধেয়ে যায়। চোয়াল শক্ত হয়। কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁট কাঁপে, কিন্তু চিত্রার উদ্বিগ্ন মুখটা চোখে পড়তেই শব্দগুলো থেমে যায়। গভীর নিঃশ্বাস ফেলে সে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় অভ্রকে বলে যায়,
“রুমে আয় জলদি।”
লঞ্চের সংকীর্ণ ক্যাবিনের ভেতরে নিঃসাড়ে পড়ে আছে জোহান। বিকেলের রোদ জানালার ফাঁক গলে মেঝেতে লম্বা ছায়া ফেলেছে। ঘরের বাতাস ভারী।
হঠাৎ দরজায় একের পর এক জোরালো করাঘাত। বিরক্তির রেখা গাঢ় হয়ে উঠল জোহানের কপালে। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল সে। পেশীবহুল বুকখোলা গায়ে ঘাম টলটল করছে। দরজার চেইন খুলে যখন বাইরে তাকাল। তার চোখে তখনও রাতের হিংস্র ছায়া ভাসছে। রাতের কিছু খণ্ডচিত্র তার মনে ফিরেফিরে আসছে। কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। মনে পড়ছে মিতালির আর্তনাদের কথা। তার অর্ধনগ্ন শরীরের ওপর চেপে ধরা লোহাটার তাপে মেয়েটার চামড়া ফুটে উঠেছিল। ছটফট করতে থাকা সেই শরীর, আর্ত চিৎকার জোহানের চোখে বিকৃত সুখের চিত্রপট হয়ে এখনও গেঁথে আছে। জোহানের চিত্রার কথা মনে পড়ে। প্রতিটি রাতে স্বপ্নে সে চিত্রাকে দেখে। ফারাজকে সরিয়ে দিতে হবে। এই বিশ্বাস নিয়ে দিন কাটাচ্ছে সে। চিত্রাকে শুধু ভোগ নয়, তাকে ভালোবাসবে সে আবার সেই ভালোবাসার মোড়কে ভয়াবহ শাস্তিও দিবে। আচ্ছা চিত্রার দুধেআলতা ফর্সা শরীরে আঘাত করলে সেই ব্যথায় সে কি চিৎকার করে উঠবে? গায়ে বসে যাওয়া দাগে তাকে কেমন লাগবে? ভাবতে ভাবতেই জোহান দরজা খুলে দেয়। তার রুক্ষ এলোমেলো চুল গুলো কপালের সামনে পড়ে আছে। হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করে নেয় সে। এককাপ চায়ের দরকার। শরীর ভীষণ ব্যাথা করছে। জোহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আধবোজা চোখে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “কিরে, কি চাই?”
চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৩৯
ছেলেটা কাঁধ নুইয়ে বলল, “ভাই, আপনারে শীগগির ডাকছে।”
“কোন ভাই?” জোহান গলায় তীক্ষ্ণতা আনে।
“সোহান ভাই। সোহান পালোয়ান।”