চিত্রাঙ্গনা শেষ পর্ব
ইশরাত জাহান জেরিন
ফারাজ অতীত থেকে ফিরে এসে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চোখে তার জল। কেবল তার একার চোখে জল নেই। তার জীবনের এই গল্প শুনে চিত্রার চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ছে। সেই জল থামছে না। এই যে মানুষটা চিত্রাকে এতবার মারার চেষ্টা করল। ইতালিতে বড় হয়ে নাম দিল ডেনমার্কে ব্যবসা করে। যদিও সেখানে ব্যবসা আছে। তবুও এই যে সুলেমান এলাহী আর রুমানাকে নিজের বাবা-মা বানিয়ে চিত্রাকে বোকা বানালো। স্মাগলার হয়ে কত কি বলল। মানুষ খুনকে খেলা মনে করে খেলল। তবুও চিত্রার একটু রাগ হচ্ছে না। তার বাবা-মায়ের খুনীর ওপর সত্যিই একটুও রাগ করতে ইচ্ছে করছে না।
কষ্ট লাগছে, অনেক মায়া হচ্ছে মানুষটার জন্য। তার অতীতের জন্য। মানুষটা খারাপ ছিল কি? তাকে তার পরিস্থিতি খারাপ বানিয়েছে। মানুষটা খারাপ হলে কি দেশ-বিদেশে এতগুলো আশ্রম চালাতো? যেই মানুষগুলোর দুনিয়া দেখার জন্য চোখ নেই তাদেরকে চোখ দান করত? চিকিৎসা করাত? মানুষের এক পাতায় খারাপ দিক থাকলে অন্য পাতায় থাকে ভালো দিক। এখন জনগনের ইচ্ছে। তারা খারাপটা পড়বে নাকি ভালো। মানুষটা কেবল চিত্রাকে ভালোবাসে বিধায় না জানি কত রাত নিজেকে কষ্ট দিয়েছে। কত রাত একা যন্ত্রণা সহ্য করেছে। ভেতরে কষ্ট চাপা দিয়ে চিত্রাকে বলেছে ভালো আছি। হায়রে পুরুষ মানুষ। তবে চিত্রাকে খুন করতে বুঝি এত আয়োজনের দরকার ছিল? মুখে বললে চিত্রা তার মৃত্যু সপে দিত ফারাজের পদতলে। চিত্রা কি করে ফারাজকে বোঝাবে, বুঝিয়ে বলবে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘তার তীক্ষ্ণ চাহুনি ছিল
আমায় খুনের প্রথম অস্ত্র।’
যে প্রথম চাহুনি দিয়েই চিত্রাকে ভেতর ভেতর ভালোবাসা দিয়ে খুন করেছিল তার কি এত অস্ত্র ব্যবহার, এত পরিকল্পনা করার দরকার ছিল?
ফারাজের সম্পর্কে একসঙ্গে এত কিছু জেনেও কেমন যেন শেষ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। মানুষটা তাকে ভালোবাসে কিন্তু তবুও সে খুনী, তবুও সে তার পরিবারকে হত্যা করেছে। চিত্রার সারা শরীরে রক্ত লেগে আছে। রক্তের গন্ধে বমি আসছে। এসব কি দুঃস্বপ্ন? তাই যেন হয়। এত কিছু একেবারে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একদমই না। এমন অসুস্থ জীবন চিত্রা চায়নি কখনো। ফারাজ চিত্রাকে তুলতে চাইলে চিত্রা ছিটকে দূরে সরে যায়। ফারাজ কেবল এমন একটা মুহূর্ত যেন কখনো জীবনে না আসে তাই তো এত কিছু করেছে। এক মুহূর্তে ধরনী তার সম্মুখে ফিকে হয়ে গেল। ফারাজ কাঁপা গলায় বলল, ‘আমি তো তোমায় আগুনে পুড়িয়েছি বিবিজান। এই পাপের শাস্তি কী?’
চিত্রা একটা ঢোক গিলে ক্লান্ত দৃষ্টিতে ফারাজের দিকে চেয়ে বলল, ‘আপনি আমায় আগুনে পুড়াননি, পুড়িয়েছেন ভালোবাসায়।’
চিত্রা চুপ করে রইল। ফারাজ কিছুক্ষণ পর পুনরায় বলল, ‘এখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। তোমার নীরবতা আমাকে খুন করে ফেলছে, চিত্রা।’
‘আপনি তো বেঁচেই থাকতে চান না, তাই না?’
‘হয়তো…কিন্তু এইভাবে মরতেও চাইনি—তোমার চোখে ঘৃণারপাত্র হয়ে।’
‘ঘৃণা তো তাকে করা যায়, যাকে কখনো মন ভালোই বাসেনি। আপনাকে কি করে ঘৃণা করি ফারাজ এলাহী?’
ফারাজ চিত্রাকে স্পর্শ করতে গেলে সে পুনরায় সরে যায়। এ কেমন যন্ত্রণা?
‘ছুবেন না আমায়। আপনার অতীত ভয়ানক তবে তার চেয়েও ভয়ানক আপনি নিজে। আপনার মতো পাপীর অধিকার নেই আমাকে ছোঁয়ার।’
‘চি…ত্রাঙ্গনা!’
চিত্রা হঠাৎ ফারাজের দিকে ফিরে নিঃশব্দ অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলল— “আপনি … আপনি কি একটু বাইরে যেতে পারবেন? আমি… আমি একা থাকতে চাই।”
তার কণ্ঠে গভীর ক্লান্তি, এক অদৃশ্য বেদনার ওজন ছিল, যা ফারাজ চাইলেও উপেক্ষা করতে পারল না। কিন্তু পা যেন এগোতে চাইছিল না। চিত্রার চোখে তাকিয়ে সে বুঝল—এই মুহূর্তে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি আর কোনো সান্ত্বনা নিতে সক্ষম নয়। শেষমেশ বাধ্য হয়েই সে দরজার দিকে এগোল। তবুও, প্রতিটি পদক্ষেপে সে পেছন ফিরে তাকাল—যেন চোখে চোখে রাখতে চায়, যদি হঠাৎ ভেঙে পড়তে গিয়ে চিত্রা হাত বাড়ায়। কিন্তু চিত্রা একবারও তার দিকে ফিরে তাকাল না। যেন আজ তাদের দৃষ্টি মেলানোটা মৃত্যুর থেকেও শোচনীয়।
ভাঙা দরজাটা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ঘরে এক অদ্ভুত শূন্যতা নেমে এলো। চিত্রার বুকের ভেতর জমে থাকা হাহাকার হঠাৎ বিস্ফোরণের মতো ফেটে বেরিয়ে এল। কেন? কেন এতবার তাকে মেরে শেষ করতে চাইলো, অথচ খুনীর মেয়েকে আঘাত করল না? কেন সেই নোংরা পরিবারের মানুষটিকে শেষ করল না—যে ফারাজের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিল তার মায়ের অস্তিত্ব? কেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী তাকে প্রতিশোধের ন্যায্য পরিসমাপ্তি দিল না?
প্রশ্নগুলো উত্তরের ভার না নিয়েই মাথার ভেতর আছড়ে পড়তে লাগল। জোহানের নিথর দেহের কাছে গিয়ে চিত্রা নিজের চুল নিজের হাতে মুঠো করে টেনে ধরল। শাড়ির আঁচল শক্ত করে খামচে ধরল, যেন সেই কাপড়টুকু আঁকড়ে ধরে নিজেকে স্থির রাখতে চায়। কিন্তু শরীরের উপর যেন নিয়ন্ত্রণ নেই—প্রতি ক্ষণে কাঁপছে, হঠাৎ এক তীব্র ঝাঁকুনিতে তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাচ্ছে।
অবশেষে, সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। বুক ফেটে শব্দ করে কান্না বেরিয়ে এল। এ যেন ক্রন্দনের ভিতর প্রতিশোধের বিষ, অপূর্ণ ন্যায়ের ক্ষত, আর নিজের অস্তিত্ব হারানোর হাহাকার। প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি শ্বাসে, ঘরটিতে জমে উঠল এক ভারী শোকের অন্ধকার।
ফারাজ নদীর ঘাটে এসে দাঁড়াতেই অভ্র তার কাঁদে হাত রাখল। বলল, ‘চিন্তা নেই ভাই। ভাবী আপনাকে ভালোবাসে। অবশ্যই চিত্ররাজ সারা জীবন এক থাকবে।’
অভ্রর সেই কথা শুনে ফারাজ যেন আরো ভেঙে পড়ল। সে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। হাহাকার করে বাচ্চাদের মতো কেঁদে বলল, ‘অভ্র তোর ভাবীকে বল আমার সঙ্গে কথা বলতে। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না অভ্র। অভ্র চিত্রাকে বল একবার বুকে টেনে নিতে আমাকে। ভালোবাসি বলতে।’
অভ্র সামলাতে পারছে না। এ কোন ফারাজ এলাহী? যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। অভ্র ফারাজকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। ধরে রাখতে পারছে না। হঠাৎ করে অভ্র লক্ষ করল চিত্রা বাইরে এসেছে। ফারাজ তাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে যায়। চিত্রা ফারাজের দিকে তাকায় না। ধ্বসে পড়া মন আর শরীর নিয়ে বলে, ‘আমাকে একবার তালুকদার বাড়িতে নিয়ে যাবেন?’
ফারাজ আর এক মুহূর্ত দেরি করে না। অভ্রকে বলে, ‘গাড়ি এদিকে আন অভ্র। তোর ভাবী তালুকদার বাড়িতে যাবে।’
যাওয়ার সময় ফারাজ অভ্র আর বজ্রকে এদিকটা সামলে নিতে বলল। তালুকদার বাড়ির সেই পোড়া গাছটার দিকে চিত্রা অনেকক্ষণ চেয়ে চেয়ে দেখল। এই গাছটা দেখে ফারাজের প্রতিবার কত কষ্টই না হয়েছে। তবুও কখনো বুঝতে দেয়নি। একটা মানুষ বুকে এত কষ্ট লুকিয়ে হাসতে কী করে পারে? চিত্রা ফারাজকে তালুকদার বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। ফারাজ বুঝতে পারল না সেই কারণ। কেন দেয়নি? খুনীকে চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছে করছে না বলে? নাকি সে চায় না তার পরিবারের খুনী এই বাড়িতে প্রবেশ করুক।
চিত্রা তালুকদার বাড়ির প্রতিটি কোণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল। আজকে মোফাজ্জলের বাড়ির হারিকানটা জ্বলছে না। কোথাও গেছে হয় তো। পুরো বাড়ি অন্ধকার। চিত্রা মোফাজ্জলের ঘরটার দিকে তাকায়। কোথায় জানি গিয়েছে তারা। ওই বৃদ্ধ লোকটাও নাকি ফারাজের কথায় সেদিন পুরো তালুকদার বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে রেখেছিল। যাতে করে চিত্রাকে আগুনে পুড়ানো যায়। হায় পৃথিবী!
তখন ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। চিত্রা এই ঘন্টাখানেক ভেবেছে,অনেক ভেবেছে। কই ফারাজকে তো ঘৃণা করতে পারল না। ফারাজ তো সব ছেড়েই দিয়েছে। ঘৃণা কোন অযুহাতে করবে? ঘৃণা করার উপায় রেখেছে? যেই বাবা-মা এত জঘন্য কাজ করেছে। ফারাজকে শেষ করেছে তাদেরকে ভালোবেসে চিত্রা ফারাজকে ঘৃণা করবে? ফারাজের তো কোনো দোষ নেই। সে খারাপ হতে চায়নি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে, ‘খলনায়ক কখনও জন্মায় না। তারা তৈরি হয়।’
চিত্রা চারপাশে একবার তাকালো। তার ফারাজ যে কোথাও নেই। চিত্রা বলেছিল ফারাজকে অন্ধকার হতে দেবে না, তাহলে কেমন করে অন্ধকারে নিক্ষেপ করছে? অন্ধকারে যে আলো খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। জীবন তাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিলে চিত্রা কেন পারবে না ফারাজকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে? অতীতের জন্য কারো জীবন নষ্ট হওয়া কোনো সমাধান নয়। যা হয়ে গেছে তো গেছেই। আর নয়। গল্পটা না-হয় নতুন করে শুরু করা যাক। বাইরে তখন হাওয়া শুরু হয়েছে। ক’দিন পর দূর্গা পূজা। শরতের এই রাতে অসময়ের বৃষ্টি যে? চিত্রার শাড়ির আঁচল মাটিতে হেঁচড়ে চলেছে। বাতাসের বুক চিরে ভেসে আসছে দু’টো হৃদয়কে এক করার সুর,
~জ্বলেরে…….
হিয়া জ্বলে প্রিয়ার দরদে
প্রেম যে বোবা প্রেম যে কালা
তাই প্রেমে এতো জ্বালা
এই জ্বালায় পরাণ ভাঙ্গেরে~
চিত্রা দৌড়ে তালুকদার বাড়ি পেরিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। বাইরের খোলা জায়গার সামনে যেই বড় সৃষ্টি গাছটা তার নিচেই দাঁড়িয়ে আছে ফারাজ। চিত্রা দৌড়ে ছুটে গিয়ে ফারাজকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। হু হু করে ডুকরে উঠল। ফারাজের কাছে এ যেন কল্পনার বহির্ভূত। সে চিত্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে। চিত্ররাজের সম্পর্ক তো রক্তের সঙ্গে মিশ্রিত। ওদের আলাদা করার সাধ্য কার? চিত্রার যদি ফারাজের চোখের অশ্রু শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকত তবে সে তাই করত। ফারাজ চিত্রাকে বলল, ‘আমি যে তোমায় ভেঙে ফেললাম আগুন সুন্দরী।’
‘আপনি যতবার আমায় ভাঙবেন আমি ততবারই খণ্ড গুলো পুনরায় জোড়া লাগিয়ে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলব।’
‘কথা দাও মরণ ছাড়া আলাদা হবো না আমরা।’
‘দিলাম কথা। মৃত্যু ছাড়া চিত্ররাজের মুক্তি নেই। তারা বন্দী থাকবে একই সেলে, একই প্রমাগারে।’
‘ভুলে যেও না,
তুমি-আমি আছি,
কাছে থেকেও দূরে
দূরে থেকেও যেন হৃদয়মাঝরে।’
‘আপনি, আমি অনেক দূরে চলে যাব। আমাদের সংসার হবে ফারাজ। যেখানে কোনো পাপ থাকবে না। কোনো দোষ, রক্তপাত কিছুই থাকবে না। বলুন, কথা দেন ফারাজ।’
‘তুমি বললে এই বান্দা কলিজাটা চিরে হাতে এনে দিতে পারে।’
চিত্রা ফারাজে বুকে মৃদু ঘুষি মেরে বলল, ‘ফারাজ!’
ফারাজ চিত্রার কপালে স্বস্তির আলিঙ্গনে বাঁধন হারা ঘুড়ির ন্যায় প্রশান্তি নিয়ে ওষ্ঠ ছোঁয়ানোর আগেই বুকচেরা গর্জন তুলে ফুটে উঠল গুলির আওয়াজ। ফারাজের শরীরটা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। চিত্রা কিছু বোঝার আগেই রক্তবমি উগলে দিল ফারাজ। ঢলে পরল চিত্রার শরীরে। মুষলধারে বৃষ্টি অঝোরে চিত্রার চোখের জল হয়ে ধরণীর বুকে পতিত হলো। ভিজিয়ে দিলো চিত্ররাজকে। চিত্রা তখনো পাথর। সে বুঝে উঠতে পারছে না। ফারাজের রক্তের সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে মাটির সড়ক একাকার হয়ে গেছে। ফারাজ একটা ঢোক গিলল। কে গুলি করল? না না ফারাজের গুলি লাগবে কেন? ফারাজ ঠিক আছে। নিজেকে চিত্রা মিথ্যা স্বান্তনা দিয়েই এবার চিৎকার করে বলে উঠল চিত্রা, ‘ফারাজ! ফারাজ চোখ মেলুন! দেখুন না।
তাকান আমার দিকে। আপনার সঙ্গে কিন্তু আমি কথা বলা বন্ধ করে দেব। কথা দিয়েছিলেন ছেড়ে যাবেন না। ভুলে গেলেন কি করে এত জলদি?’ ফারাজের ঠোঁটে আক্ষেপ নেই। সে জানে সময়ও যে হাতে স্বল্প। সুন্দর মুহূর্ত গুলো কেন যে খনিকের জন্য জীবনে আসে। ফারাজ এলাহী হেরে যাচ্ছে। এমন হার কপালে লেখা ছিল? ছ্যাহ ছোটলোকি কারবার। তবে এই জনমে ফারাজের আর আফসোস নেই। চিত্রার কোলে মাথা রেখেই চোখটা বন্ধ করবে সে। জীবন সার্থক। চিত্রা এখন সব জানে। তবুও ফারাজকে ঘৃণা করতে পারেনি। এর চেয়ে সুখময় মৃত্যু ক’জনের ভাগ্যে লেখা ছিল? বিদায় বেলা আরেকটা মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল। সাফিয়ে সুলতানার মুখ। মা কি তাকে নিতে এসেছে তবে? চোখ বন্ধ করার আগমুহূর্তে চিত্রার গাল ছুঁয়েছিল ফারাজ। কথা গলা দিয়ে বের হচ্ছিল না। তবুও বলল, ‘মায়ের কবরের পাশেই আমার ঠাঁই যেন হয়। মায়ের কবরটায় তার নাম দিও।’
‘ফারাজ আপনার কিচ্ছু হবে না।’ চিত্রা চারপাশে অভ্রকে খুঁজল। অস্থির চিত্রাকে বিচলিত হতে রেখে ফারাজ শেষবারের মতো বলল, ‘বিচার দিবসে আমাদের ভাগ্য ভিন্ন পথের হলেও আমার দু’চোখ ঠিক খুঁজে নেবে তোমার ঠিকানা, ঠিক খুঁজে আগুন সুন্দরী।’
স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে হঠাৎই শরীরে একটা ঝাঁকুনি খেল। ঠোঁটের কোণে মৃদু এক প্রশান্তির হাসি। মনে পড়ে যায়, এই তো ক’দিন আগেই তো বলেছিল, “বিবিজানের মৃত্যুর খাটিয়া আমি বহন করতে পারব না।” খোদা যেন সত্যিই সেই কথা কবুল করেছেন। আসলে খোদা তো পাপী বান্দাদেরও দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেন না।
ফারাজের দেহ ক্রমে শিথিল হয়ে এলো, শ্বাসের ভেতর থেকে জীবন সরে যাচ্ছে। চোখদুটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো। চিত্রা তখনও বুক ফেটে চিৎকার করছে। অথচ চারপাশে কেউ নেই। কেউ আসছে না। কেন নেই কেউ? বাঁচাতে আসছে না কেন? প্রকৃতি চিত্রার জীবনের ছবিটাকে এতটা অমলিন না রাখলেও পারত। এই বেলায় এত নিষ্ঠুর হতে হল? আরেকটা সুযোগ দিলে কি এত বড় ক্ষতি হয়ে যেত?
চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৬১ (২)
এই দুনিয়া তো সবসময়ই চিত্রার কাছ থেকে কেড়েই নিয়েছে—তার প্রিয়জন, তার আশা, তার বেঁচে থাকার কারণ। অথচ সব ভুলেও সে আবার নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিল। নতুন আশার আলোয়, অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিল এই নিষ্ঠুর দুনিয়ার ওপর। ফারাজ চোখটা বন্ধ করল। তবে শেষবার অশ্রুভেজা চোখে ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি নিয়ে কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
“বিবিজান… ভালোবাসা মরে না… আখিরাতে আবার দেখা হবে আমাদের…এই বিদায় চিরদিনের না… ওপারের মিলনটা হবে আরও সুন্দর…”
এই টা কোনো কথা হলো, উপন্যাসের শেষ টা ভালো লাগলো না 😑
🥲🥲……. Eita kmn somapti 🫠🫠🙃
2nd poricched Kobe dibn
Ata thik holo na 😭😭😭tara tari dan 2nd poricched ami ar oppakha korta parchi na plz faraz ka marban na ai bar kichu akta kora bachiya nan 😭😭😭😭😭🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙏🏻plz 💔💔❤️🩹❤️🩹
Bujhlam na marlo ke? Ovro to na! Tahole ke? Bojro?
Sessh ta valo laglo na. Pls 2nd season ta te mil deben pls.
Faraz er life story shuina vabsilam happy ending hobe but eita ki holo, jai hok season 2 ta jeno happy ending hoy