চুক্তিহীন বাঁধনে আবদ্ধ পর্ব ৩

চুক্তিহীন বাঁধনে আবদ্ধ পর্ব ৩
Israt Bintey Ishaque

এত বড় লোহার তাবিজ দেখতে পেয়ে গাঁ ছমছম করে উঠলো শিমুর। আশেপাশে হাজার হাজার মানুষের কবর। তাই ভ’য় টা বেশিই লাগছে। আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বাড়ির পথে হাটা দিল সে। সে শ্বাশুড়ি আম্মাকে জিজ্ঞাসা করবে এটা কিসের তাবিজ তিনি মাটিতে পুঁতে রেখে দিয়ে আসছেন। তিনি কি জানেন না এসব করা ইসলামের বিরুদ্ধে।

ভাবতে ভাবতে বাড়িতে পৌঁছায় শিমু। ঘরের কাছে পৌঁছে দেখল নাহার বেগম কাউসার এর ঘরের চারদিকে পানি ছিটাচ্ছেন! যা দেখে শিউরে উঠে শিমু। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে আম্মা আপনি এগুলা কি করতাছেন? আপনি কি কুফরী করেছেন কাউকে? আপনার লক্ষন তো ভালো মনে হচ্ছে না কিছুতেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জাদু করা হারাম ও কবিরা গোনাহ। কারো প্রতি কোনো উদ্দেশ্য হাসিলে জাদু করাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। কেননা তা কুফরির শামিল। জাদু করা কুফরি বিষয়টি কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত।

তারা উভয়ই (হারুত-মারুত) একথা না বলে কাউকে (জাদু) শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। তা খুবই মন্দ; যদি তারা জানত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১০২)

এ আয়াতে দুটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, জাদু করা কুফরি। আর যারা জাদু করে পরকালে তাদের জন্য কোনো অংশ থাকে না। শুধু তা-ই নয়, কুরআনের পরিভাষায় জাদু খুবই মন্দ কাজ।
হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি কাজকে ধ্বংসাত্মক বলেছেন। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে জাদু করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কী?

তিনি জবাবে বলেন-
– আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা।
– জাদু করা।
– অন্যায়ভাবে কাউকে হ’ত্যা করা। আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন।
– সুদ খাওয়া।
– ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা।
– জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া।
– সতী-সাধ্বী মুমিনা নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হারাম ও কবিরাহ গোনাহের মধ্যে অন্যতম জাদু-টোনা করা থেকে নিজেদের বিরত রাখা। আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা।
(আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাদুসহ এ রকম হারাম ও কবিরা গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।)

আম্মা সত্যি করে বলেন আপনি কাকে তাবিজ করেছেন? আচ্ছা আপনি উনারে তাবিজ করে কিছু করেন নাই তো! আর সেই কারণেই কি তিনি রেশমা কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন? আম্মা বলেন এগুলো কি সত্যি?
শিমুর কথায় রে’গে ফায়ার হয়ে গেলেন নাহার বেগম। চিৎকার চেঁচামেচি করে কাউসার কে ডেকে বললেন,
–” বাপ দেইখা যা তোর বউ আমারে কিসব ক‌ইতাছে! আমি বলে তোরে জাদু টোনা করছি। হায় আল্লাহ এসব হুননের আগে আমার মরন হয় না কেন!
নাহার বেগমের আর্তনাদ শুনে রুমি দৌড়ে এলো। এসে বলল,

–” আম্মা কি অইছে এমনে চেচাইতাছো ক্যান?
–” আমি কি আর সাধে চেচাই? আমারে হে’তি কয় আমি বলে তোর ভাইরে তাবিজ করছি!
মায়ের কথা শুনে খানিকটা দমে গেল রুমি।
কম্পিত গলায় বলল,

–” এই কতা ক্যারে মনে হ‌ইলো তেনার?
তারপর মায়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
–” আম্মা তুমি কি দেখাইয়া কিছু করছো নাকি? ন‌ইলে কেমনে জানালো?
নাহার বেগম কাঁপা কন্ঠে বললেন, ক‌ই না তো কহন দেখবো? আমি তো সাবধানেই করলাম। আর এই পানি গুলান ছিডানোর সময় দেখছে নাকি কে জানে? এই মাইয়া তো চালাকের চহিদার! এই পানি দেইখাই মনে হয় এগুলান ক‌ইতাছে।
দু’জনের ফুসুর ফুসুর কথার মাঝে শিমু বলল,

–” কি আম্মা বলেন আপনি কাকে তাবিজ করেছেন? আমি কিন্তু আপনার ছেলেকে সব বলে দেব।
নাহার বেগমের ভিতরে ভয় থাকলেও বাহিরে প্রকাশ করলেন না। বাহিরে তেজ দেখিয়ে বললেন,
–” চুমি ক‌ইবা কি? আমি ই ক‌ইতাছি শুধু কাউসার রে আইতে দাও!
কাউসার আসলে কেঁদে কেটে বিচার দিলেন নাহার বেগম। বললেন তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিতে চাইছে শিমু। কাউসার কে বিয়ে দেওয়াতে তার উপর প্রতিশোধ নিতে এসব মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
সবকিছু শুনে কাউসার শিমুকে জিজ্ঞাসা করলো এসব অপবাদ কেন দিছে সে? তখন শিমু হাতে মুঠো করা বড় তাবিজ টা দেখিয়ে বলল,

–” আপনি আম্মা কে জিজ্ঞাসা করেন আম্মা কেন এই তাবিজ কবর স্থানের মধ্যে পুঁতে দিয়ে এসেছেন!
শিমুর হাতে তাবিজ দেখে কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে নাহার বেগম আর রুমির।
কাউসার তাবিজ টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। তারপর ভ্র কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” আম্মা এসব কি?
নাহার বেগম অস্বীকার করে বললেন, এসব কিছুই তিনি করেন নাই। শিমু বানিয়ে বলছে সব। কাউসার মায়ের কথা শুনে বলল,

–” তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে যে আম্মা ই এগুলো করেছে?
–” আমি নিজ চোখে দেখেছি বিশ্বাস করেন আপনি! আমি খাল পাড় বসে ছিলাম তখন দেখি আম্মা কবর স্থানে গিয়ে এই তাবিজ টা মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে।
পাশের ঘরের কয়েক জন প্রতিবেশী ইতিমধ্যে হাজির হয়ে গেছেন। তার মধ্যে রহিমার মা ফিসফিস করে বললেন,
–” কাউসারের মার এসব করার অভ্যাস আছে আমি জানি। আগেও কতো দেখছি এসব জাদু টোনা নিয়া কত কবিরাজের কাছে দৌড়াইছে। শেষ বয়সে আইয়া ও এগুলান করা শেষ হয় না তার।

এদিকে নাহার বেগম পুরো দমে অস্বীকার করছেন যে তিনি এসব কিছু করেন নাই। শিমু সব বানিয়ে বানিয়ে বলছেন তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। কাউসার মায়ের কথা শুনে শিমুকে বলল,
–” আমার মাথা খারাপ লাগছে। এসব তাবিজ টাবিজ চিন্তা বাদ দাও। রোজ রোজ এসব ঝগড়া ভালো লাগে না। তোমার কাছে যেহেতু কোন প্রমাণ নেই সেহেতু আমি কিছু বলতে পারছি না। আমাকে একটু শান্তি দাও প্লিজ। না হয় তোমাদের শান্তিতে থাকতে দিয়ে আমি এক দিকে চলে যাই!

তারপর গটগট করে বাড়ির বাহিরে মোরের দিকে চলে যায় কাউসার।
রেশমা বাচ্চাদের পড়িয়ে এসে লোক জড়ো হ‌ওয়া দেখে বলল,
–” কি হয়েছে আপা? সবাই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে? উনাকেও দেখলাম ব্যস্ত পায়ে হেঁটে যেতে।
শিমু কথার জবাব দিল না। রেশমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। যা দেখে নাহার বেগম ভ্রুকুটিকুটিল করে বললেন,

–” মুখপুরি ঐ মাইয়া তোর সাথে খারাপ আচরণ করে হেরপরেও সাইধ্যা সাইধ্যা কতা ক‌ইতে যাস ক্যান? আয় আমার সাথে?
তারপর রেশমা কে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বললাম,

চুক্তিহীন বাঁধনে আবদ্ধ পর্ব ২

–” শোন আজকেই যা করার করবি। কাউসার কে হাত করার সুযোগ এসে গেছে। আর এই তাবিজ টা কাউসারের বিছানার তলে (নিচে) রেখে দিবি! রাতের বেলা কাউসার যখন ঘরো যাইবো তহন রুমি যাইয়া দরজা বাইরের তিকা বন্ধ ক‌ইরা দিব! তুই যা করার আইজ‌ই করবি!…..

চুক্তিহীন বাঁধনে আবদ্ধ পর্ব ৪