চেকমেট পর্ব ১০

চেকমেট পর্ব ১০
সারিকা হোসাইন

দুপুরের পর থেকেই রোদের তেজ মিইয়ে এসেছে।চারিধারে শীতল এলোমেলো বাতাস।দুপুরের দিকে অধিক উত্তাপে যেমন হাঁসফাঁস অনুভূতি হচ্ছিলো এখন আর তেমনটি বোধ হচ্ছে না।সূর্যের ঝকঝকে কিরণ সইতে না পেরে টুনটুনি গুলো পাতার ঝোপে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিলো।ঠান্ডা বাতাসের শিহরনে সেগুলো এখন লাফিয়ে লাফিয়ে এ ডাল ও ডাল ঘুরে বেড়াচ্ছে।।

বিকেলের দিকে একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাংলো থেকে বেরিয়ে গেলো রূপকথা।উদ্দেশ্য নিঝুম আন্টির বাড়ি।নিঝুম দের বাড়ি কমিশনার এর বাংলো থেকে বেশি দূরত্বে না থাকায় রূপকথা একাই গেলো।রেখা অবশ্য কুলসুম কে সাথে দিতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু বাঁধ সেধেছে রূপকথা।মেয়ের ইচ্ছের উপর রেখা আর কথা বলেন নি।
ফুরফুরে মেজাজে শীতল বাতাস গায়ে মেখে হাঁটি হাঁটি পায়ে চলতে লাগলো রূপকথা।জোড় পায়ে হাটলে নিঝুমদের বাসায় যেতে দশ মিনিট লাগবে।আর হেলেদুলে গেলে পনেরো মিনিট।রূপকথা একবার জোড়ে একবার হেলেদুলে চলতে চলতে বারো মিনিটের ব্যাবধানে নিঝুমদের গেটের সামনে এসে দাড়ালো।ভেতর থেকে নিঝুমের ছেলে নিনাদ এর গমগমে কথা বলার স্বর ভেসে আসছে।সেই স্বরে কিছুক্ষণ থমকালো সে।এরপর তপ্ত শ্বাস ফেলে কলিং বেল চাপলো।কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা না করতেই নিনাদ দরজা খুলে হাসি মুখে বললো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আরে ফেইরি টেইল…কাম কাম।
দশ বছর বয়সী নিনাদের রঙ্গ তামাশায় স্মিত হাসলো রূপকথা।এরপর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে মিহি স্বরে শুধালো
“আন্টি কোথায় নিনাদ?
নিনাদ উত্তর করবার আগেই আচঁলে হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো নিঝুম।নিঝুমের পাতলা গড়নের শ্যম বর্ণের শরীরের পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রূপকথা।সেদিনের অল্প বয়সী নিঝুমের চেহারায় আজ কেমন বড় মানুষের ছাপ।চোখের পাওয়ার ওয়ালা চশমাটায় কেমন বিজ্ঞ বিজ্ঞ লাগছে।রূপকথার ভাবনার মাঝেই নিঝুম পুনরায় শুধালো
“কোনো খুশির খবর আছে বুঝি?মিষ্টি কিসের?
নিঝুমের প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরে পেলো রূপকথা।ধ্যান ছেড়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নিঝুমের হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দিয়ে উচ্ছসিত গলায় বলে উঠলো

‘”মেডিক্যাল এ চান্স পেয়েছি আন্টি।মেরিট লিস্ট এ থার্ড পজিশন এসেছে।তাই তোমায় মিষ্টি মুখ করাতে এলাম।
টেবিলের উপর মিষ্টির প্যকেট রেখে নিঝুম খুশি মুখে প্রত্যুত্তর করলো
“ওমা তাই নাকি?কোন কলেজ?
“ঢাকা মেডিকেল ।
নিঝুম খানিক থেমে শুধালো
“ঢাকা চলে যাবে?
রূপকথা এবার অস্থির হয়ে উঠলো।নিঝুমের প্রশ্নের ইঙ্গিত সে জানে।এই মুহূর্তে মোটেও কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার।বুকের ভেতর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।শ্বাশটা কেমন আটকে আটকে আসছে।গলা বিষিয়ে উঠছে নীলচে ব্যাথায়।তবুও নিজেকে সামলে রূপকথা কম্পিত এলোমেলো কন্ঠে বললো

“যেতে হবে আন্টি।
রূপকথার চেহারা দেখে ভেতরের অনুভূতি আন্দাজ করলো নিঝুম।তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলে উঠলো
“এই দেখো তোমাকে এখনো বসতেই দেইনি।আমিও না কিযে মন ভুলো।
রূপকথা মাথা নিচু করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।এরপর সিক্ত কন্ঠে শুধালো
“অপেক্ষা জিনিসটা অনেক কষ্টের তাই না নিঝুম আন্টি?সারফরাজ আর কখনো ফিরবে না।তবুও আমাকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজীবনের অপেক্ষায় ফেলে গেছে।কত নিষ্ঠুর সে দেখেছো?

নিঝুম এর চোখে জল জমলো।রূপকথার মায়াবী চেহারার পানে তাকিয়ে বারো বছর আগের ভাবনায় ডুব দিলো নিঝুম।সারফরাজ হীন রূপকথাকে ম্যানেজ করা বড্ড কষ্টকর ছিল সকলের জন্য।ছোট মানুষ কিছুই বুঝতে চাইতো না।সারাক্ষন সারফরাজ সারফরাজ করে কেঁদে বুক ভাসাত।শেষ স্মৃতি চিন্হ হিসেবে সারফরাজ এর শার্টের বোতাম এর পানে চেয়ে থেকেই কাটাতো রাত দিন।রূপকথার বাবা মা কিভাবে পৃথিবী ছেড়েছে এটা নিঝুম ভুলিয়ে ভালিয়ে রূপকথার থেকে জেনেছে।সারফরাজ এর সাথে তার কি সম্পর্ক এটাও কৌশলে জেনে নিয়েছে নিঝুম।রূপকথার বাবা মায়ের মৃত্যুর পর সারফরাজ তাকে আগলে নিয়েছে।সর্বদা মেয়েটির ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।সারফরাজ ছিলো রূপকথার কাছে নিরাপদ ভরসযোগ্য আশ্রয় স্থল।

শিশুরা একবার কাউকে মন থেকে ভালোবেসে ফেললে সেই মানুষটির কাছেই পরে থাকতে চায়।তার আদর পেতে চায়।সারফরাজ রূপকথার জন্য কি কি করেছে ছোট রূপকথা কেঁদে কেঁদে নিঝুমকে সব বলেছে।রূপকথার সব চাইতে পছন্দের মানুষ সারফরাজ।সারফরাজ এর বুকে রূপকথা মা মা গন্ধ পেতো।বাবা মা হারিয়ে সারফরাজ কে আকড়ে ধরতে চেয়েছিলো রূপকথা।কিন্তু হুট করেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জঘন্য ভাবে আলাদা হতে হয়েছে দুজনকে।রেখা আর সুফিয়ান কে বাবা মা হিসেবে মেনে নিতেও বড্ড কষ্ট হয়েছে তার।কিন্তু রূপকথা এখনো জানে এরা তার বাবা মা নয়।তবুও মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে।কিন্তু সারফরাজ কে আজো ভুলেনি রূপকথা।সেদিনের ছয় বছরের ছোট রূপকথা আজ আঠারো বছর বয়সের যুবতী।নিঝুম পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত রূপকথার দেখভাল করেছে।এতগুলো বছরের একদিনের জন্যও রূপকথার মুখ থেকে সারফরাজ এর নাম হারায় নি।সারফরাজ নামটি যেনো রূপকথার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছে।কি এমন মায়ার ডোরে রূপকথাকে বেঁধে ছিলো সারফরাজ?

রূপকথার ডাকে ভাবনার সুতো ছিড়ে নিঝুমের।নিজের খেয়ালে এসে নিঝুম রূপকথার উদ্দেশ্যে বলে
“সারফরাজ এর সাথে তোমার যেই সম্পর্ক তার নাম কি রূপকথা?
রূপকথা চোখ বুজে কান্না গিলে খেলো।এরপর মোটা ভাঙ্গা স্বরে বললো
“ওই টুকুন বয়সে সে আমাকে আগলে নিয়ে ছিলো আন্টি।হি ইজ মাই সেভিয়র।সে আমাকে সেভ না করলে আমিও আজ আকাশের তারা হয়ে যেতাম ।জীবনে দ্বিতীয়বার বাঁচার সুযোগ সে আমাকে দিয়েছে।এমন নিঃস্বার্থ ভাবে আর কেউ আমাকে আগলে নিতে পারবে না আন্টি।মানুষটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারি নি।এই সম্পর্কের নাম কি আমি নিজেও জানিনা।শুধু জানি তার সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক।সে আমার আত্মার আত্মীয়।
“যদি কখনো সারফরাজ ফিরে আসে তুমি তাকে চিনবে?এতো গুলো বছর পেরিয়ে গেছে।এখন তো সে আরো বড় হয়ে গিয়েছে।চেহারা পাল্টেছে।গতরে পুরুষ হয়েছে।

চোখের জল মুছে রূপকথা বললো
“অমন ভয়ানক চোখ আর কারোর নেই নিঝুম আন্টি।এমন চোখের মানুষ অনেক খুঁজেছি কোত্থাও পাইনি।ওই দৃষ্টি আমি কখনো ভুলবো না।
নিঝুম মাথা দুলিয়ে রূপকথার কাঁধ চাপড়ে বলে উঠলো
“সারফরাজ ফিরে এলে কি করবে?এখন তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছো।আর তো ছোটট্টি নও।।
“শুধু জানতে চাইবো এতো গুলো বছর এর জন্য আমাকে একা ফেলে কোথায় ঘুরতে গিয়েছিল সে।
নিঝুম বলার মতো আর কিছু পেলো না।রূপকথা আর থাকতে চাইলো না নিঝুমের বাড়িতে।ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো রাস্তায়।এরপর চোখের জল মুছে নিজের বাড়ি অভিমুখে ছুটলো।

রাতের খাবার টেবিলে রূপকথার পছন্দের সকল ডিশ দিয়ে টেবিল সাজালেন রেখা।প্রত্যেকটা খাবার রূপকথার পছন্দের।কিন্তু খাবার গুলো দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না রূপকথা।অন্যান্য দিন মেয়ের ঠোঁটের কোণে যেই হাসির রেখা থাকে আজ তাতে বিষাদ।মেয়েটা কেমন ভেতর থেকে মন মরা।চোখের ভাষায় বুঝা যাচ্ছে সে বিধ্বস্ত।সুফিয়ান চৌধুরী সবটা খেয়াল করে মেয়ের প্লেটে অল্প ভাত তুলে দিতে দিতে বলে উঠলেন
“ভাবছি তুমি ঢাকায় গেলে আমরাও শিফট হবো।তোমার কথা মতো অনেক বছর এখানেই পরে থাকলাম।যেহেতু তুমি ঢাকায় পড়তে যাচ্চ আমার মনে হয় আমারও ট্রান্সফার এর জন্য আবেদন করা উচিত।
সুফিয়ান এর কথায় রূপকথা ভাতের প্লেটে আঁকিবুকি করে ছোট গলায় জিজ্ঞেস করলো
“আলেকজান্ডার আংকেল খুঁজে পেয়েছে সারফরাজ কে?

কেবলই এক লোকমা ভাত মুখে তুলেছেন সুফিয়ান।সেটা না চিবিয়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ রইলেন।এরপর দ্রুত গলাধঃকরণ করে বললেন
“অনেক খুঁজছে।কোথাও পায়নি।আলেকজান্ডার এর মতে সারফরাজ হয়তো ক্যালিফোর্নিয়ান গ্যাঙ এর হাতে পরে জীবন খুইয়েছে।নইলে রাতারাতি জলজ্যান্ত একটা ছেলে কোথায় হারাবে?বেঁচে থাকলে নিশ্চয় খুঁজে পাওয়া যেতো।
এমন সময় রেখা উঁচু গলায় বলে উঠলো
“একটা খুনি ফেরারি আসামির জন্য কিসের এতো দরদ তোমার?ঐ খুনির জন্য তোমার বাবা মরতে মরতে বেচেঁছে।কতবার বলেছি ওই ছেলের নাম ভুলে যাও।তারপর ও কিসের এতো আদিখ্যাতা?
সুফিয়ান রেখাকে ধমকে উঠার আগেই ভাতের প্লেট ছুড়ে ফেললো রূপকথা।এরপর চিৎকার করে বলে উঠলো
“ও খুনি নয়।ও খুন করতে পারে না।তোমাদের কোথায় ভুল হচ্ছে মা।
সুফিয়ান রেখাকে ধমকে বলে উঠলেন

“তোমাকে কতবার বলেছি ওই ছেলেকে নিয়ে রূপকথার সামনে কিচ্ছুটি বলবে না।কিন্তু তুমি তো আমার কোনো কথাই শুনছো না রেখা।
বাবা মেয়ের পাল্টাপাল্টি রিয়াক্ট দেখে দমে এলো রেখা।ফ্লোর থেকে ভাঙা প্লেট আর ভাত কুড়াতে কুড়াতে রেখা বলে উঠলো
“সরি, ভুলে গিয়েছিলাম।সেসময়ে হসপিটালে তোমার মুমূর্ষু অবস্থা আমাকে বড্ড পীড়া দেয়।সহ্য করতে পারি না।তাই ওভার রিয়াক্ট করে ফেলি।
রূপকথা আর বসলো না খাবার টেবিলে।হনহন করে নিজের কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়ে বলে উঠলো
“অতি শীঘ্রই আমাকে ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করো পাপা।এখানে দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।

সুফিয়ান প্রত্যুত্তর করার আগেই রূপকথা চলে গেলো।মেয়ের যাবার পানে তাকিয়ে সুফিয়ান নিজেও খাওয়া ফেলে হাত ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।এরপর গর্জে উঠে রেখাকে বললেন
“সব খাবার তুমি একাই খাও মূর্খ মহিলা কোথাকার।হাজার বার বলেছি সারফরাজ আমাকে গুলি করেনি।তারপরও একই গান গাও প্রতি বেলায় বেলায়।
কথাগুলো বলে নিজের ঘরে চলে গেলেন সুফিয়ান।রেখা ভাঙা প্লেট হাতে নিয়ে বাবা মেয়ের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে সজল চোখে হতাশা মিশ্রিত তপ্ত শ্বাস ফেললেন।আর মনে মনে বললেন
“সারফরাজ এর থেকে টেনে আলাদা করেছি বলে মায়ের প্রতি তোর এতো ঘৃণা?ওই ছেলের মতো তোকে কি তবে আগলে নিতে পারিনি আমি?আমার আদরে তবে কমতি ছিলো?

ক্যানভাস ক্লাউড ক্লাব,স্যাক্রামেন্টো,ক্যালিফোর্নিয়া
রাতের আধার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই রঙিন আলোয় আলোকিত হলো ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাক্রামেন্টো।দিনের তুলনায় রাতের এই শহরে মানুষের ব্যস্ততা বাড়লো হাজার গুণ।এই শহরের সবচেয়ে বড় ক্লাবের নাম ক্যানভাস ক্লাউড।নেশা দ্রব্য থেকে শুরু করে মেয়ে মানুষ আমদানি রপ্তানির কারবার পর্যন্ত অবলীলায় চলে এখানে।কোনো সভ্য ভদ্র মানুষ এই ক্লাবের সামনে পা মাড়ায় না।যারা আসে প্রত্যেকেই দুধর্ষ খুনী, নারী কারবারের অসাধু ব্যাক্তি নয়তো ক্যাসিনো খেলোয়াড়।অনৈতিক কাজ কারবার এর পাশাপাশি প্যাগে প্যাগে মদ গেলাই এদের প্রধান কাজ।

ক্লাবের অন্ধকার কক্ষে হুইস্কির গ্লাস হাতে বসে আছে এক যুবক।যুবকের আইস ব্লু চোখ জোড়া লাল নীল ডিম লাইটের আলোয় কেমন ক্রুর আর ভয়ানক ঠেকছে।যে কেউ এক ঝলক এই চোখের পানে দৃষ্টি মেললেই বুঝে যাবে এই যুবক শিকার ধরার আশায় ওঁৎ পেতেছে।ক্ষণকাল গড়াতেই লম্বা লম্বা পা ফেলে প্রবেশ করলো এক সুদর্শন যুবক।নাম তার অভিরূপ।অভিরূপ তার লালচে ঠোঁটে সিগারেট ঠুসে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পাশের কাউচে দুই পা ছড়িয়ে বসে পড়লো।এরুপর সিগারেট এর ফিল্টারে লম্বা এক
টান দিয়ে ভরাট গলায় বলে উঠলো

“তোর সন্দেহই ঠিক।ড্যামিয়েন তোর সাথে বেঈমানি করেছে সারফরাজ।দিয়াগোর কাছে সকল তথ্য ওই ফাঁস করেছে।গোপনে দিয়াগোর সাথে হাত মিলিয়ে তোর বিজনেস এর লস করিয়েছে।
অভিরূপ এর কথায় কোনো প্রত্যুত্তর করলো না সারফরাজ।আয়েশ করে হুইস্কির গ্লাসে অল্প অল্প চুমুক বসিয়ে সম্মুখের দরজার পানে তাকিয়ে ঠাঁয় বসে রইলো।মিনিট পাঁচেক গড়াতেই দুজন কৃষ্ণ বর্ণের বডি বিল্ডার টাইপ ছেলে প্রবেশ করলো।ছেলে দুটো বুকে হাত ভাঁজ করে মাথা নিচু করে বলে উঠলো
“উই কট ড্যামিয়েন ড্যাড।শ্যাল উই ব্রিং হিম ইনসাইড?
লুইস নামক ছেলেটির কথায় হুইস্কির গ্লাস কাঁচের টেবিলে শব্দ করে রাখলো সারফরাজ।এরপর পায়ের উপর পা তুলে সোফায় মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো।লুইস আর ইয়ং সারফরাজ এর উত্তর এর আশায় পূর্বের ন্যায় বুকে হাত ভাঁজ করেই দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষন নিরব থেকে সারফরাজ বলে উঠলো
“চতুরঙ্গ খেলার আয়োজন কর অভিরূপ।ড্যামিয়েন আমার খুব ভালো চেজ মেট।
অভিরূপ সিগারেট ফুঁকা বাদ দিয়ে সারফরাজ এর কঠিন চোয়ালের পানে চাইলো।অভিরুপ এই খেলার সমাপ্তি জানে।হারবে একজন।প্রাণ ও যাবে একজনের।কিন্তু কার?দুজনেই কঠিন খিলাড়ি।

“সময় নষ্ট করছিস তুই অভি।
সারফরাজ এর মাতাল ধীর লয়ের কন্ঠে অভিরূপ সম্বিৎ ফিরে পেলো।দামি সিগারেট পায়ে পিষে লুইস এর উদ্দেশ্যে হাত উঁচিয়ে বললো
“ব্রিং দ্যাট বাস্টার্ড।
আদেশ পেয়ে মাথা ঝাকিয়ে বিদায় নিলো লুইস আর ইয়ং।অল্প সময় পরেই ড্যামিয়েন কে টেনে হিচড়ে সারফরাজ এর সামনে নিয়ে এলো দুজনে।টেবিলে দাবার বোর্ড নিয়ে বসে আছে সারফরাজ।চোখ মুখ স্বাভাবিক।ভেতরে কি চলছে তা বুঝা মুশকিল।হুইস্কির নেশাটা বেশি হয়ে গেছে বোধ হয়। নীলচে চোখ জোড়া কেমন নিভু নিভু।
ড্যামিয়েন কে দেখতে পেয়ে সোজা হয়ে নড়েচড়ে বসলো সারফরাজ।এরপর হাতের ইশারায় ড্যামিয়েন কে ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিলো।ড্যামিয়েন কে ছেড়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো ইয়ং আর লুইস।এরপর বাইরের দরজায় বডি গার্ডের ন্যয় গান হাতে দাঁড়িয়ে রইলো।

সামনের সোফা নির্দেশ করে ড্যামিয়েন এর উদ্দেশ্যে সারফরাজ বলে উঠলো
“সিট।
স্বাভাবিক ঠান্ডা গলা কিন্তু কেমন ভয়ানক শুনলো।
স্যুটের কলার ঠিক করতে করতে তেজী গলায় ড্যামিয়েন বলে উঠলো
“I didn’t come here to play this fucking shit…
ড্যামিয়েন এর কথায় খিলখিল করে হাসলো সারফরাজ।ভয়ানক সেই হাসি।মানুষের হাসি বুঝি এতো ভয়ংকর হয়?
হাসি থামিয়ে সারফরাজ নোংরা ভাষায় বলে উঠলো

“ওরে আমার আদরের শা*-ওয়ারে।তুই নিজে থেকে এখানে আসিস নি বান্দির পুত।তোকে আমি ধরে এনেছি।কেনো এনেছি জানিস?তোর শাও*-য়ার হাড্ডি ভাঙতে।
সারফরাজ এর মুখের ভাষায় চোখ মুখ কুঁচকে এলো অভিরূপ এর।এতো সুন্দর মানুষের মুখে এতো বিশ্ৰী ভাষা কি করে উচ্চারণ হয় অভিরূপ তা জানে না।এদিকে শ্বেতাঙ্গ ড্যামিয়েন বাংলা কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না।সে তার হম্বি তম্বি তে অটল রইলো।সারফরাজ কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবার হাতে নিয়ে ড্যামিয়েন এর দিকে তাক করে পুনরায় ভরাট গলায় বলল
“সিট ড্যাউন ড্যামিয়েন।আই হ্যাভেন্ট প্লেইড ডিজ ফাকিং শীট উইথ ইউ ইন এ লং টাইম।
সারফরাজ এর বন্দুকের নল সামান্য ভীতি সৃষ্টি করলো ড্যামিয়েন এর মনে।কিন্তু পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটলো সারফরাজ এর চুক্তিতে
“হোএভার লসেস উইল ডাই।
অভিরূপ একটা কয়েন এনে টচ করলো।টচে ড্যামিয়েন জিতলো।সাদা গুটি তার।নিজের ঘরে গুটি সাজাতে সাজাতে জিভ বের করে বিশ্ৰী হাসলো ড্যামিয়েন।এরপর চোখ টিপে বলে উঠলো
“আ উইল ফাক ইউর হোল লাইফ সন অফ বিচ।
সারফরাজ বাঁকা হাসলো ড্যামিয়েন এর কনফিডেন্স এ।এরপর বললো
“লেটস স্টার্ট।

সতর্কতার সহিত দীর্ঘ সময় নিয়ে এগিয়ে চলছে খেলা।ইতোমধ্যে ড্যামিয়েন সারফরাজ এড চারটি সৈন্য খেয়ে ফেলেছে।সারফরাজ এর চোখের ইশারায় ড্যামিয়েন এর সামনে একটা গান এনে রাখলো অভিরূপ।চকচকে সিলভার রঙের নিউ মডেলের রিভলবার দেখে ড্যামিয়েন এর দম্ভ আরেকটু বাড়লো।খেলা ফেলে বন্দুকে চুমু খেয়ে ড্যামিয়েন শ্লেষ করে বলে উঠলো
“ইউ আর ফিনিসড।
ড্যামিয়েন নিজের সব গুলো গুটি ঘর থেকে বের করে ফেললো।সারফরাজ কে কতল করার নেশা ড্যামিয়েন এর মাথায় চড়ে বসলো।এটাই যেনো ঘোর পাগলামি করলো ড্যামিয়েন।কোন কিছু ঠাহর করবার আগেই ড্যামিয়েন এর মিনিস্টার, রুক ,নাইট সব খেয়ে ফেললো সারফরাজ।এরপর ড্যামিয়েন এর সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি রানীকে চারপাশ থেকে ঘিরে বলে উঠলো

“চেক।
সারফরাজ এর চেকে ড্যামিয়েন এর মাথা ঘুরে উঠলো।নিশ্চিত পতন চোখে দেখতে পাচ্ছে সে।কোন কিছু বাছবিচার না করে সারফরাজ এর দিকে গান তুলে ট্রিগার চেপে শুট করলো সে।কিন্তু একি!গুলিহীন ফাঁকা বন্দুক।
ড্যামিয়েন এর এহেন চতুরতায় কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো সারফরাজ।
“শাওয়ার নাতি তুমি এমন ভণ্ডামি করবে এটা আমি জানতাম।।
কথাটি বলেই চোখে মুখে কাঠিন্য হিংস্রতা ফুটিয়ে দক্ষ অভিজ্ঞ হাতে নিজের গান নিয়ে একের পর এক ড্যামিয়েন এর বুক বরাবর শুট করলো সারফরাজ।মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ড্যামিয়েন।রক্তাক্ত লুটিত ড্যামিয়েন এর কাছে এগিয়ে এসে বুট জুতা দিয়ে বুক পিষে ধরে সারফরাজ রসিকতা করে বলে উঠলো
“চেকমেট ডিয়ার ড্যামিয়েন।
পুরো দৃশ্যে অভিরূপ নির্বাক হয়ে বসে রইলো।সামান্য কটা টাকার লস হয়েছে বলে সারফরাজ এভাবে মেরে দিলো ড্যামিয়েন কে?
অভিরূপ এর মনের ভাবনা বোধ হয় পরে ফেললো সারফরাজ।ধোয়া উঠা বন্দুকের নলে ঠোঁট গোল করে ফু দিয়ে বলে উঠলো

“বেঈমানি একদম পছন্দ নয় আমার।বন্ধু সেজে পিঠে ছুরি মেরেছে আমার।আজ না হয় কাল ওকে মরতেই হতো।তাই আর দেরি করে কি লাভ?এক বেঈমান কে দরদ করে ছেড়ে দিয়েছিলাম।ফিডব্যাক হিসেবে মরতে মরতে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছি।এই বাস্টার্ড কে এখান থেকে নিয়ে যা আর আমার বাংলাদেশ এ যাবার ব্যবস্থা কর।
চোখ বড় বড় করে অভিরূপ শুধালো
“ওখানে তোর কি কাজ?
বন্দুকের নল দিয়ে থুতনি চুলকাতে চুলকাতে সারফরাজ উত্তর করলো
“হঠাৎ আরেক বেঈমান নাটকির পুতের কথা মনে পরলো।ওকে টপকাতে না পারলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না।
“কিন্তু তুই তো ফেরারি আসামি।গেলেই যদি খাঁচায় তুলে?
ঝকঝকে দাঁত বের করে প্রশস্ত হেসে সারফরাজ বললো

চেকমেট পর্ব ৯

“শাওয়ার নাতিরা টাকা খুব পছন্দ করে।প্রশাসনের লোকেরা তোর মতো আদর্শ নয়।খাঁচায় তুলার আগে দানা ছিটাবো।সব পায়ের কাছে লুটিয়ে মিও মিউ করবে।এবার যেটা করতে বলেছি সেটা কর।
ইতস্তত করে অভিরূপ বললো
“মুখের গালি গুলো ভালো করা যায় না একটু?
সারফরাজ অভিরূপ এর এলোমেলো কলার ঠিক করতে করতে উত্তর করলো
“এসব গালি নয়।এগুলো বুলেট।তাই এমন বুলেট তোর তুলতুলে পশ্চাৎদেশে আঘাত হানার আগে আমাকে বাংলাদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা কর।

চেকমেট পর্ব ১১