চেকমেট পর্ব ১৫
সারিকা হোসাইন
ঘোর অন্ধকারের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আবছা আলো ধরনীতে আছড়ে পরলো।পুব আকাশ অল্প হলদেটে আলোয় ফর্সা হলো।শীতল বাতাস বেশ করে গায়ে কাঁটা দেবার অনুভূতি জাগাচ্ছে সেই সাথে সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ।যন্ত্র চালিত রেলগাড়ির ঝমঝম শব্দ ভেদ করে জেগে উঠা পাখির কলতান কর্ণ দুয়ার ছুঁতে ব্যর্থ হলো।
আপন গতিতে ছুটে চলেছে রেলগাড়ি।শেষ ঠিকানা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন।নিজের সিটে আয়েশ করে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রূপকথা।ঘুমের দেশে খুব সুন্দর এক স্বপ্ন দেখলো রূপকথা।সারফরাজ আর তার দেখা হয়েছে।কিন্তু সাক্ষাৎ টা কেমন যেনো দমবন্ধ অনুভূতির ন্যয়।সারফরাজ কে দেখে উচ্ছসিত হবার বদলে ভারী লজ্জা এসে গ্রাস করেছে রূপকথাকে।সারফরাজ তার প্রশস্ত হাত বাড়িয়ে রূপকথাকে স্পর্শ করতে চাইল।কিন্তু তার আগেই রূপকথাকে টেনে হিচড়ে কেও নিয়ে চলে গেলো।
এহেন ভয়ানক স্বপ্নে ঘুমের মধ্যেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রূপকথা।রূপকথার কান্নায় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো ওপর পাশের যুবকের।কপাল কুঁচকে আড়মোড়া ভেঙে চাদর সরিয়ে উঠে বসলো যুবক।এরপর পানির বোতল এর ক্যপ খুলে হাতে পানি নিয়ে ছুড়ে মারলো রূপকথার মুখশ্রী জুড়ে।আকস্মিক এহেন শীতল জল ছিটায় ধরফড়িয়ে উঠে বসলো রূপকথা।তার চোখ বেয়ে এখনো জল গড়াচ্ছে।সব কিছু অনুধাবন করে কিছু বলবার আগেই ওপাশের ব্যক্তি কপাল কুঁচকে ঘুম জড়ানো ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো
“তুমি তো আচ্ছা মেয়ে মানুষ।সারাটা রাত জ্বালিয়ে মারলে এখন ভোর রাতের দিকে একটু ঘুমালাম সেটাও সহ্য হলো না?
ছেলেটির মুখ পানে না তাকিয়েই মাথা নিচু করে ধরা গলায় রূপকথা বললো
“দুঃখিত।ইচ্ছে করে এমনটি করিনি।
ছেলেটি সিটে হেলান দিয়ে বসে রসিকতা মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো
“সুদর্শন পুরুষদের দেখলে মেয়েরা এমন ই করে।সব জানি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ছেলেটির ওভার কনফিডেন্স দেখে রূপকথা শুকনো হাসলো।এরপর ছেলেটির চোখে চোখ রাখতেই হৃদয় কেঁপে উঠলো।নিজের জামা খামচে ধরলো সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে।ভয়ানক চোখ জোড়ার পানে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু দানা গড়িয়ে পরলো বড় বড় চক্ষু কুল ঘেষে।বুকে জমানো কান্না গুলো দলা পাকিয়ে কন্ঠনালী বিষিয়ে তুললো।রূপকথার এহেন অবস্থায় যুবক ঘাবড়ে গেলো।কোনো প্রত্যুত্তর করবার আগেই রূপকথা বলে উঠলো
“যেই সুদর্শন পুরুষ আমি দেখেছি তার সামনে পৃথিবীর সমস্ত পুরুষের সৌন্দর্য নগন্য।
কথাটি বলেই তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে নিলো রূপকথা।সামনে বসা ছেলেটির চোখ দুটো সারফরাজ এর মতো।কিন্তু হুবুহু নয়।এই চোখের মনিটা কমন।সচরাচর দেখা যায়।কিন্তু সারফরাজ এর চোখের মণি ছিলো অনন্য ভিন্ন।এমন চোখ আর কোথাও দেখেনি রূপকথা।ছেলেটি রূপকথার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন থামলো।স্টেশনের নাম ঘোষণা শুনে তড়িঘড়ি করে নেমে গেলো ছেলেটি।আর কথা হলো না তাদের।ছেলেটি নেমে যেতেই শব্দ করে কেঁদে ফেললো রূপকথা।মিনিট পাঁচ পরেই হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন ছুটলো।চোখের জল মুছে জানালায় ভেজা দৃষ্টি পাততেই রূপকথার ছোট দৃষ্টি বিস্ফারিত হলো।কালো পোশাকধারী কয়েকজন লোক সেই যুবক কে বেশ সম্মান দেখিয়ে স্টেশনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।তাদের প্রত্যেকের কাছেই একটা করে বন্দুক।সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় পুলিশ পর্যন্ত তাকে সমীহ করার চেষ্টা করছে।যতক্ষণ ধীর গতির ট্রেন চলায় এই দৃশ্য দেখা গেলো রূপকথা ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো।দৃষ্টির আড়াল হতেই রূপকথা নিজেকে শুধালো
“কে এই অদ্ভুত মানব?
আরো ত্রিশ মিনিট যাত্রার পর কমলাপুর রেলস্টেশন এ চূড়ান্ত ভাবে থামলো কলের গাড়ি খানা।নিজের ব্যগপত্র গুছিয়ে বাইরে বের হতেই একটা কুলি ডেকে ছুটলো এক্সিস্ট এর দিকে।আনমনে হাটতে হাটতে নানান কিছু ভাবলো রূপকথা।কিন্তু ভাবনার সুতো ছিঁড়লো ফোনের রিং হবার শব্দে।ঝটপট হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই ন্যালির নম্বর নজরে পরলো।দ্রুত রিসিভ করে কানে তুলে হ্যালো বলতেই ন্যালি বললো
“বাইরেই আছি আমি।তাড়াতাড়ি আয়।
কোনো উত্তর না করে ফোন কাটলো রূপকথা।কিছুক্ষন হেটে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই ন্যালির হাস্যজল চেহারা চোখে পরলো।ন্যালি দৌড়ে এসে রূপকথা কে জড়িয়ে ধরে কুলিকে নিজেদের গাড়ি নির্দেশ করে বলে উঠলো
“লাগেজ গুলো ডিকি তে তুলে দিন।
এরপর রূপকথার এলোমেলো চেহারার পানে দৃষ্টি মেলে ন্যালি বলে উঠলো
“এডভেঞ্চার করতে এসে চোখেমুখের একি অবস্থা?
রূপকথা নিজেকে সামলে উত্তর করলো
“ঘুমে মাথা টনটন করছে।তাড়াতাড়ি বাড়ি চল।
ন্যালি আর কথা বাড়ালো না।গাড়ির ব্যক সিটে বসে ড্রাইভার কে নির্দেশ দিলো
“বাড়িতে চলো সাঈদ ভাই।
ওকল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এ ওয়েটিং চেয়ারে বসে আছে সারফরাজ।আরো চল্লিশ মিনিট পর তার ফ্লাইট।দেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে কোনো উচ্ছাস আনন্দ কিছুই কাজ করছে না তার মধ্যে।দুটো প্রয়োজনে দেশে যাচ্ছে সে।এক সুফিয়ান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ দুই পুরোনো শত্রুকে বধ।কোনটা আগে করবে তার হিসেব এখনো কষেনি সে।তবে শুভ কাজ আগে করাই উত্তম।
ফার্স্ট এনাউন্স পেতেই নিজের ট্রলি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সারফরাজ।এরপর লম্বা লম্বা পা ফেলে প্লেনে উঠার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।
বিজনেস ক্লাসে তার জন্য সিট কেটেছে অভিরূপ।সাথে অভিরূপ এর ও যাবার কথা ছিলো।কিন্তু তার বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করায় তিন দিন আগেই ইমারজেন্সি টিকিট কেটে দেশে চলে গিয়েছে সে।অবশ্য যাবার আগে পই পই করে বলে গিয়েছে সারফরাজ যেনো তাদের বাড়িতে গিয়েই থাকে।কিন্তু সারফরাজ কৌশলে তা নাকচ করেছে।বিমানে কাঙ্খিত সিটে বসতেই সুন্দরী এয়ারহোস্টেস দুটো ম্যাগাজিন, একটা লাইট ড্রিংকস নিয়ে সামনের ছোট এটাচড টেবিলটায় রাখলো।এরপর মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে সুমিস্ট ইংরেজি ভাষায় বললো
“ইফ ইউ নিড এনিথিং,প্লিজ লেট মি নো।
সারফরাজ অল্প মাথা দোলাতেই মেয়েটি চলে গেলো।কিন্তু সারফরাজ এর মনে হলো মেয়েটি যেতে চাইছে না।পিছন ফিরে মেয়েটি বার বার একই কথা বলায় সারফরাজ বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“আমি যে কতবড় জানোয়ার এটা জানলে এভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসার অবস্থাতেই থাকতে না ডিয়ার হোস্টেজ।
কিছু সময় অতিবাহিত হতেই বিমান টেইক অফ এর ঘোষণা এলো।ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে সারফরাজ সময় অতিবাহিত করার চেষ্টা করলো।কিন্তু মন টানলো না।লম্বা জার্নি তাই ঘুমানোকেই বেস্ট অপশন মনে করলো সে।তাই আর সময় অপচয় না করে সুইচ টিপে সিট বড় করে পা ছড়িয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে চোখ বুঝলো।কিন্তু কারো উপস্থিতি তাকে চোখ খুলতে বাধ্য করলো।চোখের উপর থেকে ব্ল্যাঙ্কেট সরাতেই সেই হোস্টেজ এর প্রশস্ত হাসি আর রঙ ঢং তাঁর মেজাজ বিগড়িয়ে দিলো।ঠোঁট কামড়ে রাগ নিবারণ করে গম্ভীর গলায় শুধালো
“হুয়াট?
মেয়েটি তার শার্ট এর উপরের বাটন খুলতে খুলতে এগিয়ে এসে ফিসফিস গলায় শুধালো
“ডু ইউ নিড সামথিং স্পেশাল?
চিরবিড়িয়ে উঠা রাগ নিয়ন্ত্রণে এনে উঠে দাঁড়ালো সারফরাজ।এরপর দাঁতে দাঁত চেপে নিজের থাবার ন্যয় হাত দিয়ে মেয়েটির সরু ধবধবে গলা চেপে ধরে বলে উঠলো
“ইয়েস আই নিড ব্লাড।কজ আই এম এ ব্লাড সাকার।উইল ইউ গিভ মি ইউর ওয়ার্ম ব্লাড?
সারফরাজ এর ভয়ানক আবদার আর ভয়ানক দৃষ্টি দুই ই মেয়েটির কলিজা কাঁপিয়ে দিলো।ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ টুকুও পেলো না সে।কিছুক্ষন আগের সুদর্শন পুরুষটিকে মেয়েটির কাছে এই মুহূর্তে একটা নির্দয় পশু মনে হচ্ছে।যার হৃদয়ে কোনো ভালোবাসার ছিটেফোঁটা নেই।এই পশুর হাত থেকে মুক্তি মিলবে কি করে?এদিকে সারফরাজ সর্ব শক্তি দিয়ে আরো জোরে চেপে ধরলো গলাটা।এবার বুঝি শ্বাস রোধ হয়ে মেয়েটির প্রাণ দেহ থেকে বেরিয়েই যাবে।নিরুপায় মেয়েটি বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে শুধু সারফরাজ এর ভয়ানক ক্রোধিত চোখের পানে তাকিয়ে রইলো।সারফরাজ এর হাতের পিস্টনে যখন চোখ থেকে জল গড়িয়ে সারফরাজ এর কব্জিতে বিলীন হলো তখন মেয়েটিকে দূরে ছুড়ে ফেললো সারফরাজ।মেয়েটি প্রাণ ফিরে পেয়ে ধরিমরি করে উঠে পালালো।মেয়েটির যাবার পানে তাকিয়ে সারফরাজ বলে উঠলো
“সেইমলেস ডার্টি বিস্ট ।
কথাটি বলেই পুনরায় ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।ঘুম ভাঙলো একদম দুবাই এয়ারপোর্ট এ।প্ল্যান ল্যান্ড হতেই নিজের ছোট লাগেজ নিয়ে বিমান থেকে নেমে পরবর্তী ডিপার্চার এর অপেক্ষায় সময় গুনতে লাগলো।
যতোটা উচ্ছাস নিয়ে রূপকথা ঢাকায় এলো তার কিছুই হলো না।সব কিছু কেমন যেনো পানসে আর মন মরা লাগছে।রেখার সাথে লম্বা সময় ধরে ভিডিও কলিং করেও মন ভালো হলো না।অগত্যা সুফিয়ান মেয়ের জন্য দুদিন ছুটি নিলেন।বাবা মা মিলিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও কলিং করে মন ভালো করার চেষ্টা করলো রূপকথার।কিন্তু সবকিছুর ফলাফল শূন্য।সুফিয়ান বহু জিজ্ঞাসাবাদ করে মন খারাপের হেতু জানতে চাইলেন।কিন্তু রূপকথা মুখ খুললো না।অগত্যা নিরুপায় হয়ে সুফিয়ান বললেন
“তোর ফুপুর থেকে টাকা নিয়ে ইচ্ছে মতো শপিং কর।শপিং করলে মেয়েদের মন ফুরফুরে হয়।
রূপকথা এটাকে ভালো আইডিয়া মনে করে রাজি হলো।শেষমেশ আরো কিছু কথা বলে সুফিয়ান আর রেখা ফোন কেটে দিলো।ফোন কেটে মনেমনে সুফিয়ান বলে উঠলো
“তোর মন খারাপের হেতু আমি জানি মা।কিন্তু এই মন খারাপকে প্রশ্রয় দিলে তোরই অমঙ্গল হবে।বাবা হয়ে সেই অমঙ্গল কি করে হতে দেই আমি?
বিকেলের দিকে ফ্রেশ একটা ঘুম দিয়ে ফুরফুরে হয়ে বিছানা থেকে উঠলো রূপকথা।এরপর মুখ হাত ধুয়ে ড্রয়িং রুমে এলো।ন্যালি আর শিউলি বিকেলের নাস্তা বানানোর কাজে ব্যস্ত।রূপকথা কে দেখতে পেয়ে তার ফুপা আমজাদ হায়দার বলে উঠলো
“কমিশনার এর মেয়ের মুখ দেখা গেলো তবে?কেনো রে বাবা?আমরা কি তোর বাবা মায়ের থেকে কম ভালোবাসি তোকে?এতো মন খারাপের কি আছে?
রূপকথা শুকনো হেসে প্রত্যুত্তর করলো
“আসলে তা নয় ফুপা।শরিটা ভালো লাগছিলো না এই কদিন।তাই ঘরে রেস্ট নিলাম।
ন্যালি একটা কফি মগ রূপকথার সামনে এগিয়ে বলে উঠলো
“আব্বু টাকা দাও।মামা বলেছে রূপকথাকে নিয়ে শপিং এ যেতে।পরে তোমার একাউন্ট এ পাঠিয়ে দেবে।
আমজাদ হায়দার সম্মতি জানিয়ে বললেন
“কখন যাবে?
রূপকথা কফিতে চুমুক দিয়ে বললো
“আজ যাবো না ফুপা।কাল দুপুরের পর পর যাবো।আজ আপনার ছাদবাগানে সময় কাটাবো।
আমজাদ হায়দার বেশ খুশি হলেন রূপকথার কথায়।বহু যত্নের এই ছাদ বাগান তার।বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফল ফুল এর গাছ লাগিয়েছেন তিনি সেখানে।কেউ সেই বাগানে গিয়ে একটা ফুল দেখে বা ফল খেয়ে সুন্দর রিভিউ দিলে আমজাদ হায়দার বেলুনের মতো ভুর ভুর করে ফুলে যান।বেশ সরল মনের মানুষ কিনা।
বিকেলের নাস্তা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে রূপকথা আর ন্যালি ছুটলো তিন তলার ছাদে।পেছন পেছন শিউলি আর আমজাদ এলেন ছুড়ি নিয়ে।চুইঝাল লাগিয়েছেন ছাদের এক পাশে।রূপকথা চুইঝাল দিয়ে গরুর মাংসের ঘন ঝোল খেতে চেয়েছে।ওটাই কে*-টে নিতে এসেছে শিউলি।ছাদ বাগান পুরোটাই ফলে ফুলে ঢলে রয়েছে।এক কোনে সুন্দর দোলনা পাতা।দোলনায় বসলে ছাদের দুই পাশ ই নজরে পড়ে।খুঁজে খুঁজে আনার গাছ থেকে একটা পাকা আনার ছুড়ি দিয়ে ফাটিয়ে রূপকথার হাতে দিলেন আমজাদ।কালো রসালো দানা মুখে পুরে রূপকথা আবেশে চোখ বুজে বলে উঠলো
“আপনাকে সেরা ছাদ কৃষকের এওয়ার্ড দিতে ইচ্ছে করছে ফুপা।বিলিভ মি!এতো মজার আনার কোনো দিন খাইনি।
রূপকথার প্রশংসায় ছাদ থেকে লাফাতে ইচ্ছে করলো আমজাদ হায়দারের।খুশিতে গদগদ হয়ে সেও রূপকথার সাথে তাল মেলালো।শিউলি সংগোপনে হাসলেন স্বামীর এহেন সরল মানুষী দেখে।আমজাদ দৌড়ে গিয়ে একটা বড় আখ আর কিছু কাঁচা মিঠা আম নিয়ে এলেন।আখ গুলো ছোট করে কে টে একটা ঝুড়িতে ভরে রূপকথার সামনে এগিয়ে বললেন
“তোমরা খাও।আমি নামাজে যাবো।রাতে কথা বলবো।ঠিক আছে?
রূপকথা সায় জানাতেই আমজাদ সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো।ছাদের নরম শীতল বাতাস,ফুল ফল আর সন্ধ্যার আগ মুহূর্তের স্নিগ্ধ প্রকৃতি রূপকথার মন ভালো করে দিলো নিমিষেই।আরো কিছুখন সময় ছাদে কাটিয়ে রূপকথা ন্যালির উদ্দেশ্যে বললো
“একটা সিক্রেট আছে তোর সাথে আমার।
সবেই একটা বারোমাসি পেয়ারা গাছ থেকে পাকা পেয়ারা ছিঁড়ে কামড় বসিয়েছে ন্যালি।রূপকথার এহেন কথায় পেয়ারা খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে ধীর গলায় শুধায় ।
“কি সিক্রেট?
“রামপুরা জাবি?
“ওখানে কেনো?
“হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান কিছু খুঁজতে।
চেকমেট পর্ব ১৪
শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ল্যান্ড করতেই লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।ঢাকা এয়ারপোর্ট তাকে টানলো না কেনো জানি।এয়ারপোর্ট এ নেমেই পরিচিত বাতাস এর সুঘ্রানে চোখ বুজে ফেললো সারফরাজ।কতোদিন পর এই শহরে তার পায়ের ধূলি পরলো কে জানে?লম্বা তপ্ত কম্পিত শ্বাস ফেলে চোখে কালো রোদ চশমা লাগিয়ে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।এরপর একটা ট্যাক্সি বুক করে বলে উঠলো
“পুলিশ কমিশনার অফিস।