চেকমেট পর্ব ২১

চেকমেট পর্ব ২১
সারিকা হোসাইন

মাথা থেকে শুরু করে সারা শরীর কাঁথায় মুড়িয়ে জুবুথুবু হয়ে বিছানার এক কোনে আসন গেড়ে বসে আছে ন্যালি।মাথার এলোমেলো জট পাকানো চুলের কয়েক গাছি চোখ মুখের উপর সেটে রয়েছে।ভে ভে করে কান্নার কারনে চোখ মুখ বিকৃত হয়ে রয়েছে।সেই সাথে মেয়ের মুখে অজগরের কাবাব নাম শুনে জিভ বের করে চোখ কুঁচকে কপাল চাপড়ালেন আমজাদ হায়দার।শিউলি মেয়ের কাছে এসে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতেই চোখ কপালে উঠলো।সত্য সত্যই কেউ ন্যালির বাম গালে কষিয়ে চড় মেরেছে।হাতের চারটা আঙুলের টকটকে ছাপ স্পষ্ট পুরো গাল জুড়ে।উত্তপ্ত গাল চেপে ধরে আরো কিছুক্ষন কাঁদলো ন্যালি।ভয়ানক স্বপ্ন মনে পরে বারবার বমির উদ্রেক হচ্ছে তার।এদিকে গাল টা ব্যাথায় টনটনে।শিউলি মেয়ের মুখ পানে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন

“ঘুমের ঘোরে নিজের গালে নিজেই চড় মেরেছিস তাই না?
ন্যালি তাৎক্ষণিক মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো
“না আম্মু।ওই অদ্ভুত ছেলেটা আমায় চড় মেরেছে।
শিউলি বিরক্তি ভরা কন্ঠে শুধালেন
“স্বপ্নে কেউ কাউকে চড় মারতে পারে গর্দভ?
শিউলির ধমকে উত্তেজিত হয়ে আমজাদ বললেন
“আহ হা এভাবে ধমকাচ্ছ কেনো?এম্নিতেই মেয়েটা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে।
শিউলি হাত ইশারায় আমজাদ হায়দার কে থামিয়ে বলে উঠলো
“সেদিনও ঘুমের ঘোরে নিজেকে নিজেই ঘুষি মেরেছে ও।আমি নিজে দেখেছি সেই দৃশ্য।স্বপ্নের কেউ তোমার মেয়েকে মারতে আসে না।কারন সেসব অস্তিত্ব হীন।যেমন বাপ তেমন মেয়ে।তুমিও সারা রাত আবোল তাবোল বকবক করে হাত পা ছুড়ো।তোমার থেকেই এই গুন রপ্ত করেছে তোমার মেয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঘুম জড়ানো বিরক্ত ভরা কন্ঠে কথাগুলো বলে পুরো রুমে নজর বুলালো শিউলি।এরপর শুধালো
“রূপকথা কোথায়?তোকে তো বলেছিলাম রাতে রূপকথার কাছে থাকতে।তুই এখানে কি করছিস?
শিউলির ধমকে উত্তর খুজে পেলো না ন্যালি।কতক্ষন কেঁদে কেটে শান্ত হতেই শিউলি রূপকথার কক্ষের দিকে ছুটলো।এরপর লাইট জ্বালিয়ে রূপকথার বিছানায় দৃষ্টি তাক করলেন।কাঁথা মুড়িয়ে হাটু ভাঁজ করে কোঁকড়ে শুয়ে আছে রূপকথা।শিউলি ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এসে জ্বর পরিমাপ করলেন হাতের সাহায্যে।জ্বর মোটেও কমেনি।এবার আরো চিন্তিত হলেন শিউলি।দৌড়ে গিয়ে আমজাদ হায়দার কে বলে উঠলেন
“রূপকথার প্রচন্ড জ্বর।ওকে হসপিটালে নিতে হবে।আমার ভয় করছে।ভাইজান জানলে কেলেঙ্কারি হবে।দুদিন ধরে আসতে না আসতেই মেয়ে অসুস্থ হয়ে বিছানা নিয়েছে।এটা ভাইয়া কিছুতেই মানবে না।
আমজাদ হায়দার কিছুক্ষন নীরব থেকে প্রত্যুত্তর করলেন

“ঠিক আছে সকালে নিয়ে যাবো।আপাতত মাথায় পানি দাও।
শিউলি ঘাড় কাত করে সায় জানিয়ে রূপকথার কক্ষে পুনরায় দৌড়ে গেলো।এরপর বালতি ভর্তি পানি এনে মাথায় অল্প অল্প দিতে লাগলো।
একটু পর ন্যালি নিজেও উঠে এলো ঘুম কাটিয়ে।গালটা এখনো ফুলে রয়েছে।সে নিজেকে নিজেই এভাবে চড় মেরেছে এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না।আয়নায় দেখেছে কেমন মোটা মোটা দাগ বসে গেছে গাল জুড়ে।তার সরু চিকন আঙ্গুল এতো মোটা দাগ কিভাবে তৈরি করতে পারে?
ভাবনা ফেলে একটা ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে নিলো ন্যালি।এরপর পরম যত্নে মুছিয়ে দিলো রূপকথার হাত পা।
শিউলি আর ন্যালির প্রচেষ্টায় ভোর রাতের দিকে জ্বর কমলো রূপকথার।শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হতেই গায়ের কাঁথা সরিয়ে দুর্বল শরীরে উঠে বসলো সে।পাশেই শিউলি আর ন্যালি।প্রচন্ড অস্বস্তি আর ক্লান্তি নিয়ে রূপকথা বলে উঠলো

“খুব খারাপ লাগছে ফুপি।গোসল করতে হবে।
শিউলি ঘড়িতে নজর দিলো।আর কিছুক্ষন পর ছয় টা বাজবে।এতো সকালে গোসল করলে না জানি আবার ঠান্ডা বসে যায়!কিন্তু রূপকথার দরদর ঘাম দেখে শিউলি মাথা ঝাকালেন।দ্রুত পদে উঠে কাবার্ড থেকে একটা লং টিশার্ট আর প্ল্যাজু ওয়াশ রুমে রেখে বললেন
“যা গোসল করে আয়।ভালো লাগবে।
রূপকথা বিছানা ছেড়ে উঠতেই শিউলি ন্যালির কাছে রূপকথার দায়িত্ব দিয়ে রান্না ঘরে দৌড় দিলেন।
ওয়াশ রুমের দরজা আটকে কিছুক্ষন স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইলো রূপকথা।এরপর শাওয়ার এর নব ছেরে দেয়ালে হেলান দিয়ে ধীরে ধীরে হাটু ভাঁজ করে বসলো।দুই হাতে ভাঁজ করা হাটু চেপে ধরে তাতে মাথা ছুইয়ে চোখ বুজলো সে।ঠান্ডা জলের স্পর্শ উত্তপ্ত শরীরে সুচের কাটার মতো বিধছে।সেই সাথে থর থর করে কেঁপে উঠছে পুরো শরীর।কিন্তু তাতে পাত্তা দিলো না রূপকথা।সে শুধু স্বপ্নের কথা ভেবে চলেছে।এ কি অদ্ভুত স্বপ্ন?
“তুমি কি সত্যিই আমার কাছে এসেছিলে সারফরাজ?নাকি আমার মনের ভ্রম এটা?আমি কি সত্যিই হারিয়ে ফেললাম তোমাকে ?কতো দূরে আছো তুমি?

নানাবিধ ভাবনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় মিনিট বিশেক পর ন্যালির দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে শাওয়ার বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো রূপকথা।এরপর ঝটপট পোশাক পাল্টে বাইরে বেরিয়ে এলো।রূপকথা বাইরে বের হতেই ন্যালি এগিয়ে এসে শরীর স্পর্শ করে আঁতকে উঠলো।শরীর পুরো বরফ সম।চোখ মুখ কুঁচকে ন্যালি ধমকে উঠলো
‘এতো কেউ ভিজে এই সকাল বেলা?নিউমোনিয়া হয় যদি?
ভাঙা মোটা গলায় রূপকথা বললো
‘আরে কিছুই হবে না।এখন আরাম লাগছে।
কথা বলতে বলতে হঠাতই রূপকথার নজর গেলো ন্যালির মুখে।অবাক চোখে রূপকথা শুধালো
“ফুপি মেরেছে তোকে?কিন্তু কেনো?
দ্রুত হাতে চুল দিয়ে গাল ঢাকতে ঢাকতে ন্যালি আমতা আমতা করে বললো
“আরে আম্মু মারে নি।অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছে।পরে বলবো।আপাতত রেস্ট নে।আমি একটু ঘুমাবো।সারা রাত ঘুম হয়নি।

“ঠিক আছে তুই তোর রুমে চলে যা।আমি একা একটু রেস্ট করবো কিছু সময়।
বাক্য ব্যয় না করে নিঃশব্দে চলে গেলো ন্যালি।ন্যালি যেতেই টেবিলের উপর ব্যস্ত হাতে কিছু খুজলো রূপকথা।কিন্তু পেলো না।কাঙ্খিত জিনিস না পেয়ে কেমন উন্মাদ হয়ে উঠলো সে।এরপর কাবার্ড,আলমারি,ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার সব জায়গায় আরো বেশ খানিক সময় নিয়ে খুললো।তাও পেলো না।এবার কান্নার উদ্রেক হলো তার।দৌড়ে ন্যালির কক্ষে এলো।কেবলই কাঁথা জড়িয়ে চোখ বুঝেছে ন্যালি।খট করে দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে বসে রূপকথা কে দেখতে পেলো

“আবার কি?
“আমার ছোট ব্যাগ প্যাক টা কোথায় ন্যালি?
“কোন ব্যাগপ্যাক?
বড় বড় অবাক চোখে জানতে চায় নেলি।
অস্থির বেদনার্ত কন্ঠে রূপকথা বলে উঠে
“কাল যেটা নিয়ে সারফরাজ দের বাড়ি গেলাম সেটা।
এবার ফাঁকা ঢোক গিললো নেলি।এবার কি হবে?সে তো ভুলে ওটা ফেলেই চলে এসেছে।কিন্তু ওই ব্যগ না পেলে রূপকথা কেঁদে কেটে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে।হায় হায় এবার বুঝি শিউলি সব বুঝে যায়।
“চুপ করে আছিস কেনো নেলি?আমার ব্যাগ কোথায়?
“আ আ আসলে ওই ব্যাগ ওই বাড়িতেই ভুলে ফেলে এসেছি আমি।
“এতো বড় ভুল কি করে করতে পারলি তুই?এতো মন ভোলা হলে কিভাবে চলবে বলতো?তুই কি ছোট বাচ্চা,?আমি কিচ্ছু জানিনা।আমার ব্যাগ এনে দে।

রূপকথার মামু বাড়ির আবদারে নেলির ঘুম ছুটে পালালো।মাথা ভো ভো করে ঘুরে উঠলো।কেয়ারটেকার ওরফে দারোয়ান এর কাছে বন্দুক আছে এটা কিভাবে রূপকথা গাধিকে বোঝাবে সে?এবার কি হবে তার?
“এমন বোকার মতো তাকিয়ে আমাকে কি দেখছিস নেলি?
রূপকথার চেঁচানোর শব্দে কেঁপে উঠলো নেলি।এরপর ফাঁকা ঢোক গিলে বলে উঠলো
“সিংহের খাঁচায় আমাকে কেনো ঢোকাতে চাইছিস বনু?
“আমি এত কিছু জানিনা।তুই এখনই চল।ওই ব্যগ ছাড়া আমি বাঁচবো না।ওই ব্যাগ আমার প্রাণ নেলি।
“সামান্য একটা ব্যাগের জন্য বোনের প্রাণ সদকা করে দিতে চাইছিস হৃদয় হীন মানবী?বাজার থেকে এর চাইতে দামি ব্যাগ কিনে দেবো।তবুও ওই বাড়িতে আমাকে যেতে বলিস না।পিলিস।
“ওই ব্যাগ ই লাগবে আমার নেলি।ওই ব্যাগে আমার জীবনের বারোটা বছর বন্দি আছে।আমার আবেগ,আমার মনে জমানো কথা সব ওই ব্যাগে আছে।ওই ব্যাগ আমার চাই।চাই মানে চাইই।
নেলির এবার কেঁদে ফেলার উপক্রম হলো।রূপকথার হুংকারে মাথার ছোট উকুন গুলো কেমন কুট কুট করে মগজ কামড়ে চলেছে।অজানা মরন ভয় হৃদয় এ হাতুড়ি দিয়ে ইচ্ছে মতো জোরে জোরে বাড়ি দিচ্ছে।চোখ ভর্তি ঘুম সেতো কোন আমলে পালিয়েছে।এবার তবে উপায়?

“কি হলো উঠছিস না কেনো?
রূপকথার আরেক দফার তাড়ায় বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো নেলি।পায়জামার এক পা হাঁটুর উপরে আরেকটা হাটু সম।গায়ের স্লিপিং শার্টের বোতাম এলোমেলো করে লাগানো।পাখির বাসার ন্যয় কোঁকড়ানো চুল গুলো দেখে আস্ত এক পাগল মনে হচ্ছে তাকে।এমন বেশেই নেলি বলে উঠলো
“অজগরের কাবাবের চাইতে গুলি খেয়ে মরা বেটার।ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে যাবো।আপাতত দোহাই লাগে একটা ঘন্টা ঘুমুতে দে।নৃশংস মৃত্যুর আগে একটু শান্তির ঘুম ঘুমুতে চাই।

খুব সকাল সকাল অভিরূপ এলো সারফরাজ এর বাড়িতে।অভিরূপ এর মা অনিমা নাসরিন খুব যত্ন করে সারফরাজ এর জন্য নাস্তা বানিয়ে পাঠিয়েছেন।আর তাছাড়া আজ সারফরাজ এর গাড়ি কিনতে যাবার কথা।এখানে আসার পর থেকে নিজের ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রতিও খুব উদাসীন হয়ে গেছে সারফরাজ।অভিরূপ একা হাতে এসব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।যদিও লুইস আর ইয়ং এলে সে কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচবে।
অভিরূপ যখন সারফরাজ এর ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো তখনও সারফরাজ ঘুম থেকে উঠেনি।বাড়ির কেয়ারটেকার কামাল এর কাছে সারফরাজ এর খোঁজ করতেই জানা গেলো কিছুক্ষন আগেই সে বাসায় ফিরেছে।
কামালের কাছে নাস্তার বক্স সোপর্দ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো অভি।সারফরাজ এর কক্ষের দরজায় হালকা নক করতেই গমগমে স্বরে জবাব এলো

“ভেতরে আয়।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই বিছানায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে দেখা গেলো সারফরাজ কে।কোনো বাক্য অপচয় না করে নিঃশব্দে পাশের ডিভানে বসলো অভিরূপ।কারন সারফরাজ এর চোখে মুখে চিন্তার রেশ।কেমন অদ্ভুত রাগী লাগছে তাকে এই মুহূর্তে।অভিরূপ কিছু ঠাহর করবার আগেই সারফরাজ ল্যাপটপ ফেলে অভির পানে তাকিয়ে বলল
“আমার ড্রাগস কারখানায় পুলিশ এসেছিলো অভি।
সারফরাজ এর শীতল গলার ভয়ানক কথায় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো অভিরূপ।পাল্টা প্রশ্ন ফাঁকা মস্তিষ্কে এলো না।তবুও কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে বিড়বিড় করে শুধালো

“পরে?
“কেভিন সব সামলেছে।কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো পুলিশের কাছে খবর কে দিলো?
অভিরূপ কপাল কুঁচকে কিছু ভাবার চেষ্টা করলো।এরপর উত্তর দিলো
“জ্যাসকিন কে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না।ইয়ং কে বল ওর উপর নজরদারি করতে।
“ঠিক ধরেছিস।আমি নিজেও ওকেই সন্দেহ করেছি।আমার তীর যদি সঠিক নিশানায় লাগে তবে ওর জন্য খুব সুন্দর সুন্দর শাস্তির ব্যাবস্থা করবো আমি।যদিও ভেবে রেখেছি ওর মৃত্যু ঠিক কিভাবে হবে।এটলিস্ট কোন বিশ্বাস ঘাতক আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না।
অভিরূপ এর সাথে কথা শেষ করে ইয়ং আর লুইস এর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রয়োজনীয় কথা সারলো সারফরাজ।এরপর তাদের ইমারজেন্সি বাংলাদেশ আসার জন্য টিকিট কাটতে বললো।
ল্যাপটপ রেখে সুফিয়ান চৌধুরীর বিষয়ে অভিরূপ এর কাছে মুখ খুললো সারফরাজ।
“কমিশনার আমার সাথে দারুন এক খেলা খেলেছে অভি।
“রূপকথার পালক বাবা?
“হু।
“কি করেছে?

“ভদ্রলোক কোনো কারণে রূপকথাকে আমার থেকে দূরে রাখতে চায়।এটা আমার সহ্য হচ্ছে না।কমিশনার কে পানি দিয়ে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।
“বাবা হিসেবে এটা স্বাভাবিক নয়?তোর বিবেক কি বলে?
“বিবেক তো আবেগের কাছে হেরে বসে আছে।আবেগে ভাসছি আমি।আপাতত বিবেক কাজ করছে না।
“কমিশনার তার জায়গায় রাইট।কেউ চাইবে না নিজের মেয়ে কোনো ভয়ানক ক্রিমিনাল এর চক্করে জড়াক।
অভিরূপ এর তেঁতো সত্যি কথায় সারফরাজ এর চকচকে ফর্সা মুখে অমাবস্যার অন্ধকার নামলো।দাঁত দিয়ে নিম্ন ভাগের পাতলা ঠোঁট কামড়ে ধরে ঠোঁট পাউট করলো।এরপর বললো
“আমি কি তার মেয়েকে চুমু খেতে চেয়েছি নাকি?শুধু দেখতে চেয়েছি কতো বড় হয়েছে।একটু দেখতে দিলে কি হয়?
চুমুর কথা বলে নিজে নিজেই লজ্জায় লাল হলো সারফরাজ।অভিরূপ এর চোখে তা এড়ালো না।ঠোঁটে দুস্টু হাসির রেখা ফুটিয়ে অভি বললো
“চুমু কিভাবে খেতে হয় তুই জানিস?খেয়েছিস কাউকে চুমু?
সারফরাজ বুঝলো অভি সুযোগ পেয়েছে তাকে হ্যানস্থা করার।এই সুযোগ কোনো ভাবেই অভিকে দেয়া যাবে না।তাই চোখে মুখে গম্ভীরতা আর কঠোরতা ফুটিয়ে বললো

“কমিশনার এক বেঢক মেয়ে মানুষের ছবি আমাকে দেখিয়ে বলেছে ওটা রূপকথা।বিশ্বাস হয়নি আমার।এতো কিউট বাচ্চা কখনোই এমন বেখাপ্পা চেহারার অধিকারি হতে পারে না।কিন্তু যখন আমি রিয়েল রূপকথা কে দেখেছি বিশ্বাস কর আমার হৃদপিণ্ডের ধারকান বন্ধ হয়ে গেছে।
“তুই দেখেছিস ওকে সামনে থেকে?
অন্যমনস্ক হয়ে সারফরাজ উত্তর দেয়
“হু।
উচ্ছসিত অভি শুধায়
“কেমন দেখতে?তুই কল্পনা করে অনুমান এর ভিত্তিতে যেমন ছবি একেছিস তার মতো?
“তার চাইতেও সুন্দর!

রূপকথার আলাপ চারিতায় ঘড়ির কাটা তরতর করে সময় পাড় করে দিলো আরো দুই ঘন্টা।রূপকথাকে নিয়ে সারফরাজ এর অনুভূতি কি তা বোঝা গেলো না।এবার অভিরূপ ধরেই নিলো সারফরাজ কে দিয়ে এই জন্মে প্রেম ভালোবাসা বা বিয়ে কিচ্ছুটি হবে না।
কথায় কথায় সারফরাজ হঠাৎ কঠিন মুখশ্রী করে বলে উঠলো
“নিয়াজ মোর্শেদ এর খবর নিয়েছিস?
অভিরূপ মাথা ঝাকিয়ে বললো
“বুড়ো হয়ে গেছে ছেড়ে দে।দুদিন পর এমনিতেই মরে যাবে।
“রূপকথার কপাল ফাটিয়েছিলো ওই নিয়াজ।আমি ওকে বলেছি আমি ওকে খেয়ে ফেলবো।আমি আমার কথার বরখেলাপ কখনো করিনি।ওকে না খেলে আমার পেটের ক্ষুধা মিটবে না।
তপ্ত শ্বাস ফেলে অভিরূপ একটা ঠিকানা বের করে বললো

“এখানে ছেলে মেয়ে আর ছোট একটা নাতনি নিয়ে থাকে।স্ত্রী গত হয়েছে অনেক আগে।ক্যারিয়ারে অসৎ থাকায় তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বছর চার আগে।
তাচ্ছিল্য হেসে সারফরাজ বললো
“কুকুরের লেজে ঘি মাখালেও তা বাকাই থাকে।
অভি আর সারফরাজ এর কথার মাঝখানে নজরুল এসে গলা খাকরি দিলো দরজার বাইরে।সারফরাজ বুঝলো খাবার জন্য ডাকতে এসেছে নজরুল।তাই ভনিতা না করে গলা বাড়িয়ে বললো
“টেবিলে খাবার দাও আসছি।

সকালের খাবার দুপুরের একটু আগে আগে খেলো অভিরূপ আর সারফরাজ।এরপর ঝটপট শাওয়ার নিয়ে অভির সাথে বাইরে যাবার জন্য তৈরি হলো সে।মাথার ভেজা চুল গুলো মুছে গায়ে একটা ব্ল্যক শার্ট চাপালো।ব্ল্যাক প্যান্ট আর ব্ল্যাক সুটে নিজেকে সাজিয়ে রোদ চশমা নিয়ে বেরিয়ে এলো।বাড়ির বাইরে।
কিন্তু চপল পা দুটো নিমিষেই থেমে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত কারো আগমনে।সামনে আগত দুই মানবী কে দেখে অভিরূপ শুধালো
‘তোর আত্মীয়?

চেকমেট পর্ব ২০

সারফরাজ আনমনে জবাব দিলো
“হু।
“কেমন আত্মীয়।
“আত্মার আত্মীয়।এটাই রূপকথা।

চেকমেট পর্ব ২১ (২)