চেকমেট পর্ব ৪৪

চেকমেট পর্ব ৪৪
সারিকা হোসাইন

পায়ের উপর পা তুলে নিজের থ্রোন চেয়ারে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে আছে সারফরাজ। কোলে তার মাস ছয়েক এর ছেলে বসে বসে আঙ্গুল চুষছে।পরম যত্নে ছেলেকে কোলে নিয়ে সামনে বসা গ্যাঙ দের উদ্দেশ্যে জ্ঞানের বয়ান ঝাড়ছে সারফরাজ।পাশেই আলুথালু রূপকথা।চুল নয় যেনো পাখির বাসা।চোখের নিচে গাদা গাদা কালি,শীর্ণ হাত পা।কঙ্কাল সার দেহ থেকে খোলে পড়ছে গায়ের জামা ।করুন শুকনো মুখ খানি দেখে মনে হচ্ছে বাপ ছেলের অত্যাচারে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

কয়েক পল গড়াতেই ভঙ্গ হলো সারফরাজ এর জ্ঞানের আসর।আগত মানুষ জন চলে যেতেই রূপকথাকে কাছে টেনে নিলো সারফরাজ।তুলতুলে ফর্সা গোল আলুর মতো দেখতে ছেলেটাকে পটাপট চুমু একে রূপকথার উদ্দেশ্যে সারফরাজ বলে উঠলো
“আমার এরম আরো বিশ পঁচিস টা গোল আলু চাই।চলো এখনই প্রসেস শুরু করি।নইলে পরে আবার দেরি হয়ে যাবে।তাছাড়া তোমার বাপ কে একদম ভরসা নেই।ব্যাটা সব জায়গায় এক হাত ঢুকিয়ে বসে থাকে।
“এই না না এক দম না।আমার মেয়েকে এভাবে জ্বালালে তোকে আমি খুন করে ফেলবো হতচ্ছাড়া।আমার ছোট বাচ্চাটা তোর এতো গুলো বাচ্চা সামলাতে পারবে না এই আমি বলে দিলাম হারামজাদা।দামড়া টা আমার মেয়েকে মারতে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে ঐখানে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাগুলো চিৎকার করে বলতে বলতে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলেন সুফিয়ান চৌধুরী।তার পুরো শরীর ঘেমে জপজপে অবস্থা।অসুস্থ রেখা স্বামীর এসব আবোল তাবোল কথা শুনে কোনো মতে নড়েচড়ে উঠে বসলেন।এরপর টেবিল ল্যাম্প এর সুইচ টিপে ঘর আলো করে উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন
“কিসের বাচ্চা?কার বাচ্চা?কাকে খুন করবে তুমি?
স্ত্রীর প্রশ্নে চারপাশে নজর বুলিয়ে সুফিয়ান নিশ্চিত হলেন তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন।নিজেকে কোন মতে ধাতস্থ করে পরনের লুঙ্গি দিয়ে মুখ হাত গলা মুছলেন।এরপর বিড়বিড় করে বলে উঠলেন
“বজ্জাত ছেলেটার জন্য আমার ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে।কোন ভেলকি বাজিতে পরে মেয়েটাকে যে দিলাম।এখন টেনশনে টেনশনে হাইপার টেনশন হয়ে যাচ্ছে।

বির বির করতে করতে বালিশের তলা থেকে ফোন বার করলেন ভদ্রলোক।ফোনের স্ক্রিন ট্যাপ করে সময় দেখলেন।ঘড়িতে রাত প্রায় ভোর চারটে।আকস্মিক মস্তিষ্কে হানা দিলো ভোর রাতের স্বপ্ন সত্যি হয়।আজগুবি ভয়ানক সপ্নের কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠলো সুফিয়ান চৌধুরীর।সারফরাজ এর গতিবিধি তিনি জানেন।এর মতো ভেলকিবাজ,বজ্জাত আর দুটো হয়না।সুফিয়ান চৌধুরীর ঘুম ,ক্লান্তি সব কোথায় যেনো পালালো।তিনি কোনো কিছু বিবেচনা না করেই সারফরাজ এর নম্বরে কল করলেন।কিন্তু রিং না হয়েই কেটে গেলো।সুফিয়ান এবার উন্মাদ হয়ে উঠলেন।তিনি সারফরাজ এর মেসেঞ্জারে ঢুকে সারফরাজ কে লাইনে পেয়ে সরাসরি ভিডিও কল দিলেন।কীয়তখন রিং বাজতেই রিসিভ হলো ফোন।সারফরাজ ঠোঁটে বাঁকা হেসে জবাব দিলো

“ইয়ো কমিশনার সাহেব।কি অবস্থা?মেয়ের চিন্তায় ঘুম হচ্ছেনা?ডর লাগছে?
সুফিয়ান দাঁতে দাঁত পিষে ধমকে উঠলো
“তোর চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবো আমি শুয়োর।
সারফরাজ অবাক হবার ভান ধরে বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো
“এই যাহ!আমি আবার কি করলাম?আমার উপর এভাবে রেগে যাচ্ছেন কেনো আপনি শশুড় আব্বা?আর এতো রাতে না ঘুমিয়ে ফোন করেছেন কোন দরকারে?খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন বুঝি?
সুফিয়ান চিরবিড়িয়ে উঠা রাগ কন্ট্রোল করে বলে উঠলেন

“আমার মেয়ে কোথায়?কি করেছিস আমার মেয়ের সাথে?শিগগির আমার মেয়েকে ফোন দে।তোর থোবড়া দেখতে মোটেও ইচ্ছে করছে না এতো রাতে।
সুফিয়ান এর কথায় সারফরাজ কিটকিটিয়ে হেসে শুধালো
“তা কি দেখলেন?নাতি নাকি নাতনি?
সুফিয়ান চাপা গর্জন করে ধমকে বললেন
“তোকে আমি জেলে ভরবো শালার ব্যাটা।তুই আমাকে অযথা টেনশন দিচ্ছিস।আমি মরে গেলে খুশি হবি তুই তাই না?

এবার রসিকতা ছাড়লো সারফরাজ।রূপকথাকে ডেকে কাছে এনে বললো
“বাড়িতে কল করে জানাও নি?নাও তোমার বাবা কল করেছে।কথা বলো।
ভিডিও কলে সুফিয়ান কে বিধস্ত অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলো রূপকথা।সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল
“তোমাকে এমন লাগছে কেনো পাপা?কিছু হয়েছে?আম্মু ঠিক আছে?
সুফিয়ান চোখ বুজে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করলেন।এরপর বলে উঠলেন
“বাড়ি ফিরলে চড়িয়ে তোমার সব কটা দাঁত আমি ফেলে দেবো রূপকথা।তোমার জেদের প্রশ্রয় দিতে দিতে আমার আধ মরা হবার জোগাড়। না ঠিক মতো ডিউটি করতে পারছি,না খেতে পারছি না ঘুমাতে।
রূপকথা মাথা নিচু করে ছোট মুখ করে বললো

“আসলে লম্বা জার্নি করে এতোই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম যে আর ফোন দিতে পারিনি।আম সরি।
সুফিয়ান হিসহিস করে উত্তর করলেন
“তোমার সরীর নিকুচি করি আমি।শুনো পই পই করে বলে দিচ্ছি ওই সাংঘাতিক ছোকরার থেকে বিশ হাত দূরে দূরে থাকবে বুঝেছো?বাপকে অনেক জ্বালিয়েছো, এবার একটু শান্তি দাও বাবা।
সারফরাজ পাশ থেকে বলে উঠলো

“খামোখা দুশ্চিন্তা করছেন আপনি কমিশনার সাহেব।এসব ছাইপাশ চিন্তা ফেলে আরামসে ঘুমান।আপনি এতো শিগগিরই নানা হবেন না।
সুফিয়ান ধমকে রূপকথাকে শুধালো
“দেখেছো কতো বড় বেহায়া আর বেয়াদব এই ছেলে?
রূপকথা বুঝলো সুফিয়ান কোনো দুঃসপ্ন দেখে এমন ঘাবড়ে গিয়েছে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলে উঠলো
“তুমি টেনশন নিও না।আমি বিশ হাত দূরত্ব মেপেই চলবো।আম্মুকে ফোনটা দাও।
বলা মাত্র রেখা ফোন হাতে নিলো।রূপকথা রেখাকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে উচ্ছসিত গলায় বললো
“সারফরাজ তো বনের রাজা টারজান আম্মু।শুধু তফাৎ টারজান গাছের ছাল বাকল পরে থাকতো আর গাছে গাছে ঘুরে বেড়াতো পশুপাখির সাথে।কিন্তু সারফরাজ দামি কাপড় পরে আর সুবিশাল রাজকীয় প্রাসাদে থাকে।বাড়িটা খুব সুন্দর।তোমাদের ওখানে যখন সন্ধে নামবে তখন আমায় একবার ভিডিও কল করবে।তোমাকে এই মোহনীয় সৌন্দর্য না দেখালে তোমার জীবন বৃথা।

মেয়ের উচ্ছাস আর খুশিতে রেখা প্রশস্ত হাসলেন।এরপর বললেন
“ঠিক আছে দেবো।এখন রাখছি কেমন?
রেখার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে সুফিয়ান বললেন
“মনে থাকে যেনো বিশ হাত।
সারফরাজ রূপকথার থেকে ফোন নিজের হাতে নিয়ে ঠান্ডা গম্ভীর গলায় বলে উঠলো
“রূপকথা আমার কাছে এখনো ছয় বছরের সেই ছোট্ট মেয়েটিই রয়েছে কমিশনার সাহেব।যেখানে ওকে পবিত্র রাখতে আমি সুবহান চৌধুরীর হাবেলীকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে দেশ ছাড়া হলাম সেখানে আমি নিজেই ওকে অপবিত্র করবো এটা আপনার মনে কি করে এলো কমিশনার সাহেব?
সুফিয়ান ইতস্তত করে উত্তর করলেন
“যেদিন বাপ হবি সেদিন বুঝবি।রাখছি।
আর কথা বাড়ালেন না সুফিয়ান চৌধুরী।ফোন কেটে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন।যাবার আগে রেখাকে বললেন
“তুমি ঘুমাও।আমি মসজিদে নামাজ সেরে জগিং করে বাজার নিয়ে একবারে বাড়ি ফিরবো।

নিজ কক্ষে রকিং চেয়ারে বসে বসে নানাবিধ চিন্তায় বুদ হয়ে আছে রুদ্র।রূপকথাকে ফলো করবার জন্য যেই ছেলেটাকে মোটা টাকার বিনিময়ে হায়ার করেছিল বেশ কয়েকদিন ধরে তার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে সে।ইতোমধ্যে ডক্টর সোহানা পুলিশ কেইস করে মেন্টাল হসপিটালের ডিরেক্টর কে ধরিয়ে দিয়েছে।শুধু তাই নয় রুদ্ররাজ তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছে এটা নিয়েও সে রুদ্রের নামে কেইস ফাইল করেছে।পুলিশের দু ঘা খেয়েই রুদ্ররাজ এর কুণ্ডুলি খোলাসা করেছে ওই ডিরেক্টর।রুদ্ররাজ মায়া চৌধুরী কে নিজের টোপ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ইচ্ছে করেই মেন্টালি সিক করে পাগলা গারদে ফেলে রেখেছে বছরের পর বছর।সারফরাজ সুফিয়ান চৌধুরীর সাহায্য নিয়ে রুদ্রের বিরুদ্ধে বেশ শক্ত কেইস করেছে।কোনো ভাবেও যদি কেউ রুদ্রের হদিস পায় তবে এখানেই রুদ্রের সমস্ত খেল খতম।

সারফরাজ এর কঠিন জালের বিস্তার সর্বত্র।সারফরাজ এখন কোথায় আছে এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক কি হতে পারে সেবিষয়েও কিচ্ছুটি আঁচ করতে পারছে না রুদ্র।
চেয়ারের দোল থামিয়ে স্থির হয়ে বসলো রুদ্ররাজ।এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বিতৃষ্ণায় লাথি দিয়ে দূরে ছিটকে ফেললো রকিং চেয়ার খানা।রুদ্র এবার মনে মনে এক ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিলো।
যেহেতু প্রেমিকা,মা কাউকে দিয়েই সারফরাজ কে থামানো যাচ্ছে না তবে সারফরাজ কে চিরতরে শেষ করে দেয়াই উত্তম।মাথাও নেই, ব্যাথাও নেই।
“খুব শীঘ্রই তোকে জাহান্নামে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি ছোট।এভাবে তোর পিছে ছুটে হয়রানি হতে আর ইচ্ছে করছে না।আমি বড্ড ক্লান্ত।

বলেই কুৎসিত হাসলো রুদ্ররাজ।এমন সময় ভাইব্রেট হলো নিজের ফোন খানা।পকেট থেকে হাতড়ে ফোন চোখের সামনে আনতেই ডক্টর জেমস এর নামটা জ্বলে উঠলো।রুদ্রের বুঝতে বাকি রইলো না হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে কানে তুলতেই ডক্টর জেমস উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো
“Your mother left the hospital without informing anyone, doctor!
ডক্টর জেমস এর কথায় রুদ্রের ফর্সা কপালে চিকন ভাঁজ পড়লো।অধিক ক্রোধ আর হতাশায় হাত মুঠিবদ্ধ হয়ে এলো।ফুলে উঠলো কপাল আর ঘাড়ের শিরা।চেপে এলো দাঁতের কপাট জ্বলে উঠলো গাঢ় নীল চোখ দুটো।নিজের গুছিয়ে রাখা প্ল্যান মুহূর্তেই যেনো বালির বাঁধের ন্যয় গুঁড়িয়ে গেলো।রুদ্র নিজেকে সংযত করতে না পেরে চিৎকার করে বলে উঠলো

“Find her within 24 hours by any means necessary.
Otherwise, I will file a case against your hospital.
বলেই হাতের মুঠোফোন ছুড়ে মারলো রুদ্র।অবলা জড়বস্তু শক্ত টাইলসের আঘাতে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হলো।ধপ করে মাটিতে বসে নিজের চুল খামচে ধরে রুদ্র হিংস্র কন্ঠে বলে উঠলো
“তোকে আমি ছাড়বো না সারফরাজ।খুব শীঘ্রই তোর জন্য পরপারের টিকিট কাটবো আমি।কঠিন থেকে কঠিন তম কষ্টে মারবো তোকে আমি।যেভাবে তোর বাপ আমার সামনে আমার বাবাকে মেরেছিলো।

এঞ্জেলোকে কোলে নিয়ে বসে আছে সারফরাজ।সামনে ড্যাভিন হাতের নোট ট্যাবে কিছু দেখছে।বিদেশি এই পুরুষের হ্যাজেল গভীর তীক্ষ্ণ চোখ দুটিতে চতুরতার খেলা।কিছু সময় গড়াতেই হাতের ট্যাব খানা সারফরাজ এর দিকে এগিয়ে ড্যাভিন বলে উঠলো
“দিজ হসপিটাল।
সারফরাজ ট্যাব খানা হাতে নিয়ে জুম করে দেখলো।এরপর আদেশ দিলো
“লাশের উপর লাশ পড়লেও আমার মাকে কোনো প্রকার চোট পৌঁছানো ছাড়া আমার হাতে চাই আমি ড্যাভিন।এই মুহূর্তে কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাইনা।যাও নিজের নিষ্ঠুরতার প্রমান দাও।
ড্যাভিন মাথা নাড়ালো।সে সারফরাজ এর আজ্ঞা পালনে সদা প্রস্তুত।উঠে দাঁড়ালো ড্যাভিন।এরপর বাইরে যাবার জন্য পা বাড়ালো।হঠাৎ কিছু মনে পড়লো তার।সে মাথা নত রেখে বলে উঠলো

“The drug dealer Mr. Nolan has invited you to his house tomorrow night.
It’s his daughter’s engagement party.
বলেই পকেট থেকে বাদামি রঙের একটা ইনভাইটেশন কার্ড সারফরাজ এর সামনে এগিয়ে দিলো ড্যাভিন।
মিস্টার নোলানের সঙ্গে সারফরাজ এর সম্পর্ক বেশ গভীর।কোনো ভাবেই তাকে আশাহত করতে চায় না সারফরাজ।তাছাড়া রূপকথা বিদেশি কালচার এর বিয়ে সাদি কখনো দেখেনি।যদিও জায়গাটা রূপকথার জন্য কম্ফোর্টেবল নয়।তবুও সারফরাজ ইচ্ছে পোষন করলো রুপকথাকে সঙ্গে নিয়েই যাবে।
তাই সে মাথা ঝাকিয়ে ড্যাভিন কে বললো

“তাকে জানিয়ে দাও কালকের পার্টিতে একজন কুইন উপস্থিত থাকবে।আয়োজন যেনো সেভাবেই করা হয়।
ড্যাভিন মাথা ঝাকিয়ে বিদায় নিলো।ড্যাভিন চলে যেতেই সারফরাজ রূপকথাকে ডাকলো।সারফরাজ এর ডাক পেয়ে রূপকথা দৌড়ে এলো।রূপকথার ছোট ছোট হাত দুটো নিজের করপুটে ভরে পরম আদরে কোলে বসালো সারফরাজ।এরপর চুলে বিলি কেটে মাথায় চুমু একে বললো
“কাল সন্ধ্যায় আমরা একটা বিয়ে বাড়িতে যাবো।তৈরি থেকো কেমন?
রূপকথা সারফরাজ এর কথা শুনে ঠোঁট উল্টে বললো
“কিন্তু আমার তো কোনো জামা’ই নেই।
রূপকথার কথা শুনে কপাল স্লাইড করলো সারফরাজ।এরপর তুচ্ছ হাসলো।রূপকথার উল্টানো নিচের ঠোটটা চেপে টেনে ধরে বললো

“তোমার বিশাল কাবার্ডে এক শত চুয়াল্লিশ টা নতুন জামা আছে রূপকথা আর তাদের সাথে ম্যাচিং জুতা,ব্যাগ কসমেটিকস।এরপরেও যদি বলো জামা নেই তবে এক্ষুনি শপিংয়ে চলো আমার সাথে।পুরো শপিং মল কিনে দেবো।
রূপকথা অবাক হয়ে শুধালো
“কতো টাকা তোমার সারফরাজ?
সারফরাজ দুস্টু হেসে হাস্কি গলায় বললো
“জতো টাকা হলে তোমার চাইবা মাত্র কোনো নাম না জানা শহর,অথবা বিষন্ন বিকেলে অনাবিল হাসি আর সুখ কেনা যায় ততো।
রূপকথা বড় বড় চোখ করে শুধালো

“এতো টাকা?
সারফরাজ মাথা ঝাকিয়ে বললো
“তোমার জামাই এর যেই টাকা আছে সেই টাকা দিয়ে এই ক্যালিফোর্নিয়া ঢেকে দেয়া যাবে।এখন বুঝেছো কত টাকা?
রূপকথা গলা খাকরি দিয়ে সারফরাজ এর বাইসেপ মাসল টিপতে টিপতে চকচকে চোখে বললো
“আমার একটা খায়েশ হয়েছে।
“কি খায়েশ?
চট করে শুধালো সারফরাজ।
রূপকথা ঠোঁট টিপে হাসি রোধ করে বললো

“তোমার চাইতে সুন্দর বডি ওয়ালা হ্যান্ডসাম ছেলেদের আমার সামনে এনে নাচাবো আর টাকার বান্ডেল ছুড়বো।প্লিজ না করবে না।এটা আমার বহু দিনের স্বপ্ন।শুধু টাকার অভাবে এতোদিন করতে পারিনি।
সারফরাজ সিরিয়াস ভঙ্গিতে চোখ গরম করে বললো
“এসব ফাতরামি করার টাকা নেই আমার কাছে।
“সারফরাজ প্লিজ।
“নো।
“তাইলে তুমি নাচো।তোমার বান্ডেল তোমাকেই ছুড়বো।
“সারফরাজ বড় বড় চোখ করে ধমক দিতে চাইলো রূপকথাকে।কিন্তু রূপকথা কিউট ফেইস বানিয়ে বললো
“ইকতু নাচলে কি হয়?

সারফরাজ বুঝলো ইচ্ছে করে ন্যাকামি করে এই মেয়ে তাকে নাকে দড়ি দিতে চাইছে।এতো সহজে ছাগল হয়ে ম্যা ম্যা করতে চায়না সারফরাজ।মেয়েদের একবার মাথায় তুললেই জীবন শ্যাষ।আজীবন মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে।
সারফরাজ মনে মনে নানাবিধ ভেবে গললো না রূপকথার সৌন্দর্য আর মিষ্টি কথায়।সে উঠে দাঁড়ালো নিজের কাজে যাবার জন্য।কিন্তু রূপকথা নিজের জেদে বহাল রইলো।সেই সাথে সারফরাজ কে সরাসরি হুমকি দিলো
“যদি না নেচেছো তবে আমি ছোট ছোট হাফ প্যান্ট পরে ড্যাভিন,ইয়ং আর লুইস এর সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াবো।
সারফরাজ বাঁকা হাসলো।এরপর বললো

“তুমি ন্যাঙটা হয়ে ঘুরলেও ওরা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখবে না তোমায়।যাও নিজের ঘরে যাও।আর মাথা থেকে এসব আজগুবি চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলো।এমনি ই এমনিই তোমার বাপকে দেখতে পারি না?ঠিক সময়ে ঠিক ভিটামিন আর পুষ্টিকর খাবার দিলে এমন মাথা মোটা গাঁধী হতে না।ইশ কি যে বিপদে পড়েছি।পস্তাতে পস্তাতে জীবন শেষ।

রূপকথা দৌড়ে উঠে এসে সারফরাজ কে খামচে ধরতে চাইলো তাকে গাঁধী বলার অপরাধে।কিন্তু পেছন ফিরে খপ করে রূপকথার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে সারফরাজ রূপকথার কানের কাছে ঝুকে ফিসফিস করে কিছু বললো।যা শুনে রূপকথা লজ্জায় রাঙা হলো।ঠোঁটের কোণে খেলে গেলো লাজের রক্তিম হাসি।সেই ঠোঁটের কোণে চুমু একে সারফরাজ বললো
“এমন লাজ রাঙা অধরে মরন হয় আমার।প্লিজ আর মেরো না।বিশ হাত দূরত্ব বজায় রেখেই চলো প্লিজ।নয়তো নিজের ভার্জিনিটি হারাবো আমি।আর যদি এর পরেও এভাবে আসে পাশে ঘুরঘুর করতে দেখি তবে ঠাটিয়ে চড় মেরে গাল ফাটিয়ে দেবো।
রূপকথা প্রতিবাদ করে বলে উঠলো

“আমি কখনোই ঘুরঘুর করিনা তোমার আশেপাশে।তুমি নিজেই আসো।
সারফরাজ কাতর চোখে হম্ভীতম্ভী করে বলে
“ওই দেখো সুন্দর ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে আবার কথা বলে।আর একটাও যদি কথা বলছো মেয়ে তাহলে কিন্তু তোমার বাপের স্বপ্ন সত্যি করে ছাড়বো।

চেকমেট পর্ব ৪৩

“কি স্বপ্ন?
ঝাঁঝালো গলায় শুধালো রূপকথা।সারফরাজ মোটা গলায় উত্তর করলো
“হালি হালি পোনা উৎপাদন এর স্বপ্ন।

চেকমেট পর্ব ৪৫