চেকমেট পর্ব ৪৬
সারিকা হোসাইন
মায়া চৌধুরী কে সারা ক্যালিফোর্নিয়া শহর জুড়ে খোঁজে চললো রুদ্ররাজ।কিন্তু মায়া চৌধুরী তো দূর তার ছায়ার পর্যন্ত হদিস পেলো না সে।রুদ্ররাজ জানে মায়া চৌধুরী পালিয়ে কোথাও যেতে পারবে না।তাকে ধরা পড়তেই হবে।হয় তার কাছে নয়তো পুলিশের হেফাজতে।নিজের চতুর মস্তিষ্কের স্মার্ট চিন্তায় নিজেকে নিজেই বাহবা দিলো সে।এরপর মায়া চৌধুরীর ছবি নিয়ে প্রত্যেকটি পুলিশ স্টেশনে নিখোঁজ কেইস ফাইল করলো।মিথ্যে কুমির কান্না করে পুলিশ স্টেশনের ডিটেকটিভ এর কাছে বেশ মা ভক্ত ও সাজলো বটে।ডিটেকটিভ মিস্টার এডওয়ার্ড তাকে আশ্বস্ত করলো যে ,যেভাবেই হোক তারা ডক্টর রুদ্ররাজ এর মাকে খোঁজে বের করবেই করবে।
টিস্যু দিয়ে চোখের নোনতা জল মুছে বেরিয়ে এলো রুদ্র।এরপর নিজের গাড়িতে বসে চোখ বুঝে সিটে হেলান দিলো।কীয়তখন বাদে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে লুকিং গ্লাসে নিজের চেহারা খানা পর্যবেক্ষণ করে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।এরপর নিজের বুক চাপড়ে নিজেই বলে উঠলো
“তুমি ভুল প্রফেশন বেছে নিয়েছো ডক্টর রুদ্ররাজ।তোমার তো অভিনেতা হবার কথা ছিলো।এতোদিন অভিনয় জগতে পা রাখলে দু চারটা অস্কার নিঃসন্দেহে ঘরে তুলতে পারতে।তোমার অভিনয় তো বাস্তবের চাইতেও নিখুঁত।ব্রাভো ডিয়ার রুদ্র ব্রাভো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
এরপর নিজের হাসি থামিয়ে হিংস্র মূর্তি ধারণ করলো রুদ্র।তার কানে খবর এসেছে তার চোখে ধুলো দিয়ে রূপকথাকে নিজের সাথে ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে এসেছে সারফরাজ।শুধু কি তাই?রূপকথাকে স্টক করা ছেলেটিকে দিয়েছে নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুর তম মৃত্যু।ঘূর্ণাক্ষরেও এমন কিছু টের পেলে রূপকথাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে এক মুহূর্ত সময় নিত না সে।সারফরাজ কে যতোটা ভেবেছিলো রুদ্ররাজ সারফরাজ তার চাইতেও হাজার গুণ শেয়ানা।কিন্তু এবার রুদ্র সারফরাজ কে মাটিতে নুইয়ে তবেই ক্ষান্ত হবে।অনেক লুকাচুপি হয়েছে।এবার আর লুকিয়ে লুকিয়ে খেলবে না রুদ্র।একবার মায়া চৌধুরী তার হাতে আসুক।পিষে পিষে মা ছেলেকে খু ন করবে সে।
মনের ভাবনা ভেবে গাড়ি স্টার্ট করলো রুদ্ররাজ।এরপর স্পিড হাকিয়ে ছুটতে লাগলো নিজ গন্তব্যে।
চোখ মুখে ভীতি ফুটিয়ে সারফরাজ এর পাশের সিটে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে রূপকথা।স্বাভাবিক মুখ ভঙ্গিতে দক্ষ হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে সারফরাজ।মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো অঘটন ই ঘটায় নি।অথচ কিছুক্ষন আগেই একটা তাজা প্রাণ শেষ করে এসেছে সে বিনা ভাবনায়।সারফরাজ এর ফকফকে সাদা শার্টের কলারে এখনো তাজা রক্তের স্পষ্ট দাগ।সারফরাজ এর নিষ্ঠুরতা মোটেও ভুলতে পারছে না সে।যতোই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভুলে থাকতে চাইছে রূপকথা ততোই যেনো তা চোখের সামনে প্রকট ভাবে ভেসে উঠছে।রূপকথা সারফরাজ থেকে চোখ সরিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।এই মুহূর্তে সারফরাজ কে ভালো লাগছে না তার।মানুষটা কল্পনাতীত নিষ্ঠুর।এমন হৃদয় হীন মানুষ কি করে সৃষ্টি করলো বিধাতা?রূপকথা কি কোনো দিন ও তাকে শুধরাতে পারবে না? এই পাপের পথ থেকে সারফরাজ কে কিভাবে ফেরাবে রূপকথা?
চুপচাপ বাইরের কুয়াশা ঘেরা রাস্তা আর গাছপালা দেখায় বিশেষ মনোযোগ দিলো রূপকথা।কিন্তু সব কিছুই কেমন অর্থহীন বিষাক্ত ঠেকছে তার কাছে।হঠাৎ সারফরাজ এর মুঠো ফোন বেজে উঠলো ভো ভো করে।ব্লু টুথ ডিভাইস কানেক্ট করে সারফরাজ ফোন তুললো
“ইয়াহ ড্যাভিন….
“Your mother isn’t here boss. She ran away.
ড্যাভিনের বলা কথায় সারফরাজ এর চোয়াল কেঁপে উঠলো।ছলছল হয়ে উঠলো নীল চোখ জোড়া।শরীর ভারসাম্য হারালো।গাড়ির গতি হলো এলোমেলো।অবস্থা আঁচ করবার আগেই এলোমেলো স্টিয়ারিং হুইল এর বিচরণে দুর্ঘটনা ঘটার উপক্রম হলো।ভয়ে চিৎকার করে উঠলো রূপকথা।বৃহৎ গাছের সাথে ধাক্কা খাবার আগ মুহূর্তে কঠিন ব্রেক কষলো সারফরাজ।এরপর রূপকথার পানে অসহায়ের ন্যয় তাকিয়ে বলে উঠলো
“আমার মা আবার হারিয়ে গেছে রূপকথা।নিষ্ঠুর খেলায় মেতেছেন উপর ওয়ালা আমার সাথে।আমি কি কখনোই আমার মা কে পাবো না?
জীবন খোয়ানোর অধিক ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছে রূপকথা। তন্মধ্যে সারফরাজ এর এহেন কথায় কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে তা খোঁজে পেলো না।রূপকথাকে নিশ্চুপ দেখে সারফরাজ বললো
“ভয় নেই।আমি তোমায় মারবো না।তোমার বাবা আমানত স্বরূপ তোমাকে তুলে দিয়েছেন আমার হাতে।কি করে তার খিয়ানত করি বলো?
রূপকথা ভীরু চোখ জোড়া নামিয়ে নিলো।সারফরাজ গাড়ি রাস্তায় তুলে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।মাঝারি গতিতে চলছে সারফরাজ এর গাড়ি।রূপকথা এবার সারফরাজ এর চিন্তা ফেলে মায়ার চিন্তায় বুদ হলো।ব্যথিত গলায় সে আওড়ালো
“এই ভয়াবহ শীতের রাতে কোথায় আছেন উনি?আজীবন কি সাজাই পেয়ে যাবে এরা মা ছেলে?কোন পাপের শাস্তি এটা?দুনিয়ার এই নারকীয় জেলখানা থেকে কবে মুক্তি মিলবে এদের?
সারফরাজ শহরের পথ ছেড়ে নিজের ফরেস্ট হাউজের পথ ধরলো।সামনে গহীন অরণ্য আর আঁকাবাঁকা রাস্তা।গাড়ির হেড লাইটের আলো ব্যতীত আর কোনো দুনিয়াবী আলো এখানে নেই।দল বেঁধে জোনাকি পোকা দূরে ছোট ছোট আলোক মশাল জ্বালিয়েছে।সেগুলো কুয়াশার বেস্টনে আলো বিলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
সারফরাজ এর চোখ মুখ শক্ত।তার মন মস্তিষ্কে এই মুহূর্তে কি চলছে তা রূপকথা জানেনা।কম্পিত শীতল হাতে রূপকথা সারফরাজ এর হাতের উপর ভরসা যুক্ত হাত রাখলো।সারফরাজ তাকিয়ে দেখলো না তা।তার দৃষ্টি পথের দূরত্বে।আকস্মিক কেউ ছুটে এলো গাড়ি অভিমুখে।এক্সিডেন্ট এড়াতে হঠাৎ জোরে ব্রেক কসলো সারফরাজ।কোনো কিছু বোঝার আগেই হুমড়ি খেয়ে কপালে বাড়ি খেলো রূপকথা।বাইরে থেকে ভেসে এলো মৃদু আর্তনাদ।সারফরাজ গাড়ির টুল বক্স থেকে নিজের গান লোড করে ঝটপট বাইরে বেরিয়ে এলো।এসে দেখতে পেলো একজন মানুষ মুখ থুবড়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে।সারফরাজ নাকের পাতা ফুলিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো।এরপর গম্ভীর ভারী গলায় ডাকলো
“হেই এক্সকিউজ মি।স্ট্যান্ড আপ।
কিন্তু মুখ তুললো না উক্ত মানুষ।
রূপকথাও বিচলিত হলো এবার।হেড লাইটের আলোয় রাস্তা চকচকে ফকফকে।মনের কোণে অল্প ভয় নিয়ে গাড়ির দরজা খোলে নামলো রূপকথা।এরপর গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।মলিন শাড়িতে আবৃত এক নারী মূর্তি চোখে আটকালো।কপাল কুঁচকালো রূপকথা।শাড়ির প্যাচ ভেদ করে শরীরের অবয়ব বা চেহারা কোনোটাই দেখা যাচ্ছে না।রূপকথার মনে ভয় বাড়লো।এমন বিদেশ বিভুঁইয়ে এধরনের পোশাকে কাউকে সে দেখতে পাবে এটা কল্পনাতীত।এদিকে সারফরাজ হুংকার ছেড়ে ডেকেই চলছে।রূপকথা হাটু মুড়ে বসে হাত বাড়ালো উক্ত মানুষটার পানে।সারফরাজ ঘন অরণ্যে ফাঁকা গুলি ছোড়ে বললো
“আই থিংক ইটস আ্য ট্র্যাপ।কেউ আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য এমন নাটক সাজিয়েছে।বিদেশে এসব নরমাল কমন ঘটনা।ডোন্ট টাচ হার।
রূপকথা হাত গুটিয়ে নিলো ভয়ে।কিন্তু পরক্ষনেই মন কেমন করলো।
সারফরাজ রাস্তায় পড়ে থাকা শীর্ণ দেহের মানুষটার পানে বন্দুক তাক করে হিংস্র গলায় বললো
“আ উইল কাউন্ট টু থ্রি।ইফ ইউ আর স্টিল স্ট্যান্ডিং দেয়ার,আই সয়ার আ উইল ড্রাইভ রাইট ওভার ইউ।
সারফরাজ এর হুমকিতে ভয়ে কেঁপে উঠলো রূপকথা।এই মানুষটাকে মোটেও বিশ্বাস করে না সে।যখন তখন যা তা করে দিতে পারে।তাছাড়া এমন গভীর রাতের বেলা কেই বা সারফরাজ কে ট্র্যাপে ফেলতে চাইবে?সত্যি সত্যি কেউ বিপদেও তো পড়তে পারে।
রূপকথার মনে হলো এটা কোনো ট্র্যাপ নয়।এই মানুষটির সত্যিই সাহায্য প্রয়োজন।
নিজের মনের কথায় বহাল রইলো রূপকথা।সারফরাজ এর কথা অমান্য করে রূপকথা চট করে চেপে ধরলো সেই মহিলা কে।এরপর সর্ব শক্তি দিয়ে নিজের পানে ঘোরালো।গাড়ির হেডলাইটের আলোয় মানুষটার চেহারা চকচক করে উঠলো।সারফরাজ নিজেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললো তার পানে।মুহূর্তেই বিস্ফারিত হলো দুজনের নজর।সারফরাজ এর চোখের কোল উপচে গড়ালো নোনতা ধারা।ঈষৎ ফাঁকা হয়ে তিরতির করে কেঁপে উঠলো কালচে লাল শুষ্ক ঠোঁট জোড়া।দুর্বল হয়ে এলো পুরুষালি শক্ত সামর্থ্য বৃহৎ শরীর খানা।রূপকথা কিছু বলার আগেই হাটু মুড়ে ধপ করে বসে গেলো সারফরাজ।এরপর বিস্ময় ভরা ভীত কন্ঠে ডেকে উঠলো
“মা!
রূপকথা মায়ার গাল চাপড়ে ডাকতে লাগলো
“আন্টি!আন্টি চোখ খুলুন।আন্টি দেখুন সারফরাজ বসে আছে আপনার সামনে।আন্টি,ও আন্টি?আপনার সারফরাজ কে দেখবেন না আন্টি?
রূপকথার কাকুতি প্রবেশ করলো না মায়ার কর্ণকুহরে।মায়ের এহেন নীরব মূর্তি সহ্য হলো না সারফরাজ এর।রূপকথার থেকে মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আকুল হয়ে ডাকলো
“ওই মা,মা।ও মা।মা চোখ খুলো।মাগো,দেখো আমি সারফরাজ।তোমার সেই ছোট রাজ।মা ও মা!চোখ খুলো মা।
মায়া চোখ খুলেনা জন্য সারফরাজ ভয়ার্ত কন্ঠে রূপকথাকে শুধালো
“আমার মা তাকিয়ে আমায় দেখছে না কেনো রূপকথা?তুমি তো বলেছিলে মা আমাকে আজো ভুলেনি!তবে আমার মা কথা বলে না কেনো?
বলেই চিৎকার করে ধমকে উঠলো সারফরাজ।সারফরাজ এর গর্জনে কেঁপে উঠলো রূপকথা।রূপকথার মনে হলো দুর্বলতা ভয় শারীরিক ধকল সব কিছু থেকে মায়ার সেন্স হারিয়ে গেছে।তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
এদিকে রূপকথাকে নিরুত্তাপ দিলে আর এক মুহূর্ত কাল বিলম্ব করলো না সারফরাজ।ঝটকা দিয়ে মায়া চৌধুরী কে নিজের কোলে তুলে ভারসাম্য হীন পায়ে গাড়িতে তুললো।ব্যক সিটে মায়াকে পরম যত্নে শুইয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো সারফরাজ।ইঞ্জিন স্টার্ট করতে করতে কল করলো নিজের পার্সোনাল ডক্টর মিস্টার হ্যানরি কে।
এতো রাতে বোধ হয় ভদ্রলোক গভীর ঘুমে তলিয়েছে।কিন্তু তার তোয়াক্কা করলো না সারফরাজ।বার বার কল করতে লাগলো উক্ত নম্বরে।কিছু সময় অতিবাহিত হতেই মিস্টার হ্যানরি ঘুম জড়ানো বিরক্ত গলায় বললো
“সামওয়ান শুট ইউ ইন দ্যা চেস্ট?হুয়াই আর ইউ কলিং মি লাইক দিজ?ইটস ওয়ে পাস্ট মিডনাইট!
ভদ্রলোকের বিরক্তি বুঝলো সারফরাজ।তবুও নিজেকে সংযত রেখে কম্পিত ভয়ার্ত গলায় বললো
“প্লিজ সেভ মাই মাদার ডক্টর।
এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেলেন ডক্টর হ্যানরি।তার মনে হলো তিনি ভুল শুনছেন।তার জানা মতে সারফরাজ এর মা লাপাত্তা।মেন্টালি সিক হয়ে বহু বছর আগে কোথাও হারিয়ে গিয়েছেন তিনি।কিন্তু সারফরাজ হঠাৎ তার মাকে বাঁচাতে বলছে।তবে কি সারফরাজ তার মাকে খোঁজে পেয়েছে?কবে?কোথায়?কিভাবে?
হ্যানরিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে সারফরাজ আবার কাতর গলায় বলে উঠলো
“প্লিজ ডক্টর।আ ইউল গিভ ইউ এভরিথিং আই হ্যাভ।জাস্ট প্লিজ।প্লিজ সেভ মাই মম।
ডক্টর হ্যানরি তপ্ত শ্বাস ফেললেন।এরপর বললেন
“আম কামিং।ডোন্ট ওয়ারি।
ভিসা অফিসে নিজের পরিবারের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার ভিসার সকল প্রসেস সম্পন্ন করে ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে এলো অভিরূপ।কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ব্যাস্ততার জন্য নেলিকে সময় দেয়া হয় উঠছে না।অভি ভাবলো ফেরার পথে কলেজে গিয়ে একবার নেলিকে দেখে যাবে সে।সেই ভাবনায় বহাল থেকে বাইক ছুটিয়ে চলে এলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ এরিয়ায়।নেলিকে খুশি করতে নিকটবর্তী একটা ফুলের দোকান থেকে নেলির পছন্দের লাল গোলাপ কিনলো অভি।এরপর কল করলো নেলির নম্বরে।
ক্লাসে প্রফেসরের লেকচার শুনতে শুনতে ঝিমুচ্ছিলো নেলি।এমন সময় ভোঁ ভো করে ব্যাগের ভেতর বেজে উঠলো ফোন।কপাল কুঁচকে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই অভির নম্বর দেখে সমস্ত ঝিমুনি গায়েব হলো।মাথা ডেস্কের নীচে ঢুকিয়ে ফোন রিসিভ করে নেলি ফিসফিস করে বললো
‘বলো।
অভি পটাপট নিঃসঙ্কোচ এ বললো
“ক্লাস শেষ হলে একবার গেটে এসো।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।
অভি বাইরে অপেক্ষা করছে শুনেই নেলির পেটে ভুটুর ভুটুর করে উঠলো।ক্লাসে আর মন বসলো না তার ।বহু কষ্টে ছটফট করে ক্লাস শেষ করে তাড়াহুড়ো করে ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে এলো নেলি।
এদিকে লম্বা ডাট ওয়ালা সতেজ ফুলের তোড়াটা পিঠ পিছে ধরে অপেক্ষা করতে লাগলো অভি।নেলি এলে হুট করে ফুল গুলো বের করে তাকে চমকে দেবে সে।ফুল গুলো নিয়ে অধীর হয়ে কলেজের প্রধান গেইটের পানে তাকিয়ে দৃষ্টি মন দুই ই স্থির করলো অভিরূপ।
কয়েক মুহূর্ত সময় গড়াতেই চপল পায়ে দৌড়ে এলো নেলি।নেলিকে দেখে অভির সকল ক্লান্তি গায়েব হলো।শ্যামলা কঠিন মুখশ্রী হলো চনমনে প্রাণবন্ত।মেয়েটি হেলেদুলে অভির সামনে এসে দাড়ালো।এরপর লজ্জায় মাথা নত করে শুধালো
“কখন এলে?
অভিরূপ মিস্টি হেসে প্রত্যুত্তর করলো
“কিছুক্ষন আগে।
নেলি শুধালো
“এই গরমে অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম তোমায়।কষ্ট হয়েছে বুঝি?
অভিরূপ তৎক্ষণাৎ মাথা নাড়লো।এরপর বললো
“তোমার জন্য যুগ যুগ অপেক্ষা করলেও আমার কষ্ট হবে না নেলি।বরং অধিক ভালোলাগা কাজ করবে।এই অপেক্ষায় মধু আছে।হাজার বার এই মধুর স্বাদ নিতে প্রস্তুত আমি।
বলেই লাজুক হেসে নেলির চোখে চোখ রেখে পেছন থেকে ফুল গুলো বের করে নেলির সামনে ধরে বললো
“তোমার সৌন্দর্যের কাছে এই ফুলের সৌন্দর্য বড্ড ফিকে আর রঙ হীন।তোমার হাতের ছোঁয়ায় এদের রাঙিয়ে দাও নাও।
নেলি লাজুক হেসে খুশি মনে ফুলের পানে তাকালো।কিন্তু একি!ফুল কোথায়?
ফুলের বদলে খাড়া খাড়া পাতা হীন কয়েকটা ডাটা রয়েছে শুধু।এমন উদ্ভট কাণ্ডে চোখ বিস্ফারিত হলো নেলির।
নেলির মুখের এক্সপ্রেশন দেখে নিজ হাত পানে চাইলো অভিরূপ।নিজের চোখ কে যেনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না।কিছুক্ষণ আগের সুন্দর ফুল গুলো মুহূর্তেই গায়েব।কিন্তু কি করে?না না যে হতে পারে না।অভিরূপ আশেপাশে নজর বুলালো উদ্ভ্রান্তের ন্যয়।সহসাই চোখে পড়লো এক বাদামি রঙের রাম ছাগল।যা অভির বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরামসে কিছু চিবুচ্ছে।অভির বুঝতে বাকি রইলো না এই অবলা প্রাণীটিই তার ডেটিংয়ের চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটিয়েছে।পরিস্থিতি সামাল দিতে হাতের ডাটি গুলো ফেলে নেলির হাত চেপে ধরলো অভিরূপ।এরপর বোকার মতো হেসে বলে উঠলো
“তোমার সৌন্দর্য দেখে ঈর্ষায় তারা ডাটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে নেলি।
নেলি মাথা ঝাঁকালো বোকার মতো।অভিরূপ মাথা চুলকে বললো
“চলো কোথাও গিয়ে বসি।
চেকমেট পর্ব ৪৫
মায়া চৌধুরী কে সার্বিক পর্যবেক্ষণ করে ডক্টর হ্যানরি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন
“তোমার মাকে ভালো কোনো হসপিটালে ভর্তি করা প্রয়োজন।তার হেলথ কন্ডিশন চূড়ান্ত খারাপ।যখন তখন যা কিছু হয়ে যেতে পারে।
সারফরাজ তাৎক্ষণিক মাথা নাড়ালো।এরপর উত্তর করলো
“আমি আর কাউকেই বিশ্বাস করি না ডক্টর।চিকিৎসা হলে আমার সামনেই হবে।আপনি বড় বড় মেন্টাল ডক্টর এপোয়েন্ট করার ব্যবস্থা করুন।ডক্টর কে টাকার চাদরে মুড়িয়ে দেবো আমি।বিনিময়ে শুধু আমার মাকে সুস্থ দেখতে চাই।