চেকমেট পর্ব ৫৭

চেকমেট পর্ব ৫৭
সারিকা হোসাইন

হাজারো গাড়ির বহর আর বাতাসের গতি ছাপিয়ে ধেয়ে চলেছে সারফরাজ এর কালো ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি খানা।গাড়ির স্পিড সর্বোচ্চ।চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা।একটু এদিক সেদিক হলেই সাঙ্গ হবে জীবনের লীলা খেলা।সারফরাজ এর গাড়ির গতি দেখে রাস্তায় চলা বাকি গাড়ি প্রাণপণে সাইড দিয়ে কেটে পড়ছে আর সারফরাজ কে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য গালিগালাজ ছুড়ছে।।কিন্তু এসবে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই সারফরাজের।তার শেষ কথা যেকোনো মূল্যে তার সিলেট যাওয়া চাই।

ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব মাত্র দুশো আশি কিলোমিটার।কিন্তু সারফরাজ এর কাছে মনে হচ্ছে হাজার কোটি কিলোমিটার এর পথ এখনো বাকি পরে আছে।রূপকথা একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে ছবি তুলেছে এটা ভাবতেই সারফরাজ এর বুক জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।আকাশ সম হিংসা এসে ঘিরে ধরেছে তাকে।মন বলছে শৈশব নামক ছেলেটার গায়ের চামড়া তুলে একটা কাঠির ভেতর গেঁথে আগুনে ঝলসাতে।সারফরাজ এর খুব ইচ্ছে হলো দেখা হওয়া মাত্র রূপকথার গালে ঠাটিয়ে কয়েকটা মারতে।কিন্তু এই স্বপ্ন কখনোই সত্যি হবে না তার।রুপকথার চোখের পানে তাকিয়েই সারফরাজ এর সমস্ত হাওয়া ফুস হয়ে যায়।মনের জাগ্রত বাঘ সহসাই কেমন ভেজা বিড়ালে রূপ নেয়।
সারফরাজ ঢাকার পথ পাড়ি দিয়ে সিলেটের হাইওয়ে ধরলো।মনে উত্তেজনার লাফালাফি।রূপকথা ওখানে কি করছে কে জানে?যদি সত্যিই তারা বাপ মেয়ে মিলে এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে তাদের দুজনকেই যমের দুয়ার থেকে পিকনিক করিয়ে আনবে সারফরাজ।আর যদি পুরো ঘটনা সাজানো হয় তবে রূপকথা প্রাণে বেঁচে যাবে।এই আরকি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রূপকথা আর তার ফ্রেন্ড নিকিতা কটেজের বেলকনিতে বসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর সারফরাজ কে নিয়ে আলোচনা করছে।
“আমার মনে হচ্ছে তুই আজ প্রেমিকের হাতে পেদানি খাবি।আমি কিন্তু ওসবে নেই বুঝলি?ভাইয়া এলে আমি তোদের স্পেস ছেড়ে দিয়ে পাহাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
নিকিতার স্বার্থপরী কথা শুনে রূপকথার শরীর জ্বলে উঠলো।সে ঝাঁঝালো গলায় বললো
“ঘুরার ফন্দি কে করেছে এই সময়?এখন যে সটকে পড়ছিস!

“ঘুরার প্ল্যান আমিই করেছি।কিন্তু তোরা বাপ মেয়ে মিলে যে, এমন প্যাচ লাগিয়েছিস তা কি আমি জানতাম?তোর সাথে সাথে তোর বাপ ও এমন মিথ্যুক কি করে হলো?মিথ্যে বলার ভ্যাকসিন নিয়েছিস তোরা বাপ মেয়ে মিলে?
রূপকথা পাহাড়ের ঢালের কচি চা পাতা দেখতে দেখতে আনমনে ভেবে চলছে নানান কথা।সারফরাজ কে একদম বিশ্বাস নেই।যদি আচমকা এসে শৈশব কে মেরে বসে তখন কি হবে?তাছাড়া শৈশব কেই বা এসব ঘটনা কি করে খোলে বলবে সে?বেচারা তো কোনো কিছু না জেনেই বলির পাঠায় পরিণত হয়েছে।
সারফরাজ এর ভয়ে নিকিতা,রূপকথার কারোর খাওয়া হলো না সকালে।রূপকথা বিছানায় ধপ করে শুয়ে সুফিয়ান চৌধুরী কে কল করলো।রিং হতেই ফোন তুললেন সুফিয়ান চৌধুরী।সুফিয়ান চৌধুরীর গলা পেয়ে রূপকথা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো

“তুমি আবার বেশি বেশি বলে ওকে খেপাতে গেলে কেনো?এখন যদি ভাইয়াকে এসে মেরে দেয়?সারফরাজ কে তুমি চেনো না?জানোনা ওর মাথা সবসময় দুশো ডিগ্রি গরম থাকে?
সুফিয়ান চোখ বুজে মেয়ের কথা গুলো শুনলেন।এরপর বললেন
“শৈশবের কি হবে তা জানিনা।কিন্তু তুই আজ মার খাবি আমি নিশ্চিত।
“আমি মার খেলে তোমার নাম ও বলে দেবো দেখো।তুমিই যে ওকে শায়েস্তা করার জন্য আমার কানে বিষ ঢেলেছো সব সারফরাজ কে আমি বলে দেবো বাবা।তখন আমি মার খাবো নাকি তুমিই খাবে সময়ই বলে দিবে।
সুফিয়ান টের পেলেন মেয়ে তার ঘর শত্রু বিভীষণ।সুফিয়ান চৌধুরী কিছুক্ষণ কাচুমাচু করে বলে উঠলো
“ঠিক আছে থানার সামনের রাস্তায় কানা ফকির টাকে পঞ্চাশ টাকা দেবো যাতে সারফরাজ তোকে পিটায়।বলেই জিভ কাটলেন।
রূপকথা চিৎকার করে বলে উঠলো

“কিঃ.
“এই সেরেছে।না মানে একশো টাকা দেবো যাতে তোকে একটা ধমক পর্যন্ত না দেয়।
রূপকথার চূড়ান্ত জেদ উঠলো সুফিয়ান চৌধুরীর উপর।সে ফোন কেটে ছুড়ে মারলো বিছানায়।খুশি মনে মাইন্ড রিফ্রেশিং এর জন্য কলেজ ফ্রেন্ড এর সাথে একটু ঘুরতে এসেছিলো সে।নেলির ও আসার কথা ছিলো।কিন্তু অভিরূপ কে এমন অবস্থায় ফেলে ফুর্তি করতে পারবে না বলে আসেনি।নেলিটা এখানে থাকলে তার থেকে কিছু উল্টোপাল্টা টিপস নেয়া যেতো।গাঁধী নিকি টা তো আগেই কেটে পড়তে চাইছে।এবার কি হবে?
রূপকথার ভাবনার মাঝেই দরজায় নক করলো কেউ ।রূপকথার আত্মারাম লাফিয়ে উঠলো সেই নকে।শীতল পাহাড়ি আবহাওয়ায় তার শরীর কুলকুল করে ঘামতে লাগলো।বিছানা ছেড়ে নামতে অক্ষম হলো রূপকথা।যদি সারফরাজ হয় তখন?

রূপকথার ভাবনার মাঝে পুনরায় নক হলো।নিকি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দরজা ইশারা করে বললো
“দরজার ওপারে তোর যম দাঁড়িয়ে আছে।আমি দরজা খুলে চলে যাচ্ছি।যাবার আগে আমি যে তোর ফেইক সোয়ামী এটাও বলে যাবো।আসছি।
বলেই খট করে দরজা খোলে ফেললো নিকিতা।দরজা খোলার শব্দে চমকে চোখমুখ কুঁচকে কাঁথার নীচে ঢুকে গেলো রূপকথা।রূপকথার এহেন অদ্ভুত অবস্থা দেখে দরজার ওপাশ থেকে শৈশব ডেকে উঠলো।
“কি রে শরীর খারাপ?ঘুরতে যাবি না?আজ না ঝর্ণা দেখতে যাবার কথা!আজকের ওয়েদার বেশ সুন্দর।ঝটপট তৈরি হয়ে নে।আমি নিচেই আছি।
বলেই পা বাড়ালো শৈশব।তাৎক্ষণিক কাঁথার নিচ থেকে মাথা বের করে শৈশবের যাবার পানে তাকিয়ে রূপকথা বলে উঠলো

“ভাইয়া আমি আজ কোথাও ঘুরতে যাবো না।আজ তুমি ভাবি আর বাচ্চাদের সাথে টাইম স্পেন্ড করো যাও।আজ আমার শরীর ভালো নেই।
রূপকথার শরীর ভালো নেই শুনে শৈশবের চিন্তা হলো।ভাবলো পাহাড় বেয়ে হয়তো জ্বর টর এসেছে।তাই রূপকথার বিছানার পাশে এসে দাড়ালো এরপর বললো
“দেখি জ্বরের মাত্রা কেমন?
রূপকথা নিজেকে ঠেলে দেয়ালের সাথে চিপকে রইলো।এরপর হাত নাড়িয়ে বলে উঠলো
“বাঁচতে চাইলে বাড়ি ফিরে যাও ভাইয়া।আমাকে ছুইও না প্লিজ।
রূপকথার অদ্ভুত কথায় শৈশব কপাল কুঁচকে শুধালো
“ছোয়াছে মরণব্যাধি হয়েছে তোর?তোকে ছুলেই আমি মরবো?
এবার নিকিতা মুখ খুললো।সে বলল

“ওর মাফিয়া দিওয়ানা প্রেমিক আছে একটা।তাকে শায়েস্তা করতে বাপ মেয়ে মিলে বহুত গ্যাঞ্জাম পাকিয়েছে।আপনাকে নিজের হাজব্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করেছে তাকে জেলাস ফিল করাতে।এখন জেলাসের আগুনে টিকতে পারছে না বাপ মেয়ে।আত্মা কেঁপে জ্বর উঠছে তাদের।
রূপকথার চুন্নী টাইপ চেহারার পানে তাকিয়ে শৈশব শুধালো
“তোর বয়স কতো?
“আঠারো প্লাস।
“তোর বাপের কতো?
“পঞ্চাশ।
“তোরা এখনো সুজি খাস?
“না।কেনো?

“আমার মনে হয় তোদের বাপ মেয়ের আয়োডিন এর ঘাটতি রয়েছে।এজন্য তোদের বোধ বুদ্ধি তেমন পোক্ত হয়নি।তোকে মেডিকেল কলেজে চান্স দিয়েছে কোন বুদ্ধু তাকে দেখার প্রচন্ড খায়েশ আমার।
বলেই তপ্ত শ্বাস ফেললো শৈশব।এরপর বললো
“কারো অনুভূতি নিয়ে মজা করা ঠিক না।প্রথমত তুই ভুল করেছিস দ্বিতীয়ত তোর বাপ তোর সাধ দিয়ে বড় ভুল করেছে।এখন এর মাঝে আমাকেও টেনেছিস।যাইহোক তাকে বলিস আমার হাত দুটো যেনো না ভাঙে।বউকে জড়িয়ে ধরতে কষ্ট হবে তাইলে।
বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো শৈশব।যাবার আগে শুধালো
“দেখতে কেমন?যাতে সামনে আক্রমন করতে এলে চিনতে পারি।আগেই যদি মাফ মুক্তি চাইবার সুযোগ হয় তাহলে তো বেঁচে গেলাম। এই আর কি।
রূপকথা নিজের ফোনের ওয়ালপেপার মেলে ধরলো শৈশবের সামনে।শৈশব ঠোঁট উল্টে বললো।।

“হট, নাইস, ওয়াও।
শৈশব চলে গেলো।শৈশব যেতেই নিকিতা একটা বুদ্ধি জাহির করলো।
“তুই ঘুরতেই চল।ওখানে অনেক মানুষ থাকবে।ভাইয়া তোকে মারতেও পারবে না ,ধমক ও দিতে পারবে না।ওখানে উনাকে কনভিন্স করতে পারবি খুব ইজিলি।
নিকিতার বুদ্ধি টা বেশ লাগলো রূপকথার।সে বিছানা ছেড়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হলো এরপর একটা জাম্পসুট গায়ে জড়িয়ে পনিটেল স্টাইলে চুল বাধলো।মুখে হালকা প্রসাধনী মেখে চোখে গাঢ় কাজল টানলো।কাজল কালো চোখ সারফরাজ এর বেশ পছন্দ।এই চোখ জোড়াই তাকে ঘায়েল করার বিশেষ অস্ত্র।
আয়নায় নিজেকে একবার পরখ করে বাঁকা হেসে পায়ে স্নিকার্স তুলে বেরিয়ে এলো রূপকথা।

শৈশব রূপকথা আর নিকিতা কে নিয়ে জাফলং ঝর্ণায় গেলো।মনের মধ্যে ভয় আর দুশ্চিন্তা নিয়ে ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারলো না সে।এরপর একটা চা বাগানে গেলো।চা বাগানের সৌন্দর্য বরাবরের ন্যয় মুগ্ধ করলো রূপকথাকে।ক্ষনিকের জন্য সে ভুলে গেলো সারফরাজ এর সাথে কি ক্যাচাল ঘটিয়েছে সে।আঁকাবাঁকা ঢালু,উঁচু পাহাড়ি চা বাগানে এলো মেলো উদ্দেশ্য হীন পায়ে এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলো রূপকথা।এরপর কয়েক গাছি কচি পাতা তুলে হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিলো।মুহূর্তেই প্রকৃতির মাঝে বিলীন হলো সে।এরপর ধীরে ধীরে চা বাগান মাড়িয়ে একদম পাহাড়ের ঢালে এসে দাড়ালো।বিস্তর প্রকৃতির স্বাদ অস্বাদনে দু হাত মেলে চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো রূপকথা।বাতাসের সংমিশ্রনে পরিচিত পুরুষালি সুঘ্রাণ নাসরন্ধে ভকভক করে ঢুকলো।গন্ধ টি কার টের পেতে ন্যানো সেকেন্ড ও লাগলো না রূপকথার।মনে অধিক ভয় নিয়ে পিট পিট করে এক চোখ খুললো রূপকথা।কিন্তু সামনে কেউ নেই।মনের ভ্রম ভেবে পুনরায় চোখ বুঝলো রূপকথা।

“ধুর ব্যাটা একদম মনে জেঁকে বসেছে।বাঘ ভাল্লুক নাকি সে?ও আমায় গিলে খেতে পারবে?সেও দোষ করেছে।আমায় বাড়ি থেকে অপমান করে বের করে দিয়েছে।আমাকে দেখেই বরং সে ভয় পাবে।
মনে নানাবিধ ভাবতে ভাবতে নিজেকে কিঞ্চিৎ রিল্যাক্স করার চেষ্টা করলো রূপকথা।এমন সময় ভারী শীতল গলার গম্ভীর স্বর ভেসে উঠলো
“তোমার জামাইয়ের ইনারের সাইজ বুঝি থার্টি ফোর?
আকস্মিক এমন উদ্ভট প্রশ্নে থতমত খেয়ে তড়িৎ চোখ খুললো রূপকথা।বুকে দুই হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে ক্রুদ্ধ চোখে দাঁড়িয়ে আছে সারফরাজ।মাথায় এলোমেলো চুল,নির্ঘুম চোখ ,খোঁচা খোঁচা গাল ভর্তি দাড়ি,শুষ্ক ঠোঁট আর এলোমেলো পোশাক।প্যান্টের ইন থেকে শার্টের কোনা বেরিয়ে ঝুলে আছে।ব্লেজার ভর্তি ধুলো।সারফরাজ কে এহেন নির্জন জায়গায় এমন জীর্ণশীর্ণ রূপে দেখেই রূপকথার প্রাণ পাখি উড়ে গেলো।সে ফাঁকা ঢোক গিললো।এরপর একটু পিছিয়ে বলে উঠলো

“এ এ এখানে এসেছো কেনো?
“তোমার বর কেমন আদর সোহাগ করেছে তোমায় তা দেখতে এলাম।দেখে মনে হচ্ছে সে দুর্বল।
রূপকথা ভীত চোখে আশেপাশে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠলো
“ছি এসব কি কথার ছিরি?
“হ্যা ঠিকই তো।আমি হলে তিন দিন অজ্ঞান করে ফেলে রাখতাম ।এভাবে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর এনার্জি থোরাই পেতে?বাপের কথা মতো চলে কি পেলে?শক্তি হীন পুরুষ?সে যাই হোক আমি তো আমার বউকে স্বর্গে ভাসাবো।ইনজয় করো।গেলাম।
রূপকথা চোখ গরম করে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“তোর ঝুনঝনি কে টে দেবো আমি কুতাবাসা।
সারফরাজ এগিয়ে এসে একদম রূপকথার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো

“দেখাও দেখি।
আকস্মিক টাল সামলাতে না পেরে পেছনে পরে যেতে নিলো রূপকথা।।সারফরাজ হাত বাড়িয়ে খপ করে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো রূপকথাকে।এরপর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে উঠলো
“নেক্সট টাইম থেকে ছবি তোলার আগে চারপাশে দেখে তারপর ক্যাপচার করবে।অন্য মেয়ের শেপ জানার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার।
রূপকথা মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“তুমি আমায় অপমান করে বের করে দিয়েছো তোমার বাড়ি থেকে।
“কেনো দিয়েছি সেটা বুঝলে বাপের কু বৃদ্ধিতে এভাবে আমাকে পোড়াতে না।সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে।
“উনি আমার ভাইয়ের মতো সারফরাজ।
“জানি কথা হয়েছে হোটেলের লবিতে।

“অপমানের প্রতিশোধ নিতে তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমন করেছি।
বলেই অপরাধবোধ থেকে মাথা নিচু করে ফেললো রূপকথা।
সারফরাজ রূপকথাকে টেনে নিজের বুকে এনে চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস টানলো।এবার পোড়া হৃদয়ের জ্বলুনি একটু কমলো বোধ করি ।রূপকথাকে শক্ত করে বাহু ডোরে আবদ্ধ করতেই নিঃশব্দে সারফরাজ এর চোখ গড়িয়ে মুক্তো দানার ন্যয় জল ঝড়লো।সিক্ত কাতর গলায় সারফরাজ রূপকথার মাথায় থুতনি ঠেকিয়ে বলে উঠলো
“তোমাকে বলেছিলাম না তুমি আমাকে আর ভালো না বাসলে চূড়ান্ত মরন হবে আমার?একবার আমায় ভালোবাসলে আর কোত্থাও যেতে পারবে না আমাকে ছেড়ে?তোমাকে ছাড়া আমার তো আর আকড়ে ধরার কেউ নেই রূপকথা।তোমাকে ভালোবেসে আমি একটু একটু করে বাঁচতে শুরু করেছি।আমাকে কেনো এভাবে পোড়ালে সারাটা রাত দিন বলো তো?আরেকটু হলেই তো আমার আত্মাটা মরে যেতে নিচ্ছিলো।আমি মরে গেলে তুমি অনেক খুশি হবে জ্বালাতুন্নেসা?

রূপকথা নিশ্চুপ রইলো।চোখের জল মুছে সারফরাজ রূপকথার ছোট মুখ খানা হাতের আজলায় নিয়ে বলে উঠলো
“তুমি আমার কাছে কিছু চেয়েছো আর আমি দেইনি এমন কখনো হয়েছে?
রূপকথা মাথা দুলিয়ে না জানালো।সারফরাজ রূপকথার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠলো
“আমি তোমাকে বলেছিলাম না আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করবো আমি?
এবারো মাথা উপর নিচ দোলালো রূপকথা।
“তবে আমাকে বললে না কেনো তোমার আরো সময় চাই?
রূপকথা সারফরাজ এর হাত চেপে ধরে সারফরাজ এর বরফ নীল ঝাপসা দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলে উঠলো
“আমার সময় চাই না সারফরাজ।তোমার জন্য আমি ডাক্তার হবার স্বপ্ন ও ছেড়ে দিতে রাজি।
“তোমার বাবা ভিলেন হয়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে?
“তা নয় ।উনি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত।

“তোমাকে ডাক্টারি পড়ানোর সামর্থ্য নেই আমার?
“আছে!
‘তবে?
“তুমি আন্টিকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাও বাড়িতে।আমি বাবাকে বোঝাবো।
সারফরাজ রূপকথার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বলে উঠলো
“তোমার উপর আমি কখনো কোনো জবরদস্তি চালাবো না।তুমি না চাইলে আমি ছুঁয়েও দেখবো না তোমায়।তুমি শুধু আমার একান্ত হও রূপকথা।আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুম ঘুমুতে চাই।ঘুম থেকে উঠেই তোমার পবিত্র মুখটা দেখতে চাই।এই অপার্থিব সৌন্দর্য দর্শন করিয়ে নিজের পাপ অল্প অল্প ক্ষয় করাতে চাই।ব্যস এই টুকুই।আমার সংসার,ঘর,আমি, আমার মা,আমার বাচ্চা কিচ্ছুটি সামলাতে হবে না তোমায়।আমি অনেক ক্লান্ত রূপকথা।আমি হাজার হাজার রাত ধরে নির্ঘুম ।তোমার বুকে মাথা রেখে আমি শুধু একটু নিশ্চিন্তে ঘুমুতে চাই।আসবে আমার ছোট একাকী ফাঁকা ঘরটায়?
সারফরাজ এর গালে,চোখের পাতায় নাকে অতঃপর ঠোঁটে আঙ্গুল বুলালো রূপকথা।এরপর ফিসফিস করে বলে উঠলো

চেকমেট পর্ব ৫৬

“কিন্তু আমি পুরোটাই তোমাকে চাই।
সারফরাজ শক্ত করে রূপকথাকে জড়িয়ে গলার ভাঁজে মুখ ডুবালো।এরপর মাদকতা মিশ্রিত গলায় বললো
“মরে যাবে।বাঁচবে না তুমি রূপকথা।
“কিন্তু আমার মরণ আমি তোমার হাতেই লেখাতে চাই।মারবে আমায় তোমার উষ্ণ ভালোবাসায় ডুবিয়ে?
সরফরাজ চোখের জল মুছে মাথা ঝাঁকালো।এরপর বলে উঠলো
“মারবো।পরে কিন্তু মুক্তি চাইতে পারবে না।
“আমার মুক্তি চাই না।
“ঠিক আছে মাকে পাঠাবো আগামী সপ্তাহে।

চেকমেট পর্ব ৫৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here