চেকমেট পর্ব ৫৮
সারিকা হোসাইন
সুফিয়ান চৌধুরীর বিশাল ড্রয়িং রুমে বসে আছেন মায়া চৌধুরী, সঙ্গে এসেছেন কামাল আর নজরুল।সকলের মুখের রঙ ফ্যাকাসে।সারফরাজ অস্থির চিত্তে কোণের সোফাটায় বসে বসে হাতের তালু ঘষছে।মনে অজানা ভয় পাখা ঝাপ্টে ঝাপ্টে শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে।এসির শীতল বাতাসেও চিবুক বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়াচ্ছে তার সেই সাথে শুকিয়ে উঠছে গলা।গায়ে জড়ানো শুভ্র পাঞ্জাবি খানা যেনো শূল কাঁটা হয়ে শরীরে বিধছে।পাঞ্জাবির সবকটা বাটন খুলে কলার নাড়াচাড়া করলো সে।কেমন শ্বাসরুদ্ধকর লাগছে।গুটানো হাতা আরেকটু গুটিয়ে নিজেকে রিল্যাক্স করতে চাইলো।কিন্তু আজ যেনো সমস্ত ভয়,অস্থিরতা, জড়তা আর উন্মাদনা শক্ত করে চেপে ধরেছে তাকে।চাইলেও কোনো টাকেই মাথা থেকে নামানো যাচ্ছে না।
এমন সময় কুলসুম গ্লাস ভর্তি জুসের ট্রে এনে সেন্টার টেবিলে রাখতেই সারফরাজ চট করে উঠে এসে একটা গ্লাস হাতে তুলে নিলো এরপর ঢকঢক করে গলায় চালান করে আরেকটা গ্লাস হাতে নিয়ে পূর্বের অবস্থানে গিয়ে বসলো।কিন্তু নরম গদি যুক্ত সোফাটা তার কাছে জ্বলন্ত উনুন মনে হচ্ছে।বসলেই কেমন নিতম্ব জ্বলে যাচ্ছে।শরীরে শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছে।অদ্ভুত রকম এক ভয় পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে তাকে।সেই ভয়ে পোক্ত শরীর খানা হেলে হেলে পড়ে যেতে চাইছে।জুসের গ্লাস ধরা হাত খানাও কেমন ঠকঠক করে কাঁপছে।
ছেলের এহেন অবস্থা দেখে চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তি তে চ” সূচক শব্দ উচ্চারণ করলেন মায়া চৌধুরী।এরপর ফিসফিস করে বললেন
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কি হয়েছে তোমার?এসব কি ধরনের আচরণ?নিজের পরিচয় ভুলে গেছো?কার ছেলে তুমি?তোমার বাবার দাপটে মানুষ এমন ঠকঠক করে কাঁপতো।আর তার বুক থাকতো সটান চোয়াল থাকতো শক্ত।আজকের এই দৃশ্য দেখলে তোমার বাবা নিশ্চিত কপাল চাপড়াতেন।বলতেন মায়া এ আমার ছেলে নয়।
নিজের রক্তের উপর আরোপ লাগায় কিছুটা নীরব হয়ে বসলো সারফরাজ।পাশ থেকে নজরুল চুপিচুপি বলে উঠলো
“দানবের লাহান শইল দিয়া কি অইবো যদি বুকেই দম না থাকে?
সারফরাজ দাঁত চেপে বলে উঠলো
“আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে এমন বড় বড় কথা বলো।কমিশনার কতো বড় বজ্জাত তুমি জানো?যদি ফিরিয়ে দেয়?
নজরুল মাছি মারার ভঙ্গিতে বলে উঠলো
“ওসব বাপ মা কিছুই না।গোড়া শক্ত থাকলে ঝড় ঝাপটায় গাছ উল্টায় না ছোট ভাই।তোমার ভালোবাসার মানুষ কোনো তালিবালি না করলেই হইলো।
কামাল চুপচাপ চারপাশ দেখে বলে উঠলো
“দরকার পড়লে মেয়ে তুলে নিয়ে যাবো।তবুও খালি হাতে ফিরবো না।
কামালকে থামিয়ে মায়া চৌধুরী বলে উঠলেন
“আহ ভাইজান এসব কি অলুক্ষণে কথা জুড়েছো তোমরা?কমিশনার সাহেব কে আগে আসতে দাও।কথা বলি তারপর দেখা যাক কি করা যায়
মায়ার কথা শেষ হতেই সুফিয়ান চৌধুরী গলা খাকরি দিয়ে ড্রয়িং রুমে এলেন ।পিছে পিছে এলেন রেখা।সুফিয়ান চৌধুরী কে দেখেই মায়া হাসি মুখে বলে উঠলো
“আসসালামুয়ালাইকুম ভাইজান।
সুফিয়ান সালামের উত্তর দিয়ে সামনের সোফায় বসলেন।রেখা বসলো মায়ার পাশে।
দুস্টু চোখে সারফরাজ কে একবার পরখ করলেন সুফিয়ান।কেমন ভেজা বেড়ালের মতো এক কোনে ঘাপটি মেরে আছে ছেলেটা।দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেনা।মনে তার সেইরকম ভয়।অথচ এই যুবক কতোটা খতরনাক তা সুফিয়ান চৌধুরীর চাইতে ঢের আর কে জানে?পশুর চাইতেও হিংস্র তার পুরো সত্তা।
কুলসুম একে একে নাস্তার পসরা সাজলো টেবিলের উপর।এরপর নিঃশব্দে দরজার পাশে গিয়ে চুপটি করে দাঁড়ালো আলাপ শোনার জন্য।
মায়া চৌধুরী কিছুক্ষণ ইতস্তত করে মুখে মাধুর্যময় হাসি ঝুলিয়ে মিহি গলায় বলে উঠলো
“আপনার মেয়েটাকে আমাদের বাড়ির মেয়ে হিসেবে চাইতে এসেছি ভাইজান।আমার ছেলে আপনার মেয়েকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।আমি এই টুকু গ্যারান্টি দিতে পারি আপনার মেয়ে কখনো কোনো অভিযোগ করার সুযোগ পাবে না।আর সমস্ত বিপদে আপদে আপনার মেয়েকে নিজের জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে আমার ছেলে।আপনারা কি আমার ছেলেকে গ্রহণ করবেন?
মায়ার মিষ্টি হাসির পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস টানলেন সুফিয়ান চৌধুরী।সারফরাজ এর বাবাকে নিজ চোখে না দেখলেও ভদ্রলোক সম্পর্কে যেসব জেনেছেন সুফিয়ান চৌধুরী তাতেই বোঝা যায় তাদের পরিবার কতখানি সম্মানী ভদ্র,আর আভিজাত্য পূর্ণ।মায়া চৌধুরী ও যথেষ্ট ভালো মানুষ।সারফরাজ কে নিয়ে সুফিয়ান চৌধুরী কিছুই বলতে চান না।মেয়ের জন্য এমন একজন যোগ্য পাত্র তিনি কোত্থাও পাবেন না।কিন্তু মূল কথা হচ্ছে মেয়েটা ছোট।কেবল এমবিবিএস প্রথম বর্ষে পড়ছে।এখনই বিয়ে সাদি হয়ে গেলে পড়াশোনার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে।তাছাড়া ছোকরা সারফরাজ কে একদম বিশ্বাস নেই।সারাক্ষণ বউ ধরে বসে থাকবে।তখন মেয়েটার পড়ালেখা সব শিকেয় তুলে রাখতে হবে।কিন্তু মায়া চৌধুরী কে কিভাবে ফেরাবেন তিনি?
সুফিয়ান চৌধুরী কিছুক্ষন মাথা নিচু করে ভাবলেন।এরপর বিনয়ী স্বরে বললেন
“আসলে আপা মেয়েটার পড়াশোনার জন্যই আমার সমস্ত অমত।ছোট বেলা থেকেই ওর প্রবল ইচ্ছে ডক্টর হয়ে মানুষের জীবন বাঁচাবে।বাবা হিসেবে মেয়ের সপ্ন পূরণ করা আমার আবশ্যকীয় দায়িত্ব এভং কর্তব্য। বিয়ে হয়ে গেলে যদি সেই স্বপ্ন পূরণ না হয় তখন মেয়েটার মন ভাঙবে।তাই আর কি…
মায়া চৌধুরী ঠোঁটে হাসির রেখা ধরেই বলে উঠলেন
“আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে পড়াশোনার বিষয়টা দেখবো ভাইজান।সারফরাজ ওকে একদম বিরক্ত করবে না।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।আসলে ছেলেটা আমার বড্ড একা।কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই বাবাকে হারিয়েছে।আমাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলো সেটাও হয়নি ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে।স্রোতের শেওলার ন্যয় ভাসতে ভাসতে,মানুষের ঠোকর খেতে খেতে আমার ছেলে পাথরে পরিণত হয়েছে।চোখের জল ফেলার জন্যও ছেলেটা আমার কাউকে কাছে পায়নি।কেউ বাড়িয়ে দেয়নি ভরসার হাত।ও তো মন থেকে মরেই গেছে প্রায়।ওর একটা ভরসা যোগ্য স্থান দরকার ভাইজান।ওর একটা বন্ধু,ভালোবাসার মানুষ,বিশ্বস্ত সঙ্গী দরকার।আমি ওর কোনোটাই হতে পারিনি।যখন আমি ফিরে এসেছি তখন আমার ছেলে সব হারিয়ে বসে আছে।ও আপনার মেয়েকে পেয়ে অল্প অল্প বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ভাইজান।আমার ছেলেটাকে একটু দয়া করুন।আপনার মেয়েটাকে ভিক্ষে দিন আমার ছেলেকে।
কথা গুলো বলতে বলতে নীরবে কেঁদে ফেললো মায়া।যেই ছেলের ভবিষ্যৎ হবার কথা ছিলো চাঁদের ন্যয় উজ্জ্বল সেই ছেলে আজ অমাবস্যার আধারে ঢেকে গিয়েছে।মা হয়ে যদি ছেলের জীবনের সমস্ত অন্ধকার দূর করতে না পারলেন তবে কিসের মা সে?
সারফরাজ মাথা নত করে বসে আছে।কামালের চোখের কোনে জল।সুফিয়ান চৌধুরী সমস্ত ভাষা হারালেন।তিনি কখনোই সেভাবে চিন্তা করেন নি।সেদিন যদি সারফরাজ রূপকথাকে তার হাতে না তুলে দিতো তবে সুফিয়ান চৌধুরী ও সন্তান হীন এমন নিঃসঙ্গই থাকতেন।তাদের স্বামী স্ত্রীর জীবন ও আধারে ঢেকে যেতো।রূপকথার উপর সারফরাজ এর পুরো হক রয়েছে।সুফিয়ান পারবে না সারফরাজ কে ফিরিয়ে দিতে।
সুফিয়ান চৌধুরী কম্পিত শ্বাস ফেলে মাথা উঁচু করে সারফরাজ এর উদ্দেশ্যে শুধালো
“কিরে হতচ্ছাড়া আমার মেয়েকে বিরক্ত করে পড়াশোনার বারোটা বাজাবি না তো?
আকস্মিক এই প্রশ্নে মেঝে থেকে দৃষ্টি তুলে সুফিয়ান চৌধুরীর মুখ পানে তাকালো সারফরাজ।মনে হচ্ছে সে ভুল শুনেছে।সারফরাজ হা করে অবাক চোখে সুফিয়ান চৌধুরীর পানে তাকিয়ে রইলো।সুফিয়ান চৌধুরী পলক ঝাপ্টে আশ্বস্ত করলেন সারফরাজ কে।সারফরাজ ঝটপট মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো
“দরকার পড়লে আট বছর দেশেই থাকবো না আমি স্যার।আপনার মেয়ে ডাক্তার হলে তবেই দেশে ফিরবো।
সুফিয়ান চৌধুরী সারফরাজ এর উত্তরে প্রসন্ন হলেন।তিনি অল্প হেসে গলা বাড়িয়ে ডাকলেন
“রূপ…রূপকথা
নিজের ঘরে সমানে পায়চারি করে চলেছে রূপকথা।সিলেট থেকে ফিরেই সুফিয়ান চৌধুরী কে নিজের কাছে বসিয়ে সরফরাজের প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করেছে রূপকথা।সারফরাজ কে ছাড়া তার জীবন অসম্পূর্ণ সেটাও দাগে দর্মে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে সে।সারফরাজ তাকে কি কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটাও বন্ধুর ন্যয় বাবাকে খোলাসা করেছে ।সারফরাজ এর মা আর সারফরাজ প্রস্তাব নিয়ে এলে কিছুতেই যাতে সুফিয়ান চৌধুরী তাদের না ফেরায় তার জন্য কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করেছে রূপকথা।রূপকথার অনুরোধে রাজি হয়েছেন সুফিয়ান চৌধুরী।তবুও মনে একটা ভয় থেকেই যায়।
“সব কিছু ঠিকঠাক হচ্ছে তো?
সুফিয়ান চৌধুরীর গলা পেতেই কেঁপে উঠলো রূপকথা।এরপর নিজেকে সামলে ঢিপঢিপ করা বক্ষ কোনো মতে চেপে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রূপকথা।
এদিকে সারফরাজ এর ধুকপুক বুক আর অস্থির হৃদয় হাপিত্তেস করে উঠলো রূপকথাকে এক নজর দেখতে।ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে সিঁড়ি ধরে নেমে এলো রূপকথা।তার পায়েলের রিনিঝিনি শব্দ সারফরাজ এর বুকে কাঁপন তুললো।শব্দটা যতোটা প্রকট হলো সারফরাজ ততো মরিয়া হয়ে উঠলো এক নজর রূপকথাকে দেখতে।ধীরে ধীরে মাথায় ঘোমটা টেনে নিঃশব্দে সুফিয়ান চৌধুরীর সামনে এসে দাড়ালো রূপকথা।রূপকথার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করলো সারফরাজ।এরপর বিধাতার প্রশংসায় ঠোঁট আওড়ে বলে উঠলো
“সুবহানাল্লাহ!এই সুন্দর সৃষ্টি না দেখলে জীবন বৃথা যেতো।
ল্যাভেন্ডার রঙের সোনালী পাড় যুক্ত জামদানি গায়ে জড়িয়েছে রূপকথা।দুধে আলতা ফর্সা শরীরে শাড়ি খানা জ্বলে জ্বলে উঠছে।কানে ছোট দুল গলায় চিকন চেইন।চোখে গাঢ় করে টানা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।মুখে প্রসাধনী বলতে এই টুকুই।সরু হাতে সোনার চিকন চুড়ির গোছা ঝিকমিক করছে।রূপকথার কুচকুচে চোখে নজর নিবদ্ধ করে ফাঁকা ঢোক গিললো সারফরাজ।এরপর বুক চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“ডাকাতিনি বিয়ের নামে ডেকে এনে মরন সাজা দিচ্ছে আমায়।
রূপকথা ছোট গলায় মায়াকে ,কামালকে সালাম জানালো।সালামের উত্তর দিয়ে উঠে গিয়ে রূপকথার হাত ধরে টেনে রূপকথাকে নিজের পাশে বসালেন মায়া।এরপর কপালে চুমু খেয়ে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বলে উঠলেন
“এই চাঁদ মুখে কারোর নজর না লাগুক।
রূপকথা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।নিজের পার্স থেকে ছোট একটা প্যাকেট বের করলেন মায়া।এরপর প্যাকেট খুলে ডায়মন্ড এর ছোট একটা পেন্ডেন্ড রূপকথার গলায় পড়িয়ে বলে উঠলেন
“কর্নেল সাহেব বেঁচে থাকলে হয়তো আরো দামি কিছু দিতো।কিন্তু আমার সামর্থ্য এই টুকুই মা।
রূপকথা গলায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো
“আমার দামি দামি জিনিস পত্র চাইনা আন্টি।আমি শুধু আপনাদের ভালোবেসে আগলে ধরে থাকতে চাই।
রূপকথার মুখ নিঃসৃত কথায় মায়ার মন ভরে উঠলো।নিজের হাতের মোটা ভারী বালা দুটো রূপকথার হাতে পরিয়ে হাত দুটুতে ঠোঁট ছোয়ালেন তিনি।এরপর নিজের বুকে রূপকথার হাত চেপে ধরে কাতর গলায় শুধালেন
“আমার পাগল ছেলেটাকে গুছিয়ে দিতে পারবে মা?
রূপকথা মাথা উপর নিচ করলো।সে এই মানুষটিকে পুরোপুরি দখল করে তাকে গুছাতে চায়।এই স্বপ্ন তার দীর্ঘ বছরের।সারফরাজ এর প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা কতখানি তা কেউ কোনো দিন পরিমাপ করতে পারবে না।সারফরাজ দলিল রূপে তার হলে সে হবে পৃথিবীর সব চাইতে সুখী মানুষ।
সুফিয়ান চৌধুরী মেয়ের হাসি মাখা মুখের পানে তাকিয়ে টিপ্পনি কাটলেন
“পরে কিন্তু কোনো বিচার নিয়ে এলে গ্রাহ্য করবো না বলে দিলাম।কেমন বদমাশ ছোকরার হাত ধরেছো তা কিন্তু আমরা সকলেই জানি।
রূপকথা সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে সরল গলায় বললো
“তুমি নিশ্চিন্তে থাকো বাবা।আমি কোনো ভুল মানুষের হাত ধরিনি।কখনো কোনো অভিযোগ নিয়ে তোমার দুয়ারে হাজির হবো না আমি।
রেখা উঠে এসে মেয়েকে আগলে ধরে বলে উঠলেন
“তোর খুশিতেই আমরা খুশি মা।আমরা বুড়ো বুড়ি হয়ে গিয়েছি।আমাদের সময় শেষের পথে।তোকে হাসি খুশি দেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।তুই যাতে ভালো থাকিস ,খুশি থাকিস সেই চেষ্টাই তোর বাবা আর আমি করবো।
রূপকথা রেখার গলা জড়িয়ে বলে উঠলো
“শুধু দোয়া করো মা।আর কিচ্ছু না।
সুফিয়ান চৌধুরী প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো
“তা কবে নাগাদ দিন ক্ষণ ঠিক করলে আপনাদের সুবিধা হয়?
সারফরাজ বহু কষ্টে গলা দিয়ে কথা টেনে বের করে বলে উঠলো
“অভিরূপ সুস্থ হলেই স্যার।ও এখনো বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না।ও আমার বন্ধু ,ভাই,কাছের কেউ সব।ওকে ফেলে এতবড় কাজ আমি করতে পারবো না।
সুফিয়ান চৌধুরী মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে রূপকথাকে বললেন
“তুমি একান্তে কথা বলতে চাও সারফরাজ এর সাথে?
তাৎক্ষণিক রাজি হলো রূপকথা।
সারফরাজ কে ইশারা করতেই এলোমেলো বল হীন পায়ে উঠে রূপকথার পাশে দাঁড়ালো সে।এরপর রূপকথাকে অনুসরণ করে চলতে লাগলো সম্মুখে।কিন্তু আর যেতে পারলো না সারফরাজ।রূপকথার অপার্থিব আগুনের ন্যয় সৌন্দর্য,মোমের পুতুলের ন্যয় নতুন রূপ সব কিছু চূড়ান্ত ঘায়েল করলো সারফরাজ কে।সারফরাজ এর হৃদ গতি তেজ হয়ে বুকে তোলপাড় শুরু হলো।শরীর ভার শূন্য হলো।মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।প্রশস্ত দেহের লম্বা চওড়া পুরুষ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুহূর্তেই মুখ থুবড়ে রূপকথার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়লো।ছেলের এহেন পতনে দৌড়ে উঠে গেলেন মায়া।সঙ্গে কামাল নজরুল।আকস্মিক কি হলো কিছুই বুঝতে পারলেন না সুফিয়ান চৌধুরী।রেখা আর কুলসুম দৌড়ে পানি এনে সারফরাজ এর চোখে মুখে ছিটালো।রূপকথা ভয়ে ঘাবড়ে কেঁদে দেবার উপক্রম হলো।সারফরাজ এর হীম হয়ে আসা শীতল হাতে পায়ে তেল মালিশ,গালে চাপড় আর পানি ছিটানোর প্রভাবে মিনিট দশেক পর পিটপিট করে চোখ মেললো সারফরাজ ।এরপর বিড়বিড় করে বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ৫৭
“এই আগুন ঝরা সৌন্দর্য সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই কমিশনার সাহেব।সব আপনার কুবুদ্ধি।ডেকে এনে মারতে চাইছেন আপনি আমাকে।
সুফিয়ান চৌধুরী মুখ লুকিয়ে হেসে মনে মনে বলে উঠলেন
“এতো শেরের উপরে সোয়াশের।এবার তবে চিন্তা মুক্ত হওয়া গেলো।বউয়ের রূপ দেখেই কুপোকাত হলে সংসার কি করে করবি শালার ব্যটা?এ নাকি মাফিয়া গ্যাঙস্টার।থু।নিকুচি করি তোর মাফিয়া গিরির উপরে।ব্যাটা বউয়ের নেওটা।