চেকমেট পর্ব ৫৯
সারিকা হোসাইন
রূপকথার কক্ষে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারফরাজ।বিছানার কোণে অবাক চোখে বসে আছে রূপকথা।এই মানুষটার এমন রুপ কিছুতেই হজম হচ্ছে না তার।এতোদিন যেই সারফরাজ কে সে দেখে এসেছে,চিনে এসেছে সেই সারফরাজ আর এই সারফরাজ এর মধ্যে বিস্তর তফাৎ।রূপকথা তপ্ত শ্বাস ফেলে নরম গলায় শুধালো
“এমন করছো কেনো?কি হয়েছে তোমার?তোমার শরীর খারাপ?অসুখ করেছে?
রূপকথার গলায় মাথা তুলে উপরে তাকালো সারফরাজ।এরপর মিনমিন করে বলে উঠলো
“মনে বড্ড অসুখ করেছে রূপকথা।মরণব্যাধি অসুখ।ভালোবাসার সুখময় প্রভাব শরীর মন দুই ই কব্জা করে নিয়েছে।আজকাল তারা কোনো ভাবেই আমার বশে থাকছে না।আমি বোধ হয় আর বাঁচবো না।নির্ঘাত নিঠুর মরন আমার।
রূপকথা কপাল চাপড়ে বলে উঠলো
“বিয়ের জন্য তুমিই তো লাফাচ্ছিলে তাই না?
মাথা উপর নিচ করলো সারফরাজ।এরপর বললো
‘শক্তি থাকলে এখনো লাফাতাম।কিন্তু শরীরে কুলুচ্ছে না।হেলে দুলে পরে যাচ্ছে।
বিছানা থেকে উঠে গিয়ে সারফরাজ এর হাত খপ করে ধরে রূপকথা বলে উঠলো
“কি ফাজলামো হচ্ছে এসব?পাত্র পক্ষ তোমায় দেখতে এসেছে নাকি আমায়?
“তোমাকে।
‘তো?
নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো সারফরাজ।এরপর বললো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“নিজের শখের মানুষকে হারানোর ভয় অন্তর কাবু করে কচলে মারে রূপকথা।তোমার বাবা আজ অমত প্রকাশ করলে সত্যিই আমি হৃদ গতি বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।তোমার অপেক্ষায় আমার আর সময় কাটতে চাইছে না।আমার এই নার্ভাস নেস তোমাদের সকলের কাছে হাসির মনে হলেও আমার কাছে মরন যন্ত্রণার ন্যয়।আমি এখনো খুব ভয় পাচ্ছি।যতদিন তুমি দলিল রূপে আমার না হবে ততদিন এভাবেই ভীত শংকাগ্রস্থ থাকবো আমি।
রূপকথা নিজের সরু দুহাত বাড়িয়ে সারফরাজ কে নিজের বুকে টেনে নিলো।এরপর পিঠে হাত বুলালো।সারফরাজ রূপকথার কাঁধে থুতনি রেখে শক্ত আগলে রূপকথাকে বেঁধে কম্পিত শ্বাস ফেললো।এরপর নিজের সমস্ত ভয় ভীতি,জড়তা ,কাটিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ বুজে গুনগুন করে গাইলো
“তুমি বুকের ভেতর রোইয়ো রে বন্ধু,
ছাড়িয়া না যাইয়ো!
অন্তরে অন্তর মিশাইয়া পিরিতের গান গাইয়ো…..
দূর আকাশে চান্দের পাশে ঝলমল করে তারা!
আমার কেহ নাইরে বন্ধু কেবল তুমি ছাড়া….
সারফরাজ এর গানে শুনে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো রূপকথা।সারফরাজ এর জীবনে রূপকথার স্থান একদম পোক্ত।এখানে আর কারোর আধিপত্য নেই।সারফরাজ এর রাজ্যে শুধু রূপকথার ই হুকুম চলে।এর চাইতে বড় পাওয়া জীবনে আর কি হতে পারে?
এভাবেই কিছুক্ষন সময় কেটে যাবার পর হাতের বাধন আলগা করলো রূপকথা।সারফরাজ এর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামান্য দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।এরপর বললো
“এখন স্বাভাবিক ঠেকছে?
সারফরাজ ভারী গলায় বললো
“হু
“নীচে চলো।
“বাসর করবো না?
বলেই অবোধ চাহনিতে রূপকথার পানে তাকিয়ে রইলো সারফরাজ।রূপকথা দাঁত পিষে বলে উঠলো
“এখানে তোমার সাথে বাসর সাড়তে এসেছি আমি?বিয়ের আগেই এসব কি পাগলামো বকেছো?
সারফরাজ ঠোঁটে দুস্টু হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“তোমার কন্ট্রোল চেক করলাম।
“আমার কন্ট্রোল এর আগে নিজের কন্ট্রোল নিয়ে ভাবো।শেষে না এম্বুলেন্স ডেকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়।
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো রূপকথা।রূপকথার অপমানে মুখ বাঁকালো সারফরাজ।এরপর বলে উঠলো
“ফাইনালি জীবনের লাল শুক্রবার আসতে চলেছে।ইশ আর তর সইছে না।এই অভিটা যতো নষ্টের মূল।শালা বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না।ওর জন্য এতগুলো ব্ল্যাক ফ্রাইডে কাটাতে হবে আমার।ধ্যাত।
বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বসে আছে অভি ।পাশের চেয়ারে অবনত মস্তিষ্কে বসে আছে নেলি।তার কাছে কিচ্ছু ভালো লাগছে না।অভিরূপ এর এমন ঘর বন্দি অবস্থা তাকে বেশ পীড়া দিচ্ছে।নেলি কিছুক্ষন ইতস্তত করে বলে উঠলো
“হাটতে বের হবে আমার সাথে?আজকের ওয়েদার খুব সুন্দর।
নেলির প্রশ্নে অভিরূপ কিছুক্ষন নিশ্চুপ রইলো।এরপর ঘড়িতে সময় বুলালো।বিকেল পাঁচটা বেজে কুড়ি মিনিট।কিছুক্ষন পরেই আজান হবে।একটু বাইরের পৃথিবী দেখতে পারলে মন্দ হয় না।অভিরূপ নিজের হাত নেলির পানে বাড়িয়ে বলে উঠলো
“টেনে নামাও আমায়।
অভির সম্মতি পেয়ে নেলি যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।সে অভিকে যত্ন সহকারে বিছানা থেকে নামিয়ে গায়ে একটা শার্ট জড়িয়ে দিলো।বুকের গভীর ক্ষত গুলো অল্প অল্প মিলতে শুরু করেছে।অভি এখনো জোরে কথা বলতে পারে না।সেই সাথে হাঁচি কাশি দিলেও বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে।ডক্টর বলেছেন ভেতরের ক্ষত শুকাতে বেশ সময় লাগবে।আরো কিছুদিন তার রেস্ট দরকার।
নেলি অভিকে নিয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো বাইরে।এরপর বাড়ির সামনের সর্পিল সরু বাঁকের ঘাস যুক্ত পথ দিয়ে হেটে গেলো বহুদূর।যেতে যেতে অভি শুধালো
‘আমি মরে গেলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে তুমি নেলি?
অভির কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো নেলি।চলতে চলতে হাতে টান অনুভব করলো অভিরূপ।পেছন মুড়ে ঘুরতেই নেলিকে মাথা নত করে দাঁড়ানো দেখতে পেলো সে।নেলির দু গাল বেয়ে মোটা মোটা অশ্রু গড়াচ্ছে।মানুষ টা কি আদৌ জানে সে নেলির কতোটা জুড়ে বাস করে?জানলে এতোটা অকপটে এতো বড় নিষ্ঠুর কথা কিভাবে বলতে পারলো?অভিরূপ তো তার পুরো পৃথিবী জুড়ে বাস করে।অভিরূপ হীন নেলি পথ হারা পথিকের ন্যয়।নেলির প্রতিটি শ্বাস চলে অভির নামে।সেখানে অন্য কাউকে বিয়ে করা দুরকি বাত নেলি তো বেঁচেই থাকতো না।
অভি সংগোপনে এসে নেলির মুখোমুখি দাঁড়ালো।প্রশস্ত হাতে নেলির চোখের জল মুছিয়ে চোখের পাতায় চুমু খেলো।এরপর বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো
‘তোমার ভালোবাসাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে নেলি।নয়তো ওই অবস্থা থেকে কেউ ফেরত আসে না।তোমার ভালোবাসার জোড় অনেক।
নেলি কোনো শব্দ আওড়ালো না।শুধু ফুঁপিয়ে কেঁদে চললো অভিরূপ এর বুকে।
অভিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠলো
‘সারফরাজ কে টেক্কা দিয়ে আগেভাগেই যদি আমরা বিয়ের কাজ সেড়ে ফেলি তবে কেমন হয়?আমার পরে প্রেম করে আগে বিয়ে করে ফেললে আমার আত্মসম্মানে লাগবে না?জিনিসটা সহ্য হচ্ছে না ঠিক।
“আত্মসম্মান তো পরের আলাপ। পুশ আপ দিতে পারবি না শালা।
আকস্মিক পুরুষালি কন্ঠে হকচকিয়ে উঠলো দুজনে।পেছনে সারফরাজ দাঁড়ানো।গায়ে সাদা পাঞ্জাবি জড়িয়ে বুকে আড়াআড়ি দু হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে সে।অভি কপাল কুঁচকে বলে উঠলো
“সহ্য হলো না তোর?সব ঘেঁটে দিতে চলে এলি?কতোদিন পর একটু হাটতে বের হয়েছি জানিস?
সব গুলো দাঁত বের করে হো হো হাসলো সারফরাজ।এরপর নিজের এলোমেলো চুল ঠিক করতে করতে বলে উঠলো
“এসব মেয়ে মানুষের পাল্লা থেকে বেরিয়ে আয়।বাজে ভাবে মরবি।।
“তুই না মরলে আমি কেনো মরবো?নাকি রূপকথা মেয়ে নয়?
বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো অভি।কপাল চুলকাতে চুলকাতে সারফরাজ বলে উঠলো
“যদি শুনিস আমি কখনো কারো সামনে অজ্ঞান হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছি তখন কি করবি?
“অজ্ঞান আর তুই?এ হতেই পারে না।এই আশ্চর্য আমার এই জীবনে তো কখনোই দেখিনি।আর তুই কি দুর্বল মন শরীরের মানুষ নাকি?তুই কোন দুঃখে জ্ঞান হারাতে যাবি?মানুষ তোকে দেখে জ্ঞান হারিয়েছে এটা বিশ্বাস করবো।কিন্তু তুই কাউকে দেখে অজ্ঞান হয়েছিস এটা পৃথিবী উল্টে গেলেও বিশ্বাস করবো না।
বেশ ওভার কনফিডেন্স নিয়ে উত্তর করলো অভিরূপ।সারফরাজ অভিরূপ এর পানে তাকিয়ে দুঃখের তাচ্ছিল্য হাসলো।এরপর বললো
“রূপকথাকে দেখতে গিয়ে সবার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছি আমি।আহ কি লজ্জা!কমিশনার এর দু চোখ সারাক্ষন টিপ্পনি কেটে যাচ্ছে আমাকে।মানুষটা শশুড় কম অসুর বেশি।যাক সেসব কথা।আমারই যদি এই অবস্থা হয় এবার বোঝ তোর কি অবস্থা হবে।
সারফরাজ এর কথায় নেলির হো হো করে হাসি পেলো।কিন্তু হাসলো না।এদিকে অভি যেনো অবাস্তব কিছু শুনলো।অভি হা হয়ে পলক হীন তাকিয়ে রইলো সারফরাজ এর পানে।অভিরূপ এর সামনে এগিয়ে এসে অভির থুতনি ধরে মুখটা বন্ধ করে দিলো সারফরাজ।এরপর শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে কাঁধ চাপড়ে বলে উঠলো
“ভালোবাসা বড়োই সর্বনাশা রোগ বন্ধু।সে যাই হোক ।তোকে দেখতে এসেছিলাম।ভালো আছিস দেখে ভালো লাগছে।তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যা।তোর জন্য বিয়েটা আটকে আছে।এতো তর আবার সহ্য করা যাবে না।এমন ভং ধরে থাকলে তোকে ছাড়াই বাসর করতে হবে।আই মিন বিয়ের অনুষ্ঠান আরকি।
বলেই লম্বা লম্বা পা ফেলে প্রস্থান নিলো সারফরাজ।অভিরূপ যেনো ঘোরের মধ্যে আছে।সারফরাজ কি বলে গেলো কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।শুধু কানে বেজে চলেছে সেই গম্ভীর স্বর
“সকলের সামনে মুখ থুবড়ে অজ্ঞান হয়েছি আমি।
অন্ধকার পাতাল ঘরে রোগা পাতলা দুর্বল শরীর নিয়ে ভাঙা চৌকিটার উপর শুয়ে কাতরাচ্ছে রুদ্ররাজ।পৃথিবীর আলো দেখার জন্যে চোখ দুটো কেমন মরিয়া হয়ে উঠেছে।নিজের এই বন্দি জীবন আর সহ্য করতে পারছে না সে।বিধাতার কাছে এই পর্যন্ত কোটিবার নিজের মৃত্যু কামনা করেছে সে।বিধাতা যেনো আজকাল তার কোন প্রার্থনাই শুনছে না।ইদানিং দিন রাতের সময়কাল ভুলতে বসেছে সে।এই অন্ধকার কক্ষে কখন রাত নামে কখন দিন ফুটে রুদ্র কিচ্ছুটি জানে না।
ফ্যাকাসে মলিন সফেদ গালে অল্প কম্পিত হাত বুলালো রুদ্র।ক্লিন শেভের গ্লেস ছড়ানো গাল দুটো আজ বড় বড় দাড়ি গোফে ভরে আছে।ঠিক মতো যত্ন না নেবার কারনে সারা শরীরে চুলকানি।মশার কামড়ে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না তাও অজানা।আজকাল শরীর বড্ড খারাপ যাচ্ছে।আচ্ছা এই বন্দি দশা থেকে রুদ্রের কোনো দিন মুক্তি মিলবে তো?নাকি আজীবন কয়েদি হয়ে কাটাতে হবে এই নরক তুল্য বন্দি শালায়?
রুদ্রের ভাবনা শেষ হবার আগেই খোলে গেলো ভারী দরজা খানা।তাতে অল্প আলো প্রবেশ করলো রুদ্রের কক্ষে।দীর্ঘ দিন বন্দি থাকার কারনে আলোক রশ্নি সয়ে নিতে পারলো না রুদ্রের চোখ ।কেমন জ্বলে উঠলো সেগুলো।কারন এতো গুলো দিনে কেউ দিনের বেলায় তাকে দেখতে আসেনি।এসপি আবির মাহতাব শুধু রাতের বেলায় এসেই খাবার দিয়ে যায়।ক্ষুধার্ত রুদ্র নিজের অহমিকা দেখানোর ফুসরত টুকুন পায়না।লোভী জিহবা খাবার দেখলেই কেমন উন্মাদ হয়ে উঠে।
স্টিলের সিঁড়িতে ঝনঝন পায়ে সুর তুলে কেউ এগিয়ে আসছে।রুদ্র সজাগ হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।ধীরে ধীরে আলোকিত হলো চারপাশ।রুদ্রের কক্ষের দরজা খুলে ঢুকলো মানব।অধিক আলোয় চোখ মুখ খিচে বসে রইলো রুদ্ররাজ।এরপর কিছুসময় গড়াতেই ধীরে ধীরে চোখ মেললো।সামনে সারফরাজ দাঁড়ানো।কঠিন মানবের মুখটায় কেমন অদ্ভুত তাচ্ছিল্য হাসি।
রুদ্ররাজ সারফরাজ কে দেখে মাথা নত করে বলে উঠলো
“আমাকে মুক্ত করে দে সারফরাজ।বিনিময়ে আমার সব নিয়ে নে।এই বন্দি জীবন আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
রুদ্রের আকুতি ভরা অনুরোধে সারফরাজের শব্দ তুলে হাসতে হাসতে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা হলো।নিজেকে কোনো মতে সামলে দাঁত কামড়ে বলে উঠলো
“ঠিক এই কাকুতি মিনতি টা আমার মা কয়বার করেছে তোদের কাছে?এক মাসেই হাঁপিয়ে গেছিস?তাহলে আমার মা যে উনিশ বছর থাকলো তার বেলায়?বাকি আঠারো বছর এগারো মাসের হিসেব কে দিবে?তোর মরা দাদা?
নিজের পূর্ব অপকর্ম মনে পড়তেই মাথা তুললো রুদ্র।এরপর শিকল বেড়ি পরা পায়ে ঝনঝন শব্দ তুলে সারফরাজ এর সামনে এসে দাড়ালো।সারফরাজ এর দুই হাত নিজের গলায় চেপে উন্মাদের ন্যয় বলে উঠলো
“প্লিজ কিল মি নাও অ্যাট দিজ মোমেন্ট।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।আমাকে মেরে ফেল।প্লিজ কিল মি।
একই কথা বারবার রিপিট করতে করতে সারফরাজ এর সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলো রুদ্ররাজ।নিজের ক্রোধের লাগাম টানতে না পেরে সজোড়ে রুদ্রের মুখে এক ঘুষি বসালো সারফরাজ।ঘুষি খেয়ে বিছানায় ছিটকে পড়লো রুদ্র।গায়ের শার্ট টেনে টুনে ঠিক করতে করতে সারফরাজ বলে উঠলো
“তুই মরে গেলে আমার পৈশাচিক সত্তা কাকে দেখাবো আমি হু?তাছাড়া আগামী মাসে আমার বিয়ে।দাওয়াত খাবি না?আমার বাচ্চা কাচ্চার মুখে মামা ডাক শুনবি না?আমার জীবনের পরিপূর্ণতা না দেখেই মরবি বাস্টার্ড?
সারফরাজ এর গর্জনে কেঁপে উঠলো রুদ্র।রুদ্রের নিশ্চুপ অবয়বে সারফরাজ বাঁকা হেসে বললো
“খুব হিংসা হচ্ছে না?এতো বড় ডক্টর,এতো টাকা,ক্ষমতা কিচ্ছু তোর কাজে এলো না।আফসোস একটা মেয়েকে চুমু পর্যন্ত খেতে পারলি না এই জীবনে।এক কাজ কর।ধরতে পারিস ফ্রি টিপস।তুই তোর সামনের লেজ খানা কেটে ফেল।বেকার জিনিস।কোনো দাম নেই।তোকে দেখতে পুরো পাগলের মতো লাগছে।গায়ের গন্ধে মাছি ভনভন করছে।রাস্তার পাগলিও তোকে লাইক করবে না এখন।সে হারা হেরেছিস আমার কাছে।তোর দাদার চাইতেও করুন পরিণতি হলো তোর।আফসোস,বড় আফসোস।
কথাগুলো বলতে বলতে রুদ্রের চুলের গোছা চেপে ধরলো সারফরাজ।এরপর ঠান্ডা গলায় বললো
“এমন অবস্থা করবো যে মরতেও পারবি না আবার তিক্ততার গ্লানি নিয়ে বাচঁতেও পারবি না।আমি খুব খারাপ রে রুদ্র।তুই আমারও সম্পর্কে খোঁজ না নিয়েই ঝামেলা পাকিয়েছিস।ওকে নো প্রবলেম ।আমি তোকে আমার সম্পর্কে ধীরে ধীরে জানাবো।আপাতত জেনে রাখ আমি একটা জানোয়ার।
কথাগুলো বলে রুদ্রের চুল ছেড়ে দিয়ে একটা খাবারের বক্স টেবিলে ছুড়ে বলে উঠলো
“এর পর থেকে আরো কম খাবার আসবে তোর জন্য।বসে বসে খেয়ে গায়ে চর্বি জমেছে।নতুন শার্ট নোংরা হাতে ধরে কুঁচকে ফেলেছিস।তোর বিজনেস প্রফিট থেকে এই টাকা কেটে নেবো আমি ওয়াইট।
আগামী মাসের প্রথম শুক্রবার সারফরাজ আর রূপকথার বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।অভিরূপ এখন অনেকটাই সুস্থ।রূপকথা জেদ ধরেছে যেহেতু বিয়ের আর বেশি সময় নেই তাই আগে ভাগেই কেনাকাটা শুরু করবে সে।সারফরাজ এ বিষয়ে আরো এক কাঠি উপরে।ঢোলে বাড়ি পড়া মাত্র নেচে উঠেছে সে।রূপকথাকে বারবার সিঙ্গাপুর থেকে শপিং করার তাগাদা দিচ্ছে।রূপকথা ঠোঁট উল্টে পাত্তা না দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সে এখান থেকেই কেনাকাটা করবে।
রূপকথার জেদের কাছে হার মেনে ইয়ং,অভিরূপ, নেলি আর সারফরাজ মিলে বেনারসি পল্লীতে এলো রূপকথাকে নিয়ে।বড় একটা দোকানে গিয়ে রূপকথা বেছে বেছে একটা অফ হোয়াইট শাড়ি সিলেক্ট করলো।
সারফরাজ ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলে উঠলো
“ওই দিন কি আমাকে মাটির নীচে চালান করা হবে?সাদা কেনো?লাল পড়ো লাল।
রূপকথা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো
“উফ বেশি কথা বলো না তো।এখন আর কেউ লাল টাল পরে না।ওসব এখন ব্যাক ডেটেট।
সারফরাজ ভ্রু সরু করে বিস্ময়ে শুধালো
“তুমি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি রুচি হীন বললে?
চেকমেট পর্ব ৫৮
“হ্যা বললাম এবার মুখ বন্ধ করে আমাকে শাড়ি চুজ করতে দাও।নয়তো বিয়ে ক্যানসেল।
বিয়ে ক্যানসেল এর কথা শুনে বুক চেপে সারফরাজ অভিরূপ আর ইয়ং কে আদেশ দিলো
“বেনারসি পল্লীর সব গুলো দোকানের সাদা শাড়ি এনে ওকে কব্বর দে।তাও যাতে বিয়ে ক্যানসেল করতে না পারে।বউয়ের চাইতে শশুরের মোড সুইং ঘনঘন হয়।এদের মোড সুইংয়ে আমার জীবন তেজপাতা।প্লিজ গো গো।